যিহোবার বাক্য জীবন্ত
ইয়োব বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো
কু লপতি ইয়োব ঊষ দেশে বাস করতেন, যা এখনকার আরব দেশে অবস্থিত ছিল। সেই সময়ে বিরাট সংখ্যক ইস্রায়েলীয় মিশরে বাস করত। যদিও ইয়োব নিজে একজন ইস্রায়েলীয় নন তবে তিনি যিহোবার একজন উপাসক ছিলেন। তার সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “তাহার তুল্য সিদ্ধ [“নির্দোষ,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] ও সরল, ঈশ্বরভয়শীল ও কুক্রিয়াত্যাগী লোক পৃথিবীতে কেহই নাই।” (ইয়োব ১:৮) এটা নিশ্চয়ই যিহোবার উল্লেখযোগ্য দুজন দাসের—যাকোবের পুত্র যোষেফ এবং ভাববাদী মোশির—জীবনের মাঝামাঝি সময়কালের কথা।
মোশি, যিনি ইয়োব বইটি লিখেছেন বলে মনে করা হয়, তিনি সম্ভবত ঊষ দেশের নিকটবর্তী মিদিয়নে ৪০ বছর কাটানোর সময় ইয়োব সম্বন্ধে জেনেছিলেন। ইস্রায়েলীয়রা যখন প্রান্তরে ৪০ বছর ধরে ঘুরে বেড়ানোর শেষের দিকে ঊষ দেশের কাছাকাছি ছিল, সম্ভবত তখন মোশি ইয়োবের শেষ বছরগুলো সম্বন্ধে শুনেছিলেন।a ইয়োবের অভিজ্ঞতা এত চমৎকারভাবে রচিত হয়েছে যে, এই বিবরণকে এক সেরা সাহিত্যকর্ম বলে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু, এর চেয়ে বড় বিষয় হল, এটি এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেয়, যেমন: কেন ভাল লোকেরা কষ্টভোগ করে? কেন যিহোবা দুষ্টতা থাকতে অনুমতি দিয়েছেন? অসিদ্ধ মানুষেরা কি ঈশ্বরের প্রতি তাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে পারে? ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্যের একটা অংশ হিসেবে, ইয়োব বইয়ের বার্তা এমনকি আজকেও জীবন্ত ও কার্যসাধক।—ইব্রীয় ৪:১২.
‘বিলুপ্ত হউক আমার জন্মের দিন’
শয়তান একদিন ঈশ্বরের সামনে ইয়োবের নীতিনিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। যিহোবা সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গ্রহণ করেন এবং শয়তানকে ইয়োবের ওপর একটার পর একটা বিপর্যয় নিয়ে আসার অনুমতি দেন। কিন্তু, ইয়োব “ঈশ্বরকে জলাঞ্জলি” দিতে প্রত্যাখ্যান করেন।—ইয়োব ২:৯.
ইয়োবের তিন সঙ্গী “তাঁহার সহিত শোক” করার জন্য আসে। (ইয়োব ২:১১) তারা কোনো কথা না বলে ইয়োবের সঙ্গে বসে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত না ইয়োব এই কথা বলার দ্বারা নীরবতা ভাঙেন: “বিলুপ্ত হউক সেই দিন, যে দিন আমার জন্ম হইয়াছিল।” (ইয়োব ৩:৩) তিনি “আলোক-দর্শন অপ্রাপ্ত শিশুর তুল্য” বা জন্মের সময় মৃত শিশুর মতো হতে চান।—ইয়োব ৩:১১, ১৬.
শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
১:৪—ইয়োবের ছেলেমেয়েরা কি জন্মদিন পালন করত? না, তারা তা করত না। ‘দিন’ এবং ‘জন্মদিনের’ জন্য মূল ভাষায় যে-শব্দগুলো রয়েছে, সেগুলো ভিন্ন এবং প্রত্যেকটির স্বতন্ত্র অর্থ রয়েছে। (আদিপুস্তক ৪০:২০) ইয়োব ১:৪ পদে ব্যবহৃত ‘দিন’ শব্দটি সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়কালকে নির্দেশ করে। ইয়োবের সাত ছেলে স্পষ্টতই বছরে একবার সাতদিনের জন্য পারিবারিকভাবে মেলামেশার আয়োজন করত। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক ছেলে “আপন আপন দিনে” তার বাড়িতে অনুষ্ঠিত ভোজের নিমন্ত্রণকর্তা হতেন।
১:৬; ২:১—কারা যিহোবার সামনে উপস্থিত হতে পারত? যারা যিহোবার সামনে দাঁড়াতে পারত তারা হল, ঈশ্বরের একজাত পুত্র অর্থাৎ বাক্য; বিশ্বস্ত দূতেরা; এবং শয়তান দিয়াবলসহ “ঈশ্বরের” অবাধ্য দূত “পুত্ত্রেরা।” (যোহন ১:১, ১৮) ১৯১৪ সালে ঈশ্বরের রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কিছু সময় পর, শয়তান এবং তার মন্দদূতদের স্বর্গ থেকে বহিষ্কার করা হয়। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১-১২) যিহোবা তাঁর সামনে শয়তানকে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দিয়ে সমস্ত আত্মিক প্রাণীর সামনে শয়তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং এটা যে-বিচার্য বিষয়গুলোর উত্থাপন করেছিল, সেগুলো তুলে ধরেছিলেন।
১:৭; ২:২—যিহোবা কি সরাসরি শয়তানের সঙ্গে কথা বলেছিলেন? আত্মিক প্রাণীদের সঙ্গে যিহোবা কীভাবে কথা বলতেন, সেই সম্বন্ধে বাইবেল তেমন বিস্তারিত কিছু বলে না। কিন্তু, ভাববাদী মীখায় একটা দর্শন পেয়েছিলেন, যেখানে তিনি একজন দূতকে সরাসরি যিহোবার সঙ্গে কথা বলতে দেখেছিলেন। (১ রাজাবলি ২২:১৪, ১৯-২৩) তাই এটা স্পষ্ট যে, যিহোবা কোনো মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই শয়তানের সঙ্গে কথা বলেছিলেন।
১:২১—কীভাবে ইয়োব তার ‘মাতার গর্ব্ভে’ ফিরে যেতে পারতেন? যিহোবা ঈশ্বর যেহেতু ‘মৃত্তিকার ধূলি’ থেকে মানুষকে নির্মাণ করেছিলেন, তাই এখানে ‘মাতা’ শব্দটি মাটিকে নির্দেশ করার জন্য রূপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।—আদিপুস্তক ২:৭.
২:৯—ইয়োবের স্ত্রী যখন তার স্বামীকে বলেছিলেন যে, তিনি যেন ঈশ্বরকে জলাঞ্জলি দেন ও প্রাণত্যাগ করেন, তখন তার হয়তো কেমন মনোভাব ছিল? ইয়োবের মতো তার স্ত্রীও হারানোর একই কষ্ট ভোগ করেছিলেন। তার একসময়ের শক্তসমর্থ স্বামীকে জঘন্য রোগের দ্বারা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হতে দেখা তার জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক ছিল। তিনি তার প্রিয় সন্তানদের হারিয়েছিলেন। এই সমস্তকিছুর জন্য তিনি সম্ভবত এতটাই শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন যে, তিনি প্রকৃতপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা—ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক—ভুলে গিয়েছিলেন।
আমাদের জন্য শিক্ষা:
১:৮-১১; ২:৩-৫, NW. ইয়োবের ক্ষেত্রে যেমন দেখানো হয়েছে, সঠিক কাজ এবং কথাবার্তার সঙ্গে সঙ্গে নীতিনিষ্ঠার জন্য যিহোবাকে সেবা করার প্রতি সঠিক মনোভাব প্রয়োজন।
১:২১, ২২. অনুকূল ও সেইসঙ্গে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যিহোবার প্রতি অনুগত থাকার মাধ্যমে আমরা শয়তানকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করতে পারি।—হিতোপদেশ ২৭:১১.
২:৯, ১০. ইয়োবের মতো আমাদেরও বিশ্বাসে দৃঢ় থাকা উচিত, এমনকি আমাদের পরিবারের সদস্যরা যদি আমাদের আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোকে মূল্য না-ও দেয় অথবা আমাদের বিশ্বাসের ব্যাপারে আপোশ করার বা বিশ্বাস ত্যাগ করার জন্য চাপ দিয়ে থাকে।
২:১৩. আধ্যাত্মিকতার অভাব থাকায় ইয়োবের সঙ্গীদের, ঈশ্বর ও তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো সম্বন্ধে বলার মতো সান্ত্বনাজনক কিছুই ছিল না।
“প্রাণ থাকিতে আমি আপন নীতিনিষ্ঠা ত্যাগ করিব না”
ইয়োবের তিন সঙ্গী তাদের কথাবার্তার মাধ্যমে যে-মূল বিষয়টা তুলে ধরে তা হল, ইয়োব নিশ্চয়ই অত্যন্ত মন্দ কিছু করেছেন, যার কারণে ঈশ্বরের কাছ থেকে চরম শাস্তি ভোগ করছেন। ইলীফস প্রথমে কথা বলা শুরু করেন। এরপর, বিল্দদ আরও বিদ্রূপাত্মক ভাষা ব্যবহার করে ইলীফসকে অনুসরণ করেন। সোফর এমনকি আরও তীব্র সমালোচনা করেন।
ইয়োব, তাকে দেখতে আসা ব্যক্তিদের মিথ্যা যুক্তিগুলো গ্রহণ করেননি। কেন ঈশ্বর তার ওপর দুঃখকষ্ট ঘটার অনুমতি দিয়েছেন, তা বুঝতে ব্যর্থ হয়ে তিনি নিজেকে সঠিক বলে প্রমাণ করার ব্যাপারে অতিরিক্ত চিন্তিত হয়ে পড়েন। তা সত্ত্বেও, ইয়োব ঈশ্বরকে ভালবাসেন এবং বলেন: “প্রাণ থাকিতে আমি আপন সিদ্ধতা [“নীতিনিষ্ঠা,” NW] ত্যাগ করিব না।”—ইয়োব ২৭:৫.
শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
৭:১; ১৪:১৪—“সৈন্যবৃত্তি” দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? ইয়োবের দুর্দশা এতটাই চরম ছিল যে, তিনি তার জীবনকে কঠিন, কষ্টকর, বাধ্যতামূলক শ্রমের মতো মনে করেছিলেন। (ইয়োব ১০:১৭) একজন ব্যক্তি শিওলে—মৃত্যুর সময় থেকে শুরু করে পুনরুত্থান পর্যন্ত—যে-সময় কাটান, সেটা যেহেতু এক বাধ্যতামূলক সময়কাল, তাই ইয়োব এই সময়কে সৈন্যবৃত্তির মতো বাধ্যতামূলক কাজের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।
৭:৯, ১০; ১০:২১; ১৬:২২—এই বিবৃতিগুলো কি নির্দেশ করে যে, তিনি পুনরুত্থানে বিশ্বাস করতেন না? এই মন্তব্যগুলো ইয়োবের নিকট ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে করা হয়। তা হলে, এর অর্থ কী ছিল? একটা সম্ভাব্য অর্থ হল যে, যদি ইয়োব মারা যান, তা হলে তার সমসাময়িক কেউই তাকে দেখতে পাবে না। তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে, ঈশ্বরের নিরূপিত সময় না হওয়া পর্যন্ত তিনি আর ফিরে আসবেন না কিংবা আর কোনো স্বীকৃতি পাবেন না। ইয়োব হয়তো এও বুঝিয়েছিলেন যে, কেউই নিজের চেষ্টায় পাতাল থেকে ফিরে আসতে পারে না। ইয়োব যে ভবিষ্যৎ পুনরুত্থানে বিশ্বাস করতেন, তা ইয়োব ১৪:১৩-১৫ পদ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়।
১০:১০—কীভাবে যিহোবা ‘ইয়োবকে দুগ্ধের ন্যায় ঢালেন এবং ছানার ন্যায় ঘনীভূত করেন’? এটা হল এক কাব্যিক বর্ণনা যে, কীভাবে ইয়োবকে মাতার গর্ভে গঠন করা হয়েছিল।
১৯:২০—“আমি দন্তের চর্ম্মাবশিষ্ট হইয়া বাঁচিয়া আছি,” এই অভিব্যক্তির দ্বারা ইয়োব কী বুঝিয়েছেন? তিনি এমন কিছুর চর্মাবশিষ্ট হয়ে বেঁচে আছেন যেটার আসলে কোনো চর্ম বা চামড়াই নেই, এই কথার দ্বারা ইয়োব সম্ভবত বলছিলেন যে, তিনি বলতে গেলে কোনোকিছু ছাড়াই বা কোনোরকমে বেঁচে আছেন।
আমাদের জন্য শিক্ষা:
৪:৭, ৮; ৮:৫, ৬; ১১:১৩-১৫. তাড়াহুড়ো করে আমরা এইরকম মনে করব না যে, চরম দুর্দশার শিকার একজন ব্যক্তি যা বুনেছেন তা-ই কাটছেন আর তার ওপর ঈশ্বরের অনুমোদন নেই।
৪:১৮, ১৯; ২২:২, ৩. আমাদের পরামর্শ ঈশ্বরের বাক্যের ওপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত, ব্যক্তিগত মতামতের ওপর ভিত্তি করে নয়।—২ তীমথিয় ৩:১৬.
১০:১. তিক্ততা ইয়োবকে অন্ধ করে দিয়েছিল, ফলে তিনি তার কষ্টভোগের অন্যান্য সম্ভাব্য কারণ সম্বন্ধে বিবেচনা করেননি। কষ্টভোগের সময় আমরা তিক্ত হয়ে পড়ব না, বিশেষ করে যেহেতু আমাদের এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিচার্য বিষয়গুলো সম্বন্ধে এক স্পষ্ট বোধগম্যতা রয়েছে।
১৪:৭, ১৩-১৫; ১৯:২৫; ৩৩:২৪. শয়তান আমাদের ওপর যে-পরীক্ষাই নিয়ে আসুক না কেন, পুনরুত্থানের আশা আমাদের টিকিয়ে রাখতে পারে।
১৬:৫; ১৯:২. আমাদের কথাবার্তার দ্বারা অন্যদের বিরক্ত নয় বরং উৎসাহিত এবং শক্তিশালী করা উচিত।—হিতোপদেশ ১৮:২১.
২২:৫-৭. প্রকৃত প্রমাণের অভাব রয়েছে এমন অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া পরামর্শ মূল্যহীন এবং ক্ষতিকারক।
২৭:২; ৩০:২০, ২১. নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য সিদ্ধতার প্রয়োজন নেই। ইয়োব ভুলভাবে ঈশ্বরের সমালোচনা করেছিলেন।
২৭:৫. কেবল ইয়োবই তার নিজের নীতিনিষ্ঠা ত্যাগ করতে পারতেন কারণ নীতিনিষ্ঠা ঈশ্বরের প্রতি একজন ব্যক্তির ভালবাসার ওপর নির্ভর করে। তাই, যিহোবার প্রতি আমাদের দৃঢ় ভালবাসা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা উচিত।
২৮:১-২৮. মানুষ জানে যে, মাটির নীচে কোথায় ধনসম্পদ রয়েছে। সে যখন সেগুলোর অনুসন্ধান করে, তখন তার উদ্ভাবনক্ষমতা তাকে ভূগর্ভস্থ সেই পথে নিয়ে যায়, যা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কোনো চিলও দেখতে পায় না। কিন্তু, ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা যিহোবাকে ভয় করার মাধ্যমে আসে।
২৯:১২-১৫. যাদের অভাব রয়েছে, তাদের প্রতি আমাদের স্বেচ্ছায় প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখানো উচিত।
৩১:১, ৯-২৮. প্রেমের ভান করা, পারদারিকতা, অন্যদের প্রতি অবিচার ও নির্দয় আচরণ করা, বস্তুবাদিতা এবং প্রতিমাপূজা এড়িয়ে চলার মাধ্যমে ইয়োব আমাদের জন্য এক উদাহরণ স্থাপন করেন।
‘আমি ধূলায় ও ভস্মে বসিয়া অনুতাপ করিতেছি’
ইলীহূ নামে একজন যুবক চুপ করে দাঁড়িয়ে ধৈর্য ধরে তাদের তর্কবিতর্ক শুনছিলেন। এখন তিনি সাহসের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি ইয়োব ও তার তিন যন্ত্রণাদানকারীকে সংশোধন করেন।
ইলীহূ তার কথা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে যিহোবা ঘূর্ণবায়ুর মধ্যে থেকে উত্তর দেন। ইয়োবের কষ্টভোগের কোনো ব্যাখ্যা তিনি দেননি। কিন্তু, ধারাবাহিক প্রশ্ন করার মাধ্যমে সর্বশক্তিমান তাঁর ভংয়কর ক্ষমতা ও মহান প্রজ্ঞা সম্বন্ধে ইয়োবকে অবগত করেন। ইয়োব স্বীকার করেন যে, তিনি না বুঝেই কথা বলেছেন এবং বলেন: “আমি আপনাকে ঘৃণা করিতেছি, ধূলায় ও ভস্মে বসিয়া অনুতাপ করিতেছি।” (ইয়োব ৪২:৬) ইয়োবের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তার নীতিনিষ্ঠা পুরস্কৃত হয়।
শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
৩২:১-৩—ইলীহূ কখন এসেছিলেন? যেহেতু ইলীহূ সমস্ত কথা শুনেছিলেন, তাই তিনি নিশ্চয়ই ইয়োব কথা বলতে শুরু করার এবং তার তিন বন্ধু যে-সাতদিন চুপ করে ছিল, সেই সময় শেষ হওয়ার আগেই এসে কাছাকাছি এমন কোথাও বসেছিলেন, যেখান থেকে শোনা যায়।—ইয়োব ৩:১, ২.
৩৪:৭—কীভাবে ইয়োব এমন এক ব্যক্তি ছিলেন, যিনি “জলের ন্যায় উপহাস পান করেন”? তার চরম দুর্দশার সময়ে, ইয়োব তাকে দেখতে আসা তিনজন ব্যক্তির উপহাসকে তার প্রতিই বলা হয়েছে বলে ধরে নিয়েছিলেন, যদিও তারা আসলে ঈশ্বরের বিরুদ্ধেই কথা বলছিল। (ইয়োব ৪২:৭) তাই, তিনি এমন এক ব্যক্তির মতো উপহাস গ্রহণ করেছিলেন, যিনি আনন্দের সঙ্গে জল পান করেন।
আমাদের জন্য শিক্ষা:
৩২:৮, ৯. কেবল বয়সের সঙ্গে সঙ্গে প্রজ্ঞা আসে না। এর জন্য ঈশ্বরের বাক্য বোঝা এবং তাঁর আত্মার নির্দেশনা প্রয়োজন।
৩৪:৩৬. কোনো না কোনোভাবে ‘শেষ পর্য্যন্ত পরীক্ষিত’ হওয়ার মাধ্যমে আমাদের নীতিনিষ্ঠা প্রমাণিত হয়।
৩৫:২. ইলীহূ মন দিয়ে শুনেছিলেন এবং কথা বলার আগে প্রকৃত বিষয়টা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলেন। (ইয়োব ১০:৭; ১৬:৭; ৩৪:৫) পরামর্শ দেওয়ার আগে, খ্রিস্টান প্রাচীনদের অবশ্যই মন দিয়ে শুনতে, বিষয়বস্তু জানতে এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে।—হিতোপদেশ ১৮:১৩.
৩৭:১৪; ৩৮:১–৩৯:৩০. যিহোবার অপূর্ব কাজগুলো—তাঁর ক্ষমতা ও প্রজ্ঞার অভিব্যক্তিগুলো—নিয়ে ধ্যান করা আমাদেরকে নম্র করে এবং এটা দেখতে সাহায্য করে যে, আমাদের ব্যক্তিগত যেকোনো আগ্রহের বিষয়ের চেয়ে যিহোবার সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতা প্রতিপন্ন হতে দেখা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।—মথি ৬:৯, ১০.
৪০:১-৪. আমরা যখন সর্বশক্তিমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার প্রবণতা বোধ করি, তখন আমাদের ‘নিজ মুখে হাত দেওয়া’ উচিত।
৪০:১৫–৪১:৩৪. বহেমোৎ (জলহস্তী) এবং লিবিয়াথনের (কুমির) কত শক্তিই না রয়েছে! ঈশ্বরের সেবায় ধৈর্য ধরার জন্য আমাদেরও এই শক্তিশালী পশুদের নির্মাতার কাছ থেকে শক্তির প্রয়োজন, যিনি আমাদের শক্তি দেন।—ফিলিপীয় ৪:১৩.
৪২:১-৬. যিহোবার বাক্য শোনা এবং তাঁর শক্তির প্রকাশ সম্বন্ধে মনে করিয়ে দেওয়া ইয়োবকে ‘ঈশ্বরকে দেখিতে’ অথবা তাঁর সম্বন্ধে সত্য বুঝতে সাহায্য করেছিল। (ইয়োব ১৯:২৬) এটা তার চিন্তাভাবনাকে রদবদল করেছিল। বাইবেলের মাধ্যমে সংশোধন করা হলে আমাদের নিজেদের ভুলগুলো স্বীকার এবং এরপর রদবদল করতে ইচ্ছুক হওয়া উচিত।
‘ইয়োবের ধৈর্য্য’ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করুন
ইয়োব বইটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে, মানুষের দুঃখকষ্টের জন্য ঈশ্বর দায়ী নন। এর জন্য শয়তান দায়ী। পৃথিবীতে ঈশ্বর দুষ্টতা থাকতে দিয়েছেন বলে, তা আমাদেরকে যিহোবার সার্বভৌমত্ব ও আমাদের নীতিনিষ্ঠা বিষয়ক বিচার্য বিষয়ে আমাদের অবস্থান কোথায়, সেই সম্বন্ধে ব্যক্তিগত প্রশ্নের উত্তর দিতে সমর্থ করে।
যারা যিহোবাকে ভালবাসে, তারা সকলে ইয়োবের মতো পরীক্ষিত হবে। ইয়োবের বিবরণ আমাদের আশ্বাস দেয় যে, আমরা ধৈর্য ধরতে পারি। এটা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের সমস্যাগুলো চিরকাল থাকবে না। “তোমরা ইয়োবের ধৈর্য্যের কথা শুনিয়াছ; প্রভুর [“যিহোবার,” NW] পরিণামও দেখিয়াছ,” যাকোব ৫:১১ পদ বলে। নীতিনিষ্ঠা বজায় রেখেছিলেন বলে ইয়োবকে যিহোবা পুরস্কৃত করেছিলেন। (ইয়োব ৪২:১০-১৭) আমাদের সামনে কত মহান প্রত্যাশা রাখা হয়েছে আর সেটা হল, পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবন! তাই আসুন, ইয়োবের মতো আমরা আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই।—ইব্রীয় ১১:৬.
[পাদটীকা]
a ইয়োব বইটিতে সা.কা.পূ. ১৬৫৭ থেকে ১৪৭৩ সালের মধ্যবর্তী সময়কাল অর্থাৎ ১৪০ বছরেরও বেশি সময়ের ঘটনাবলি রয়েছে।
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
‘ইয়োবের ধৈর্য্য’ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?