প্রকাশিত বাক্য বইয়ের পাঠকেরা সুখী হোন
“ধন্য [সুখী], যে এই ভাববাণীর বাক্য সকল পাঠ করে, ও যাহারা শ্রবণ করে, এবং ইহাতে লিখিত কথা সকল পালন করে।”—প্রকাশিত বাক্য ১:৩.
১. কোন্ পরিস্থিতিতে প্রেরিত যোহন প্রকাশিত বাক্য বইটা লিখেছিলেন আর কী জন্য এই দর্শনগুলো তিনি লিখেছিলেন?
“আমি যোহন . . . ঈশ্বরের বাক্য ও যীশুর সাক্ষ্য প্রযুক্ত পাট্ম নামক দ্বীপে উপস্থিত হইলাম।” (প্রকাশিত বাক্য ১:৯) এইরকম পরিস্থিতিতেই প্রেরিত যোহন প্রকাশিত বাক্য বইটা লিখেছিলেন। মনে করা হয় যে রোমীয় সম্রাট ডমিশিয়ান, যিনি বাধ্যতামূলকভাবে সম্রাট উপাসনা চালু করেছিলেন এবং খ্রীষ্টানদের তাড়না করেছিলেন, তার রাজত্বকালে (সা.কা. ৮১-৯৬) যোহনকে পাটম দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল। পাটম দ্বীপে থাকাকালে তিনি পর পর কয়েকটা দর্শন পেয়েছিলেন যেগুলো তিনি লিখে রেখেছিলেন। তিনি সেই সময়ের খ্রীষ্টানদের ভয় দেখানোর জন্য এগুলো লেখেননি বরং তারা যে সমস্ত পরীক্ষা ভোগ করছিলেন এবং সামনে ভোগ করতে যাচ্ছিলেন সেই কথা মনে রেখে তাদের শক্তিশালী করার, সান্ত্বনা দেওয়ার এবং উৎসাহ দেওয়ার জন্য তিনি এগুলো লিখেছিলেন।—প্রেরিত ২৮:২২; প্রকাশিত বাক্য ১:৪; ২:৩, ৯, ১০, ১৩.
২. যোহন ও তার খ্রীষ্টান ভাইবোনেরা যে পরিস্থিতিতে ছিলেন তা কেন আজকের দিনের খ্রীষ্টানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ?
২ যে পরিস্থিতিতে বাইবেলের এই বই লেখা হয়েছিল তা আজকের দিনের খ্রীষ্টানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যিহোবা ও তাঁর পুত্র, খ্রীষ্ট যীশুর একজন সাক্ষি হওয়ায় যোহন তাড়না ভোগ করছিলেন। তিনি এবং তার খ্রীষ্টান ভাইবোনেরা এমন এক সময়ে বাস করছিলেন যখন তাদের চারিদিকে শুধু বিরোধিতা ছিল কারণ তারা ভাল নাগরিক হওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করলেও, সম্রাটকে উপাসনা করতে পারতেন না। (লূক ৪:৮) আজ কিছু কিছু দেশে সত্য খ্রীষ্টানদের অবস্থা একইরকম, যেখানে “ধর্মীয়ভাবে কী ঠিক আর কী ঠিক নয়” তা রাষ্ট্র নির্ধারণ করে। তাই প্রকাশিত বাক্য বইয়ের শুরুতে যে কথাগুলো আছে তা কতই না সান্ত্বনাদায়ক: “ধন্য [সুখী], যে এই ভাববাণীর বাক্য সকল পাঠ করে, ও যাহারা শ্রবণ করে, এবং ইহাতে লিখিত কথা সকল পালন করে; কেননা কাল সন্নিকট।” (প্রকাশিত বাক্য ১:৩) হ্যাঁ, প্রকাশিত বাক্যের মনোযোগী ও বাধ্য পাঠকেরা সত্যিকারের সুখ ও অনেক অনেক আশীর্বাদ পেতে পারেন।
৩. যোহনের কাছে যে প্রকাশিত বাক্য দেওয়া হয়েছিল তা আসলে কে দিয়েছেন?
৩ প্রকাশিত বাক্য আসলে কে দিয়েছেন এবং এটা দেওয়ার জন্য কোন্ মাধ্যম ব্যবহার করা হয়েছে? প্রথম পদগুলো আমাদের জানায়: “যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশিত বাক্য, ঈশ্বর যাহা তাঁহাকে দান করিলেন, যেন তিনি, যাহা যাহা শীঘ্র ঘটিবে, সেই সকল আপন দাসগণকে দেখাইয়া দেন; আর তিনি নিজের দূত প্রেরণ করিয়া আপন দাস যোহনকে তাহা জ্ঞাত করিলেন।” (প্রকাশিত বাক্য ১:১) সহজ কথায় বলা যায় প্রকাশিত বাক্য আসলে যিহোবা ঈশ্বরের, যিনি যীশুকে এটা দিয়েছিলেন আর যীশু একজন দূতের মাধ্যমে যোহনকে দিয়েছিলেন। আরেকটু সতর্কভাবে পড়লে দেখা যায় যে যীশু মণ্ডলীগুলোর কাছে বার্তা পাঠানোর এবং যোহনকে দর্শন দেওয়ার জন্য পবিত্র আত্মাকেও ব্যবহার করেছিলেন।—প্রকাশিত বাক্য ২:৭, ১১, ১৭, ২৯; ৩:৬, ১৩, ২২; ৪:২; ১৭:৩; ২১:১০. প্রেরিত ২:৩৩ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।
৪. পৃথিবীতে তাঁর দাসদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য যিহোবা আজও কোন্ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করছেন?
৪ যিহোবা পৃথিবীতে তাঁর দাসদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য এখনও তাঁর পুত্র অর্থাৎ, ‘মণ্ডলীর মস্তককে’ ব্যবহার করেন। (ইফিষীয় ৫:২৩; যিশাইয় ৫৪:১৩; যোহন ৬:৪৫) এছাড়া যিহোবা তাঁর লোকেদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য তাঁর আত্মাকেও ব্যবহার করেন। (যোহন ১৫:২৬; ১ করিন্থীয় ২:১০) আর যীশু যেমন প্রথম শতাব্দীর মণ্ডলীগুলোকে আধ্যাত্মিক খাদ্য দেওয়ার জন্য “আপন দাস যোহনকে” ব্যবহার করেছিলেন, তেমনই আজকে তিনি তাঁর পরিজন ও তাদের সঙ্গীদের “উপযুক্ত সময়ে” আধ্যাত্মিক “খাদ্য” দেওয়ার জন্য “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস”-কে ব্যবহার করেন, যা পৃথিবীতে তাঁর অভিষিক্ত ‘ভ্রাতৃগণ’ নিয়ে গঠিত। (মথি ২৪:৪৫-৪৭; ২৫:৪০) তাই সুখী তারাই যারা সেই উৎসকে চিনে নেন যিনি আমাদের “উত্তম দান” দেন আর এই দান আমরা আধ্যাত্মিক খাদ্য এবং তিনি যে মাধ্যম ব্যবহার করছেন সেখান থেকে পাই।—যাকোব ১:১৭.
খ্রীষ্ট-পরিচালিত মণ্ডলীগুলো
৫. (ক) খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী ও সেগুলোর অধ্যক্ষদের কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে? (খ) যদিও আমরা সবাই অসিদ্ধ, তবুও কী আমাদের আরও বেশি সুখী করবে?
৫ প্রকাশিত বাক্যের শুরুর অধ্যায়গুলোতে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীগুলোকে দীপবৃক্ষ বলা হয়েছে। আর মণ্ডলীগুলোর অধ্যক্ষদের দূত (বার্তাবাহক) ও তারাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ১:২০)a যীশু তাঁর নিজের সম্বন্ধে যোহনকে লিখতে বলেন: “যিনি নিজ দক্ষিণ হস্তে সেই সপ্ত তারা ধারণ করেন, যিনি সেই সপ্ত সুবর্ণ দীপবৃক্ষের মধ্যে গমনাগমন করেন, তিনি এই কথা কহেন।” (প্রকাশিত বাক্য ২:১) এশিয়ার সপ্ত মণ্ডলীতে যে সপ্ত বার্তা পাঠানো হয়েছিল তা দেখে বোঝা যায় যে সা.কা. প্রথম শতাব্দীর মণ্ডলী ও সেগুলোর অধ্যক্ষদের ভাল দিক ও দুর্বলতা দুটোই ছিল। আজকের অবস্থাও এইরকম। তাই আমরা আরও বেশি সুখী হব যদি কিনা আমরা ভুলে না যাই যে আমাদের মস্তক, খ্রীষ্ট মণ্ডলীর মধ্যে আছেন। মণ্ডলীতে কী হচ্ছে না হচ্ছে তা তিনি একেবারের ঠিক ঠিক জানেন। মণ্ডলীর অধ্যক্ষরা প্রতীকভাবে তাঁর “দক্ষিণ হস্তে,” রয়েছেন যার মানে তারা তাঁর অধীন এবং তাঁর দেখানো পথে চলছেন আর তারা মণ্ডলীগুলোকে যেভাবে দেখাশোনা করবেন তার জন্য তাদেরকে খ্রীষ্টের কাছে নিকাশ দিতে হবে।—প্রেরিত ২০:২৮; ইব্রীয় ১৩:১৭.
৬. কী দেখায় যে শুধু অধ্যক্ষরাই খ্রীষ্টের কাছে নিকাশ দেবেন না?
৬ কিন্তু আমরা যদি ভেবে থাকি যে শুধু অধ্যক্ষরাই তাদের কাজের জন্য খ্রীষ্টের কাছে নিকাশ দেবেন, তাহলে আমরা ভুল করছি। খ্রীষ্ট তাঁর একটা বার্তায় বলেছিলেন: “সমস্ত মণ্ডলী জানিতে পারিবে, ‘আমি মর্ম্মের ও হৃদয়ের অনুসন্ধানকারী, আর আমি তোমাদের প্রত্যেক জনকে আপন আপন কার্য্যানুযায়ী ফল দিব।’” (প্রকাশিত বাক্য ২:২৩) এটা আমাদের জন্য একটা সতর্কবাণী, আবার সেইসঙ্গে এটা আমাদের উৎসাহও দেয়। সতর্কবাণী এইজন্য যে খ্রীষ্ট আমাদের অন্তরের ইচ্ছাগুলো জানেন আর আমরা এই কথাগুলো থেকে উৎসাহ পাই কারণ এটা আমাদের বলে যে খ্রীষ্ট তাঁর জন্য করা আমাদের কঠিন পরিশ্রমের কথাও জানেন আর আমরা যদি প্রাণপণে তা করি, তাহলে তিনি আমাদের আশীর্বাদ করবেন।—মার্ক ১৪:৬-৯; লূক ২১:৩, ৪.
৭. কীভাবে ফিলাদিল্ফিয়ার খ্রীষ্টানরা ‘যীশুর ধৈর্য্যের কথা রক্ষা করিয়াছিলেন’?
৭ ফিলাদিল্ফিয়ার লুদিয়া শহরের মণ্ডলীতে যীশু যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন তাতে তিনি তাদের তিরস্কার করেননি বরং এতে এমন একটা প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল যার জন্য আমাদের সকলের গভীরভাবে কৌতূহলী হওয়া উচিত। “তুমি আমার ধৈর্য্যের কথা রক্ষা করিয়াছ, এই কারণ আমিও তোমাকে সেই পরীক্ষাকাল হইতে রক্ষা করিব, যাহা পৃথিবীনিবাসীদের পরীক্ষা করিবার জন্য সমস্ত জগতে উপস্থিত হইবে।” (প্রকাশিত বাক্য ৩:১০) “আমার ধৈর্য্যের কথা রক্ষা করিয়াছ” বাক্যের জন্য গ্রিক ভাষায় যা বলা হয়েছিল তার মানে “ধৈর্য সম্বন্ধে আমি যা বলেছিলাম তা রক্ষা করেছ,” এটাও হতে পারে। ৮ পদ দেখায় যে ফিলাদিল্ফিয়ার খ্রীষ্টানরা শুধু খ্রীষ্টের আজ্ঞাই পালন করেননি, সেইসঙ্গে বিশ্বস্তভাবে ধৈর্য ধরার জন্য তাঁর পরামর্শগুলোও মেনে চলেছিলেন।—মথি ১০:২২; লূক ২১:১৯.
৮. (ক) ফিলাদিল্ফিয়ার খ্রীষ্টানদের কাছে যীশু কী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন? (খ) আজকে “পরীক্ষাকাল” কাদের ওপর আসবে?
৮ এরপর যীশু তাদের বলেছিলেন যে তিনি তাদের “পরীক্ষাকাল” থেকে রক্ষা করবেন। তখনকার সময়ের খ্রীষ্টানদের জন্য এর মানে ঠিক কী ছিল তা আমরা জানি না। সা.কা. ৯৬ সালে ডমিশিয়ান মারা যাওয়ার পর তাড়না অল্প কিছুদিনের জন্য বন্ধ ছিল কিন্তু রাজা ট্রেজেনের সময়ে (সা.কা. ৯৮-১১৭) নতুন করে তাড়নার ঢেউ এসেছিল, যা খ্রীষ্টানদের ওপর পরীক্ষা নিয়ে এসেছিল। কিন্তু সবচেয়ে বড় “পরীক্ষাকাল” “প্রভুর দিনে” ‘শেষকালে’ আসবে যে সময়ে আমরা এখন বাস করছি। (প্রকাশিত বাক্য ১:১০; দানিয়েল ১২:৪) আত্মায় অভিষিক্ত খ্রীষ্টানরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে এবং এর পর পরই একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পরীক্ষা ভোগ করেছিলেন। কিন্তু “পরীক্ষাকাল” এখনও চলছে। এটা সমস্ত “পৃথিবীনিবাসীদের” ওপর আসবে যার মধ্যে লাখ লাখ মানুষ নিয়ে গঠিত বিস্তর লোকও আছেন, যাদের মহাক্লেশ থেকে রক্ষা পাওয়ার আশা আছে। (প্রকাশিত বাক্য ৩:১০; ৭:৯, ১৪) আমরা সুখী হব যদি কিনা আমরা ‘খ্রীষ্ট ধৈর্য্য সম্বন্ধে যা বলেছেন তা রক্ষা করি,’ যেমন: “যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।”—মথি ২৪:১৩.
যিহোবার সার্বভৌমত্বকে মেনে নিয়ে সুখী হওয়া
৯, ১০. (ক) যিহোবার সিংহাসনের দর্শন কীভাবে আমাদের মনে ছাপ ফেলে? (খ) প্রকাশিত বাক্য পড়া কীভাবে আমাদের সুখী করতে পারে?
৯ যিহোবার সিংহাসন এবং তাঁর স্বর্গীয় সভা সম্বন্ধে প্রকাশিত বাক্য ৪ ও ৫ অধ্যায়ে যে দর্শন দেওয়া আছে তা আমাদের মধ্যে ভয় জাগায়। স্বর্গের শক্তিশালী প্রাণীরা আনন্দের সঙ্গে যিহোবার ধার্মিক সার্বভৌমত্বকে মেনে নিয়ে, অন্তর থেকে যিহোবার জন্য যে প্রশংসাধ্বনি করেন তা আমাদের মনে ছাপ ফেলা উচিত। (প্রকাশিত বাক্য ৪:৮-১১) আমাদেরও তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই কথাগুলো বলা উচিত: “‘যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তাঁহার প্রতি ও মেষশাবকের প্রতি ধন্যবাদ ও সমাদর ও গৌরব ও কর্ত্তৃত্ব যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে বর্ত্তুক।’”—প্রকাশিত বাক্য ৫:১৩.
১০ এর মানে আমাদের আনন্দের সঙ্গে যিহোবার সমস্ত ইচ্ছা মেনে নিতে হবে। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “বাক্যে কি কার্য্যে যাহা কিছু কর, সকলই প্রভু যীশুর নামে কর, তাঁহার দ্বারা পিতা ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিতে করিতে ইহা কর।” (কলসীয় ৩:১৭) প্রকাশিত বাক্য পড়ে আমরা সত্যিই সুখী হতে পারব যদি কিনা আমরা মন ও হৃদয়ের গভীর থেকে যিহোবার সার্বভৌমত্বকে মেনে নিই এবং আমাদের জীবনের প্রতিটা বিষয়ে তাঁর ইচ্ছাকে প্রথমে রাখি।
১১, ১২. (ক) শয়তানের জগৎ কীভাবে নড়ে যাবে ও ধ্বংস হয়ে যাবে? (খ) প্রকাশিত বাক্য ৭ অধ্যায় অনুসারে কারা “দাঁড়াইতে” পারবে?
১১ আনন্দের সঙ্গে যিহোবার সার্বভৌমত্বকে মেনে নিয়ে আমরা যেমন সুখী হই তেমনই সারা পৃথিবীর লোকেরাও সুখী হতে পারেন। শীঘ্রই এক রূপক মহাভূমিকম্প শয়তানের জগতের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেবে এবং এটাকে ধ্বংস করবে। যদি কোন ব্যক্তি খ্রীষ্টের স্বর্গীয় রাজ্য সরকারকে মেনে না নেন, তাহলে তাদের লুকোনোর কোন জায়গা থাকবে না কারণ এই সরকারকে যিহোবা ঈশ্বর নিযুক্ত করেছেন। এই সম্বন্ধে এক ভবিষ্যদ্বাণী বলে: “পৃথিবীর রাজারা ও মহতেরা ও সহস্রপতিগণ ও ধনবানেরা ও বিক্রমিবর্গ এবং সমস্ত দাস ও স্বাধীন লোক গুহাতে ও পর্ব্বতীয় শৈলে আপনাদিগকে লুকাইল, আর পর্ব্বত ও শৈল সকলকে কহিতে লাগিল, আমাদের উপরে পতিত হও, যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তাঁহার সম্মুখ হইতে এবং মেষশাবকের ক্রোধ হইতে আমাদিগকে লুকাইয়া রাখ; কেননা তাঁহাদের ক্রোধের মহাদিন আসিয়া পড়িল, আর কে দাঁড়াইতে পারে?”—প্রকাশিত বাক্য ৬:১২, ১৫-১৭.
১২ কে দাঁড়াইতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর প্রেরিত যোহন পরের অধ্যায়ে দিয়েছেন। সেখানে তিনি বিস্তর লোকেদের বর্ণনা দেন, যারা মহাক্লেশ পার হয়ে এসেছে এবং “সিংহাসনের সম্মুখে ও মেষ শাবকের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে।” (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪, ১৫) তাদের ঈশ্বরের সিংহাসনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বোঝায় যে তারা ওই সিংহাসনকে এবং যিহোবার সার্বভৌমত্বকে আনন্দের সঙ্গে মেনে নেন। আর তাই ঈশ্বরও তাদের জন্য আনন্দিত ও তাঁর আশীর্বাদ তাদের সঙ্গে আছে।
১৩. (ক) পৃথিবীর বেশির ভাগ লোক কীসের উপাসনা করে এবং তাদের ললাটের ও হস্তের ছাপ কী বোঝায়? (খ) কেন ধৈর্য ধরার দরকার হবে?
১৩ অন্যদিকে, ১৩ অধ্যায়ে পৃথিবীর বাকি লোকেদের কথা বলা আছে, যারা বন্য পশু দ্বারা চিত্রিত শয়তানের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে উপাসনা করছে। তারা তাদের “ললাটে” বা “হস্তে” একটা ছাপ ধারণ করে, যা দেখায় যে তারা পুরোপুরি ওই ব্যবস্থার পক্ষে। (প্রকাশিত বাক্য ১৩:১-৮, ১৬, ১৭) এরপর ১৪ অধ্যায় বলে: “যদি কেহ সেই পশু ও তাহার প্রতিমূর্ত্তির ভজনা করে, আর নিজ ললাটে কি হস্তে ছাব ধারণ করে, তবে সেই ব্যক্তিও ঈশ্বরের সেই ‘রোষ-মদিরা পান করিবে, যাহা তাঁহার কোপের পানপাত্রে অমিশ্রিতরূপে প্রস্তুত হইয়াছে’; . . . এস্থলে সেই পবিত্রগণের ধৈর্য্য দেখা যায়, যাহারা ঈশ্বরের আজ্ঞা ও যীশুর বিশ্বাস পালন করে।” (প্রকাশিত বাক্য ১৪:৯, ১০, ১২) যতই সময় গড়াবে, এই প্রশ্ন ততই আরও জরুরি হয়ে উঠবে: আপনি কার পক্ষে? যিহোবা ও তাঁর সার্বভৌমত্বের পক্ষে নাকি বন্য পশু দ্বারা চিত্রিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার পক্ষে? সুখী সেই লোকেরা যারা পশুর ছাপ ধারণ করেন না এবং যিহোবার সার্বভৌমত্বকে মেনে নিয়ে বিশ্বস্তভাবে ধৈর্য ধরেন।
১৪, ১৫. হর্মাগিদোনের বিষয়ে প্রকাশিত বাক্যের বর্ণনা মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে কী বলা হয় আর আমাদের জন্য এটা কী বোঝায়?
১৪ “জগৎ সমুদয়ের” শাসকদের ও যিহোবার মধ্যে এক বড় যুদ্ধ হবে। আর এটা হবে যিহোবার সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতাকে কেন্দ্র করে। এই বিষয়ের নিষ্পত্তি হবে হর্মাগিদোনে যা হল, ‘সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বরের মহাদিনের যুদ্ধ।’ (প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬) কিন্তু যিহোবার সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য পৃথিবীর শাসকদের একত্র হওয়ার বর্ণনা মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে আরেকটা কৌতূহলজনক কথা বলা হয়। যীশু নিজে দর্শনের মাঝপথে বাধা দিয়ে বলেন: “দেখ, আমি চোরের ন্যায় আসিতেছি; ধন্য সেই ব্যক্তি, যে জাগিয়া থাকে, এবং আপন বস্ত্র রক্ষা করে, যেন সে উলঙ্গ হইয়া না বেড়ায়, এবং লোকে তাহার অপমান না দেখে।” (প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৫) এটা হয়তো মন্দিরের লেবীয় প্রহরীদের কথা মনে করিয়ে দেয়, যাদের কাপড় খুলে নেওয়া হতো ও লোকেদের সামনে অপমান করা হতো যদি কিনা তাদের প্রহরী কাজের সময়ে তারা ঘুমন্ত অবস্থায় ধরা পড়তেন।
১৫ এই বিষয়টা পরিষ্কার যে আমরা যদি হর্মাগিদোনে রক্ষা পেতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই আধ্যাত্মিকভাবে জেগে থাকতে হবে এবং প্রতীক বস্ত্র রক্ষা করতে হবে যা আমাদেরকে যিহোবা ঈশ্বরের বিশ্বস্ত সাক্ষি হিসেবে চেনায়। আমরা সুখী হব যদি কিনা আমরা আধ্যাত্মিকভাবে ঝিমিয়ে না পড়ি এবং সবসময় উদ্যোগের সঙ্গে ঈশ্বরের রাজ্যের “অনন্তকালীন সুসমাচার” প্রচার করি।—প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬.
“ধন্য সেই জন, যে এই . . . বচন সকল পালন করে”
১৬. কেন বিশেষ করে প্রকাশিত বাক্যের শেষের অধ্যায়গুলো পাঠকদের খুবই সুখী করে?
১৬ প্রকাশিত বাক্য বইয়ের পাঠকেরা যখন এই শেষের অধ্যায়গুলো পড়েন তখন তারা খুবই সুখী হন কারণ এখানে আমাদের চমৎকার আশা সম্বন্ধে খুব সুন্দর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে যে এক নতুন আকাশমণ্ডল ও এক নতুন পৃথিবী অর্থাৎ, এক নতুন পরিচ্ছন্ন মানব সমাজের ওপর শাসনরত এক ধার্মিক স্বর্গীয় রাজ্য সরকার থাকবে, যারা সবাই ‘সর্ব্বশক্তিমান প্রভু ঈশ্বরের’ প্রশংসা করে। (প্রকাশিত বাক্য ২১:২২) চমৎকার দর্শনগুলোর শেষে, দূত যোহনকে বলেছিলেন: “এই সকল বচন বিশ্বসনীয় ও সত্য; এবং যাহা যাহা শীঘ্র ঘটিবে, তাহা আপন দাসদিগকে দেখাইবার জন্য প্রভু, ভাববাদিগণের আত্মা সকলের ঈশ্বর, আপন দূতকে প্রেরণ করিয়াছেন। আর দেখ, আমি শীঘ্রই আসিতেছি; ধন্য সেই জন, যে এই গ্রন্থের ভাববাণীর বচন সকল পালন করে।”—প্রকাশিত বাক্য ২২:৬, ৭.
১৭. (ক) প্রকাশিত বাক্য ২২:৬ পদে কোন্ কথা বলা হয়েছে? (খ) আমাদের কী এড়িয়ে চলতে হবে?
১৭ প্রকাশিত বাক্যের সুখী পাঠকদের মনে পড়বে যে এই “গ্রন্থের” শুরুতেও একই কথা বলা হয়েছিল। (প্রকাশিত বাক্য ১:১, ৩) এই কথাগুলো আমাদের বলে যে বাইবেলের এই শেষ বইতে “যাহা যাহা” ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে তা “শীঘ্র ঘটিবে।” আমরা শেষকালের এতটাই শেষে বাস করছি যে প্রকাশিত বাক্যে ভাববাণী করা ঘটনাগুলো অবশ্যই খুব তাড়াতাড়ি একের পর এক ঘটে চলবে। অতএব, শয়তানের ব্যবস্থাকে আপাতদৃষ্টিতে স্থায়ী বলে মনে হলেও এই ভাবনা যেন আমাদের ঘুম পাড়িয়ে না দেয়। সচেতন পাঠকেরা এশিয়ার সপ্ত মণ্ডলীকে দেওয়া সতর্কবাণীগুলো মনে রাখবেন এবং বস্তুবাদিতা, প্রতিমাপূজা, অনৈতিকতা, কদুষ্ণ মনোভাব ও ধর্মভ্রষ্ট সম্প্রদায়গুলোর ফাঁদকে এড়িয়ে চলবেন।
১৮, ১৯. (ক) কেন যীশু শীঘ্র আসবেন আর যোহনের সঙ্গে আমরাও কোন্ আশা সম্বন্ধে লোকেদের জানাই? (খ) কোন্ উদ্দেশ্যে যিহোবা ‘আসবেন’?
১৮ প্রকাশিত বাক্যে যীশু কয়েকবার ঘোষণা করেন: “আমি শীঘ্রই আসিতেছি।” (প্রকাশিত বাক্য ২:১৬; ৩:১১; ২২:৭, ২০ক) তিনি মহতী বাবিল, শয়তানের রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং যারা মশীহ রাজ্যকে অস্বীকার করে যিহোবার সার্বভৌমত্বকে মেনে নেয় না তাদের ধ্বংস করার জন্য তিনি অবশ্যই আসবেন। আমরা প্রেরিত যোহনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একই কথা বলি, যিনি বলেছিলেন: “আমেন; প্রভু যীশু, আইস।”—প্রকাশিত বাক্য ২২:২০খ.
১৯ যিহোবা নিজে বলেন: “দেখ, আমি শীঘ্র আসিতেছি; এবং আমার দাতব্য পুরস্কার আমার সহবর্ত্তী, যাহার যেমন কার্য্য, তাহাকে তেমন ফল দিব।” (প্রকাশিত বাক্য ২২:১২) আমাদের কাছে ‘নূতন আকাশমণ্ডল’ ও ‘নূতন পৃথিবী’ যার প্রতিজ্ঞাই করা হোক না কেন, আমাদের অনন্ত জীবনের জন্য অপেক্ষা করার সময়, আমরা যেন সমস্ত ভাল লোকেদের উদ্যোগের সঙ্গে আমন্ত্রণ জানাই: “আইস। আর যে পিপাসিত, সে আইসুক; যে ইচ্ছা করে, সে বিনামূল্যেই জীবন-জল গ্রহণ করুক।” (প্রকাশিত বাক্য ২২:১৭) আর আমরা চাই যে তারাও যেন ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বই প্রকাশিত বাক্য পড়ে সুখী হন!
[পাদটীকাগুলো]
a প্রকাশিত বাক্য—এর মহান পরিপূর্ণতা সন্নিকট! (ইংরেজি) বইয়ের পৃষ্ঠা ২৮-৯ ও ১৩৬ (পাদটীকা) দেখুন।
পুনরালোচনার বিষয়বস্তু
◻ যিহোবা প্রকাশিত বাক্য দেওয়ার জন্য কোন্ মাধ্যম ব্যবহার করেছিলেন আর এর থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
◻ এশিয়ার সপ্ত মণ্ডলীকে দেওয়া বার্তা পড়ে আমাদের কেন সুখী হওয়া উচিত?
◻ ‘পরীক্ষাকালে’ আমরা কীভাবে সুরক্ষিত থাকতে পারি?
◻ প্রকাশিত বাক্য বইয়ে দেওয়া কথা পালন করলে আমাদের জন্য কোন্ সুখ আসবে?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
সুখী তারাই যারা সুসমাচার যিনি দিয়েছেন তাঁকে চেনেন
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
সুখী তিনিই যিনি জেগে থাকেন