যো না থ ন ‘উনি ঈশ্বরের সহিত কার্য্য করিয়াছেন’
ইস্রায়েলের প্রথম রাজার ছেলে একজন পলাতক ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। “ভয় করিও না,” তিনি সেই পলাতক ব্যক্তিকে বলেন, “আমার পিতা শৌলের হস্ত তোমাকে পাইবে না, আর তুমি ইস্রায়েলের উপরে রাজা হইবে, এবং আমি তোমার দ্বিতীয় হইব।”—১ শমূয়েল ২৩:১৭.
সেই ব্যক্তি ছিলেন যোনাথন; আর পলাতক ব্যক্তি ছিলেন দায়ূদ। যদি এর অল্পসময় পরেই যোনাথনের মৃত্যু না হতো, তা হলে সম্ভবত তিনিই দায়ূদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সহযোগী হতেন।
দায়ূদের সঙ্গে যোনাথনের বন্ধুত্ব ছিল অসাধারণ। বস্তুতপক্ষে, যোনাথন ছিলেন একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি। তার সমসাময়িক অনেকে তা-ই মনে করত কারণ তারা তার সম্বন্ধে বলেছিল: ‘উনি ঈশ্বরের সহিত কার্য্য করিয়াছেন।’ (১ শমূয়েল ১৪:৪৫) কেন তারা এমনটা বলেছিল? যোনাথনের কোন গুণাবলি ছিল? আর তার জীবনের ঘটনা আপনার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
ইস্রায়েলীয়রা “বিপদ্গ্রস্ত”
বাইবেল যখন প্রথম যোনাথনের বিষয়ে উল্লেখ করে, তখন ইস্রায়েলীয়রা “বিপদ্গ্রস্ত” অবস্থায় ছিল। পলেষ্টীয়রা তাদের দেশে জোর করে লুঠপাট করেছে এবং তাদেরকে আত্মরক্ষার কোনো সুযোগই দেয়নি।—১ শমূয়েল ১৩:৫, ৬, ১৭-১৯.
কিন্তু যিহোবা বলেছিলেন, তিনি তাঁর লোকেদের পরিত্যাগ করবেন না আর যোনাথনের সেই বিষয়ে আস্থা ছিল। তার বাবা শৌলের বিষয়ে ঈশ্বর বলেছিলেন: “সে পলেষ্টীয়দের হস্ত হইতে আমার প্রজাদিগকে নিস্তার করিবে।” এই কথার ওপর যোনাথনের নির্ভরতা ছিল। তিনি নিজে ইতিমধ্যেই পলেষ্টীয়দের ওপর জয়লাভ করার জন্য সামান্য অস্ত্রে সজ্জিত ১,০০০ জন ইস্রায়েলীয়কে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এখন তিনি পলেষ্টীয়দের হুমকিকে সম্পূর্ণরূপে শেষ করে দিতে চাচ্ছিলেন।—১ শমূয়েল ৯:১৬; ১২:২২; ১৩:২, ৩, ২২.
এক সাহসী আক্রমণ
যোনাথন মিক্মসের গিরিপথের কাছে পলেষ্টীয়দের একটা প্রহরী সৈন্যদলকে লক্ষ্যবস্তু করেছিলেন। (১ শমূয়েল ১৩:২৩) সেখানে পৌঁছাতে হলে তাকে “হামাগুড়ি” দিয়ে সেই জায়গায় উঠতে হবে। তাই বলে তিনি দমে যাননি। যোনাথন কেবল তার অস্ত্রবাহককে নিয়ে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং তাকে বলেছিলেন: “হয় ত সদাপ্রভু আমাদের জন্য কর্ম্ম করিবেন; কেননা অনেকের দ্বারা হউক বা অল্পের দ্বারা হউক, নিস্তার করিতে সদাপ্রভুর কোন প্রতিবন্ধক নাই।”—১ শমূয়েল ১৪:৬, ১৩.
এই দুজন ইস্রায়েলীয় যিহোবার কাছ থেকে একটা চিহ্ন খুঁজেছিল। তারা সেই প্রহরী সৈন্যদলের কাছে নিজেদেরকে প্রকাশ করবে। যদি পলেষ্টীয়রা বলে: “থাক, আমরা তোমাদের নিকটে আসিব,” তা হলে যোনাথন এবং তার অস্ত্রবাহক তাদের কাছে উঠে যাবে না। কিন্তু, শত্রুরা যদি এই কথা বলে: “আমাদের নিকটে উঠিয়া আইস,” তা হলে এর অর্থ হবে যিহোবা যোনাথন এবং তার অস্ত্রবাহককে জয়ী করবেন। যদি যোনাথন ঈশ্বরের সাহায্যের বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন, তা হলে তিনি লড়াই করার উদ্দেশ্যে সেই প্রহরী সৈন্যদলের কাছে উঠে গিয়েছিলেন।—১ শমূয়েল ১৪:৮-১০.
মাত্র দুজন ব্যক্তি একটা পুরো প্রহরী সৈন্যদলের বিরুদ্ধে কী করতে পারত? কেন, যিহোবা কি বিচারক এহূদকে সাহায্য করেননি, যখন তিনি মোয়াবের বিরুদ্ধে ইস্রায়েলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন? ঈশ্বর কি শম্গরকে গোচারণের পাঁচণী দ্বারা ৬০০ পলেষ্টীয়কে আঘাত করতে সক্ষম করেননি? আর যিহোবা কি শিম্শোনকে একাই পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ কাজ করার শক্তি দেননি? যোনাথনের এই নির্ভরতা ছিল যে, ঈশ্বর তাকেও সাহায্য করবেন।—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৩:১২-৩১; ১৫:৬-৮, ১৫; ১৬:২৯, ৩০.
দুজন ইস্রায়েলীয়কে দেখে পলেষ্টীয়রা চিৎকার করে বলেছিল: “আমাদের নিকটে উঠিয়া আইস, আমরা তোমাদিগকে কিছু দেখাইব।” যোনাথন এবং তার অস্ত্রবাহক উঠে গিয়েছিল। সাহসের সঙ্গে, তারা শত্রুপক্ষের সেনাবাহিনীর কমবেশ ২০ জনকে আক্রমণ করেছিল এবং হত্যা করেছিল আর এই কারণে প্রহরীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। সম্ভবত পলেষ্টীয়রা মনে করেছিল যে, আরও অনেক ইস্রায়েলীয় যোদ্ধা প্রথম দুজনকে অনুসরণ করছে। এরপর “সমস্ত সৈন্যের মধ্যে কম্প উপস্থিত হইল,” বিবরণ বলে, “আর ভূমিকম্প হইল; এইরূপে ঈশ্বর হইতে মহাকম্প উপস্থিত হইল।” ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা এই ভূমিকম্পের কারণে পলেষ্টীয়রা ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছিল আর এর ফলে “প্রত্যেক জনের খড়্গ তাহার বন্ধুর প্রতিকূল [হইয়াছিল]।” ইস্রায়েলের সৈন্যদল যখন এটা দেখেছিল, তখন তারাও সাহসী হয়েছিল। যে-ইস্রায়েলীয়রা লুকিয়ে ছিল এবং যারা পলেষ্টীয়দের পক্ষ নিয়েছিল, “তাহারা মিক্মস অবধি অয়ালোন পর্য্যন্ত পলেষ্টীয়দিগকে আঘাত করিল।”—১ শমূয়েল ১৪:১১-২৩, ৩১.
লোকেরা রক্ষা করেছিল
রাজা শৌল তার সৈন্যদের মধ্যে যেকেউ যুদ্ধে জয়ী হওয়ার আগে খাবার খাবে, তার ওপর অজ্ঞানতাপূর্বক এক অভিশাপ আরোপ করেছিলেন। যেকোনো কারণেই হোক, যোনাথন এই বিষয়টা জানতেন না। তাই, যোনাথন খেয়েছিলেন। তিনি তার হাতে থাকা দণ্ড মধুর একটা চাকে ডুবিয়েছিলেন এবং কিছুটা মধু খেয়েছিলেন। স্পষ্টতই, এটা তাকে যুদ্ধ শেষ করার জন্য পুনরায় শক্তি প্রদান করেছিল।—১ শমূয়েল ১৪:২৪-২৭.
যোনাথন খেয়েছেন, তা জানার পর শৌল এই আদেশ দেন যে, যোনাথনকে মরতে হবে। যোনাথন মৃত্যুবরণ করতে ভয় পাননি। “দেখুন, আমি মরিব,” তিনি বলেছিলেন। “কিন্তু লোকেরা শৌলকে কহিল, ইস্রায়েলের মধ্যে যিনি এমন মহানিস্তার সাধন করিয়াছেন, সেই যোনাথন কি মরিবেন? এমন না হউক, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, উহাঁর মস্তকের একটী কেশও মৃত্তিকাতে পড়িবে না, কেননা উনি অদ্য ঈশ্বরের সহিত কার্য্য করিয়াছেন। এইরূপে লোকেরা যোনাথনকে রক্ষা করিল, তাঁহার মৃত্যু হইল না।”—১ শমূয়েল ১৪:৩৮-৪৫.
বর্তমান সময়ে ঈশ্বরের একজন দাস আক্ষরিক যুদ্ধে অংশ নেন না কিন্তু আপনার জীবনেও হয়তো এমন সময় আসতে পারে, যখন আপনারও বিশ্বাস ও সাহসের প্রয়োজন হয়ে থাকে। আপনার চারপাশের সকলেই যখন মন্দ কাজ করছে, তখন যা সঠিক তা করা হয়তো কঠিন হতে পারে। কিন্তু, যিহোবা আপনাকে শক্তিশালী করবেন এবং তাঁর ধার্মিক মানগুলো উচ্চীকৃত করার জন্য আপনার আকাঙ্ক্ষাকে আশীর্বাদ করবেন। আপনার হয়তো যিহোবার সংগঠনের মধ্যে সেবার কিছু বিশেষ সুযোগ গ্রহণ করার জন্য সাহসের প্রয়োজন, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে আপনার পরিচর্যাকে বাড়ানো, নতুন কার্যভারগুলো গ্রহণ করা অথবা যেখানে রাজ্য ঘোষণাকারীদের বেশি দরকার, সেখানে গিয়ে সেবা করা। আপনি হয়তো চিন্তা করতে পারেন যে, আপনি এই কার্যভারের যোগ্য কি না। তবে নিশ্চিত থাকুন যে, আপনি যদি নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে থাকেন, তা হলে আপনি এক উত্তম কাজ করছেন, যাতে যিহোবা আপনাকে এমন এক উপায়ে ব্যবহার করতে পারেন, যেটাকে তিনি উপযুক্ত বলে মনে করেন। যোনাথনকে স্মরণ করুন! ‘উনি ঈশ্বরের সহিত কার্য্য করিয়াছেন।’
যোনাথন এবং দায়ূদ
প্রায় ২০ বছর পর, পলেষ্টীয় বীর গলিয়াৎ ইস্রায়েলীয় সেনাবাহিনীকে টিটকারি দিয়েছিলেন কিন্তু দায়ূদ তাকে হত্যা করেছিলেন। যদিও যোনাথন দায়ূদের চেয়ে সম্ভবত ৩০ বছরের বড় ছিলেন কিন্তু এই দুজনের মধ্যে বেশ কিছু মিল ছিল।a মিক্মসে যোনাথন যে-সাহস দেখিয়েছিলেন, দায়ূদের বেলায়ও তা দেখা গিয়েছিল। দুজনের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মিলটা হল, যিহোবার রক্ষা করার ক্ষমতার ওপর দায়ূদের একই বিশ্বাস ছিল, যা তাকে সেই সময়েও নির্ভীকভাবে গলিয়াতের মুখোমুখি হতে সক্ষম করেছিল, যখন অন্য সমস্ত ইস্রায়েলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা গ্রহণ করা থেকে পিছু হটে গিয়েছিল। সেই কারণেই “যোনাথনের প্রাণ দায়ূদের প্রাণে সংসক্ত হইল, এবং যোনাথন আপন প্রাণের মত তাঁহাকে ভালবাসিতে লাগিলেন।”—১ শমূয়েল ১৭:১-১৮:৪.
যদিও দায়ূদের অসাধারণ দক্ষতার কারণে রাজা শৌল তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখেছিলেন কিন্তু যোনাথন দায়ূদের প্রতি কোনো ঈর্ষা অনুভব করেননি। তিনি এবং দায়ূদ অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে ওঠেন আর সম্ভবত তাদের ব্যক্তিগত কথাবার্তার সময়ে যোনাথন ইস্রায়েলের পরবর্তী রাজা হিসেবে দায়ূদের অভিষেকের বিষয়টা জানতে পেরেছিলেন। যোনাথন ঈশ্বরের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন।
রাজা শৌল যখন দায়ূদকে হত্যা করার বিষয়ে নিজের ছেলে এবং দাসদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তখন যোনাথন দায়ূদকে সতর্ক করেছিলেন। যোনাথন শৌলকে যুক্তি দেখিয়ে নিশ্চিত করেছিলেন যে, দায়ূদকে তার ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। বস্তুতপক্ষে, দায়ূদ রাজার বিরুদ্ধে কোনো পাপ করেননি! দায়ূদ কি তার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গলিয়াতের মুখোমুখি হননি? দুর্ব্যবহারের শিকার তার এই বন্ধুর জন্য যোনাথনের এমন আন্তরিক আবেদনের কারণে শৌল শান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু, শীঘ্রই রাজা পুনরায় হত্যা করার পরিকল্পনা করতে শুরু করেছিলেন এবং দায়ূদকে শেষ করে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যা তাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল।—১ শমূয়েল ১৯:১-১৮.
যোনাথন অনুগতভাবে দায়ূদকে সমর্থন করেছিলেন। দুই বন্ধু কী করতে হবে, সেই বিষয়ে পরিকল্পনা করার জন্য মিলিত হয়েছিল। তার বন্ধুর প্রতি অনুগত থেকে এবং সেইসঙ্গে তার বাবার প্রতিও অনুগত থাকার প্রাণপণ প্রচেষ্টা করে যোনাথন দায়ূদকে বলেছিলেন: “এমন না হউক, তুমি মরিবে না।” কিন্তু, দায়ূদ যোনাথনকে বলেছিলেন: “আমার ও মৃত্যুর মধ্যে নিতান্ত এক পাদমাত্র অন্তর।”—১ শমূয়েল ২০:১-৩.
শৌলের অভিপ্রায় পরীক্ষা করার জন্য যোনাথন ও দায়ূদ একটা পরিকল্পনা তৈরি করেছিল। যদি রাজার টেবিলে দায়ূদের অনুপস্থিতি রাজার দৃষ্টিগোচর হয়, তা হলে যোনাথন তার বাবাকে বলবে, দায়ূদ তার গোষ্ঠীর এক যজ্ঞে অংশ নেওয়ার জন্য তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন। এক্ষেত্রে শৌল যদি ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান, তা হলে সেটা দায়ূদের প্রতি তার বিদ্বেষের এক ইঙ্গিত দেবে। যোনাথন তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন এবং ভবিষ্যতে দায়ূদের রাজপদকে পরোক্ষভাবে স্বীকার করে বলেছিলেন: “সদাপ্রভু যেমন আমার পিতার সহবর্ত্তী হইয়াছেন, তদ্রূপ তোমারও সহবর্ত্তী থাকুন।” দুজনে একে অন্যের প্রতি অনুগত থাকার শপথ করে আর পরীক্ষার ফল কী হবে, তা যোনাথন দায়ূদকে যেভাবে জানাবেন, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।—১ শমূয়েল ২০:৫-২৪.
শৌল যখন দেখেছিলেন যে দায়ূদ অনুপস্থিত, তখন যোনাথন ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, দায়ূদ তাকে এই অনুরোধ করেছিলেন: “আমি যদি তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইয়া থাকি, তবে আমি গিয়া আমার জ্ঞাতিদিগকে দেখিয়া আসি।” যোনাথন এটা স্বীকার করতে ভয় পাননি যে, দায়ূদের প্রতি তিনি অনুগ্রহ দেখিয়েছিলেন। রাজা প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন! তিনি যোনাথনকে অপমান করেছিলেন এবং চিৎকার করে বলেছিলেন যে, রাজা হিসেবে তার ছেলের উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে দায়ূদ এক হুমকিস্বরূপ। শৌল তার কাছে দায়ূদকে মৃত্যুর যোগ্য এক ব্যক্তি হিসেবে নিয়ে আসার জন্য যোনাথনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। যোনাথন দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন: “সে কেন হত হইবে? সে কি করিয়াছে?” প্রচণ্ড রেগে গিয়ে শৌল নিজের বর্শা তার ছেলের দিকে সজোরে নিক্ষেপ করেছিলেন। যোনাথন অক্ষত অবস্থায় রক্ষা পেয়েছিলেন কিন্তু দায়ূদের জন্য তার অনেক দুঃখ হয়েছিল।—১ শমূয়েল ২০:২৫-৩৪.
যোনাথন কতই না আনুগত্য দেখিয়েছেন! শুধুমাত্র মানব দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, দায়ূদের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব থেকে যোনাথনের তেমন কিছুই লাভ করার ছিল না বরং অনেক কিছুই হারানোর ছিল। কিন্তু যিহোবাই এটা স্থির করেছিলেন যে, শৌলের পর দায়ূদ রাজা হবেন এবং ঈশ্বর যা উদ্দেশ্য করেছিলেন, সেটা যোনাথন ও অন্যদের ভালর জন্যই করেছিলেন।
অশ্রুসিক্ত এক বিদায়
যোনাথন দায়ূদকে সংবাদ দেওয়ার জন্য তার সঙ্গে গোপনে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তাই, এটা স্পষ্ট ছিল যে, দায়ূদ আর কখনোই শৌলের রাজসভায় প্রবেশ করেননি। এই দুই ব্যক্তি একত্রে কেঁদেছিল এবং পরস্পর আলিঙ্গন করেছিল। এরপর দায়ূদ লুকিয়ে থাকার জন্য চলে গিয়েছিলেন।—১ শমূয়েল ২০:৩৫-৪২.
যোনাথন সেই পলাতককে আর একবার মাত্র দেখেছিলেন, যখন তিনি “সীফ প্রান্তরে বনে” শৌলের কাছ থেকে পালিয়ে ছিলেন। আর সেই সময়ে যোনাথন দায়ূদকে এই কথাগুলো বলে উৎসাহিত করেছিলেন: “ভয় করিও না, আমার পিতা শৌলের হস্ত তোমাকে পাইবে না, আর তুমি ইস্রায়েলের উপরে রাজা হইবে, এবং আমি তোমার দ্বিতীয় হইব, ইহা আমার পিতা শৌলও জানেন।” (১ শমূয়েল ২৩:১৫-১৮) এর অল্পসময় পরেই, যোনাথন এবং শৌল পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধে মারা গিয়েছিল।—১ শমূয়েল ৩১:১-৪.
যারা ঈশ্বরকে ভালবাসে, তাদের সকলের উচিত যোনাথন যে-পথ অনুধাবন করেছিলেন, তা মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করা। আপনি কি আনুগত্যের বিষয়ে দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হন? তখন স্মরণ করুন যে, শৌল যোনাথনকে তার নিজের জন্য চিন্তা করতে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু, যোনাথন আন্তরিকভাবে বশীভূত হয়ে ও শ্রদ্ধার সঙ্গে যিহোবাকে সম্মান করেছিলেন এবং ঈশ্বর যাকে ইস্রায়েলের পরবর্তী রাজা হিসেবে মনোনীত করেছেন, সেই ব্যক্তির জন্য আনন্দিত হয়েছিলেন। হ্যাঁ, যোনাথন দায়ূদকে সমর্থন করেছিলেন এবং যিহোবার প্রতি অনুগত ছিলেন।
যোনাথনের চমৎকার গুণাবলি ছিল। সেগুলো অনুকরণ করুন! তা হলে, লোকেরা যোনাথনের বিষয়ে যেমনটা বলেছিল, তেমনই আপনার বিষয়েও এই কথা বলবে: ‘উনি ঈশ্বরের সহিত কার্য্য করিয়াছেন।’—১ শমূয়েল ১৪:৪৫.
[পাদটীকা]
a শৌলের ৪০ বছরের শাসনের শুরুর দিকে যোনাথনকে যখন প্রথম একজন সহস্রপতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল, তখন তার বয়স ছিল কমপক্ষে ২০ বছর। (গণনাপুস্তক ১:৩; ১ শমূয়েল ১৩:২) তাই, যোনাথন যখন সা.কা.পূ. প্রায় ১০৭৮ সালে মারা যান, তখন তার বয়স নিশ্চয়ই ৬০ বছরের কাছাকাছি ছিল। যেহেতু দায়ূদের বয়স সেই সময়ে ৩০ বছর ছিল, তাই স্পষ্টতই যোনাথন দায়ূদের চেয়ে প্রায় ৩০ বছরের বড় ছিলেন।—১ শমূয়েল ৩১:২; ২ শমূয়েল ৫:৪.
[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
যোনাথন দায়ূদের প্রতি ঈর্ষা করেননি