যিহোবার পথে চলুন
“ধন্য [“সুখী,” বাংলা জুবিলী বাইবেল] সেই জন, যে কেহ সদাপ্রভুকে ভয় করে, যে তাঁহার সকল পথে চলে।”—গীত. ১২৮:১.
১, ২. কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, সুখ লাভ করা সম্ভব?
সকলেই সুখ চায়। কিন্তু, নিঃসন্দেহে আপনি এই বিষয়ে একমত হবেন যে, সুখ চাওয়া ও এমনকি তা অনুধাবন করা আর সুখ উপভোগ করা এক বিষয় নয়।
২ তবে, সুখ লাভ করা সম্ভব। “সুখী সেই জন, যে কেহ সদাপ্রভুকে ভয় করে, যে তাঁহার সকল পথে চলে,” গীতসংহিতা ১২৮:১ পদ বলে। আমরা সুখী হতে পারি, যদি আমরা ঈশ্বরের উপাসনা করি এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করার দ্বারা তাঁর পথে চলি। আমাদের আচরণের ও আমরা যে-গুণাবলি প্রদর্শন করি, তার ওপর এটা কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারে?
নির্ভরযোগ্য হোন
৩. কীভাবে নির্ভরযোগ্যতা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের উৎসর্গীকরণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?
৩ যারা যিহোবাকে ভয় করে, তারা নির্ভরযোগ্য যেমনটা তিনিও নির্ভরযোগ্য। যিহোবা প্রাচীন ইস্রায়েলের কাছে করা সমস্ত প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করেছেন। (১ রাজা. ৮:৫৬) ঈশ্বরের কাছে আমাদের উৎসর্গীকরণ হল আমরা করতে পারি এমন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিজ্ঞা আর সবসময় প্রার্থনা করা আমাদের সেই প্রতিজ্ঞা রাখতে সাহায্য করবে। আমরাও গীতরচক দায়ূদের মতো এই প্রার্থনা করতে পারি: “হে ঈশ্বর, তুমিই আমার মানত সকল শুনিয়াছ, . . . আমি চিরকাল তোমার নামের প্রশংসা গাহিব, দিন দিন আপন মানত পূর্ণ করিব।” (গীত. ৬১:৫, ৮; উপ. ৫:৪-৬) ঈশ্বরের বন্ধু হতে হলে আমাদের নির্ভরযোগ্য হতে হবে।—গীত. ১৫:১, ৪.
৪. যিপ্তহ যিহোবার কাছে যে-মানত করেছিলেন, তিনি ও তার মেয়ে কীভাবে সেই অনুযায়ী কাজ করেছিলেন?
৪ ইস্রায়েলের বিচারকর্তাদের সময়ে যিপ্তহ মানত করেছিলেন যে, যিহোবা যদি অম্মোনীয়দের ওপর তাকে বিজয়ী করেন, তাহলে তিনি যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর যে-ই তার সঙ্গে প্রথমে সাক্ষাৎ করতে আসবে, তাকে “হোমবলিরূপে উৎসর্গ” করবেন। আর তিনি ছিলেন যিপ্তহের মেয়ে—তার একমাত্র সন্তান। যিহোবার ওপর বিশ্বাস রেখে যিপ্তহ ও তার অবিবাহিত মেয়ে উভয়েই সেই মানত পরিপূর্ণ করেছিল। যদিও বিয়ে এবং সন্তান জন্মদানকে ইস্রায়েলে অনেক উচ্চমূল্য দেওয়া হতো, তবুও যিপ্তহের মেয়ে স্বেচ্ছায় অবিবাহিত ছিলেন এবং যিহোবার ধর্মধামে পবিত্র সেবায় রত হওয়ার বিশেষ সুযোগ উপভোগ করেছিলেন।—বিচার. ১১:২৮-৪০.
৫. কীভাবে হান্না নির্ভরযোগ্য ছিলেন?
৫ ঈশ্বরভয়শীল স্ত্রীলোক হান্নাও নির্ভরযোগ্য ছিলেন। তিনি তার লেবীয় স্বামী ইল্কানা ও তার আরেক স্ত্রী পনিন্নার সঙ্গে ইফ্রয়িমের পার্বত্য এলাকায় বাস করতেন। পনিন্না কয়েক জন সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন আর তাই বন্ধ্যা হান্নাকে টিট্কারি দিতেন, বিশেষভাবে সেই সময়ে যখন তাদের পরিবার আবাসে যেত। এইরকম একটা সময়ে, হান্না মানত করেছিলেন যে তিনি যদি একটা ছেলের জন্ম দেন, তাহলে তিনি তাকে যিহোবার উদ্দেশে দান করবেন। শীঘ্রই তিনি গর্ভবতী হন এবং একটা ছেলের জন্ম দেন, যার নাম রাখা হয় শমূয়েল। শমূয়েল স্তন্যপান ত্যাগ করার পর, হান্না তাকে শীলোতে ঈশ্বরের কাছে নিয়ে আসেন এবং শমূয়েলকে “চিরদিনের জন্য” যিহোবাকে প্রদান করেন। (১ শমূ. ১:১১) এভাবে তিনি তার মানত পরিপূর্ণ করেন, এমনকি যদিও তিনি জানতেন না যে, পরবর্তী সময়ে তার আরও সন্তান হবে।—১ শমূ. ২:২০, ২১.
৬. কীভাবে তুখিকের নির্ভরযোগ্যতা প্রদর্শিত হয়েছিল?
৬ প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টান তুখিক একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি ও “বিশ্বস্ত পরিচারক” ছিলেন। (কল. ৪:৭) তুখিক প্রেরিত পৌলের সঙ্গে গ্রিস থেকে মাকিদনিয়ায়, এশিয়া মাইনরে এবং সম্ভবত যিরূশালেমে যাত্রা করেছিলেন। (প্রেরিত ২০:২-৪) তিনিই হয়তো ‘সেই ভ্রাতা’ ছিলেন, যিনি যিহূদার অভাবী সহবিশ্বাসীদের জন্য দানের বিষয়টা দেখাশোনা করতে তীতকে সাহায্য করেছিলেন। (২ করি. ৮:১৮, ১৯; ১২:১৮) পৌল যখন প্রথম রোমে বন্দি হয়েছিলেন, তখন ইফিষ ও কলসীর সহবিশ্বাসীদের কাছে চিঠি বহন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার কাছে নির্ভরযোগ্য প্রতিনিধি তুখিক ছিলেন। (ইফি. ৬:২১, ২২; কল. ৪:৮, ৯) রোমে তার দ্বিতীয় বন্দিত্বের সময়ে পৌল তুখিককে ইফিষে পাঠিয়েছিলেন। (২ তীম. ৪:১২) আমরা যদি নির্ভরযোগ্য হই, তাহলে আমরাও যিহোবার সেবায় বিভিন্ন আশীর্বাদ উপভোগ করব।
৭, ৮. কেন আমরা বলতে পারি যে, দায়ূদ ও যোনাথন প্রকৃত বন্ধু ছিল?
৭ ঈশ্বর চান যেন আমরা নির্ভরযোগ্য বন্ধু হই। (হিতো. ১৭:১৭) রাজা শৌলের ছেলে যোনাথন দায়ূদের বন্ধু হয়েছিলেন। যোনাথন যখন শুনেছিলেন যে, দায়ূদ গলীয়াৎকে হত্যা করেছেন, তখন “যোনাথনের প্রাণ দায়ূদের প্রাণে সংসক্ত হইল, এবং যোনাথন আপন প্রাণের মত তাঁহাকে ভালবাসিতে লাগিলেন।” (১ শমূ. ১৮:১, ৩) যোনাথন এমনকি সেই সময় দায়ূদকে সাবধান করে দিয়েছিলেন, যখন শৌল দায়ূদকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। দায়ূদ পালিয়ে যাওয়ার পর, যোনাথন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একটা চুক্তি করেছিলেন। শৌলের কাছে দায়ূদ সম্বন্ধে বলা যোনাথনের জীবনকে প্রায় ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছিল কিন্তু তা সত্ত্বেও, দুই বন্ধু আবারও সাক্ষাৎ করেছিল এবং তাদের বন্ধুত্বের বন্ধনকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল। (১ শমূ. ২০:২৪-৪১) তাদের শেষ সাক্ষাতের সময় যোনাথন দায়ূদের হস্ত “ঈশ্বরেতে . . . সবল করিলেন।”—১ শমূ. ২৩:১৬-১৮.
৮ পলেষ্টীয়দের সঙ্গে যুদ্ধে যোনাথন মারা গিয়েছিলেন। (১ শমূ. ৩১:৬) একটা বিলাপ গীতে দায়ূদ গেয়েছিলেন: “হা, ভ্রাতা যোনাথন! তোমার জন্য আমি ব্যাকুল। তুমি আমার কাছে অতিশয় মনোহর ছিলে; তোমার ভালবাসা আমার পক্ষে চমৎকার ছিল, রমণীগণের ভালবাসা অপেক্ষাও অধিক ছিল!” (২ শমূ. ১:২৬) দায়ূদ ও যোনাথন প্রকৃত বন্ধু ছিল।
সবসময় “নম্রমনা” হোন
৯. কীভাবে বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৯ অধ্যায়ে নম্রতার গুরুত্ব সম্বন্ধে দেখানো হয়েছে?
৯ ঈশ্বরের বন্ধু হতে হলে, আমাদের অবশ্যই “নম্রমনা” হতে হবে। (১ পিতর ৩:৮; গীত. ১৩৮:৬) বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৯ অধ্যায়ে নম্রতার গুরুত্ব সম্বন্ধে দেখানো হয়েছে। গিদিয়োনের ছেলে যোথম বলেছিলেন: “একদা বৃক্ষগণ আপনাদের উপরে অভিষেক করণার্থে রাজার অন্বেষণে গমন করিল।” সেখানে জিতবৃক্ষ, ডুমুরবৃক্ষ এবং দ্রাক্ষালতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো এমন যোগ্য ব্যক্তিদের চিত্রিত করে, যারা তাদের সহইস্রায়েলীয়দের ওপর শাসন করার চেষ্টা করেনি। কিন্তু, কন্টকবৃক্ষ—একমাত্র জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার্য—অন্যদের ওপর কর্তৃত্ব করতে চায় এমন খুনি ও গর্বিত অবীমেলকের রাজপদকে চিত্রিত করে। যদিও তিনি ‘ইস্রায়েলের উপরে তিন বৎসর কর্ত্তৃত্ব করিয়াছিলেন’ কিন্তু তার অকালমৃত্যু হয়েছিল। (বিচার. ৯:৮-১৫, ২২, ৫০-৫৪) “নম্রমনা” হওয়া কতই না উত্তম!
১০. “ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান” করতে হেরোদের ব্যর্থতা থেকে আপনি কী শিখেছেন?
১০ সাধারণ কাল প্রথম শতাব্দীতে, যিহূদিয়ার গর্বিত রাজা হেরোদ আগ্রিপ্প এবং সোর ও সীদোনের অধিবাসীদের মধ্যে শত্রুতা দেখা দিয়েছিল, যারা রাজার সঙ্গে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা করেছিল। একবার হেরোদ যখন একটা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তখন তারা চিৎকার করে বলেছিল: “এ দেবতার রব, মানুষের নয়।” হেরোদ এই ধরনের অতিপ্রশংসাকে প্রত্যাখ্যান করেননি আর যিহোবার দূত তাকে আঘাত করেছিলেন ও এর ফলে তার শোচনীয় মৃত্যু ঘটেছিল, “কেননা তিনি ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করিলেন না।” (প্রেরিত ১২:২০-২৩) কী হবে যদি আমরা বক্তা অথবা বাইবেলের সত্যের শিক্ষক হিসেবে কিছুটা দক্ষ হই? তাহলে, ঈশ্বর আমাদের যা করার সুযোগ দিয়েছেন, তার জন্য আসুন আমরা ঈশ্বরকে কৃতিত্ব দিই।—১ করি. ৪:৬, ৭; যাকোব ৪:৬.
সাহসী ও বলবান হোন
১১, ১২. কীভাবে হনোকের উদাহরণ দেখায় যে, যিহোবা তাঁর দাসদের সাহস ও বল প্রদান করেন?
১১ আমরা যদি নম্রভাবে যিহোবার পথে চলি, তাহলে তিনি আমাদের সাহস ও বল দেবেন। (দ্বিতী. ৩১:৬-৮, ২৩) আদম থেকে শুরু করে বংশানুক্রমিকভাবে সপ্তম পুরুষ হনোক, তার সমসাময়িক দুষ্ট ব্যক্তিদের বিপরীতে এক ন্যায়নিষ্ঠ পথ অনুধাবন করার মাধ্যমে সাহসী হয়ে ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করেছিলেন। (আদি. ৫:২১-২৪) তাদের ভক্তিহীন কথা ও কাজের জন্য তাদের কাছে এক জোরালো বার্তা প্রদান করতে যিহোবা হনোককে বলবান করেছিলেন। (পড়ুন, যিহূদা ১৪, ১৫.) আপনার কি সেই সাহস রয়েছে, যা ঈশ্বরের বিচারের বার্তা ঘোষণা করার জন্য প্রয়োজন?
১২ নোহের দিনে বিশ্বব্যাপী জলপ্লাবনে ভক্তিহীন লোকেদের ওপর যিহোবা বিচার নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু, হনোকের ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের কাছে উৎসাহজনক কারণ আমাদের দিনে ভক্তিহীন লোকেরা ঈশ্বরের পবিত্র বাহিনী দ্বারা শীঘ্রই ধ্বংস হবে। (প্রকা. ১৬:১৪-১৬; ১৯:১১-১৬) আমাদের প্রার্থনার উত্তরে যিহোবা তাঁর বার্তা, তা সেটা তাঁর বিচারের সঙ্গে অথবা রাজ্য শাসনের অধীনে আশীর্বাদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যা-ই হোক না কেন, সেটা ঘোষণা করার জন্য আমাদের সাহস প্রদান করেন।
১৩. কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, ঈশ্বর আমাদের সেই সাহস ও বল জোগাতে পারেন, যা দুর্দশামূলক সমস্যাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের প্রয়োজন?
১৩ দুর্দশামূলক সমস্যাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের ঈশ্বরদত্ত সাহস ও বলের প্রয়োজন। এষৌ যখন স্ত্রী হিসেবে দুজন হিত্তীয় স্ত্রীলোককে গ্রহণ করেছিলেন, তখন “ইহারা [তাহার বাবামা] ইস্হাকের ও রিবিকার মনের দুঃখদায়িকা হইল।” রিবিকা এমনকি দুঃখ করে বলেছিলেন: “এই হিত্তীয়দের কন্যাদের বিষয় আমার প্রাণে ঘৃণা হইতেছে; যদি [আমাদের পুত্র] যাকোবও ইহাদের মত কোন হিত্তীয় কন্যাকে, এতদ্দেশীয় কন্যাদের মধ্যে কোন কন্যাকে বিবাহ করে, তবে প্রাণধারণে আমার কি লাভ?” (আদি. ২৬:৩৪, ৩৫; ২৭:৪৬) ইস্হাক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং যাকোবকে যিহোবার উপাসকদের মধ্যে থেকে একজন স্ত্রী খোঁজার জন্য অন্যত্র পাঠিয়েছিলেন। যদিও এষৌ যা করেছিলেন, তা ইস্হাক ও রিবিকা পরিবর্তন করতে পারতেন না কিন্তু ঈশ্বর তাদেরকে তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকার জন্য প্রজ্ঞা, সাহস ও বল প্রদান করেছিলেন। আমরা যদি প্রয়োজনীয় সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করি, তাহলে যিহোবা আমাদের জন্যও একই বিষয় প্রদান করবেন।—গীত. ১১৮:৫.
১৪. কীভাবে এক ছোট্ট ইস্রায়েলীয় মেয়ে সাহস দেখিয়েছিল?
১৪ এই ঘটনার কয়েক শতাব্দী পর, লুঠকারী দলের দ্বারা বন্দি করে নিয়ে যাওয়া এক ছোট্ট ইস্রায়েলীয় মেয়ে, অরামের সেনাপতি নামানের ঘরের একজন দাসী হয়, যে-ব্যক্তি কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ছিলেন। ভাববাদী ইলীশায়ের মাধ্যমে ঈশ্বর যে-অলৌকিক কাজগুলো করেছিলেন, সেগুলো সম্বন্ধে শোনার পর সেই মেয়েটি নামানের স্ত্রীকে সাহসের সঙ্গে বলেছিল: ‘আহা! আমার প্রভু যদি ইস্রায়েলে যাইতেন, তাহা হইলে যিহোবার ভাববাদী তাঁহাকে কুষ্ঠ হইতে সুস্থ করিতেন।’ নামান ইস্রায়েলে গিয়েছিলেন এবং অলৌকিকভাবে সুস্থ হয়েছিলেন। (২ রাজা. ৫:১-৩) এই মেয়েটি সেইসমস্ত অল্পবয়সিদের জন্য কতই না উত্তম এক উদাহরণ, যারা শিক্ষক, সহছাত্র-ছাত্রী এবং অন্যদের কাছে সাক্ষ্য দিতে সাহস লাভ করার জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করে!
১৫. আহাবের গৃহাধ্যক্ষ ওবদিয় কোন সাহসী কাজ করেছিলেন?
১৫ ঈশ্বরদত্ত সাহস আমাদের তাড়না সহ্য করতে সাহায্য করে। রাজা আহাবের গৃহাধ্যক্ষ এবং ভাববাদী এলিয়ের সমসাময়িক ব্যক্তি ওবদিয়ের কথা বিবেচনা করুন। রানি ঈষেবল যখন ঈশ্বরের ভাববাদীদের বধ করার আদেশ দিয়েছিলেন, তখন ওবদিয় “পঞ্চাশ পঞ্চাশ জন করিয়া” তাদের ১০০ জনকে “গহ্বরে” লুকিয়ে রেখেছিলেন। (১ রাজা. ১৮:১৩; ১৯:১৮) আপনিও কি সাহসের সঙ্গে তাড়িত সহখ্রিস্টানদের সাহায্য করবেন, যেমনটা ওবদিয় যিহোবার ভাববাদীদের করেছিলেন?
১৬, ১৭. আরিষ্টার্খ ও গায় তাড়নার প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?
১৬ আমরা যদি তাড়িত হই, তাহলে আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, যিহোবা আমাদের সঙ্গে থাকবেন। (রোমীয় ৮:৩৫-৩৯) ইফিষের উন্মুক্ত রঙ্গভূমিতে পৌলের সহকর্মী আরিষ্টার্খ ও গায় এমন জনতার মুখে পড়েছিল, যাদের সংখ্যা ছিল সম্ভবত হাজার হাজার। স্বর্ণকার দীমীত্রিয় এক দাঙ্গাকে উসকে দিয়েছিলেন। তিনি এবং সহস্বর্ণকাররা দীয়ানা দেবীর রৌপ্যমন্দির নির্মাণ করতেন আর পৌলের প্রচার কাজের কারণে সেই নগরের অনেকে প্রতিমাপূজা ছেড়ে দিয়েছিল বলে তাদের লাভজনক ব্যাবসা ঝুঁকির মুখে পড়েছিল। জনতা আরিষ্টার্খ ও গায়কে টেনেহিঁচড়ে রঙ্গভূমিতে নিয়ে গিয়েছিল এবং চিৎকার করে বলে চলেছিল: “ইফিষীয়দের দীয়ানাই মহাদেবী।” আরিষ্টার্খ ও গায় সম্ভবত মারা যাবে বলেই মনে করেছিল কিন্তু নগরের সম্পাদক জনতাকে ক্ষান্ত করেছিলেন।—প্রেরিত ১৯:২৩-৪১.
১৭ আপনার যদি এইরকম অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে, তাহলে আপনি কি কম প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক জীবন লাভের চেষ্টা করবেন? এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায় না যে, আরিষ্টার্খ ও গায় সাহস হারিয়ে ফেলেছিল। থিষলনীকীর হওয়ায় আরিষ্টার্খ জানতেন যে, সুসমাচার ঘোষণা করার ফলে তাড়না আসতে পারে। এর কিছুসময় আগে পৌল সেখানে প্রচার করার সময় এক দাঙ্গা বেঁধেছিল। (প্রেরিত ১৭:৫; ২০:৪) আরিষ্টার্খ ও গায় যিহোবার পথে চলেছিল বলে তাড়না সহ্য করার জন্য তাদের ঈশ্বরদত্ত বল ও সাহস ছিল।
অন্যদের বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রাখা
১৮. কীভাবে প্রিষ্কা ও আক্বিলা অন্যদের বিষয়গুলোর প্রতি ‘লক্ষ্য রাখিয়াছিল’?
১৮ আমরা এখন তাড়িত হই বা না হই, সহখ্রিস্টানদের প্রতি আমাদের আগ্রহী হওয়া উচিত। প্রিষ্কা ও আক্বিলা অন্যদের বিষয়গুলোর প্রতিও ‘লক্ষ্য রাখিয়াছিল।’ (পড়ুন, ফিলিপীয় ২:৪.) সেই উদাহরণযোগ্য বিবাহিত দম্পতি সম্ভবত ইফিষে পৌলের থাকার ব্যবস্থা করেছিল, যেখানে স্বর্ণকার দীমীত্রিয় পূর্বে উল্লেখিত দাঙ্গাকে উসকে দিয়েছিলেন। সেই পরিস্থিতি হয়তো আক্বিলা ও প্রিষ্কাকে পৌলের জন্য ‘তাহাদের গ্রীবা পাতিয়া’ দিতে বা জীবনের ঝুঁকি নিতে পরিচালিত করেছিল। (রোমীয় ১৬:৩, ৪; ২ করি. ১:৮) আজকে, আমাদের তাড়িত ভাইদের প্রতি আগ্রহ আমাদেরকে “সর্পের ন্যায় সতর্ক” করে তোলে। (মথি ১০:১৬-১৮) আমরা সতর্কতার সঙ্গে আমাদের কাজ চালিয়ে যাই এবং তাড়নাকারীদের কাছে তাদের নাম ও অন্যান্য তথ্য প্রকাশ করে দিয়ে তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করাকে প্রত্যাখ্যান করি।
১৯. দর্কা অন্যদের জন্য কোন সৎক্রিয়া করেছিলেন?
১৯ বিভিন্ন উপায়ে আমরা অন্যদের বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রাখতে পারি। কিছু খ্রিস্টানের হয়তো কোনো বিষয়ের অভাব রয়েছে আর আমরা হয়তো সেই অভাব পূরণ করতে সমর্থ। (ইফি. ৪:২৮; যাকোব ২:১৪-১৭) প্রথম শতাব্দীতে যাফো মণ্ডলীতে দর্কা নামে এক উদার স্ত্রীলোক ছিলেন। (পড়ুন, প্রেরিত ৯:৩৬-৪২.) দর্কা যে-“নানা সৎক্রিয়া ও দানকার্য্যে ব্যাপৃতা ছিলেন,” তার মধ্যে স্পষ্টতই অভাবী বিধবাদের জন্য কাপড় প্রস্তুত করাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। সা.কা. ৩৬ সালে তার মৃত্যুতে বিধবারা অনেক দুঃখিত হয়েছিল। দর্কাকে পুনরুত্থিত করার জন্য ঈশ্বর প্রেরিত পিতরকে ব্যবহার করেছিলেন আর খুব সম্ভবত তিনি আনন্দের সঙ্গে সুসমাচার প্রচার করে ও অন্যদের জন্য সৎক্রিয়া করে পৃথিবীতে তার বাকি জীবন কাটিয়েছিলেন। আজকে আমাদের মাঝে এইরকম নিঃস্বার্থ খ্রিস্টান স্ত্রীলোকেরা আছে বলে আমরা কতই না আনন্দিত!
২০, ২১. (ক) কীভাবে উৎসাহ অন্যদের বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত? (খ) উৎসাহজনক হওয়ার জন্য আপনি কী করতে পারেন?
২০ আমরা অন্যদের উৎসাহিত করার মাধ্যমে তাদের প্রতি আগ্রহ দেখাই। (রোমীয় ১:১১, ১২) পৌলের সহকর্মী সীল, আশ্বাস বা উৎসাহের উৎস ছিলেন। সা.কা. ৪৯ সালে ত্বক্চ্ছেদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর, যিরূশালেমের পরিচালক গোষ্ঠী অন্যান্য জায়গার বিশ্বাসীদের কাছে চিঠি নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রতিনিধিকে পাঠিয়েছিল। সীল, যিহূদা, বার্ণবা এবং পৌল সেই চিঠি আন্তিয়খিয়ায় নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে যিহূদা ও সীল “অনেক কথা দ্বারা ভ্রাতৃগণকে আশ্বাস” বা উৎসাহ “দিলেন ও সুস্থির করিলেন।”—প্রেরিত ১৫:৩২.
২১ পরবর্তী সময়ে, পৌল ও সীলকে ফিলিপীতে কারাগারে ভরা হয়েছিল কিন্তু একটা ভূমিকম্পের জন্য তারা মুক্ত হয়ে গিয়েছিল। কারারক্ষী ও তার পরিবারের কাছে সাক্ষ্য দেওয়া এবং তাদেরকে বিশ্বাসী হতে দেখা তাদের জন্য কত আনন্দদায়কই না ছিল! সেই নগর ত্যাগ করার আগে সীল ও পৌল ভাইদের আশ্বাস বা উৎসাহ প্রদান করেছিল। (প্রেরিত ১৬:১২, ৪০) পৌল ও সীলের মতো আপনার মন্তব্য, বক্তৃতা এবং উদ্যোগী ক্ষেত্রের পরিচর্যার দ্বারা অন্যদের উৎসাহ দেওয়ার প্রচেষ্টা করুন। আর আপনার যখন ‘উৎসাহ দেবার জন্য কোন কথা থাকে,’ তাহলে অবশ্যই তা “বলুন।”—প্রেরিত ১৩:১৫, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন।
ক্রমাগত যিহোবার পথে চলুন
২২, ২৩. কীভাবে আমরা বাইবেলের বিবরণগুলো থেকে প্রকৃতই উপকার লাভ করতে পারি?
২২ আমাদের কতই না কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত যে, বাস্তব জীবনকাহিনিগুলো “সমস্ত উৎসাহের ঈশ্বর” যিহোবার বাক্যে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে! (২ করি. ১:৩, বাইংটন) আমরা যদি এই অভিজ্ঞতাগুলো থেকে উপকার লাভ করতে চাই, তাহলে বাইবেলের শিক্ষাগুলোকে অবশ্যই আমাদের জীবনে কাজে লাগাতে হবে এবং ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা দ্বারা নিজেদেরকে পরিচালিত হতে দিতে হবে।—গালা. ৫:২২-২৫.
২৩ বাইবেলের বিবরণগুলো নিয়ে ধ্যান করা আমাদেরকে ঈশ্বরীয় গুণাবলি প্রদর্শন করতে সাহায্য করবে। এটা যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে, যিনি আমাদেরকে “প্রজ্ঞা, বিদ্যা ও আনন্দ” প্রদান করেন। (উপ. ২:২৬) এর ফলে, আমরা ঈশ্বরের প্রেমময় হৃদয়কে আনন্দিত করতে পারব। (হিতো. ২৭:১১) আমরা যেন ক্রমাগত যিহোবার পথে চলে তা করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• কীভাবে আপনি নির্ভরযোগ্য হতে পারেন?
• কেন আমাদের “নম্রমনা” হওয়া উচিত?
• কীভাবে বাইবেলের উদাহরণগুলো আমাদের সাহসী হতে সাহায্য করতে পারে?
• কোন কোন উপায়ে আমরা অন্যদের বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রাখতে পারি?
[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
নির্ভরযোগ্য যিপ্তহ ও তার মেয়ে তার মানত পরিপূর্ণ করেছিল, যদিও তা করা কঠিন ছিল
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
অল্পবয়স্করা, ইস্রায়েলীয় মেয়ের কাছ থেকে তোমরা কী শিখেছ?
[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]
কীভাব দর্কা সহখ্রিস্টানদের অভাব পূরণ করতেন?