অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩৫
গান ১২৩ আমরা যিহোবার ও তাঁর সংগঠনের বশীভূত থাকি
মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে এমন ব্যক্তিদের প্রাচীনেরা কীভাবে সাহায্য করতে পারে?
“অনুতপ্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই এমন ৯৯ জন ধার্মিক ব্যক্তির জন্য স্বর্গে যতটা আনন্দ হয়, এক জন পাপী অনুতপ্ত হলে স্বর্গে তার চেয়ে আরও বেশি আনন্দ হয়।”—লূক ১৫:৭.
আমরা কী শিখব?
কেন কাউকে কাউকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়? আর কীভাবে প্রাচীনেরা সেই ব্যক্তিদের অনুতপ্ত হওয়ার এবং আবার যিহোবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করতে পারে?
১-২. (ক) যারা জেনে-শুনে পাপ করেই চলে, তাদের যিহোবা কীভাবে দেখেন? (খ) পাপী ব্যক্তিরা কী করুক বলে যিহোবা চান?
যিহোবা সমস্ত ধরনের আচরণ মেনে নেন না; তিনি পাপকে ঘৃণা করেন। (গীত. ৫:৪-৬) যিহোবা চান যেন আমরা তাঁর বাক্যে দেওয়া আজ্ঞাগুলো পালন করি। অবশ্য, আমরা যেহেতু নিখুঁত নই, তাই যিহোবা আমাদের কাছ থেকে এইরকমটা আশা করেন না যে, আমরা কখনোই ভুল করব না। (গীত. ১৩০:৩, ৪) তবে, তিনি সেই ব্যক্তিদের প্রশ্রয় দেন না, যাদের তাঁর প্রতি “ভক্তি নেই” এবং যারা “ঈশ্বরের মহাদয়াকে নির্লজ্জভাবে পাপ কাজ করার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে।” (যিহূদা ৪) তাই, বাইবেল জানায়, ঈশ্বরের আরমাগিদোনের যুদ্ধের সময় ‘ঈশ্বরভক্তিহীন লোকদের ধ্বংস’ করে দেওয়া হবে।—২ পিতর ৩:৭; প্রকা. ১৬:১৬.
২ কিন্তু, যিহোবা চান না কেউ ধ্বংস হয়ে যাক। এই ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলোতে আমরা যেমন আলোচনা করেছি, বাইবেলে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, যিহোবা চান যেন “সকলে অনুতপ্ত হয়।” (২ পিতর ৩:৯) খ্রিস্টান প্রাচীনেরা যিহোবাকে অনুকরণ করে সেইসময় ধৈর্য দেখায়, যখন তারা কোনো পাপী ব্যক্তিকে অনুতপ্ত হওয়ার এবং যিহোবার সঙ্গে আবার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করার চেষ্টা করে। তবে, সমস্ত পাপী ব্যক্তি যে অনুতপ্ত হয় এমন নয়। (যিশা. ৬:৯) প্রাচীনেরা তাদের বার বার অনুতপ্ত হওয়ার জন্য সাহায্য করা সত্ত্বেও, কেউ কেউ পাপ করেই চলে। এইরকম ক্ষেত্রে প্রাচীনেরা কী করতে পারে?
“সেই দুষ্ট ব্যক্তিকে বের করে দাও”
৩. (ক) একজন পাপী ব্যক্তি যখন অনুতপ্ত হতে চান না, তখন বাইবেল কী করতে বলে? (খ) কেউ যখন অনুতপ্ত হতে চান না, তখন কেন আমরা বলতে পারি, মণ্ডলী থেকে তাকে বের করে দেওয়ার বিষয়টা তিনি নিজেই বেছে নিয়েছেন?
৩ একজন পাপী ব্যক্তি যখন অনুতপ্ত হন না, তখন প্রাচীনদের ১ করিন্থীয় ৫:১৩ পদে দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। সেখানে বলা আছে: “তোমাদের মধ্য থেকে সেই দুষ্ট ব্যক্তিকে বের করে দাও।” এক অর্থে বলা যায়, সেই ব্যক্তি নিজেই তার পরিণতি বেছে নিয়েছেন; তিনি যা বোনেন, তা-ই কাটেন। (গালা. ৬:৭) কেন আমরা তা বলতে পারি? কারণ প্রাচীনেরা বার বার তাকে অনুতপ্ত হওয়ার জন্য সাহায্য করা সত্ত্বেও, তিনি তাতে সাড়া দেননি। (২ রাজা. ১৭:১২-১৫) তার কাজের মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন, তিনি যিহোবার মান অনুযায়ী চলতে চান না।—দ্বিতীয়. ৩০:১৯, ২০.
৪. একজন ব্যক্তি যখন অনুতপ্ত হন না এবং তাকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়, তখন কেন মণ্ডলীতে এই বিষয়ে ঘোষণা করা হয়?
৪ একজন ব্যক্তি যখন অনুতপ্ত হন না এবং তাকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়, তখন মণ্ডলীতে এই ঘোষণা করা হয় যে, তিনি এখন আর একজন যিহোবার সাক্ষি নন।a এই ঘোষণার উদ্দেশ্য সেই ব্যক্তিকে লজ্জায় ফেলা নয়। বরং, এর উদ্দেশ্য হল, মণ্ডলী যেন এই শাস্ত্রীয় নির্দেশনা মেনে চলতে পারে: “তোমরা এমন ব্যক্তির সঙ্গে মেলামশা করা বন্ধ করো, এমনকী তার সঙ্গে খাওয়া-দাওয়াও কোরো না।” (১ করি. ৫:৯-১১) এই নির্দেশনার পিছনে উত্তম কারণ রয়েছে। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “একটুখানি খামির ময়দার পুরো তালকে ফাঁপিয়ে তোলে।” (১ করি. ৫:৬) তাকে যদি মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া না হয়, তা হলে অন্যেরা হয়তো মনে করতে পারে যে, তাদের যিহোবার ধার্মিক মান অনুযায়ী চলার প্রয়োজন নেই।—হিতো. ১৩:২০; ১ করি. ১৫:৩৩.
৫. যে-ভাই বা বোনকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, তাকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত এবং কেন?
৫ যে-ভাই বা বোনকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, তাকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত? যদিও আমরা তার সঙ্গে মেলামেশা করি না, তবে আমরা তার ব্যাপারে এইরকম চিন্তা করি না যে, তার কোনো আশাই নেই। বরং, আমরা তাকে একজন হারানো মেষ হিসেবে দেখি। একটা মেষ যখন পাল থেকে দূরে সরে যায়, তখন সেটা আবার ফিরে আসতে পারে। মনে রাখবেন, সেই হারানো মেষ নিজেকে যিহোবার কাছে উৎসর্গ করেছেন। দুঃখের বিষয় হল, তিনি এখন আর সেই উৎসর্গ অনুযায়ী জীবনযাপন করছেন না আর তাই তিনি বিপদজনক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। (যিহি. ১৮:৩১) যেহেতু যিহোবা এখনও করুণা দেখিয়ে চলছেন, তাই আমরা এই আশা রাখি যে, সেই ব্যক্তি পরিবর্তন হবেন। প্রাচীনেরা কীভাবে সেই ব্যক্তির প্রতি একইরকম মনোভাব দেখাতে পারে, যাকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে?
মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে এমন ব্যক্তিদের প্রাচীনেরা কীভাবে সাহায্য করে?
৬. যাকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, তাকে সাহায্য করার জন্য প্রাচীনেরা কী করবে?
৬ একজন ব্যক্তিকে যখন মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়, তখন প্রাচীনেরা কি যিহোবার কাছে ফিরে আসার ব্যাপারে তাকে সাহায্য করা বন্ধ করে দেয়? কখনোই না! সেই ব্যক্তিকে যখন বলা হয় যে, তাকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হবে, তখন প্রাচীনদের কমিটি তাকে এও জানাবে যে, মণ্ডলীতে ফিরে আসার জন্য তাকে কী কী করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রাচীনেরা বলে থাকে যে, আবার কয়েক মাস পর তারা তার সঙ্গে কথা বলবে। তারা এটা দেখবে যে, তিনি তার চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেছেন কি না। যদি সেই ব্যক্তি প্রাচীনদের সঙ্গে আবার কথা বলতে চান, তা হলে প্রাচীনেরা পরের বার কথা বলার সময় তাকে অনুতপ্ত হওয়ার এবং ফিরে আসার জন্য উৎসাহিত করবে। তিনি যদি সেই সময়ও অনুতপ্ত না হন, তা হলে প্রাচীনেরা ভবিষ্যতে আবার তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করবে এবং তাকে অনুতপ্ত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করবে।
৭. যে-ব্যক্তিকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে কথা বলার সময় প্রাচীনেরা কীভাবে যিহোবাকে অনুকরণ করে সমবেদনা দেখিয়ে থাকে? (যিরমিয় ৩:১২)
৭ যে-ব্যক্তিকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে কথা বলার সময় প্রাচীনেরা যিহোবাকে অনুকরণ করে সমবেদনা দেখিয়ে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, অতীতে যিহোবা তাঁর লোকদের অর্থাৎ ইজরায়েল জাতির বিষয়ে এইরকম মনে করে অপেক্ষা করেননি যে, তারা প্রথমে অনুতপ্ত হবে আর এরপর তিনি তাদের সাহায্য করবেন। তারা অনুতপ্ত হওয়ার কোনো মনোভাব না দেখানো সত্ত্বেও, তিনি তাঁর ভাববাদীদের বার বার তাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন। এই ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলোর দ্বিতীয় প্রবন্ধে যেমন উল্লেখ করা হয়েছিল, যিহোবা ভাববাদী হোশেয়কে বলেছিলেন, তিনি যেন তার সেই স্ত্রীকে ক্ষমা করেন এবং গ্রহণ করে নেন, যিনি তখনও পাপ করে চলছিলেন। এভাবে যিহোবা তাঁর লোকদের এই শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, তিনি অত্যন্ত সমবেদনাময় ঈশ্বর। (হোশেয় ৩:১; মালাখি ৩:৭) যিহোবার মতো খ্রিস্টান প্রাচীনেরা সত্যিই চায় যেন একজন পাপী ব্যক্তি ফিরে আসেন; তারা এমন কিছু করে না, যাতে সেই ব্যক্তির পক্ষে ফিরে আসা কঠিন হয়ে পড়ে।—পড়ুন, যিরমিয় ৩:১২.
৮. যিশুর হারানো ছেলের গল্প কীভাবে যিহোবার সমবেদনা ও করুণা সম্বন্ধে আমাদের আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে? (লূক ১৫:৭)
৮ এই ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলোর দ্বিতীয় প্রবন্ধে আমরা হারানো ছেলের গল্প নিয়ে আলোচনা করেছি। সেই গল্পে বাবা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, তা মনে করে দেখুন। বাবা যখন দূর থেকে তার ছেলেকে বাড়ি ফিরে আসতে দেখেছিলেন, তখন তিনি ‘দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন এবং কোমলভাবে চুম্বন করেছিলেন।’ (লূক ১৫:২০) তিনি এইরকম মনে করে অপেক্ষা করেননি যে, তার ছেলে প্রথমে ক্ষমা চাইবে। বরং, তিনি নিজে থেকে তার ছেলের কাছে গিয়েছিলেন, কারণ তিনি তাকে অনেক ভালোবাসতেন। প্রাচীনেরাও সেই ব্যক্তিদের প্রতি একই মনোভাব দেখানোর চেষ্টা করে, যারা যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছে। তারা চায় যেন এই মেষেরা যিহোবার কাছে ফিরে আসে। (লূক ১৫:২২-২৪, ৩২) একজন পাপী যখন ফিরে আসেন, তখন স্বর্গে অনেক আনন্দ হয় আর একইভাবে পৃথিবীতেও আনন্দ হয়!—পড়ুন, লূক ১৫:৭.
৯. যারা পাপ করেছে, তারা কী করুক বলে যিহোবা চান?
৯ এই পর্যন্ত আমরা যা আলোচনা করেছি, সেটা থেকে বোঝা যায় যে, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের গ্রহণ করেন না, যারা অনুতপ্ত হয় না। তবে, তিনি তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করেন। তিনি চান যেন তারা ফিরে আসে। অনুতপ্ত ব্যক্তিদের প্রতি যিহোবার অনুভূতি কেমন, তা হোশেয় ১৪:৪ পদে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা আছে: “আমি তাহাদের বিপথগমনের প্রতীকার করিব, আমি স্বেচ্ছায় তাহাদিগকে প্রেম করিব; কেননা আমার ক্রোধ তাহা হইতে ফিরিয়া গিয়াছে।” যিহোবার এইরকম অনুভূতি জানার মাধ্যমে প্রাচীনেরা সত্যিই উৎসাহ লাভ করে। যিহোবাকে অনুকরণ করে তারা পাপী ব্যক্তিদের মধ্যে এমন মনোভাব খোঁজার চেষ্টা করে, যা দেখে বোঝা যায়, তারা অনুতপ্ত হয়েছে। আর যিহোবার এই অনুভূতি সেই ব্যক্তিদেরও দেরি না করে ফিরে আসার জন্য উৎসাহ দেয়, যারা যিহোবাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।
১০-১১. প্রাচীনেরা কীভাবে সেই ব্যক্তিদের সাহায্য করার চেষ্টা করবে, যাদের অতীতে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল?
১০ সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে কী বলা যায়, যাদের অতীতে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল, হতে পারে অনেক বছর আগে? তারা হয়তো এখন আর সেই পাপ করে চলছে না, যেটার জন্য তাদের মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের হয়তো মনেও নেই যে, কেন তাদের বের করে দেওয়া হয়েছিল। যাই হোক, প্রাচীনেরা এই ধরনের ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার এবং তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করবে। সেই সময় এমনকী প্রাচীনেরা তাদের সঙ্গে প্রার্থনা করার বিষয়ে বলবে এবং মণ্ডলীতে ফিরে আসার জন্য তাদের উৎসাহিত করবে। অবশ্য, কোনো ব্যক্তি যদি মণ্ডলী থেকে অনেক বছর ধরে দূরে থাকেন, তা হলে যিহোবা এবং বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে তাকে আবার জানতে হবে। তিনি যদি বলেন, তিনি মণ্ডলীতে ফিরে আসতে চান, তা হলে প্রাচীনেরা তার সঙ্গে অধ্যয়ন করার ব্যবস্থা করবে, এমনকী তাকে যদি সেই সময় পুনর্বহাল করা না-ও হয়। এই ধরনের সমস্ত ক্ষেত্রে প্রাচীনেরাই বাইবেল অধ্যয়নের ব্যবস্থা করবে।
১১ প্রাচীনেরা যিহোবার সমবেদনাকে অনুকরণ করে এমন সমস্ত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে এবং তাদের ফিরে আসার জন্য উৎসাহিত করবে, যারা যিহোবাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। একজন পাপী ব্যক্তি যখন অনুতপ্ত হওয়ার মনোভাব দেখান এবং তার ভুল চিন্তাভাবনা ও কাজ পরিবর্তন করেন, তখন দেরি না করে তাকে মণ্ডলীতে পুনর্বহাল করা যেতে পারে।—২ করি. ২:৬-৮.
১২. (ক) কোন পরিস্থিতিগুলোতে প্রাচীনদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে? (খ) কেন আমাদের এইরকম মনে করা উচিত নয় যে, কোনো কোনো পাপীর পক্ষে যিহোবার করুণা লাভ করা অসম্ভব? (পাদটীকাও দেখুন।)
১২ কোনো কোনো ক্ষেত্রে, কাউকে পুনর্বহাল করার আগে প্রাচীনদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, হতে পারে, কোনো ব্যক্তি শিশু নিপীড়ন করেছিলেন অথবা ধর্মভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিলেন কিংবা ষড়যন্ত্র করে বিয়ে ভেঙে দিয়েছিলেন। এইরকম ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি সত্যিই অনুতপ্ত হয়েছেন কি না, সেই ব্যাপারে প্রাচীনদের নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। (মালাখি ২:১৪; ২ তীম. ৩:৬) কারণ তাদের দায়িত্ব হল, পালকে সুরক্ষিত রাখা। একইসঙ্গে, প্রাচীনেরা এও মনে রাখে যে, কোনো পাপী ব্যক্তি যদি সত্যিই অনুতপ্ত হন এবং তার ভুল চিন্তাভাবনা ও কাজ বন্ধ করেন, তা হলে যিহোবা তাকে গ্রহণ করবেন। এটা ঠিক যে, প্রাচীনদের এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে, যে-ব্যক্তি অন্যদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন, তিনি সত্যিই অনুতপ্ত হয়েছেন কি না, তবে তাদের কখনো এইরকম মনে করা উচিত নয় যে, এই ধরনের ব্যক্তি আর যিহোবার করুণা লাভ করতে পারবেন না।b—১ পিতর ২:১০.
মণ্ডলী কী করতে পারে?
১৩. যে-ব্যক্তিকে তিরস্কার করা হয়েছে এবং যে-ব্যক্তিকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, এই দু-জন ব্যক্তির সঙ্গে আচরণ করার ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য রয়েছে?
১৩ আগের প্রবন্ধে যেমনটা আলোচনা করা হয়েছে, কখনো কখনো মণ্ডলীতে কাউকে তিরস্কার করার বিষয়ে ঘোষণা করা হয়। এইরকম ক্ষেত্রে আমরা সেই ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশা করা চালিয়ে যেতে পারি, কারণ তিনি অনুতপ্ত হয়েছেন এবং তার ভুল চিন্তাভাবনা ও কাজ পরিবর্তন করেছেন। (১ তীম. ৫:২০) তিনি এখনও মণ্ডলীর একজন সদস্য এবং ভাই-বোনদের সঙ্গে মেলামেশা করার মাধ্যমে তার উৎসাহ লাভ করার প্রয়োজন রয়েছে। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) কিন্তু, যখন একজন ব্যক্তিকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়, তখন তার ক্ষেত্রে বিষয়টা একেবারে আলাদা। আমরা সেই ব্যক্তির সঙ্গে “মেলামেশা করা বন্ধ” করি, “এমনকী তার সঙ্গে খাওয়া-দাওয়াও” করি না।—১ করি. ৫:১১.
১৪. মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে আচরণ করার সময় কীভাবে খ্রিস্টানেরা বাইবেল থেকে যা শিখেছে, সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারে? (ছবিও দেখুন।)
১৪ আমরা এই পর্যন্ত যা আলোচনা করেছি এর মানে কি এই, যে-ব্যক্তিকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, তাকে আমরা পুরোপুরি উপেক্ষা করব? না, এমনটা নয়। এটা ঠিক যে, আমরা তার সঙ্গে মেলামেশা করব না। কিন্তু, যাকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে—এইরকম ব্যক্তিদের মধ্যে হতে পারে কোনো আত্মীয় অথবা আগের কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু—তাকে খ্রিস্টানেরা মণ্ডলীর সভাতে আমন্ত্রণ জানাবে, কি জানাবে না, সেই ব্যাপারে তারা বাইবেল থেকে যা শিখেছে, সেটার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সেই ব্যক্তি যদি সভাতে আসেন, তা হলে আমরা তার সঙ্গে কেমন আচরণ করব? আগে আমরা এইরকম ব্যক্তিকে সম্ভাষণও জানাতাম না। এই ক্ষেত্রেও প্রত্যেক খ্রিস্টানকে বাইবেল থেকে যা শিখেছেন, সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারো কারো জন্য হয়তো সেই ব্যক্তিকে সভাতে সম্ভাষণ জানানো অথবা স্বাগত জানানোকে স্বাভাবিক বলে মনে হতে পারে। তবে, আমরা সেই ব্যক্তির সঙ্গে বেশি সময় ধরে কথা বলব না অথবা মেলামেশাও করব না।
১৫. দ্বিতীয় যোহন ৯-১১ পদে কোন ধরনের পাপীদের বিষয়ে বলা হয়েছে? (এ ছাড়া, “যোহন ও পৌল কি একই পাপের বিষয়ে বলছিলেন?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)
১৫ কেউ কেউ হয়তো ভাবতে পারে, ‘বাইবেলে কি এমনটা বলা নেই যে, একজন খ্রিস্টান যদি এইরকম একজন ব্যক্তিকে সম্ভাষণ জানান, তা হলে সে তার মন্দ কাজকে সমর্থন করেন?’ (পড়ুন, ২ যোহন ৯-১১.) এই শাস্ত্রপদের প্রসঙ্গ দেখায় যে, এই নির্দেশনা সেই ব্যক্তিদের ব্যাপারে দেওয়া হয়েছে, যারা ধর্মভ্রষ্ট এবং যারা খারাপ কাজ করার জন্য অন্যদের উসকে দেয়। (প্রকা. ২:২০) তাই, যারা এই ধরনের বিষয়গুলো করে চলছে, তাদের সঙ্গে প্রাচীনেরা কথা বলার ব্যবস্থা করবে না। তবে, এই ধরনের ব্যক্তিরাও অনুতপ্ত হতে পারে। কিন্তু, তারা অনুতপ্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা তাদের সম্ভাষণ জানাব না অথবা মণ্ডলীর সভায় আমন্ত্রণও জানাব না।
যিহোবার সমবেদনা ও করুণাকে অনুকরণ করুন
১৬-১৭. (ক) পাপী ব্যক্তিরা কী করুক বলে যিহোবা চান? (যিহিষ্কেল ১৮:৩২) (খ) প্রাচীনেরা পাপী ব্যক্তিদের সাহায্য করার সময় কীভাবে দেখাতে পারে যে, তারা যিহোবার সহকর্মী?
১৬ পাঁচ অংশের এই ধারাবাহিক প্রবন্ধে আমরা কী শিখেছি? যিহোবা চান না কেউ ধ্বংস হয়ে যাক! (পড়ুন, যিহিষ্কেল ১৮:৩২.) তিনি চান যেন পাপী ব্যক্তিরা তাঁর কাছে ফিরে আসে। (২ করি. ৫:২০) আর এই কারণে অতীতে যিহোবা বার বার তাঁর সেই দাসদের অনুতপ্ত হওয়ার এবং তাঁর কাছে ফিরে আসার জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন, যারা পাপ করেছিল। মণ্ডলীর প্রাচীনেরা যখন পাপী ব্যক্তিদের অনুতপ্ত হওয়ার জন্য সাহায্য করার চেষ্টা করে, তখন তারা যিহোবার সহকর্মী হওয়ার বিশেষ সুযোগ লাভ করে।—রোমীয় ২:৪; ১ করি. ৩:৯.
১৭ কল্পনা করুন, যখন পাপী ব্যক্তিরা অনুতপ্ত হয়, তখন স্বর্গে কত আনন্দ হয়! আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবা প্রতি বার যখন দেখেন, তাঁর একজন হারানো মেষ মণ্ডলীতে ফিরে এসেছেন, তখন তিনি অনেক আনন্দিত হন। আমরা যখন তাঁর সমবেদনা, করুণা ও মহাদয়া নিয়ে চিন্তা করি, তখন তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা আরও গভীর হয়।—লূক ১:৭৮.
গান ১১১ আমাদের আনন্দের কারণ
a এইরকম ব্যক্তিদের আমরা আর সমাজচ্যুত ব্যক্তি বলে উল্লেখ করব না। ১ করিন্থীয় ৫:১৩ পদে বলা পৌলের কথা অনুযায়ী এখন থেকে আমরা তাদের বিষয়ে বলব যে, তাদের মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
b বাইবেল জানায় যে, কিছু ব্যক্তিকে ক্ষমা করা হবে না। এর অর্থ এই নয় যে, তাদের পাপ ক্ষমার অযোগ্য বরং তাদের মনোভাব সঠিক নয়। তারা সবসময় যিহোবার বিরুদ্ধে কাজ করে আর নিজেকে পরিবর্তন করতে চায় না। এই ধরনের ব্যক্তি তার পাপের ক্ষমা লাভ করবেন কি না, তা কেবল যিহোবা ও যিশুই বিচার করতে পারেন।—মার্ক ৩:২৯; ইব্রীয় ১০:২৬, ২৭.