জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-র রেফারেন্স
মার্চ ২-৮
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন
আদিপুস্তক ২২-২৩
“ঈশ্বর অব্রাহামের পরীক্ষা করিলেন”
প্রহরীদুর্গ ১২ জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০ অনু. ৪-৬
কেন ঈশ্বর অব্রাহামকে তার পুত্রকে বলি দিতে বলেছিলেন?
অব্রাহামের উদ্দেশে বলা যিহোবার এই কথাগুলো বিবেচনা করুন: “তুমি আপন পুত্ত্রকে, তোমার অদ্বিতীয় পুত্ত্রকে, যাহাকে তুমি ভাল বাস, সেই ইস্হাককে . . . হোমার্থে বলিদান কর।” (আদিপুস্তক ২২:২) লক্ষ করুন যে, যিহোবা ইস্হাকের বিষয়ে নির্দেশ করে বলেছিলেন,‘তোমার পুত্ত্র, যাহাকে তুমি ভাল বাস।’ অব্রাহামের কাছে ইস্হাক যে কত মূল্যবান ছিল, যিহোবা তা জানতেন। এ ছাড়া, ঈশ্বর এও জানতেন যে, তিনি তাঁর পুত্র, যিশুর বিষয়ে কেমন বোধ করেছিলেন। যিহোবা যিশুকে এতটাই ভালোবাসতেন যে, তিনি দু-বার স্বর্গ থেকে সরাসরি যিশুকে “আমার প্রিয় পুত্ত্র” বলে উল্লেখ করেছিলেন।—মার্ক ১:১১; ৯:৭.
এ ছাড়া, লক্ষ করুন যে, যিহোবা যখন অব্রাহামকে ইস্হাককে বলি দিতে বলেছিলেন, তখন তিনি মূল ভাষায় এমন একটি ইব্রীয় শব্দ ব্যবহার করেছিলেন, যেটি হল এক বিনম্র অনুরোধ। একজন বাইবেল পণ্ডিত বলেন, ঈশ্বরের সেই শব্দটির ব্যবহার করা ইঙ্গিত দেয় যে, “প্রভু যা করতে বলছেন, সেটার জন্য যে বিরাট মূল্য দিতে হবে, তা তিনি উপলব্ধি করেন।” আমরা যেমন কল্পনা করতে পারি, সেই অনুরোধটা নিশ্চয়ই অব্রাহামকে গভীরভাবে দুঃখিত করেছিল; একইভাবে, আমরা হয়তো সেই তীব্র যন্ত্রণার বিষয়ে কেবল কল্পনা করতে পারি, যা যিহোবা তাঁর প্রিয় পুত্রকে কষ্টভোগ করতে ও মারা যেতে দেখার সময় অবশ্যই অনুভব করেছিলেন। নিঃসন্দেহে, সেটা ছিল যিহোবার সবচেয়ে কষ্টকর যন্ত্রণা, যা তিনি আগে কখনো অনুভব করেননি অথবা কখনো অনুভব করবেনও না।
এটা সত্য যে, যিহোবা অব্রাহামকে যা করতে বলেছিলেন সেটার বিষয়ে চিন্তা করে যদিও আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারি কিন্তু আমাদের জন্য এটা মনে রাখা বিজ্ঞতার কাজ হবে যে, যিহোবা সেই বিশ্বস্ত কুলপতিকে বলি দেওয়া থেকে বিরত করেছিলেন। তিনি অব্রাহামকে সেই চরম ক্ষতি ভোগ করতে দেননি, যা একজন বাবা অথবা মা ভোগ করতে পারেন; তিনি ইস্হাককে মৃত্যু থেকে রক্ষা করেছিলেন। তবে, যিহোবা ‘নিজ পুত্ত্রকে’ রক্ষা করেননি, ‘কিন্তু আমাদের সকলের নিমিত্ত তাঁহাকে সমর্পণ করিয়াছিলেন।’ (রোমীয় ৮:৩২) কেন যিহোবা নিজেকে এইরকম অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক এক পরীক্ষার মধ্যে ফেলেছিলেন? তিনি তা করেছিলেন, যাতে ‘আমরা জীবন লাভ করিতে পারি।’ (১ যোহন ৪:৯) আমাদের প্রতি ঈশ্বরের প্রেমের কী এক জোরালো অনুস্মারক! আমরা কি এর বিনিময়ে তাঁর প্রতি আমাদের প্রেম দেখানোর জন্য অনুপ্রাণিত হই না?
প্রহরীদুর্গ ১২ ১০/১৫ ২৩ অনু. ৬
ঈশ্বরের বাধ্য হোন এবং তাঁর শপথ করে বলা প্রতিজ্ঞাগুলো থেকে উপকার লাভ করুন
৬ পাপী মানবজাতির উপকারের জন্য যিহোবা ঈশ্বরও এই ধরনের অভিব্যক্তিগুলো ব্যবহার করার মাধ্যমে শপথের ব্যবহার করেছিলেন: “প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমার জীবনের দিব্য।” (যিহি. ১৭:১৬) বাইবেলে ৪০ বারেরও বেশি সময়ের কথা বর্ণনা করা আছে, যখন যিহোবা ঈশ্বর শপথ করে দিব্য করেছিলেন। এই ক্ষেত্রে, সবচেয়ে সুপরিচিত উদাহরণ হল, অব্রাহামের সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণ। অনেক বছর ধরে যিহোবা অব্রাহামের কাছে বেশ কয়েকটা নিয়ম বা চুক্তি সম্বন্ধে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যেগুলো মিলিয়ে দেখলে দেখা যায় যে, প্রতিজ্ঞাত বংশ অব্রাহামের কাছ থেকে তার পুত্র ইস্হাকের মাধ্যমে আসবে। (আদি. ১২:১-৩, ৭; ১৩:১৪-১৭; ১৫:৫, ১৮; ২১:১২) এরপর যিহোবা অব্রাহামের ওপর এক কঠিন পরীক্ষা নিয়ে এসেছিলেন, তার প্রিয় পুত্রকে উৎসর্গ করার আদেশ দিয়েছিলেন। অব্রাহাম সঙ্গেসঙ্গে বাধ্য হয়েছিলেন এবং যখন ইস্হাককে উৎসর্গ করতে যাচ্ছিলেন, তখন ঈশ্বরের এক দূত তাকে বাধা দিয়েছিলেন। সেই সময় ঈশ্বর এই দিব্য করেছিলেন: “তুমি এই কার্য্য করিলে, আমাকে আপনার অদ্বিতীয় পুত্ত্র দিতে অসম্মত হইলে না, এই হেতু আমি আমারই দিব্য করিয়া কহিতেছি, আমি অবশ্য তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিব, এবং আকাশের তারাগণের ও সমুদ্রতীরস্থ বালুকার ন্যায় তোমার অতিশয় বংশবৃদ্ধি করিব; তোমার বংশ শত্রুগণের পুরদ্বার অধিকার করিবে; আর তোমার বংশে পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে; কারণ তুমি আমার বাক্যে অবধান করিয়াছ।”—আদি. ২২:১-৩, ৯-১২, ১৫-১৮.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
যিহোবা তাকে “আমার বন্ধু” বলেছিলেন
১৩ অব্রাহাম তার দাসদের কাছ থেকে চলে যাওয়ার আগে বলেছিলেন: “তোমরা এই স্থানে গর্দ্দভের সহিত থাক; আমি ও যুবক, আমরা ঐ স্থানে গিয়া প্রণিপাত করি, পরে তোমাদের কাছে ফিরিয়া আসিব।” (আদি. ২২:৫) অব্রাহাম কী বুঝিয়েছিলেন? তিনি ইস্হাককে বলি দেবেন এটা জানা সত্ত্বেও, তিনি কি ফিরে আসার বিষয়ে মিথ্যা কথা বলেছিলেন? না। বাইবেল বলে, অব্রাহাম জানতেন, যিহোবা ইস্হাককে মৃত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত করতে সমর্থ। (পড়ুন, ইব্রীয় ১১:১৯.) অব্রাহাম এটাও জানতেন, তার এবং সারার অনেক বয়স হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও যিহোবা তাদের এক সন্তান লাভ করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। (ইব্রীয় ১১:১১, ১২, ১৮) তাই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, কোনো কিছুই যিহোবার অসাধ্য নয়। সেই দিন কী ঘটতে যাচ্ছিল, তা অব্রাহাম জানতেন না। তা সত্ত্বেও, তার এই বিশ্বাস ছিল, যিহোবা তার ছেলেকে পুনরুত্থিত করতে পারেন, যাতে ঈশ্বরের সমস্ত প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হয়। এই কারণে, অব্রাহামকে “যাহারা বিশ্বাস করে . . . তাহাদের সকলের পিতা” বলা হয়।
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৮৫৩ অনু. ৫-৬,
ভবিষ্যৎ আগে থেকে জানা এবং বাছাই করার ক্ষমতা
ভবিষ্যৎ আগে থেকে জানার ক্ষমতা বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার। ঈশ্বরের কাছে এই ক্ষমতা রয়েছে, যে তিনি ভবিষ্যৎ আগে থেকে জানতে পারেন। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তিনি আমাদের ভবিষ্যৎ আগে থেকে বাছাই করে রেখেছেন। তিনি যেমনভাবে তাঁর ক্ষমতার ব্যবহার করেন তা তাঁর ধার্মিক মান এবং তিনি তাঁর বাক্যে যা প্রকাশ করেছেন সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। বাইবেলে দেওয়া এমন অনেক শাস্ত্রপদ রয়েছে যা থেকে আমরা এটা বুঝতে পারি যে, তিনি এই ক্ষমতাকে বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করেন। তিনি প্রথমে বিষয়টা পরীক্ষা করেন এবং তার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেন।
আদিপুস্তক ১১:৫-৮ পদের উদাহরণ বিবেচনা করুন। এখানে বলা হয়েছে যে, বাবিলের লোকেরা যখন ঈশ্বরের বিরোধিতা করে একটা দুর্গ নির্মাণ করতে চেয়েছিল, তখন যিহোবা লক্ষ করেছিলেন এবং পরিস্থিতিকে ভালোভাবে বিবেচনা করেছিলেন। তারপর, তিনি পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যেন, তাদের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ না হয়। যখন সদোম ও ঘমোরাতে দুষ্টতা বৃদ্ধি পেয়েছিল তখন যিহোবা অব্রাহামকে বলেছিলেন, তিনি (স্বর্গদূতদের মাধ্যমে) সেখানকার পরিস্থিতি পরীক্ষা করবেন। তিনি বলেছিলেন,“দেখিব, আমার নিকটে আগত ক্রন্দনানুসারে তাহারা সর্ব্বতোভাবে করিয়াছে কি না; যদি না করিয়া থাকে, তাহা জানিব।” (আদি. ১৮:২০-২২; ১৯:১) ঈশ্বর বলেছিলেন যে, ‘আমি অব্রাহামকে জানিয়াছি‘। পরে যখন অব্রাহাম ইস্হাককে বলি দিতে যাচ্ছেন এমন সময় যিহোবা বলেছিলেন,“কেননা এখন আমি বুঝিলাম, তুমি ঈশ্বরকে ভয় কর, আমাকে আপনার অদ্বিতীয় পুত্ত্র দিতেও অসম্মত নও।”—আদি. ১৮:১৯; ২২:১১, ১২; তুলনা করুন নহি. ৯:৭, ৮; গালা. ৪:৯
মার্চ ৯-১৫
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন
আদিপুস্তক ২৪
“ইস্হাকের জন্য কনে”
প্রহরীদুর্গ, জনসাধারণের সংস্করণ ১৬.৩ ১৪ অনু. ৩,
‘হ্যাঁ, যাব’
অব্রাহাম ইলীয়েষরকে শপথ করতে বলেন, সে যেন কনানীয় মেয়েদেরকে ইস্হাকের স্ত্রী করার জন্য বেছে না আনে। কেন? কারণ কনানীয়রা যিহোবা ঈশ্বরকে সম্মান করত না আর তাকে উপাসনাও করত না। অব্রাহাম জানতেন যে, যিহোবা সঠিক সময়ে সেই মানুষদের শাস্তি দেবেন যারা মন্দ কাজগুলো করে চলত। অব্রাহাম চাননি তার প্রিয় ছেলে ইস্হাক, এই ধরনের ব্যক্তি এবং তাদের অনৈতিক বিষয়গুলোতে জড়িয়ে পড়ে। তিনি এটাও জানতেন যে, ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করার ক্ষেত্রে তার ছেলের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।—আদিপুস্তক ১৫:১৬; ১৭:১৯; ২৪:২-৪.
প্রহরীদুর্গ, জনসাধারণের সংস্করণ ১৬.৩ ১৪ অনু. ৪
‘হ্যাঁ, যাব’
ইলীয়েষর তার নিমন্ত্রণকর্তাদের তার সঙ্গে কী ঘটেছে তা বলেন। যখন তিনি হারণে কুয়োর কাছে পৌঁছান তখন, তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। বিষয়টা এমন ছিল যেন তিনি যিহোবাকে ইস্হাকের জন্য এক কনে খুঁজে দেওয়ার জন্য বলছেন। কীভাবে? ইলীয়েষর ঈশ্বরকে অনুরোধ করেন, যে মেয়েটি ইস্হাককে বিয়ে করবে সে যেন কুয়োর কাছে আসে এবং তিনি যখন পান করার জন্য জল চাইবেন তখন সে শুধু তার জন্য নয় বরং তার উটদেরও জল দেবে।(আদিপুস্তক ২৪:১২-১৪) আর কে এসেছিল এবং ইলীয়েষরের প্রার্থনা অনুযায়ী কাজ করেছিল? রিবিকা! কল্পনা করুন, ইলীয়েষর তার পরিবারের সদস্যদের কাছে যে কথাগুলো বলেছেন তা যদি রিবিকা নিজে শুনতেন তাহলে তার কেমন অনুভব হতো!
প্রহরীদুর্গ, জনসাধারণের সংস্করণ ১৬.৩ ১৪ অনু. ৬-৭
‘হ্যাঁ, যাব’
কিছু সপ্তাহ আগে, ইলীয়েষর অব্রাহামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “কিন্তু মেয়েটি যদি আমার সংগে আসতে না চায়?” অব্রাহাম উত্তর দিয়েছিলেন,“তবে তুমি আমার এই দিব্য থেকে মুক্ত হবে।” (আদিপুস্তক ২৪:৩৯, ৪১,বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন) বথূয়েলের বাড়িতেও যুবতী মেয়েদের পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া হতো। ইলীয়েষর খুবই খুশি ছিলেন কারণ তিনি যে উদ্দেশ্যে এসেছিলেন তাতে তিনি সফল হয়েছিলেন তাই পরের দিন সকালে অনুমতি চেয়েছিলেন যে, তিনি রিবিকাকে নিয়ে দ্রুত কনানে ফিরে যেতে পারেন কিনা। রিবিকার পরিবার চেয়েছিল, যেন অন্ততপক্ষে আর দশ দিন সে তাদের সঙ্গে থাকে। অবশেষে, তারা এইভাবে সমস্যাটার সমাধান করেছিল,“আমরা কন্যাকে ডাকিয়া তাহাকে সাক্ষাতে জিজ্ঞাসা করি”—আদিপুস্তক ২৪:৫৭
এখন রিবিকাকে এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি কী করবেন? তিনি কী তার বাবা ও ভাইয়ের সহানুভূতির বিষয়টা তুলে ধরে ইলীয়েষরের সঙ্গে একটা অজানা দেশে যাওয়া বন্ধ করে দেবেন? অথবা তিনি কি এটাকে এক বিশেষ সুযোগ মনে করে নিজেকে যিহোবার দ্বারা নির্দেশিত হতে দেবেন? রিবিকার জীবন আকস্মিকভাবে পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল এবং হয়তো এই পরিবর্তন তার জন্য সহজ হবে। এই বিষয়ে তিনি কেমন অনুভব করেছিলেন সেটা তার কথার মাধ্যমে বোঝা যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, যাব’ (বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন)—আদিপুস্তক ২৪:৫৮
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
প্রহরীদুর্গ, জনসাধারণের সংস্করণ ১৬.৩ ১২-১৩,
‘হ্যাঁ, যাব’
এক সন্ধ্যায়, রিবিকা তার কলসি ভরতি করার পর, একজন বয়স্ক ব্যক্তি দৌড়ে তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তিনি তাকে বললেন, “বিনয় করি, আপনার কলশ হইতে আমাকে কিঞ্চিৎজল পান করিতে দিউন।” এটা কতই না এক ছোটো অনুরোধ ছিল যা খুবই নম্রভাবে করা হয়েছিল! রিবিকা এটা দেখতে পেয়েছিলেন যে, সেই ব্যক্তি অনেক দূর থেকে এসেছেন। তাই তিনি তাড়াতাড়ি করে তার কলসিটা কাঁধ থেকে নামিয়ে সেই ব্যক্তিকে শুধুমাত্র অল্প জল নয় কিন্তু যথেষ্ট পরিমানে ঠান্ডা জল পান করতে দিলেন। তিনি লক্ষ করলেন যে, সেই ব্যক্তির দশটা উট রয়েছে কিন্তু উটদের জল পান করার পাত্রটা এখনও ভরা হয়নি এবং সেই ব্যক্তি তাকে করুণভাবে দেখছেন সেইজন্য রিবিকা তার পক্ষে যতটা সম্ভব সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি বললেন:“যাবৎ আপনার উষ্ট্র সকলের পান সমাপ্ত না হয়, তাবৎ আমি উহাদের জন্য ও জল তুলিব”—আদিপুস্তক ২৪:১৭-১৯
লক্ষ করুন, রিবিকা শুধুমাত্র দশটা উটকে জল পান করতে দেওয়ার কথাই বলেননি সেইসঙ্গে যতক্ষন না পর্যন্ত উটগুলো পরিতৃপ্ত হয় ততটা জল পান করাতে চেয়েছিলেন। একটা উট যদি তৃষ্ণার্ত হয় তাহলে সে ২৫ গ্যালনের(৯৫ লিটার)বেশি জল পান করতে পারে। যদি দশটা উট তৃষ্ণার্ত হয়ে থাকে তাহলে রিবিকাকে ঘন্টার পর ঘন্টা কঠোর পরিশ্রম করতে হতো। সম্ভবত এটা মনে হয় যে, সেই উটগুলো খুব বেশি তৃষ্ণার্ত ছিল না। কিন্তু রিবিকা কি প্রস্তাব দেওয়ার আগে সেটা জানত? না। তা সত্ত্বেও তিনি ইচ্ছুক ছিলেন, এমন কি উৎসুক ভাবে এই বয়স্ক অচেনা ব্যক্তির প্রতি আতিথেয়তা দেখানোর জন্য যতটা সম্ভব কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন। সেই ব্যক্তিও তার প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন। তারপর তিনি রিবিকাকে অবাক হয়ে লক্ষ করছিলেন যে, সে বার বার দৌড়ে কুয়োর কাছে যাচ্ছে, জল তুলছে আর এসে পাত্রে জল ভরতি করছে।—আদিপুস্তক ২৪:২০, ২১
প্রহরীদুর্গ, জনসাধারণের সংস্করণ ১৬.৩ ১৩ পাদটীকা
‘হ্যাঁ, যাব’
সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। এই বিবরণ আমাদের এটা জানায় না যে, রিবিকা কত ঘন্টা ধরে কুয়োর কাছে ছিলেন। আর এটাও জানায় না যে, যখন তিনি কাজ শেষ করেছিলেন, তার পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিল কিনা বা তার আসতে দেরি হচ্ছে দেখে, কেউ খুঁজতে এসেছিল কিনা।
প্রহরীদুর্গ, জনসাধারণের সংস্করণ ১৬.৩ ১৫ অনু. ৩
‘হ্যাঁ, যাব’
অবশেষে, সেই দিন উপস্থিত হয়েছিল যেটার বর্ণনা প্রবন্ধের শুরুতে করা হয়েছে। যখন তারা যাত্রা করে নেগেবে পৌঁছেছিল তখন বিকেল হয়ে গিয়েছিল এবং রিবিকা দেখতে পেল এক ব্যক্তি মাঠের মধ্যে দিয়ে আসছেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে খুব চিন্তিত। তাই উট নীচে বসার আগেই রিবিকা তাড়াতাড়ি “উষ্ট্র হইতে নামিয়া” আসলেন এবং তিনি তার দাসকে জিজ্ঞেস করলেন,“আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে ক্ষেত্রের মধ্য দিয়া আসিতেছেন, ঐ পুরুষ কে?” যখন তিনি জানতে পারলেন যে, এই ব্যক্তি ইস্হাক তখন তিনি নিজের চাদর দিয়ে মাথা ঢাকলেন। (আদিপুস্তক ২৪:৬২-৬৫) কেন? স্পষ্টতই, রিবিকার এই কাজ তার ভাবী স্বামীর প্রতি সম্মানের এক চিহ্ন ছিল। হয়তো বর্তমান দিনের লোকেদের কাছে এই বিষয়টা সেকেলে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সত্য বিষয়টা হল, আমরা পুরুষ হই বা নারী, আমাদের প্রত্যেককেই নম্রতা গড়ে তুলতে হবে। রিবিকার নম্রতা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি।
মার্চ ১৬-২২
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন
আদিপুস্তক ১৮-১৯
“এষৌ নিজের জ্যেষ্ঠাধিকার বিক্রি করে দেন”
অন্তর্দৃষ্টি-১ ১২৪২
যাকোব
এষৌর মধ্যে ধৈর্য ছিল না আর সে অশান্ত স্বভাবের ছিল। সে শিকার করার জন্য ঘুরে বেড়াত। এষৌ তার বাবার প্রিয় ছেলে ছিল। এষৌর বিপরীতে যাকোব অনেক আলাদা ছিলেন। যাকোব শান্ত স্বভাবের ছিলেন। মেষদের দেখাশোনা করার পাশাপাশি তিনি নির্ভরযোগ্য ছিলেন, এ ছাড়া ঘরের কাজকর্ম ভালোভাবে দেখাশোনা করতেন। তার মা রিবিকা তাকে খুব ভালোবাসতেন। যাকোবের বিষয়ে বাইবেল বলে যে,“যাকোব শান্ত [“নির্দোষ,” NW] [ইব্রীয় ভাষায় তাম] ছিলেন, তিনি তাম্বুতে বাস করিতেন।” (আদি. ২৫:২৭, ২৮) বাইবেলের অন্যান্য পদে ইব্রীয় শব্দ তাম সেই ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় , যাদের প্রতি ঈশ্বরের অনুমোদন রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ,“রক্তপাতী লোকেরা সিদ্ধব্যক্তিকে ঘৃণা করে” কিন্তু যিহোবা আশ্বস্ত করেন, “শান্তিপ্রিয়” বা নির্দোষ ব্যক্তিরা ভবিষ্যতে শান্তিতে বাস করবে। (হিতো. ২৯:১০; গীত. ৩৭:৩৭.) বিশ্বস্ত ব্যক্তি ইয়োব সম্বন্ধে বাইবেল বলে, তিনি হলেন,“নির্দোষ ও সৎ”—ইয়োব ১:১, ৮; ২:৩.(বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন)
কেন উপলব্ধি প্রকাশ করবেন?
১১ দুঃখের বিষয় হল বাইবেলে উল্লেখিত কোনো কোনো ব্যক্তি উপলব্ধি দেখায়নি। উদাহরণ স্বরূপ, এষৌর বাবা-মা যিহোবাকে ভালোবাসতেন এবং সম্মান করতেন কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি ধর্মবিরূপক ছিলেন অর্থাৎ তিনি পবিত্র বিষয়গুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখাননি। (পড়ুন, ইব্রীয় ১২:১৬.) কীভাবে তার অকৃতজ্ঞতার মনোভাব প্রকাশ পেয়েছিল? এষৌ কোনো কিছু চিন্তা না করেই, তার ভাই যাকোবের কাছে মাত্র এক বাটি ডালের বিনিময়ে তার জ্যেষ্ঠাধিকার বিক্রি করেছিলেন। (আদি. ২৫:৩০-৩৪) পরবর্তী সময়ে, এষৌ তার এই বাছাইয়ের কারণে খুবই দুঃখিত হয়েছিলেন। যেহেতু তিনি জ্যেষ্ঠাধিকারের আশীর্বাদের বিষয়ে অকৃতজ্ঞতার মনোভাব দেখিয়েছিলেন, তাই তিনি যখন সেই অধিকার পাননি, তখন তার অভিযোগ করার কোনো ভিত্তিই ছিল না।
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৮৩৫
প্রথমজাত সন্তান
বাইবেলের সময়ে প্রথমজাত পুত্রকে পরিবারের মধ্যে অনেক সম্মান দেওয়া হতো আর পরবর্তীকালে পিতার অবর্তমানে তাকেই পরিবারের প্রধান করা হতো। শুধু তাই নয়, তার পিতার সম্পত্তির দ্বিগুণ অংশ তাকে দেওয়া হতো। (দ্বিতীয়. ২১:১৭) মিশরে যোষেফ যখন নিজের ভাইদের খাবার খাওয়ার জন্য বসিয়েছিলেন তখন রূবেণকে প্রথমজাত হওয়ার কারণে তাকে জ্যেষ্ঠের আসন দেওয়া হয়েছিল। (আদি ৪৩:৩৩) কিন্তু বাইবেলে সবসময় জন্ম অনুসারে প্রথমজাত সন্তানদের সম্মান করার তালিকা নেই। এর পরিবর্তে, প্রায়ই এমন ব্যক্তিদের নাম রয়েছে যারা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন অথবা যিহোবার উদ্দেশ্য পালন করায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।—আদি. ৬:১০; ১ বংশা. ১:২৮; আদি. ১১:২৬, ৩২; ১২:৪. দেখুন জ্যেষ্ঠাধিকার; উত্তরাধিকার.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
পাঠকদের কাছ থেকে প্রশ্ন
এখন আসুন, আমরা ইব্রীয় ১২:১৪ ও ১৬ পদে ফিরে যাই, যেখানে বলা হয়েছে, “সাবধান হইয়া দেখ, . . . পাছে কেহ ব্যভিচারী বা ধর্ম্মবিরূপক হয়, যেমন এষৌ, সে ত এক বারের খাদ্যের নিমিত্ত আপন জ্যেষ্ঠাধিকার বিক্রয় করিয়াছিল।” এই শাস্ত্রপদে কী বোঝাতে চাওয়া হয়েছিল?
প্রেরিত পৌল এখানে মশীহের বংশধারার বিষয়ে আলোচনা করছিলেন না। তিনি এর আগের পদগুলোতেই খ্রিস্টানদের ‘আপন আপন চরণের জন্য সরল পথ প্রস্তুত করিবার’ পরামর্শ দিয়েছিলেন। এভাবে তারা “ঈশ্বরের অনুগ্রহ হইতে বঞ্চিত” হতো না, যেটা হয়তো সেইসময় ঘটতে পারত, যদি তারা যৌন অনৈতিকতায় লিপ্ত হয়ে পড়ত। (ইব্রীয় ১২:১২-১৬) তারা যদি এমনটা করত, তা হলে তারা এষৌর মতো হয়ে যেত। তিনি “ধর্ম্মবিরূপক” হয়েছিলেন বা পবিত্র বিষয়গুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন এবং আক্ষরিকভাবেই জাগতিক বিষয়গুলোর অনুধাবন করেছিলেন।
এষৌ কুলপতিদের সময় বাস করতেন এবং তিনি হয়তো এমনকী কখনো কখনো বলিদান করার সুযোগ লাভ করেছিলেন। (আদি. ৮:২০, ২১; ১২:৭, ৮; ইয়োব ১:৪, ৫) কিন্তু, এষৌ যেহেতু মাংসিক বিষয়গুলোকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করতেন, তাই তিনি এক বাটি ডালের জন্য সেই সমস্ত বিশেষ সুযোগ পরিত্যাগ করেছিলেন। হতে পারে, তিনি সেই কষ্ট এড়াতে চেয়েছিলেন, যেটা অব্রাহামের বংশের উপর আসবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। (আদি. ১৫:১৩) এ ছাড়া, এষৌ দু-জন পৌত্তলিক উপাসককে বিয়ে করার ও এভাবে তার বাবা-মাকে কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন যে, তিনি জাগতিক বিষয়গুলোর অনুধাবন করতেন এবং তার পবিত্র বিষয়গুলোর প্রতি কোনো উপলব্ধিই ছিল না। (আদি. ২৬:৩৪, ৩৫) তিনি যাকোবের চেয়ে কতই-না আলাদা ছিলেন, যিনি সত্য ঈশ্বরের একজন উপাসককে বিয়ে করার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন!—আদি. ২৮:৬, ৭; ২৯:১০-১২, ১৮.
অন্তর্দৃষ্টি-২ ২৪৫ অনু. ৬
মিথ্যা
এটা সত্য যে, বাইবেল জেনে-শুনে মিথ্যা বলাকে নিষেধ করে কিন্তু এর মানে এই নয় যে, আমরা অন্যদের সেই সমস্ত বিষয় প্রকাশ করে দেব, যেটা জানার অধিকার তাদের নেই। যিশু খ্রিস্ট বলেছিলেন,“পবিত্র বস্তু কুকুরদিগকে দিও না, এবং তোমাদের মুক্তা শূকরদিগের সম্মুখে ফেলিও না; পাছে তাহারা পা দিয়া তাহা দলায়, এবং ফিরিয়া তোমাদিগকে ফাড়িয়া ফেলে”(মথি ৭:৬) এই কারণেই যিশু কিছু পরিস্থিতিতে সমস্ত তথ্য জানাননি কিংবা কিছু প্রশ্নের উত্তর সরাসরি দেননি যার কারণে অযথা সমস্যায় পড়তে পারতেন। (মথি ১৫:১-৬; ২১:২৩-২৭; যোহন ৭:৩-১০) তাহলে কি অব্রাহাম, ইস্হাক, রাহব আর ইলীশায়, যিহোবার উপাসনাকারী নয় এমন ব্যক্তিদের যা বলেছিলেন, তা কি মিথ্যা ছিল? একেবারেই না। তারাও পুরো তথ্য জানাননি অথবা কৌশলতার সঙ্গে তাদের কথার উত্তর দেওয়া এড়িয়ে গিয়েছিলেন।—আদি. ১২:১০-১৯; যিহো. ২:১-৬; যাকোব ২:২৫; ২ রাজা. ৬:১১-২৩.
মার্চ ২৩-২৯
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন
আদিপুস্তক ২৭-২৮
“যাকোব তার ন্যায্য আশীর্বাদ লাভ করেন”
প্রহরীদুর্গ ০৪ ৪/১৫ ১১ অনু. ৪-৫
রিবিকা—এক পরিশ্রমী স্ত্রীলোক, যিনি ঈশ্বরকে ভয় করতেন
এষৌ যে যাকোবকে সেবা করবে এই বিষয়ে ইস্হাক জানতেন কি না, বাইবেল তা জানায় না। যাই হোক না কেন, রিবিকা এবং যাকোব উভয়েই জানত যে, আশীর্বাদের অধিকারী যাকোব। এষৌ তার বাবার জন্য শিকার করা মাংসের খাবার আনলে ইস্হাক তাকেই আশীর্বাদ করার পরিকল্পনা করছেন জানার সঙ্গে সঙ্গে রিবিকা পদক্ষেপ নেন। সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা ও উদ্যোগ যা তাকে তার যৌবনে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছিল, সেগুলো তখনও তার চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ছিল। তিনি যাকোবকে তার কাছে দুটো ছাগ-বৎস নিয়ে আসার “আজ্ঞা” করেন। তিনি তার স্বামীর প্রিয় এক খাবার প্রস্তুত করবেন। এরপর আশীর্বাদ লাভ করার জন্য যাকোবকে এষৌর ভান করতে হবে। যাকোব আপত্তি জানায়। তার বাবা ফন্দির বিষয়টা বুঝে ফেলবেন এবং তাকে অভিশাপ দেবেন! রিবিকা জোর করেন। “বৎস, সেই অভিশাপ আমাতেই বর্ত্তুক,” তিনি বলেন। এরপর তিনি খাবার প্রস্তুত করেন, যাকোবকে এষৌর ছদ্মবেশ ধারণ করান এবং তাকে তার স্বামীর কাছে পাঠান।—আদিপুস্তক ২৭:১-১৭.
কেন রিবিকা এরকম করেছেন, তা উল্লেখ করা নেই। অনেকেই তার কাজের নিন্দা করে কিন্তু বাইবেল তা করে না কিংবা ইস্হাক যখন জানতে পারেন যে, যাকোব আশীর্বাদ লাভ করেছেন তখনও তিনি তার নিন্দা করেননি। বরং, ইস্হাক এটাকে আরও বৃদ্ধি করেন। (আদিপুস্তক ২৭:২৯; ২৮:৩, ৪) রিবিকা জানতেন যে, তার ছেলেদের সম্বন্ধে যিহোবা কী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তাই যে-আশীর্বাদ যথার্থভাবে যাকোবের সেটাকে নিশ্চিত করতে তিনি পদক্ষেপ নেন। স্পষ্টভাবেই এটা যিহোবার ইচ্ছার সঙ্গে মিল রাখে।—রোমীয় ৯:৬-১৩.
প্রহরীদুর্গ ০৭ ১০/১ ৩১ অনু. ২-৩
পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
রিবিকা এবং যাকোব কেন এইরকম আচরণ করেছিল, সেই সম্বন্ধে বাইবেল আমাদেরকে কিছু বলে না কিন্তু এটা ইঙ্গিত করে যে, সেই পরিস্থিতি হঠাৎ করে উপস্থিত হয়েছিল। আমাদের লক্ষ করা উচিত যে, রিবিকা ও যাকোব যা করেছিল, ঈশ্বরের বাক্য সেটাকে সমর্থনও করে না কিংবা সেটার নিন্দাও করে না আর তাই এই বিবরণ মিথ্যা ও প্রতারণার কোনো উদাহরণও স্থাপন করে না। কিন্তু, বাইবেল সেই পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করে।
প্রথমত, এই বিবরণ এটা স্পষ্ট করে যে, এষৌর নয় কিন্তু যাকোবেরই তার পিতার আশীর্বাদ পাওয়ার অধিকার ছিল। এই ঘটনার আগে, যাকোব আইনগতভাবে তার উপলব্ধিহীন যমজ ভাইয়ের কাছ থেকে জ্যেষ্ঠাধিকার ক্রয় করেছিলেন, যিনি তার খিদে মেটানোর জন্য খাদ্যের বিনিময়ে সেটা বিক্রি করে দিয়েছিলেন। এষৌ “জ্যেষ্ঠাধিকার তুচ্ছ করিলেন।” (আদিপুস্তক ২৫:২৯-৩৪) তাই, তার বাবার কাছে গিয়ে যাকোব আসলে সেই আশীর্বাদই চেয়েছিলেন, যেটা ন্যায়সংগতভাবে তারই অধিকারভুক্ত ছিল।
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৩৪১ অনু. ৬
আশীর্বাদ
কুলপতিদের সময়ে একজন পিতা প্রায়ই মৃত্যুর অল্প সময় আগে তার ছেলেদের আশীর্বাদ করতেন। এটা কোনো সাধারণ বিষয় নয় বরং অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। ইস্হাক যাকোবকে নিজের প্রথমজাত পুত্র এষৌ মনে করে আশীর্বাদ করেন যেন সে তার নিজের ভাইয়ের থেকে আরও বেশি সাফল্য অর্জন করে এবং সবসময় যেন তার প্রতি যিহোবার অনুমোদন থাকে। অন্য ভাবে বললে ইস্হাক যিহোবার কাছে বিনতি করছিলেন যেন তিনি তার পুত্রকে আশীর্বাদ করেন কারণ ইস্হাক বৃদ্ধ এবং অন্ধ ছিলেন। (আদি. ২৭:১-৪, ২৩-২৯; ২৮:১, ৬; ইব্রীয় ১১:২০; ১২:১৬, ১৭) পরে যখন ইস্হাক জানতে পারলেন যে, তিনি এষৌর পরিবর্তে যাকোবকে আশীর্বাদ করেছেন, তখন তিনি আবারও যাকেবকে ডেকে আশীর্বাদ করলেন আর পরে তাকে অন্য আরও কথা খুলে বললেন। (আদি. ২৮:১-৪) যাকোবও মারা যাওয়ার আগে যোষেফের দুই পুত্রকে আশীর্বাদ করেন এবং পরে নিজের পুত্রকে আশীর্বাদ করেন। (আদি. ৪৮:৯, ২০; ৪৯:১-২৮; ইব্রীয় ১১:২১) একইভাবে, মোশিও তার মৃত্যুর আগে পুরো ইস্রায়েল জাতিকে আশীর্বাদ করেন।(দ্বিতীয়. ৩৩:১) এই সমস্ত বিবরণে আশীর্বাদ দেওয়ার সময় যেসব কথা বলা হয়েছিল তা পূর্ণ হয়েছিল। এটা প্রমাণ করে যে, এই আশীর্বাদগুলো আসলে ভবিষ্যদ্বাণী ছিল। কিছু কিছু ঘটনায় আশীর্বাদ দেওয়ার সময় একজন ব্যক্তি যাকে আশীর্বাদ করতেন তার মাথায় হাত দিতেন।—আদি. ৪৮:১৩, ১৪.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
প্রহরীদুর্গ ০৬ ৪/১৫ অনু. ৩-৪
আপনার সাথির সঙ্গে ভাববিনিময় করার অপরিহার্য বিষয়গুলো
ইস্হাক ও রিবিকা কি উত্তম ভাববিনিময়ের দক্ষতায় উন্নতি করে চলেছিল? তাদের ছেলে এষৌ যখন দুজন হিত্তীয় কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন, তখন এক গুরুতর পারিবারিক সমস্যার উদ্ভব হয়েছিল। রিবিকা ইস্হাককে “কহিলেন”: “এই হিত্তীয়দের কন্যাদের বিষয় আমার প্রাণে ঘৃণা হইতেছে; যদি যাকোবও [তাহাদের ছোট ছেলেও] ইহাদের মত কোন হিত্তীয় কন্যাকে, . . . বিবাহ করে, তবে প্রাণধারণে আমার কি লাভ?” (আদিপুস্তক ২৬:৩৪; ২৭:৪৬) এটা পরিষ্কার যে, তার চিন্তার বিষয় তিনি সুস্পষ্টভাবে খুলে বলেছিলেন।
এষৌর যমজ ভাই যাকোবকে ইস্হাক বলেছিলেন, তিনি যেন কনান দেশের কোনো মেয়েকে বিয়ে না করেন। (আদিপুস্তক ২৮:১, ২) রিবিকা তার বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন। এই দম্পতি পরিবারের অতি স্পর্শকাতর একটা বিষয় নিয়ে সফলভাবে ভাববিনিময় করেছিল আর আজকে আমাদের জন্য তা এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছে। কিন্তু কী হবে, যদি সাথিরা একমত হতে না পারে? কী করা যেতে পারে?
আদিপুস্তকের প্রধান বিষয়গুলো—দ্বিতীয় ভাগ
২৮:১২, ১৩—যাকোবের “এক সিড়ি” সংক্রান্ত স্বপ্নের তাৎপর্য কী ছিল? এই “সিড়ি,” যা দেখতে পাথরের সোপানশ্রেণীর মতো ছিল, তা ইঙ্গিত করেছিল যে পৃথিবী এবং স্বর্গের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে ঈশ্বরের দূতেদের ওঠানামা করা দেখিয়েছিল যে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে দূতেরা যিহোবা এবং সেই মানুষদের পরিচর্যা করে, যাদের তাঁর অনুমোদন রয়েছে।—যোহন ১:৫১.
মার্চ ৩০–এপ্রিল ৫
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন
আদিপুস্তক ২৯-৩০
“যাকোব বিয়ে করেন”
প্রহরীদুর্গ ০৩ ১০/১৫ ২৯ অনু. ৬
যাকোব আধ্যাত্মিক মূল্যবোধগুলোকে উচ্চমূল্য দিয়েছিলেন
কনের পরিবারকে কনেপণ দেওয়ার মাধ্যমে বাগ্দান সম্পাদন হতো। পরবর্তী সময়ে, মোশির ব্যবস্থায় ধার্য করা হয়, যে-কুমারী মেয়েকে সতীত্বহানি করা হয়েছে, তার জন্য ৫০ শেকল রৌপ্য পণ হিসেবে দিতে হবে। পণ্ডিত গরডন ওয়েনেম বিশ্বাস করেন যে, এটা ছিল “সর্বোচ্চ পরিমাণ বিয়ের উপহার” কিন্তু অধিকাংশই “খুব কম” ছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ২২:২৮, ২৯) যাকোব সেই মূল্য দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেননি। তিনি লাবনকে ৭ বছর কাজ করতে চাওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব দেন। “প্রাচীন বাবিলের সময় যেহেতু ঠিকা মজুররা মাসে অর্ধেক থেকে এক শেকলের মতো আয় করত” (পুরো সাত বছরে ৪২ থেকে ৮৪ শেকল), ওয়েনেম বলে চলেন, “যাকোব রাহেলকে বিয়ে করার বিনিময়ে লাবনকে এক উদার বিবাহ উপহার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।” লাবন সঙ্গে সঙ্গে তা গ্রহণ করেছিলেন।—আদিপুস্তক ২৯:১৯.
যে-দুঃখী বোনেরা “ইস্রায়েলের কুল নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন”
লেয়া কি যাকোবের সঙ্গে প্রতারণা করার চক্রান্ত করেছিলেন? নাকি তিনি কেবলমাত্র তার বাবার বাধ্য হয়েছিলেন? আর রাহেলই বা তখন কোথায় ছিলেন? কী ঘটছে, তা কি তিনি জানতেন? যদি জেনে থাকেন, তা হলে তার কেমন লেগেছিল? তিনি কি তার কর্তৃত্বপরায়ণ বাবার ইচ্ছাকে অমান্য করতে পারতেন? বাইবেল এই প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর দেয় না। বিষয়টা নিয়ে রাহেল ও লেয়া যা-ই ভাবুক না কেন, পরে সেই চক্রান্তটা যাকোবকে বিরক্ত করেছিল। আর মেয়েদের সঙ্গে নয় বরং তাদের বাবা লাবনের সঙ্গেই যাকোব এই যুক্তি করেছিলেন: “আমি কি রাহেলের জন্য আপনার দাস্যকর্ম্ম করি নাই? তবে কেন আমাকে প্রবঞ্চনা করিলেন?” লাবন কী উত্তর দিয়েছিলেন? “জ্যেষ্ঠার অগ্রে কনিষ্ঠাকে দান করা . . . অকর্ত্তব্য। তুমি ইহার সপ্তাহ পূর্ণ কর; পরে আরও সাত বৎসর আমার দাস্যকর্ম্ম স্বীকার করিবে, সেজন্য আমরা উহাকেও তোমাকে দান করিব।” (আদিপুস্তক ২৯:২৫-২৭) এভাবে স্বীয় উদ্দেশ্যসাধনে যাকোবকে বহুগামী বিবাহের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল, যা তিক্ত ঈর্ষার উদ্রেক করেছিল।
অন্তর্দৃষ্টি-২ ৩৪১ অনু. ৩
বিবাহ
উদযাপন। ইস্রায়েলে কোনো বিয়ের সময় যদিও কোনো বিশেষ রীতিনীতি ছিল না তবুও এটাকে অনেক আনন্দ ও খুশির সঙ্গে উদযাপন করা হতো। সাধারণত বিয়ের দিন কনেকে তার বাড়িতে থেকে অনেক প্রস্তুতি নিতে হতো। প্রথমে তিনি স্নান করতেন এবং সুগন্ধি তেল গায়ে মাখতেন। (তুলনা করুন রূৎ ৩:৩; যিহি. ২৩:৪০) এর পরে সাদা পোষাক ও গহনা পড়তেন । কিছু ক্ষেত্রে দাসীরা কনেকে সাহায্য করতেন। কনের পোষাক কতটা সুন্দর ও আকর্ষনীয় হবে সেটা তার আর্থিক সামর্থ্যের উপর নির্ভর করত। (যির. ২:৩২; প্রকা. ১৯:৭, ৮; গীত. ৪৫:১৩, ১৪) তিনি নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী গহনা দিয়ে সাজতেন। (যিশা. ৪৯:১৮; ৬১:১০; প্রকা. ২১:২) এরপর তিনি মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঘোমটা দিতেন। এর থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, কেন লাবন এত সহজে যাকোবকে প্রতারিত করতে পেরেছিলেন। যাকোব এটা বুঝতেই পারেননি যে, তার বিয়ে রাহেলের সঙ্গে নয় বরং লেয়ার সঙ্গে করানো হচ্ছে।(আদি. ২৯:২৩, ২৫) আর রিবিকা যখন ইস্হাকের সঙ্গে প্রথমবার দেখা করেন তখন তিনি ঘোমটা দিয়েছিলেন। (আদি. ২৪:৬৫) এটা এই বিষয়ের চিহ্ন ছিল যে, কনে তার ভাবী স্বামীর কর্তৃত্বের অধীনে রয়েছেন।—১ করি. ১১:৫, ১০.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৫০
দত্তক নেওয়া
রাহেল ও লেয়া দুজনেই যাকোবকে তাদের দাসী দিয়েছিলেন যেন তারা তার থেকে পুত্রসন্তান লাভ করতে পারে। এই পুত্রদেরকে রাহেল ও লেয়া নিজের সন্তান বলে মনে করতেন যেন তারা তাদের ‘হাঁটুতেই ভূমিষ্ঠ’[জুবিলী বাইবেল] হয়েছে। (আদি. ৩০:৩-৮, ১২, ১৩, ২৪) রাহেল ও লেয়ার সন্তানদের সাথে সাথে দাসীদের এই সন্তানরাও যাকোবের সম্পত্তির অংশ পেয়েছিল। এই সন্তানদের উপরে রাহেল ও লেয়ার পুরোপুরি অধিকার ছিল, কারণ তারা যাকোবের ছেলে ছিলেন আর তাদের মায়েরা রাহেল ও লেয়ার দাসী ছিল।
আদিপুস্তকের প্রধান বিষয়গুলো—দ্বিতীয় ভাগ
৩০:১৪, ১৫—কেন রাহেল কিছু দূদাফলের বিনিময়ে গর্ভবতী হওয়ার এক সুযোগ ছেড়ে দিয়েছিলেন? প্রাচীনকালে, দূদাফল ওষুধের মধ্যে এক মাদকদ্রব্য হিসেবে এবং খিঁচুনি রোধ করার বা তা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হতো। এ ছাড়া, মনে করা হতো যে, সেই ফলের যৌন কামনা জাগিয়ে তোলার এবং মানুষের জন্মদানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করার অথবা গর্ভধারণে সাহায্য করার ক্ষমতা রয়েছে। (পরমগীত ৭:১৩) যদিও রাহেলের সেই বিনিময়ের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বাইবেল কিছু জানায় না কিন্তু তিনি হয়তো মনে করেছিলেন যে, দূদাফল তাকে গর্ভধারণ করতে সাহায্য করবে এবং তার বন্ধ্যাত্বের অপবাদ ঘুচাবে। কিন্তু, কয়েক বছর কেটে যাওয়ার পর যিহোবা তার ‘গর্ব্ভ মুক্ত করিয়াছিলেন।’—আদিপুস্তক ৩০:২২-২৪.