এটা কি আপনার জন্য সবচেয়ে ভাল কাজ হতে পারে?
আপনি যদি একজন বাপ্তাইজিত খ্রীষ্টান হন, তাহলে কোন সন্দেহ নেই যে ঈশ্বরের প্রতি প্রেম আপনাকে তাঁর ইচ্ছা পালন করতে প্রেরণা দেয়। এছাড়াও, আপনাকে অবশ্যই পরিচর্যা করতে হবে। কারণ যীশু খ্রীষ্ট তাঁর প্রত্যেক অনুগামীকে শিষ্য তৈরির কাজ করার আদেশ দিয়েছিলেন। (মথি ২৮:১৯, ২০) হ্যাঁ, আপনি হয়তো নিজের ভরণপোষণের জন্য এখন চাকরি করছেন। কিন্তু, যীশুর অনুগামী এবং একজন যিহোবার সাক্ষি হিসেবে আপনার প্রধান পরিচয় হল আপনি একজন খ্রীষ্টান পরিচারক, যিনি রাজ্যের প্রচার কাজকে জীবনে প্রথমে রাখেন।—মথি ২৪:১৪.
আপনার বয়স হয়তো ১৯/২০ বা ২১/২২ বছর। ভবিষ্যতে কী করবেন, তা নিয়ে আপনি হয়তো অনেক কিছু ভেবেছেন। আপনার সামনে যে অসংখ্য সুযোগ খোলা রয়েছে, সেগুলো নিয়ে ভেবে দেখার সময় হয়তো আপনার পছন্দই বেশি প্রাধান্য পাবে।
ডেনমার্কের ইয়োর্ন যে কাজ বেছে নিয়েছিলেন, সে সম্বন্ধে তিনি কী বলেন তা দেখুন। ইয়োর্ন বলেন যে এটা “এক আদর্শ জীবনোপায়, যেখানে আপনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারেন।” গ্রিসের ইভা, যার বয়স ৩১ বছর তিনি বলেন: “আমার সঙ্গী-সাথিদের সঙ্গে আমার জীবনের তুলনা করে আমি সবসময় এই সিদ্ধান্তে আসি যে আমার জীবনই হল সবচেয়ে বেশি অর্থপূর্ণ, কার্যকর এবং রোমাঞ্চকর।” কোন্ ধরনের কাজ এইরকম পরিতৃপ্তি এনে দেয়? আপনি কীভাবে এই কাজ পেতে পারেন?
ঈশ্বর কি পথ দেখান?
কোন্ কাজ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করবেন, তা ঠিক করা বেশ কঠিন। কেউ কেউ আশা করতে পারেন, ঈশ্বর তাকে দেখিয়ে দেবেন যে তার কাছ থেকে তিনি কী চান।
মোশি যখন মিদিয়নে ছিলেন তখন যিহোবা তাকে মিশরে ফিরে যেতে এবং মিশরীয়দের দাসত্ব থেকে ইস্রায়েলীয়দের মুক্ত করে আনার জন্য বলেছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ৩:১-১০) ঈশ্বরের দূত গিদিয়োনকে দেখা দিয়ে বলেছিলেন যে, ইস্রায়েলীয়দেরকে অত্যাচার থেকে মুক্ত করার জন্য ঈশ্বর তাকে নিযুক্ত করেছেন। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৬:১১-১৪) ঈশ্বর যখন দায়ূদকে ইস্রায়েলের পরবর্তী রাজা হিসেবে অভিষিক্ত করার কথা শমূয়েলকে বলেছিলেন, তখন দায়ূদ মেষ চরাচ্ছিলেন। (১ শমূয়েল ১৬:১-১৩) কিন্তু, আজকে আমাদেরকে এভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয় না। বরং আমাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভেবে দেখতে হবে এবং সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, কীভাবে আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া দক্ষতাকে ব্যবহার করব।
আজকে, খ্রীষ্টান যুবক-যুবতীদের জন্য যিহোবা “এক দ্বার” খুলে দিয়েছেন, যা “বৃহৎ ও কার্য্যসাধক।” (১ করিন্থীয় ১৬:৯) কীভাবে? গত দশ বছরে সারা পৃথিবীতে রাজ্যের সুসমাচার প্রচারকদের সংখ্যা ২১,২৫,০০০ থেকে বেড়ে ৬০,০০,০০০ লক্ষের বেশিতে পৌঁছেছে। আধ্যাত্মিক পুষ্টি এবং সারা পৃথিবীতে সুসমাচার প্রচার কাজের জন্য লক্ষ লক্ষ বাইবেল, বই, ব্রোশার, পত্রপত্রিকা এবং ট্র্যাক্ট ছাপাতে কারা সাহায্য করেন? সারা পৃথিবীতে বেথেল পরিবারের সদস্যরাই এই মহান সুযোগ উপভোগ করছেন।
আশীর্বাদে-ভরা এক জীবন
বেথেল মানে “ঈশ্বরের গৃহ” এবং বেথেল হোমগুলোতে খ্রীষ্টান স্বেচ্ছাসেবকরা থাকেন, যারা ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির প্রধান কার্যালয় ও শাখা অফিসগুলোতে কাজ করেন। (আদিপুস্তক ২৮:১৯) আজকের দিনের বেথেল পরিবারগুলোকে ‘প্রজ্ঞা দ্বারা নির্ম্মিত’ সেই ‘গৃহের’ সঙ্গে তুলনা করা যায়, যা যিহোবার প্রতি প্রেমের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।—হিতোপদেশ ২৪:৩.
বেথেলে যে পারিবারিক পরিবেশ রয়েছে সেই সম্বন্ধে কী বলা যায়? এস্টোনিয়ার বেথেল পরিবারের ২৫ বছর বয়স্কা একজন সদস্য বলেন: “যিহোবার বন্ধুদের মাঝে সবসময় থাকতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত। বেথেলের এই বিষয়টাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি মূল্যবান।”—গীতসংহিতা ১৫:১, ২.
সারা পৃথিবীতে প্রায় ১৯,৫০০ জন বেথেলে কাজ করার সুযোগ উপভোগ করছেন। (গীতসংহিতা ১১০:৩) আমেরিকার বেথেলের ৪৬ শতাংশ সদস্যের বয়স ১৯ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। যিশাইয়ের মতো তারাও বলেছেন: “এই আমি, আমাকে পাঠাও।” (যিশাইয় ৬:৮) যিশাইয় ইতিমধ্যেই যিহোবার প্রতি উৎসর্গীকৃত ছিলেন আর সেই সময় তিনি আরও একটা কাজের জন্য স্বেচ্ছায় এগিয়ে গিয়েছিলেন। আর এর জন্য যে তাকে কিছু ত্যাগস্বীকার করতে হয়েছিল, তাতে কোন সন্দেহ নেই। যারা বেথেলে কাজ করেন তারা তাদের ঘর, চারপাশের পরিচিত পরিবেশ সেইসঙ্গে মাবাবা, ভাইবোন এবং বন্ধুদের ছেড়ে চলে আসেন। আর তারা “সুসমাচারের নিমিত্ত” স্বেচ্ছায় এই আত্মত্যাগ করেন।—মার্ক ১০:২৯, ৩০.
কিন্তু, বেথেলে তারা কত আধ্যাত্মিক আশীর্বাদই না পেয়ে থাকেন! রাশিয়ার বেথেলের একজন যুবতী বলেন: “আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি, যা আমাদেরকে নতুন জগতে বেঁচে থাকতে সাহায্য করবে। আমার বিষয়ে আমি বলতে পারি যে আমার আত্মত্যাগের তুলনায় যিহোবার আশীর্বাদ অনেক অনেক বেশি।”—মালাখি ৩:১০.
বেথেল জীবন
বেথেলের জীবন কেমন? বেথেল পরিবারের সবাই বলেন যে, এটা হল আনন্দের এবং তৃপ্তিকর জীবন, এমনকি রোমাঞ্চকরও। ৪৩ বছর বয়স্ক ইয়েনস্ বেথেলের কাজ উপভোগ করেন। কেন? তিনি বলেন: “এটা ভেবে আমার ভাল লাগে যে, একটা জরুরি কাজের জন্য যে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে তাতে আমরা অংশ নিচ্ছি। আমি যিহোবার কাজের পরিধি এবং গুরুত্ব বুঝতে পেরেছি।”
বেথেলে সোমবার থেকে শনিবার পর্যন্ত সকালের উপাসনা দিয়ে দিন শুরু হয়। এতে বাইবেল নিয়ে আলোচনা হয়, যা একজন অভিজ্ঞ প্রাচীন পরিচালনা করেন। সোমবার সন্ধ্যেয় এক ঘন্টা প্রহরীদুর্গ দিয়ে পারিবারিক বাইবেল অধ্যয়ন করা হয় আর মাঝে মাঝে এই অধ্যয়নের পর শাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে একটা বক্তৃতা হয়, যা বিশেষ করে বেথেল পরিবারের জন্য উপযুক্ত।
একজন ব্যক্তি যখন প্রথম বেথেলে কাজ করতে আসেন তখন কী হয়? বেথেল জীবনের সঙ্গে নতুন সদস্যদেরকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য অভিজ্ঞ ভাইয়েরা বেথেল পরিচর্যার বিভিন্ন দিক নিয়ে কিছু বক্তৃতা দেন। প্রথম বছরের বেশ কিছু সপ্তা বেথেল পরিবারের নতুন সদস্য একটা চমৎকার সাপ্তাহিক স্কুলে যোগ দেন, যা তার বাইবেলের জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর উদ্দেশে করা হয়। এছাড়াও, তিনি বাইবেল পড়ার এক বিশেষ কার্যক্রম উপভোগ করেন। বেথেল পরিচর্যার প্রথম বছরের মধ্যে নতুন সদস্যেরা পুরো বাইবেল পড়ে শেষ করেন।
এই প্রশিক্ষণগুলোতে অংশ নেওয়ার ফল কী হয়? হংকং বেথেল পরিবারের সদস্য ৩৩ বছর বয়স্ক জোশুয়া বলেন: “বেথেল যিহোবার প্রতি আমার উপলব্ধিকে সত্যিই আরও গভীর করেছে। আমি অনেক অভিজ্ঞ ভাইবোনদের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারছি, যারা তাদের জীবনের বেশির ভাগ সময়ই যিহোবাকে সেবা করে কাটিয়েছেন। আমি বিশেষ করে এই আধ্যাত্মিক কার্যক্রমগুলো উপভোগ করি যেমন, সকালের উপাসনা ও পারিবারিক প্রহরীদুর্গ অধ্যয়ন। এছাড়া, বেথেলের সুশৃঙ্খল এবং সাদাসিধে জীবনযাপনও আমার ভাল লাগে। এটা আমাকে অহেতুক দুশ্চিন্তা থেকে স্বস্তি দেয়। এছাড়াও, আমি শিখেছি যে বিভিন্ন সমস্যা কীভাবে খ্রীষ্টীয় মান অনুযায়ী মীমাংসা করা যায় আর এটা সবসময় উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে।”
বেথেল পরিবারের সদস্যরা যে কাজ করার জন্য স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছেন, সেই কাজে তারা তাদের বেশির ভাগ সময় এবং শক্তি ব্যয় করেন। অর্থাৎ, বেথেলে তাদেরকে যে কাজ দেওয়া হয়েছে, তার জন্যই তারা তাদের শারীরিক এবং মানসিক শক্তিকে কাজে লাগান। এছাড়াও, আরও অনেক জরুরি কাজ করার দরকার হয়। কেউ কেউ ছাপাখানায় কাজ করেন, কেউবা বই বাঁধাই ও বই তৈরি করেন, যা বিভিন্ন মণ্ডলীতে পাঠানো হয়। আবার কেউবা রান্না ঘরে, খাবার ঘরে অথবা লন্ড্রীতে কাজ করেন। এছাড়াও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার, খামারের, নির্মাণ এবং আরও অন্যান্য কাজ রয়েছে। কেউ কেউ এই বিভাগগুলোতে যে যন্ত্রপাতি রয়েছে তার যত্ন নেওয়ার দায়িত্বে রয়েছেন। আবার কেউবা স্বাস্থ্য বিভাগ বা অফিসে কাজ করেন। বেথেলের সব কাজই কঠিন অথচ আনন্দের আর তা পুরস্কার নিয়ে আসে। বেথেলে কাজ করে অনেক তৃপ্তি পাওয়া যায় কারণ এটা রাজ্যের কাজকে বাড়ায় এবং ঈশ্বরের প্রতি প্রেম আছে বলে করা হয়।
বেথেল পরিবারের সদস্যদেরকে বিভিন্ন মণ্ডলীতে নিযুক্ত করা হয়, যেখানে তারা তাদের কাজের উপকারগুলো সরাসরি উপভোগ করতে পারেন। তারা মণ্ডলীর সভাগুলোতে যান এবং প্রচার করেন। এর ফলে, স্থানীয় মণ্ডলীর ভাইবোনদের সঙ্গে বেথেল পরিবারের সদস্যদের ভালবাসার এক মজবুত বন্ধন গড়ে উঠেছে।—মার্ক ১০:২৯, ৩০.
ব্রিটেন বেথেল পরিবারের সদস্য রীটা বলেন: “মণ্ডলীর জন্য আমি খুবই কৃতজ্ঞ! আমি যখন সভাগুলোতে বা প্রচারে যাই তখন প্রিয় ভাইবোনদের, ছেলেমেয়েদের এবং বয়স্কদের দেখে আমার বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়! যা কিছুই হোক না কেন, তারা নিয়মিত প্রচারে ও সভাগুলোতে আসেন। এটা আমাকে বেথেলের কাজে আরও উদ্যোগী হতে সাহায্য করে।”
বেথেল জীবন মানে শুধু কাজ, সভা, প্রচার এবং অধ্যয়নই নয়। কখনও কখনও বেথেল পরিবারের সদস্যেরা মনোরঞ্জনের পিছনে কিছুটা সময় ব্যয় করে থাকেন। মাঝে মাঝে বিনোদনমূলক ও আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে উপকারী “ফ্যামিলি নাইট” হয়ে থাকে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অনেক বেথেল কর্মীদের প্রতিভা দেখার সুযোগ হয় এবং বেথেলে তাদের জীবনধারা থেকেও অনেক উৎসাহজনক বিষয় শেখা যায়। এছাড়াও, তারা একে অপরকে তাদের ঘরে ডাকেন আর এতে তারা আনন্দ পান ও একে অন্যকে গড়ে তোলেন। বিনোদনেরও ব্যবস্থা থাকে সেইসঙ্গে ব্যক্তিগত পড়াশোনা এবং গবেষণার জন্য লাইব্রেরিও থাকে। এছাড়াও দুপুরের খাবারের সময় তারা একে অন্যের সঙ্গে প্রাণখুলে হেসে কথাবার্তা বলেন।
এস্টোনিয়ার বেথেল পরিবারের সদস্য টম বলেন: “বেথেলের কাছেই সমুদ্র এবং সুন্দর জঙ্গল রয়েছে, যেখানে আমি এবং আমার স্ত্রী মাঝে মাঝে অল্প সময়ের জন্য হাঁটতে যাই। এছাড়াও, আমি মাঝে মাঝে মণ্ডলীর এবং বেথেলের বন্ধুদের সঙ্গে গল্ফ, হকি এবং টেনিস খেলি। আর আবহাওয়া যখন ভাল থাকে তখন আমরা সাইকেলে চড়ে বেড়াতে যাই।”
যোগ্য হওয়ার জন্য আপনি কী করতে পারেন?
বেথেল মূলত সেই জায়গা, যেখানে পরিপক্ব খ্রীষ্টানরা যিহোবাকে পবিত্র সেবা দিয়ে থাকেন এবং সারা পৃথিবীর বিশ্বাসী ভাইবোনদের জন্য কাজ করেন। যারা বেথেল পরিবারের সদস্য হন তাদেরকে অবশ্যই কিছু যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। বেথেল পরিচর্যার জন্য যোগ্য হতে আপনি কী করতে পারেন?
যারা বেথেলে পরিচর্যা করতে চান তাদের তীমথিয়ের মতো মণ্ডলীতে সুনাম থাকতে হবে, যিনি প্রেরিত পৌলের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। (১ তীমথিয় ১:১) “লুস্ত্রা ও ইকনীয় নিবাসী ভ্রাতৃগণ” তীমথিয়ের “পক্ষে সাক্ষ্য দিত।” (প্রেরিত ১৬:২) যদিও তীমথিয় যুবক ছিলেন, তবুও তিনি শাস্ত্র এবং সত্য সম্বন্ধে খুব ভাল করে জানতেন। (২ তীমথিয় ৩:১৪, ১৫) একইভাবে যারা বেথেলে সেবা করতে চান, তাদের কাছেও আশা করা হয় যে তাদের বাইবেলের জ্ঞান থাকবে।
বেথেল পরিবারের সদস্যদের আত্মত্যাগের মনোভাব থাকতে হবে। তীমথিয়ের এইরকম আত্মত্যাগের মনোভাব এবং রাজ্যের কাজকে প্রথমে রাখার ইচ্ছা ছিল বলেই পৌল তার সম্বন্ধে বলতে পেরেছিলেন: “আমার কাছে এমন সমপ্রাণ কেহই নাই যে, প্রকৃতরূপে তোমাদের বিষয় চিন্তা করিবে। কেননা উহারা সকলে যীশু খ্রীষ্টের বিষয় নয়, কিন্তু আপন আপন বিষয় চেষ্টা করে। কিন্তু তোমরা ইহাঁর পক্ষে এই প্রমাণ জ্ঞাত আছ যে, পিতার সহিত সন্তান যেমন, আমার সহিত ইনি তেমনি সুসমাচারের নিমিত্ত দাস্যকর্ম্ম করিয়াছেন।”—ফিলিপীয় ২:২০-২২.
বেথেল পরিচর্যার জন্য আধ্যাত্মিকমনা নারী ও পুরুষদের দরকার। বেথেল পরিবারের সদস্যরা যাতে বাইবেল অধ্যয়ন করে, নিয়মিত সভায় ও প্রচারে গিয়ে এবং অভিজ্ঞ ভাইবোনদের সঙ্গে মেলামেশা করে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে পরিপক্ব হতে পারেন, তার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা করা হয়। যারা বেথেলে কাজ করেন তাদেরকে এভাবে পৌলের এই পরামর্শ মেনে চলতে সাহায্য করা হয়: “[খ্রীষ্ট যীশুতে] চল; তাঁহাতেই বদ্ধমূল ও সংগ্রথিত হইয়া প্রাপ্ত শিক্ষানুসারে বিশ্বাসে দৃঢ়ীভূত হও, এবং ধন্যবাদ সহকারে উপচিয়া পড়।”—কলসীয় ২:৬, ৭.
যারা বেথেলে কাজ করতে চান, তাদেরকে বেথেলের কাজের জন্য শারীরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী এবং ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে। এখানে যে সমস্ত যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে তা যদি আপনার থেকে থাকে, আপনার বয়স যদি ১৯ বছর বা তারও বেশি হয় এবং আপনি যদি কমপক্ষে এক বছর হল বাপ্তিস্ম নিয়ে থাকেন, তাহলে আমরা আপনাকে বেথেলে সেবা করার বিষয়টা ভেবে দেখার জন্য উৎসাহিত করছি।
আমাদের সকলের অবদান আছে
একজন খ্রীষ্টান হিসেবে আমরা সবাই রাজ্যের কাজকে আমাদের জীবনে প্রথমে রাখতে চাই এবং মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করতে চাই। (মথি ৬:৩৩; কলসীয় ৩:২৩) এছাড়াও, যারা বেথেলে কাজ করছেন তাদেরকেও আমরা যিহোবাকে পবিত্র সেবা দিয়ে যেতে উৎসাহিত করছি। আর বিশেষ করে, বেথেলে সেবা করার যোগ্য যুবক ভাইদেরকে এই মহান সুযোগ গ্রহণ করার জন্য উৎসাহ দিচ্ছি।
বেথেল পরিচর্যা হচ্ছে এমন একটা কাজ, যা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে তৃপ্তি দেয় এবং যা আপনার জীবনের জন্য সবচেয়ে উত্তম কাজ। নিকের কাছে এটা এমনই ছিল, যিনি ২০ বছর বয়সে বেথেলে সেবা করতে শুরু করেছিলেন। দশ বছর ধরে বেথেলে কাজ করার পর তিনি বলেন: “আমি প্রায়ই যিহোবাকে তাঁর অযাচিত করুণার জন্য ধন্যবাদ জানাতে প্রার্থনা করি। এর চেয়ে বেশি আমি আর কী-ই বা চাইতে পারি? এখানে আমাদের চারপাশে বিশ্বস্ত খ্রীষ্টান ভাইবোনেরা আছেন, যারা যিহোবাকে সেবা করার জন্য প্রাণপণ করছেন।”
[২২ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
প্রাচীনরা এবং বাবামায়েরা কী করতে পারেন?
বিশেষ করে প্রাচীন এবং ভ্রমণ অধ্যক্ষরা যুবক-যুবতীদেরকে বেথেলে কাজ করার জন্য আবেদন করতে উৎসাহ দেবেন। বেথেল পরিবারের যুবক-যুবতীদের ওপর সম্প্রতি করা একটা সমীক্ষা দেখায় যে, প্রায় ৩৪ শতাংশ যুবক-যুবতীদের বেথেলের কাজকে লক্ষ্য হিসেবে নেওয়ার জন্য মূলত খ্রীষ্টান অধ্যক্ষরা উৎসাহিত করেছেন। এর জন্য স্থানীয় মণ্ডলীগুলো হয়তো তাদের কাজের অভাব বোধ করতে পারে। কিন্তু এটা মনে রাখা ভাল যে, লুস্ত্রা ও ইকনীয়ের যুবক-যুবতীদের ওপর তীমথিয়ের ভাল প্রভাব থাকা সত্ত্বেও, প্রাচীনরা তাকে পৌলের সঙ্গে সেবা করতে বাধা দেননি। তারা মনে করেননি যে তীমথিয় যদি পৌলের সঙ্গে চলে যান, তাহলে তাদের মণ্ডলীর বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।—১ তীমথিয় ৪:১৪.
এই বিষয়ে বিশেষ করে খ্রীষ্টীয় বাবামায়েরা তাদের ছেলেমেয়েদের ওপর ভাল ছাপ ফেলার চেষ্টা করবেন। উপরে বলা সমীক্ষা দেখায় যে, প্রায় ৪০ শতাংশ যুবক-যুবতী মূলত তাদের বাবামায়ের উৎসাহে বেথেলের কাজে ঢুকেছে। একজন বোন, যিনি কয়েক বছর ধরে বেথেলে কাজ করছেন তিনি বলেন: “যিহোবার প্রতি আমার বাবামায়ের সেবাই আমাকে বেথেলে আসার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রেরণা দিয়েছে। তাদের পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যার উদাহরণ দেখেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, এটাই হবে আমার জীবনের জন্য সবচেয়ে ভাল এবং তৃপ্তিজনক কাজ।”
[২৪ পৃষ্ঠার বাক্স]
তারা বেথেলের কাজকে উপলব্ধি করেন
“বেথেলে কাজ করতে পেরে আমি অনেক খুশি। এটা জানা আমার জন্য খুবই আনন্দের যে আমি সারাদিন যিহোবার জন্য কাজ করছি, কালকেও করব এবং এভাবে চিরজীবন তা করে যাব। এই কাজ আমাকে এক উত্তম বিবেক দেয় এবং আমার মনকে সবসময় ভাল চিন্তা দিয়ে ভরিয়ে রাখে।”
“বেথেল হল এমন একটা জায়গা, যেখানে আপনি অন্য কোন দিকে মন না দিয়ে আপনার সবটুকু সময় এবং শক্তি পুরোপুরি যিহোবার সেবায় কাজে লাগাতে পারেন। এটা মনে শান্তি এনে দেয়। এছাড়া, যিহোবার সংগঠনকেও আপনি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পারেন। আপনার মনে হবে, আপনি সংগঠনের খুব কাছাকাছি থেকে কাজ করছেন আর এটা খুবই রোমাঞ্চকর।”
“বেথেলে কাজ করাই হচ্ছে আমার জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া। এখানে শিক্ষার কোন শেষ নেই। আর এখানকার শিক্ষা আমার ব্যক্তিগত লাভের জন্য নয় বরং যিহোবার জন্য। এখানে আমার কাজ কখনও বৃথা যাবে না।”
“বেথেলে আমার প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে আমি পরিতৃপ্তি ও শান্তি পাই কারণ এটা আমি যিহোবা এবং ভাইবোনদের জন্য কাজে লাগাচ্ছি।”
“আমি আগে যে কাজ করতাম সেখানে আমি প্রকৃত পরিতৃপ্তি ও সুখ পাইনি। আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল যে আমি আমার ভাইবোনদের সঙ্গে এবং তাদের জন্য কাজ করব। তাই আমি বেথেলে এসেছি। এটা জেনে আমি তৃপ্তি পাই যে, আমার সমস্ত পরিশ্রম অন্যদের আধ্যাত্মিকভাবে উপকার করবে এবং যিহোবার জন্য প্রশংসা নিয়ে আসবে।”