প্রাচীনকালের ধার্মিক পরিবারগুলি—আমাদের দিনের জন্য এক আদর্শস্বরূপ
পরিবার—রাষ্ট্রসংঘ এটিকে জগতের দৃষ্টিগোচরে আনার চেষ্টা করেছিল। কিভাবে? ১৯৯৪ সালকে “আন্তর্জাতিক পরিবার বছর” বলে ঘোষণা করে। যদিও জগতের নেতারা, সমাজবিদেরা এবং পারিবারিক উপদেষ্টারা অবৈধ জন্ম এবং বৃদ্ধিরত বিবাহ বিচ্ছেদের হার সম্বন্ধে খেদ প্রকাশ করতে দেরি করেননি, কিন্তু এই সমস্যাগুলির জন্য কার্যকারী, বাস্তবধর্মী সমাধান খুঁজে পেতে দেরি করেছেন।
পারিবারিক এই সমস্যাগুলির সমাধান কী বাইবেলে থাকতে পারে? আজকের দিনের পরিবারগুলিকে বাইবেল যে সাহায্য করতে পারে, সেই বিষয় কিছু লোকের কাছে হাস্যকর বলে মনে হতে পারে। সর্বোপরি, এটি মধ্য প্রাচ্যে প্রদেশে এবং সমাজে বহু শতাব্দী আগে লেখা হয়েছিল। জগতের বেশির ভাগ অংশে, বাইবেলের সময় থেকে জীবনধারা নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেছে। তবুও, বাইবেল যিহোবা ঈশ্বর দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল যাঁর কাছে সমস্ত পরিবার নাম পেয়েছে। (ইফিষীয় ৩:১৪, ১৫; ২ তীমথিয় ৩:১৬) পারিবারিক সমস্যা সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে?
পারিবারিক জীবন উপভোগ্য এবং সন্তোষজনক করতে সঠিকভাবে কী প্রয়োজন যিহোবা তা জানেন। তাই, তাঁর বাক্য, বাইবেল, পারিবারিক জীবন সম্বন্ধে অনেক কিছু বলে, তার মধ্যে কিছু তথ্য উপদেশেরও আকারে রয়েছে। বাইবেলে কিছু পরিবারের উদাহরণও রয়েছে যারা ধার্মিক নীতিগুলি প্রয়োগ করেছে। এর ফলে, তারা প্রকৃত ঘনিষ্ঠতা এবং সন্তুষ্টি উপভোগ করেছে। আসুন বাইবেলের সময়ে পারিবারিক জীবনকে দেখি এবং বুঝি কী শিক্ষালাভ করতে পারি।
মস্তক ব্যবস্থা—একটি কঠোর ব্যবস্থা?
উদাহরণস্বরূপ, পরিবারের মস্তক ব্যবস্থার বিষয়টি বিবেচনা করুন। পিতৃশাসিত সময়ে, অব্রাহাম, ইস্হাক এবং যাকোবের মত মানুষেরা অবিসম্বাদী ‘পিতৃকূলপতি’ ছিলেন। (প্রেরিত ৭:৮, ৯; ইব্রীয় ৭:৪) রাল্ফ গায়র দ্বারা লিখিত বাইবেলের সময়ে নতুন আচরণ এবং রীতিনীতিগুলি (ইংরাজি) নামক বইটি বলে: “পরিবার ছিল . . . পিতার দ্বারা শাসিত একটি ‘ছোট রাজ্য।’ পরিবারের সকলের উপরে—স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, নাতিনাতনী এবং ভৃত্যদের উপরে তিনি শাসন করতেন।” সেইসাথে অবশ্য, পিতৃকূলপতিরা প্রায়ই তাদের পুত্রদের পরিবারের উপরে অধিকার থাকত।—তুলনা করুন আদিপুস্তক ৪২:৩৭.
এর অর্থ কী এই নয় যে তা পুরুষদের তাদের স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েদের উপর অত্যাচার করতে অনুমতি দিয়েছিল? অবশ্যই না। সত্য, ঈশ্বর প্রথম মানবী, হবাকে বলেছিলেন: “স্বামীর প্রতি তোমার বাসনা থাকিবে; ও সে তোমার উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে।” (আদিপুস্তক ৩:১৬) এই কথাগুলি ইঙ্গিত করেছিল সাধারণভাবে স্ত্রীদের পরিস্থিতি কেমন হবে, কিন্তু ঈশ্বরের উপাসকদের মধ্যে কী হবে তা বর্ণনা করে না। ঈশ্বর-ভীরু স্বামীদের যিহোবার আদি উদ্দেশ্যকে মনে রাখতে হয়েছিল। যিহোবা স্ত্রীকে পুরুষের “তাঁহার অনুরূপ [“পরিপূরক,” NW] সহকারিণী” হিসাবে তৈরি করেছিলেন, তার দাস হিসাবে নয়। (আদিপুস্তক ২:২০) যেহেতু প্রাচীনকালের ধার্মিক পুরুষেরা উপলব্ধি করেছিলেন যে ঈশ্বরের কাছে তাদের নিজস্ব বশ্যতা স্বীকার করতে হবে এবং কৈফিয়ত দিতে হবে, তাই তারা তাদের কর্তৃত্বকে অপব্যবহার করেননি। তাদের স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েদের দাস হিসাবে গণ্য করার চাইতে, ঈশ্বর-ভীরু পিতৃকূলপতিরা তাদের প্রতি প্রকৃত প্রেম এবং স্নেহ দেখাতেন।
সাধারণভাবে ছেলেমেয়েরা যে স্নেহ পেত তার আভাস আমরা আদিপুস্তক ৫০:২৩ পদে পাই। সেখানে যোষেফের প্রপৌত্রদের সম্বন্ধে বলে: “শিশুসন্তানেরাও যোষেফের ক্রোড়ে ভূমিষ্ঠ হইল।” এর সাধারণ অর্থ এই হতে পারে যে যোষেফ ছেলেমেয়েদের তার বংশধর হিসাবে গণ্য করেছিলেন, কিন্তু এটির অর্থ এও হতে পারে যে তিনি স্নেহের সাথে তাদের কোলে নিয়ে খেলা করতেন। পিতারা তাদের ছেলেমেয়েদের প্রতি একই স্নেহ দেখালে উত্তম কাজ করবেন।
পরিবারের মস্তক হিসাবে, ঈশ্বর-ভীরু পিতৃকূলপতিরা তাদের পরিবারগুলির আধ্যাত্মিক প্রয়োজনীয়তার প্রতিও যত্ন নিতেন। পৃথিবীব্যাপী জল-প্লাবনের পর জাহাজ থেকে বেরোবার পর, “নোহ সদাপ্রভুর উদ্দেশে যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন, এবং . . . বেদির উপরে হোম করিলেন।” (আদিপুস্তক ৮:২০; তুলনা করুন ইয়োব ১:৫.) বিশ্বস্ত পিতৃকূলপতি অব্রাহাম পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত শিক্ষা দান করার দ্বারা উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। তিনি ‘আপন ভাবী সন্তানগণকে ও পরিবারদিগকে আদেশ করেছিলেন, যেন তাহারা ধর্ম্মসঙ্গত ও ন্যায্য আচরণ করিতে করিতে সদাপ্রভুর পথে চলে।’ (আদিপুস্তক ১৮:১৯) এইভাবে প্রেমপূর্ণ মস্তক ব্যবস্থা পরিবারের মানসিক এবং আধ্যাত্মিক মঙ্গলের ক্ষেত্রে সাহায্য করেছিল।
খ্রীষ্টীয় পুরুষেরা আজকে একই আদর্শ অনুসরণ করেন। তাদের পরিবারগুলিকে ঈশ্বরের প্রয়োজনীয়তাগুলির সাথে মানিয়ে চলতে সাহায্য করার দ্বারা এবং নিজেরা উত্তম উদাহরণ স্থাপন করার দ্বারা উপাসনার ক্ষেত্রে তারা মস্তক ব্যবস্থা ব্যবহার করেন। (মথি ২৮:১৯, ২০; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) পিতৃকূলপতিদের মত, খ্রীষ্টীয় স্বামীরা এবং পিতারাও তাদের পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত শিক্ষা দিতে সময় করে নেন।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া
পরিশেষে যখন তিনি তার শ্বশুরের কাছে এক বড় রকমের ধার শোধ করেন তখন পিতৃকূলপতি যাকোব জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “কিন্তু আমি নিজ পরিবারের জন্য কবে সঞ্চয় করিব?” (আদিপুস্তক ৩০:৩০) সকল পিতার মত, যাকোব তার পরিবারের দৈহিক প্রয়োজনগুলি মিটানোর চাপ অনুভব করেন এবং তা করতে তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন। আদিপুস্তক ৩০:৪৩ পদ বলে: “যাকোব অতি বর্দ্ধিষ্ণু হইলেন, এবং তাঁহার পশু ও দাস দাসী এবং উষ্ট্র ও গর্দ্দভ যথেষ্ট হইল।”
কিন্তু, কিছু বছর পরে, যাকোব কনান দেশেতে আসার পর, আপাতদৃষ্টিতে তিনি জানতেন না যে তার মেয়ে দীণা পৌত্তলিক কনানীয়দের সাথে মেলামেশা করে এক বিপজ্জনক অভ্যাস গড়ে তুলেছিল।a (আদিপুস্তক ৩৪:১) তিনি যখন পৌত্তলিক ধর্মীয় জিনিস তার ঘরের মধ্যে দেখেন তখনও তিনি কিছু করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু অবশেষে, এক কনানীয়ের দ্বারা দীণার মর্মান্তিক ধর্ষণের পর, যাকোব চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। “তোমাদের কাছে যে সকল ইতর দেবতা আছে, তাহাদিগকে দূর কর, এবং শুচি হও,” তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন।—আদিপুস্তক ৩৫:২-৪.
তাদের পরিবারে আধ্যাত্মিকতা সম্বন্ধে খ্রীষ্টীয় পিতারা যেন সচেতন থাকেন। যদি পরিবারের আধ্যাত্মিক পরিস্থিতির প্রতি গুরুতর কোন বিপদ আসে, যেমন ঘরেতে অনৈতিক সাহিত্যাদি অথবা অরুচিকর সঙ্গীত, তাদের অবশ্যই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আগ্রহের বিষয় এই যে, সারা, রিবিকা এবং রাহেলের মত বিশ্বস্ত স্ত্রীলোকেরাও পরিবারের উপর তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিলেন। যদিও তারা তাদের স্বামীর বশীভূত ছিলেন, কিন্তু যখন যথার্থ ও প্রয়োজন ছিল তখন তারা নিজে থেকে এগিয়ে এসে কিছু করা থেকে বিরত হতেন না। উদাহরণস্বরূপ, যাত্রাপুস্তক ৪:২৪-২৬ পদ আমাদের বলে যে, যখন মোশি এবং তার পরিবার মিশরে যাচ্ছিল, “সদাপ্রভু [“যিহোবার দূত,” সেপ্টুয়াজেন্ট] তাঁহার কাছে গিয়া তাঁহাকে [মোশির পুত্রকে] বধ করিতে চেষ্টা করিলেন।” স্পষ্টতই, মোশি তার ছেলের ত্বক্ছেদ করেননি বলেই মোশির পুত্র হত হওয়ার বিপদে ছিল। সিপ্পোরা তাড়াতাড়ি কাজ করেন এবং তার পুত্রের ত্বকছেদ করেন। তার ফলে, স্বর্গদূত তাকে ছেড়ে দেন। খ্রীষ্টীয় স্ত্রীয়েরাও আজকে যখন পরিস্থিতি যথার্থ তখন একইভাবে এগিয়ে আসতে পারেন।
মোশির নিয়মের অধীনে পিতৃতুল্য শিক্ষা
সা.শ.পূ. ১৫১৩ সালে পিতৃকূলপতির কাল শেষ হয় যখন ইস্রায়েল এক জাতিতে পরিণত হয়। (যাত্রাপুস্তক ২৪:৩-৮) পরিবারের মস্তক হিসাবে পিতারা কাজ করতে থাকেন। কিন্তু, জাতীয় নিয়ম যা ঈশ্বর মোশিকে দিয়েছিলেন এবং নিযুক্ত বিচারকদের দ্বারা যা বলবৎ করা হত তার অধীনে পারিবারিক নিয়ম চলে আসে। (যাত্রাপুস্তক ১৮:১৩-২৬) উপাসনার বিষয়গুলি লেবীয় যাজকবর্গ নিয়ে নেয়। তবুও, পিতারা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে চলেন। মোশি উৎসাহ দিয়েছিলেন: “এই যে সকল কথা আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি, তাহা তোমার হৃদয়ে থাকুক। আর তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কাল ঐ সমস্তের কথোপকথন করিবে।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭.
নিয়মটি সুযোগগুলি প্রদান করত, যেমন এই রকম একটি সুযোগ নিস্তারপর্ব্ব, যেটি চলাকালীন সময়ে রীতিগতভাবে এবং রীতিবহির্ভূতভাবে শিক্ষা দেওয়া হত। যখন নিস্তারপর্ব্বের তারিখ, নিশান ১৪ এগিয়ে আসত, যিহূদী পরিবারগুলি যিরূশালেমে যাওয়ার রীতিগত ভ্রমণের জন্য প্রস্তুতি শুরু করত। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১৬; তুলনা করুন লূক ২:৪১) এই প্রস্তুতির সাথে যে মজা ছিল তা কোন্ ছেলেমেয়ে উপভোগ করবে না? স্বয়ং ভ্রমণটি একটি উপভোগ্য বিষয় ছিল। বর্ষা ততক্ষণে শেষ হয়ে যেত এবং বসন্তকালের সূর্য শীতকালের ঠান্ডাকে কমিয়ে দিত। হর্ম্মোণ পর্বতের বরফ গলে যাওয়ার ফলে যর্দন নদীর কূল তা ছাপিয়ে যেত।
পথে যাওয়ার সাথে সাথে, পিতারা তাদের ছেলেমেয়েদের সেই প্রদেশের ভূগোল সম্বন্ধেই শিক্ষা দিতেন না, কিন্তু সাথে সাথে যে জায়গার উপর দিয়ে তারা যেত তার সাথে যুক্ত অনেক ইতিহাস সম্বন্ধে শিক্ষা দিতেন। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত এবল এবং গরিষীম পর্বত যেখানে নিয়মের অভিশাপ এবং আশীর্বাদগুলি পড়া হত। তারা হয়ত বেথেল হয়েও যেত, যেখানে যাকোব তার দৈব সিড়ির দর্শন দেখেছিলেন। কত রোমাঞ্চকর আলোচনাই না শুরু হত! যতই তারা চলতে থাকত দেশের অন্যান্য অংশ থেকে আসা পারিবারিক দলগুলি তাদের সাথে যুক্ত হত এবং সকলে গঠনমূলক সাহচর্য উপভোগ করত।
অবশেষে পরিবারটি যিরূশালেমে, ‘পরম সৌন্দর্য্যের স্থানে’ প্রবেশ করত। (গীতসংহিতা ৫০:২) পন্ডিত অ্যালফ্রেড এডেরশিম বলেন: “এই তীর্থযাত্রীদের অনেকেই শহরের প্রাচীরের বাইরে থাকত। আর যারা শহরের মধ্যে থাকত তাদের সাদরে সম্ভাষণ জানানো হত।” হ্যাঁ, ইব্রীয় যুবকেরা ভ্রাতৃ প্রেম এবং সদাশয়তার সরাসরি শিক্ষা পেত। যিহোবার সাক্ষীদের বাৎসরিক সম্মেলনগুলি আজকেও সেই একই উদ্দেশ্য সাধন করে।
নিশান ১৪ অবশেষে আসত। নিস্তারপর্ব্বের পশু বলি দেওয়া হত এবং বেশ কয়েক ঘন্টা ধরে ঝলসানো হত। প্রায় মধ্যরাতে সেই পরিবারটি মেষ, তাড়িশূন্য রুটি এবং তিক্ত শাক খেত। প্রথা অনুযায়ী পুত্র জিজ্ঞাসা করত: “তোমাদের এই সেবার তাৎপর্য্য কি?” এই বলে পিতারা তখন রীতি অনুযায়ী শিক্ষা দিত যে: “ইহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিস্তারপর্ব্বীয় যজ্ঞ, মিস্রীয়দিগকে আঘাত করিবার সময়ে তিনি মিসরে ইস্রায়েল-সন্তানদের গৃহ সকল ছাড়িয়া অগ্রে গিয়াছিলেন, আমাদের গৃহ রক্ষা করিয়াছিলেন।”—যাত্রাপুস্তক ১২:২৬, ২৭; ১৩:৮.
ইস্রায়েলের রাজা শলোমন বলেছিলেন: ‘হাস্য করিবার কাল . . . নৃত্য করিবার কাল রহিয়াছে।’ (উপদেশক ৩:৪) ইস্রায়েলীয় ছেলেমেয়েদের আমোদপ্রমোদের জন্য সময় দেওয়া হত। যীশু খ্রীষ্ট ছেলেমেয়েদের বাজারে খেলতে দেখেছিলেন। (সখরিয় ৮:৫; মথি ১১:১৬) আর যে সব পিতামাতাদের সামর্থ ছিল, উপভোগ্য পারিবারিক সমাবেশের আয়োজন করা তাদের কাছে কোন অসাধারণ বিষয় ছিল না, যার অন্তর্ভুক্ত গান করা, নাচ করা এবং খাওয়া দাওয়া ছিল। (লূক ১৫:২৫) খ্রীষ্টীয় পিতামাতারা আজকেও ঠিক একইভাবে এগিয়ে এসে তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য উপকারজনক আমোদপ্রমোদ এবং মেলামেশার আয়োজন করেন।
যিহূদী সমাজে মায়েরা এবং ছেলেমেয়েরা
মোশির নিয়মের অধীনে মায়েরা কী ভূমিকা পালন করেছিলেন? হিতোপদেশ ১:৮ পদ আদেশ করে: “বৎস, তুমি তোমার পিতার উপদেশ শুন, তোমার মাতার ব্যবস্থা ছাড়িও না।” স্বামীর কর্তৃত্বের কাঠামোর মধ্যে, যিহূদী স্ত্রী ঈশ্বর-দত্ত প্রয়োজনীয়তাগুলি পারিবারিক জীবনে প্রয়োগ করতেন। তিনি ছেলেমেয়েদের দ্বারা সম্মানিত হতেন, এমনকি যখন তিনি বৃদ্ধাবস্থায় পৌঁছাতেন তার পরেও।—হিতোপদেশ ২৩:২২.
তার ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে মায়ের এক বিরাট ভূমিকা ছিল। তিনি শিশুকে দেখাশোনা করতেন প্রায় যতক্ষণ পর্যন্ত না সে নিজে থেকে খেতে পারত, যার ফলে নিঃসন্দেহে মা এবং শিশুর মধ্যে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধন গড়ে উঠত। (যিশাইয় ৪৯:১৫) যখন পিতারা তাদের ছেলেদের কাজ শেখাতেন, তখন মায়েরা তাদের মেয়েদের গৃহস্থালীর কাজ শেখাতেন। ছেলেদের প্রতিও মায়েদের বেশ প্রভাব ছিল। উদাহরণস্বরূপ, লমূয়েল রাজা, “তাঁর মাতা তাঁকে সংশোধন করার ব্যাপারে যে ভারবাণী শিক্ষা দিয়েছিলেন” তার থেকে উপকৃত হয়েছিলেন।—হিতোপদেশ ৩১:১, NW.
‘আপন পরিবারের আচরণের প্রতি লক্ষ্য রাখার’ বিষয়ে এক গুণবতী যিহূদী স্ত্রী অনেকখানি স্বাধীনতাও উপভোগ করতেন। হিতোপদেশ ৩১:১০-৩১ পদ অনুযায়ী তিনি হয়ত ঘরের জিনিসপত্র কিনতেন, স্থাবর সম্পত্তিতে অর্থ দিতেন এবং এমনকি ছোটখাট ব্যবসা পরিচালনা করতেন। উপলব্ধিমূলক স্বামীর কাছে তার মূল্য ছিল “মুক্তা হইতেও . . . অনেক অধিক”!
আজকের দিনের জন্য এক আদর্শস্বরূপ
বাইবেলের সময়ে পরিবারিক ব্যবস্থা পরিবাবের সকল সদস্যদের জন্য মানসিক এবং আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির জন্য কাজ করত। পিতারা তাদের কর্তৃত্বকে প্রেমের সাথে ব্যবহার করতেন যাতে করে তাদের পরিবারগুলি উপকৃত হয়। উপাসনার ক্ষেত্রে তারা নেতৃত্ব নিতেন। পিতা এবং মাতা উভয়েই তাদের ছেলেমেয়েদের প্রতি আগ্রহ দেখাতেন—তাদের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ দিতেন, তাদের সাথে উপাসনা করতেন এবং তাদের জন্য আমোদপ্রমোদের ব্যবস্থা করতেন। তাদের পরিবারগুলির পক্ষে নিজে থেকে এগিয়ে এসে তাদের স্বামীদের মস্তক ব্যবস্থাকে সম্মান করে ধার্মিক মায়েরা মূল্যবান সহকারিণী বলে প্রমাণিত হতেন। বাধ্য ছেলেমেয়েরা তাদের পিতামাতা এবং যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি আনন্দ আনত। সত্যই, বাইবেলের সময়ের ঈশ্বর-ভীরু পরিবার আজকের দিনে আমাদের জন্য এক পরমোৎকৃষ্ট আদর্শস্বরূপ।
[পাদটীকাগুলো]
a এই বিষয়টি লক্ষণীয় যে, এটি ঘটবার আগে তার পরিবারকে কনানীয় লোকেদের প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্য তিনি দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি এক বেদী নির্মাণ করেছিলেন, নিঃসন্দেহে যার রীতি তার কনানীয় প্রতিবেশীর থেকে ভিন্ন ছিল। (আদিপুস্তক ৩৩:২০; যাত্রাপুস্তক ২০:২৪, ২৫) এছাড়াও, তিনি শিখিম শহরের বাইরে তাম্বু খাটিয়েছিলেন এবং নিজের জন্য জল সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৩৩:১৮; যোহন ৪:৬, ১২) তাই দীণা যাকোবের ইচ্ছা সম্বন্ধে ভাল করে জানত যে সে যেন কনানীয়দের সাথে মেলামেশা না করে।
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
বাইবেলের সময়ে যে পরিবারগুলি যিহোবাকে উপাসনা করত তাদের মত আপনার পরিবার সুখী হতে পারে