ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্য ভবিষ্যতের আশা দেয়
ঈশ্বরের বাক্য, পবিত্র বাইবেলই সত্য খ্রীষ্টানদেরকে আশা দেয় ও তাদের মধ্যে বিশ্বাস জাগিয়ে তোলে যে তাদের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল হবে। যিহোবার সঙ্গে এক অটুট সম্পর্ক থাকায় তাদের কোন ভয় নেই যে সামনে কী ঘটতে চলেছে বরং তারা খুশি মনে পরের দিনের জন্য অপেক্ষা করেন। “ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্য” জেলা সম্মেলনের প্রথম বক্তৃতায় বলা হয়েছিল যে যিহোবার সাক্ষিরা অনেক বছর ধরে খুব মন দিয়ে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পরীক্ষা করে চলেছেন। তাহলে, এই সম্মেলনে যিহোবা তাঁর লোকেদের কী শেখাতে চেয়েছিলেন? সেখানে আসা সবাই তাদের বাইবেল হাতে যিহোবা তাদের কী শেখাতে যাচ্ছেন তা জানার জন্য অধীর অপেক্ষা করেছিলেন। সম্মেলনের প্রতিদিনের জন্য আলাদা আলাদা বিষয়বস্তু ছিল।
প্রথম দিন: ঈশ্বরের বাক্যের আলোতে চলা
“ঈশ্বরের বাক্য আমাদের পথ দেখিয়েছে” বক্তৃতায় বলা হয়েছিল যে যিহোবার লোকেরা এমন এক ব্যক্তির মতো যিনি রাতের অন্ধকারে যাত্রা শুরু করেন। ভোরবেলায় সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আবছা আবছা দেখতে পান কিন্তু যখন সূর্য মাথার ওপর থেকে সরাসরি কিরণ দেয় তখন তিনি পরিষ্কারভাবে সবকিছু দেখতে পান। যেমন হিতোপদেশ ৪:১৮ পদে বলা হয়েছে ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্য থেকে সত্যের উজ্জ্বল আলো ঠিকরে পড়ছে আর তাই যিহোবার লোকেরা স্পষ্টভাবে দেখতে পান যে তাদের কোন্ পথে চলতে হবে। আধ্যাত্মিক অন্ধকারের মধ্যে হোঁচট খাওয়ার জন্য তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়নি।
“ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যে মনোযোগ দিন” মুখ্য বক্তৃতাটা শ্রোতাদের মনে করিয়ে দিয়েছিল যে যারা যিহোবার ভবিষ্যদ্বাণীর ওপর নির্ভর করেন, তারা সেই লোকেদের মতো হতাশ ও দিশেহারা হয়ে পড়েন না যারা নকল মশীহ ও মিথ্যা ভাববাদীদের কথা মেনে চলেন। অন্যদিকে, প্রকৃত মশীহ যে যীশু খ্রীষ্ট তার অনেক অনেক প্রমাণ আছে! একটা প্রমাণ হল যীশুর রূপান্তর যেখানে অলৌকিকভাবে দেখানো হয়েছিল যে তিনি হলেন ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা। সেই বক্তৃতায় বক্তা এটাও বলেছিলেন যে ১৯১৪ সালে যখন তিনি রাজা হয়েছিলেন তখন থেকেই যীশু হলেন ২ পিতর ১:১৯ পদে বলা সেই “প্রভাতীয় তারা।” তিনি বলেছিলেন, “মশীহ প্রভাতীয় তারার মতো ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত সব লোকেদের জন্য এক নতুন দিন অর্থাৎ এক নতুন যুগের বার্তা নিয়ে আসবেন।”
বিকেলের অধিবেশনের প্রথম বক্তৃতা ছিল “জ্যোতির্গণের ন্যায় প্রকাশ পাওয়া।” এতে ইফিষীয় ৫:৮, ৯ পদকে ভাল করে বোঝানো হয়েছিল, যেখানে প্রেরিত পৌল আমাদেরকে পরামর্শ দেন, “দীপ্তির সন্তানদের ন্যায় চল।” খ্রীষ্টানেরা শুধু ঈশ্বরের বাক্য অন্যদের জানিয়েই নয় সেইসঙ্গে যীশুর মতো তাদের জীবনে বাইবেলের বাক্য কাজে লাগিয়েও জ্যোতির মতো চমকান।
এইরকম জ্যোতি হয়ে চমকানোর জন্য আমাদের অবশ্যই ‘ঈশ্বরের বাক্য পড়ে আনন্দ পেতে হবে।’ তিন ভাগের একটা সিম্পোজিয়ামে এই বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। প্রথম বক্তৃতায় ভাই বলেছিলেন যে অব্রাহাম লিংকন একবার বলেছিলেন, বাইবেল হল “মানুষকে দেওয়া ঈশ্বরের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার।” তারপর ভাই শ্রোতাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে বাইবেল পড়ার জন্য তারা কি একটা তালিকা বানিয়েছেন আর তারা কি রোজ বাইবেল পড়েন যা দেখায় যে ঈশ্বরের বাক্যের জন্য তাদের উপলব্ধি আছে। শ্রোতাদেরকে মন দিয়ে বাইবেল পড়তে উৎসাহ দেওয়া হয়েছিল, শাস্ত্রের ঘটনাগুলোকে মনের চোখে দিয়ে দেখতে এবং যে বিষয়গুলো ইতিমধ্যে জানা হয়ে গেছে তার সঙ্গে নতুন বিষয়গুলোও মাথায় রাখতে বলা হয়েছিল।
সিম্পোজিয়ামের পরের ভাগ জোর দিয়েছিল যে আমরা যদি “কঠিন খাদ্য” হজম করতে চাই অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্যের গভীর বিষয়গুলো জানতে চাই, তাহলে তা শুধু ওপর ওপর পড়লেই চলবে না বরং আমাদের অধ্যয়ন করতে হবে। (ইব্রীয় ৫:১৩, ১৪) ভাই বলেছিলেন যে অধ্যয়ন করতে তখনই ভাল লাগে যদি আমরা আগে থেকে ‘আমাদের অন্তঃকরণ সুস্থির করি’ যেমন যাজক ইষ্রার দিনের ইস্রায়েলীয়রা করেছিল। (ইষ্রা ৭:১০) কিন্তু অধ্যয়ন করা এত জরুরি কেন? কারণ যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কতখানি মজবুত হবে তা নির্ভর করে আমাদের অধ্যয়নের ওপর। তাই বাইবেল অধ্যয়নকে খুবই মূল্যবান বলে দেখা উচিত, এর থেকে খুশি ও সতেজতা পাওয়া উচিত যদিও মন দিয়ে তা করার জন্য পরিশ্রম করা দরকার। কিন্তু ভালভাবে অধ্যয়ন করার জন্য আমরা কীভাবে সময় বের করে নিতে পারি? এই বিষয়ে সিম্পোজিয়ামের শেষ ভাগে ভাই বলেছিলেন যে আমাদের ‘সুযোগ কিনিয়া লইয়া,’ উচিত। (ইফিষীয় ৫:১৬) হ্যাঁ, সময় খুঁজে নেওয়ার একটাই রাস্তা হল আমাদের সময়কে ঠিক করে ব্যবহার করা।
“ঈশ্বর ক্লান্ত ব্যক্তিকে শক্তি দেন” বক্তৃতায় বলা হয়েছিল যে আজকে অনেক লোকেদেরই দেখা যায় যে তারা খুবই ক্লান্ত। তাই খ্রীষ্টীয় প্রচার কাজের জন্য আমাদের “পরাক্রমের উৎকর্ষ” দরকার আর তা পেতে আমাদের যিহোবার ওপর নির্ভর করা দরকার, যিনি “ক্লান্ত ব্যক্তিকে শক্তি দেন।” (২ করিন্থীয় ৪:৭; যিশাইয় ৪০:২৯) আমাদের শক্তি বাড়ানোর জন্য অনেক ব্যবস্থা করা হয়েছে যেমন ঈশ্বরের বাক্য, প্রার্থনা, খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী, প্রচারে নিয়মিত অংশ নেওয়া, খ্রীষ্টান অধ্যক্ষ এবং অন্যান্যদের বিশ্বাসের উদাহরণ। “সময়ের কথা মনে রেখে শিক্ষক হোন” বক্তৃতায় জোর দেওয়া হয়েছিল যে খ্রীষ্টানদের শিক্ষক ও প্রচারক হওয়া দরকার। তাদের ‘শিক্ষাদানের কৌশল’ রপ্ত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করা দরকার।—২ তীমথিয় ৪:২.
শুক্রবারের শেষ বক্তৃতা ছিল “ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারীরা জয়ী হবে না।” এতে বলা হয়েছিল যে ইদানীং কিছু দেশে কীভাবে যিহোবার সাক্ষিদেরকে বিপদজনক সম্প্রদায় বলে তাদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তাই বলে আমরা ভয় পাব না, কারণ যিশাইয় ৫৪:১৭ পদ আমাদের সাহস দিয়ে বলে: “যে কোন অস্ত্র তোমার বিপরীতে গঠিত হয়, তাহা সার্থক হইবে না; যে কোন জিহ্বা বিচারে তোমার প্রতিবাদিনী হয়, তাহাকে তুমি দোষী করিবে। সদাপ্রভুর দাসদের এই অধিকার, এবং আমা হইতে তাহাদের এই ধার্ম্মিকতা লাভ হয়, ইহা সদাপ্রভু কহেন।”
দ্বিতীয় দিন: ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বইগুলোতে যা বলা হয়েছে
দিনের কার্যক্রম দৈনিক পাঠ পড়ে শুরু হয়েছিল। এরপর সম্মেলনে আসা ব্যক্তিরা সম্মেলনের দ্বিতীয় সিম্পোজিয়াম উপভোগ করেছিলেন যার শীর্ষক ছিল “জ্যোতির্বাহক হিসেবে যিহোবার গৌরব করা।” প্রথম বক্তৃতায় বলা হয়েছিল যিহোবার গৌরব করার জন্য খ্রীষ্টানদের সব জায়গায় গিয়ে প্রচার করা দরকার। পরের অংশ আগ্রহী লোকেদের ঈশ্বরের সংগঠনে নিয়ে আসার গুরুত্ব সম্বন্ধে আলোচনা করেছিল। এটা কীভাবে করা যেতে পারে? প্রত্যেকবার বাইবেল অধ্যয়নের আগে বা পরে পাঁচ কি দশ মিনিট সময় ঈশ্বরের সংগঠন কীভাবে কাজ করে তা নিয়ে আলোচনা করে। এই সিম্পোজিয়ামের তৃতীয় বক্তৃতা ভাল কাজ করে ঈশ্বরের গৌরব করতে বলেছিল।
“যিহোবার অনুস্মারকগুলোকে আরও বেশি করে ভালবাসুন” বক্তৃতাটা গীতসংহিতা ১১৯ অধ্যায়ের কয়েকটা পদ নিয়ে আলোচনা করেছিল। আমাদের যিহোবার নিয়মগুলো বার বার মনে করিয়ে দেওয়ার দরকার আছে কারণ আমরা সবাই-ই ভুলে যাই। তাই, যিহোবার অনুস্মারকগুলোর জন্য গীতরচকের মতো করে ভালবাসা গড়ে তোলা কতই না জরুরি!
এরপর বাপ্তিস্মের বক্তৃতা দেওয়া হয়েছিল যা ছিল সম্মেলনের এক বিশেষ বক্তৃতা। বক্তৃতার বিষয় ছিল “ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্য মেনে চলা বাপ্তিস্মের দিকে নিয়ে যায়।” বাপ্তিস্ম প্রার্থীদের মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে খ্রীষ্টর আদর্শ মেনে চলার জন্য শুধু বাপ্তিস্ম নেওয়াই সবকিছু নয় বরং তাদের নিখুঁতভাবে খ্রীষ্টের পদচিহ্ন অনুযায়ী চলতে হবে। (১ পিতর ২:২১) যোহন ১০:১৬ পদে যীশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে তিনি ‘আরও [অপর] মেষদের’ সংগ্রহ করবেন যারা তাঁর আত্মায় অভিষিক্ত শিষ্যদের সঙ্গে মিলে সেবা করবেন। এই ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণতায় অংশ নেওয়া নতুন ব্যক্তিদের জন্য কতই না খুশির বিষয়!
বিকেলের কার্যক্রমের প্রথম বক্তৃতা “আত্মা কী বলে শুনুন” বুঝিয়ে দিয়েছিল যে ঈশ্বরের আত্মা আমাদের সঙ্গে বাইবেল, “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” এবং আমাদের বাইবেল শিক্ষিত বিবেকের মাধ্যমে কথা বলে। (মথি ২৪:৪৫) তাই ঈশ্বরকে কীভাবে খুশি করতে হয় তা জানার জন্য খ্রীষ্টানদের স্বর্গ থেকে কোন বাণী শোনার দরকার নেই। পরের “ঈশ্বরীয় ভক্তির শিক্ষাকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখুন” বক্তৃতাটা খ্রীষ্টানদেরকে সেই নীতিহীন ধারণাগুলোতে কান না দিতে পরামর্শ দিয়েছিল যা আজকে জগতে ছড়িয়ে আছে। আসলে, অতিরিক্ত কৌতূহলী হলে আমরা এমন কিছু বিষয় শিখে ফেলতে পারি যা আমাদের ক্ষতি করতে পারে। এইসব বিষয় সত্য থেকে দূরে সরে যাওয়া শয়তানের লোকেরা ছড়িয়ে দেয় আর আমরা সেই ফাঁদে আটকা পড়তে পারি। তাই, প্রতিদিন বাইবেল, প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন থাক! পত্রিকা পড়া কত বেশি ভাল হবে!
“নিরাময় বাক্য সমূহের আদর্শকে ধরে রাখা” শিরোনামের পরের বক্তৃতায় বলা হয়েছিল যে শাস্ত্রীয় “আদর্শ” অর্থাৎ বাইবেলের সমস্ত শুদ্ধ শিক্ষা ভালভাবে জানা কত জরুরি। (২ তীমথিয় ১:১৩) এই আদর্শকে আঁকড়ে ধরা শুধু ঈশ্বরীয় ভক্তি লাভ করারই চাবি নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তা সত্যের সঙ্গে কোন্ বিষয়গুলো খাপ খায় না তাও চিনিয়ে দেয়।
ভেবে দেখুন যে যিহোবা আপনাকে মনোরঞ্জন বস্তু হিসেবে দেখেন! এর চেয়ে বড় সম্মান কি আর কিছু হতে পারে? হগয়ের ভবিষ্যদ্বাণীর ওপর ভিত্তি করে এই বক্তৃতা দেওয়া হয়েছিল যার বিষয় ছিল “‘মনোরঞ্জন বস্তু সকল’ যিহোবার গৃহ পূর্ণ করছে।” এই বক্তৃতা শ্রোতাদের মধ্যে এক নতুন উৎসাহ জাগিয়েছিল কারণ এটা তাদের আশ্বাস দিয়েছিল যে ‘বিস্তর লোকের’ প্রত্যেক সদস্য যিহোবার কাছে সত্যিই মনোরঞ্জন বস্তু। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯) ‘মহাক্লেশের’ সময়ে যা খুব শীঘ্রিই আসতে চলেছে জাতিগণকে শেষ বারের মতো “কম্পান্বিত” করার সময় যিহোবা তাদের রক্ষা করবেন। (হগয় ২:৭, ২১, ২২; মথি ২৪:২১) কিন্তু, সেই সময় আসার আগে যিহোবার লোকেদের অবশ্যই আধ্যাত্মিকভাবে জেগে থাকতে হবে, যেমন “ভবিষ্যদ্বাণীমূলক শাস্ত্রপদগুলো আমাদের জেগে থাকার জন্য সতর্ক করে” বক্তৃতায় বলা হয়েছে। বক্তা যীশুর কথাগুলোকে আর একবার বলেছিলেন: “অতএব জাগিয়া থাক, কেননা তোমাদের প্রভু কোন্ দিন আসিবেন, তাহা তোমরা জান না।” (মথি ২৪:৪২) আমরা কীভাবে আধ্যাত্মিকভাবে জেগে থাকতে পারি? যিহোবার সেবায় ব্যস্ত থেকে, অবিরত প্রার্থনা করে এবং যিহোবার মহাদিনের অপেক্ষায় থেকে।
ওই দিনের শেষ বক্তৃতা ছিল “শেষ কালে ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্য।” এই বক্তৃতা চিরদিন আমাদের মনে থাকবে। কেন? কারণ বক্তা একটা নতুন বই প্রকাশ করেছিলেন যার নাম দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীতে মনোযোগ দিন! (ইংরেজি) বক্তা বলেছিলেন “৩২০ পৃষ্ঠার এই অদ্ভুত বইটাতে অনেক নজরকাড়া ছবি আছে আর এটা দানিয়েলের বইয়ের প্রত্যেকটা অংশ নিয়ে আলোচনা করে।” যিহোবা যে আমাদেরকে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্য ভালভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছেন এটা তার কত বড় প্রমাণ। এতে আমাদের বিশ্বাস কতই না মজবুত হয়!
তৃতীয় দিন: ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্য কখনও বিফল হবে না
সম্মেলনের শেষ দিনের শুরু এক সিম্পোজিয়াম দিয়ে হয়েছিল যার শীর্ষক ছিল “নিরূপিত সময়ের জন্য ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্যগুলো।” এই বক্তৃতায় তিন ভাগে ভাববাদী হবক্কূকের বলা যিহোবার বিচার সম্বন্ধে বোঝানো হয়েছিল। এর মধ্যে প্রথমটা ছিল বিপথগামী যিহূদার বিরুদ্ধে এবং দ্বিতীয়টা ছিল অত্যাচারী বাবিলনের বিরুদ্ধে। তৃতীয় ও শেষ বিচার খুব শীঘ্রি আমাদের দিনে পূর্ণ হবে যখন সমস্ত দুষ্ট লোকেদের ধ্বংস করে দেওয়া হবে। সিম্পোজিয়ামের শেষ ভাগে হর্মাগিদোন সম্বন্ধে বলতে গিয়ে ভাই তার শ্রোতাদের মধ্যে ঈশ্বরীয় ভয় জাগিয়ে তুলেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “সত্যিই, এটা খুবই ভয়ানক এক দিন হবে যখন যিহোবা তাঁর পরাক্রমী শক্তিকে পুরোপুরি ব্যবহার করবেন।”
সম্মেলনের এমন একটা বাইবেল-ভিত্তিক নাটক দেখানো হয়েছিল যা সকলের হৃদয় ছুঁয়েছিল। নাটকের নাম ছিল “আমাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারকে উপলব্ধি করা।” নিজেদের বিবেককে পরীক্ষা করতে সাহায্যকারী এই নাটক দেখিয়েছিল যে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য যাকোব ও এষৌর মনোভাবে আকাশ-পাতাল পার্থক্য ছিল। এষৌ আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারকে তুচ্ছ করেছিলেন তাই এটা যাকোবকে দেওয়া হয়েছিল, যিনি এটাকে খুবই মূল্যবান মনে করেছিলেন। সম্মেলনে আসা ব্যক্তিদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “যিহোবা আমাদেরকে কোন্ [আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার] দিয়েছেন?” উত্তরে বক্তা বলেছিলেন, “তাঁর বাক্য বাইবেলের সত্য; অনন্ত জীবনের আশা; এবং তাঁর দূত হয়ে সুসমাচার প্রচার করার সম্মান।”
পরের বক্তৃতা ছিল, “আমাদের মূল্যবান উত্তরাধিকার আপনার কাছে কী অর্থ রাখে?” যদি আমরা আমাদের ব্যক্তিগত অথবা বস্তুগত সুযোগসুবিধার আগে যিহোবার সেবা ও আধ্যাত্মিক দায়িত্বগুলোকে পালন করি, তাহলে আমরা দেখাই যে আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারের প্রতি আমাদের উপলব্ধি আছে। আর এভাবেই আমরা আদম, এষৌ এবং অবিশ্বস্ত ইস্রায়েলীয়দের থেকে আলাদা হই আর যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও কাছের হয়।
“ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে—সমস্ত কিছু নতুন করা,” নামের জনসাধারণের বক্তৃতায় ‘নূতন আকাশমণ্ডল’ ও ‘নূতন পৃথিবী’ সম্বন্ধে চারটে প্রধান ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। (যিশাইয় ৬৫:১৭-২৫; ৬৬:২২-২৪; ২ পিতর ৩:১৩; প্রকাশিত বাক্য ২১:১, ৩-৫) যিহোবা যখন এই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তখন তাঁর এটাই উদ্দেশ্য ছিল যে এই ভবিষ্যদ্বাণী সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে বাবিল থেকে ফিরে আসা ইস্রায়েলীয়দের ওপর ছাড়াও পরে আরও বড় আকারে পূর্ণ হবে। হ্যাঁ, তাঁর রাজ্য সরকারের (“নূতন আকাশমণ্ডলের”) এবং তাঁর প্রজাদের (“নূতন পৃথিবীর”) কথা মনে রেখেই তিনি এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যারা সারা পৃথিবীতে এক সুন্দর পরমদেশে বাস করবে।
“ঈশ্বরের বাক্যের পরিচালনাধীনে আমাদের প্রত্যাশাগুলো” বক্তৃতাটা ছিল সম্মেলনের শেষ বক্তৃতা। এটা আমাদের মনে শিহরণ ও উৎসাহ জাগিয়েছিল। এতে সবাইকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে রাজ্যের খবর প্রচার করার জন্য “সময় সঙ্কুচিত।” (১ করিন্থীয় ৭:২৯) হ্যাঁ, শয়তান ও তার পুরো দুষ্ট বিধিব্যবস্থার বিরুদ্ধে যিহোবার বিচার ঘোষণা করার জন্য আর বেশি সময় বাকি নেই। তাই আসুন আমরা গীতরচকের মতো অনুভব করি যিনি গেয়েছিলেন: “আমাদের প্রাণ সদাপ্রভুর অপেক্ষায় রহিয়াছে; তিনিই আমাদের সহায় ও আমাদের ঢাল।” (গীতসংহিতা ৩৩:২০) ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যের ওপর যারা তাদের আশা রেখেছেন তাদের সামনে কতই না উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে!
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
এক সুন্দর নাটক দেখানো হয়েছিল যা আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারের প্রতি যিহোবার দাসদের উপলব্ধিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যে মনোযোগ দিয়ে অনেকে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন