অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৬
বাইবেল এটির গ্রন্থকার সম্বন্ধে কী জানায়?
“আমি তোমার কাছে যে সকল কথা বলিয়াছি, সে সমস্ত একখানি পুস্তকে লিখিয়া রাখ।”—যির. ৩০:২.
গান ৯৬ ঈশ্বরের বাক্য—এক অমূল্য সম্পদ
সারাংশa
১. কেন আমরা যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞ যে, তিনি আমাদের বাইবেল দিয়েছেন?
আমরা যিহোবার প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ যে, তিনি আমাদের বাইবেল দিয়েছেন। এটিতে তিনি বিজ্ঞ পরামর্শগুলো লিখিয়েছেন, যেগুলো কাজে লাগানোর ফলে আজ আমরা নিজেদের সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি। বাইবেলের মাধ্যমে তিনি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য এক অপূর্ব আশাও দিয়েছেন। তবে, এর চেয়েও বড়ো বিষয় হল তিনি বাইবেলের মাধ্যমে আমাদের জানিয়েছেন, তিনি কেমন ঈশ্বর এবং তাঁর মধ্যে কোন কোন গুণ রয়েছে। আমরা যখন ঈশ্বরের গুণগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি, তখন আমাদের খুব ভালো লাগে। আমাদের ইচ্ছা করে যেন আমরা তাঁর আরও নিকটবর্তী হই এবং তাঁর বন্ধু হই।—গীত. ২৫:১৪.
২. যিহোবা কোন কোন উপায়ে তাঁর সম্বন্ধে লোকদের জানিয়েছেন?
২ যিহোবা চান যেন লোকেরা তাঁর সম্বন্ধে জানে। অতীতে তিনি স্বপ্ন, দর্শন এবং স্বর্গদূতদের মাধ্যমে তাঁর সম্বন্ধে লোকদের জানিয়েছিলেন। (গণনা. ১২:৬; প্রেরিত ১০:৩, ৪) কিন্তু একটু চিন্তা করুন, সেই কথাগুলো কেউ যদি না লিখত, তা হলে কীভাবে আমরা সেগুলোর বিষয়ে জানতে পারতাম? এই কারণে যিহোবা কিছু ব্যক্তির মাধ্যমে সেই সমস্ত কথা “একখানি পুস্তকে” লিখিয়েছেন। (যির. ৩০:২) যিহোবা যা-কিছু করেন, সেগুলো সবচেয়ে ভালো হয় কারণ তাঁর সমস্ত কাজ “সিদ্ধ” বা নিখুঁত। তাই, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, বাইবেল লিখিয়ে তিনি একদম ঠিক করেছেন। আমরা যদি বাইবেল পড়ি, তা হলে আমরা অনেক উপকার পাব।—গীত. ১৮:৩০.
৩. কীভাবে যিহোবা এই বিষয়টা খেয়াল রেখেছিলেন, যেন তাঁর বাক্য চিরকাল টিকে থাকে? (যিশাইয় ৪০:৮)
৩ যিশাইয় ৪০:৮ পদ পড়ুন। বাইবেল এমন কিছুর উপরে লেখা হয়েছিল, যেগুলো বেশি দিন টিকত না। আর এটি শুরুতে যে-গোটানো পুস্তকগুলোতে লেখা হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে আজ একটাও আমাদের কাছে নেই। তারপরও বাইবেলে যিহোবা যে-বিজ্ঞ পরামর্শগুলো লিখিয়েছিলেন, সেগুলো কাজে লাগানোর ফলে মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে উপকার পাচ্ছে। কীভাবে এটা সম্ভব হয়েছে? যিহোবা এই বিষয়ে খেয়াল রেখেছিলেন যেন শাস্ত্রের কপি তৈরি করা হয়। যে-ব্যক্তিরা এটির কপি তৈরি করেছিল, তারা অসিদ্ধ ছিল। তারা এই বিষয়ে খুবই খেয়াল রেখেছিল, তাদের দিয়ে যেন ভুল না হয়। একজন পণ্ডিত ব্যক্তিও ইব্রীয় শাস্ত্র সম্বন্ধে বলেছিলেন, “আমরা পুরো জোর দিয়ে বলতে পারি, আজ বাইবেলের মতো এমন কোনো প্রাচীন বই নেই, যেটাতে কোনো রদবদল না করে আমাদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।” তাহলে, আমরা কী বলতে পারি? বাইবেল হাজার হাজার বছর আগে লেখা হয়েছিল। এটি এমন কিছুর উপরে লেখা হয়েছিল, যেগুলো বেশি দিন টিকত না আর এটির কপিগুলো অসিদ্ধ ব্যক্তিরা তৈরি করেছিল। তারপরও, আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত থাকতে পারি, আজ বাইবেল থেকে আমরা যে-কথাগুলো পড়ি, সেই কথাগুলো এটির গ্রন্থকার যিহোবা হাজার হাজার বছর আগে লিখিয়েছেন।
৪. এই প্রবন্ধে আমরা কী জানতে পারব?
৪ যিহোবার কাছ থেকেই আমরা “সমস্ত উত্তম ও নিখুঁত দান” পাই। (যাকোব ১:১৭) কেউ কি কখনো আপনাকে উপহার হিসেবে এমন কোনো জিনিস দিয়েছে, যেটা আপনার প্রয়োজন ছিল? এটা থেকে বোঝা যায়, সেই ব্যক্তি আপনাকে কত ভালো করে জানে। বাইবেলও এইরকমই একটি মূল্যবান উপহার। এটি পড়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, যিহোবা আমাদের কত ভালো করে জানেন আর তিনি এও বোঝেন, আমাদের কোন বিষয়গুলোর প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া, বাইবেল পড়লে আমরা যিহোবার অনেক গুণ সম্বন্ধে জানতে পারি। যেমন, তিনি হলেন খুবই প্রজ্ঞাবান, সবসময় ন্যায়বিচার করেন এবং আমাদের অনেক ভালোবাসেন। এই প্রবন্ধে আমরা তাঁর এই তিনটে গুণের বিষয়ে জানতে পারব। তাই আসুন প্রথমে দেখি, বাইবেল পড়ার মাধ্যমে কীভাবে জানা যায় যে, যিহোবা হলেন খুবই প্রজ্ঞাবান।
বাইবেল থেকে জানা যায়, যিহোবা হলেন খুবই প্রজ্ঞাবান
৫. বাইবেলে লেখা কথাগুলো থেকে কীভাবে জানা যায় যে, ঈশ্বর হলেন খুবই প্রজ্ঞাবান?
৫ যিহোবা জানেন, আমাদের বিজ্ঞ পরামর্শের প্রয়োজন রয়েছে। তাই, তিনি উপহার হিসেবে আমাদের যে-বাইবেল দিয়েছেন, সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে বিজ্ঞ পরামর্শ পাওয়া যায়। বাইবেলের পরামর্শ কাজে লাগানোর ফলে অনেক লোক উপকৃত হয় আর কিছু লোকের জীবন তো পালটেও যায়। এখান থেকে বোঝা যায়, যিহোবা কতটা প্রজ্ঞাবান। লক্ষ করুন, মোশি যখন বাইবেলের শুরুর বইগুলো লিখেছিলেন, তখন তিনি ঈশ্বরের লোকদের কী বলেছিলেন: “এগুলো কোনো অর্থহীন কথা নয়, এগুলোর উপরই তোমাদের জীবন নির্ভর করছে।” (দ্বিতীয়. ৩২:৪৭, NW) যারা শাস্ত্রে লেখা পরামর্শ কাজে লাগাত, তারা আনন্দে জীবনযাপন করতে পারত। (গীত. ১:২, ৩) এই বিষয়টা অতীতেও সত্য হয়েছিল এবং বর্তমানেও সত্য। যদিও বাইবেল হাজার হাজার বছর আগে লেখা হয়েছিল, তারপরও এটিতে দেওয়া পরামর্শ আজও ততটাই উপকার নিয়ে আসে, যতটা অতীতেও নিয়ে আসত। বাইবেলের পরামর্শ কাজে লাগানোর ফলে লোকদের জীবন কীভাবে পালটে গিয়েছে, সেই বিষয়ে জানার জন্য আপনি jw.org ওয়েবসাইটে “বাইবেল জীবনকে পরিবর্তন করে” নামক ধারাবাহিক প্রবন্ধ দেখতে পারেন, যেখানে ২০টারও বেশি লোকের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো থেকে স্পষ্ট জানা যায়, যারা ঈশ্বরের বাক্যের উপর বিশ্বাস করে, তাদের হৃদয়ে “সেই বাক্য কাজ” করে।—১ থিষল. ২:১৩.
৬. কেন আমরা বলতে পারি, বাইবেলের মতো আর কোনো বই নেই?
৬ পৃথিবীতে বাইবেলের মতো আর কোনো বই নেই। কেন আমরা তা বলতে পারি? যদি অন্যান্য বইয়ের কথা ধরি, তা হলে সেগুলোর গ্রন্থকারেরা একদিন না একদিন মারা যায় এবং সেই বইগুলোতে লেখা কথাগুলোও কিছুসময় পর আর কোনো কাজে আসে না। কিন্তু, বাইবেলের গ্রন্থকার যিহোবা হলেন সর্বশক্তিমান, তিনি সবসময় রয়েছেন এবং সবসময় থাকবেন আর তিনিই হলেন সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান। আর বাইবেলে লেখা কথাগুলোও সবসময় কাজে লাগানো যায়। অতীতেও লোকেরা এগুলো থেকে উপকার পেয়েছিল এবং বর্তমানেও লোকেরা এগুলো থেকে উপকার পাচ্ছে। আমরা যখন বাইবেল পড়ি এবং তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি, তখন এটির গ্রন্থকার আমাদের পবিত্র শক্তি দেন, যাতে আমরা বুঝতে পারি, কীভাবে আমরা সেই কথাগুলো কাজে লাগাতে পারি। (গীত. ১১৯:২৭; মালাখি ৩:১৬; ইব্রীয় ৪:১২) বাইবেলের গ্রন্থকার আমাদের সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত আছেন, তাই প্রতিদিন বাইবেল পড়ুন এবং তা থেকে উপকার লাভ করুন।
৭. কীভাবে শাস্ত্রের কারণে অতীতে ঈশ্বরের লোকদের মধ্যে একতা বজায় ছিল?
৭ বাইবেলের কারণে ঈশ্বরের লোকদের মধ্যে একতা বজায় থাকে। এটা থেকেও বোঝা যায়, এটির গ্রন্থকার কতটা প্রজ্ঞাবান। যখন ইজরায়েলীয়েরা প্রতিজ্ঞাত দেশে পৌঁছায়, তখন তারা অনেক দূর দূর এলাকায় গিয়ে থাকতে শুরু করে এবং আলাদা আলাদা কাজ করতে শুরু করে। যেমন, কিছু জন মাছ ধরার কাজ শুরু করে, কিছু জন মেষ ও ছাগল পুষতে শুরু করে আর কিছু জন চাষবাস করতে শুরু করে। এইরকম ক্ষেত্রে একটা এলাকায় বসবাসরত ইজরায়েলীয়েরা অন্য এলাকায় বসবাসরত ভাই-বোনদের খুব সহজেই ভুলে যেতে পারত। কিন্তু, যিহোবা এমনটা ঘটতে দেননি। তিনি তাঁর লোকদের আজ্ঞা দিয়েছিলেন, যেন তারা প্রতি বছরে কোনো কোনো সময়ে একত্রিত হয়, যেখানে তাদের ঈশ্বরের বাক্য পড়ে শোনানো হত এবং ব্যাখ্যা করা হত। (দ্বিতীয়. ৩১:১০-১৩; নহি. ৮:২, ৮, ১৮) কল্পনা করুন, যখন একজন ইজরায়েলীয় জেরুসালেমে যেতেন এবং সেখানে আলাদা আলাদা এলাকা থেকে আসা লক্ষ লক্ষ ভাই-বোনের সঙ্গে দেখা হত, তখন তিনি কতটা খুশি হতেন! এভাবে যিহোবা খেয়াল রেখেছিলেন, যেন তাঁর লোকদের মধ্যে একতা বজায় থাকে। পরে, যখন খ্রিস্টীয় মণ্ডলী গঠিত হয়, তখন সেখানেও এমন অনেক লোক ছিল, যারা আলাদা আলাদা ভাষায় কথা বলত। তাদের মধ্যে কিছু জন ধনী ছিল, কিছু জন গরিব ছিল, কিছু জন বেশি লেখাপড়া জানত এবং কিছু জন কম লেখাপড়া জানত। তবে, তারা সবাই শাস্ত্রের প্রতি উপলব্ধি দেখাত, তাই তারা একসঙ্গে একত্রিত হয়ে উপাসনা করত। আর যারা নতুন নতুন খ্রিস্টান হয়েছিল, তারাও অন্যদের সাহায্যে এবং একসঙ্গে একত্রিত হয়েই শাস্ত্রে লেখা কথাগুলো আরও ভালো করে বুঝতে পারত। এভাবে শাস্ত্রের কারণে তারা সবাই একতাবদ্ধভাবে যিহোবার সেবা করতে পেরেছিল।—প্রেরিত ২:৪২; ৮:৩০, ৩১.
৮. আজ যিহোবা কীভাবে বাইবেলের মাধ্যমে তাঁর লোকদের একতার বন্ধনে বেঁধে রেখেছেন?
৮ আজও যিহোবা বাইবেলের মাধ্যমে তাঁর লোকদের শেখাচ্ছেন এবং তাদের একতার বন্ধনে বেঁধে রেখেছেন। কীভাবে? বাইবেল থেকেই আমরা সবাই যিহোবা সম্বন্ধে সত্য জানতে পারি। আর আমরা সবাই ক্রমাগত মণ্ডলীর সভাগুলোতে যোগ দিই, সম্মেলনগুলোতে যাই, যেখানে ঈশ্বরের বাক্য থেকে পড়ে শোনানো হয় এবং ব্যাখ্যা করা হয় আর তা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এভাবে বাইবেলের মাধ্যমে যিহোবার এই উদ্দেশ্য পূর্ণ হয় যে, তাঁর উপাসকেরা “কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে” তাঁর সেবা করে। (সফ. ৩:৯, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন) এই সমস্ত কিছু থেকেও আমরা দেখতে পাই, যিহোবা কতটা প্রজ্ঞাবান।
৯. বাইবেলে লেখা কথাগুলো কেবল কোন ধরনের লোকেরা বুঝতে পারে? (লূক ১০:২১)
৯ আরেকটা বিষয়ের উপর মনোযোগ দিন, যেটা থেকে জানা যায়, যিহোবা কতটা প্রজ্ঞাবান। তিনি শাস্ত্রের অনেক কথা এমনভাবে লিখিয়েছেন, যেগুলো কেবল নম্র লোকেরাই বুঝতে পারে। (পড়ুন, লূক ১০:২১.) আজ পুরো পৃথিবীতে অনেক লোক বাইবেল পড়ে। একজন পণ্ডিত ব্যক্তি বাইবেল সম্বন্ধে বলেছিলেন, “সবচেয়ে বেশি লোক এই বইটি পড়েছে আর তা আবার অন্য বইগুলোর চেয়ে খুবই মনোযোগ দিয়ে।” কিন্তু, লক্ষ করার মতো বিষয় হল, কেবল নম্র লোকেরাই তা বুঝতে পারে এবং এটিতে লেখা কথাগুলো কাজে লাগাতে পারে।—২ করি. ৩:১৫, ১৬.
১০. বাইবেলের আর কোন বিষয় থেকে জানা যায়, যিহোবা হলেন খুবই প্রজ্ঞাবান?
১০ বাইবেলের আরেকটা বিষয় থেকে জানা যায়, যিহোবা কতটা প্রজ্ঞাবান। তিনি এটির মাধ্যমে না কেবল একটা দল হিসেবে তাঁর লোকদের শেখান, কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি আমাদের প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবেও শেখান এবং সান্ত্বনা দেন। আমরা যখন বাইবেল পড়ি, তখন আমরা প্রত্যেকে এটা অনুভব করি, যিহোবা আমাদের জন্য কত চিন্তা করেন। (যিশা. ৩০:২১) আপনার প্রতি কি কখনো এমনটা ঘটেছে যে, আপনি কোনো সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং আপনি বাইবেল পড়েছিলেন আর আপনার মনে হয়েছিল, ‘এই পদ তো দেখছি যেন আমার জন্যই লেখা হয়েছে’? আশ্চর্যের বিষয় হল, জগতের লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি বাইবেল সম্বন্ধে এমনটাই মনে করে। কিন্তু, এটা কীভাবে হতে পারে যে, হাজার হাজার বছর আগে লেখা এই বই থেকে আজ প্রত্যেকে উপকার পাচ্ছে? এর কারণ হল, এটির গ্রন্থকার হলেন নিখিলবিশ্বের সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি!—২ তীম. ৩:১৬, ১৭.
বাইবেল থেকে জানা যায়, যিহোবা সবসময় ন্যায়বিচার করেন
১১. বাইবেল যেভাবে লেখা হয়েছে, তা থেকে কীভাবে জানা যায়, যিহোবা পক্ষপাতিত্ব করেন না?
১১ যিহোবার আরেকটা গুণ হল যে, তিনি সবসময় ন্যায়বিচার করেন। (দ্বিতীয়. ৩২:৪) তিনি সবসময় সেটাই করেন, যেটা ন্যায্য বা সঠিক আর তিনি কখনো কারো প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেন না। (প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫; রোমীয় ২:১১) তিনি যে-ভাষাগুলোতে বাইবেল লিখিয়েছেন, তা থেকেও এই বিষয়টা জানা যায়। বাইবেলের প্রথম ৩৯টা বই বিশেষভাবে ইব্রীয় ভাষায় লেখা হয়েছিল কারণ সেই যুগে ঈশ্বরের লোকেরা এই ভাষায় কথা বলত। তবে, প্রথম শতাব্দীতে লোকেরা গ্রিক ভাষায় কথা বলত। তাই, বাইবেলের শেষ ২৭টা বই বিশেষভাবে গ্রিক ভাষায় লেখা হয়েছিল। যিহোবা এইরকমটা চিন্তা করেননি, তাঁর বাক্য শুধু একটাই ভাষায় লেখা হোক। কিন্তু, আজ পৃথিবীতে প্রায় ৮০০ কোটি লোক রয়েছে এবং তারা বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে। তাই, কীভাবে এত লোক যিহোবা সম্বন্ধে জানতে পারে?
১২. কীভাবে আমরা বলতে পারি, দানিয়েল ১২:৪ পদে দেওয়া ভবিষ্যদ্বাণী এই শেষকালে পরিপূর্ণ হচ্ছে?
১২ ভাববাদী দানিয়েলের মাধ্যমে যিহোবা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, শেষকালে বাইবেলে দেওয়া প্রকৃত ‘জ্ঞান বৃদ্ধি’ পাবে। এর মানে, অনেক লোক তা বুঝতে পারবে। (পড়ুন, দানিয়েল ১২:৪.) আর বর্তমানে ঠিক এমনটাই ঘটছে। বাইবেল এবং বাইবেলের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকাশনা অনুবাদ করা হচ্ছে, এগুলো বিরাট আকারে প্রকাশ করা হচ্ছে আর তা লোকদের দেওয়া হচ্ছে। এটার কারণে অনেকে বাইবেলে লেখা কথাগুলো বুঝতে পারছে। এমন আর কোনো বই নেই, যেটি এত বেশি ভাষায় রয়েছে এবং যেটি পৃথিবীর প্রত্যেক প্রান্তের লোক পড়তে পারে। জগতে যে-বাইবেল ছাপানো হয়, অনেকসময় তা খুবই দামি হয়ে থাকে। কিন্তু, যিহোবার লোকেরা যে-বাইবেল ছাপায়, সেগুলো যে-কেউ বিনামূল্যে নিতে পারে। এখনও পর্যন্ত আমরা সম্পূর্ণ বাইবেল অথবা সেটির কিছু বই ২৪০-রও বেশি ভাষায় অনুবাদ করেছি। এই কারণে সব দেশের লোক শেষ আসার আগে ঈশ্বরের “রাজ্যের সুসমাচার” শুনতে পারছে। (মথি ২৪:১৪) আমাদের ঈশ্বর সবসময় ন্যায়বিচার করেন আর কখনো কারো প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেন না। তিনি বেশিরভাগ লোককে তাঁর বাক্য পড়ার এবং তাঁকে জানার সুযোগ দিচ্ছেন কারণ তিনি সবাইকে অনেক ভালোবাসেন।
বাইবেল থেকে জানা যায়, যিহোবা আমাদের অনেক ভালোবাসেন
১৩. বাইবেল থেকে কীভাবে এটা জানা যায়, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন? (যোহন ২১:২৫)
১৩ বাইবেল থেকে আমরা এও জানতে পারি, এটির গ্রন্থকারের প্রধান গুণ হল প্রেম। (১ যোহন ৪:৮) এই বিষয়ের উপর একটু মনোযোগ দিন যে, যিহোবা বাইবেলে কোন কথাগুলো লিখিয়েছেন এবং কোন কথাগুলো লেখাননি। তিনি বাইবেলে লিখিয়েছেন, আমরা কীভাবে তাঁর নিকটবর্তী হতে পারি এবং তাঁর বন্ধু হতে পারি, কীভাবে সুখে থাকতে পারি আর কীভাবে অনন্তজীবন পেতে পারি। তবে, যিহোবা আমাদের এত তথ্য দেননি যে, আমাদের মাথা ঘুরে যাবে বরং শুধু সেই বিষয়গুলোই জানিয়েছেন, যেগুলো আমাদের প্রয়োজন রয়েছে। এখান থেকে বোঝা যায়, তিনি আমাদের ভালোবাসেন!—পড়ুন, যোহন ২১:২৫.
১৪. বাইবেল থেকে আর কীভাবে জানা যায়, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন?
১৪ যিহোবা বাইবেলে যা-কিছু লিখিয়েছেন, তা থেকেও জানা যায়, তিনি আমাদের ভালোবাসেন এবং আমাদের সম্মান করেন। তিনি প্রতিটা ছোটোখাটো বিষয়ের জন্য বাইবেলে প্রচুর আইন দেননি যে, আমাদের কী করতে হবে এবং কী করতে হবে না। এর পরিবর্তে, তিনি এটিতে রোমাঞ্চকর ভবিষ্যদ্বাণী ও সেইসঙ্গে অনেক ব্যক্তির জীবনে যে-সমস্ত ঘটনাগুলো ঘটেছিল, সেগুলো লিখিয়েছেন আর এমন পরামর্শ লিখিয়েছেন, যেগুলো আমাদের প্রতিদিন কাজে আসে। এগুলো পড়ে আমাদের ইচ্ছা করে যেন আমরা যিহোবাকে ভালোবাসি এবং তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করি।
১৫. (ক) বাইবেল পড়ে কীভাবে আমরা জানতে পারি, যিহোবা আমাদের জন্য চিন্তা করেন? (খ) ছবিতে যেমনটা দেখানো হয়েছে, একটি ছোট্ট মেয়ে, একজন যুবক ভাই এবং একজন বয়স্ক বোন বাইবেলে দেওয়া কোন কোন ব্যক্তি সম্বন্ধে চিন্তা করছে? (আদি. ৩৯:১, ১০-১২; ২ রাজা. ৫:১-৩; লূক ২:২৫-৩৮)
১৫ বাইবেল পড়ে আমরা এও জানতে পারি, যিহোবা আমাদের জন্য অনেক চিন্তা করেন। কীভাবে? তিনি তাঁর বাক্যে এমন অনেক ব্যক্তির বিবরণ লিখিয়েছেন, যারা “আমাদের মতোই সাধারণ মানুষ ছিলেন” এবং যাদের অনুভূতি আমাদের মতোই ছিল। (যাকোব ৫:১৭) এই কারণে আমরা বুঝতে পারি, তারা কতটা দুঃখ পেয়েছিলেন কিংবা তাদের কেমন লেগেছিল। এ ছাড়া, আমরা যখন পড়ি, যিহোবা তাদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করেছিলেন, তখন আমরা আরও ভালো করে বুঝতে পারি, যিহোবা হলেন “অত্যন্ত স্নেহময় ও করুণাময়।”—যাকোব ৫:১১.
১৬. যে-ব্যক্তিরা ভুল করেছিল, তাদের সঙ্গে যিহোবা যেভাবে আচরণ করেছিলেন, তা থেকে যিহোবা সম্বন্ধে কী জানা যায়? (যিশাইয় ৫৫:৭)
১৬ বাইবেল থেকে আমরা এও জানতে পারি, যখন আমরা কোনো ভুল করে ফেলি, তখন যিহোবা আমাদের ছেড়ে দেন না বরং আমাদের ক্ষমা করে দেন। এটা থেকেও বোঝা যায়, তিনি আমাদের কতটা ভালোবাসেন। যেমন, অতীতে ইজরায়েলীয়েরা বার বার যিহোবার বিরুদ্ধে পাপ করেছিল, তবে তারা যখন হৃদয় থেকে অনুতপ্ত হয়েছিল, তখন যিহোবা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। (পড়ুন, যিশাইয় ৫৫:৭.) প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানেরাও জানত, যিহোবা তাদের কতটা ভালোবাসেন। যেমন, সেই ব্যক্তির কথা চিন্তা করুন, যিনি ভুল পথে চলে গিয়েছিলেন এবং গুরুতর পাপ করেছিলেন। কিন্তু পরে যখন তিনি হৃদয় থেকে অনুতপ্ত হয়েছিলেন, তখন যিহোবা পৌলের মাধ্যমে খ্রিস্টানদের উৎসাহিত করেছিলেন যেন, তারা তাকে ‘ক্ষমা করে এবং সান্ত্বনা দেয়।’ (২ করি. ২:৬, ৭; ১ করি. ৫:১-৫) চিন্তা করুন, এটা কত বড়ো বিষয় যে, যিহোবা তাঁর একজন দাসকে ছেড়ে দেননি, যে ভুল করে ফেলেছিল বরং প্রেমের সঙ্গে তাকে সাহায্য করেছিলেন, সংশোধন করেছিলেন এবং আবারও তাঁর বন্ধু হওয়ার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বর্তমানেও, যিহোবা সেই সমস্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন, যারা হৃদয় থেকে অনুতপ্ত হয়।—যাকোব ৪:৮-১০.
বাইবেল একটি মূল্যবান উপহার, এটির প্রতি উপলব্ধি দেখান
১৭. কেন আমরা বলতে পারি, বাইবেল হল একটি মূল্যবান উপহার?
১৭ বাইবেল প্রকৃতই ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া একটি মূল্যবান উপহার। কেন আমরা তা বলতে পারি? আমরা যেমনটা এই প্রবন্ধে শিখেছি, বাইবেল থেকে আমরা জানতে পারি, ঈশ্বর কতটা প্রজ্ঞাবান, তিনি সবসময় ন্যায়বিচার করেন এবং আমাদের অনেক ভালোবাসেন। যিহোবা বাইবেলে তাঁর সম্বন্ধে অনেক কিছু লিখিয়েছেন। এগুলো থেকে বোঝা যায়, তিনি চান যেন আমরা তাঁকে জানি এবং তাঁর বন্ধুও হই।
১৮. আমাদের যদি বাইবেলের প্রতি উপলব্ধিবোধ থাকে, তা হলে আমরা কী করব?
১৮ আমাদের ঈশ্বরের বাক্যকে, এই মূল্যবান উপহারকে কখনোই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। (যাকোব ১:১৭) তাই আসুন, আমরা সবসময় এটির প্রতি উপলব্ধি দেখাই। কীভাবে আমরা তা দেখাতে পারি? বাইবেলে লেখা কথাগুলো পড়ার এবং তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার মাধ্যমে। আমরা যখন এমনটা করব, তখন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারব যে, এটির মহান গ্রন্থকার আমাদের প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করবেন এবং আমরা “ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান” অর্জন করতে পারব।—হিতো. ২:৫.
গান ৯৮ শাস্ত্র—ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত
a বাইবেল পড়ে আমরা যিহোবাকে আরও ভালোভাবে জানতে পারি এবং তাঁর নিকটবর্তী হতে পারি। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, বাইবেল থেকে কীভাবে জানা যায় যে, ঈশ্বর হলেন খুবই প্রজ্ঞাবান, তিনি সবসময় ন্যায়বিচার করেন এবং আমাদের অনেক ভালোবাসেন। এটা জানার ফলে ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি আমাদের উপলব্ধি আরও বেড়ে যাবে এবং আমরা দেখতে পাব, বাইবেল প্রকৃতই যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া একটি মূল্যবান উপহার।