ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষকদেরকে তাদের দায়িত্ব পালন করার জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়েছিল
সম্প্রতি কয়েক মাস ধরে হাজার হাজার শিক্ষকরা শিক্ষা নেওয়ার জন্য মিলিত হয়েছিলেন। গত মে মাস থেকে শুরু করে সারা পৃথিবীতে যিহোবার সাক্ষিদের যে শত শত “ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষকেরা” জেলা সম্মেলন হয়েছিল, সেখানে তারা মিলিত হয়েছিলেন। সম্মেলনে যোগদানকারীদেরকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছিল, তারা যেন নিজেদেরকে শিক্ষিত ও আরও যোগ্য করে তোলে এবং শিক্ষক হিসেবে তাদের দায়িত্ব পালন করে।
আপনি কি এই সম্মেলনগুলোর কোন একটায় যোগ দিয়েছিলেন? যদি দিয়ে থাকেন, তাহলে কোন সন্দেহ নেই যে সত্য ঈশ্বর যিহোবার উপাসনার জন্য এই সমাবেশগুলোতে যে উত্তম আধ্যাত্মিক খাদ্য দেওয়া হয়েছে, তার জন্য আপনি কৃতজ্ঞ। সম্মেলনের শিক্ষামূলক কার্যক্রমের পুনরালোচনায় আমাদের সঙ্গে যোগ দিন না কেন?
প্রথম দিন—ঈশ্বর-নিশ্বসিত শাস্ত্রলিপি শিক্ষার জন্য উপকারী
সম্মেলনের সভাপতি “ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষকেরা, শিখুন” বক্তৃতার মাধ্যমে সবাইকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। “সর্বমহান শিক্ষক” যিহোবার কাছ থেকে শিখেছিলেন বলে যীশু খ্রীষ্ট মহান শিক্ষক হতে পেরেছিলেন। (যিশাইয় ৩০:২০, NW; মথি ১৯:১৬) ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষক হিসেবে আমরা যদি উন্নতি করতে চাই, তাহলে আমাদেরকেও যিহোবার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
পরের বক্তৃতাটা ছিল, “রাজ্যের শিক্ষা উত্তম ফল এনে দেয়।” এই বক্তৃতায় ঈশ্বরের বাক্যের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে শিষ্য তৈরির আনন্দ ও আশীর্বাদ সম্বন্ধে তুলে ধরা হয়েছিল।
এর পরে এক উৎসাহজনক বক্তৃতার শিরোনাম ছিল, “‘ঈশ্বরের মহৎ মহৎ কর্ম্মের’ দ্বারা উদ্দীপিত হোন।” প্রথম শতাব্দীতে ঈশ্বরের রাজ্যের সঙ্গে জড়িত ‘মহৎ মহৎ কর্ম্ম’ লোকেদেরকে কাজ করতে প্রেরণা দিয়েছিল। (প্রেরিত ২:১১) আমরাও শাস্ত্রীয় শিক্ষাগুলো যেমন মুক্তির মূল্য, পুনরুত্থান এবং নতুন চুক্তির মতো ‘মহৎ মহৎ কর্ম্ম’ সম্বন্ধে ঘোষণা করে লোকেদেরকে কাজ করতে উদ্দীপিত করতে পারি।
পরবর্তী বক্তৃতা, “যিহোবার ধার্মিকতায় আনন্দ খুঁজে নিন,” সবাইকে উৎসাহ দিয়েছিল। (গীতসংহিতা ৩৫:২৭) ধার্মিক বিষয়গুলো ভালবাসতে এবং যেটা খারাপ সেটাকে ঘৃণা করতে শিখে, বাইবেল অধ্যয়ন করে, আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ক্ষতি করে এমন প্রভাবগুলোকে প্রতিরোধ করে এবং নম্রতা গড়ে তোলার মাধ্যমে আমাদেরকে ধার্মিকতার অনুধাবন করার জন্য সাহায্য করা হয়েছিল। এইধরনের পদক্ষেপগুলো আমাদেরকে খারাপ বন্ধুবান্ধব, জগতের বস্তুগত বিষয়গুলো এবং অনৈতিক ও উচ্ছৃঙ্খল আমোদপ্রমোদ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।
মুখ্য বক্তৃতার শিরোনাম ছিল, “ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষক হিসেবে সুসজ্জীভূত” আর এটা আমাদেরকে মনে করিয়ে দিয়েছিল যে, যিহোবা তাঁর বাক্য, তাঁর পবিত্র আত্মা এবং তাঁর পার্থিব সংগঠনের মাধ্যমে আমাদেরকে তাঁর পরিচারক হিসেবে যোগ্য করে তোলেন। ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করার বিষয়ে বক্তা আমাদেরকে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আমাদের লক্ষ্য হল, বাইবেলের পৃষ্ঠা থেকে বার্তা তুলে এনে শ্রোতাদের মনে ছেপে দেওয়া।”
সম্মেলনের প্রথম সিম্পোজিয়ামের শিরোনাম ছিল, “অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার সময় নিজেদেরকে শিক্ষা দেওয়া।” শুরুর বক্তৃতা জোর দিয়েছিল যে, খ্রীষ্টীয় নৈতিকতার উচ্চ নৈতিক মান সম্বন্ধে অন্যদেরকে আমরা যা শিক্ষা দিই, তা আমাদের মেনে চলা উচিত। পরের বক্তৃতা আমাদেরকে ‘সত্যের বাক্য যথার্থরূপ ব্যবহার করিবার’ জন্য পরামর্শ দিয়েছিল। (২ তীমথিয় ২:১৫) আমরা যতদিন ধরেই ঈশ্বরকে সেবা করে আসি না কেন, নিজেদেরকে শেখানোর জন্য আমাদের নিয়মিত ও অধ্যবসায়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়ন করা দরকার। সিম্পোজিয়ামের শেষ বক্তৃতা দেখিয়েছিল যে, অহংকার, স্বাধীনচেতা মনোভাব, আত্মগর্ব, ঈর্ষা, হিংসা, তিক্ত অনুভূতি, বিরক্তি এবং অন্যদের দোষ খোঁজা ইত্যাদি মনোভাব আমাদের মধ্যে রয়েছে কি না, তা দিয়াবল দেখছে। কিন্তু, আমরা যদি দৃঢ়ভাবে দিয়াবলের প্রতিরোধ করি, তাহলে সে আমাদের কাছ থেকে পালিয়ে যাবে। তাকে প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে হবে।—যাকোব ৪:৭, ৮.
“জগতে মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়া অশ্লীলতাকে ঘৃণা করুন” নামক সময়োপযোগী বক্তৃতাটা দেখিয়েছিল যে, আমাদের আধ্যাত্মিকতার ওপর এইধরনের প্রচণ্ড বিপদ আসলে, সেটাকে আমরা কীভাবে মোকাবিলা করতে পারি। ভাববাদী হবক্কূক যিহোবার বিষয়ে বলেছিলেন: “তুমি এমন নির্ম্মলচক্ষু যে মন্দ দেখিতে পার না, এবং দুষ্কার্য্যের প্রতি তুমি দৃষ্টিপাত করিতে পার না।” (হবক্কূক ১:১৩) আমাদের ‘যাহা মন্দ তাহা নিতান্তই ঘৃণা করা’ উচিত। (রোমীয় ১২:৯) বাবামাদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তারা যেন ইন্টারনেট ব্যবহার করা এবং টেলিভিশন দেখার বিষয়ে ছেলেমেয়েদের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। বক্তা বলেছিলেন, যারা অশ্লীলতার প্রতি ঝুঁকে পড়েছে, তাদের আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে পরিপক্ব কোন বন্ধুর কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া উচিত। এছাড়া গীতসংহিতা ৯৭:১০; মথি ৫:২৮; ১ করিন্থীয় ৯:২৭; ইফিষীয় ৫:৩, ১২; কলসীয় ৩:৫; ১ থিষলনীকীয় ৪:৪, ৫ পদগুলোর ওপর ধ্যান করে এবং সেগুলো মনে করে সাহায্য পাওয়া যাবে।
পরের বক্তৃতা “ঈশ্বরের শান্তিকে আপনার সুরক্ষা হতে দিন” আমাদেরকে এই নিশ্চয়তা দিয়ে সান্ত্বনা দিয়েছিল যে আমরা যখন দুশ্চিন্তার ভারে নুয়ে পড়ি, তখন আমাদের সমস্ত বোঝা যিহোবার ওপর ছেড়ে দিতে পারি। (গীতসংহিতা ৫৫:২২) আমরা যদি মন খুলে প্রার্থনা করি, তাহলে যিহোবা আমাদেরকে “ঈশ্বরের শান্তি” দেবেন, যা হল শান্তভাব এবং মনের স্বস্তি যেটা তাঁর সঙ্গে আমাদের মূল্যবান সম্পর্ক থেকে আসে।—ফিলিপীয় ৪:৬, ৭.
“যিহোবা তাঁর লোকেদের জ্যোতি দিয়ে বিভূষিত করেন,” নামক এক আনন্দপূর্ণ বক্তৃতা দিয়ে প্রথম দিনের অধিবেশন শেষ হয়েছিল আর এই বক্তৃতা যিশাইয় ৬০ অধ্যায়ের পরিপূর্ণতা সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করেছিল। বর্তমানে অন্ধকার জগতের মধ্যে “বিজাতি-সন্তানেরা” অর্থাৎ মেষতুল্য ব্যক্তিদের এক বিরাট জনতা অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের সঙ্গে যিহোবার জ্যোতি উপভোগ করছেন। ১৯ এবং ২০ পদের কথা উল্লেখ করে বক্তা বলেছিলেন: “যিহোবা সূর্যের মতো ‘অস্তমিত’ বা চাঁদের মতো ‘ডুবিয়া’ যাবেন না। তিনি তাঁর লোকেদের ওপর জ্যোতি বর্ষণ করে তাদের বিভূষিত করে চলবেন। এই অন্ধকারময় জগতের শেষ কালে এটা আমাদের জন্য কত অপূর্ব এক আশ্বাস!” বক্তৃতার শেষে বক্তা যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী—সমস্ত মানুষের জন্য জ্যোতি (ইংরেজি) দ্বিতীয় খণ্ডের প্রকাশের কথা ঘোষণা করেছিলেন। আপনি কি ইতিমধ্যেই এই নতুন প্রকাশনা পড়ে শেষ করেছেন?
দ্বিতীয় দিন—অন্যদেরকে শিক্ষা দিতে সক্ষম হওয়া
দ্বিতীয় দিন দৈনিক শাস্ত্রপদ আলোচনার পর আমরা খুবই আগ্রহ নিয়ে সম্মেলনের দ্বিতীয় সিম্পোজিয়াম “পরিচারকরা যাদের মাধ্যমে অন্যেরা বিশ্বাসী হন” শুনেছিলাম। তিন অংশের এই সিম্পোজিয়ামের বক্তারা লোকেদেরকে বিশ্বাসী হওয়ার জন্য সাহায্য করতে তিনটে ধাপের প্রত্যেকটাতে যা জড়িত আছে, তা তুলে ধরেছিলেন আর সেগুলো ছিল, রাজ্যের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া, আগ্রহ বাড়িয়ে তোলা এবং আগ্রহী ব্যক্তিদের যীশু যা আদেশ দিয়েছেন, তা মানতে শেখানো। সাক্ষাৎকার এবং বাস্তব ঘটনা অভিনয় করে দেখানোর সাহায্যে আমরা স্পষ্টভাবে দেখেছিলাম যে, শিষ্য হওয়ার জন্য কীভাবে আমরা অন্যদেরকে শিক্ষা দিতে পারি।
এর পরের বিষয়বস্তু ছিল, “আপনার ধৈর্যের সঙ্গে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি যুক্ত করুন।” বক্তা দেখিয়েছিলেন যে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হল, ‘শেষ পর্যন্ত স্থির থাকা।’ (মথি ২৪:১৩) ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি গড়ে তোলার জন্য ঈশ্বরের জোগানো সমস্ত ব্যবস্থাগুলোকে আমাদের কাজে লাগানো উচিত যেমন প্রার্থনা, ব্যক্তিগত অধ্যয়ন, সভাগুলো এবং পরিচর্যা। যে জাগতিক আকাঙ্ক্ষা ও কার্যকলাপগুলো ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভক্তিকে ছিনিয়ে নেয় বা নষ্ট করে দেয়, সেগুলোকে আমাদের প্রতিরোধ করা প্রয়োজন।
পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোকেরা কীভাবে আজকে সতেজতা পেতে পারে? “খ্রীষ্টের জোয়ালির নিচে বিশ্রাম খোঁজা” বক্তৃতা এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল। যীশু তাঁর অনুসারীদেরকে নম্রভাবে তাঁর জোয়ালির নিচে আসতে এবং তাঁর কাছ থেকে শিখতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। (মথি ১১:২৮-৩০) সাদাসিধে এবং ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপন করার দ্বারা যীশুর উদাহরণকে নিখুঁতভাবে মেনে আমরা তাঁর জোয়ালির নিচে আসতে পারি। এই বক্তৃতার মূল বিষয়গুলো, যে ব্যক্তিরা তাদের জীবনযাপনকে সাদাসিধে করেছেন, তাদের অভিজ্ঞতাগুলোর মাধ্যমে ফুটে উঠেছিল।
যিহোবার সাক্ষিদের এই বিরাট সমাবেশের বিষয়গুলোর মধ্যে একটা হল, ঈশ্বরের নতুন উৎসর্গীকৃত দাসদের বাপ্তিস্ম। যে ভাই “বাপ্তিস্ম শিক্ষা দেওয়ার মহান সুযোগ করে দেয়” বক্তৃতাটা দিয়েছিলেন, তিনি বাপ্তিস্ম প্রার্থীদেরকে উষ্ণ অভ্যর্থনা এবং সেবা করার মহান সুযোগে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ঈশ্বরের বাক্যের যে নতুন বাপ্তাইজিত শিক্ষকরা শাস্ত্রীয় যোগ্যতাগুলো অর্জন করেছেন, তারা মণ্ডলীতে বিভিন্ন দায়িত্ব পেতে পারেন।
দুপুরের অধিবেশনের প্রথম বক্তৃতার শিরোনাম ছিল, “মহান শিক্ষককে অনুকরণ করুন।” অগণিত বছর ধরে স্বর্গে থাকার সময়ে, যীশু খুব ভাল করে তাঁর পিতাকে দেখেছিলেন ও অনুকরণ করেছিলেন আর এভাবে তিনি মহান শিক্ষক হয়েছিলেন। পৃথিবীতে থাকাকালীন তিনি শিক্ষাদানের কার্যকারী কৌশলগুলো যেমন, বিভিন্ন হৃদয়গ্রাহী প্রশ্ন এবং সহজ কিন্তু প্রাণবন্ত দৃষ্টান্তগুলো ব্যবহার করতেন। ঈশ্বরের বাক্যের ওপর ভিত্তি করে যীশু শিক্ষা দিতেন এবং উদ্যম, আন্তরিকতার সঙ্গে ও ক্ষমতাপন্ন ব্যক্তির মতো কথা বলতেন। আমরাও কি মহান শিক্ষককে অনুকরণ করার জন্য প্রেরণা পাইনি?
“আপনি কি অন্যদের সেবা করতে ইচ্ছুক?” নামক আরেকটা উদ্দীপনামূলক বক্তৃতা আমাদেরকে অন্যদের সেবা করার বিষয়ে যীশুর উদাহরণ অনুকরণ করতে উৎসাহ দিয়েছিল। (যোহন ১৩:১২-১৫) বক্তা যোগ্য ব্যক্তিদের অন্যদেরকে সাহায্য করতে বিভিন্ন সুযোগগুলোকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে তীমথিয়কে অনুকরণ করার জন্য সরাসরি পরামর্শ দিয়েছিলেন। (ফিলিপীয় ২:২০, ২১) বাবামাদেরকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছিল তারা যেন ছেলেমেয়েদেরকে পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা করতে সাহায্য করার জন্য ইল্কানা ও হান্নাকে অনুকরণ করে। আর যুবক-যুবতীদের স্বেচ্ছায় নিজেদেরকে বিলিয়ে দিয়ে যীশু খ্রীষ্ট ও যুবক তীমথিয়ের উদাহরণ অনুকরণ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। (১ পিতর ২:২১) এছাড়া, যারা অন্যদের সেবা করার সুযোগগুলোকে বেছে নিয়েছিলেন তাদের কথা শুনেও আমরা প্রেরণা পেয়েছিলাম।
তৃতীয় সিম্পোজিয়ামের বিষয়বস্তু ছিল, “ঈশতান্ত্রিক শিক্ষা থেকে আরও বেশি উপকার লাভ করুন।” প্রথম বক্তা আমাদের মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতাকে বাড়ানোর গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রথমে আমরা অল্প সময় দিয়ে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন শুরু করতে পারি আর তারপর ধীরে ধীরে তা বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারি। এছাড়া, তিনি শ্রোতাদেরকে সভাগুলোর সময় শাস্ত্রপদ খুলে দেখতে এবং নোট নিতে উৎসাহিত করেছিলেন। দ্বিতীয় বক্তা আমাদেরকে “নিরাময় বাক্য সমূহের আদর্শ” এর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে লেগে থাকার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সাবধান করেছিলেন। (২ তীমথিয় ১:১৩, ১৪) অনৈতিক প্রচার মাধ্যমগুলো, বিভিন্ন দর্শনবিদ্যা, বাইবেলের সমালোচকদের এবং ধর্মভ্রষ্টদের থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য আমাদের ব্যক্তিগত অধ্যয়ন এবং সভায় যোগ দেওয়ার জন্য সময় কিনে নিতে হবে। (ইফিষীয় ৫:১৫, ১৬) সিম্পোজিয়ামের শেষ বক্তা তুলে ধরেছিলেন যে আমরা যা শিখেছি, তা কাজে লাগানো দরকার যাতে আমরা ঈশতান্ত্রিক শিক্ষা থেকে পুরোপুরি উপকার লাভ করতে পারি।—ফিলিপীয় ৪:৯.
“আমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য নতুন ব্যবস্থাগুলো” শিরোনামের এই বক্তৃতা শুনে আমরা কত রোমাঞ্চিতই না হয়েছিলাম! খুব শীঘ্রিই ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়ের শিক্ষা থেকে উপকার লাভ করুন (ইংরেজি) নামের একটা নতুন বই প্রকাশ করা হবে জেনে আমরা আনন্দিত হয়েছিলাম। আমাদের আগ্রহ আরও বেড়ে গিয়েছিল যখন বক্তা এর বিষয়বস্তু সম্বন্ধে সংক্ষেপে তুলে ধরেছিলেন। এই বইয়ের যে বিভাগে বেশ কয়েকটা স্পিচ কাউন্সেল রয়েছে, সেই বিভাগ সম্বন্ধে তিনি বলেছিলেন: “এই নতুন পাঠ্যবইয়ে ভালভাবে পড়া, কথা বলা এবং শিক্ষা দেওয়া সম্বন্ধে যে ৫৩টা বিষয় রয়েছে তা জগতের অন্যান্য বইয়ের মতো করে লেখা হয়নি। এটা শাস্ত্রীয় নীতিগুলোর ওপর ভিত্তি করে তুলে ধরা হয়েছে।” এই বই দেখাবে যে কীভাবে ভাববাদীরা, যীশু ও তাঁর শিষ্যরা উত্তম শিক্ষা দেওয়ার দক্ষতা দেখিয়েছিলেন। হ্যাঁ, এই পাঠ্যবই এবং ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়ের নতুন বিষয়গুলো নিঃসন্দেহে আমাদেরকে ঈশ্বরের বাক্যের আরও ভাল শিক্ষক হতে সাহায্য করবে।
তৃতীয় দিন—সময়ের কথা মনে রেখে শিক্ষক হোন
শেষ দিনে দৈনিক শাস্ত্রপদ আলোচনার পর সবাই সম্মেলনের শেষ সিম্পোজিয়াম “মালাখির ভবিষ্যদ্বাণী যিহোবার দিনের জন্য আমাদের তৈরি করে” অধীর আগ্রহের সঙ্গে শুনেছিলেন। যিহুদিরা বাবিলন থেকে ফিরে আসার প্রায় ১০০ বছর পর মালাখি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তারা আবারও ধর্মভ্রষ্টতা ও দুষ্টতার পথে পা বাড়িয়েছিল এবং যিহোবার ধার্মিক আইনগুলোকে তুচ্ছ করে অন্ধ, খোঁড়া এবং অসুস্থ পশুদের বলি দেওয়ার জন্য নিয়ে এসে যিহোবার নামের অসম্মান এনেছিল। এছাড়া, তারা হয়তো বিদেশি মেয়েদের বিয়ে করার জন্য তাদের যৌবনের স্ত্রীদের ত্যাগ করেছিল।
মালাখির ভবিষ্যদ্বাণীর প্রথম অধ্যায় আমাদেরকে যিহোবার লোকেদের প্রতি তাঁর প্রেম সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেয়। এটা তুলে ধরেছিল যে, ঈশ্বরের প্রতি আমাদের সশ্রদ্ধ ভয় ও সেইসঙ্গে পবিত্র বিষয়গুলোর প্রতি উপলব্ধি থাকা দরকার। যিহোবা চান আমরা যেন তাঁকে সবচেয়ে ভালটা দিই এবং তাঁকে নিঃস্বার্থ প্রেমের সঙ্গে উপসানা করি। আমাদের পবিত্র সেবা কখনও ওপর ওপর করা উচিত নয় এবং আমাদের সবাইকে অবশ্যই ঈশ্বরের কাছে নিকাশ দিতে হবে।
মালাখির দ্বিতীয় অধ্যায়টা আমাদের দিনের জন্য প্রয়োগ করে দ্বিতীয় সিম্পোজিয়াম বক্তা জিজ্ঞেস করেছিলেন: “আমরা কি ব্যক্তিগতভাবে সতর্ক থাকি যেন ‘আমাদের ওষ্ঠাধরে অন্যায় পাওয়া না যায়’?” (মালাখি ২:৬) যারা শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব নিয়ে থাকেন তাদেরকে নিশ্চিত হতে হবে যে, তারা যা বলেন তা যেন ঈশ্বরের বাক্যের ওপর ভিত্তি করে হয়। আমাদের সেইধরনের বিশ্বাসঘাতকতাকে ঘৃণা করতে হবে যেমন অন্যায়ভাবে বিবাহবিচ্ছেদ করা।—মালাখি ২:১৪-১৬.
“যিহোবার দিনে কারা রক্ষা পাবে?” এই বিষয়ে বলতে গিয়ে সিম্পোজিয়ামের শেষ বক্তা আমাদেরকে যিহোবার দিনের জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করেছিলেন। বক্তা বলেছিলেন: “মালাখি ৩ অধ্যায় ১৭ পদের ভবিষ্যদ্বাণী যে যিহোবার দাসদের ওপর বড় আকারে পরিপূর্ণ হচ্ছে, তা জানা তাদের কতই না সান্ত্বনা দেয়! এটা বলে: ‘তাহারা আমারই হইবে, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন; আমার কার্য্য করিবার দিনে তাহারা আমার নিজস্ব হইবে; এবং কোন মনুষ্য যেমন আপন সেবাকারী পুত্ত্রের প্রতি মমতা করে, আমি তাহাদের প্রতি তেমনি মমতা করিব।’”
সম্মেলনের আরেকটা উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল “যিহোবার কর্তৃত্বকে সম্মান করুন” নামক ঐতিহাসিক নাটক, যা কোরহের ছেলেদের বিষয়ে তুলে ধরেছিল। মোশি এবং হারণের প্রতি তাদের বাবার বিদ্রোহী মনোভাব থাকা সত্ত্বেও, তারা যিহোবার এবং তাঁর প্রতিনিধিদের প্রতি নিষ্ঠা বজায় রেখেছিলেন। কোরহ এবং তার সঙ্গে যারা যোগ দিয়েছিল তারা ধ্বংস হয়ে গেলেও কোরহের ছেলেরা রক্ষা পেয়েছিল। এর পরে “ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে নিষ্ঠার সঙ্গে মেনে নিন” নামক বক্তৃতাটা নাটকের বিষয়বস্তু যে আমাদের প্রত্যেকের জন্য কাজে আসে, তা বুঝিয়ে দিয়েছিল। বক্তা ছয়টা ক্ষেত্র সম্বন্ধে সাবধান করে দিয়েছিলেন, যেখানে কোরহ এবং তার সঙ্গে যোগদানকারীরা ব্যর্থ হয়েছিল: যিহোবার কর্তৃত্বকে নিষ্ঠার সঙ্গে সমর্থন না করা; গর্ব, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং হিংসা করে তাদের জন্য বড় পদ পেতে চাওয়া; যিহোবার নিযুক্ত ব্যক্তিদের খুঁত ধরা; অভিযোগ করার মনোভাব গড়ে তোলা; সেবা করার সুযোগ নিয়ে সন্তুষ্ট না থাকা; এবং যিহোবার প্রতি নিষ্ঠা বজায় রাখার চেয়ে বন্ধুত্ব ও পারিবারিক বন্ধনকে আগে রাখা।
জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তৃতার শিরোনাম ছিল, “কারা সমস্ত জাতিকে সত্য শেখাচ্ছেন?” যে সত্য সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছিল, তা কোন সাধারণ সত্য ছিল না কিন্তু সেটা ছিল যিহোবার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সত্য, যে সম্বন্ধে যীশু সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। বক্তা যে সত্য সম্বন্ধে আলোচনা করেছিলেন তা বিশ্বাসের, উপাসনা পদ্ধতির ও ব্যক্তিগত আচরণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের সঙ্গে আজকের যিহোবার সাক্ষিদের এভাবে তুলনা করলে আমাদের দৃঢ়তা যে ‘ঈশ্বর বাস্তবিকই আমাদের মধ্যবর্তী,’ তা সত্যিই শক্তিশালী হয়।—১ করিন্থীয় ১৪:২৫.
সাপ্তাহিক প্রহরীদুর্গ সারাংশর পর, উপস্থিত সমস্ত ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষকরা শেষ বক্তৃতা “জরুরি ভিত্তিতে আমাদের শিক্ষা দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করা” শুনে কাজ করতে পরিচালিত হয়েছিলেন। সংক্ষেপে কার্যক্রমের বিষয়বস্তুর পুনরালোচনা, শিক্ষা দেওয়ার সময় এমনভাবে শাস্ত্র ব্যবহার করা যাতে আমরা যোগ্য শিক্ষক হতে পারি এবং অন্যদেরকে আমরা যে সত্য শিখাই, তার ওপর আমাদের আস্থা রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিল। বক্তা ‘আমাদের উন্নতি সকলের প্রত্যক্ষ’ করার এবং ‘আমাদের বিষয়ে ও আমাদের শিক্ষার বিষয়ে সাবধান’ থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন।—১ তীমথিয় ৪:১৫, ১৬.
“ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষকেরা” জেলা সম্মেলনে কী বিরাট আধ্যাত্মিক ভোজই না আমরা উপভোগ করেছি! আসুন অন্যদেরকে ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে শিখিয়ে আমরা আমাদের সর্বমহান শিক্ষক যিহোবা এবং আমাদের মহান শিক্ষক যীশু খ্রীষ্টকে অনুকরণ করি।
[২৮ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]
বিশেষ চাহিদাগুলোকে মেটানোর জন্য নতুন প্রকাশনাদি
“ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষকেরা” জেলা সম্মেলনের যোগদানকারীরা খুবই উৎসাহের সঙ্গে দুটো প্রকাশনা পেয়েছিলেন, যা পৃথিবীর কিছু অংশে লোকেদেরকে শাস্ত্র থেকে সত্য শেখানোর জন্য খুবই উপকারী। আপনার কি এক অমর আত্মা আছে? (ইংরেজি) নামক ট্র্যাক্টটা সেই সমস্ত দেশের ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার জন্য খুবই কার্যকারী এক হাতিয়ার, যাদের স্থানীয় ভাষায় “প্রাণ” এবং “আত্মা” শব্দ দুটোর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। নতুন ট্র্যাক্টটা স্পষ্টভাবে দেখায় যে, আত্মিক শক্তি এবং আত্মিক প্রাণী এক নয় এবং লোকেরা মারা যাওয়ার পর আত্মিক প্রাণী হয়ে যায় না।
এক পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন—যেভাবে অর্জন করা যায় (ইংরেজি) নামক ব্রোশারটা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের শেষে প্রকাশ করা হয়েছিল। এই ব্রোশারটা সেই সমস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করার উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে, যাদের সৃষ্টিকর্তা ও তাঁর ব্যক্তিত্ব এবং ঈশ্বর দ্বারা অনুপ্রাণিত এক বই সম্বন্ধে কোন ধারণা নেই। আপনি কি আপনার পরিচর্যায় এই নতুন প্রকাশনাগুলো ব্যবহার করতে পেরেছেন?
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
ইতালির মিলানে এবং সারা পৃথিবীতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনগুলোতে শত শত ব্যক্তি বাপ্তিস্ম নেন
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
“যিহোবার কর্তৃত্বকে সম্মান করুন” নাটক দেখে শ্রোতারা প্রেরণা পেয়েছিলেন