যিহোবা সেই ব্যক্তিদের পুরস্কার দেন, যারা তাঁর অন্বেষণ করে
“যে ব্যক্তি ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহার ইহা বিশ্বাস করা আবশ্যক যে ঈশ্বর আছেন, এবং যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।”—ইব্রীয় ১১:৬.
১, ২. (ক) কীভাবে প্রেম ও বিশ্বাস সম্পর্কযুক্ত? (খ) কোন প্রশ্নগুলো আমরা বিবেচনা করব?
আমাদের পিতা যিহোবা, তাঁর অনুগত দাসদের আশীর্বাদ করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। এটা হচ্ছে আমাদের প্রতি যিহোবার ভালোবাসা প্রকাশের এক উপায় আর আমরাও তাঁকে ভালোবাসি “কারণ তিনিই প্রথমে আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন।” (১ যোহন ৪:১৯) যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসা যত বৃদ্ধি পায়, তাঁর প্রতি আমাদের বিশ্বাস তত দৃঢ় হয় আর আমরা এই বিষয়ে আরও দৃঢ়প্রত্যয়ী হই, যিহোবা যাদের ভালোবাসেন, তাদের তিনি পুরস্কার দেবেন।—পড়ুন, ইব্রীয় ১১:৬.
২ যিহোবা হলেন একজন পুরস্কারদাতা! তিনি স্বাভাবিকভাবেই তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের পুরস্কার দিতে ভালোবাসেন। তাই, ঈশ্বরের প্রতি আমাদের বিশ্বাস ততক্ষণ পর্যন্ত অপূর্ণ থেকে যায়, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী না হই যে, যারা তাঁর অন্বেষণ করে, তিনি সেই ব্যক্তিদের পুরস্কার দেবেন। কেন? কারণ “বিশ্বাস” হল “প্রত্যাশিত বিষয়ের নিশ্চয়জ্ঞান।” (ইব্রীয় ১১:১) বিশ্বাসের অর্থ হল, ঈশ্বর যে তাঁর অনুগত দাসদের আশীর্বাদ করবেন, সেই বিষয়ে পূর্ণ আস্থা রাখা। কিন্তু, পুরস্কার লাভের প্রত্যাশা কীভাবে আমাদের উপকৃত করে? কীভাবে যিহোবা তাঁর অতীত ও বর্তমানের দাসদের পুরস্কার দিয়েছেন? আসুন আমরা তা দেখি।
যিহোবা তাঁর দাসদের আশীর্বাদ করার প্রতিজ্ঞা করেন
৩. মালাখি ৩:১০ পদে আমরা কোন প্রতিজ্ঞা দেখতে পাই?
৩ যিহোবা ঈশ্বর তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের পুরস্কার দান করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। তিনি আমাদের আমন্ত্রণ জানান যেন আমরা তাঁকে আমাদের সর্বোত্তমটা দিই এবং তিনি যে আমাদের আশীর্বাদ করবেন, সেই বিষয়ে আস্থা রাখি। যিহোবা বলেন: “তোমরা . . . আমার পরীক্ষা কর, . . . আমি আকাশের দ্বার সকল মুক্ত করিয়া তোমাদের প্রতি অপরিমেয় আশীর্ব্বাদ বর্ষণ করি কি না।” (মালাখি ৩:১০) আমরা যখন যিহোবাকে পরীক্ষা করার আমন্ত্রণে সাড়া দিই, তখন আমরা তাঁর এই প্রস্তাবের জন্য কৃতজ্ঞতা দেখাই।
৪. কেন আমরা মথি ৬:৩৩ পদে উল্লেখিত যিশুর প্রতিজ্ঞার উপর আস্থা রাখতে পারি?
৪ যিশু তাঁর শিষ্যদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তারা যদি ঈশ্বরের রাজ্যকে প্রথমে রাখে, তা হলে ঈশ্বর তাদের প্রয়োজনীয় বিষয় জুগিয়ে দেবেন। (পড়ুন, মথি ৬:৩৩.) যিশু এই কথা বলতে পেরেছিলেন কারণ তিনি জানতেন, ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা সবসময় পরিপূর্ণ হয়। (যিশা. ৫৫:১১) তাই আমরাও নিশ্চিত থাকতে পারি, আমরা যদি যিহোবার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস দেখাই, তা হলে তিনি এই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করবেন: “আমি কোন ক্রমে তোমাকে ছাড়িব না, ও কোন ক্রমে তোমাকে ত্যাগ করিব না।” (ইব্রীয় ১৩:৫) যিহোবার করা এই প্রতিজ্ঞা আমাদেরকে মথি ৬:৩৩ পদে উল্লেখিত যিশুর কথার উপর আস্থা রাখতে সাহায্য করে।
৫. কেন পিতরকে দেওয়া যিশুর উত্তর আমাদের সকলের জন্য উৎসাহজনক?
৫ প্রেরিত পিতর একবার যিশুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “দেখুন, আমরা সমস্তই পরিত্যাগ করিয়া আপনার পশ্চাদগামী হইয়াছি; আমরা তবে কি পাইব?” (মথি ১৯:২৭) এই প্রশ্ন করার কারণে পিতরকে যিশু তিরস্কার করেননি। এর পরিবর্তে, যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, তাদের ত্যাগস্বীকারের জন্য তারা পুরস্কার লাভ করবেন। প্রেরিতরা ও অন্যান্য বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা ভবিষ্যতে যিশুর সঙ্গে স্বর্গে রাজত্ব করবেন। তবে, যিশু এটাও বলেছিলেন, তাদের জন্য এখনই পুরস্কার রয়েছে: “যে কোন ব্যক্তি আমার নামের জন্য বাটী, কি ভ্রাতা, কি ভগিনী, কি পিতা, কি মাতা, কি সন্তান, কি ক্ষেত্র পরিত্যাগ করিয়াছে, সে তাহার শত গুণ পাইবে, এবং অনন্ত জীবনের অধিকারী হইবে।” (মথি ১৯:২৯) বর্তমানে, যিশুর সমস্ত অনুসারী মণ্ডলীর মধ্যে বাবা, মা, ভাই, বোন ও সন্তান খুঁজে পেতে পারে। ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য আমরা যে-সমস্ত ত্যাগস্বীকার করেছি, সেগুলোর চেয়ে এই পুরস্কার সত্যিই অনেক মূল্যবান।
“প্রাণের লঙ্গরস্বরূপ”
৬. কেন যিহোবা তাঁর দাসদের পুরস্কার দান করার প্রতিজ্ঞা করেন?
৬ আমরা এখন বিভিন্ন চমৎকার আশীর্বাদ লাভ করছি আর সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে আরও মহৎ আশীর্বাদ লাভ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি। (১ তীম. ৪:৮) যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের পুরস্কার দান করার প্রতিজ্ঞা করেন কারণ তা জানার ফলে আমরা কঠিন সময়েও ধৈর্য ধরতে পারি। “যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে,” যিহোবা যে “তাহাদের পুরস্কারদাতা,” এই বিষয়ে আমরা যখন দৃঢ়প্রত্যয়ী হই, তখন আমরা বিশ্বস্ত থাকতে পারি।—ইব্রীয় ১১:৬.
৭. কীভাবে প্রত্যাশাকে একটা নোঙরের সঙ্গে তুলনা করা যায়?
৭ পর্বতেদত্ত উপদেশে যিশু বলেছিলেন: “আনন্দ করিও, উল্লাসিত হইও, কেননা স্বর্গে তোমাদের পুরস্কার প্রচুর; কারণ তোমাদের পূর্ব্বে যে ভাববাদিগণ ছিলেন, তাঁহাদিগকে তাহারা সেই মত তাড়না করিত।” (মথি ৫:১২) ঈশ্বরের দাসদের মধ্যে কেউ কেউ স্বর্গে পুরস্কার লাভ করবেন। আর অন্যেরা পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবনের পুরস্কার লাভ করবে। এটাও ‘আনন্দ করিবার, উল্লাসিত হইবার’ একটা কারণ। (গীত. ৩৭:১১; লূক ১৮:৩০) তবে, প্রত্যাশা আমাদের সকলের জন্যই “প্রাণের লঙ্গরস্বরূপ, অটল ও দৃঢ়” হতে পারে। (ইব্রীয় ৬:১৭-২০) লঙ্গর বা নোঙর যেমন ঝড়ের সময়ে একটা জাহাজকে অটল থাকতে সাহায্য করে, তেমনই আমাদের দৃঢ় প্রত্যাশা আমাদের স্থির থাকতে সাহায্য করে। এই প্রত্যাশা আমাদেরকে কঠিন সময়ে ধৈর্য ধরার জন্য শক্তি দিতে পারে।
৮. কীভাবে প্রত্যাশা আমাদের উদ্বিগ্নতা কমাতে পারে?
৮ এ ছাড়া, প্রত্যাশা আমাদের উদ্বিগ্নতার অনুভূতি কমাতে সাহায্য করতে পারে। কোনো মলম যেমন আমাদের ত্বকের জ্বালাপোড়া উপশম করতে পারে, তেমনই যিহোবার প্রতিজ্ঞা আমাদের উদ্বিগ্ন হৃদয়কে শান্ত করতে পারে। ‘তিনি আমাদের ধরিয়া রাখিবেন’ তা জানার ফলে, ‘সদাপ্রভুতে আমাদের ভার অর্পণ’ করা আমাদের জন্য কতই-না সান্ত্বনাদায়ক! (গীত. ৫৫:২২) আমরা এই বিষয়ে পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারি, “ঈশ্বর আমাদের সমস্ত যাচ্ঞার ও চিন্তার নিতান্ত অতিরিক্ত কর্ম্ম করিতে পারেন।” (ইফি. ৩:২০) যিহোবা যে আমাদের শুধু প্রচুররূপে সাহায্য করবেন তা নয় বরং তিনি “নিতান্ত অতিরিক্ত” বা তার চেয়েও অনেক বেশি করবেন!
৯. কীভাবে আমরা যিহোবার আশীর্বাদ লাভ করার বিষয়টা নিশ্চিত করতে পারি?
৯ পুরস্কার লাভ করার জন্য যিহোবার প্রতি আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস থাকতে হবে এবং তাঁর নির্দেশনার প্রতি বাধ্য হতে হবে। মোশি ইস্রায়েল জাতিকে বলেছিলেন: “সদাপ্রভু তোমাকে নিশ্চয়ই আশীর্ব্বাদ করিবেন; কেবল আমি অদ্য তোমাকে এই যে সমস্ত আজ্ঞা দিতেছি, ইহা যত্নপূর্ব্বক পালনার্থে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে কর্ণপাত করিতে হইবে। কেননা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যেমন তোমার কাছে অঙ্গীকার করিয়াছেন, তেমনি তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিবেন।” (দ্বিতীয়. ১৫:৪-৬) আপনি কি এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী যে, আপনি যদি বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে চলেন, তা হলে তিনি আপনাকে আশীর্বাদ করবেন? এই ধরনের আস্থা রাখার পিছনে আপনার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
যিহোবা তাদের পুরস্কারদাতা হয়েছিলেন
১০, ১১. কীভাবে যিহোবা যোষেফকে পুরস্কৃত করেছিলেন?
১০ বাইবেল আমাদের উপকারের জন্য লেখা হয়েছিল। ঈশ্বর অতীতে তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের কীভাবে পুরস্কার দিয়েছিলেন, সেই বিষয়ে বাইবেলে আমরা অনেক উদাহরণ খুঁজে পাই। (রোমীয় ১৫:৪) যোষেফ হলেন এক চমৎকার উদাহরণ। প্রথমে, তার ভাইয়েরা তাকে একজন দাস হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছিল। পরে, তার প্রভুর স্ত্রী তাকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলেন আর তাকে মিশরের কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। কারাগারে থাকার সময় যোষেফ কি যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন? না! বাইবেল বলে: “সদাপ্রভু যোষেফের সহবর্ত্তী ছিলেন, এবং তাঁহার প্রতি দয়া করিলেন” আর “সদাপ্রভু তাঁহার সহবর্ত্তী ছিলেন, এবং তিনি যাহা কিছু করিতেন, সদাপ্রভু তাহা সফল করিতেন।” (আদি. ৩৯:২১-২৩) কঠিন পরিস্থিতিতে থাকা সত্ত্বেও, যোষেফ ধৈর্য ধরে তার ঈশ্বরের অপেক্ষায় ছিলেন।
১১ কয়েক বছর পর, ফরৌণ যোষেফকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছিলেন আর এই সামান্য দাস তখন মিশরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শাসক হয়ে উঠেছিলেন। (আদি. ৪১:১, ৩৭-৪৩) যোষেফ ও তার স্ত্রীর দুই ছেলে হয়েছিল আর “যোষেফ তাহাদের জ্যেষ্ঠের নাম মনঃশি [বিস্মৃতিজনক] রাখিলেন, কেননা তিনি কহিলেন, ঈশ্বর আমার সমস্ত ক্লেশের ও আমার সমস্ত পিতৃকুলের বিস্মৃতি জন্মাইয়াছেন। পরে দ্বিতীয় পুত্ত্রের নাম ইফ্রয়িম [ফলবান্] রাখিলেন, কেননা তিনি কহিলেন, আমার দুঃখভোগের দেশে ঈশ্বর আমাকে ফলবান্ করিয়াছেন।” (আদি. ৪১:৫১, ৫২) যিহোবা যোষেফের আনুগত্যের পুরস্কার দিয়েছিলেন আর এর ফলে যোষেফ ইস্রায়েলীয় ও মিশরীয় সকলকেই দুর্ভিক্ষের সময়ে রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। যোষেফ স্বীকার করেছিলেন, যিহোবাই তাকে পুরস্কার দিয়েছেন ও আশীর্বাদ করেছেন।—আদি. ৪৫:৫-৯.
১২. কোন বিষয়টা যিশুকে পরীক্ষার সময়ে বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করেছিল?
১২ এ ছাড়া, যিশু খ্রিস্ট অনেক পরীক্ষার মধ্যে ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য ছিলেন এবং যিহোবা তাঁকে পুরস্কার দিয়েছিলেন। কোন বিষয়টা যিশুকে বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করেছিল? ঈশ্বরের বাক্য জানায়: ‘তিনি আপনার সম্মুখস্থ আনন্দের নিমিত্ত ক্রুশ সহ্য করিলেন, অপমান তুচ্ছ করিলেন।’ (ইব্রীয় ১২:২) ঈশ্বরের নামের পবিত্রীকরণ করতে পেরে যিশু নিশ্চিতভাবেই আনন্দিত হয়েছিলেন। আর পুরস্কার হিসেবে যিশু তাঁর পিতার সমর্থন ও বিভিন্ন চমৎকার সুযোগ লাভ করেছিলেন। বাইবেল বলে, তিনি “ঈশ্বরের সিংহাসনের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইয়াছেন।” আমরা এটাও পড়ি: “ঈশ্বর তাঁহাকে অতিশয় উচ্চপদান্বিতও করিলেন, এবং তাঁহাকে সেই নাম দান করিলেন, যাহা সমুদয় নাম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।”—ফিলি. ২:৯.
আমরা যা-কিছু করি, তা যিহোবা ভুলে যান না
১৩, ১৪. আমরা যিহোবার জন্য যতটুকুই করি না কেন, সেই বিষয়ে তিনি কেমন অনুভব করেন?
১৩ আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবার সেবা করার জন্য আমরা যতটুকুই করি না কেন, তিনি সেটাকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন। আমরা যখন নিজেদের ব্যাপারে অনিশ্চিত থাকি বা নিজেদের ক্ষমতার ব্যাপারে আমাদের সন্দেহ থাকে, তখন যিহোবা তা বুঝতে পারেন। আমরা যখন আমাদের চাকরি অথবা পরিবারের ভরণ-পোষণের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকি, তখন যিহোবা আমাদের জন্য গভীরভাবে চিন্তা করেন। আর আমরা যখন অসুস্থতা অথবা বিষণ্ণতার কারণে তাঁর সেবায় আগের মতো কাজ করতে পারি না, তখনও তিনি আমাদের পরিস্থিতি বোঝেন। আমরা এই বিষয়ে পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি, আমাদের বিভিন্ন সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আমাদের বিশ্বস্ততাকে যিহোবা মূল্যবান বলে গণ্য করেন।—পড়ুন, ইব্রীয় ৬:১০, ১১.
১৪ এটাও মনে রাখবেন, যিহোবা হলেন “প্রার্থনা-শ্রবণকারী।” আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, আমরা যখন তাঁর কাছে প্রার্থনা করি, তখন তিনি তা শোনেন। (গীত. ৬৫:২) “করুণা-সমষ্টির পিতা এবং সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর” তাঁর নিকটবর্তী থাকার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু দান করবেন। কখনো কখনো, তা করার জন্য তিনি আমাদের ভাই-বোনদের ব্যবহার করতে পারেন। (২ করি. ১:৩) আমরা যখন অন্যদের প্রতি সমবেদনা দেখাই, তখন যিহোবা খুশি হন। “যে দরিদ্রকে কৃপা করে, সে সদাপ্রভুকে ঋণ দেয়; তিনি তাহার সেই উপকারের পরিশোধ করিবেন।” (হিতো. ১৯:১৭; মথি ৬:৩, ৪) তাই, আমরা যখন উদার হই ও আমাদের ভাই-বোনদের সাহায্য করি, তখন যিহোবা সেটাকে এমনভাবে দেখেন যেন আমরা তাঁকে ঋণ দিয়েছি। আর তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, তিনি সেই দয়ার পুরস্কার দেবেন।
বর্তমান ও অনন্তকালীন পুরস্কার
১৫. আপনি ব্যক্তিগতভাবে কোন পুরস্কার লাভ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
১৫ অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের “ধার্ম্মিকতার মুকুট” লাভ করার প্রত্যাশা রয়েছে আর তারা যিশুর কাছ থেকে এই পুরস্কার লাভ করবেন। (২ তীম. ৪:৭, ৮) কিন্তু, আপনার পুরস্কারের প্রত্যাশা যদি ভিন্ন হয়, তা হলে সেটার অর্থ এই নয়, আপনি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে কম মূল্যবান। যিশুর লক্ষ লক্ষ “আরও মেষ” ভবিষ্যতে পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবনের পুরস্কার লাভ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। সেখানে তারা “শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।”—যোহন ১০:১৬; গীত. ৩৭:১১.
১৬. প্রথম যোহন ৩:১৯, ২০ পদ থেকে আমরা কোন সান্ত্বনা লাভ করি?
১৬ মাঝে মাঝে আমাদের মনে হতে পারে, আমরা যিহোবার সেবায় বেশি কিছু করছি না কিংবা আমাদের মনে এইরকম সন্দেহ জাগতে পারে, আমরা যা করছি, তা দেখে যিহোবা খুশি হন না। এমনকী আমরা হয়তো নিজেদেরকে কোনো ধরনের পুরস্কার লাভের অযোগ্য বলে মনে করতে পারি। কিন্তু, আমাদের এটা ভুলে যাওয়া উচিত নয়, “ঈশ্বর আমাদের হৃদয় অপেক্ষা মহান্, এবং সকলই জানেন।” (পড়ুন, ১ যোহন ৩:১৯, ২০.) আমরা যখন যিহোবার প্রতি আমাদের বিশ্বাস ও ভালোবাসার কারণে তাঁর সেবা করি, তখন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি আমাদের পুরস্কার দেবেন। এমনকী আমরা যা করতে পারি, সেটা আমাদের কাছে সামান্য বলে মনে হলেও, তিনি সেই পুরস্কার দেবেন।—মার্ক ১২:৪১-৪৪.
১৭. আমরা এখন কোন পুরস্কারগুলো উপভোগ করছি?
১৭ এমনকী শয়তানের এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষকালেও যিহোবা তাঁর লোকেদের আশীর্বাদ করছেন। তিনি লক্ষ রাখেন, যেন আমরা এক আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃসমাজের অংশ হিসেবে প্রচুর জ্ঞান ও শান্তি লাভ করি। (যিশা. ৫৪:১৩) হ্যাঁ, যিশুর প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী যিহোবা এখন পুরস্কার হিসেবে আমাদেরকে বিশ্বব্যাপী ভাই-বোনদের এক প্রেমময় পরিবার দিয়েছেন। (মার্ক ১০:২৯, ৩০) এ ছাড়া, যারা ঈশ্বরের অন্বেষণ করে, তারা পুরস্কার হিসেবে অতুলনীয় মনের শান্তি, পরিতৃপ্তি ও আনন্দ লাভ করে।—ফিলি. ৪:৪-৭.
১৮, ১৯. যিহোবার দাসেরা তাঁর কাছ থেকে পাওয়া পুরস্কার সম্বন্ধে কেমন অনুভব করে থাকে?
১৮ বিশ্বজুড়ে যিহোবার দাসেরা আমাদের স্বর্গীয় পিতার কাছ থেকে চমৎকার পুরস্কার লাভ করেছে। উদাহরণ স্বরূপ, বিয়াংকা নামে জার্মানির একজন বোন বলেন: “যিহোবা প্রতিদিন আমার উদ্বিগ্নতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করেন ও আমার পাশে থাকেন বলে আমি তাঁর কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। বাইরের জগৎ হল অস্থির আর এর ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কিন্তু, আমি যখন যিহোবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করি, তখন আমি তাঁর বাহুতে নিজেকে নিরাপদ বলে মনে করি। যখনই আমি তাঁর জন্য কোনো ত্যাগস্বীকার করি, তখনই তিনি আমাকে আশীর্বাদ করার মাধ্যমে সেটার শতগুণ ফিরিয়ে দেন।”
১৯ এ ছাড়া, কানাডার ৭০ বছর বয়সি বোন পলার কথা বিবেচনা করুন, যার স্পাইনা বিফিডা অর্থাৎ মেরুদণ্ডের গুরুতর অস্বাভাবিকতার কারণে চলাফেরা করতে অত্যন্ত কষ্ট হয়। তিনি বলেন, যদিও পরিস্থিতির কারণে তার চলাফেরা সীমিত হয়ে গিয়েছে, কিন্তু এই কারণে তার প্রচার কাজ সীমিত হয়ে যায়নি। তিনি আরও বলেন: “আমি প্রচার করার অন্যান্য উপায়ের সদ্ব্যবহার করি, যেমন টেলিফোনে ও রীতিবহির্ভূতভাবে সাক্ষ্যদান করা। নিজের উৎসাহের জন্য আমি সবসময় আমার সঙ্গে একটা নোটবুক রাখি। আমি এই নোটবুকের মধ্যে আমাদের প্রকাশনা থেকে পাওয়া বিভিন্ন শাস্ত্রপদ ও বিষয়বস্তু লিখে রাখি, যেগুলো আমি মাঝে মাঝে পরীক্ষা করতে পারি। আমি এটার নাম দিয়েছি, ‘আমার জীবনরক্ষাকারী নোটবুক।’ আমরা যদি যিহোবার প্রতিজ্ঞার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখি, তা হলে নিরুৎসাহিতাকে ক্ষণস্থায়ী বলে মনে হয়। আমাদের পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, যিহোবা সবসময় আমাদের সাহায্য করার জন্য তৈরি আছেন।” বিয়াংকা অথবা পলার পরিস্থিতি থেকে আপনার পরিস্থিতি অনেক আলাদা হতে পারে। তা সত্ত্বেও, আপনি সম্ভবত এমন উপায়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারেন, যেগুলোর মাধ্যমে যিহোবা আপনাকে ও আপনার চারপাশের লোকেদের পুরস্কৃত করেছেন। যিহোবা এখন আপনাকে যেভাবে পুরস্কার দিচ্ছেন এবং তিনি ভবিষ্যতে যেভাবে পুরস্কার দেবেন, তা নিয়ে চিন্তা করা কতই-না উত্তম!
২০. আমরা যদি বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে চলার জন্য যথাসাধ্য করি, তা হলে আমরা কীসের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে পারি?
২০ কখনো ভুলে যাবেন না, আপনার আন্তরিক প্রার্থনা “মহাপুরস্কারযুক্ত” হবে। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, ‘ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করিবার’ পর আপনি “প্রতিজ্ঞার ফল প্রাপ্ত” হবেন। (ইব্রীয় ১০:৩৫, ৩৬) তাই আসুন, আমরা ক্রমাগত নিজেদের বিশ্বাস শক্তিশালী করি এবং যিহোবার সেবায় যথাসাধ্য করি। আমাদের এই আস্থা রয়েছে, যিহোবা আমাদের পুরস্কার দেবেন!—পড়ুন, কলসীয় ৩:২৩, ২৪.