অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১১
যিহোবার রব শুনুন
‘ইনিই আমার পুত্ত্র ইহাঁর কথা শুন।’—মথি ১৭:৫.
গান সংখ্যা ১২০ শ্রবণ করো, বাধ্য হও ও আশীর্বাদ লাভ করো
সারাংশa
১-২. (ক) কীভাবে যিহোবা মানুষের সঙ্গে ভাববিনিময় করেন? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে বিবেচনা করব?
যিহোবা আমাদের সঙ্গে ভাববিনিময় করতে ভালোবাসেন। অতীতে, তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে আমাদের জানানোর জন্য ভাববাদী, স্বর্গদূত ও তাঁর পুত্র যিশু খ্রিস্টকে ব্যবহার করেছিলেন। (আমোষ ৩:৭; গালা. ৩:১৯; প্রকা. ১:১) বর্তমানে, তিনি আমাদের সঙ্গে ভাববিনিময় করার জন্য তাঁর বাক্য বাইবেল ব্যবহার করেন। তিনি আমাদের এটি দিয়েছেন, যাতে আমরা তাঁর চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে জানতে পারি এবং তাঁর কাজ করার পদ্ধতি সম্বন্ধে বুঝতে পারি।
২ যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন যিহোবা স্বর্গ থেকে তিন বার কথা বলেছিলেন। আসুন আমরা বিবেচনা করি যে, যিহোবা কী বলেছিলেন, আমরা তাঁর কথাগুলো থেকে কী শিখতে পারি এবং কীভাবে উপকৃত হই।
“তুমিই আমার প্রিয় পুত্ত্র”
৩. মার্ক ১:৯-১১ পদের বিবরণ অনুযায়ী যিশুর বাপ্তিস্মের সময়ে যিহোবা কী বলেছিলেন এবং তাঁর সেই কথাগুলো কোন গুরুত্বপূর্ণ সত্যগুলোকে নিশ্চিত করেছিল?
৩ মার্ক ১:৯-১১ পদে সেই প্রথম ঘটনাটা নথিভুক্ত রয়েছে, যখন যিহোবা স্বর্গ থেকে কথা বলেছিলেন। (পড়ুন।) তিনি বলেছিলেন: “তুমিই আমার প্রিয় পুত্ত্র, তোমাতেই আমি প্রীত” বা তোমার প্রতি আমার অনুমোদন রয়েছে। যিশু যখন তাঁর পিতাকে বলতে শুনেছিলেন যে, তিনি যিশুকে কতটা ভালোবাসেন এবং যিশুর উপর তাঁর আস্থা রয়েছে, তখন সেটা নিশ্চয়ই যিশুর হৃদয়কে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল! যিহোবার কথাগুলো যিশু সম্বন্ধে তিনটে গুরুত্বপূর্ণ সত্যকে নিশ্চিত করেছিল। প্রথমত, যিশু হলেন তাঁর পুত্র। দ্বিতীয়ত, যিহোবা তাঁর পুত্রকে ভালোবাসেন। আর তৃতীয়ত, তাঁর পুত্রের প্রতি যিহোবার অনুমোদন রয়েছে। আসুন, আমরা সেগুলোর প্রত্যেকটা নিয়ে পরীক্ষা করে দেখি।
৪. বাপ্তিস্ম নেওয়ার মাধ্যমে যিহোবার সঙ্গে যিশুর কোন নতুন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল?
৪ “তুমিই আমার প্রিয় পুত্ত্র।” এই কথাগুলোর মাধ্যমে যিহোবা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তাঁর প্রিয় পুত্র যিশুর সঙ্গে তাঁর এক নতুন সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। যিশু যখন স্বর্গে ছিলেন, তখন ঈশ্বরের একজন আত্মিক পুত্র ছিলেন। তবে, বাপ্তিস্ম নেওয়ার সময়ে তিনি পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছিলেন। সেইসময়ে ঈশ্বর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, যিশু হলেন তাঁর অভিষিক্ত পুত্র এবং এখন ঈশ্বরের দ্বারা নিযুক্ত রাজা ও মহাযাজক হিসেবে যিশুর স্বর্গে ফিরে যাওয়ার আশা রয়েছে। (লূক ১:৩১-৩৩; ইব্রীয় ১:৮, ৯; ২:১৭) তাই, যিশুর বাপ্তিস্মের সময়ে তাঁর পিতার এই কথাগুলো বলার উত্তম কারণ ছিল: “তুমি আমার . . . পুত্ত্র।”—লূক ৩:২২.
৫. প্রেম ও অনুমোদন প্রকাশ করার ক্ষেত্রে কীভাবে আমরা যিহোবার উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি?
৫ “তুমিই আমার প্রিয় পুত্ত্র।” প্রেম ও অনুমোদন প্রকাশ করার ক্ষেত্রে যিহোবার উদাহরণ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যেন আমরা অন্যদের উৎসাহিত করার জন্য সুযোগ খুঁজি। (যোহন ৫:২০) আমরা যাদের জন্য চিন্তা করি, তারা যখন আমাদের প্রতি ভালোবাসা দেখায় এবং আমাদের করা ভালো কাজের জন্য আমাদের প্রশংসা করে, তখন আমরা খুবই আনন্দিত হই। একইভাবে, মণ্ডলীতে ভাই-বোনদের ও সেইসঙ্গে আমাদের পরিবারের সদস্যদের আমাদের ভালোবাসা ও উৎসাহের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা যখন অন্যদের প্রশংসা করি, তখন আমরা তাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করি এবং অনুগতভাবে যিহোবার সেবা করতে সাহায্য করি। বাবা-মায়েদের বিশেষভাবে তাদের সন্তানদের উৎসাহিত করার প্রয়োজন রয়েছে। বাবা-মায়েরা যখন মন থেকে তাদের সন্তানদের প্রশংসা করেন এবং তাদের প্রতি স্নেহ দেখান, তখন তারা তাদের উন্নতি করতে সাহায্য করেন।
৬. কেন আমরা যিশু খ্রিস্টের উপর আস্থা রাখতে পারি?
৬ “তোমাতেই আমি প্রীত।” এই কথাগুলো দেখায়, যিহোবার আস্থা ছিল যে, যিশু বিশ্বস্তভাবে তাঁর পিতার ইচ্ছা সম্পন্ন করবেন। যিহোবার যেহেতু তাঁর পুত্রের উপর এতটা আস্থা ছিল, তাই আমরাও সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি, যিশু যিহোবার সমস্ত প্রতিজ্ঞা বিশ্বস্তভাবে পরিপূর্ণ করবেন। (২ করি. ১:২০) আমরা যখন যিশুর উদাহরণ নিয়ে বিবেচনা করি, তখন আমরা তাঁর কাছ থেকে শেখার এবং তাঁর পদচিহ্ন অনুগমন বা অনুসরণ করার বিষয়ে আরও বেশি দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই। যিশুর মতো তাঁর দাসদের উপরও যিহোবার এই আস্থা রয়েছে, একটা দল হিসেবে তারা ক্রমাগত তাঁর পুত্রের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করে যাবে।—১ পিতর ২:২১.
“ইহাঁর কথা শুন”
৭. মথি ১৭:১-৫ পদ অনুযায়ী যিহোবা কখন স্বর্গ থেকে কথা বলেছিলেন এবং তিনি কী বলেছিলেন?
৭ মথি ১৭:১-৫ পদ পড়ুন। যিশু যখন ‘রূপান্তরিত হইয়াছিলেন,’ তখন যিহোবা দ্বিতীয় বার স্বর্গ থেকে কথা বলেছিলেন। যিশু তাঁর সঙ্গে পিতর, যাকোব ও যোহনকে এক উঁচু পর্বতে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেখানে থাকাকালীন তারা একটা উল্লেখযোগ্য দর্শন দেখেছিলেন। যিশুর মুখ উজ্জ্বল হয়ে গিয়েছিল এবং তাঁর বস্ত্র চকচক করছিল। সেই দর্শনে প্রেরিতরা যেন দু-জন ব্যক্তিকে দেখতে পেয়েছিলেন, যারা মোশি ও এলিয়কে চিত্রিত করেছিল। সেই দু-জন ব্যক্তি যিশুর সঙ্গে তাঁর আসন্ন মৃত্যু ও পুনরুত্থানের বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেছিলেন। যদিও সেই তিন জন প্রেরিত “নিদ্রায় ভারাক্রান্ত ছিলেন” কিন্তু তারা যখন জেগে উঠেছিলেন, তখন তারা এক চমৎকার দর্শন দেখেছিলেন। (লূক ৯:২৯-৩২) এরপর, একটা উজ্জ্বল মেঘ তাদের ঢেকে দিয়েছিল এবং তারা সেই মেঘ থেকে একটা রব শুনেছিলেন, যেটা ঈশ্বরের রব ছিল! যিশুর বাপ্তিস্মের মতো যিহোবা আবারও এই বলে তাঁর পুত্রের প্রতি নিজের অনুমোদন ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছিলেন: “ইনিই আমার প্রিয় পুত্ত্র, ইহাঁতেই আমি প্রীত।” কিন্তু, এই বার যিহোবা আরও বলেছিলেন: “ইহাঁর কথা শুন।”
৮. রূপান্তরের দর্শন যিশু ও তাঁর শিষ্যদের কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?
৮ যিশু ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা হিসেবে ভবিষ্যতে যে-গৌরব ও ক্ষমতা লাভ করবেন, এই দর্শন সেটার এক পূর্বাভাস দিয়েছিল। কোনো সন্দেহ নেই, খ্রিস্ট এতে সাহসী হয়েছিলেন এবং দুঃখকষ্ট ও যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু ভোগ করার জন্য শক্তিশালী হয়েছিলেন। এ ছাড়া, এই দর্শন শিষ্যদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিল আর সেইসঙ্গে তারা যে-পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হতে যাচ্ছিলেন এবং তাদের যে-কঠোর পরিশ্রম করতে হতো, সেগুলোর জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করেছিল। প্রায় ৩০ বছর পর, প্রেরিত পিতর রূপান্তরের দর্শনের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, যেটা দেখায় সেই দর্শন তার স্পষ্ট মনে ছিল।—২ পিতর ১:১৬-১৮.
৯. যিশু তাঁর শিষ্যদের কোন ব্যাবহারিক পরামর্শ দিয়েছিলেন?
৯ “ইহাঁর কথা শুন।” যিহোবা এটা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, তিনি আশা করেন যেন আমরা তাঁর পুত্রের কথা শুনি এবং সেগুলোর বাধ্য হই। যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি কী বলেছিলেন? তিনি এমন অনেক বিষয় বলেছিলেন, যেগুলো শোনা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি প্রেমের সঙ্গে তাঁর অনুসারীদের শিখিয়েছিলেন, কীভাবে সুসমাচার প্রচার করা যায় আর সেইসঙ্গে তিনি বার বার তাদের জেগে থাকার বিষয়টা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। (মথি ২৪:৪২; ২৮:১৯, ২০) এ ছাড়া, তিনি তাদের সংকীর্ণ দ্বার দিয়ে প্রবেশ করার জন্য প্রাণপণ করার বিষয়ে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং তাদের হাল ছেড়ে না দেওয়ার বিষয়ে উৎসাহিত করেছিলেন। (লূক ১৩:২৪) যিশু তাঁর অনুসারীদের একে অপরের প্রতি প্রেম দেখানোর, একতাবদ্ধ থাকার এবং তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিলেন। (যোহন ১৫:১০, ১২, ১৩) যিশু তাঁর শিষ্যদের কতই-না ব্যাবহারিক পরামর্শ দিয়েছিলেন! সেই পরামর্শ এখনও ততটাই প্রযোজ্য যতটা যিশুর সময়ে ছিল।
১০-১১. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি, আমরা যিশুর কথা শুনছি?
১০ যিশু বলেছিলেন: “যে কেহ সত্যের, সে আমার রব শুনে।” (যোহন ১৮:৩৭) আমরা যখন ‘পরস্পর সহনশীল হই এবং পরস্পর ক্ষমা করি,’ তখন আমরা দেখাই যে, আমরা যিশুর রব শুনছি। (কল. ৩:১৩; লূক ১৭:৩, ৪) এ ছাড়া, আমরা যখন উদ্যোগের সঙ্গে “সময়ে অসময়ে” সুসমাচার প্রচার করি, তখনও আমরা দেখাই যে, আমরা তাঁর রব শুনছি।—২ তীম. ৪:২.
১১ যিশু বলেছিলেন: “আমার মেষেরা আমার রব শুনে।” (যোহন ১০:২৭) খ্রিস্টের অনুসারীরা কেবল তাঁর বাক্যের উপর মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমেই নয় কিন্তু সেই অনুযায়ী কাজ করার মাধ্যমেও দেখায় যে, তারা যিশুর কথা শোনে। তারা ‘জীবিকার চিন্তার’ কারণে বিক্ষিপ্ত হয় না। (লূক ২১:৩৪) এর পরিবর্তে, তারা যিশুর আজ্ঞার বাধ্য হওয়াকে জীবনে অগ্রাধিকার দেয় আর এমনকী তা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও। আমাদের ভাই-বোনদের মধ্যে অনেকে চরম পরীক্ষা ভোগ করছে, যার অন্তর্ভুক্ত হল বিরোধীদের আক্রমণ, চরম দরিদ্রতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এত কিছু সত্ত্বেও তারা যিহোবার প্রতি তাদের বিশ্বস্ততা বজায় রাখে, তা তাদের যত কষ্টই ভোগ করতে হোক না কেন। তাদের জন্য যিশু এই আশ্বাস দিয়েছেন: “যে ব্যক্তি আমার আজ্ঞা সকল প্রাপ্ত হইয়া সে সকল পালন করে, সেই আমাকে প্রেম করে; আর যে আমাকে প্রেম করে, আমার পিতা তাহাকে প্রেম করিবেন।”—যোহন ১৪:২১.
১২. আরেকটা কোন উপায়ে আমরা দেখাতে পারি, আমরা যিশুর কথা শুনছি?
১২ আরেকটা যে-উপায়ে আমরা দেখাতে পারি, আমরা যিশুর কথা শুনছি, সেটা হল: আমাদের নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য তিনি যাদের নিযুক্ত করেছেন, তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করার মাধ্যমে। (ইব্রীয় ১৩:৭, ১৭) সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঈশ্বরের সংগঠনে অনেক রদবদল করা হয়েছে। যেমন, আমাদের পরিচর্যায় নতুন নতুন হাতিয়ার ও পদ্ধতির ব্যবহারে, সপ্তাহের মাঝের সভার আর সেইসঙ্গে কিংডম হল নির্মাণ, পুনর্সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের পদ্ধতিতে রদবদল। প্রেম ও সতর্কতার সঙ্গে দেওয়া এই চিন্তাশীল নির্দেশনাগুলোর জন্য আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ! আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করার বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টায় যিহোবা আশীর্বাদ করবেন।
১৩. যিশুর কথা শোনার কিছু উপকার কী?
১৩ যিশুর শেখানো সমস্ত বিষয় শোনার মাধ্যমে আমরা উপকার লাভ করি। যিশু তাঁর শিষ্যদের এই আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁর শিক্ষা তাদের সতেজ করবে। তিনি বলেছিলেন: “তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে” বা সতেজ হবে “কারণ আমার যোঁয়ালি সহজ ও আমার ভার লঘু।” (মথি ১১:২৮-৩০) ঈশ্বরের বাক্য, যার অন্তর্ভুক্ত হল যিশুর জীবন ও পরিচর্যা সম্বন্ধে চারটে সুসমাচারের বিবরণ, আমাদের সতেজ ও বিজ্ঞ করে তোলে। (গীত. ১৯:৭; ২৩:৩) যিশু বলেছিলেন: “ধন্য” বা সুখী “তাহারাই, যাহারা ঈশ্বরের বাক্য শুনিয়া পালন করে।”—লূক ১১:২৮.
‘আমি আমার নাম মহিমান্বিত করিব’
১৪-১৫. (ক) যোহন ১২:২৭, ২৮ পদে বর্ণিত তৃতীয় কোন ঘটনাটা রয়েছে, যখন যিহোবা স্বর্গ থেকে কথা বলেছিলেন? (খ) কেন যিহোবার কথাগুলো যিশুকে সান্ত্বনা প্রদান করেছিল এবং শক্তিশালী করেছিল?
১৪ যোহন ১২:২৭, ২৮ পদ পড়ুন। যোহনের সুসমাচারে সেই তৃতীয় ঘটনাটা নথিভুক্ত রয়েছে, যখন যিহোবা স্বর্গ থেকে কথা বলেছিলেন। যিশু তাঁর মৃত্যুর কয়েক দিন আগে যিরূশালেমে তাঁর শেষ নিস্তারপর্ব উদ্যাপন করতে এসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমার প্রাণ উদ্বিগ্ন হইয়াছে।” তারপর, তিনি প্রার্থনায় বলেছিলেন: “পিতঃ, তোমার নাম মহিমান্বিত কর।” উত্তরে তাঁর পিতা স্বর্গ থেকে বলেছিলেন: “আমি তাহা মহিমান্বিত করিয়াছি, আবার মহিমান্বিত করিব।”
১৫ যিশু উদ্বিগ্ন ছিলেন কারণ তাঁর উপর যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখার গুরুদায়িত্ব ছিল। যিশু জানতেন তাকে নৃশংসভাবে চাবুক মারা হবে এবং নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হবে। (মথি ২৬:৩৮) তবে, এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যিশু তাঁর পিতার নামকে মহিমান্বিত করতে চেয়েছিলেন। যিশুকে ঈশ্বরনিন্দার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল আর তাই তিনি এই ভেবে চিন্তিত ছিলেন, তাঁর মৃত্যু ঈশ্বরের নামের নিন্দা নিয়ে আসবে। নিশ্চিতভাবেই, এই সময়ে যিহোবার কথাগুলো শুনে যিশু কতই-না আশ্বস্ত হয়েছিলেন! তিনি নিশ্চিত থাকতে পারতেন, যিহোবার নাম মহিমান্বিত হবে। তাঁর পিতার কথাগুলো নিশ্চয়ই যিশুকে সান্ত্বনা প্রদান করেছিল এবং তিনি যে-যাতনার মুখোমুখি হতে যাচ্ছিলেন, সেটার জন্য শক্তিশালী করেছিল। যদিও সেই সময়ে একমাত্র যিশুই হয়তো তাঁর পিতার কথাগুলো বুঝতে পেরেছিলেন, তবে যিহোবা নিশ্চিত করেছিলেন যেন তাঁর সেই কথাগুলো আমাদের সবার জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়।—যোহন ১২:২৯, ৩০.
১৬. ঈশ্বরের নামের উপর যে-নিন্দা আসে, কেন আমরা সেটা নিয়ে কখনো কখনো চিন্তিত হতে পারি?
১৬ যিশুর মতো আমরাও হয়তো যিহোবার নামের উপর যে-নিন্দা এসেছে, সেই বিষয়ে চিন্তিত হতে পারি। যিশুর মতো আমরাও হয়তো অবিচারের শিকার হই। অথবা আমরা হয়তো আমাদের বিরুদ্ধে ছড়ানো বিরোধীদের মিথ্যা গল্পগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হই। আমরা হয়তো এই গল্পগুলোর কারণে যিহোবার নাম ও তাঁর সংগঠনের উপর যে-নিন্দা আসে, তা নিয়ে চিন্তা করতে পারি। সেইসময়ে যিহোবার কথাগুলো আমাদের প্রচুর সান্ত্বনা প্রদান করে। আমাদের অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, “সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি, তাহা [আমাদের] হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।” (ফিলি. ৪:৬, ৭) যিহোবা তাঁর নাম মহিমান্বিত করার বিষয়ে কখনো ব্যর্থ হবেন না। শয়তান ও এই জগৎ তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের যে-ক্ষতি করে, সেগুলোর সমস্তই তিনি তাঁর রাজ্যের মাধ্যমে পূরণ করবেন।—গীত. ৯৪:২২, ২৩; যিশা. ৬৫:১৭.
বর্তমানে যিহোবার রব শোনার উপকারিতা
১৭. যিশাইয় ৩০:২১ পদ অনুযায়ী বর্তমানে যিহোবা কীভাবে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন?
১৭ যিহোবা বর্তমানেও আমাদের সঙ্গে কথা বলে চলেছেন। (পড়ুন, যিশাইয় ৩০:২১.) এটা ঠিক যে, আমরা ঈশ্বরকে স্বর্গ থেকে কথা বলতে শুনি না। তবে, তিনি তাঁর লিখিত বাক্য বাইবেল জুগিয়েছেন, যেটির মাধ্যমে তিনি আমাদের নির্দেশনা দেন। এর পাশাপাশি, যিহোবার আত্মার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ‘বিশ্বস্ত গৃহাধ্যক্ষ’ তাঁর দাসদের ক্রমাগত খাদ্য জোগায়। (লূক ১২:৪২) আজ আমরা সাহিত্যাদি, ওয়েবসাইট, ভিডিও আর অডিও প্রকাশনার মাধ্যমে প্রচুর আধ্যাত্মিক খাদ্য লাভ করি।
১৮. কীভাবে ঈশ্বরের বাক্য আপনার বিশ্বাসকে বৃদ্ধি করে এবং আপনাকে সাহস জোগায়?
১৮ আসুন, আমরা যিহোবার বলা সেই কথাগুলো স্মরণে রাখি, যেগুলো তিনি স্বর্গ থেকে তাঁর পুত্রকে বলেছিলেন। বাইবেলে লিপিবদ্ধ ঈশ্বরের নিজের কথাগুলো যেন আমাদের এই আস্থা জোগায়, সমস্ত কিছুই যিহোবার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং তিনি সেই সমস্ত ক্ষতি পূরণ করে দেবেন, যেগুলো শয়তান ও তার মন্দ জগৎ আমাদের উপর নিয়ে আসে। আর আমরা যেন মনোযোগ দিয়ে যিহোবার রব শোনার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই। আমরা যদি এমনটা করি, তা হলে আমরা বর্তমানে যে-সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হই এবং ভবিষ্যতে যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হতে যাচ্ছি, সেগুলো সফলতার সঙ্গে সহ্য করতে পারব। বাইবেল আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়: “ধৈর্য্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে, যেন ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করিয়া প্রতিজ্ঞার ফল প্রাপ্ত হও।”—ইব্রীয় ১০:৩৬.
গান সংখ্যা ২২ “সদাপ্রভু আমার পালক”
a যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন যিহোবা তিন বার স্বর্গ থেকে কথা বলেছিলেন। সেগুলোর মধ্যে এক বার যিহোবা খ্রিস্টের শিষ্যদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন যেন তারা তাঁর পুত্রের কথা শোনে। বর্তমানে, যিহোবা তাঁর লিখিত বাক্য, যার অন্তর্ভুক্ত হল যিশুর বিভিন্ন শিক্ষা ও সেইসঙ্গে তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। এই প্রবন্ধে বিবেচনা করা হবে, কীভাবে আমরা যিহোবা ও যিশুর কথা শোনার মাধ্যমে উপকৃত হই।
b ছবি সম্বন্ধে: একজন প্রাচীন লক্ষ করছেন, একজন পরিচারক দাস কিংডম হল পরিষ্কার করায় সাহায্য করছেন এবং সাহিত্যাদি বিভাগে কাজ করছেন। সেই প্রাচীন আন্তরিকভাবে তার প্রশংসা করছেন।
c ছবি সম্বন্ধে: সিয়েরা লিওনে এক দম্পতি একজন স্থানীয় জেলেকে সভার আমন্ত্রণ পত্র দিচ্ছেন।
d ছবি সম্বন্ধে: আমাদের কাজের উপর সীমা আরোপ করা হয়েছে, এইরকম একটা দেশে সাক্ষিরা একটা বাড়িতে একত্রিত হয়েছে। তারা নিজেদের উপর মনোযোগ আকর্ষণ না করানোর জন্য সাধারণ পোশাক পরে আছেন।