যিহোবা সর্বশক্তিমান হওয়া সত্ত্বেও বিবেচনা দেখান
“[সদাপ্রভু] আমাদের গঠন জানেন; আমরা যে ধূলিমাত্র, ইহা তাঁহার স্মরণে আছে।”—গীত. ১০৩:১৪.
১, ২. (ক) ক্ষমতাশালী লোকেরা যেভাবে মানুষের সঙ্গে আচরণ করে এবং যিহোবা যেভাবে মানুষের সঙ্গে আচরণ করেন, সেটার মধ্যে কোন পার্থক্য রয়েছে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?
ক্ষমতাশালী লোকেরা প্রায়ই অন্যদের উপরে কর্তৃত্ব করে আর এমনকী অত্যাচার করে। (মথি ২০:২৫; উপ. ৮:৯) যিহোবা কক্ষনো এমনটা করেন না! যদিও তিনি হলেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর অর্থাৎ নিখিলবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি, তা সত্ত্বেও তিনি অসিদ্ধ মানুষদের প্রতি প্রচুররূপে বিবেচনা দেখান। তিনি দয়া দেখান এবং আমাদের অনুভূতি ও প্রয়োজনগুলোর বিষয়ে চিন্তা করেন। তিনি আমাদের অসিদ্ধতার বিষয়টা স্মরণে রাখেন এবং তিনি আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো জানেন আর তাই, তিনি কখনো আমাদের সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু করতে বলেন না।—গীত. ১০৩:১৩, ১৪.
২ বাইবেল থেকে আমরা শিখি যে, যিহোবা তাঁর লোকেদের প্রতি কতটা বিবেচনা দেখান। এখন আসুন, আমরা তিনটে উদাহরণ নিয়ে আলোচনা করি: প্রথমত, কীভাবে যিহোবা দয়ার সঙ্গে অল্পবয়সি শমূয়েলকে মহাযাজক এলির কাছে একটা বিচারের বার্তা পৌঁছে দিতে সাহায্য করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, কীভাবে যিহোবা সেই সময়ে মোশির প্রতি ধৈর্য দেখিয়েছিলেন, যখন মোশি ভেবেছিলেন যে, তিনি ইস্রায়েল জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে মিশর থেকে বের করে আনতে পারবেন না। আর তৃতীয়ত, কীভাবে যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের প্রতি বিবেচনা দেখিয়েছিলেন, যখন তারা মিশর থেকে বের হয়ে আসছিল। এই উদাহরণগুলো থেকে আমরা যিহোবা সম্বন্ধে কী শিখি আর কীভাবে আমরা তাঁকে অনুকরণ করতে পারি?
তিনি একটি অল্পবয়সি ছেলের প্রতি বিবেচনা দেখান
৩. এক রাতে, অল্পবয়সি শমূয়েলের প্রতি কোন উল্লেখযোগ্য বিষয় ঘটে আর সেই ঘটনার বিষয়ে আমাদের মনে কোন প্রশ্ন আসতে পারে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
৩ শমূয়েল একেবারে ছোটো বয়সে আবাসে সেবা করতে শুরু করেছিলেন। (১ শমূ. ৩:১) এক রাতে, তিনি ঘুমিয়ে পড়ার পর খুবই উল্লেখযোগ্য এক বিষয় ঘটে।a (পড়ুন, ১ শমূয়েল ৩:২-১০.) তিনি শুনতে পান, কেউ তার নাম ধরে ডাকছেন। শমূয়েল ভাবেন, বৃদ্ধ মহাযাজক এলি তাকে ডাকছেন। তাই, তিনি বাধ্যতা দেখিয়ে ঘুম থেকে ওঠেন এবং এলির কাছে দৌড়ে গিয়ে বলেন: “এই যে আমি; আপনি ত আমাকে ডাকিয়াছেন।” কিন্তু, এলি তাকে বলেন: “আমি ডাকি নাই।” এই একই বিষয় আরও দু-বার ঘটার পর এলি বুঝতে পারেন, ঈশ্বরই শমূয়েলকে ডাকছেন। তাই, এলি শমূয়েলকে বলেন যে, পরের বার এমনটা ঘটলে তার কী বলা উচিত আর শমূয়েল তার প্রতি বাধ্যতা দেখান। কেন যিহোবা একেবারে শুরুতেই শমূয়েলকে বলে দেননি যে, স্বয়ং তিনিই তাকে ডাকছিলেন? বাইবেল তা জানায় না। তবে এমনটা হতে পারে, যিহোবা এই কারণে বিষয়টা এভাবে ঘটিয়েছিলেন যে, তিনি শমূয়েলের অনুভূতির বিষয়ে চিন্তা করেছিলেন।
৪, ৫. (ক) যিহোবা যখন শমূয়েলকে এলির কাছে একটা বার্তা পৌঁছে দিতে বলেছিলেন, তখন শমূয়েল কী করেছিলেন? (খ) এই বিবরণ যিহোবা সম্বন্ধে আমাদের কী শেখায়?
৪ প্রথম শমূয়েল ৩:১১-১৮ পদ পড়ুন। যিহোবার ব্যবস্থায় সন্তানদের এই আজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল যে, তারা যেন বয়স্ক ব্যক্তিদের, বিশেষ করে যাদের কর্তৃত্ব রয়েছে, তাদের প্রতি সম্মান দেখায়। (যাত্রা. ২২:২৮; লেবীয়. ১৯:৩২) তাই, এটা কল্পনা করা বেশ কঠিন যে, শমূয়েলের মতো একটি অল্পবয়সি ছেলে সকাল বেলায় এলির কাছে যাবে আর দৃঢ়ভাবে তাকে ঈশ্বরের কঠোর বিচারের বার্তা জানাবে। বাইবেল আমাদের জানায়, শমূয়েল “এলিকে ঐ দর্শনের বিষয় জানাইতে ভীত হইলেন।” কিন্তু ঈশ্বর এলির কাছে এটা স্পষ্ট করেছিলেন যে, স্বয়ং তিনিই শমূয়েলকে ডাকছেন। ফল স্বরূপ, এলি শমূয়েলকে বলেন, ঈশ্বর তাকে যা-কিছু জানিয়েছেন, তিনি যেন সেগুলোর কিছুই এলির কাছ থেকে গোপন না করেন। তাই, শমূয়েল এলির প্রতি বাধ্যতা দেখান এবং ‘তাঁহাকে সেই সমস্ত কথা কহেন।’
৫ এই বার্তাটা যে একেবারে অপ্রত্যাশিত ছিল, এমন নয়। এর আগে, “ঈশ্বরের এক জন লোক” এলিকে একইরকম একটা বার্তা জানিয়েছিলেন। (১ শমূ. ২:২৭-৩৬) এই বিবরণ আমাদের শেখায় যে, যিহোবা কতটা বিবেচনা ও প্রজ্ঞা দেখান।
৬. ঈশ্বর অল্পবয়সি শমূয়েলকে যেভাবে সাহায্য করেছিলেন, সেখান থেকে আমরা কোন কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি?
৬ তুমি যদি একজন অল্পবয়সি হয়ে থাকো, তা হলে অল্পবয়সি শমূয়েলের বিষয়ে এই বিবরণটা দেখায় যে, যিহোবা তোমার বিভিন্ন সমস্যা ও অনুভূতির বিষয়ে বোঝেন। হতে পারে, তুমি লাজুক স্বভাবের আর তুমি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের কাছে প্রচার করাকে অথবা তোমার বয়সের ছেলে-মেয়েদের চেয়ে আলাদা হওয়াকে কঠিন বলে মনে করো। তুমি নিশ্চিত হতে পার যে, যিহোবা তোমাকে সাহায্য করতে চান। তাই, তাঁর কাছে প্রার্থনা করো এবং তাঁকে জানাও যে, তুমি আসলে কেমন অনুভব করো। (গীত. ৬২:৮) শমূয়েলের মতো সেই অল্পবয়সি ব্যক্তিদের উদাহরণ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করো, যাদের বিষয়ে বাইবেলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর তোমার বয়সের কিংবা তোমার চেয়ে বেশি বয়সের ভাই-বোনদের সঙ্গে কথা বলো, যারা হয়তো তুমি যে-ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছ, সেই একই ধরনের সমস্যা কাটিয়ে উঠেছে। তারা তোমাকে এমন ঘটনাগুলোর বিষয়ে বলতে পারে, যখন যিহোবা তাদের সাহায্য করেছিলেন আর তা হতে পারে, এক অপ্রত্যাশিত উপায়ে।
তিনি মোশির প্রতি বিবেচনা দেখান
৭, ৮. কীভাবে যিহোবা দেখিয়েছিলেন যে, তিনি মোশির অনুভূতির বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন?
৭ মোশির বয়স যখন ৮০ বছর, তখন যিহোবা তাকে অত্যন্ত কঠিন একটা কার্যভার দেন। তিনি তাকে ইস্রায়েল জাতিকে মিশরের দাসত্ব থেকে মুক্ত করার কার্যভার দেন। (যাত্রা. ৩:১০) মোশি হয়তো এই কার্যভারের কথা শুনে খুবই অবাক হয়েছিলেন কারণ ৪০ বছর ধরে তিনি মিদিয়নে একজন মেষপালক হিসেবে জীবনযাপন করছিলেন। তাই, মোশি যিহোবাকে বলেন: “আমি কে, যে ফরৌণের নিকটে যাই, ও মিসর হইতে ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে বাহির করি?” উত্তরে যিহোবা মোশিকে আশ্বস্ত করে বলেন: “নিশ্চয় আমি তোমার সহবর্ত্তী হইব।” (যাত্রা. ৩:১১, ১২) যিহোবা তার কাছে এও প্রতিজ্ঞা করেন যে, ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গ মোশির কথায় “মনোযোগ করিবে।” তারপরও মোশি বলেন: “কিন্তু দেখুন, তাহারা আমাকে বিশ্বাস করিবে না, ও আমার রবে মনোযোগ করিবে না।” (যাত্রা. ৩:১৮; ৪:১) মোশি সত্যি সত্যিই বলছিলেন, যিহোবা এই ক্ষেত্রে ভুল হতে পারেন! কিন্তু যিহোবা মোশির প্রতি ধৈর্য দেখান। তিনি এমনকী মোশিকে অলৌকিক কাজ করার ক্ষমতা দেন। সত্যি বলতে কী, মোশিই হলেন বাইবেলে উল্লেখিত প্রথম মানুষ, যাকে এইরকম ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।—যাত্রা. ৪:২-৯, ২১.
৮ এই সমস্ত কিছুর পরও মোশি আরেকটা অজুহাত দেখান। তিনি বলেন যে, তিনি ভালোভাবে কথা বলতে পারেন না। তাই, ঈশ্বর তাকে বলেন: “আমি তোমার মুখের সহবর্ত্তী হইব, ও কি বলিতে হইবে, তোমাকে জানাইব।” মোশি কি এই কথা শুনে আশ্বস্ত হয়েছিলেন? না। তিনি ঈশ্বরকে বলেছিলেন যেন ঈশ্বর অন্য কাউকে পাঠান! এতে যিহোবা রেগে গিয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও, যিহোবা মোশির অনুভূতির প্রতি চিন্তা দেখিয়েছিলেন আর তাই, মোশির হয়ে কথা বলার জন্য হারোণকে পাঠিয়েছিলেন।—যাত্রা. ৪:১০-১৬.
৯. কীভাবে যিহোবার দেখানো ধৈর্য ও দয়া মোশিকে একজন উত্তম নেতা হয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল?
৯ এই বিবরণ যিহোবা সম্বন্ধে আমাদের কী শেখায়? যেহেতু যিহোবা হলেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, তাই তিনি তাঁর শক্তি ব্যবহার করে মোশিকে ভয় দেখাতে পারতেন এবং তাকে তাঁর বাধ্য হওয়ার জন্য জোর করতে পারতেন। কিন্তু এর পরিবর্তে, যিহোবা ধৈর্য ও দয়া দেখিয়েছিলেন আর তিনি তাঁর এই বিনয়ী ও নম্র দাসকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, তিনি তার সঙ্গে সঙ্গে থাকবেন। এই পদ্ধতিটা কি সফল হয়েছিল? হ্যাঁ, হয়েছিল! মোশি ঈশ্বরের লোকেদের একজন মহান নেতা হয়ে উঠেছিলেন। তিনি অন্যদের প্রতি মৃদুতা ও বিবেচনা দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন, ঠিক যেমনটা যিহোবা তার প্রতি এই গুণগুলো দেখিয়েছিলেন।—গণনা. ১২:৩.
১০. আমরা যখন যিহোবার মতো করে অন্যদের প্রতি বিবেচনা দেখাই, তখন আমরা কীভাবে উপকৃত হই?
১০ বর্তমানে, এই বিবরণ থেকে আমরা কোন কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি? আপনি যদি একজন স্বামী, একজন বাবা কিংবা একজন প্রাচীন হয়ে থাকেন, তা হলে অন্যদের উপর আপনার কিছু ক্ষমতা রয়েছে। এই কারণেই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেন আপনি যিহোবাকে অনুকরণ করে আপনার স্ত্রী, সন্তান ও মণ্ডলীর সদস্যদের প্রতি বিবেচনা, দয়া ও ধৈর্য দেখান। (কল. ৩:১৯-২১; ১ পিতর ৫:১-৩) আপনি যদি যিহোবা ঈশ্বরকে ও সেইসঙ্গে মহান মোশি অর্থাৎ যিশু খ্রিস্টকে অনুকরণ করেন, তা হলে আপনি অন্যদের পক্ষে আপনার কাছে এসে কথা বলাকে সহজ করে তুলবেন আর আপনি তাদের উৎসাহিত করতে পারবেন। (মথি ১১:২৮, ২৯) এ ছাড়া, আপনি তাদের জন্য একজন উত্তম উদাহরণ হবেন।—ইব্রীয় ১৩:৭.
একজন শক্তিশালী অথচ বিবেচনাপূর্ণ উদ্ধারকর্তা
১১, ১২. যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে বের করে আনার সময়ে কীভাবে তাঁর লোকেদের সুরক্ষিত ও নিরাপদ বোধ করতে সাহায্য করেছিলেন?
১১ খ্রিস্টপূর্ব ১৫১৩ সালে ইস্রায়েলীয়রা যখন মিশর ত্যাগ করেছিল, তখন তাদের সংখ্যা হয়তো ৩০ লক্ষেরও বেশি ছিল। এই দলের মধ্যে সন্তানরা, বয়স্ক ব্যক্তিরা আর হতে পারে কিছু অসুস্থ কিংবা অক্ষম ব্যক্তিও ছিল। এত বড়ো একটা দলের এমন একজন নেতার প্রয়োজন ছিল, যিনি তাদের যত্ন নেবেন ও তাদের পরিস্থিতি বুঝবেন। আর যিহোবা মোশির মাধ্যমে তাদের জন্য ঠিক এইরকমই একজন নেতা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন। ফল স্বরূপ, ইস্রায়েলীয়রা যখন তাদের বাস করার একমাত্র জায়গা ছেড়ে বের হয়ে আসছিল, তখন তারা সুরক্ষিত বোধ করেছিল।—গীত. ৭৮:৫২, ৫৩.
১২ কীভাবে যিহোবা তাঁর লোকেদের সুরক্ষিত ও নিরাপদ বোধ করতে সাহায্য করেছিলেন? ইস্রায়েল জাতি যখন মিশর ত্যাগ করেছিল, তখন যিহোবা তাদের “সসজ্জ হইয়া [“সৈন্যদলের মত করে,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন]” বেরিয়ে আসার জন্য সংগঠিত করেছিলেন। (যাত্রা. ১৩:১৮) যেহেতু তারা এভাবে সংগঠিত ছিল, তাই তারা স্পষ্টভাবে দেখতে পেরেছিল যে, পুরো পরিস্থিতিটা তাদের ঈশ্বরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ছাড়া, যিহোবা যে তাদের সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন এবং তিনি যে তাদের নির্দেশনা ও সুরক্ষা প্রদান করছিলেন, সেই বিষয়টা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি তাদের “দিবসে মেঘ” ও রাতে “অগ্নির আলোক” জুগিয়েছিলেন। (গীত. ৭৮:১৪) আর পরবর্তী সময়ে যা ঘটেছিল, সেটা থেকে বোঝা যায় যে, ইস্রায়েল জাতির এই আশ্বাসের প্রয়োজন ছিল।
১৩, ১৪. (ক) কীভাবে যিহোবা সূফসাগরে ইস্রায়েলীয়দের যত্ন নিয়েছিলেন? (খ) কীভাবে যিহোবা দেখিয়েছিলেন যে, তিনি মিশরীয়দের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী?
১৩ যাত্রাপুস্তক ১৪:১৯-২২ পদ পড়ুন। কল্পনা করুন, সেই ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে আপনিও সেখানে রয়েছেন। আপনি আটকে গিয়েছেন। আপনার পিছনের দিকে মিশরীয় সৈন্যবাহিনী রয়েছে এবং সামনের দিকে সূফসাগর রয়েছে। এরপর ঈশ্বর পদক্ষেপ নেন। আপনার সামনে থাকা মেঘস্তম্ভটা স্থান পরিবর্তন করে শিবিরের পিছনে অর্থাৎ আপনাদের ও মিশরীয়দের মধ্যে গিয়ে অবস্থিতি করে। এর ফলে, তাদের শিবির অন্ধকারের মধ্যে থাকে কিন্তু আপনাদের শিবির অলৌকিকভাবে আলোকিত হয়ে ওঠে! তারপর, আপনি মোশিকে সাগরের উপর তার হাত বাড়াতে দেখেন আর এর ফলে, পূর্ব দিক থেকে প্রবল বাতাস আসে এবং সাগরের অপর পারে যাওয়ার জন্য এক চওড়া পথ তৈরি হয়ে যায়। তাই, বাকি লোকেদের সঙ্গে সঙ্গে আপনি, আপনার পরিবার ও আপনার পশুপাল সুসংগঠিতভাবে সেই পথে হাঁটতে শুরু করেন। আপনি এটা দেখে অবাক হয়ে যান যে, সেই পথে একটুও কাদা নেই আর তা একেবারেই পিচ্ছিল নয়। সেই পথ শুষ্ক ও বেশ দৃঢ় আর তাই, আপনাদের পক্ষে সেটার উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া সহজ হয়। এর ফলে, যারা খুব ধীরে ধীরে হাঁটে, তারাও সুরক্ষিতভাবে অপর পারে পৌঁছে যায়।
১৪ যাত্রাপুস্তক ১৪:২৩, ২৬-৩০ পদ পড়ুন। এই সমস্ত কিছু ঘটাকালীন অহংকারী ও মূর্খ ফরৌণ আপনার ও আপনার সহইস্রায়েলীয়দের পিছু ধাওয়া করতে শুরু করেন। এরপর, মোশি আবারও সাগরের উপর তার হাত বাড়ান এবং জলের সেই দুটো প্রাচীর ভেঙে যায় আর ফরৌণ ও তার সৈন্যবাহিনীর উপর আছড়ে পড়ে। তারা কেউই রক্ষা পায় না!—যাত্রা. ১৫:৮-১০.
১৫. এই বিবরণ যিহোবা সম্বন্ধে আপনাকে কী শেখায়?
১৫ এই বিবরণ যিহোবা সম্বন্ধে আরেকটা বিষয়ও শেখায়। তিনি হলেন শৃঙ্খলার ঈশ্বর আর তাঁর এই গুণ আমাদের সুরক্ষিত ও নিরাপদ বোধ করতে সাহায্য করে। (১ করি. ১৪:৩৩) ঠিক যেমন একজন মেষপালক তার মেষদের ভালোবাসেন এবং তাদের দেখাশোনা করেন, তেমনই যিহোবা ব্যাবহারিক উপায়ে তাঁর লোকেদের যত্ন নেন। তিনি তাদের শত্রুদের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখার মাধ্যমে ক্রমাগত নিরাপত্তা জোগান। এই বিধিব্যবস্থার শেষের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময়ে এই বিষয়টা আমাদের প্রচুররূপে আশ্বস্ত করে ও সান্ত্বনা দেয়।—হিতো. ১:৩৩.
১৬. যিহোবা যেভাবে ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করেছিলেন, সেটা ভালোভাবে বিবেচনা করার মাধ্যমে কীভাবে আমরা উপকৃত হতে পারি?
১৬ বর্তমানেও, যিহোবা তাঁর লোকেদের একটা দল হিসেবে যত্ন নেন। তিনি তাদের তাঁর সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করেন এবং তাদের শত্রুদের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখেন। আর তিনি মহাক্লেশের সময়েও এমনটা করে যাবেন, যেটা খুব শীঘ্রই আসতে চলেছে। (প্রকা. ৭:৯, ১০) তাই, ঈশ্বরের লোকেরা অল্পবয়সি কিংবা বয়স্ক, স্বাস্থ্যবান কিংবা অক্ষম, যা-ই হোক না কেন, তারা মহাক্লেশের সময়ে ঘাবড়ে যাবে না কিংবা আতঙ্কিত হবে না।b সত্যি বলতে কী, তারা এর একেবারে বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখাবে! তারা যিশুর এই কথাগুলো স্মরণ করবে: “তোমরা ঊর্দ্ধ্বদৃষ্টি করিও, মাথা তুলিও, কেননা তোমাদের মুক্তি সন্নিকট।” (লূক ২১:২৮) এমনকী যখন ফরৌণের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী গোগ অর্থাৎ বিভিন্ন জাতির এক জোট ঈশ্বরের লোকেদের উপর আক্রমণ করবে, তখন তারা এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকবে যে, যিহোবা তাদের সুরক্ষা জোগাবেন। (যিহি. ৩৮:২, ১৪-১৬) কেন? কারণ তারা জানে যে, যিহোবা পরিবর্তিত হন না। তিনি আবারও এটা প্রমাণ করবেন যে, তিনি তাঁর লোকেদের একজন প্রেমময় ও যত্নশীল উদ্ধারকর্তা।—যিশা. ২৬:৩, ২০.
১৭. (ক) যিহোবা যেভাবে তাঁর লোকেদের যত্ন নেন, সেই বিষয়ে বাইবেলের বিবরণগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করার মাধ্যমে কীভাবে আমরা উপকৃত হতে পারি? (খ) পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?
১৭ এই প্রবন্ধে আমরা এই বিষয়ে কিছু উদাহরণ দেখেছি যে, যিহোবা যখন তাঁর লোকেদের যত্ন নেন, নির্দেশনা দেন ও রক্ষা করেন, তখন কীভাবে তিনি বিবেচনা ও দয়া দেখিয়ে থাকেন। এইরকম বিবরণগুলো নিয়ে ধ্যান করার সময়ে এমন খুঁটিনাটি বিষয়গুলো খুঁজে বের করুন, যেগুলো আপনি হয়তো আগে কখনো লক্ষ করেননি আর এভাবে যিহোবা সম্বন্ধে নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন। আপনি যখন যিহোবার চমৎকার গুণগুলো সম্বন্ধে আরও বেশি করে শিখবেন, তখন তাঁর প্রতি আপনার ভালোবাসা ও বিশ্বাস আরও বেশি শক্তিশালী হবে। পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা শিখব যে, কোন কোন উপায়ে আমরা আমাদের পরিবারে, মণ্ডলীতে ও পরিচর্যায় বিবেচনা দেখানোর মাধ্যমে যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারি।
a যিহুদি ইতিহাসবেত্তা জোসিফাস বলেন যে, সেই সময়ে শমূয়েলের বয়স ১২ বছর ছিল।
b এমনটা ধরে নেওয়া যুক্তিসংগত যে, আরমাগিদোন থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েক জন শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিও থাকবে। পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু এমন লোকেদের সুস্থ করেছিলেন, যাদের “সর্ব্বপ্রকার ব্যাধি” বা অক্ষমতা ছিল। সেই সময়ে তিনি যা-কিছু করেছিলেন, সেগুলো আমাদের দেখায় যে, আরমাগিদোন থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য তিনি কী করবেন। (মথি ৯:৩৫) যারা পুনরুত্থিত হবে, তাদের সুস্থ শরীর থাকবে।