যিহোবার আনন্দ আমাদের সুরক্ষিত আশ্রয়
“এই দিন আমাদের প্রভুর উদ্দেশে পবিত্র, তোমরা বিষণ্ণ হয়ো না, কেননা যিহোবাতে যে আনন্দ, তাই তোমাদের সুরক্ষিত আশ্রয়।”—নহিমিয় ৮:১০, NW.
১, ২. (ক) সুরক্ষিত আশ্রয় কী? (খ) দায়ূদ কিভাবে দেখান যে তিনি যিহোবার কাছে আশ্রয় নিয়েছিলেন?
যিহোবা হলেন এক অতুলনীয় সুরক্ষিত আশ্রয়। আর এই সুরক্ষিত আশ্রয়টি কী? এটি হচ্ছে একটি সুরক্ষিত স্থান, একটি নিরাপদ বা পরিত্রাণের জায়গা। প্রাচীন ইস্রায়েলের দায়ূদ, ঈশ্বরকে তার সুরক্ষিত আশ্রয় হিসাবে জ্ঞান করতেন। উদাহরণস্বরূপ, বিবেচনা করে দেখুন সবচাইতে মহান সেই ব্যক্তিত্বের উদ্দেশ্যে দায়ূদের সেই গানের কথা “যে দিন সদাপ্রভু সমস্ত শত্রুর হস্ত হইতে, এবং শৌলের হস্ত হইতে দায়ূদকে উদ্ধার করিলেন,” অর্থাৎ ইস্রায়েলের রাজা।—গীতসংহিতা ১৮, শীর্ষলিখন।
২ দায়ূদ সেই মর্মস্পর্শী গানটি এইভাবে শুরু করেন: “হে সদাপ্রভু! মম বল! আমি তোমাতে অনুরক্ত। সদাপ্রভু মম শৈল, মম দুর্গ, ও মম রক্ষাকর্ত্তা, মম ঈশ্বর, মম দৃঢ় শৈল, আমি তাঁহার শরণাগত; মম ঢাল, মম ত্রাণশৃঙ্গ, মম উচ্চদুর্গ।” (গীতসংহিতা ১৮:১, ২) অন্যায়ভাবে রাজা শৌলের রক্ষণাবেক্ষণ থেকে বঞ্চিত ও পশ্চাদ্ধাবিত হয়ে, বিশ্বস্ত দায়ূদ যিহোবার কাছে আশ্রয় নিয়েছিলেন, ঠিক যেমন একজন ব্যক্তি দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সুরক্ষিত স্থানে আশ্রয় নেয়।
৩. ইষ্রার দিনের যিহূদীরা কেন “অতিশয় আনন্দ” উপভোগ করেছিল?
৩ বিশ্বস্ত রক্ষাকারী যারা তাঁর পথে চলে, যিহোবা তাদের যে আনন্দ দান করেন তা তাদের কাছে হয়ে ওঠে এক অবিচলিত সুরক্ষিত আশ্রয়। (হিতোপদেশ ২:৬-৮; ১০:২৯) তবে এই ঈশ্বর-দত্তক আনন্দ পেতে হলে, লোকেদের অবশ্যই ঐশিক ইচ্ছা পালন করতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করে দেখুন সা.শ.পূ. ৪৬৮ সালে যিরূশালেমে কী ঘটেছিল। নকলনবিস ইষ্রা ও অন্যান্যরা অর্থপূর্ণভাবে নিয়মের বাক্য পড়ার দ্বারা এর নিহিতার্থ অপরকে জ্ঞাত করান। এরপর লোকেদেরকে উৎসাহ দেওয়া হয়: “যাও, পুষ্ট দ্রব্য ভোজন কর, মিষ্ট রস পান কর, এবং যার জন্য কিছু প্রস্তুত নেই, তাকে অংশ পাঠিয়ে দাও; কারণ এই দিন আমাদের প্রভুর উদ্দেশে পবিত্র, তোমরা বিষণ্ণ হয়ো না, কেননা যিহোবাতে যে আনন্দ, তাই তোমাদের সুরক্ষিত আশ্রয়।” “অতিশয় আনন্দের” সূচনা হয়, যতই যিহূদীরা তাদের অর্জিত জ্ঞানকে প্রয়োগ করতে থাকে এবং আনন্দময় কুটীর পর্ব পালন করে। (নহিমিয় ৮:১-১২, NW) ‘যিহোবার আনন্দ যাদের সুরক্ষিত আশ্রয় ছিল তারা তাঁর উপাসনা ও পরিচর্যার জন্য শক্তি অর্জন করেছিল। যেহেতু যিহোবার আনন্দ তাদের সুরক্ষিত আশ্রয় ছিল, অতএব আমরা আশা করতে পারি যে আজকের দিনেও যিহোবার লোকেদের আনন্দময় হওয়া উচিত। তাহলে বর্তমান দিনে তাদের আনন্দের কয়েকটি কারণ কী?
“সম্পূর্ণরূপে আনন্দিত”
৪. যিহোবার লোকেদের জন্য একটি অসাধারণ আনন্দের উৎস কী?
৪ আনন্দিত হওয়ার একটা প্রধান কারণ হল, একসাথে মিলিত হওয়ার যে ব্যবস্থা যিহোবা করেছেন তা। অধিবেশন ও সম্মেলনগুলি আজকের দিনে যিহোবার সাক্ষীদের আনন্দ যোগায় ঠিক যেমন, বাৎসরিক উৎসবগুলি ইস্রায়েলদের হৃদয়ে আনন্দ আনত। ইস্রায়েলের লোকেদের বলা হয়েছিল: “সদাপ্রভুর মনোনীত স্থানে তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে সাত দিন উৎসব (কুটীর পর্ব্ব) পালন করিবে; কেননা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সমস্ত উৎপন্ন দ্রব্যে ও হস্তকৃত সমস্ত কর্ম্মে তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিবেন, আর তুমি সম্পূর্ণরূপে আনন্দিত হইবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১৩-১৫) হ্যাঁ, ঈশ্বর চেয়েছিলেন যে তারা “সম্পূর্ণরূপে আনন্দিত হইবে”। একই জিনিস খ্রীষ্টানদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, কারণ প্রেরিত পৌল সহবিশ্বাসীদের উৎসাহ দিয়ে লিখেছিলেন: “তোমরা প্রভুতে সর্ব্বদা আনন্দ কর; পুনরায় বলিব, আনন্দ কর।”—ফিলিপীয় ৪:৪.
৫. (ক) আনন্দ কী এবং খ্রীষ্টানেরা তা কিভাবে অর্জন করে? (খ) পরীক্ষার মধ্যেও আমরা কিভাবে আনন্দ পেতে পারি?
৫ যেহেতু যিহোবা চান যে আমরা আনন্দে থাকি, তাই তিনি আনন্দকে, তাঁর পবিত্র আত্মার একটি ফলস্বরূপ আমাদের দিয়েছেন। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) আর এই আনন্দ জিনিসটি কী? কোন উত্তম কিছু আশা বা অর্জন করার দ্বারা যে পরমানন্দ আবেগের সৃষ্টি হয়, সেটাই হচ্ছে আনন্দ। এই আনন্দ হল প্রকৃত সুখ, এমনকি মহোল্লাসের অবস্থা। ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার এই ফলটি আমাদের পরীক্ষার সময় শক্তি প্রদান করে। “তিনিই [যীশু] আপনার সম্মুখস্থ আনন্দের নিমিত্ত ক্রুশ সহ্য করিলেন, অপমান তুচ্ছ করিলেন, এবং ঈশ্বরের সিংহাসনের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইয়াছেন।” (ইব্রীয় ১২:২) শিষ্য যাকোব লেখেন: “হে আমার ভ্রাতৃগণ, তোমরা যখন নানাবিধ পরীক্ষায় পড়, তখন তাহা সর্ব্বতোভাবে আনন্দের বিষয় জ্ঞান করিও; জানিও, তোমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষাসিদ্ধতা ধৈর্য্য সাধন করে।” কিন্তু, কোন বিশেষ পরীক্ষার সময় কী করব তা যদি আমরা বুঝতে না পারি তাহলে? তখন আমরা নিশ্চয়তার সাথে প্রজ্ঞার জন্য প্রার্থনা করতে পারি যাতে করে এর মোকাবিলা করা যায়। স্বর্গীয় প্রজ্ঞার সাথে সমতা রেখে কাজ করা, আমাদের সাহায্য করতে পারে যিহোবার দেওয়া আনন্দকে না হারিয়ে সমস্যার সমাধান অথবা নির্বন্ধ তাড়নার মোকাবিলা করতে।—যাকোব ১:২-৮.
৬. আনন্দ ও সত্য উপাসনার মধ্যে কী সম্পর্ক রয়েছে?
৬ যিহোবার দেওয়া আনন্দ আমাদের শক্তিশালী করে সত্য উপাসনার উন্নতিবর্ধন করতে। এটাই হয়েছিল নহিমিয় ও ইষ্রার দিনে। সেই সময়কার যিহূদীরা যাদের কাছে যিহোবার আনন্দ ছিল সুরক্ষিত আশ্রয়, তারা বিশেষভাবে বলশালী হয়েছিল সত্য উপাসনার উন্নতি সাধন করতে। আর যতই তারা যিহোবার উপাসনার উন্নতিবর্ধন করতে থাকে, ততই তাদের আনন্দের বৃদ্ধি হয়। আজকের দিনেও একই জিনিস প্রযোজ্য। যিহোবার উপাসক হিসাবে মহোল্লাস করার অনেক ভিত্তি আমাদের আছে। আসুন আমরা বিবেচনা করে দেখি আমাদের আনন্দিত হওয়ার আরও কয়েকটি কারণকে।
খ্রীষ্টের মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক
৭. যিহোবার পরিপ্রেক্ষিতে, আনন্দিত হওয়ার কোন্ কারণ খ্রীষ্টানদের আছে?
৭ যিহোবার সাথে নিবিড় সম্পর্ক আমাদের পৃথিবীতে সবচাইতে সুখী মানুষ করে তোলে। খ্রীষ্টান হওয়ার আগে, আমরা সেই অধার্মিক মানব সমাজের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম যা ‘চিত্তে অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং ঈশ্বরের সেই জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল।’ (ইফিষীয় ৪:১৮) আমরা কতই না আনন্দিত যে যিহোবার কাছ থেকে আমরা আর বিচ্ছিন্ন নই! অবশ্যই, তাঁর অনুকম্পার অধীনে থাকবার জন্য প্রচেষ্টার প্রয়োজন। আমাদের অবশ্যই “বিশ্বাসে বদ্ধমূল ও অটল হইয়া স্থির . . . এবং সেই সুসমাচারের প্রত্যাশা হইতে বিচলিত না” হয়ে থাকতে হবে। (কলসীয় ১:২১-২৩) আমরা আনন্দিত যে যিহোবা আমাদের তাঁর পুত্রের কাছে নিয়ে এসেছেন, যীশুর কথিত বাক্য অনুসারে: “পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি আকর্ষণ না করিলে কেহ আমার কাছে আসিতে পারে না।” (যোহন ৬:৪৪) যদি আমরা সত্যই খ্রীষ্টের মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে এই মূল্যবান সম্পর্ককে উপলব্ধি করে থাকি, তাহলে আমরা সেই বিষয়গুলি সম্পর্কে সতর্ক থাকব যা এটিকে নষ্ট করে দিতে পারে।
৮. আমাদের আনন্দময় অবস্থায় রাখার ক্ষেত্রে যীশুর কী অবদান রয়েছে?
৮ যীশুর মুক্তির মূল্যের উপর বিশ্বাস করার দ্বারা পাপের ক্ষমা, এটি আমাদের আনন্দের এক বিশেষ কারণ, যেহেতু এটাই ঈশ্বরের সাথে আমাদের সম্পর্ক স্থাপন করতে সম্ভবপর করেছে। স্বেচ্ছায় পাপের পথ অবলম্বন করার দ্বারা, আমাদের পূর্বপুরুষ আদম, সমগ্র মানবজাতির উপর মৃত্যু নিয়ে আসে। বস্তুতপক্ষে প্রেরিত পৌল ব্যাখ্যা করেন: “ঈশ্বর আমাদের প্রতি তাঁহার নিজের প্রেম প্রদর্শন করিতেছেন; কারণ আমরা যখন পাপী ছিলাম, তখনও খ্রীষ্ট আমাদের নিমিত্ত প্রাণ দিলেন।” পৌল আরও লেখেন: “যেমন এক অপরাধ দ্বারা সকল মনুষ্যের কাছে দণ্ডাজ্ঞা পর্য্যন্ত ফল উপস্থিত হইল, তেমনি ধার্ম্মিকতার একটী কার্য্য দ্বারা সকল মনুষ্যের কাছে জীবনদায়ক ধার্ম্মিকগণনা পর্য্যন্ত ফল উপস্থিত হইল। কারণ যেমন সেই এক মনুষ্যের অনাজ্ঞাবহতা দ্বারা অনেককে পাপী বলিয়া ধরা হইল, তেমনি সেই আর এক ব্যক্তির আজ্ঞাবহতা দ্বারা অনেককে ধার্ম্মিক বলিয়া ধরা হইবে।” (রোমীয় ৫:৮, ১৮, ১৯) আমরা কতই না আনন্দিত যে যিহোবা আদমের সেই সব বংশধরদের মুক্তি দিতে খুশি হন যারা তাঁর এই প্রেমময় ব্যবস্থার সদ্ব্যবহার করে!
ধর্মীয় স্বাধীনতা ও জ্ঞানালোকপ্রাপ্তি
৯. ধর্মের দিক দিয়েও আমরা কেন আনন্দময়?
৯ মহতী বাবিল, মিথ্যা ধর্মের বিশ্বসাম্রাজ্যের থেকে স্বাধীনতা, এটাও আমাদের আনন্দিত হওয়ার আর একটি কারণ। ঐশিক সত্যই আমাদের স্বাধীন করেছে। (যোহন ৮:৩২) আর এই ধর্মীয় বেশ্যার কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার অর্থ হল যে আমরা তার পাপের ভাগী হই না, তার আঘাতগুলি পাই না এবং তার সাথে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করি না। (প্রকাশিত বাক্য ১৮:১-৮) এগুলো এড়িয়ে চলার মধ্যে কোন দুঃখ জড়িত নেই!
১০. যিহোবার লোক হিসাবে আমরা কোন্ জ্ঞানালোকপ্রাপ্তি উপভোগ করি?
১০ ঈশ্বরের বাক্য বোঝা ও তা জীবনে প্রয়োগ করার মধ্যেও অনেক আনন্দ রয়েছে। মিথ্যা ধর্মের প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার ফলে আমরা ক্রমাগতভাবে আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি লাভ করি যা আমাদের স্বর্গীয় পিতা, “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” শ্রেনীর মাধ্যমে দিয়ে থাকেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) পৃথিবীতে যত লোক জীবিত আছে, তাদের মধ্যে কেবলমাত্র যারা একান্তভাবে যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত, তারাই শুধু তাঁর পবিত্র আত্মা এবং তাঁর বাক্য ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আশীর্বাদপ্রাপ্ত জ্ঞান পেয়ে থাকে। পৌল যেমন বলেছিলেন: “আমাদের কাছে ঈশ্বর তাঁহার আত্মা দ্বারা তাহা [যাহা তিনি, যাহারা তাঁহাকে প্রেম করে, তাহাদের জন্য প্রস্তুত করিয়াছেন] প্রকাশ করিয়াছেন, কেননা আত্মা সকলই অনুসন্ধান করেন, ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকলও অনুসন্ধান করেন।” (১ করিন্থীয় ২:৯, ১০) আমরা কৃতজ্ঞ ও আনন্দিত যে, ক্রমাগতভাবে বোঝার ক্ষমতাকে উপভোগ করছি, যার ইঙ্গিত পাওয়া যায় হিতোপদেশ ৪:১৮ পদে: “ধার্ম্মিকদের পথ প্রভাতীয় জ্যোতির ন্যায়, যাহা মধ্যাহ্ন পর্য্যন্ত উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান হয়।”
রাজ্যের আশা ও অনন্ত জীবন
১১. আনন্দপূর্ণ রাজ্যের আশা কিভাবে অপরের সাথে বন্টন করা হচ্ছে?
১১ আমাদের যে রাজ্যের আশা, সেটাও আমাদের আনন্দময় করে তোলে। (মথি ৬:৯, ১০) যিহোবার সাক্ষী হিসাবে আমরা বহুদিন ধরে এটাই ঘোষণা করে আসছি যে ঈশ্বরের রাজ্যই হল সকল মানবজাতির একমাত্র আশা। উদাহরণস্বরূপ, বিবেচনা করুন ১৯৩১ সালের কথা, যখন আমরা যিহোবার সাক্ষী নামটি একটি আনন্দপূর্ণ প্রস্তাবের মাধ্যমে গ্রহণ করি, যা পৃথিবীব্যাপী ৫১টি সম্মেলনে সংবর্দ্ধিত হয়েছিল। (যিশাইয় ৪৩:১০-১২) সেই প্রস্তাবটি এবং জে. এফ. রাদারফোর্ডের (তৎকালীন ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির সভাপতি) দেওয়া সম্মেলনের একটি তাৎপর্যপূর্ণ বক্তৃতা, রাজ্য, জগতের এক আশা নামক পুস্তিকাটির মধ্যে প্রকাশিত হয়। এর অন্তর্ভুক্ত ছিল আর একটি প্রস্তাব যা খ্রীষ্টজগৎকে ধর্মভ্রষ্টতার দোষে এবং যিহোবার উপদেশকে তাচ্ছিল্য করার জন্য অভিযুক্ত করে। এটি এও ঘোষণা করে যে: “জগতের আশা হল ঈশ্বরের রাজ্য এবং এছাড়া আর কোন আশা নেই।” কয়েক মাসের মধ্যে যিহোবার সাক্ষীরা ৫০ লক্ষেরও বেশি এই পুস্তিকাটির প্রতিলিপি পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তে বন্টন করে। সেই সময় থেকে আমরা দৃঢ়তার সাথে বলে আসছি যে রাজ্যই হল মানবজাতির একমাত্র আশা।
১২. যারা যিহোবার সেবা করছে তাদের জন্য কোন্ আনন্দময় জীবনের আশা অপেক্ষা করছে?
১২ রাজ্যের শাসনাধীনে অনন্ত জীবনের সম্ভাবনা, এতেও আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের “ক্ষুদ্র মেষপাল” তাদের রয়েছে আনন্দময় স্বর্গীয় জীবনের আশা। “ধন্য আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বর ও পিতা,” প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন, “তিনি নিজ বিপুল দয়ানুসারে মৃতগণের মধ্য হইতে যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান দ্বারা, জীবন্ত প্রত্যাশার নিমিত্ত আমাদিগকে পুনর্জন্ম দিয়াছেন, অক্ষয় ও বিমল ও অজর দয়াধিকার স্বর্গে তোমাদের নিমিত্ত সঞ্চিত রহিয়াছে।” (লূক ১২:৩২; ১ পিতর ১:৩, ৪) আজকে, অধিকাংশ যিহোবার সাক্ষীরা রাজ্যের অধীনে পরমদেশে উৎসাহের সাথে অনন্ত জীবনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। (লূক ২৩:৪৩; যোহন ১৭:৩) পৃথিবীর কোন মানুষের কাছে এমন কিছু নেই যাকে আমাদের এই আনন্দপূর্ণ আশার সাথে তুলনা করা যায়। আমাদের এই আশাকে কতই না উপভোগ করা উচিত!
এক আশীর্বাদপ্রাপ্ত ভ্রাতৃসমাজ
১৩. আমাদের আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃসমাজের প্রতি কী ধরনের মনোভাব থাকা উচিত?
১৩ একমত্র ঈশ্বর অনুমোদিত আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃসমাজের সদস্য হওয়াও এক মহানন্দের উৎস। আনন্দের বিষয় হল যে পৃথিবীতে আমাদের সাথে রয়েছে সবচাইতে মনোহর সহযোগীরা। আমাদের দিনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করাবার পর যিহোবা ঈশ্বর নিজে বলেন: “আমি সর্ব্বজাতিকে কম্পান্বিত করিব; এবং সর্ব্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু সকল আসিবে; আর আমি এই গৃহ প্রতাপে পরিপূর্ণ করিব, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন।” (হগয় ২:৭) এটা সত্যি যে সব খ্রীষ্টানেরাই অসিদ্ধ। কিন্তু, যিহোবা যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে এই ব্যক্তিবিশেষদের নিজের কাছে টেনে এনেছেন। (যোহন ১৪:৬) যেহেতু যিহোবা সেই সব লোকেদেরকে নিজের কাছে এনেছেন যাদের তিনি মনোহর জ্ঞান করেন, অতএব আমাদের আনন্দ বৃদ্ধি হবে যদি আমরা তাদের প্রতি ভ্রাতৃপ্রেম দেখাই, তাদের সম্মান দিই, ঐশিক কাজ করার ক্ষেত্রে তাদের সাথে সহযোগিতা করি, পরীক্ষার সময় তাদের দৃঢ় করি এবং তাদের হয়ে প্রার্থনা জানাই।
১৪. প্রথম পিতর ৫:৫-১১ পদ থেকে আমরা কী উৎসাহ পেতে পারি?
১৪ এই সমস্ত কিছুই আমাদের আনন্দবর্ধন করবে। বাস্তবিকই যিহোবার দেওয়া আনন্দই হল জগদ্ব্যাপী আমাদের আধ্যাত্মিক ভ্রাতৃসমাজের সুরক্ষিত আশ্রয়। হ্যাঁ, আমরা সকলেই নির্যাতন ও নানা রকম কঠিন চাপের সম্মুখীন হই। কিন্তু এটি আমাদের পরস্পরের সন্নিকটে নিয়ে আসবে এবং পৃথিবীতে ঈশ্বরের প্রকৃত সংগঠনের অংশ হিসাবে একতাবোধের উপলব্ধি জাগাবে। পিতর যেমন বলেন, আমাদের উচিত ঈশ্বরের পরাক্রান্ত হাতের নিচে নত হওয়া, সমস্ত ভাবনার ভার তাঁর উপর ফেলে দেওয়া, এই নিশ্চয়তা নিয়ে যে তিনি আমাদের জন্য চিন্তা করেন। আমাদের জেগে থাকতে হবে কারণ দিয়াবল আমাদের গ্রাস করার জন্য উদ্যত, কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা একা নই, কারণ পিতর আরও বলেন: “তোমরা বিশ্বাসে অটল থাকিয়া তাহার প্রতিরোধ কর; তোমরা জান, জগতে অবস্থিত তোমাদের ভ্রাতৃবর্গেও সেই প্রকার নানা দুঃখভোগ সম্পন্ন হইতেছে।” আর এই আনন্দময় ভ্রাতৃসমাজ কখনও ভেঙে পড়বে না, কারণ আমাদের নিশ্চয়তা আছে যে ‘আমাদের ক্ষণিক দুঃখভোগের পর, ঈশ্বর আমাদের অনুশীলনের শেষ আনবেন এবং তিনি আমাদের দৃঢ় ও শক্তিশালী করে তুলবেন।’ (১ পিতর ৫:৫-১১, NW) চিন্তা করে দেখুন, আমাদের এই আনন্দময় ভ্রাতৃসমাজ চিরকাল থাকবে!
এক উদ্দেশ্যময় জীবন
১৫. কেন বলা যায় যে যিহোবার সাক্ষীদের উদ্দেশ্যময় জীবন আছে?
১৫ এই সঙ্কটময় পৃথিবীতে আমাদের আনন্দ আছে কারণ আমাদের জীবন হল উদ্দেশ্যময়। আমাদের এমন পরিচর্যার কাজ দেওয়া হয়েছে যা আমাদেরকে ও অপরকে খুশি করে। (রোমীয় ১০:১০) ঈশ্বরের সহকর্মী হওয়া অবশ্যই একটা আনন্দময় সুযোগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে পৌল বলেন: “আপল্লো কি? আর পৌল কি? তাহারা ত পরিচারকমাত্র, যাহাদের দ্বারা তোমরা বিশ্বাসী হইয়াছ; আর এক এক জনকে প্রভু যেমন দিয়াছেন। আমি রোপণ করিলাম, আপল্লো জল সেচন করিলেন, কিন্তু ঈশ্বর বৃদ্ধি দিতে থাকিলেন। অতএব রোপক কিছু নয়, সেচকও কিছু নয়, বৃদ্ধিদাতা ঈশ্বরই সার। আর রোপক ও সেচক উভয়েই এক, এবং যাহারা যেরূপ নিজের শ্রম, সে তদ্রূপ নিজের বেতন পাইবে। কারণ আমরা ঈশ্বরের সহকার্য্যকারী; তোমরা ঈশ্বরেরই ক্ষেত্র, ঈশ্বরেরই গাঁথনি।”—১ করিন্থীয় ৩:৫-৯.
১৬, ১৭. কোন্ উদাহরণগুলি দেখায় যে যিহোবার লোকেদের জীবনে এক আনন্দময় উদ্দেশ্য রয়েছে?
১৬ অনেক উদাহরণের কথা বলা যেতে পারে যা দেখায় যে বিশ্বস্ততার সাথে যিহোবার পরিচর্যা করার ফলে এক উদ্দেশ্যময় জীবনের সূচনা হয় যা আমাদের আনন্দে পরিপূর্ণ করে তুলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ একজন ব্যক্তির মন্তব্য লক্ষ্য করুন: “আমি জনবহুল কিংডম হলের চারদিকে তাকালাম [হলটির উৎসর্গীকরণ অনুষ্ঠানের দিনে] আর দেখতে পেলাম আমার পরিবারের আটজন সদস্য সেখানে উপস্থিত, যার অন্তর্ভুক্ত হলাম আমি ও আমার স্ত্রী এবং আমাদের তিন সন্তান ও তাদের সঙ্গীরা। ঈশ্বরের পরিচর্যায় আমি ও আমার স্ত্রী এক উদ্দেশ্যময় সুখী জীবন যাপন করেছি।”
১৭ এটা উপলব্ধি করাও হৃদয়গ্রাহী যে, যে কোন বয়সে একজন ব্যক্তি যিহোবার পরিচর্যায় এক আনন্দময় প্রকৃত উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবন শুরু করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ একজন বিবাহিতা মহিলা, যিনি নার্সিং হোমে বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে শিখেছিলেন, তিনি যিহোবার সাক্ষী হিসাবে, ১০২ বছর বয়সে বাপ্তিস্ম নেন। এইভাবে তিনি এক আনন্দময় উদ্দেশ্যের সাথে তার জীবন শেষ করেন, অর্থাৎ ‘সত্যময় ঈশ্বরকে ভয় করা ও তাঁহার আজ্ঞা পালন করা।’—উপদেশক ১২:১৩.
এক অবিচলিত সুরক্ষিত আশ্রয়
১৮. নৈরাশ্যের মোকাবিলা ও আমাদের আনন্দকে বাড়িয়ে তোলার জন্য কী করা যেতে পারে?
১৮ যিহোবার আনন্দ, বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের কাছে এক অবিচলিত সুরক্ষিত আশ্রয়। কিন্তু, এই আনন্দ থাকার মানে এই নয় যে আমাদের জীবনে কখনও দুঃখের সময় আসবে না যা একসময় যীশুকে গেৎশিমানীর বাগানে এই কথাগুলি বলতে বাধ্য করেছিল: “আমার প্রাণ মরণ পর্য্যন্ত দুঃখার্ত্ত হইয়াছে।” (মার্ক ১৪:৩২-৩৪) ধরুন কোন স্বার্থপর অভীষ্ট লাভের ফলে এক নৈরাশ্যবোধের সৃষ্টি হয়েছে। তাহলে আসুন আমরা যেন আমাদের জীবনধারাকে পরিবর্তন করি। যদি নিঃস্বার্থভাবে অতিরিক্ত আধ্যাত্মিক দায়িত্বভার নেওয়ার ফলে আমাদের আনন্দ হ্রাস পেয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে আমাদের হয়ত কিছু কর্মসূচির পরিবর্তন করতে হবে যা আমাদের উদ্বিঘ্নতাকে কমাবে ও আনন্দময় মনোভাব পুনরায় জাগিয়ে তুলবে। এছাড়াও, যিহোবা আমাদের আনন্দ দান করার দ্বারা আশীর্বাদ করবেন যদি আমরা দৃঢ়ভাবে মাংসের মালিন্যতা, দুষ্ট জগৎ এবং দিয়াবলকে প্রতিরোধ করার দ্বারা তাঁকে খুশি করার চেষ্টা করি।—গালাতীয় ৫:২৪; ৬:১৪; যাকোব ৪:৭.
১৯. ঈশ্বরের সংগঠনে যে কোন সুযোগই আমাদের থাকুক না কেন তা আমাদের কিভাবে দেখা উচিত?
১৯ যে সমস্ত বিষয় আমরা আলোচনা করলাম এবং এছাড়াও আমাদের আরও অনেক কারণ আছে অতিশয় আনন্দিত হওয়ার। আমরা মণ্ডলীর একজন প্রকাশকই হই অথবা যে কোন একটি পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যার সাথে যুক্ত থাকি না কেন, আমাদের প্রত্যেকের সুযোগ আছে প্রভুর কাজে অনেক কিছু করার এবং এটা অবশ্যই আমাদের আনন্দকে বাড়িয়ে তুলবে। (১ করিন্থীয় ১৫:৫৮) যিহোবার সংগঠনে যে কোন সুযোগই আমাদের থাকুক না কেন, আসুন আমরা যেন এর জন্য কৃতজ্ঞ থাকি এবং ক্রমাগতভাবে আমরা যেন আনন্দের সাথে আমাদের প্রেমময়, সুখী ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে পবিত্র পরিচর্যা করে যাই।—১ তীমথিয় ১:১১.
২০. আমাদের সবচাইতে মহান সুযোগ কী এবং কোন্ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি?
২০ আমাদের আনন্দিত হওয়ার এক বিশেষ কারণ হল যে সাক্ষী হিসাবে আমাদের সুযোগ আছে যিহোবার মহান নামকে বহন করার। হ্যাঁ, আমরা অসিদ্ধ এবং নানান পরীক্ষার সম্মুখীন হই, কিন্তু আসুন যিহোবার সাক্ষী হিসাবে আমাদের অপূর্ব আশীর্বাদের কথা আমরা যেন মনে রাখি। আর মনে রাখবেন যে আমাদের প্রিয় স্বর্গীয় পিতা কখনও আমাদের নিরাশ করবেন না। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে আমরা সবসময় আশীর্বাদ পেয়ে যাবো যদি যিহোবার আনন্দ আমাদের সুরক্ষিত আশ্রয় হয়।
আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন?
◻ “যিহোবার আনন্দ” কী?
◻ খ্রীষ্টানেরা কিভাবে প্রকৃত আনন্দ অর্জন করে?
◻ যিহোবার সাক্ষীদের আনন্দ থাকার কয়েকটি কারণ কী?
◻ কেন যিহোবার আনন্দ এক অবিচলিত সুরক্ষিত আশ্রয়?