যিহোবার ভয়েতে আনন্দ খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষালাভ করা
“আইস, বৎসগণ, আমার বাক্য শুন, আমি তোমাদিগকে সদাপ্রভুর ভয় শিক্ষা দিই।”—গীতসংহিতা ৩৪:১১.
১. ঈশ্বরের রাজ্যের দ্বারা কিভাবে ভয় দূরীভূত হবে কিন্তু এর মানে কি সমস্ত ধরনের ভয়?
সর্বত্র লোকেরা ভয় থেকে স্বাধীন হতে চায়—অপরাধ এবং দৌরাত্ম্যের ভয়, বেকারত্বের ভয়, গুরুতর রোগব্যাধির ভয়। সেইদিন কতই না উত্তম হবে যখন সেই স্বাধীনতা ঈশ্বরের রাজ্যে বাস্তবে পরিণত হবে! (যিশাইয় ৩৩:২৪; ৬৫:২১-২৩; মীখা ৪:৪) তবুও, সমস্ত ভয় মুছে যাবে না এবং এখন আমাদের জীবনে সমস্ত ভয় মুছে ফেলতে চাইব না। উত্তম ভয় এবং মন্দ ভয়ও আছে।
২. (ক) কোন্ ধরনের ভয় খারাপ কিন্তু কোন্টি আকাঙ্ক্ষিত? (খ) ঈশ্বরীয় ভয় কী এবং কিভাবে উল্লেখিত শাস্ত্র তা ইঙ্গিত করে?
২ ভয় মানসিক বিষের ন্যায় হতে পারে, তা মানুষের যুক্তি করার ক্ষমতাকে অসাড় করে দিতে পারে। এটি সাহসকে দুর্বল এবং আশাকে ধ্বংস করে দিতে পারে। যে ব্যক্তি দৈহিক দিক দিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে তিনি এইধরনের ভয় অভিজ্ঞতা করে থাকেন। (যিরমিয় ৫১:৩০) একজন ব্যক্তি যিনি কোন প্রভাবশালী ব্যক্তির অনুমোদন পাওয়ার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেন তারই হয়ত এরকম অভিজ্ঞতা হতে পারে। (হিতোপদেশ ২৯:২৫) কিন্তু এমন ভয়ও আছে যা হল স্বাস্থ্যকর, যেটি আমাদের হঠ করে কিছু করার মাধ্যমে, নিজেকে ক্ষতি করার থেকে বিরত রাখে। ঈশ্বরীয় ভয়ের অন্তর্ভুক্ত এর থেকেও আরও বেশি কিছু। এটি হল যিহোবার প্রতি সম্মান, তাঁর প্রতি নিগূঢ় শ্রদ্ধা, যার সাথে জড়িত আছে তাঁকে অসন্তুষ্ট করার ভয়। (গীতসংহিতা ৮৯:৭) এইধরনের ভয় যা ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করতে পারে তা তাঁর প্রেমপূর্ণ-দয়া এবং উত্তমতার প্রতি উপলব্ধি থেকে উদ্ভূত হয়। (গীতসংহিতা ৫:৭; হোশেয় ৩:৫) এর অন্তর্ভুক্ত হল এই সচেতনতা যে যিহোবা হলেন মহান বিচারপতি এবং সর্বশক্তিমান, যারা তাঁর প্রতি বাধ্য হতে অস্বীকার করে তাদের এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত তিনি শাস্তি দিতে পারেন।—রোমীয় ১৪:১০-১২.
৩. পৌত্তলিকতার সাথে যুক্ত ভয়ের সাথে যিহোবার প্রতি ভয়ের কী বৈসাদৃশ্য আছে?
৩ ঈশ্বরীয় ভয় হল স্বাস্থ্যকর, অস্বাস্থ্যকর নয়। এটি এক ব্যক্তিকে সঠিক কাজ করতে প্রণোদিত করতে পারে, ভুল কাজ করার দ্বারা একজনকে আপোশ করতে প্রণোদিত করে না। এটি এমন ভয় নয় যা প্রাচীন গ্রীক মূর্তি ফোবসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে যাকে ভয় সঞ্চারকারী ক্ষতিসাধক ঈশ্বর হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এটি এমন ভয় নয় যা হিন্দু দেবী কালীর সঙ্গে জড়িত, যাকে রক্তপিপাসু হিসাবে বর্ণনা করা হয়, যার শবদেহ, সাপ এবং খুলি হলই অলঙ্কার। ঈশ্বরীয় ভয় আর্কষণ করে; লোকেদের প্রতিহত করে না। এটি প্রেম এবং উপলব্ধিবোধের সাথে জড়িত। ফলত ঈশ্বরীয় ভয় আমাদের যিহোবার প্রতি আকৃষ্ট করে।—দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১২, ১৩; গীতসংহিতা ২:১১.
কেন কিছু লোকের কাছে তা আছে এবং অন্যদের কাছে তা নেই
৪. প্রেরিত পৌল যেমন দেখান মানবজাতি আজ কিধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে এবং এর কারণ কী?
৪ মানবজাতি সমূহরূপে ঈশ্বরীয় ভয় দ্বারা প্ররোচিত নয়। আদি সিদ্ধতা থেকে মানবজাতির কিভাবে পতন হয়েছে সেই সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল রোমীয় ৩:৯-১৮ পদে বর্ণনা করেন। সকলে যে পাপের বশে সেটি বলবার পর, পৌল গীতসংহিতা থেকে উদ্ধৃতি করে বলেন: “ধার্মিক কেহই নাই, এক জনও নাই।” (গীতসংহিতা ১৪:১পদ দেখুন।) তারপর তিনি মানবজাতির ঈশ্বরকে অন্বেষণ করার, দয়ার অভাব, প্রতারণাপূর্ণ কথাবার্তা, কটুক্তি ও রক্তপাত সম্বন্ধে তাদের অবহেলার বিষয়ে উদ্ধৃতি করেন। কত পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবেই না এটি জগৎকে বর্ণনা করে! বেশির ভাগ লোকেদের ঈশ্বর ও তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে কোন আগ্রহ নেই। দয়ার মেকি অনুকরণ ও বেশির ভাগ সেইসব সময় দেখানো হয় যখন তার থেকে তারা কিছু উপকার লাভ করে থাকে। মিথ্যা কথা বলা ও অরুচিপূর্ণ কথাবার্তা খুব সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রক্তপাত শুধু খবরেই দেখানো হয় না কিন্তু আমোদপ্রমোদেও দেখানো হয়। এই পরিস্থিতিতে আশার কারণ কী? এটি সত্য যে আমরা সকলেই আদমের বংশধর, কিন্তু লোকে যখন এমন জীবনধারা অবলম্বন করে যা প্রেরিত পৌল বর্ণনা করেন, তখন আরও কিছু জড়িত আছে। ১৮ পদ এটিকে এইভাবে ব্যাখ্যা করে: “ঈশ্বর-ভয় তাহার চক্ষুর অগোচর।”—গীতসংহিতা ৩৬:১পদটি দেখুন।
৫. কেন কিছু লোকের ঈশ্বরীয় ভয় আছে কিন্তু অন্যদের নেই?
৫ তাহলে কেন কিছু লোকের ঈশ্বরীয় ভয় আছে আর অন্যদের তা নেই? সাধারণভাবে বলতে গেলে কিছু লোকে তা অনুশীলন করে, অপরপক্ষে অন্যেরা তা করে না। কেউ আমরা এটিকে সঙ্গে নিয়ে জন্মাই না, কিন্তু, এটিকে গড়ে তোলার ক্ষমতা আমাদের সকলের আছে। ঈশ্বরীয় ভয় এমন একটা জিনিস যা আমাদের শিখতে হবে। এরপর, এটিকে যদি আমাদের জীবনে প্ররোচিত হওয়ার একটা শক্তি হতে হয়, তাহলে তা আমাদের গড়ে তুলতে হবে।
এক আকর্ষণীয় আমন্ত্রণ
৬. গীতসংহিতা ৩৪:১১ পদে দেওয়া আমন্ত্রণটি আমাদের কাছে কে জানায় এবং কিভাবে এই পদটি দেখায় যে ঈশ্বরীয় ভয়কে অবশ্যই শিখতে হবে?
৬ গীতসংহিতা ৩৪ অধ্যায়ে যিহোবাকে ভয় করা সম্বন্ধে এক আকর্ষণীয় আমন্ত্রণ আমাদের জানানো হয়েছে। এটা হচ্ছে দায়ূদের গীত। আর দায়ূদ কাকে চিত্রিত করছেন? প্রভু যীশু খ্রীষ্ট ছাড়া আর কাউকে নন। যে ভাববাণী প্রেরিত যোহন বিশেষকরে যীশুর প্রতি প্রয়োগ করেছেন তা লিপিবদ্ধ করা আছে এই গীতের ২০ পদে। (যোহন ১৯:৩৬) আমাদের দিনে, যীশুই হলেন সেই ব্যক্তি যিনি সেই ধরনের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন ১১ পদে: “আইস, বৎসগণ, আমার বাক্য শুন, আমি তোমাদিগকে সদাপ্রভুর ভয় শিক্ষা দিই।” এটা পরিষ্কারভাবে দেখায় যে ঈশ্বরীয় ভয় এমন একটা জিনিস যা শিখতে পারা যায় এবং আমাদের তা শিখানোর সম্পূর্ণ যোগ্যতা যীশু খ্রীষ্টের আছে। কেন?
৭. কেন যীশুই বিশেষকরে একমাত্র ব্যক্তি যার কাছ থেকে ঈশ্বরীয় ভয় শিখতে হবে?
৭ ঈশ্বরীয় ভয়ের গুরুত্ব যীশু খ্রীষ্ট জানেন। ইব্রীয় ৫:৭ পদ তাঁর সম্বন্ধে বলে: “ইনি মাংসে প্রবাসকালে প্রবল আর্ত্তনাদ ও অশ্রুপাত সহকারে তাঁহারই নিকটে প্রার্থনা ও বিনতি উৎসর্গ করিয়াছিলেন, যিনি মৃত্যু হইতে তাঁহাকে রক্ষা করিতে সমর্থ এবং আপন ভক্তি প্রযুক্ত উত্তর পাইলেন।” এমনকি যাতনাদন্ডে মৃত্যু বরণ করার আগেও যীশু খ্রীষ্ট এইধরনের ঈশ্বরীয় ভীতিমূলক গুণ দেখিয়েছিলেন। আপনার মনে আছে যে হিতোপদেশ ৮ অধ্যায়ে, ঈশ্বরের পুত্রকে প্রজ্ঞার প্রতিমূর্তি হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এবং হিতোপদেশ ৯:১০ পদে, আমাদের বলা হয়েছে: “সদাপ্রভুকে ভয় করাই প্রজ্ঞার আরম্ভ।” অতএব ঈশ্বরের পুত্র পৃথিবীতে আসার অনেক আগে থেকেই ঈশ্বরীয় ভয় ছিল তাঁর চরিত্রের একটা প্রধান অংশ।
৮. যিশাইয় ১১:২, ৩ পদে যিহোবার ভয় সম্বন্ধে আমরা কী শিখি?
৮ এছাড়াও, মশীহ রাজা হিসাবে যীশুর সম্বন্ধে, যিশাইয় ১১:২, ৩ পদ বলে: “আর সদাপ্রভুর আত্মা—প্রজ্ঞার ও বিবেচনার আত্মা, মন্ত্রণার ও পরাক্রমের আত্মা, জ্ঞানের ও সদাপ্রভুর ভয়ের আত্মা,—তাঁহাতে অধিষ্ঠান করিবেন; আর তিনি সদাপ্রভু-ভয়ে আমোদিত হইবেন।” কত অপূর্বভাবেই না এটা প্রকাশ করা হয়েছে! যিহোবার ভয় কোন অসন্তোষের বিষয় নয়। এটা ইতিবাচক ও গঠনমূলক। যখন খ্রীষ্ট রাজা হিসাবে শাসন করবেন তখন এই গুণটি তাঁর অধীনস্থ সমগ্র স্থানে থাকবে। তিনি এখনই শাসন করছেন এবং তাঁর প্রজা হিসাবে যাদের একত্রিত করা হচ্ছে, তিনি তাদের সকলকে যিহোবার ভয় সম্বন্ধে শিক্ষা দিচ্ছেন। কিভাবে?
৯. কিভাবে যীশু খ্রীষ্ট আমাদের যিহোবার প্রতি ভয় করা শেখাচ্ছেন এবং তিনি কোন্ জিনিসটি চান যে আমরা এ সম্বন্ধে শিখি?
৯ আমাদের মণ্ডলীর সভাগুলি, অধিবেশনগুলি এবং সম্মেলনগুলির মাধ্যমে, যীশু, মণ্ডলীর মনোনীত মস্তক হিসাবে এবং মশীহ রাজা হিসাবে, ঈশ্বরীয় ভয় কী ও তা কেন উপকারী সেটি পরিষ্কারভাবে বুঝতে সাহায্য করছেন। এইভাবে তিনি চেষ্টা করছেন আমাদের উপলব্ধিকে গভীরতর করতে যাতে করে আমরা যিহোবাকে ভয় করার ক্ষেত্রে আনন্দ পাই ঠিক যেমন তিনি পেয়ে থাকেন।
আপনি কি চেষ্টা করবেন?
১০. যিহোবার ভয় জানতে হলে খ্রীষ্টীয় সভায় যোগদান করার সময় আমাদের কী করা উচিত?
১০ অবশ্যই শুধুমাত্র আমাদের বাইবেল পড়া অথবা কিংডম হলের সভাতে যোগদান করাই নিশ্চয়তা দেবে না যে আমাদের ঈশ্বরীয় ভয় থাকবে। লক্ষ্য করুন যে আমাদের কী করতে হবে যদি আমরা প্রকৃতই বুঝতে চাই যে ঈশ্বরীয় ভয় কী। হিতোপদেশ ২:১-৫ পদ বলে: “বৎস, তুমি যদি আমার কথা সকল গ্রহণ কর, যদি আমার আজ্ঞা সকল তোমার কাছে সঞ্চয় কর, যদি প্রজ্ঞার দিকে কর্ণপাত কর, যদি বুদ্ধিতে মনোনিবেশ কর; হাঁ, যদি সুবিবেচনাকে আহ্বান কর, যদি বুদ্ধির জন্য উচ্চৈঃস্বর কর; যদি রৌপ্যের ন্যায় তাহার অন্বেষণ কর, গুপ্ত ধনের ন্যায় তাহার অনুসন্ধান কর; তবে সদাপ্রভুর ভয় বুঝিতে পারিবে, ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।” এতএব সভাতে যোগদান করার সময়, যা বলা হচ্ছে তার প্রতি মনোযোগ দেওয়া আমাদের প্রয়োজন, চেষ্টা করা উচিত মনোনিবেশ করা ও মুখ্য বিষয়গুলি মনে রাখা, গভীরভাবে চিন্তা করা যে যিহোবার সম্পর্কে আমরা যা অনুভব করি তা কিভাবে উপদেশের প্রতি আমাদের মনোভাবকে প্রভাবিত করবে—হ্যাঁ, আমাদের হৃদয়কে খুলে দেবে। তখনই আমরা যিহোবার ভয়কে জানতে পারব।
১১. ঈশ্বরীয় ভয় গড়ে তুলতে হলে আমাদের আন্তরিকভাবে ও বারে বারে কী করতে হবে?
১১ গীতসংহিতা ৮৬:১১পদে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করায় এবং তা হল প্রার্থনা। “হে সদাপ্রভু, তোমার পথ আমাকে শিক্ষা দেও, আমি তোমার সত্যে চলিব,” গীতরচক প্রার্থনা করেন। “তোমার নাম ভয় করিতে আমার চিত্তকে একাগ্র কর।” যিহোবা এই প্রার্থনাকে গ্রহণ করেছিলেন, কারণ তিনি বাইবেলের মধ্যে তা লিপিবদ্ধ করান। ঈশ্বরীয় ভয় গড়ে তোলার জন্য, আমাদেরও প্রয়োজন যিহোবার সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করা এবং আন্তরিক ও বারে বারে প্রার্থনা করার দ্বারা আমরা উপকৃত হব।—লূক ১৮:১-৮.
আপনার হৃদয় অন্তর্ভুক্ত
১২. হৃদয়ের প্রতি কেন বেশি মনোযোগ দিতে হবে এবং এর অন্তর্ভুক্ত কী?
১২ গীতসংহিতা ৮৬:১১ পদে আরেকটা জিনিস আমাদের লক্ষ্য করা উচিত। গীতরচক কেবলমাত্র বুদ্ধিসহকারে ঈশ্বরীয় ভয়কে উপলব্ধি করতে বলছেন না। তিনি তাঁর হৃদয়ের কথা বলছেন। ঈশ্বরীয় ভয় গড়ে তোলার জন্য রূপক হৃদয়ের প্রয়োজন আছে, যার উপর বিশেষ মনোযোগ দেওয়া দরকার কারণ এটি হল আমাদের অন্তরের ব্যক্তিত্ব যা আমাদের জীবনের কার্যকলাপের মধ্যে প্রকাশ পায় এবং যার অন্তর্ভুক্ত হল আমাদের চিন্তা, আমাদের মনোভাব, আমাদের ইচ্ছা, আমাদের উদ্দেশ্য, আমাদের লক্ষ্য।
১৩. (ক) কী ইঙ্গিত করতে পারে যে একজনের হৃদয় বিভক্ত? (খ) ঈশ্বরীয় ভয় গড়ে তোলার সাথে সাথে, আমাদের কোন্ লক্ষ্যের প্রতি এগিয়ে চলা উচিত?
১৩ বাইবেল আমাদের সতর্ক করে দেয় যে একজন ব্যক্তির হৃদয় বিভক্ত হতে পারে। তা প্রবঞ্চক হতে পারে। (গীতসংহিতা ১২:২; যিরমিয় ১৭:৯) এটা হয়ত আমাদের প্ররোচিত করতে পারে গঠনমূলক কাজে অংশ নিতে—মণ্ডলীর সভাগুলিতে যেতে এবং ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশ নিতে—কিন্তু এটি জগতের জীবনধারার কিছু দিককেও ভালবাসতে পারে। এটা হয়ত আমাদের রাজ্যের উদ্দেশ্যকে প্রগতির দিকে সম্পূর্ণ-হৃদয়সহকারে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার থেকে বিরত করতে পারে। এরপর হয়ত প্রবঞ্চক হৃদয় আমাদের বিশ্বাস করাতে বাধ্য করতে পারে যে, অনেকের মতো যতটা সম্ভব আমরা ততটা করছি। অথবা আমাদের স্কুলে কিম্বা চাকুরির স্থলে মানুষের ভয়ের দ্বারা হয়ত আমাদের হৃদয় প্রভাবিত হতে পারে। এর ফলে ওইধরনের পরিস্থিতিতে আমরা হয়ত নিজেদের যিহোবার সাক্ষী বলে চিহ্নিত করতে ইতস্তত বোধ করতে পারি এবং এমনকি সেই ধরনের কাজও করতে পারি যা হয়ত খ্রীষ্টানদের জন্য যথাযথ নয়। কিন্তু পরিশেষে আমাদের বিবেক দংশায়। সেই ধরনের ব্যক্তি আমরা হতে চাই না। অতএব গীতরচকের সাথে, আমরা যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি: “তোমার নাম ভয় করিতে আমার চিত্তকে একাগ্র কর।” আমরা চাই যে আমাদের সমস্ত অন্তরের ব্যক্তিত্ব, যা আমাদের জীবনের সমগ্র কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়, সেটি যেন প্রমাণ করে যে আমরা ‘ঈশ্বরকে ভয় করি ও তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি।’—উপদেশক ১২:১৩.
১৪, ১৫. (ক) বাবিলনীয় বন্দীত্ব থেকে ইস্রায়েলের মুক্তি সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করার সময় যিহোবা তাঁর লোকেদের কী দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন? (খ) তাঁর লোকেদের হৃদয়ে ঈশ্বরীয় ভয় রোপণ করার জন্য যিহোবা কী করেন? (গ) কেন ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার পথ থেকে সরে গিয়েছিল?
১৪ যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন যে তিনি এইধরনের ঈশ্বর ভীরু হৃদয় তাঁর লোকেদের দেবেন। তিনি ইস্রায়েলের পুনর্স্থাপনের কথা বলেছিলেন যেমন যিরমিয় ৩২:৩৭-৩৯ পদে আমরা পড়ি: “আমি . . . তাহাদিগকে . . .পুনর্ব্বার এই স্থানে আনিব ও নির্ভয়ে বাস করাইব। আর তাহারা আমার প্রজা হইবে, এবং আমি তাহাদের ঈশ্বর হইব। আর আমি তাহাদের ও তাহাদের পরে তাহাদের সন্তানদের মঙ্গলের নিমিত্ত তাহাদিগকে এক চিত্ত ও এক পথ দিব, যেন তাহারা চিরকাল আমাকে ভয় করে।” ৪০ পদে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা আরও বেশি জোরদার হয়ে ওঠে: “তাহারা যেন আমাকে পরিত্যাগ না করে, এই জন্য আমার প্রতি ভয় তাহাদের অন্তঃকরণে স্থাপন করিব।” সা.শ.পূ. ৫৩৭ সালে, যিহোবা তাদের যিরূশালেমে ফিরিয়ে আনেন ঠিক যেমন তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। কিন্তু সেই প্রতিজ্ঞার বাদবাকি অংশ সম্বন্ধে কী বলা যায়—বিশেষকরে তিনি তাদের ‘এক চিত্ত দেবেন, যেন তারা চিরকাল তাঁকে ভয় করে?’ তাদের বাবিলন থেকে ফিরিয়ে আনার পরে কেন প্রাচীন ইস্রায়েল জাতি যিহোবার পথ থেকে সরে গিয়েছিল, যাতে করে সা.শ. ৭০ সালে তাদের মন্দির ধ্বংস হয়, আর তা কখনও পুনর্নিমিত না হয়?
১৫ এটা যিহোবার দিক দিয়ে কোন অকৃতকার্যতার জন্য হয়নি। তাঁর লোকেদের হৃদয়ে ঈশ্বরের ভয় রোপণ করার ক্ষেত্রে, যিহোবা অবশ্যই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। দয়ার সাথে বাবিলন থেকে মুক্তি দেওয়ার দ্বারা এবং তাদের নিজের দেশে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে, তিনি তাঁর নিজের প্রতি সশ্রদ্ধ সম্মান দেখানোর কারণ দেখিয়েছিলেন। হগয়, সখরিয় ও মালাখির মতো ভাববাদীদের মাধ্যমে; ইষ্রা, যাকে শিক্ষক হিসাবে তাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল; রাজ্যপাল নহিমিয়ের মাধ্যমে; এবং ঈশ্বরের আপন পুত্রের মাধ্যমে, স্মারক, উপদেশ এবং অনুযোগ করার দ্বারা ঈশ্বর এই বিষয়টিকে আরও জোরদার করে তুলেছিলেন। এক সময় লোকেরা শুনেছিল। তারা তা করেছিল যখন হগয় ও সখরিয়ের অনুপ্রেরণায় তারা যিহোবার মন্দির পুনর্গঠন করে এবং ইষ্রার দিনে তারা যখন বিদেশী স্ত্রীদের পাঠিয়ে দেয়। (ইষ্রা ৫:১, ২; ১০:১-৪) কিন্তু অধিকাংশ সময় তারা বাধ্য হয়নি। তারা মনোযোগের সাথে সমতা বজায় রাখেনি; তারা উপদেশের প্রতি ক্রমাগতভাবে সাড়া দেয়নি; তারা তাদের হৃদয় উন্মুক্ত করে রাখেনি। ইস্রায়েলীয়রা ঈশ্বরীয় ভয় গড়ে তোলেনি এবং এর ফলে, তা তাদের জীবনে প্ররোচণাকারী শক্তি হয়ে উঠতে পারেনি।—মালাখি ১:৬; মথি ১৫:৭, ৮.
১৬. কাদের হৃদয়ে যিহোবা ঈশ্বরীয় ভয় রোপণ করেন?
১৬ তবুও, যিহোবা যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তাঁর লোকেদের হৃদয়ে ঈশ্বরীয় ভয় অনুপ্রবেশ করাবেন, তা কিন্তু ব্যর্থ হয়নি। তিনি আত্মিক ইস্রায়েলের সাথে এক নতুন চুক্তি করেন, সেই সব খ্রীষ্টানদের সাথে যাদের সামনে তিনি স্বর্গীয় আশা রেখেছিলেন। (যিরমিয় ৩১:৩৩; গালাতীয় ৬:১৬) ১৯১৯ সালে ঈশ্বর তাদের মহতী বাবিল, মিথ্যা ধর্মের বিশ্বসাম্রাজ্যের বন্দীত্ব থেকে মুক্তি দেন। তাদের হৃদয়ে তিনি তাঁর সম্বন্ধে যে ভয় তা দৃঢ়ভাবে রোপণ করেন। এটা তাদের জন্য প্রচুর উপকার আনে এবং “বিস্তর লোক”-দের জন্যেও যাদের আশা হল রাজ্যের পার্থিব প্রজা হিসাবে বেঁচে থাকা। (যিরমিয় ৩২:৩৯; প্রকাশিত বাক্য ৭৯) তাদের হৃদয়েও যিহোবার ভয় স্থাপন করা হয়েছে।
কিভাবে ঈশ্বরীয় ভয় আমাদের হৃদয়ে রোপিত হয়
১৭. কিভাবে যিহোবা আমাদের হৃদয়ে ঈশ্বরীয় ভয় রোপন করেছেন?
১৭ কিভাবে যিহোবা আমাদের হৃদয়ে ঈশ্বরীয় ভয় রোপণ করেছেন? তাঁর আত্মার মাধ্যমে। এবং আমাদের কাছে কী আছে যা হল পবিত্র আত্মার ফল? বাইবেল, এটি হল ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য। (২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭) তিনি অতীতে কী করেছেন, তাঁর ভাববাণীমূলক বাক্যের পরিপূর্ণতাস্বরূপ এখন তিনি তাঁর দাসেদের সাথে কিধরনের ব্যবহার করছেন এবং ভবিষ্যদ্বাণীমূলক যে ঘটনাগুলি আগামী দিনে ঘটতে চলেছে তার মাধ্যমে যিহোবা আমাদের যথেষ্ট উত্তম ভিত্তি দেন ঈশ্বরীয় ভয় গড়ে তুলতে।—যিহোশূয়ের পুস্তক ২৪:২-১৫; ইব্রীয় ১০:৩০, ৩১.
১৮, ১৯. সম্মেলন, অধিবেশন এবং মণ্ডলীর সভাগুলি কিভাবে আমাদের সাহায্য করে ঈশ্বরীয় ভয় অর্জন করতে?
১৮ এটি উল্লেখযোগ্য, যা দ্বিতীয় বিবরণ ৪:১০ পদে নথিভুক্ত আছে, যিহোবা মোশিকে বলেছিলেন: “তুমি আমার নিকটে লোকদিগকে একত্র কর, আমি আপন বাক্য সকল তাহাদিগকে শুনাইব; তাহারা পৃথিবীতে যত দিন জীবিত থাকে, তত দিন যেন আমাকে ভয় করে, এই বিষয় তাহারা শিখিবে, এবং আপন সন্তানগণকেও শিখাইবে।” ঠিক একই রকমভাবে আজও, যিহোবা অনেক ব্যবস্থা করছেন যাতে করে তাঁর লোকেরা সাহায্য পায় তাঁকে ভয় করতে শিখতে। সম্মেলন, অধিবেশন এবং মণ্ডলীর সভাগুলিতে, আমরা যিহোবার প্রেমময়-অনুরাগের ও মঙ্গলভাবের যে প্রকাশ তা উপলব্ধি করি। সর্বমহান পুরুষ যিনি কখনও জীবিত ছিলেন এই বইটি পড়ার সময় আমরা তাই করছিলাম। এই অধ্যয়নটি আপনাকে এবং যিহোবার প্রতি আপনার মনোভাবকে কিভাবে প্রভাবিত করছে? যতই আপনি আমাদের স্বর্গীয় পিতার উত্তম ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দিকগুলি লক্ষ্য করেন যা তাঁর পুত্রের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে, ততই আপনার ঈশ্বরকে অখুশি না করার ইচ্ছা কী দৃঢ় হয় না?—কলসীয় ১:১৫.
১৯ সভাগুলিতে আমরা এটাও শিখি যে প্রাচীন কালে যিহোবা কিভাবে তাঁর লোকেদের রক্ষা করেছিলেন। (২ শমূয়েল ৭:২৩) প্রকাশিত বাক্য—তার মহান পরিপূর্ণতা সন্নিকট! (ইংরাজি) এই সহায়ক বইটির সাহায্যে আমরা যখন বাইবেলের প্রকাশিত বাক্য বইটি পড়ি তখন আমরা সেই সব ভাববাণীমূলক দর্শনগুলির সম্বন্ধে জানতে পারি যেগুলি ইতিমধ্যেই বিংশ শতাব্দীতে পরিপূর্ণতা লাভ করছে এবং সেইসব ভয়সঞ্চারিত ঘটনার কথাও পড়ি যা আগামী দিনে আসতে চলেছে। ঈশ্বরের এই সমস্ত কাজ সম্বন্ধে গীতসংহিতা ৬৬:৫ পদ বলে: “চল, ঈশ্বরের ক্রিয়া সকল দেখ; মনুষ্য-সন্তানদের বিষয়ে তিনি স্বকর্ম্মে ভয়াবহ।” হ্যাঁ, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখতে গেলে, ঈশ্বরের এই কর্ম সকল আমাদের হৃদয়ে যিহোবার সম্বন্ধে ভয় রোপণ করে, অর্থাৎ সম্মানসূচক শ্রদ্ধা। অতএব আমরা দেখতে পাই যে কিভাবে যিহোবা ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞা পালন করছেন: “তাহারা যেন আমাকে পরিত্যাগ না করে, এই জন্য আমার প্রতি ভয় তাহাদের অন্তঃকরণে স্থাপন করিব।”—যিরমিয় ৩২:৪০.
২০. ঈশ্বরীয় ভয়কে যদি আমাদের হৃদয়ে গভীরভাবে অনুপ্রবেশ করাতে হয় তাহলে আমাদের কী করা দরকার?
২০ কিন্তু, এটা প্রতীয়মান, যে ঈশ্বরীয় ভয় আমাদের হৃদয়ে আসবে না যদি আমরা এবিষয়ে চেষ্টা না করি। এর ফল আপনি থেকে আসে না। যিহোবা তাঁর ভূমিকা পালন করেন। ঈশ্বরীয় ভয় গড়ে তোলার মাধ্যমে আমাদেরও নিজস্ব ভূমিকা পালন করতে হবে। (দ্বিতীয় বিবরণ ৫:২৯) সাধারণ ইস্রায়েল এটি করতে অকৃতকার্য হয়েছিল। কিন্তু যিহোবার উপর আস্থা রাখার দ্বারা, আত্মিক ইস্রায়েল এবং তাদের সহকারীরা ইতিমধ্যেই সেইসব উপকারগুলি উপভোগ করছে যেগুলি তাদের কাছে আসে যারা ঈশ্বর-ভীরু। পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা এইধরনের কয়েকটি উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব।
আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন?
◻ ঈশ্বরীয় ভয় কী?
◻ যিহোবার ভয়ের মধ্যে আনন্দ খুঁজে পেতে আমাদের কিভাবে শেখানো হয়েছে?
◻ ঈশ্বরীয় ভয় অর্জন করতে গেলে, আমাদের কিধরনের প্রচেষ্টা থাকা দরকার?
◻ ঈশ্বরীয় ভয় অর্জন করার সাথে কেন আমাদের রূপক হৃদয়ের সমস্ত দিক অন্তর্ভুক্ত?
[১২, ১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার ভয়কে বুঝতে হলে গভীর অধ্যয়নের প্রয়োজন রয়েছে