কেন নিজেকে যিহোবার কাছে উৎসর্গ করবেন?
‘আমি যে ঈশ্বরের লোক, তাঁহার এক দূত গত রাত্রিতে আমার নিকটে দাঁড়াইয়া ছিলেন।’—প্রেরিত ২৭:২৩.
১. যারা বাপ্তিস্মের জন্য নিজেদের উপস্থাপন করছে, তারা ইতিমধ্যেই কোন পদক্ষেপগুলো নিয়েছে এবং তা কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপন করে?
“যিশু খ্রিস্টের বলিদানের ভিত্তিতে আপনি কি আপনার পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়েছেন এবং যিহোবার ইচ্ছা পালন করার জন্য তাঁর কাছে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন?” বাপ্তিস্মের বক্তৃতার উপসংহারে বাপ্তিস্মপ্রার্থীরা যে-দুটো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকে, তার মধ্যে এটা হল একটা। কেন খ্রিস্টানদের যিহোবার কাছে নিজেদেরকে উৎসর্গ করতে হবে? ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকৃত হওয়া কীভাবে আমাদের উপকৃত করে? কেন একজন ব্যক্তি ঈশ্বরের কাছে নিজেকে উৎসর্গ না করে গ্রহণযোগ্যভাবে তাঁকে উপাসনা করতে পারে না? উত্তরগুলো বোঝার জন্য, আমাদের প্রথমে বিবেচনা করতে হবে যে, উৎসর্গীকরণ বলতে আসলে কী বোঝায়।
২. নিজেকে যিহোবার কাছে উৎসর্গ করা বলতে আসলে কী বোঝায়?
২ ঈশ্বরের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করা বলতে আসলে কী বোঝায়? লক্ষ করুন যে, প্রেরিত পৌল ঈশ্বরের সঙ্গে তার সম্পর্ককে কীভাবে বর্ণনা করেছিলেন। বিপদগ্রস্ত এক জাহাজের অন্যান্য অনেক যাত্রীর সামনে তিনি যিহোবাকে “আমি যে ঈশ্বরের লোক” বলে সম্বোধন করেছিলেন। (পড়ুন, প্রেরিত ২৭:২২-২৪.) সমস্ত সত্য খ্রিস্টানই যিহোবার লোক। এর বিপরীতে, সমগ্র জগৎ “সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” (১ যোহন ৫:১৯) খ্রিস্টানরা তখনই যিহোবার লোক হয়ে ওঠে, যখন প্রার্থনায় তাঁর কাছে তারা এক গ্রহণযোগ্য উৎসর্গ করে থাকে। এই ধরনের উৎসর্গীকরণ হল এক ব্যক্তিগত অঙ্গীকার। এর পরেই জলে বাপ্তিস্ম নেওয়া হয়ে থাকে।
৩. যিশুর বাপ্তিস্ম কী চিত্রিত করেছিল আর তাঁর অনুসারীরা কীভাবে তাঁর উদাহরণ অনুকরণ করতে পারে?
৩ যিশু ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করা বেছে নিয়ে আমাদের জন্য এক উদাহরণ স্থাপন করেছেন। যেহেতু তিনি উৎসর্গীকৃত ইস্রায়েল জাতির মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তাই ইতিমধ্যেই তিনি ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকৃত ছিলেন। তবুও, বাপ্তিস্ম নেওয়ার দ্বারা তিনি ব্যবস্থায় যা চাওয়া হয়েছিল, তার চেয়েও বেশি কিছু করেছিলেন। ঈশ্বরের বাক্য ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি বলেছিলেন: “দেখ, আমি আসিয়াছি, . . . হে ঈশ্বর, যেন তোমার ইচ্ছা পালন করি।” (ইব্রীয় ১০:৭; লূক ৩:২১) তাই, যিশুর বাপ্তিস্ম তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করার জন্য ঈশ্বরের কাছে নিজেকে সমর্পণ করাকে চিত্রিত করেছিল। তাঁর অনুসারীরা তাঁর উদাহরণ অনুকরণ করে, যখন তারা বাপ্তিস্মের জন্য নিজেদের সমর্পণ করে। কিন্তু, তাদের ক্ষেত্রে জলে বাপ্তিস্ম নেওয়া হল তারা যে প্রার্থনায় ব্যক্তিগতভাবে নিজেদেরকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করেছে জনসাধারণ্যে তারই প্রকাশ।
উৎসর্গীকরণ যেভাবে আমাদের উপকৃত করে
৪. দায়ূদ ও যোনাথনের মধ্যেকার বন্ধুত্ব প্রতিশ্রুতির বিষয়ে আমাদের কী জানায়?
৪ খ্রিস্টীয় উৎসর্গীকরণ হল এক গুরুগম্ভীর বিষয়। এটা নিছক এক প্রতিশ্রুতির চেয়ে আরও বেশি কিছু। কিন্তু, উৎসর্গীকরণ করা কীভাবে আমাদের উপকৃত করে? আসুন তুলনা করার মাধ্যমে আমরা বিবেচনা করে দেখি যে, কীভাবে প্রতিশ্রুতি মানব সম্পর্ককে উপকৃত করে। একটা উদাহরণ হল বন্ধুত্ব। এক বন্ধু থাকার বিশেষ সুযোগ লাভ করার জন্য আপনাকে এক বন্ধু হওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। সেটার সঙ্গে এক প্রতিশ্রুতি জড়িত—আপনি আপনার বন্ধুর যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে এক বাধ্যবাধকতা অনুভব করেন। বাইবেলে বর্ণিত উল্লেখযোগ্য বন্ধুত্বগুলোর মধ্যে একটা হল দায়ূদ ও যোনাথনের মধ্যে বন্ধুত্ব। তারা এমনকী একে অপরের কাছে বন্ধুত্বের এক নিয়ম বা চুক্তি করেছিল। (পড়ুন, ১ শমূয়েল ১৭:৫৭; ১৮:১, ৩.) যদিও সেইরকম প্রতিশ্রুতিপূর্ণ বন্ধুত্ব খুবই বিরল, কিন্তু অধিকাংশ বন্ধুত্ব তখনই দৃঢ় হয়, যখন সঙ্গীরা একে অপরের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় বা একে অন্যের প্রতি কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা বোধ করে।—হিতো. ১৭:১৭; ১৮:২৪.
৫. কীভাবে একজন দাস একজন উত্তম প্রভুর লোক হওয়ার দ্বারা স্থায়ীভাবে উপকৃত হতে পারত?
৫ ঈশ্বর ইস্রায়েলকে যে-ব্যবস্থা দিয়েছিলেন, তা আরেকটা সম্পর্কের বিষয়ে বর্ণনা করে, যে-সম্পর্কের মধ্যে লোকেরা প্রতিশ্রুতি করার দ্বারা উপকৃত হতো। একজন দাস যদি স্থায়ীভাবে একজন উত্তম প্রভুর লোক হওয়ার নিরাপত্তা পেতে চাইত, তাহলে সে তার সঙ্গে এক স্থায়ী ও বাধ্যবাধকতাপূর্ণ চুক্তি করতে পারত। ব্যবস্থা বলে: “ঐ দাস যদি স্পষ্টরূপে বলে, আমি আপন প্রভুকে এবং আপন স্ত্রী ও সন্তানগণকে ভালবাসি, মুক্ত হইয়া চলিয়া যাইব না, তাহা হইলে তাহার প্রভু তাহাকে ঈশ্বরের নিকটে লইয়া যাইবে, এবং সে তাহাকে কপাটের কিম্বা বাজুর নিকটে উপস্থিত করিবে, তথায় তাহার প্রভু গুঁজি দ্বারা তাহার কর্ণ বিদ্ধ করিবে; তাহাতে সে চিরকাল সেই প্রভুর দাস থাকিবে।”—যাত্রা. ২১:৫, ৬.
৬, ৭. (ক) প্রতিশ্রুতি কীভাবে লোকেদের উপকৃত করে? (খ) যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বিষয়ে তা কী ইঙ্গিত দেয়?
৬ বিয়ে হল এমন এক সম্পর্ক, যেটাতে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন হয়। এটা হল এক প্রতিশ্রুতি, তবে কোনো চুক্তিপত্রের প্রতি নয় কিন্তু একজন ব্যক্তির প্রতি। দুজন ব্যক্তি যারা বিয়ে না করে এমনিই একসঙ্গে বাস করে, তারা নিজেরা কখনোই প্রকৃত নিরাপত্তা উপভোগ করতে পারে না; কিংবা তাদের সন্তানরাও না। কিন্তু, যে-সাথিরা এক আদরণীয় বা সম্মাননীয় বিয়ের দ্বারা একে অপরের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়, যখন সমস্যা দেখা দেয়, তখন তাদের সমস্যাগুলোকে প্রেমের সঙ্গে সমাধান করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করার এক জোরালো শাস্ত্রীয় কারণ থাকে।—মথি ১৯:৫, ৬; ১ করি. ১৩:৭, ৮; ইব্রীয় ১৩:৪.
৭ বাইবেলের সময়ে, লোকেরা ব্যাবসা এবং চাকরি সংক্রান্ত বিষয়ে বাধ্যবাধকতাপূর্ণ চুক্তিপত্র থেকে উপকার লাভ করত। (মথি ২০:১, ২, ৮) বর্তমানেও, একই বিষয় সত্য। উদাহরণস্বরূপ, কোনো ব্যাবসা সংক্রান্ত কাজ কিংবা কর্মচারী হিসেবে কোনো কোম্পানিতে কাজ শুরু করার আগে, আমরা এক লিখিত বাধ্যবাধকতাপূর্ণ চুক্তিপত্র থেকে উপকৃত হই। তাই, প্রতিশ্রুতি যদি বন্ধুত্ব, বিয়ে এবং চাকরির মতো সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে পারে, তাহলে নিঃশর্ত উৎসর্গীকরণ করা যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ককে আরও কত বেশি শক্তিশালী করবে! এখন আসুন আমরা বিবেচনা করি যে, অতীতে লোকেরা যিহোবা ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকৃত হওয়ার দ্বারা কীভাবে উপকার লাভ করেছিল এবং কীভাবে তা নিছক এক প্রতিশ্রুতির চেয়ে আরও বেশি কিছু ছিল।
ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকরণ যেভাবে ইস্রায়েলকে উপকৃত করেছিল
৮. ইস্রায়েলের জন্য, ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকৃত হওয়ার অর্থ কী ছিল?
৮ পুরো ইস্রায়েল জাতি যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত হয়েছিল, যখন তারা ঈশ্বরের কাছে এক অঙ্গীকার করেছিল। যিহোবা সীনয় পর্বতের কাছে তাদের একত্রিত করেছিলেন ও তাদের বলেছিলেন: “যদি তোমরা আমার রবে অবধান কর ও আমার নিয়ম পালন কর, তবে তোমরা সকল জাতি অপেক্ষা আমার নিজস্ব অধিকার [“বিশেষ সম্পত্তি,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] হইবে।” তখন লোকেরা একসঙ্গে উত্তর দিয়েছিল: “সদাপ্রভু যাহা কিছু বলিয়াছেন, আমরা সমস্তই করিব।” (যাত্রা. ১৯:৪-৮) ইস্রায়েলের জন্য, উৎসর্গীকৃত হওয়ার অর্থ কোনো কিছু করার জন্য শুধু প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার চেয়ে আরও বেশি কিছু ছিল। এর অর্থ ছিল যে, তারা যিহোবার লোক হয়েছিল এবং যিহোবা তাদের সঙ্গে তাঁর ‘বিশেষ সম্পত্তির’ মতো আচরণ করেছিলেন।
৯. ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকৃত হওয়ার দ্বারা ইস্রায়েল কীভাবে উপকৃত হয়েছিল?
৯ যিহোবার লোক হওয়ার দ্বারা ইস্রায়েলীয়রা উপকৃত হয়েছিল। একজন প্রেমময় বাবা অথবা মা যেমন তার সন্তানের যত্ন নেন, তেমনই যিহোবা তাদের প্রতি অনুগত ছিলেন এবং তাদের যত্ন নিয়েছিলেন। ইস্রায়েলের উদ্দেশে ঈশ্বর বলেছিলেন: “স্ত্রীলোক কি আপন স্তন্যপায়ী শিশুকে ভুলিয়া যাইতে পারে? আপন গর্ব্ভজাত বালকের প্রতি কি স্নেহ করিবে না? বরং তাহারা ভুলিয়া যাইতে পারে, তথাপি আমি তোমাকে ভুলিয়া যাইব না।” (যিশা. ৪৯:১৫) যিহোবা তাদেরকে ব্যবস্থার দ্বারা নির্দেশনা, ভাববাদীদের দ্বারা উৎসাহ এবং স্বর্গদূতেদের দ্বারা সুরক্ষা প্রদান করেছিলেন। একজন গীতরচক লিখেছিলেন: “তিনি জানান যাকোবকে আপন বাক্য, ইস্রায়েলকে আপন বিধি ও শাসনকলাপ। তিনি আর কোন জাতির পক্ষে এরূপ করেন নাই।” (গীত. ১৪৭:১৯, ২০; পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৪:৭, ১৯; ৪৮:১৪.) অতীতে যে-জাতি যিহোবার লোক ছিল, তিনি যেমন সেই জাতির যত্ন নিয়েছিলেন, তেমনই আজকে যারা নিজেদেরকে তাঁর কাছে উৎসর্গ করে তিনি তাদেরও যত্ন নেবেন।
যে-কারণে আমাদের নিজেদেরকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করা উচিত
১০, ১১. আমরা কি ঈশ্বরের সর্বজনীন পরিবারের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছি? ব্যাখ্যা করুন।
১০ খ্রিস্টীয় উৎসর্গীকরণের এবং বাপ্তিস্ম নেওয়ার বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার সময়, কেউ কেউ হয়তো ভাবতে পারে, ‘কেন আমি নিজেকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ না করে তাঁকে উপাসনা করতে পারব না?’ এর কারণটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যখন আমরা ঈশ্বরের সামনে আমাদের বর্তমান অবস্থান সম্বন্ধীয় বাস্তব বিষয়টা বিবেচনা করি। মনে রাখবেন যে, আদমের পাপের কারণে আমরা সবাই ঈশ্বরের পরিবারের বাইরে জন্মগ্রহণ করেছি। (রোমীয় ৩:২৩; ৫:১২) ঈশ্বরের সর্বজনীন পরিবারে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য নিজেদেরকে তাঁর কাছে উৎসর্গ করা হল এক অত্যাবশ্যকীয় চাহিদা। আসুন আমরা দেখি যে, কেন।
১১ আমাদের কারোরই এমন জন্মগত কোনো বাবা নেই, যিনি আমাদেরকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য অনুযায়ী অনন্তজীবন দিতে পারেন। (১ তীম. ৬:১৯) আমরা ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করিনি, কারণ প্রথম মানব দম্পতি যখন পাপ করেছিল, তখন মানবজাতি তাদের প্রেমময় পিতা ও সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। (তুলনা করুন, দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৫.) সেই সময় থেকে, মানবজাতির জগৎ ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন, যিহোবার সর্বজনীন পরিবারের বাইরে বাস করছে।
১২. (ক) অসিদ্ধ মানুষেরা কীভাবে ঈশ্বরের পরিবারের সদস্য হয়ে উঠতে পারে? (খ) বাপ্তিস্মের আগে আমাদের অবশ্যই কোন পদক্ষেপগুলো নিতে হবে?
১২ তা সত্ত্বেও, আলাদা আলাদা ব্যক্তি হিসেবে আমরা অনুরোধ করতে পারি যে, ঈশ্বর যেন আমাদেরকে তাঁর অনুমোদিত দাসদের পরিবারে গ্রহণ করে নেন।a আমাদের মতো পাপীদের পক্ষে কীভাবে তা সম্ভব? প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: ‘যখন আমরা শত্রু ছিলাম, তখন ঈশ্বরের সহিত তাঁহার পুত্ত্রের মৃত্যু দ্বারা সম্মিলিত হইলাম।’ (রোমীয় ৫:১০) বাপ্তিস্মের সময় আমরা ঈশ্বরের কাছে এক উত্তম বিবেকের জন্য অনুরোধ করি, যাতে তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারি। (১ পিতর ৩:২১) কিন্তু, বাপ্তিস্মের আগে আমাদের অবশ্যই কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরকে জানতে হবে, তাঁর ওপর নির্ভর করতে শিখতে হবে, অনুতাপ এবং আমাদের পথ পরিবর্তন করতে হবে। (যোহন ১৭:৩; প্রেরিত ৩:১৯; ইব্রীয় ১১:৬) আর ঈশ্বরের পরিবারে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠার আগে, আমাদের আরেকটা বিষয় করতে হবে। সেটা কী?
১৩. একজন ব্যক্তির পক্ষে ঈশ্বরের অনুমোদিত উপাসকদের পরিবারের অংশ হওয়ার জন্য কেন ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকরণের অঙ্গীকার করা উপযুক্ত?
১৩ ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন একজন ব্যক্তির ঈশ্বরের অনুমোদিত দাসদের পরিবারের এক সদস্য হয়ে ওঠার আগে, তাকে যিহোবার কাছে এক গুরুগম্ভীর প্রতিজ্ঞা করতে হবে। কেন করতে হবে, তা বোঝার জন্য একজন সম্মাননীয় বাবার কথা চিন্তা করুন, যিনি একজন অনাথ ছেলের প্রতি দয়া দেখান এবং তাকে তার নিজের পরিবারের এক সদস্য হিসেবে দত্তক নিতে চান। বাবা একজন ভালো লোক হিসেবে পরিচিত। তবুও, সেই ছেলেটিকে তার পুত্র হিসেবে গ্রহণ করার আগে, সেই লোকটি চান যেন ছেলেটি তার কাছে এক প্রতিজ্ঞা করে। তাই লোকটি বলেন, “তোমাকে পুত্র হিসেবে গ্রহণ করার আগে, আমাকে জানতে হবে যে, তুমি আমাকে তোমার বাবার মতো প্রেম এবং সম্মান করবে।” সেই ছেলেটি যদি এইরকম এক গুরুগম্ভীর প্রতিজ্ঞা করতে ইচ্ছুক হয়, তাহলেই লোকটি তাকে তার পরিবারে গ্রহণ করবেন। এটা কি যুক্তিযুক্ত নয়? একইভাবে, যিহোবা একমাত্র তাদেরকেই তাঁর পরিবারে গ্রহণ করেন, যারা তাঁর কাছে উৎসর্গীকরণের এক অঙ্গীকার করতে ইচ্ছুক হয়। বাইবেল বলে: ‘তোমরা আপন আপন দেহকে জীবিত, ঈশ্বরের প্রীতিজনক বলিরূপে উৎসর্গ কর।’—রোমীয় ১২:১.
প্রেম ও বিশ্বাসের এক কাজ
১৪. কোন দিক দিয়ে উৎসর্গীকরণ হল প্রেমের এক প্রকাশ?
১৪ ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকরণের অঙ্গীকার করা হচ্ছে যিহোবার প্রতি আমাদের আন্তরিক প্রেমের এক প্রকাশ। কিছু কিছু দিক দিয়ে এটা এক বিবাহ অঙ্গীকারের অনুরূপ। যা-ই ঘটুক না কেন, একজন খ্রিস্টান বর তার কনের প্রতি অনুগত থাকার অঙ্গীকার করার দ্বারা কনের প্রতি নিজের প্রেম প্রকাশ করেন। এটা কোনো কিছু করার জন্য নিছক এক প্রতিজ্ঞা নয়, বরং একজন ব্যক্তির প্রতি করা এক অঙ্গীকার। একজন খ্রিস্টান বর বোঝেন যে, তিনি যদি বিবাহ অঙ্গীকার না করেন, তাহলে তিনি তার কনের সঙ্গে বাস করার বিশেষ সুযোগ লাভ করতে পারবেন না। একইভাবে, উৎসর্গীকরণের এক অঙ্গীকার না করে আমরাও যিহোবার পরিবারের সদস্য হওয়ার উপকারগুলো পুরোপুরিভাবে উপভোগ করতে পারব না। তাই, আমরা নিজেদেরকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করি, কারণ আমাদের অসিদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা তাঁর লোক হতে চাই এবং যা-ই ঘটুক না কেন, তাঁর প্রতি অনুগত থাকার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই।—মথি ২২:৩৭.
১৫. উৎসর্গীকরণ কীভাবে বিশ্বাসের এক কাজ?
১৫ আমরা যখন নিজেদেরকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করি, তখন আমরা বিশ্বাসের এক কাজ সম্পাদন করি। কেন তা বলা যেতে পারে? যিহোবার প্রতি আমাদের বিশ্বাস আমাদের এই ব্যাপারে দৃঢ়প্রত্যয়ী করে যে, ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়া আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। (গীত. ৭৩:২৮) আমরা জানি যে, “কুটিল ও বিপথগামী লোকদের” মাঝে বাস করে ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করা সবসময় সহজ হবে না, কিন্তু আমরা ঈশ্বরের এই প্রতিজ্ঞায় নির্ভর করি যে, তিনি আমাদের প্রচেষ্টায় সমর্থন জোগাবেন। (ফিলি. ২:১৫; ৪:১৩) আমরা জানি যে, আমরা অসিদ্ধ কিন্তু আমরা নিশ্চিত যে, যিহোবা আমাদের সঙ্গে করুণা সহকারে আচরণ করবেন, এমনকী আমরা যখন ভুল করি তখনও। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১০৩:১৩, ১৪; রোমীয় ৭:২১-২৫.) আমাদের এই বিশ্বাস রয়েছে যে, “সিদ্ধতা [“নীতিনিষ্ঠা,” NW]” বজায় রাখার ব্যাপারে আমাদের দৃঢ়সংকল্পকে যিহোবা পুরস্কৃত করবেন।—ইয়োব ২৭:৫.
ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকরণ সুখের দিকে পরিচালিত করে
১৬, ১৭. কেন যিহোবার কাছে উৎসর্গীকরণ সুখের দিকে পরিচালিত করে?
১৬ যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত হওয়া সুখ নিয়ে আসে কারণ এর সঙ্গে নিজেদেরকে বিলিয়ে দেওয়া জড়িত। যিশু এক মৌলিক শিক্ষার বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “পাওয়ার চেয়ে দেওয়ারই মধ্যে বেশি সুখ।” (প্রেরিত [শিষ্যচরিত] ২০:৩৫, বাংলা জুবিলী বাইবেল) যিশু তাঁর পার্থিব পরিচর্যার সময় দেওয়ার মাধ্যমে প্রাপ্ত সুখ পুরোপুরিভাবে উপভোগ করেছিলেন। প্রয়োজনে তিনি বিশ্রাম, খাবার এবং আরাম ত্যাগ করেছিলেন, যাতে অন্যদেরকে জীবনের পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারেন। (যোহন ৪:৩৪) যিশু তাঁর পিতার হৃদয়কে আনন্দিত করে পরিতৃপ্তি খুঁজে পেয়েছিলেন। যিশু বলেছিলেন: “আমি সর্ব্বদা তাঁহার সন্তোষজনক কার্য্য করি।”—যোহন ৮:২৯; হিতো. ২৭:১১.
১৭ এভাবে, যিশু তাঁর অনুসারীদেরকে এক পরিতৃপ্তিদায়ক জীবনের দিকে নির্দেশ করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “কেহ যদি আমার পশ্চাৎ আসিতে ইচ্ছা করে, তবে সে আপনাকে অস্বীকার করুক।” (মথি ১৬:২৪) তা করা আমাদেরকে যিহোবার আরও নিকটবর্তী করে। আমরা কি অন্য আর কারো হাতে নিজেদের অর্পণ করতে পারি, যিনি এর চেয়ে বেশি প্রেমের সঙ্গে আমাদের যত্ন নিতে পারবেন?
১৮. কেন কোনো কিছুর প্রতি অথবা অন্য কারো প্রতি উৎসর্গীকৃত হওয়ার পরিবর্তে, যিহোবার প্রতি উৎসর্গীকরণের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করা আরও বেশি সুখ নিয়ে আসে?
১৮ কোনো কিছুর প্রতি অথবা অন্য কারো প্রতি উৎসর্গ করার পরিবর্তে, নিজেদেরকে যিহোবার কাছে উৎসর্গ করা ও এরপর তাঁর ইচ্ছা পালন করার দ্বারা সেই উৎসর্গীকরণের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করা আরও বেশি সুখ নিয়ে আসবে। উদাহরণস্বরূপ, অনেক লোক প্রকৃত সুখ এবং অকৃত্রিম পরিতৃপ্তি অর্জন না করেই বস্তুগত সম্পত্তির পিছনে ছোটার জন্য তাদের জীবনকে নিয়োজিত করে। কিন্তু, যারা নিজেদেরকে যিহোবার কাছে উৎসর্গ করে তারা দীর্ঘস্থায়ী সুখ খুঁজে পায়। (মথি ৬:২৪) “ঈশ্বরেরই সহকার্য্যকারী” হওয়ার সম্মান তাদেরকে সুখী করে, তবে তাদের উৎসর্গীকরণ কোনো কাজের প্রতি নয় বরং আমাদের উপলব্ধিপরায়ণ ঈশ্বরের প্রতি। (১ করি. ৩:৯) অন্য আর কেউই তাদের আত্মত্যাগের জন্য ততটা উপলব্ধি দেখাতে পারেন না, যতটা তিনি দেখান। তিনি এমনকী তাঁর অনুগত ব্যক্তিদের তাদের যৌবনকাল ফিরিয়ে দেবেন যাতে তারা চিরকাল তাঁর যত্ন থেকে উপকার লাভ করতে পারে।—ইয়োব ৩৩:২৫; পড়ুন, ইব্রীয় ৬:১০.
১৯. যারা যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত তারা কোন বিশেষ সুযোগ উপভোগ করে?
১৯ নিজের জীবনকে যিহোবার কাছে উৎসর্গ করা আপনাকে তাঁর সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে নিয়ে আসে। বাইবেল বলে: “ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন।” (যাকোব ৪:৮) পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা বিবেচনা করব যে, কেন যিহোবার লোক হওয়া বেছে নেওয়ার ব্যাপারে আমরা দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে পারি।
[পাদটীকা]
a সহস্র বছর শেষ না হওয়া পর্যন্ত যিশুর “আরও মেষ” ঈশ্বরের সন্তান হয়ে উঠবে না। কিন্তু, যেহেতু তারা নিজেদেরকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করেছে, তাই তারা উপযুক্তভাবে ঈশ্বরকে “পিতা” হিসেবে সম্বোধন করতে এবং সঠিকভাবেই যিহোবার উপাসকদের পরিবারের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।—যোহন ১০:১৬; যিশা. ৬৪:৮; মথি ৬:৯; প্রকা. ২০:৫.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• নিজেকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করা বলতে কী বোঝায়?
• ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকৃত হওয়া কীভাবে আমাদের উপকৃত করে?
• কেন খ্রিস্টানদের যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত হতে হবে?
[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমাদের উৎসর্গীকরণের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করা আমাদেরকে স্থায়ী সুখের দিকে পরিচালিত করে