আপনি কি সমাদরে অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করেন?
“সমাদরে এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।”—রোমীয় ১২:১০.
১. বিশ্বের অনেক জায়গাতে কোন বিষয়টা এখন আর খুব একটা দেখা যায় না?
পৃথিবীর কিছু কিছু জায়গায় ছোটো ছেলেমেয়েরা যখন বড়দের সঙ্গে থাকে, তখন তাদের সামনে সম্মানপূর্বক হাঁটু গেড়ে বসে সমাদর করার রীতি রয়েছে। এভাবে তাদেরকে সেই ব্যক্তিদের চেয়ে লম্বা দেখাবে না, যারা তাদের থেকে বয়সে বড়। এই সমাজগুলোতে, একজন বড় ব্যক্তির দিকে ছোটোরা যদি পিছন ঘুরে দাঁড়ায়, তাহলে সেটাকেও এক অসম্মানজনক কাজ হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। যদিও ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতিতে বিভিন্নভাবে সম্মান দেখানো হয়ে থাকে, তবে এভাবে সম্মান প্রদর্শন করার বিষয়টা আমাদেরকে মোশির ব্যবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এর মধ্যে এই আদেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল: “তুমি পক্বকেশ প্রাচীনের সম্মুখে [সম্মানপূর্বক] উঠিয়া দাঁড়াইবে, বৃদ্ধ লোককে সমাদর করিবে।” (লেবীয়. ১৯:৩২) দুঃখের বিষয় যে, অনেক জায়গায় অন্যদের সমাদর করা এখন আর খুব একটা দেখা যায় না। বস্তুতপক্ষে, আজকে সব জায়গাতে অসম্মানই দেখা যায়।
২. ঈশ্বরের বাক্য আমাদের কাদেরকে সমাদর করতে বলে?
২ ঈশ্বরের বাক্য সমাদর করাকে উচ্চমূল্য দিয়ে থাকে। এটি আমাদেরকে যিহোবা ও যিশুকে সমাদর করতে বলে। (যোহন ৫:২৩) এ ছাড়া, আমাদেরকে পরিবারের সদস্যদের ও সহবিশ্বাসীদের এবং সেইসঙ্গে মণ্ডলীর বাইরের কিছু ব্যক্তিকে সমাদর করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। (রোমীয় ১২:১০; ইফি. ৬:১, ২; ১ পিতর ২:১৭) কিছু উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা দেখাই যে, আমরা যিহোবাকে সমাদর করি? কীভাবে আমরা আমাদের খ্রিস্টান ভাইবোনদের সমাদর করতে অর্থাৎ তাদের প্রতি গভীর সম্মান দেখাতে পারি? আসুন আমরা এই প্রশ্নগুলো ও সেইসঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আরও কিছু প্রশ্ন বিবেচনা করি।
যিহোবা ও তাঁর নামকে সমাদর করুন
৩. যিহোবাকে সমাদর করার একটা গুরুত্বপূর্ণ উপায় কী?
৩ যিহোবাকে সমাদর করার একটা গুরুত্বপূর্ণ উপায় হচ্ছে, তাঁর নামের প্রতি উপযুক্ত সম্মান দেখানো। আর আমরা হলাম ‘তাঁহার নামের জন্য এক দল প্রজা।’ (প্রেরিত ১৫:১৪) সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নাম বহন করা সত্যিই এক সমাদরের বিষয়। ভাববাদী মীখা বলেছিলেন: “জাতিমাত্র প্রত্যেকে আপন আপন দেবের নামে চলে; আর আমরা যুগে যুগে চিরকাল আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে চলিব।” (মীখা ৪:৫) আমরা যে-নাম বহন করি, সেটার সুনাম নিয়ে আসে এমনভাবে প্রতিদিন জীবনযাপন করার আপ্রাণ চেষ্টা করার দ্বারা আমরা ‘যিহোবার নামে চলি।’ রোমের খ্রিস্টানদের পৌল যেমন স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, আমরা যে-সুসমাচার প্রচার করি, নিজেরা যদি সেটার সঙ্গে সংগতি রেখে না চলি, তাহলে ঈশ্বরের নাম “নিন্দিত” হয়, এর দুর্নাম নিয়ে আসে।—রোমীয় ২:২১-২৪.
৪. যিহোবার সম্বন্ধে সাক্ষ্য বহন করার বিশেষ সুযোগকে আপনি কীভাবে দেখে থাকেন?
৪ এ ছাড়া, আমরা আমাদের সাক্ষ্যদানের কাজের মাধ্যমেও যিহোবাকে সমাদর করি। অতীতে, যিহোবা ইস্রায়েল জাতির সদস্যদের তাঁর সাক্ষি হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কিন্তু তারা সেই ভূমিকা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। (যিশা. ৪৩:১-১২) তারা বার বার যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল এবং ‘ইস্রায়েলের পবিত্রতমকে অসন্তুষ্ট করিয়াছিল।’ (গীত. ৭৮:৪০, ৪১) অবশেষে, সেই জাতি সম্পূর্ণরূপে যিহোবার অনুগ্রহ হারিয়েছিল। কিন্তু, আজকে আমরা যিহোবার সম্বন্ধে সাক্ষ্য বহন করার এবং তাঁর নাম জানানোর বিশেষ সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞ। আর আমরা তা করি কারণ আমরা তাঁকে ভালবাসি এবং এই আকুল আকাঙ্ক্ষা করি যেন তাঁর নাম পবিত্রীকৃত হয়। আমাদের স্বর্গীয় পিতা ও তাঁর উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে সত্য জেনে আমরা কীভাবে প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে পারি? আমরা প্রেরিত পৌলের মতোই অনুভব করি, যখন তিনি বলেছিলেন: “অবশ্য বহনীয় ভার আমার উপরে অর্পিত; ধিক্ আমাকে, যদি আমি সুসমাচার প্রচার না করি।”—১ করি. ৯:১৬.
৫. কীভাবে যিহোবার ওপর বিশ্বাস থাকা, তাঁর প্রতি সম্মান দেখানোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?
৫ গীতরচক দায়ূদ বলেছিলেন: “যাহারা তোমার নাম জানে, তাহারা তোমাতে বিশ্বাস রাখিবে; কেননা, হে সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW], তুমি তোমার অন্বেষণকারীদিগকে পরিত্যাগ কর নাই।” (গীত. ৯:১০) যদি আমরা সত্যিই যিহোবাকে জানি ও তাঁর নামের প্রতি সম্মান দেখাই, তাহলে আমরা তাঁর ওপর নির্ভরতা দেখাব, ঠিক যেভাবে প্রাচীনকালে তাঁর বিশ্বস্ত দাসেরা দেখিয়েছিল। যিহোবার ওপর এইরকম নির্ভরতা ও বিশ্বাস থাকা হচ্ছে তাঁকে সমাদর করার আরেকটা উপায়। লক্ষ করুন যে, ঈশ্বরের বাক্য কীভাবে যিহোবার ওপর নির্ভর করা ও তাঁর প্রতি সম্মান দেখানোর মধ্যে একটা সম্পর্ক স্থাপন করে। প্রাচীন ইস্রায়েল যখন তাঁর ওপর নির্ভর করতে ব্যর্থ হয়েছিল, তখন যিহোবা মোশিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “এই লোকেরা কত কাল আমাকে অবজ্ঞা করিবে? এবং আমি ইহাদের মধ্যে যে সকল চিহ্ন-কার্য্য করিয়াছি, তাহা দেখিয়াও ইহারা কত কাল আমার প্রতি অবিশ্বাসী থাকিবে?” (গণনা. ১৪:১১) এর বিপরীতটাও সত্য। এমনকি বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যেও আমাদেরকে রক্ষা করার ও টিকিয়ে রাখার জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করার দ্বারা আমরা দেখাই যে, আমরা তাঁকে সম্মান করি।
৬. কী আমাদেরকে যিহোবার প্রতি গভীর সম্মান দেখাতে প্রেরণা দেয়?
৬ যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, যিহোবার প্রতি সম্মান হৃদয় থেকে আসতে হবে। যাদের উপাসনা অকৃত্রিম ছিল না তাদের উদ্দেশে কথা বলার সময় যিশু, যিহোবার কথাকে এভাবে উদ্ধৃতি করেছিলেন: “এই লোকেরা ওষ্ঠাধরে আমার সমাদর করে, কিন্তু ইহাদের অন্তঃকরণ আমা হইতে দূরে থাকে।” (মথি ১৫:৮) যিহোবার প্রতি অকৃত্রিম সম্মান তাঁর প্রতি আন্তরিক প্রেম থেকে উদ্ভূত হয়। (১ যোহন ৫:৩) এ ছাড়া, আমরা যিহোবার এই প্রতিজ্ঞার কথাও মনে রাখি: “যারা আমাকে সম্মান করবে আমি তাদের সম্মান করব।”—১ শমূ. ২:৩০, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন।
নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিরা অন্যদের প্রতি সম্মান দেখায়
৭. (ক) দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইদের কেন তাদের তত্ত্বাবধানের অধীনে থাকা ব্যক্তিদের সমাদর করা উচিত? (খ) কীভাবে পৌল সহবিশ্বাসীদের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন?
৭ প্রেরিত পৌল সহবিশ্বাসীদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “সমাদরে এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।” (রোমীয় ১২:১০) মণ্ডলীর দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইদের, তাদের তত্ত্বাবধানের অধীনে থাকা ব্যক্তিদের প্রতি সমাদরে ‘শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করিবার’ ব্যাপারে উদাহরণ স্থাপন করা উচিত। সেই ক্ষেত্রে, বিভিন্ন গুরু দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পৌলের দ্বারা স্থাপিত উদাহরণ অনুসরণ করা উচিত। (পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ২:৭, ৮.) পৌল যে-মণ্ডলীগুলো পরিদর্শন করেছিলেন, সেখানকার ভাইয়েরা জানত যে, তিনি তাদেরকে কখনো এমন কিছু করতে বলবেন না, যা তিনি নিজে করতে ইচ্ছুক ছিলেন না। পৌল সহবিশ্বাসীদের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন আর প্রতিদানে তিনি নিজেও তাদের সম্মান অর্জন করেছিলেন। পৌল যখন বলেছিলেন, “অতএব তোমাদিগকে বিনয় করি, তোমরা আমার অনুকারী হও,” তখন আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি যে, অনেকে তার উত্তম উদাহরণের কারণে তাকে স্বেচ্ছায় অনুকরণ করেছিল।—১ করি. ৪:১৬.
৮. (ক) একটা গুরুত্বপূর্ণ উপায় কী, যেটার মাধ্যমে যিশু তাঁর শিষ্যদের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন? (খ) কীভাবে অধ্যক্ষরা আজকে যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করতে পারে?
৮ আরেকটা যে-উপায়ে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাই তার তত্ত্বাবধানের অধীনে থাকা ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে থাকেন, তা হল তিনি যে-অনুরোধগুলো করেন বা যে-নির্দেশনাগুলো দেন, তাদেরকে সেগুলোর কারণ সম্বন্ধে জানান। তা জানানোর মাধ্যমে তিনি যিশুকে অনুকরণ করে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ, যিশু যখন তাঁর শিষ্যদেরকে শস্যক্ষেত্রে আরও কার্যকারী লোক পাঠানোর জন্য প্রার্থনা করতে বলেছিলেন, তখন তিনি তাদেরকে বলেছিলেন যে কেন তা করতে হবে। তিনি বলেছিলেন: “শস্য প্রচুর বটে, কিন্তু কার্য্যকারী লোক অল্প; অতএব শস্যক্ষেত্রের স্বামীর নিকটে প্রার্থনা কর, যেন তিনি নিজ শস্যক্ষেত্রে কার্য্যকারী লোক পাঠাইয়া দেন।” (মথি ৯:৩৭, ৩৮) একইভাবে, তিনি যখন তাঁর শিষ্যদেরকে ‘জাগিয়া থাকিতে’ বলেছিলেন, তখন তিনি তাদেরকে একটা কারণ সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “কেননা তোমাদের প্রভু কোন্ দিন আসিবেন, তাহা তোমরা জান না।” (মথি ২৪:৪২) প্রায়ই, যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে কেবলমাত্র তাদের কী করা উচিত, তা-ই নয় কিন্তু কেন তাদের তা করা উচিত, তা-ও বলেছিলেন। এভাবে, তিনি তাদের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন এবং তাদেরকে মর্যাদা দিয়েছিলেন। খ্রিস্টান অধ্যক্ষদের অনুসরণ করার জন্য কী এক উত্তম উদাহরণ!
যিহোবার মণ্ডলী ও এর নির্দেশনাকে সম্মান করুন
৯. বিশ্বব্যাপী খ্রিস্টীয় মণ্ডলী ও এর প্রতিনিধিদের প্রতি সম্মান কী প্রকাশ করে? ব্যাখ্যা করুন।
৯ যিহোবাকে সমাদর করার জন্য আমাদের বিশ্বব্যাপী খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে ও এর প্রতিনিধিদেরও সমাদর করতে হবে। আমরা যখন বিশ্বস্ত দাস শ্রেণীর কাছ থেকে প্রাপ্ত কোনো শাস্ত্রীয় পরামর্শে মনোযোগ দিই, তখন আমরা যিহোবার ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখাই। প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে, প্রেরিত যোহন সেই ব্যক্তিদের ভর্ৎসনা করার প্রয়োজনীয়তা দেখেছিলেন, যারা নিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রতি উপযুক্ত সম্মান দেখায়নি। (পড়ুন, ৩ যোহন ৯-১১.) যোহনের কথাগুলো দেখায় যে, তারা শুধুমাত্র অধ্যক্ষদের প্রতিই অসম্মান দেখায়নি কিন্তু তাদের শিক্ষা ও নির্দেশনার প্রতিও অসম্মান দেখিয়েছিল। আনন্দের বিষয় যে, অধিকাংশ খ্রিস্টান সেইরকম ছিল না। প্রেরিতরা যখন জীবিত ছিল, তখন সমগ্র ভ্রাতৃসমাজ স্পষ্টতই নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের প্রতি গভীর সম্মান দেখিয়েছিল।—ফিলি. ২:১২.
১০, ১১. শাস্ত্র থেকে ব্যাখ্যা করুন যে, কেন খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে কাউকে কাউকে কর্তৃত্ব প্রদান করার বিষয়টা উপযুক্ত।
১০ কেউ কেউ যুক্তি দেখিয়েছে, যিশু যেহেতু তাঁর শিষ্যদেরকে বলেছিলেন যে, “তোমরা সকলে ভ্রাতা,” তাই খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে কর্তৃত্বপূর্ণ কোনো পদ থাকা উচিত নয়। (মথি ২৩:৮) কিন্তু, ইব্রীয় ও গ্রিক উভয় শাস্ত্রেই সেই পুরুষদের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে, যারা ঈশ্বরদত্ত কর্তৃত্বকে ব্যবহার করেছিল। প্রাচীন ইব্রীয়দের মধ্যে কুলপতি, বিচারক ও রাজাদের ইতিহাস এই বিষয়ে প্রচুর প্রমাণ জোগায় যে, যিহোবা মানব প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নির্দেশনা প্রদান করেন। লোকেরা যখন নিযুক্ত ব্যক্তি বিশেষদের সঠিকভাবে সমাদর করেনি, তখন যিহোবা তাদেরকে শাসন করেছিলেন।—২ রাজা. ১:২-১৭; ২:১৯, ২৩, ২৪.
১১ অনুরূপভাবে, প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা প্রেরিতদের কর্তৃত্বকে মেনে নিয়েছিল। (প্রেরিত ২:৪২) উদাহরণস্বরূপ, পৌল তার ভাইদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। (১ করি. ১৬:১; ১ থিষল. ৪:২) তা সত্ত্বেও, তিনি নিজেও স্বেচ্ছায় সেই ব্যক্তিদের বশীভূত থেকেছিলেন, তার ওপরে যাদের কর্তৃত্ব ছিল। (প্রেরিত ১৫:২২; গালা. ২:৯, ১০) বস্তুতপক্ষে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে কর্তৃত্বের প্রতি পৌলের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল।
১২. বাইবেলের উদাহরণগুলো থেকে আমরা কর্তৃত্বের বিষয়ে শিক্ষার কোন দুটো দিক সম্বন্ধে শিখতে পারি?
১২ আমরা যে-শিক্ষা লাভ করি, সেটার দুটো দিক রয়েছে। প্রথমত, এটা শাস্ত্রসংগত যে “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস,” এর পরিচালক গোষ্ঠীর মাধ্যমে কিছু পুরুষকে বিভিন্ন দায়িত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করে আর কিছু পুরুষকে অন্যান্য নিযুক্ত পুরুষদের ওপর কর্তৃত্ব ব্যবহার করার জন্য নিযুক্ত করা হয়। (মথি ২৪:৪৫-৪৭; ১ পিতর ৫:১-৩) দ্বিতীয়ত, নিযুক্ত পুরুষরাসহ আমাদের সকলেরই সেই ব্যক্তিদের সমাদর করা উচিত, যাদের আমাদের ওপর কর্তৃত্ব রয়েছে। তাহলে, কিছু ব্যবহারিক উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা বিশ্বব্যাপী খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে যাদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বপূর্ণ পদ রয়েছে, তাদের সমাদর করতে পারি?
ভ্রমণ অধ্যক্ষদের প্রতি সম্মান দেখানো
১৩. কীভাবে আমরা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর আধুনিক দিনের প্রতিনিধিদের প্রতি সম্মান দেখাতে পারি?
১৩ পৌল বলেছিলেন: “হে ভ্রাতৃগণ, আমরা তোমাদিগকে নিবেদন করিতেছি; যাঁহারা তোমাদের মধ্যে পরিশ্রম করেন ও প্রভুতে তোমাদের উপরে নিযুক্ত আছেন, এবং তোমাদিগকে চেতনা দেন, তাঁহাদিগকে চিনিয়া লও, আর তাঁহাদের কর্ম্ম প্রযুক্ত তাঁহাদিগকে প্রেমে অতিশয় সমাদর কর। আপনাদের মধ্য ঐক্য রাখ।” (১ থিষল. ৫:১২-১৪) ভ্রমণ অধ্যক্ষরা নিশ্চিতভাবেই সেই লোকেদের মধ্যে রয়েছে, যারা ‘পরিশ্রম করে।’ তাই, আসুন আমরা তাদের ‘অতিশয় সমাদর করি।’ তা করার একটা উপায় হচ্ছে, তাদের পরামর্শ ও উৎসাহের প্রতি সর্বান্তঃকরণে সাড়া দেওয়া। যখন এইরকম একজন অধ্যক্ষ আমাদেরকে বিশ্বস্ত দাস শ্রেণীর কাছ থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনা দেন, তখন “যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে” তা আমাদেরকে “সহজে অনুনীত” বা বাধ্য হতে তৈরি থাকতে পরিচালিত করবে।—যাকোব ৩:১৭.
১৪. কীভাবে মণ্ডলী ভ্রমণ অধ্যক্ষদের প্রতি অকৃত্রিম সম্মানের প্রমাণ দেয় এবং এর ফল কী হয়?
১৪ কিন্তু, কী হবে যদি আমাদের কোনোকিছু এমনভাবে করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়, যা আমরা যেভাবে করতে অভ্যস্ত তার চেয়ে ভিন্ন হয়? সম্মান দেখানোর জন্য হয়তো মাঝে মাঝে আমাদেরকে এইরকম আপত্তিকর মন্তব্য করার প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রয়োজন হতে পারে, যেমন “এখানে আমরা বিষয়গুলো এভাবে করি না” অথবা “অন্য জায়গায় হয়তো এটা কার্যকারী হতে পারে, কিন্তু আমাদের মণ্ডলীতে নয়।” এর পরিবর্তে, আমরা তা মেনে নেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি। মণ্ডলী হচ্ছে যিহোবার অধিকারভুক্ত এবং যিশু হলেন এর মস্তক, এই বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মনে রাখা আমাদের তা করতে সাহায্য করবে। একজন ভ্রমণ অধ্যক্ষের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা যখন আনন্দ সহকারে মেনে নেওয়া হয় ও মণ্ডলী তা অনুসরণ করে, তখন তা অকৃত্রিম সম্মানের প্রমাণ দেয়। প্রেরিত পৌল করিন্থের ভাইদের প্রশংসা করেছিলেন কারণ পরিদর্শনকারী প্রাচীন তীত তাদের যে-নির্দেশনা দিয়েছিলেন, সেগুলোর প্রতি তারা সম্মানপূর্ণ বাধ্যতা দেখিয়েছিল। (২ করি. ৭:১৩-১৬) আজকে, আমরা একইভাবে নিশ্চিত হতে পারি, যে-ইচ্ছুক মনোভাব নিয়ে আমরা ভ্রমণ অধ্যক্ষদের কাছ থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনা প্রয়োগ করি, তা আমাদের প্রচার কাজে আমরা যে-আনন্দ উপভোগ করি, তাতে বিরাট অবদান রাখে।—পড়ুন, ২ করিন্থীয় ১৩:১১.
“সকলকে সমাদর কর”
১৫. কিছু উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা সহবিশ্বাসীদের প্রতি সম্মান দেখাই?
১৫ পৌল লিখেছিলেন: “তুমি কোন প্রাচীনকে তিরস্কার করিও না, কিন্তু তাঁহাকে পিতার ন্যায়, যুবকদিগকে ভ্রাতার ন্যায়, প্রাচীনাদিগকে মাতার ন্যায়, যুবতীদিগকে সম্পূর্ণ শুদ্ধ ভাবে ভগিনীর ন্যায় জানিয়া অনুনয় কর। যাহারা প্রকৃত বিধবা, সেই বিধবাদিগকে সমাদর কর।” (১ তীম. ৫:১-৩) হ্যাঁ, ঈশ্বরের বাক্য আমাদেরকে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর প্রত্যেককে সমাদর করতে পরামর্শ দেয়। কিন্তু, যদি আপনার এবং কোনো ভাই বা বোনের মধ্যে ব্যক্তিগত মতভেদ ঘটে, তাহলে কী? সেটা কি আপনাকে সহখ্রিস্টানের প্রতি সম্মান দেখানোর বাধ্যবাধকতা থেকে বিরত করবে? অথবা আপনি কি ঈশ্বরের সেই দাসের আধ্যাত্মিক গুণাবলি উপলব্ধি করার দ্বারা আপনার মনোভাবে রদবদল করতে পারেন? যারা কর্তৃত্বে রয়েছে, তাদের বিশেষভাবে ভাইবোনদের প্রতি সম্মানপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা উচিত—কখনোই ‘পালের ওপর প্রভুত্ব’ করা উচিত নয়। (১ পিতর ৫:৩, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন) বস্তুতপক্ষে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে—যেটি এর সদস্যদের মধ্যে বিদ্যমান আন্তরিক প্রেমের দ্বারা শনাক্তিকৃত হয়—আমাদের একে অন্যকে সমাদর করার অসংখ্য সুযোগ রয়েছে।—পড়ুন, যোহন ১৩:৩৪, ৩৫.
১৬, ১৭. কেন শুধুমাত্র যাদের কাছে আমরা প্রচার করি, তাদের প্রতিই নয় কিন্তু বিরোধীদের প্রতিও সম্মান দেখানো গুরুত্বপূর্ণ? (খ) কীভাবে আমরা ‘সকলকে সমাদর করি’?
১৬ অবশ্য, আমরা শুধুমাত্র সেই ব্যক্তিদের প্রতিই সম্মান দেখাই না, যারা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর অংশ। পৌল তার দিনের খ্রিস্টানদের লিখেছিলেন: “আইস, আমরা যেমন সুযোগ পাই, তেমনি সকলের প্রতি . . . সৎকর্ম্ম করি।” (গালা. ৬:১০) এটা ঠিক যে, সেই নীতি প্রয়োগ করা কঠিন হতে পারে, যদি কিনা একজন সহকর্মী বা সহপাঠী আমাদের সঙ্গে নির্দয় আচরণ করেন। এইরকম মুহূর্তগুলোতে, আমাদের এই কথাগুলো স্মরণে রাখতে হবে: “তুমি দুরাচারদের বিষয়ে রুষ্ট হইও না।” (গীত. ৩৭:১) সেই পরামর্শ প্রয়োগ করা আমাদেরকে এমনকি বিরোধীদের প্রতিও সম্মানপূর্বক প্রতিক্রিয়া দেখাতে সাহায্য করবে। অনুরূপভাবে, যখন আমরা জনসাধারণ্যে পরিচর্যায় রত থাকি, তখন নিজেদের সম্বন্ধে এক নম্র দৃষ্টিভঙ্গি আমাদেরকে সকলের প্রতি “মৃদুতা ও ভয় [“গভীর সম্মান,” NW] সহকারে” উত্তর দিতে সাহায্য করতে পারে। (১ পিতর ৩:১৫) এমনকি আমাদের বাহ্যিক চেহারা ও পোশাক-আশাক ইঙ্গিত করতে পারে যে, আমরা তাদেরকে সম্মান করি, যাদের কাছে আমরা প্রচার করি।
১৭ বস্তুতপক্ষে, আমাদের সহবিশ্বাসী কিংবা মণ্ডলীর বাইরের লোক, যাদের সঙ্গেই আমরা ভাববিনিময় করি না কেন, আমরা এই পরামর্শ প্রয়োগ করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে চাই: “সকলকে সমাদর কর, ভ্রাতৃসমাজকে প্রেম কর, ঈশ্বরকে ভয় কর, রাজাকে সমাদর কর।”—১ পিতর ২:১৭.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
কীভাবে আপনি উপযুক্ত সম্মান দেখাতে পারেন:
• যিহোবার প্রতি?
• মণ্ডলীর প্রাচীনদের ও ভ্রমণ অধ্যক্ষদের প্রতি?
• মণ্ডলীর প্রত্যেক সদস্যের প্রতি?
• আপনি যাদের কাছে প্রচার করেন, তাদের প্রতি?
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা পরিচালক গোষ্ঠীর তত্ত্বাবধানের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিল
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রতিটা জায়গার প্রাচীনরা ভ্রমণ অধ্যক্ষদের সমাদর করে, যারা পরিচালক গোষ্ঠীর দ্বারা নিযুক্ত