প্রকৃতি কী শিক্ষা দেয়?
“পশুদিগকে জিজ্ঞাসা কর, তাহারা তোমাকে শিক্ষা দিবে; আকাশের পক্ষীগণকে জিজ্ঞাসা কর, তাহারা তোমাকে বলিয়া দিবে; পৃথিবীকে বল, সে তোমাকে শিক্ষা দিবে, সমুদ্রের মৎস্যগণ তোমাকে বলিয়া দিবে।”—ইয়োব ১২:৭, ৮.
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা আক্ষরিকভাবে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ থেকে শিক্ষা লাভ করেছে। তারা নতুন নতুন জিনিস তৈরি করার এবং যে-যন্ত্রপাতিগুলো ইতিমধ্যে রয়েছে, সেগুলোর কাজকে উন্নত করার প্রচেষ্টায় বিভিন্ন প্রাণীর গঠনের নকশা নিয়ে গবেষণা করছে এবং সেগুলো নকল করছে আর এই ক্ষেত্রটা বায়োমিমেটিক্স নামে পরিচিত। নীচের উদাহরণগুলো বিবেচনা করার সময় নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘এই নকশাগুলোর জন্য আসলে কে কৃতিত্ব পাওয়ার যোগ্য?’
তিমির ফ্লিপারগুলো থেকে শেখা
হাম্পব্যাক তিমির কাছ থেকে বিমান নকশাবিদরা কী শিখতে পারে? অনেক কিছু। একটা পূর্ণবয়স্ক হাম্পব্যাক তিমির ওজন হচ্ছে প্রায় ৩০ টন—মালবোঝাই একটা ট্রাকের সমান—আর এর দেহ তুলনামূলকভাবে শক্ত এবং সেই দেহে বড় বড় ডানার মতো দেখতে ফ্লিপার রয়েছে। বারো মিটার লম্বা এই প্রাণী জলের নীচে লক্ষণীয়ভাবে কর্মতৎপর থাকে। উদাহরণস্বরূপ, খাদ্য অন্বেষণের সময় একটা হাম্পব্যাক তিমি কোনো কাঁকড়া বা মাছ শিকার করতে সেটাকে তার নীচে রেখে সেটার ওপর বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকে ও সেইসঙ্গে জলে বুদ্বুদ সৃষ্টি করতে থাকে। ১.৫ মিটারের চেয়েও ছোট ব্যাসের এই বুদ্বুদের জালিকা প্রাণীগুলোকে ওপরের দিকে জড়ো করে। সেই সময়ে তিমি তার সাজানো শিকারকে খপ করে খেয়ে ফেলে।
যে-বিষয়টা বিশেষভাবে গবেষকদের কৌতূহলী করেছে তা হচ্ছে, শক্ত দেহের এই প্রাণীটা বলতে গেলে এত আঁটসাঁট বৃত্তের মধ্যে কীভাবে ঘুরতে পারে। তারা আবিষ্কার করেছে যে, তিমির ফ্লিপারগুলোর আকারের মধ্যেই আসল রহস্যটা শায়িত। ফ্লিপারগুলোর সামনের ধারটা বিমানের ডানার মতো মসৃণ নয় কিন্তু খাঁজকাটা থাকে আর পর পর উঁচু হয়ে থাকা সেই অংশ বা বাম্পগুলোকে টিউবারকল বলা হয়।
তিমি যখন জলের মধ্যে দিয়ে দ্রুত চলাফেরা করে, তখন এই টিউবারকলগুলো ঊর্ধ্বমুখী চাপকে (লিফট্কে) বৃদ্ধি করে ও জলের চাপকে (ড্রাগকে) কমিয়ে দেয়। কীভাবে? প্রাকৃতিক ইতিহাস (ইংরেজি) পত্রিকা ব্যাখ্যা করে যে, টিউবারকলগুলোর জন্য জল ফ্লিপারের ওপর দিয়ে ধীরভাবে চক্রাকারে প্রবাহিত হয়, এমনকি তখনও যখন তিমি খুবই খাড়াভাবে ওপরের দিকে উঠতে থাকে। ফ্লিপারের সামনের ধারটা যদি মসৃণ হতো, তা হলে তিমি ওপরের দিকে উঠতে থাকা অবস্থায় এত ছোট বৃত্তের মধ্যে ঘুরতে পারত না কারণ জল ফ্লিপারের পিছনে সবেগে ঘুরতে থাকত এবং ঊর্ধ্বমুখী চাপ অর্থাৎ লিফট্ সৃষ্টি করত না।
কীভাবে এই আবিষ্কারকে ব্যবহারিকভাবে প্রয়োগ করা যায়? প্রমাণ থেকে দেখা যায়, এই নকশার ওপর ভিত্তি করে তৈরি বিমানের ডানাগুলোর জন্য অল্প ফ্ল্যাপ (বিমানের ডানার যে-অংশকে উড়ন্ত অবস্থায় উঁচু করে বিমানের ঊর্ধ্বগতিমুখ ও গতিবেগ বদলানো হয়) অথবা অন্যান্য যন্ত্রপাতির প্রয়োজন, যেগুলো বায়ুপ্রবাহের দিক পালটায়। এই ধরনের ডানাগুলো নিরাপদ এবং এগুলোর দেখাশোনা ও মেরামত করাও সহজ। জৈববলবিদ্যা বিশেষজ্ঞ জন লং মনে করেন যে, শীঘ্রই কোনোদিন “আমরা হয়তো দেখব যে, প্রতিটা জেট-ইঞ্জিনচালিত বিমানে হাম্পব্যাক তিমির ফ্লিপারগুলোর মতো বাম্প রয়েছে।”
গাংচিলের ডানাকে নকল করা
অবশ্য, বিমানের ডানাগুলো ইতিমধ্যেই পাখির ডানাকে নকল করে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু, সম্প্রতি প্রকৌশলীরা নকল করার এই ক্ষেত্রে এক লক্ষণীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। নিউ সায়েনটিস্ট পত্রিকা রিপোর্ট করে, ‘গাংচিলের বাতাসে ভেসে থাকা, শূন্যে ঝাঁপ দেওয়া এবং দ্রুত বেগে ওপরের দিকে ওঠার ক্ষমতা দেখে ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা পাইলটবিহীন রিমোট-কন্ট্রোল চালিত এক বিমান নির্মাণ করেছে।’
গাংচিলগুলো কনুই ও কাঁধের সংযোগস্থলে এদের ডানা বাঁকিয়ে বাতাসে চমৎকার ডিগবাজি খায়। এই নমনীয় ডানার নকশাকে নকল করে “২৪-ইঞ্চি লম্বা পাইলটবিহীন একটা বিমান এর ডানাগুলোকে গতিশীল করার জন্য, ধাতুর তৈরি সারিবদ্ধ রডগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে একটা ছোট্ট মোটর ব্যবহার করে থাকে,” সেই পত্রিকা বলে। সুচতুরভাবে নকশাকৃত এই ডানাগুলো ছোট্ট বিমানকে দুটো বিল্ডিংয়ের মধ্যে ভেসে বেড়াতে ও দ্রুত উঁচু থেকে নিচুতে নেমে আসতে সাহায্য করে। যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী এই ধরনের ক্ষমতাশালী বিমান তৈরি করতে খুবই আগ্রহী, যেগুলোকে যেখানে-সেখানে ঘোরানো যায় আর এর ফলে সেগুলোকে বড় বড় শহরগুলোতে রাসায়নিক বা জৈব অস্ত্র খুঁজে বের করতে ব্যবহার করা যাবে।
টিকটিকির পায়ের নকশাকে নকল করা
স্থলচর প্রাণীদের কাছ থেকেও মানুষ অনেক কিছু শিখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, টিকটিকি নামে পরিচিত এই ছোট্ট সরীসৃপের দেওয়াল বেয়ে ওঠার ও ঘরের ছাদের দেওয়ালে উলটোভাবে ঝুলে থাকার ক্ষমতা রয়েছে। এমনকি বাইবেলের সময়েও এই প্রাণী তার এই বিস্ময়কর ক্ষমতার জন্য পরিচিত ছিল। (হিতোপদেশ ৩০:২৮) মহাকর্ষ শক্তিকে তুচ্ছ করার বিষয়ে টিকটিকির এই ক্ষমতার রহস্যটা কী?
টিকটিকির পা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লোমগুলোর দ্বারা আবৃত থাকায় এরা এমনকি কাচের মতো মসৃণ তলের ওপরও লেগে থাকতে পারে। পা থেকে কোনোরকম আঠালো পদার্থ ক্ষরিত হয় না। বরং, সেগুলো অতি ক্ষুদ্র আণবিক শক্তিকে কাজে লাগায়। টিকটিকির পায়ের তলা ও দেওয়ালে বিদ্যমান অণুগুলো ভ্যানডার ওয়ালস নামে পরিচিত খুবই দুর্বল আকর্ষণ শক্তির কারণে একে অন্যের সঙ্গে লেগে থাকে। সাধারণত, মহাকর্ষ শক্তি এই শক্তিগুলোকে সহজেই দমন করে, যেকারণে মানুষ দেওয়ালে শুধু হাত রেখে সেটা বেয়ে উঠতে পারে না। কিন্তু, টিকটিকির পায়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লোম দেওয়ালের সংস্পর্শে এসে সেই জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। টিকটিকির পায়ের তলায় অগণিত লোমে বিদ্যমান ভ্যানডার ওয়ালস শক্তিকে গুণ করলে এগুলো অতি ক্ষুদ্র টিকটিকির ওজনকে ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট আকর্ষণ সৃষ্টি করে।
কীভাবে এই আবিষ্কারের সদ্ব্যবহার করা যেতে পারে? টিকটিকির পা-কে নকল করে তৈরি সিনথেটিক দ্রব্যগুলো ভেলক্রোর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে—ভেলক্রো হচ্ছে আরেকটা জিনিস, যেটাও প্রকৃতি থেকে নকল করা হয়েছে।a দি ইকনমিস্ট পত্রিকা একজন গবেষকের কথা উদ্ধৃতি করে, যিনি বলেছিলেন, “চিকিৎসায় যেখানে রাসায়নিক আঠা ব্যবহার করা যায় না,” সেই ক্ষেত্রে “টিকটিকির টেপ” ব্যবহার করা যেতে পারে।
কে কৃতিত্ব পাওয়ার যোগ্য?
এর মধ্যে, ন্যাশনাল আ্যরোনটিকস্ আ্যন্ড স্পেস আ্যডমিনিস্ট্রেশন বহু পা-বিশিষ্ট একটা রোবোট উদ্ভাবন করছে, যেটা একটা বৃশ্চিকের মতো হাঁটে আর ফিনল্যান্ডের প্রকৌশলীরা ইতিমধ্যেই ছয় পা-বিশিষ্ট একটা ট্র্যাক্টর উদ্ভাবন করেছে, যেটা বিভিন্ন বাধা, সেগুলো যত উঁচুই হোক না কেন সেগুলো পেরোতে পারে, যেভাবে একটা বড় পোকা পেরিয়ে থাকে। পাইন গাছের ফল যেভাবে খোলে ও বন্ধ হয়, সেটাকে নকল করে অন্যান্য গবেষক ছোট ছোট ফ্ল্যাপযুক্ত এক ধরনের কাপড় তৈরি করেছে। এক গাড়ি নির্মাণ কোম্পানি এমন একটা মোটরগাড়ি তৈরি করছে, যেটা বক্সফিশের নকশাকে নকল করে থাকে, যেটার শরীর লক্ষণীয়ভাবে পিচ্ছল। আর অন্য গবেষকরা শরীরের ওপরের অংশকে ঢাকার জন্য হালকা কিন্তু মজবুত বর্ম তৈরি করার উদ্দেশ্যে শামুকের ঝাঁকুনি কমানোর বৈশিষ্ট্য নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছে।
প্রকৃতি থেকে এত নতুন নতুন চমৎকার ধারণা পাওয়া গিয়েছে যে, গবেষকরা একটা উপাত্ত-ভাণ্ডার (ডাটাবেস) তৈরি করেছে, যেখানে ইতিমধ্যেই অনেক অনেক জীববিদ্যা সংক্রান্ত ভিন্ন পদ্ধতি তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা “তাদের নকশায় কোনো সমস্যা হলে এর প্রাকৃতিক সমাধান” খুঁজে বের করার জন্য এই উপাত্ত-ভাণ্ডারে অনুসন্ধান করে থাকে, দি ইকনমিস্ট পত্রিকা বলে। এই উপাত্ত-ভাণ্ডারে সঞ্চিত প্রাকৃতিক পদ্ধতিগুলো “জৈব কৃতিস্বত্ব” নামে পরিচিত। সাধারণত একজন কৃতিস্বত্বাধিকারী হচ্ছে সেই ব্যক্তি বা কোম্পানি, যিনি বা যেটা কোনো নতুন ধারণা বা যন্ত্রকে আইনগতভাবে নিবন্ধীকৃত করে। এই জৈব কৃতিস্বত্ব উপাত্ত-ভাণ্ডার নিয়ে আলোচনা করার সময়, দি ইকনমিস্ট পত্রিকা বলে: “বায়োমিমেটিক্ কৌশলকে ‘জৈব কৃতিস্বত্ব’ বলার দ্বারা গবেষকরা এই বিষয়ের ওপর জোর দিচ্ছে যে, আসলে প্রকৃতিই হচ্ছে কৃতিস্বত্বাধিকারী।”
প্রকৃতি কীভাবে এই ধরনের অত্যন্ত চমৎকার ধারণাগুলো অর্জন করেছে? অনেক গবেষক প্রকৃতিতে বিদ্যমান সৃজনশীল নকশাগুলোর জন্য লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনমূলক পরীক্ষানিরীক্ষাকে কৃতিত্ব দিয়ে থাকে। কিন্তু, আরও অন্যান্য গবেষক এক ভিন্ন উপসংহারে পৌঁছেছে। অণুজীবতত্ত্ববিদ মাইকেল বিহি ২০০৫ সালে দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় লিখেছিলেন: “[প্রকৃতিতে] স্পষ্টভাবে বিদ্যমান নকশা, এক সাধারণ দৃঢ়প্রত্যয়জনক যুক্তিকে তুলে ধরে: যদি সেটা হাঁসের মতো দেখায়, হাঁসের মতো চলে ও ডাকতে পারে আর সেটাকে প্রমাণ করার জন্য যদি যথেষ্ট প্রমাণ না থাকে, তা হলে সেটাকে হাঁস বলার ভিত্তি আমাদের কাছে রয়েছে।” তিনি কোন উপসংহারে এসেছিলেন? “নকশাটা যদি কোনোকিছুর ওপর স্পষ্ট বোঝা যায়, তা হলে একজনের সেটাকে উপেক্ষা করা উচিত নয়।”
কোনো সন্দেহ নেই যে, যে-প্রকৌশলী এক নিরাপদ, বেশি কার্যকরী বিমানের ডানার নকশা করেন, তিনি তার নকশার জন্য কৃতিত্ব পাওয়ার যোগ্য। একইভাবে, যে-উদ্ভাবক বিবিধ ব্যবহারোপযোগী ব্যান্ডেজ—বা অধিকতর আরামদায়ক কাপড় কিংবা আরও কার্যকর মোটরগাড়ি—উদ্ভাবন করেন, তিনি সেই নকশার জন্য কৃতিত্ব পাওয়ার যোগ্য। বস্তুতপক্ষে, যে-উৎপাদনকারী অন্য কারো নকশাকে নকল করেন কিন্তু সেই নকশাবিদকে অস্বীকার করেন বা তাকে কৃতিত্ব দিতে ব্যর্থ হন, তা হলে সেই উৎপাদনকারীকে হয়তো একজন অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হতে পারে।
তা হলে, যে-উচ্চ প্রশিক্ষিত গবেষকরা প্রকৌশলবিদ্যার জটিল সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য প্রকৃতিতে বিদ্যমান পদ্ধতিগুলোকে নকল করে থাকে এবং এই সমস্ত পদ্ধতির উদ্ভাবনের মূল হিসেবে মেধাহীন বিবর্তনকে গণ্য করে থাকে, এই বিষয়টা কি আপনার কাছে যুক্তিসংগত বলে মনে হয়? যদি পদ্ধতিগুলো নকল করতেই একজন বুদ্ধিমান নকশাবিদের প্রয়োজন হয়, তা হলে সেগুলোর মূল নকশা সম্বন্ধে কী বলা যায়? প্রকৃতপক্ষে কে বেশি কৃতিত্ব পাওয়ার যোগ্য, সেই শিল্পী নাকি সেই ছাত্র, যিনি ওই শিল্পীর পদ্ধতিগুলোকে নকল করেন?
এক যুক্তিসংগত উপসংহার
প্রকৃতিতে বিদ্যমান নকশার প্রমাণগুলো পুনরালোচনা করার পর, অনেক চিন্তাশীল ব্যক্তি গীতরচকের অনুভূতিকে প্রতিধ্বনিত করে থাকে, যিনি লিখেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, তোমার নির্ম্মিত বস্তু কেমন বহুবিধ! তুমি প্রজ্ঞা দ্বারা সে সমস্ত নির্ম্মাণ করিয়াছ; পৃথিবী তোমার সম্পত্তিতে পরিপূর্ণ।” (গীতসংহিতা ১০৪:২৪) বাইবেল লেখক পৌলও অনুরূপ উপসংহারে পৌঁছেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “ফলতঃ [ঈশ্বরের] অদৃশ্য গুণ, অর্থাৎ তাঁহার অনন্ত পরাক্রম ও ঈশ্বরত্ব, জগতের সৃষ্টিকাল অবধি তাঁহার বিবিধ কার্য্যে বোধগম্য হইয়া দৃষ্ট হইতেছে।”—রোমীয় ১:১৯, ২০.
কিন্তু, অনেক সৎহৃদয়ের ব্যক্তি যারা বাইবেলকে সম্মান করে ও ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, তারা তর্ক করে বলে যে, ঈশ্বর হয়তো প্রকৃতির বিস্ময়কর বিষয়গুলোকে সৃষ্টি করার জন্য বিবর্তনকে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু, এই বিষয়ে বাইবেল কী শিক্ষা দেয়? (g ৯/০৬)
[পাদটীকা]
a ভেলক্রো হচ্ছে চোরকাঁটা গাছ থেকে প্রাপ্ত বীজের নকশার ওপর ভিত্তি করে তৈরি এক বস্তু, যেটা হুক ও আঠার মতো কাজ করে।
[৫ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
প্রকৃতি এত নতুন নতুন ধারণা কোথা থেকে পেল?
[৬ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
কে প্রকৃতির কৃতিস্বত্বাধিকারী?
[৭ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]
যদি পদ্ধতিগুলো নকল করতেই একজন বুদ্ধিমান নকশাবিদের প্রয়োজন হয়, তা হলে সেগুলোর মূল নকশা সম্বন্ধে কী বলা যায়?
একটা টিকটিকির পায়ে কখনো ময়লা লাগে না, কখনো এর পায়ের ছাপ পড়ে না, টেফলন ছাড়া যেকোনো জিনিসের সঙ্গে লেগে থাকতে এবং সহজেই এর পা লেগে থাকতে ও ছেড়ে যেতে পারে। গবেষকরা সেগুলোকে নকল করতে চেষ্টা করছে
যেখানে-সেখানে সহজেই ঘোরানো যায় এমন বিমান গাংচিলের ডানাকে নকল করে
বক্সফিশের লক্ষণীয় পিচ্ছল নকশা, একটা গাড়ি নির্মাণের ধারণাকে উদ্বুদ্ধ করেছে
[সৌজন্যে]
বিমান: Kristen Bartlett/ University of Florida; টিকটিকির পা: Breck P. Kent; বক্সফিশ এবং গাড়ি: Mercedes-Benz USA
[৮ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]
সহজাতভাবে বুদ্ধিমান নাবিকরা
অনেক প্রাণী পৃথিবী গ্রহের চারিদিকে যেভাবে চলাফেরা করে, তার থেকে বোঝা যায় যে, তারা সহজাতভাবে বুদ্ধিমান। দুটো উদাহরণ বিবেচনা করুন।
◼ পিঁপড়াদের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ খাদ্যের অন্বেষণে ঘুরে বেড়ানো পিঁপড়ারা কীভাবে আবার তাদের বাসায় ফিরে যাওয়ার পথ খুঁজে পায়? যুক্তরাজ্যের গবেষকরা আবিষ্কার করেছে যে, পিঁপড়ারা পথে চিহ্ন রেখে যাওয়ার জন্য তাদের শরীর থেকে ফেরোমন নিঃসৃত করা ছাড়াও কিছু পিঁপড়া তাদের বাসায় ফিরে আসার পথ তৈরি করতে জ্যামিতিকে কাজে লাগায়। উদাহরণস্বরূপ, ক্ষুদে পিঁপড়ারা “বাসা থেকেই একটা পথ তৈরি করে, যেটা ৫০ থেকে ৬০ ডিগ্রি কোণে বেঁকে যায়,” নিউ সায়েনটিস্ট পত্রিকা বলে। এই নকশা সম্বন্ধে উল্লেখযোগ্য বিষয়টা কী? একটা পিঁপড়া যখন বাসায় ফিরতে থাকে ও পথের বেঁকে যাওয়া অংশটাতে গিয়ে পৌঁছায়, তখন সহজাতভাবেই এটা সেই পথটা নেয়, যেটা সামান্যভাবে বেঁকে গিয়েছে আর পিঁপড়া নিশ্চিতভাবে সেই পথে গিয়ে তার বাসায় পৌঁছায়। “বেঁকে যাওয়া পথগুলোর জ্যামিতিক নকশা,” সেই প্রবন্ধটি বলে, “পিঁপড়াগুলোকে পরস্পরচ্ছেদী পথের মধ্যে দিয়ে অবাধে হেঁটে যাওয়ায় সুবিধা করে দেয়, বিশেষ করে পিঁপড়াগুলো যখন দুই দিক থেকে এগুলোর ওপর দিয়ে হেঁটে আসে এবং এর ফলে পিঁপড়ার শক্তি নষ্ট হয় না, যা ভুল পথে যাওয়ার দ্বারা হয়ে থাকে।”
◼ পাখি দিকনির্ণয় করে অনেক পাখি দীর্ঘপথ ও সব ধরনের আবহাওয়ার মধ্যে দিয়ে ঠিক ঠিক তাদের পথ খুঁজে বের করে উড়ে যায়। কীভাবে? গবেষকরা আবিষ্কার করেছে যে, পাখিরা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র অনুভব করতে পারে। কিন্তু, পৃথিবীর “চৌম্বক ক্ষেত্র বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নরকম এবং সবসময়ই উত্তর দিকমুখী হয় না,” সায়েন্স পত্রিকা বলে। কী পরিযায়ী পাখিদের ভুল দিকে যাওয়াকে প্রতিরোধ করে? পাখিরা মূলত তাদের ইন্দ্রিয়কে দিক নির্দেশনার জন্য প্রতিদিন বিকেলে সূর্যাস্তের সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়। যেহেতু সূর্যাস্তের অবস্থান অক্ষাংশ ও ঋতুর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়, তাই গবেষকরা মনে করে যে, এই পাখিরা নিশ্চয়ই “তাদের শরীরে বিদ্যমান ঘড়ি, যা তাদেরকে বর্তমান সময়টা জানায়, সেটার” সাহায্যে পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, সায়েন্স পত্রিকা বলে।
কে পিঁপড়াকে জ্যামিতি বোঝার ক্ষমতা দিয়েছে? কে পাখিদের দিক নির্দেশনাকারী যন্ত্র, ঘড়ি এবং এমন মস্তিষ্ক দিয়েছে, যা এই যন্ত্রগুলো যে-তথ্য দেয়, সেটা বোঝার ক্ষমতা প্রদান করে? মেধাহীন বিবর্তনবাদ? নাকি একজন বুদ্ধিমান সৃষ্টিকর্তা?
[সৌজন্যে]
© E.J.H. Robinson ২০০৪