অন্যদের সম্মান দেখান
“সমাদরে [সম্মানে] এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।”—রোমীয় ১২:১০.
১, ২. (ক) নম্রতা দেখানোর জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে? (খ) বাইবেলে “সম্মান” কথাটা প্রায়ই কী অর্থে ব্যবহার করা হয় আর কারা সম্মান দেখানোকে সহজ মনে করেন?
আমাদের আগের প্রবন্ধে ঈশ্বরের বাক্যের এই পরামর্শের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল: “তোমরা সকলেই এক জন অন্যের সেবার্থে নম্রতায় কটিবন্ধন কর, কেননা ‘ঈশ্বর অহঙ্কারীদের প্রতিরোধ করেন, কিন্তু নম্রদিগকে অনুগ্রহ প্রদান করেন।’” (১ পিতর ৫:৫) আমরা যদি নম্রতায় কটিবন্ধন করতে চাই, তবে তার একটা উপায় হল অন্যদের সম্মান দেখানো।
২ বাইবেলে ‘সম্মান’ শব্দটা প্রায়ই শ্রদ্ধা, মর্যাদা ও গুরুত্বকে বোঝায় যা আমাদের অন্যদেরকে দেখানো উচিত। অন্যদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করে, তাদের মর্যাদা দিয়ে, তারা কী বলতে চান তা শুনে এবং আমাদের কাছে যে যুক্তিসংগত অনুরোধ করা হয় তা রেখে আমরা অন্যদের সম্মান দেখাই। যারা নম্র তাদের এটা করতে কোন সমস্যাই হবে না। কিন্তু, যারা গর্বিত তাদের জন্য অন্তর থেকে সম্মান দেখানো কঠিন হতে পারে আর তারা হয়তো মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে অন্যের কাছে ভাল সাজার ও অন্যায় সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
যিহোবা মানুষকে সম্মান করেন
৩, ৪. কীভাবে যিহোবা অব্রাহামকে সম্মান দেখিয়েছিলেন এবং কেন?
৩ অন্যদের সম্মান দেখানোর ক্ষেত্রে যিহোবা নিজে উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তিনি মানুষদের স্বাধীন ইচ্ছা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন ও তিনি তাদেরকে যন্ত্র মনে করেন না। (১ পিতর ২:১৬) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঈশ্বর যখন অব্রাহামকে বলেছিলেন যে দুষ্টতার জন্য তিনি সদোমকে ধ্বংস করতে যাচ্ছেন, তখন অব্রাহাম জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “আপনি কি দুষ্টের সহিত ধার্ম্মিককেও সংহার করিবেন? সেই নগরের মধ্যে যদি পঞ্চাশ জন ধার্ম্মিক পাওয়া যায়, তবে আপনি কি তথাকার পঞ্চাশ জন ধার্ম্মিকের অনুরোধে সেই স্থানের প্রতি দয়া না করিয়া তাহা বিনষ্ট করিবেন?” যিহোবা তাকে বলেছিলেন যে ৫০ জন ধার্মিক লোক থাকলে তিনি ওই নগরকে ধ্বংস করবেন না। এরপর অব্রাহাম নম্রভাবে প্রশ্ন করেই চলেন। যদি সেখানে ৪৫ জন থাকেন? যদি ৪০ জন? ৩০, ২০ অথবা ১০ জন লোক থাকেন? যিহোবা অব্রাহামকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে যদি সেখানে মাত্র দশ জন ধার্মিক লোকও পাওয়া যায় তিনি সদোমকে ধ্বংস করবেন না।—আদিপুস্তক ১৮:২০-৩৩.
৪ যিহোবা জানতেন যে সদোমে দশ জন ধার্মিক লোকও নেই কিন্তু তবুও তিনি অব্রাহামের কথা শুনে তাকে সম্মান দেখিয়েছিলেন ও তাঁর সঙ্গে শ্রদ্ধাপূর্ণ ব্যবহার করেছিলেন। কেন? কারণ অব্রাহাম “সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করিলেন, আর সদাপ্রভু তাঁহার পক্ষে তাহা ধার্ম্মিকতা বলিয়া গণনা করিলেন।” অব্রাহামকে “ঈশ্বরের বন্ধু” বলা হয়েছিল। (আদিপুস্তক ১৫:৬; যাকোব ২:২৩) এছাড়াও, যিহোবা লক্ষ্য করেছিলেন যে অব্রাহাম অন্যদের সম্মান করতেন। অব্রাহামের পশুপালক ও তার ভাইয়ের ছেলে লোটের পশুপালকদের মধ্যে যখন এলাকা নিয়ে ঝগড়া বাঁধে, তখন অব্রাহাম প্রথমে লোটকে এলাকা বেছে নেওয়ার সুযোগ দিয়ে তাকে সম্মান দেখিয়েছিলেন। লোট তার পছন্দের এলাকা বেছে নিয়েছিলেন আর অব্রাহাম অন্য জায়গায় চলে গিয়েছিলেন।—আদিপুস্তক ১৩:৫-১১.
৫. কীভাবে যিহোবা লোটকে সম্মান দেখিয়েছিলেন?
৫ যিহোবা ধার্মিক লোটকেও সম্মান দেখিয়েছিলেন। সদোমকে ধ্বংস করার আগে, তিনি লোটকে পাহাড়ি এলাকায় পালিয়ে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু, লোট বলেছিলেন যে তিনি সেখানে যেতে চান না; তিনি কাছের নগর সোয়রে যেতে চেয়েছিলেন যদিও ওই নগরটাও ধ্বংস করার কথা ছিল। যিহোবা লোটকে বলেছিলেন: “ভাল, আমি এ বিষয়েও তোমার প্রতি অনুগ্রহ করিয়া, ঐ যে নগরের কথা কহিলে, উহা উৎপাটন করিব না।” বিশ্বস্ত লোট যা চেয়েছিলেন তা করে যিহোবা তাকে সম্মান দেখিয়েছিলেন।—আদিপুস্তক ১৯:১৫-২২; ২ পিতর ২:৬-৯.
৬. কীভাবে যিহোবা মোশিকে সম্মান দেখিয়েছিলেন?
৬ যিহোবা যখন মোশিকে তাঁর লোকেদের দাসত্ব থেকে মুক্ত করার ও ফরৌণকে ঈশ্বরের লোকেদের ছেড়ে দিতে বলার জন্য মিশরে পাঠাতে চেয়েছিলেন, তখন মোশি বলেছিলেন: “হায় প্রভু! আমি বাক্পটু নহি।” যিহোবা মোশিকে অভয় দিয়েছিলেন: “আমি তোমার মুখের সহবর্ত্তী হইব, ও কি বলিতে হইবে, তোমাকে জানাইব।” কিন্তু তবুও মোশি ইতস্তত করছিলেন। ফলে যিহোবা আবারও মোশিকে অভয় দিয়েছিলেন ও তার ভাই হারোণকে তার মুখপাত্র করে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন যাতে তিনি তার হয়ে কথা বলতে পারেন।—যাত্রাপুস্তক ৪:১০-১৬.
৭. কেন যিহোবা অন্যদের সম্মান দেখাতে ইচ্ছুক ছিলেন?
৭ এই ঘটনাগুলোতে যিহোবা দেখিয়েছিলেন যে তিনি অন্যদের সম্মান করতে ইচ্ছুক, বিশেষ করে যারা তাঁর সেবা করেন। যদিও তারা যিহোবার কাছে যা চেয়েছিলেন তা তাঁর আসল উদ্দেশ্য থেকে ভিন্ন ছিল, তবুও তিনি তাদের অনুরোধ শুনেছিলেন আর যতক্ষণ না তা তাঁর উদ্দেশ্যে বাধা দিয়েছিল ততক্ষণ তা রেখেছিলেন।
যীশু অন্যদের সম্মান দেখিয়েছিলেন
৮. কীভাবে যীশু একজন ভীষণ অসুস্থ মহিলাকে সম্মান দেখিয়েছিলেন?
৮ যিহোবাকে অনুকরণ করে যীশুও অন্যদের সম্মান দেখিয়েছিলেন। একবার যীশু এক ভিড়ের মধ্যে ছিলেন আর সেখানে একজন মহিলাও ছিলেন যিনি ১২ বছর ধরে রক্তস্রাবে ভুগছিলেন। চিকিৎসকরা তার রোগ ভাল করতে পারেননি। মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী তিনি অশুচি ছিলেন আর লোকেদের মধ্যে থাকা তার উচিত ছিল না। কিন্তু তিনি যীশুর পিছনে এসে তাঁর কাপড় ছুঁয়ে ভাল হয়ে গিয়েছিলেন। যীশু ব্যবস্থার খুঁটিনাটি নিয়ম ধরে বসে থাকেননি বা তার কাজের জন্য তাকে বকাঝকাও করেননি। বরং, তার অবস্থার কথা জেনে তিনি তাকে সম্মান দেখিয়েছিলেন এই বলে: “হে কন্যে, তোমার বিশ্বাস তোমাকে রক্ষা করিল, শান্তিতে চলিয়া যাও, ও তোমার রোগ হইতে মুক্ত থাক।”—মার্ক ৫:২৫-৩৪; লেবীয় পুস্তক ১৫:২৫-২৭.
৯. কীভাবে যীশু একজন পরজাতীয়কে সম্মান করেছিলেন?
৯ আরেকবার এক ফৈনিকীয় স্ত্রীলোক যীশুকে বলেছিলেন: “হে প্রভু, দায়ূদ-সন্তান, আমার প্রতি দয়া করুন, আমার কন্যাটী ভূতগ্রস্ত হইয়া অত্যন্ত ক্লেশ পাইতেছে।” যীশু জানতেন যে তাঁকে গালীলীয়দের জন্য নয় কিন্তু ইস্রায়েল জাতির জন্য পাঠানো হয়েছিল, তাই তিনি বলেছিলেন: “[ইস্রায়েল] সন্তানদের খাদ্য লইয়া [বাচ্চা] কুকুরদের [পরজাতীয়দের] কাছে ফেলিয়া দেওয়া ভাল নয়।” সেই স্ত্রীলোক উত্তরে বলেছিলেন: “[বাচ্চা] কুকুরেরাও আপন আপন কর্ত্তাদের মেজ হইতে যে গুঁড়াগাঁড়া পড়ে, তাহা খায়।” পরে যীশু বলেছিলেন: “হে নারি, তোমার বড়ই বিশ্বাস, তোমার যেমন ইচ্ছা, তেমনি তোমার প্রতি হউক।” আর তার মেয়ে ভাল হয়ে গিয়েছিল। যীশু পরজাতীয় স্ত্রীলোকের বিশ্বাসের জন্য তাকে সম্মান দেখিয়েছিলেন। আর তিনি তাঁর কথাকে কোমলতার সঙ্গে বলার জন্য বন্য কুকুর বলার বদলে “বাচ্চা কুকুর” বলেছিলেন আর এতে তাঁর করুণাও প্রকাশ পেয়েছিল।—মথি ১৫:২১-২৮.
১০. যীশু তাঁর শিষ্যদের কোন্ মহৎ শিক্ষা দিয়েছিলেন আর এটা কেন দরকার ছিল?
১০ যীশু সবসময় তাঁর শিষ্যদের নম্র হতে ও অন্যদের সম্মান দেখাতে শিখিয়েছিলেন কারণ তখনও তাদের মধ্যে আমিত্ব মনোভাব ছিল। একবার তারা এই বিষয় নিয়ে তর্ক করার পর, যীশু তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “তোমরা কোন্ বিষয়ে তর্কবিতর্ক করিতেছিলে?” তারা চুপ হয়ে গিয়েছিলেন কারণ তারা “কে শ্রেষ্ঠ, . . . পরস্পর এই বিষয়ে বাদানুবাদ করিয়াছিলেন।” (মার্ক ৯:৩৩, ৩৪) এমনকি যীশু মারা যাওয়ার আগের রাতে, “তাঁহাদের মধ্যে এই বিবাদও উৎপন্ন হইল যে, তাঁহাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ বলিয়া গণ্য।” (লূক ২২:২৪) তাই নিস্তারপর্বের ভোজের সময়, যীশু “পাত্রে জল ঢালিলেন ও শিষ্যদের পা ধুইয়া দিতে লাগিলেন।” কী এক মহৎ শিক্ষা! যীশু ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন আর এই নিখিল বিশ্বে যিহোবার পরেই তাঁর স্থান। তবুও, তিনি তাঁর শিষ্যদের পা ধুইয়ে দিয়ে তাদের সম্মান দেখানোর বিষয়ে এক বড় শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে দৃষ্টান্ত দেখাইলাম, যেন তোমাদের প্রতি আমি যেমন করিয়াছি, তোমরাও তদ্রূপ কর।”—যোহন ১৩:৫-১৫.
পৌল সম্মান দেখিয়েছিলেন
১১, ১২. পৌল খ্রীষ্টান হওয়ার পর কী শিখেছিলেন আর ফিলীমনের ক্ষেত্রে তিনি এটা কীভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন?
১১ খ্রীষ্টকে অনুকরণ করে প্রেরিত পৌল অন্যদের সম্মান দেখিয়েছিলেন। (১ করি. ১০:৩৪) তিনি বলেছিলেন: “মনুষ্যদের হইতে সম্মান পাইতে চেষ্টা করি নাই, . . . কিন্তু যেমন স্তন্যদাত্রী নিজ বৎসদিগের লালন পালন করে, তেমনি তোমাদের মধ্যে কোমল ভাব দেখাইয়াছিলাম।” (১ থিষলনীকীয় ২:৬, ৭) একজন স্তন্যদাত্রী মা তার বাচ্চাদের যত্ন নেন। পৌল খ্রীষ্টান হওয়ার পর নম্র হতে শিখেছিলেন ও তার খ্রীষ্টান ভাইবোনদের সঙ্গে কোমল ব্যবহার করে তাদের সম্মান দেখিয়েছিলেন। এটা করে তিনি তাদের স্বাধীন ইচ্ছার প্রতিও শ্রদ্ধা দেখিয়েছিলেন আর এই বিষয়টা রোমে বন্দি থাকা অবস্থায় যে ঘটনাটা ঘটেছিল তাতে দেখা যায়।
১২ ওনীষীম নামে এক পলাতক দাস পৌলের শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি একজন খ্রীষ্টান ও পৌলের বন্ধু হয়েছিলেন। ওই দাসের মালিক ছিলেন ফিলীমন, যিনি নিজেও একজন খ্রীষ্টান ছিলেন ও এশিয়া মাইনরে থাকতেন। ফিলীমনের কাছে লেখা একটা চিঠিতে, পৌল ওনীষীম যে তার কতটা উপকার করেছিলেন তা এই বলে লিখেছিলেন: “আমি তাহাকে আমার কাছে রাখিতে চাহিয়াছিলাম।” কিন্তু, পৌল ওনীষীমকে ফিলীমনের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন কারণ তিনি লিখেছিলেন: “তোমার সম্মতি বিনা কিছু করিতে ইচ্ছা করিলাম না, যেন তোমার সৌজন্য আবশ্যকতার ফল না হইয়া স্ব-ইচ্ছার ফল হয়।” পৌল তার প্রেরিত পদের সুযোগ নেননি, ওনীষীমকে রোমে রেখে দেওয়ার অনুরোধ না জানিয়ে তিনি ফিলীমনকে সম্মান দেখিয়েছিলেন। এছাড়াও, পৌল ফিলীমনকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যাতে তিনি ওনীষীমের সঙ্গে “দাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির, প্রিয় ভ্রাতার ন্যায়” ব্যবহার করে তাকে সম্মান দেখান।—ফিলীমন ১৩-১৬.
আজ অন্যদের সম্মান দেখানো
১৩. রোমীয় ১২:১০ পদ আমাদের কী করতে বলে?
১৩ ঈশ্বরের বাক্য পরামর্শ দেয়: “সমাদরে [সম্মানের সঙ্গে] এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।” (রোমীয় ১২:১০) এর মানে হল যে অন্যেরা প্রথমে আমাদের সম্মান দেখাবে তার জন্য বসে না থেকে আমাদের নিজেদেরই আগে অন্যদের সম্মান দেখানো উচিত। “কেহই স্বার্থ চেষ্টা না করুক, বরং প্রত্যেক জন পরের মঙ্গল চেষ্টা করুক।” (১ করিন্থীয় ১০:২৪; ১ পিতর ৩:৮, ৯) তাই, যিহোবার দাসেরা পরিবারের সদস্যদের, মণ্ডলীর ভাইবোনদের ও বাইরের লোকেদের সম্মান দেখানোর সুযোগ খোঁজেন।
১৪. স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কীভাবে সম্মান দেখানো যেতে পারে?
১৪ বাইবেল বলে: “প্রত্যেক পুরুষের মস্তকস্বরূপ খ্রীষ্ট, এবং স্ত্রীর মস্তকস্বরূপ পুরুষ।” (১ করিন্থীয় ১১:৩) সুতরাং, যিহোবা পুরুষদের দায়িত্ব দেন যে তারা যেন তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে ঠিক সেইরকম ব্যবহার করেন, যেমন খ্রীষ্ট মণ্ডলীর সঙ্গে করেছিলেন। ১ পিতর ৩:৭ পদে স্বামীকে বলা হয়েছে যেন তিনি তার স্ত্রীকে “অপেক্ষাকৃত দুর্ব্বল পাত্র বলিয়া . . . সমাদর [সম্মান]” করেন। তিনি তার স্ত্রীর কথা শোনার জন্য সত্যিকারের আগ্রহ দেখিয়ে এবং তার পরামর্শগুলো নিয়ে চিন্তা করে তা করতে পারেন। (আদিপুস্তক ২১:১২) যদি কোন বাইবেলের নীতির হেরফের না হয়, তাহলে তিনি হয়তো তার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে পারেন আর তিনি তার ভাল করার চেষ্টা করেন ও তার সঙ্গে কোমল ব্যবহার করেন। অন্যদিকে, “স্ত্রীর উচিত যেন সে স্বামীকে ভয় [গভীর সম্মান] করে।” (ইফিষীয় ৫:৩৩) তিনি তার স্বামীর কথা শোনেন, সবসময় নিজের খুশি মতো চলার চেষ্টা করেন না, তাকে ছোট করেন না বা তার খুঁত ধরেন না। স্বামীর ওপর কর্তৃত্ব করার চেষ্টা না করে তিনি নম্রতা দেখান, এমনকি তখনও যখন হয়তো কিছু বিষয়ে স্বামীর চেয়ে তার বেশি দক্ষতা থাকে।
১৫. বয়স্ক ব্যক্তিদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা দরকার এবং তারাও কী করবেন?
১৫ মণ্ডলীতে বিশেষ করে বয়স্ক লোকেরা সম্মান পাওয়ার যোগ্য। “তুমি পক্বকেশ প্রাচীনের সম্মুখে উঠিয়া দাঁড়াইবে, বৃদ্ধ লোককে [বৃদ্ধা মহিলাকে] সমাদর [সম্মান] করিবে।” (লেবীয় পুস্তক ১৯:৩২) বিশেষ করে সেসব ব্যক্তিদের সম্মান দেখাতে হবে যারা অনেক বছর ধরে বিশ্বস্তভাবে যিহোবাকে সেবা করেছেন কারণ “পক্ব কেশ শোভার মুকুট; তাহা ধার্ম্মিকতার পথে পাওয়া যায়।” (হিতোপদেশ ১৬:৩১) অধ্যক্ষদের তাদের চেয়ে বয়সে বড় ভাইবোনদের তাদের প্রাপ্য শ্রদ্ধা দেখিয়ে উদাহরণ স্থাপন করা উচিত। তবে, বয়স্ক ভাইবোনেরাও যুবক ভাইবোনদেরকে, বিশেষ করে যারা পালকে দেখাশোনা করেন তাদের শ্রদ্ধা দেখানো দরকার।—১ পিতর ৫:২, ৩.
১৬. কীভাবে বাবামা ও ছেলেমেয়েরা একে অন্যকে সম্মান দেখাতে পারেন?
১৬ ছোট ছেলেমেয়েদের তাদের বাবামাদেরকে সম্মান করতে হবে: “সন্তানেরা, তোমরা প্রভুতে পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও, কেননা তাহা ন্যায্য। ‘তোমার পিতাকে ও তোমার মাতাকে সমাদর করিও,’—এ ত প্রতিজ্ঞাসহযুক্ত প্রথম আজ্ঞা—‘যেন তোমার মঙ্গল হয়, এবং তুমি দেশে দীর্ঘায়ু হও।’” একইভাবে বাবামায়েরাও তাদের ছেলেমেয়েদের সম্মান করেন, কারণ তাদের বলা হয়েছে যেন তারা ‘আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ না করেন, বরং প্রভুর শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তোলেন।’—ইফিষীয় ৬:১-৪; যাত্রাপুস্তক ২০:১২.
১৭. কারা “দ্বিগুণ সম্মান পাওয়ার” যোগ্য?
১৭ এছাড়াও যারা মণ্ডলীকে দেখাশোনা করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন তাদেরকেও সম্মান দেখাতে হবে: “যে প্রাচীনেরা উত্তমরূপে শাসন করেন, বিশেষতঃ যাঁহারা বাক্যে ও শিক্ষাদানে পরিশ্রম করেন, তাঁহারা দ্বিগুণ সমাদরের [সম্মান পাওয়ার] যোগ্য গণিত হউন।” (১ তীমথিয় ৫:১৭) ইব্রীয় ১৩:১৭ পদে যা বলা আছে তা করে আমরা তাদের সম্মান দেখাতে পারি: “তোমরা তোমাদের নেতাদিগের আজ্ঞাগ্রাহী ও বশীভূত হও।”
১৮. মণ্ডলীর বাইরের লোকেদের প্রতি আমাদের কী করতে হবে?
১৮ আমাদের কি বাইরের লোকেদেরও সম্মান দেখানো উচিত? হ্যাঁ। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের বলা হয়েছে: “প্রত্যেক প্রাণী প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের বশীভূত হউক।” (রোমীয় ১৩:১) এরা হলেন জগতের শাসকরা যাদেরকে ঈশ্বর তাঁর রাজ্য না আসা পর্যন্ত কর্তৃত্ব করতে অনুমতি দিয়েছেন। (দানিয়েল ২:৪৪) তাই আমরা ‘যাহার যাহা প্রাপ্য, তাহাকে তাহা দিই। যাঁহাকে কর দিতে হয়, কর দিই; যাঁহাকে শুল্ক দিতে হয়, শুল্ক দিই; যাঁহাকে ভয় করিতে হয়, ভয় করি; যাঁহাকে সমাদর [সম্মান] করিতে হয়, সমাদর করি।’ (রোমীয় ১৩:৭) আমাদের “সকলকে সমাদর [সম্মান]” করতে হবে।—১ পিতর ২:১৭.
১৯. কীভাবে আমরা অন্যদের প্রতি “সৎকর্ম্ম” করতে পারি এবং তাদের সম্মান দেখাতে পারি?
১৯ এটা ঠিক যে আমাদের বাইরের লোকেদেরও সম্মান দেখাতে হবে কিন্তু লক্ষ্য করুন যে ঈশ্বরের বাক্য কোন্ বিষয়ের ওপর জোর দেয়: “আইস, আমরা যেমন সুযোগ পাই, তেমনি সকলের প্রতি, বিশেষতঃ যাহারা বিশ্বাস-বাটীর পরিজন, তাহাদের প্রতি সৎকর্ম্ম করি।” (গালাতীয় ৬:১০) অন্যদের প্রতি “সৎকর্ম্ম” করার সবচেয়ে ভাল উপায় হল তাদের মধ্যে আধ্যাত্মিক চাহিদা গড়ে তোলা ও তা পূরণ করা। (মথি ৫:৩) এটা আমরা করতে পারি প্রেরিত পৌলের কথা শুনে যা তিনি আমাদের মনে রাখার জন্য বলেছিলেন: “তুমি আপনাকে ঈশ্বরের কাছে পরীক্ষাসিদ্ধ লোক দেখাইতে যত্ন কর; এমন কার্য্যকারী হও, যাহার লজ্জা করিবার প্রয়োজন নাই, যে সত্যের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করিতে জানে।” আমরা যখন আমাদের “পরিচর্য্যা সম্পন্ন” করার জন্য সাক্ষ্য দেওয়ার প্রতিটা সুযোগকে কৌশলের সঙ্গে কাজে লাগাই, তখন আমরা শুধু অন্যের জন্য ভাল কাজই করছি না কিন্তু তাদের সম্মানও দেখাচ্ছি।—২ তীমথিয় ২:১৫; ৪:৫.
যিহোবাকে সম্মান করা
২০. ফরৌণ ও তার সেনাবাহিনীর কী হয়েছিল এবং কেন?
২০ যিহোবা তাঁর সৃষ্টিকে সম্মান করেন। তাহলে এটা যুক্তিসংগত যে আমাদেরও তাঁকে সম্মান করা উচিত। (হিতোপদেশ ৩:৯; প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) যিহোবার বাক্য এও বলে: “যাহারা আমাকে গৌরবান্বিত [সম্মান] করে, তাহাদিগকে আমি গৌরবান্বিত [সম্মান] করিব; কিন্তু যাহারা আমাকে তুচ্ছ করে, তাহারা তুচ্ছীকৃত হইবে।” (১ শমূয়েল ২:৩০) মিশরের ফরৌণকে যখন ঈশ্বরের লোকেদের ছেড়ে দিতে বলা হয়েছিল, তখন তিনি উদ্ধতভাবে বলেছিলেন: ‘সদাপ্রভু কে, যে আমি তাহার কথা শুনিব?’ (যাত্রাপুস্তক ৫:২) ফরৌণ যখন ইস্রায়েলীয়দের ধ্বংস করার জন্য তার সেনাবাহিনীকে পাঠিয়েছিলেন, তখন যিহোবা ইস্রায়েলের জন্য লোহিত সাগরের জলকে দুই ভাগ করে পথ তৈরি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু মিশরীয়রা যখন সে পথে তাদের পিছু নিয়েছিল, তখন যিহোবা আবারও জল এক করে দিয়েছিলেন। “[যিহোবা] ফরৌণের রথসমূহ ও সৈন্যদলকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করিলেন।” (যাত্রাপুস্তক ১৪:২৬-২৮; ১৫:৪) উদ্ধতভাবে যিহোবাকে সম্মান করতে না চাওয়ায় ফরৌণকে ধ্বংসাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হয়েছিল।—গীতসংহিতা ১৩৬:১৫.
২১. কেন যিহোবা বেল্শৎসরের বিপক্ষে গিয়েছিলেন এবং এর ফল কী হয়েছিল?
২১ বাবিলনের রাজা বেল্শৎসর যিহোবাকে সম্মান দেখাতে চাননি। এক ভোজের উৎসবে, তিনি যিরূশালেমের মন্দির থেকে আনা সোনা ও রুপোর তৈরি পবিত্র পাত্রে মদ খেয়ে যিহোবাকে বিদ্রূপ করেছিলেন। আর তিনি সেই সময় তার পৌত্তলিক দেবতাদের প্রশংসা করছিলেন। কিন্তু যিহোবার দাস দানিয়েল তাকে বলেছিলেন: “আপনি অন্তঃকরণ নম্র করেন নাই। কিন্তু স্বর্গাধিপতির বিরুদ্ধে আপনাকে উচ্চ করিয়াছেন।” সেই রাতেই বেল্শৎসর নিহত হয়েছিলেন ও তার রাজ্য তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল।—দানিয়েল ৫:২২-৩১.
২২. (ক) কেন যিহোবা ইস্রায়েলের নেতা ও লোকেদের ওপর ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন? (খ) কাদের যিহোবা দয়া দেখিয়েছিলেন এবং এর ফল কী হয়েছিল?
২২ সাধারণ কাল প্রথম শতাব্দীতে, রাজা হেরোদ জনগণের উদ্দেশে একটা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন আর তখন লোকেরা চেঁচিয়ে বলেছিল: “এ দেবতার রব, মানুষের নয়।” দাম্ভিক রাজা বাধা না দিয়ে বরং গৌরব পেতে চেয়েছিলেন। এতে “প্রভুর এক দূত তখনই তাঁহাকে আঘাত করিলেন, কেননা তিনি ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করিলেন না।” (প্রেরিত ১২:২১-২৩) হেরোদ যিহোবাকে সম্মান না দেখিয়ে নিজেকে সম্মানিত করেছিলেন বলে মারা গিয়েছিলেন। তখনকার সময়ের ধর্মীয় নেতারা তাঁর পুত্র, যীশুকে হত্যা করার চক্রান্ত করে ঈশ্বরকে অসম্মান করেছিল। কিছু কিছু নেতা জানতেন যে যীশু সত্য শিক্ষা দিচ্ছেন কিন্তু তারা তাঁর কথা শোনেননি “কেননা ঈশ্বরের কাছে গৌরব অপেক্ষা তারা বরং মনুষ্যদের কাছে গৌরব অধিক ভাল বাসিত।” (যোহন ১১:৪৭-৫৩; ১২:৪২, ৪৩) সেই পুরো জাতি যিহোবাকে বা তাঁর নিযুক্ত প্রতিনিধি যীশুকে সম্মান করেনি। ফলে, যিহোবাও তাদের আর সম্মান দেখাননি, তিনি তাদেরকে ত্যাগ করেছিলেন ও তাদের মন্দিরকে ধ্বংস হতে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাদের রক্ষা করেছিলেন যারা তাঁকে ও তাঁর পুত্রকে সম্মান করেছিলেন।—মথি ২৩:৩৮; লূক ২১:২০-২২.
২৩. ঈশ্বরের নতুন জগতে বাস করার জন্য আমাদের কী করতে হবে? (গীতসংহিতা ৩৭:৯-১১; মথি ৫:৫)
২৩ এই বর্তমান বিধিব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর যারা ঈশ্বরের নতুন জগতে বাস করতে চান তাদের অবশ্যই ঈশ্বর ও তাঁর পুত্র, যীশু খ্রীষ্টকে সম্মান দেখাতে ও তাদের আজ্ঞা পালন করতে হবে। (যোহন ৫:২২, ২৩; ফিলিপীয় ২:৯-১১) যারা তাঁদের সম্মান করে না তারা “দেশ হইতে উচ্ছিন্ন হইবে।” অন্যদিকে, যে ধার্মিক লোকেরা ঈশ্বর ও খ্রীষ্টকে সম্মান করেন ও তাঁদের আজ্ঞা পালন করেন তারা ‘দেশে বাস করিবেন।’—হিতোপদেশ ২:২১, ২২.
পুনরালোচনা
◻ অন্যদের সম্মান দেখানোর মানে কী এবং যিহোবা এটা কীভাবে দেখিয়েছিলেন?
◻ কীভাবে যীশু ও পৌল অন্যদের সম্মান দেখিয়েছিলেন?
◻ আমাদের দিনে কারা সম্মান পাওয়ার যোগ্য?
◻ কেন আমাদের যিহোবা ও যীশুকে সম্মান করতে হবে?
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবা অব্রাহামের বিনতির প্রতি বিবেচনা দেখিয়ে তাকে সম্মান করেছিলেন
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
সুখী বিবাহে, স্বামী স্ত্রী একে অন্যকে সম্মান করেন