-
প্রেরিতদের সময়ে দীপ্তির ঝলকগুলি১৯৯৫ প্রহরীদুর্গ | মে ১৫
-
-
প্রেরিতদের সময়ে দীপ্তির ঝলকগুলি
“দীপ্তি বপণ করা গিয়াছে ধার্ম্মিকের জন্য, আর সরলচিত্তদের জন্য আনন্দ।”—গীতসংহিতা ৯৭:১১.
১. বর্তমান দিনের যিহোবার সাক্ষীদের সাথে প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের কী মিল দেখা যায়?
সত্য খ্রীষ্টানরূপে গীতসংহিতা ৯৭:১১ পদের কথাগুলি আমরা কতই না উপলবদ্ধি করি! বারংবার আমাদের জন্য ‘দীপ্তি ঝলক দিয়ে উঠেছে’। অবশ্যই, কয়েক দশক যাবৎ আমাদের মধ্যে বেশ কিছু জন যিহোবার দ্বারা প্রজ্জ্বলিত দীপ্তিগুলি দেখেছি। এই সবই আমাদের হিতোপদেশ ৪:১৮ পদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যা বলে: “ধার্ম্মিকদের পথ প্রভাতীয় জ্যোতির ন্যায়, যাহা মধ্যাহ্ন পর্য্যন্ত উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান হয়।” পরম্পরাগত বিধিকে দূরে সরিয়ে রেখে যেহেতু আমরা শাস্ত্রীয় নীতিকে বেশি প্রাধান্য দিই, তাই যিহোবার সাক্ষীরূপে আমরা প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের সমরূপ। খ্রীষ্টীয় গ্রীক শাস্ত্রের ঐতিহাসিক পুস্তকগুলি এবং তার পত্রসকল, যেগুলি ঐশিক অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছে, তা থেকে অতি স্বচ্ছভাবে আমরা তাদের মনোভাব বুঝতে পারি।
২. প্রথম দীপ্তির ঝলকগুলি কী ছিল যা যীশুর অনুগামীরা পেয়েছিল?
২ যীশু খ্রীষ্টের প্রাথমিক অনুগামীরা যে প্রথম দীপ্তির ঝলক দেখেছিলেন, তার সাথে মশীহের সম্পর্ক আছে। আন্দ্রিয় তার ভাই শিমোন পিতরকে বলেছিলেন: “আমরা মশীহের দেখা পাইয়াছি।” (যোহন ১:৪১) কিছু সময় পরে স্বর্গীয় পিতা প্রেরিত পিতরকে বিষয়টি সত্য বলে সাক্ষ্য দিতে সক্ষম করেন, যখন তিনি যীশু খ্রীষ্টকে বলেন: “আপনি সেই খ্রীষ্ট, জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্ত্র।”—মথি ১৬:১৬, ১৭; যোহন ৬:৬৮, ৬৯.
তাদের প্রচার কাজের বিষয়ে দীপ্তি
৩, ৪. তাঁর পুনরুত্থানের পরে, যীশু তাঁর অনুগামীদের তাদের ভবিষ্যৎ কাজের বিষয়ে কী জ্ঞানালোক প্রদান করেন?
৩ যীশু খ্রীষ্ট তাঁর পুনরুত্থানের পর তাঁর সকল অনুগামীদের তাদের দায়িত্বের উপরে দীপ্তির ঝলকগুলি দেন। খুব সম্ভবত এটা ছিল গালীলে একত্রিত সেই ৫০০ জন শিষ্য, যাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি, সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও। আর দেখ, আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।” (মথি ২৮:১৯, ২০; ১ করিন্থীয় ১৫:৬) তারপর থেকে, খ্রীষ্টের সকল অনুগামীদের প্রচারক হতে হয়, আর তাদের প্রচারের দায়িত্ব শুধুমাত্র “ইস্রায়েল-কুলের হারান মেষগণের” মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। (মথি ১০:৬) তাদের যোহনের মত বাপ্তিস্মও দিতে হত না, যা তাদের পাপের ক্ষমার জন্য অনুতপ্তের চিহ্ন ছিল। বরঞ্চ, লোকেদের “পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে” তাদের বাপ্তাইজিত করতে হত।
৪ যীশুর স্বর্গারোহণের ঠিক আগে তাঁর ১১ জন বিশ্বস্ত প্রেরিত জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “প্রভু, আপনি কি এই সময়ে ইস্রায়েলের হাতে রাজ্য ফিরাইয়া আনিবেন?” সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, যীশু তাদের প্রচারের দায়িত্বের বিষয়ে আরও কিছু উপদেশ দেন, এই বলে: “পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে আসিলে তোমরা শক্তি প্রাপ্ত হইবে; আর তোমরা যিরূশালেমে, সমুদয় যিহূদীয়া ও শমরিয়া দেশে, এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত আমার সাক্ষী হইবে।” এতক্ষণ পর্যন্ত তারা শুধুমাত্র যিহোবার সাক্ষী ছিলেন, কিন্তু এখন থেকে তারা যীশুরও সাক্ষী।—প্রেরিত ১:৬-৮.
৫, ৬. পঞ্চাশত্তমীতে যীশুর শিষ্যেরা দীপ্তির কোন্ ঝলকগুলি পায়?
৫ ঠিক দশ দিন বাদে, দীপ্তির কী প্রখর ঝলকগুলিই না যীশুর অনুগামীরা পেয়েছিলেন! সা.শ. ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমীর দিনে তারা প্রথমবার যোয়েল ২:২৮, ২৯ পদের তাৎপর্য উপলব্ধি করেন: “আমি [যিহোবা] মর্ত্ত্যমাত্রের উপরে আমার আত্মা সেচন করিব, তাহাতে তোমাদের পুত্ত্রকন্যাগণ ভাববাণী বলিবে তোমাদের প্রাচীনেরা স্বপ্ন দেখিবে, তোমাদের যুবকেরা দর্শন পাইবে; আর তৎকালে আমি দাসদাসীদিগেরও উপরে আমার আত্মা সেচন করিব।” যীশুর শিষ্যেরা পবিত্র আত্মা অগ্নিবৎ জিহ্বার আকারে সকলের মাথার উপরে পড়তে দেখেছিলেন—প্রায় ১২০ জন পুরুষ এবং নারীর উপর—যারা যিরূশালেমে একত্রিত হয়েছিলেন।—প্রেরিত ১:১২-১৫; ২:১-৪.
৬ এছাড়াও, পঞ্চাশত্তমীর দিনে শিষ্যেরা প্রথমবার উপলব্ধি করেন যে গীতসংহিতা ১৬:১০ পদের কথাগুলি পুনরুত্থিত যীশু খ্রীষ্টের প্রতি প্রযোজ্য। গীতরচক সেখানে বলেছিলেন: “তুমি [যিহোবা ঈশ্বর] আমার প্রাণ পাতালে পরিত্যাগ করিবে না, তুমি নিজ সাধুকে ক্ষয় দেখিতে দিবে না।” শিষ্যেরা বুঝতে পেরেছিলেন যে এই কথাগুলি রাজা দায়ূদের প্রতি প্রযোজ্য হতে পারে না, কারণ তার সমাধি তাদের সঙ্গে সেই দিন পর্যন্ত ছিল। এটা আশ্চর্যের কিছু নয় যে প্রায় ৩,০০০ জন যারা সেই নতুন দীপ্তির ব্যাখ্যা শুনেছিল, এতই নিশ্চিত হয়েছিল যে সেই দিনেই তারা বাপ্তিস্ম নিয়েছিল!—প্রেরিত ২:১৪-৪১.
৭. রোমীয় সেনাপতি কর্ণীলিয়ের সাথে সাক্ষাতের সময়ে প্রেরিত পিতর কী প্রখর দীপ্তি পান?
৭ বহু শতাব্দী ব্যাপী ঈশ্বর তাদের বিষয়ে যা বলেছিলেন, তা ইস্রায়েলীয়রা উপলব্ধি করেছিল: “আমি পৃথিবীস্থ সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্যে তোমাদেরই পরিচয় লইয়াছি।” (আমোষ ৩:২) তাহলে, এটা ছিল অবশ্যই প্রখর এক দীপ্তির ঝলক যা প্রেরিত পিতর এবং তার সঙ্গীরা যারা তার সাথে রোমীয় সেনাপতি কর্ণীলিয়ের ঘরে যাওয়ার সময় পেয়েছিলেন, যখন পবিত্র আত্মা প্রথমবার অছিন্নত্বক পরজাতীয় বিশ্বাসীদের উপরে নেমে আসে। এটা উল্লেখযোগ্য যে শুধুমাত্র এই একবারই পবিত্র আত্মা বাপ্তিস্মের আগেই দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তেমন করার প্রয়োজনও ছিল। তা না হলে, পিতর জানতেই পারতেন না এই অছিন্নত্বক পরজাতীয়েরা বাপ্তিস্মের যোগ্য। সমম্ত বিষয়টির তাৎপর্য সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করার পর পিতর জিজ্ঞাসা করেন: “এই যে লোকেরা আমাদেরই ন্যায় পবিত্র আত্মা প্রাপ্ত হইয়াছেন, কেহ কি জল নিবারণ করিয়া ইহাঁদের [পরজাতীয়দের] বাপ্তাইজিত হইবার বাধা দিতে পারে?” অবশ্যই, সেইখানে এমন কেউই উপস্থিত ছিল না, যে ন্যায়সঙ্গতভাবে বাধা দিতে পারত এবং যার ফলে এই পরজাতীয়দের বাপ্তিস্ম হয়।—প্রেরিত ১০:৪৪-৪৮; তুলনা করুন প্রেরিত ৮:১৪-১৭.
আর ত্বক্চ্ছেদের প্রয়োজন নেই
৮. কিছু প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের পক্ষে কেন ত্বক্চ্ছেদের শিক্ষাকে বর্জন করা কঠিন হয়ে পড়েছিল?
৮ ত্বক্চ্ছেদের প্রশ্নকে কেন্দ্র করে আরও প্রখর এক সত্যের ঝলক দেখা দিয়েছিল। ত্বক্চ্ছেদের প্রচলন শুরু হয় সা.শ.পূ. ১৯১৯ সাল থেকে যখন অব্রাহাম এবং যিহোবার মধ্যে চুক্তি হয়। ঈশ্বর অব্রাহামকে আদেশ দেন যে তাকে এবং তার পরিবারের সকলকে ত্বক্চ্ছেদ করতে হবে। (আদিপুস্তক ১৭:৯-১৪, ২৩-২৭) ফলে অব্রাহামের বংশধরদের সঙ্গে অন্যান্যদের চেনার জন্য ত্বক্চ্ছেদ চিহ্নস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। আর এই প্রথার জন্য তারা কতই না গর্বিত ছিল! এর ফলস্বরূপ, “অছিন্নত্বক” শব্দটি এক অবজ্ঞার পাত্র হয়ে দাঁড়ায়। (যিশাইয় ৫২:১; ১ শমূয়েল ১৭:২৬, ২৭) এটা বোঝা সহজ যে কেন বিশেষ কিছু যিহূদী খ্রীষ্টান এই প্রতীকটিকে ধরে রাখতে চেয়েছিল। তাদের কেউ কেউ পৌল এবং বার্ণবার সঙ্গে এই বিষয়ে বেশ কিছু আলোচনাও করেছিল। এই বিষয়ে নিষ্পত্তি করার জন্য পৌল এবং অন্যান্যেরা যিরূশালেমে খ্রীষ্টীয় পরিচালক গোষ্ঠীর সাথে আলোচনা করতে যায়।—প্রেরিত ১৫:১, ২.
৯. প্রাথমিক পরিচালক গোষ্ঠীর কাছে দীপ্তির কোন্ কোন্ ঝলক দেখান হয়, যেগুলি প্রেরিত ১৫ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ করা আছে?
৯ এমন পরিস্থিতিতে অলৌকিক কিছুই ঘটেনি, যে সেই প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা জানতে পারে যে যিহোবার দাসেদের জন্য আর ত্বক্চ্ছেদের প্রয়োজন নেই। বরং, শাস্ত্র খুঁজে, পবিত্র আত্মার নির্দেশনা নিয়ে এবং পিতর ও পৌলের কাছে অছিন্নত্বক পরজাতীয়েরা কিভাবে ধর্মান্তরিত হয়েছিল, তা শুনে সে বিষয়ে তাদের জ্ঞানরূপ দীপ্তি বৃদ্ধি করে। (প্রেরিত ১৫:৬-২১) সিদ্ধান্তটি লিখিত এক পত্রের দ্বারা প্রকাশ পায়, যার খানিকটা পড়লে দাঁড়ায়: “পবিত্র আত্মার ও আমাদের ইহা বিহিত বোধ হইল, যেন এই কয়েকটী প্রয়োজনীয় বিষয় ছাড়া তোমাদের উপরে আর কোন ভার না দিই, ফলে প্রতিমার প্রসাদ এবং রক্ত ও গলা টিপিয়া মারা প্রাণীর মাংস ও ব্যভিচার, হইতে পৃথক্ থাকা তোমাদের উচিত।” (প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯) এইভাবে প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা ত্বকচ্ছেদের আদেশ এবং মোশির নিয়মের অন্যান্য বাধ্যবাধকতা থেকে রেহাই পায়। তাই, পৌল গালাতীয় খ্রীষ্টানদের বলতে পেরেছিলেন: “স্বাধীনতার নিমিত্তই খ্রীষ্ট আমাদিগকে স্বাধীন করিয়াছেন।”—গালাতীয় ৫:১.
সুসমাচারের পুস্তকগুলির উপর দীপ্তি
১০. মথির সুসমাচারের পুস্তকে কোন্ কোন্ দীপ্তির ঝলক প্রকাশ পায়?
১০ নিঃসন্দেহে, সা.শ. ৪১ সালে লিখিত মথির পুস্তকে পাঠকদের উপকারার্থে অনেক জ্ঞানরূপ দীপ্তি রয়েছে। তুলনামূলকভাবে, প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের অতি অল্পসংখ্যকই ব্যক্তিগতভাবে যীশুকে বিস্তারিতভাবে শিক্ষা দিতে শুনেছিলেন। বিশেষ করে, মথির পুস্তক জোর দিয়ে বলে যে যীশুর প্রচারের বিষয়বস্তুই ছিল রাজ্য। আর কত দৃঢ়ভাবেই না যীশু সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখার প্রতি জোর দেন! তাঁর পর্বতে দত্ত উপদেশে, শিক্ষামূলক দৃষ্টান্তে (যেমন ১৩ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ আছে) এবং ২৪ ও ২৫ অধ্যায়ে তাঁর মহৎ ভাববাণীগুলিতে কী ধরনের দীপ্তির ঝলকই না দেখা যায়! শুধুমাত্র মথি পুস্তক থেকেই এইসকল বিষয়গুলি প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের দৃষ্টিগোচরে আনা হয় সা.শ. ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমীর প্রায় আট বছর বাদে লেখা হয়েছিল।
১১. লূক এবং মার্কের সুসমাচারের পুস্তকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে কী বলা যায়?
১১ এর প্রায় ১৫ বছর বাদে, লূক তার সুসমাচার লেখেন। যদিও তার বিবরণ অনেকাংশেই মথির বিবরণের মত, তথাপি ৫৯ শতাংশ অতিরিক্ত আছে। লূক, যীশুর ছটি অলৌকিক কাজের বিবরণ লিপিবদ্ধ এবং এর দ্বিগুণেরও বেশি সংখ্যায় তাঁর দেওয়া বহু দৃষ্টান্তের উল্লেখ করেন যা অন্যান্য সুসমাচার লেখকেরা করেননি। সম্ভবত, মাত্র কয়েক বছর বাদেই, মার্ক তার সুসমাচার লেখেন, যেখানে তিনি যীশুকে বীরপুরুষ, অলৌকিক কার্যকারী ব্যক্তি হিসাবে জোর দেন। মথি এবং লূক ইতিমধ্যেই যা লিপিবদ্ধ করেছিলেন, যদিও মার্ক তারই পুনরাবৃত্তি করেন, তথাপি তিনি একটি অতিরিক্ত দৃষ্টান্তের উল্লেখ করেন, যেটি তারা করেননি। এই দৃষ্টান্তে যীশু ঈশ্বরের রাজ্যকে বীজের সাথে তুলনা করেন, যা গজিয়ে ওঠে, আকারে লম্বা হয় এবং ধীরে ধীরে ফল দিতে থাকে।a—মার্ক ৪:২৬-২৯.
১২. যোহনের সুসমাচারের পুস্তক আরও কতটা পরিমাণ জ্ঞানালোক প্রদান করে?
১২ এরপর আসে যোহনের সুসমাচার, যা প্রায় মার্কের লেখার ৩০ বছরেরও বেশি পরে লেখা হয়েছিল। যীশুর পরিচর্যার উপরে যোহন কতই না দীপ্তির স্রোত এনেছিলেন, বিশেষ করে তাঁর মানবরূপে পার্থিব জীবনের পূর্বেকার অস্তিত্বের বহু প্রসঙ্গগুলির মাধ্যমে! একমাত্র যোহনই লাসারের পুনরুত্থানের বিবরণ দেন এবং তিনিই বিশ্বস্ত প্রেরিতদের সপক্ষে যীশুর উত্তম মন্তব্যগুলি, আর সেইসঙ্গে ১৩ থেকে ১৭ অধ্যায়ে উল্লেখিত যীশুর বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করার রাত্রে তিনি যে হৃদয়গ্রাহী প্রার্থনাগুলি করেছিলেন, সেই সকলের বিবরণ দেন। বস্তুতপক্ষে বলা হয়, যোহনের সুসমাচারের ৯২ শতাংশ হল অদ্বিতীয়।
পৌলের পত্রগুলি থেকে দীপ্তির ঝলক
১৩. রোমীয়দের প্রতি লিখিত পৌলের পত্রকে কেন কিছু ব্যক্তিরা সুসমাচারের পুস্তক বলে গণ্য করে?
১৩ প্রেরিতদের সময়ে যে সব খ্রীষ্টানেরা জীবিত ছিল, তাদের কাছে সত্যরূপ দীপ্তির ঝলক পৌঁছে দেবার জন্য বিশেষ করে প্রেরিত পৌলকে ব্যবহার করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, রোমীয়দের প্রতি লিখিত পৌলের পত্রটি, যেটি প্রায় লেখা হয়েছিল সা.শ. ৫৬ সালে—মোটামুটি লূক যে সময়ে তার সুসমাচারটি লিখেছিলেন, সেই সময়েই। এই পত্রে পৌল ঈশ্বরের অযাচিত অনুগ্রহ এবং যীশু খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাস করার দ্বারা যে ধার্মিকতা অর্পণ করা হয়, তার উপর আলোকপাত করেছেন। সুসমাচারের এই দিকটির প্রতি পৌল জোর দেওয়াতে কিছুজন ধারণা করতে শুরু করে যে রোমীয়দের প্রতি লিখিত তার এই পত্রটি ছিল পঞ্চম সুসমাচারের পুস্তক।
১৪-১৬. (ক) করিন্থে খ্রীষ্টানদের প্রতি লিখিত পত্রে পৌল একতার প্রয়োজনীয়তার উপরে কিভাবে আলোকপাত করেন? (খ) আচরণের ক্ষেত্রে প্রথম করিন্থীয়ের পুস্তক আরও কিভাবে আলোকপাত করে?
১৪ পৌল কয়েকটি বিশেষ বিষয় লিখেছিলেন যেগুলি করিন্থের খ্রীষ্টানদের কষ্ট দিচ্ছিল। করিন্থীয়দের প্রতি লিখিত তার পত্রে প্রচুর অনুপ্রাণিত উপদেশ আছে, যা আমাদের দিন পর্যন্ত খ্রীষ্টানদের উপকার করে আসছে। কিছু ব্যক্তিবিশেষকে কেন্দ্র করে করিন্থীয়রা উপাসনার পদ্ধতি গড়ে তোলার মধ্যে যে ভুল করছিল, সেই বিষয়ে তিনি শুরুতেই তাদের সচেতন করে দেন। প্রেরিত সাহসের সাথে তাদের মনোভাবকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন এই বলে: “হে ভ্রাতৃগণ, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে আমি তোমাদিগকে বিনয় করিয়া বলি, তোমরা সকলে একই কথা বল, তোমাদের মধ্যে দলাদলি না হউক, কিন্তু এক মনে ও এক বিচারে পরিপক্ব হও।”—১ করিন্থীয় ১:১০-১৫.
১৫ করিন্থীয় মণ্ডলীর ভিতরে গুরুতর অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছিল। সেখানে এক ব্যক্তি তার পিতার স্ত্রীকে গ্রহণ করেছিল, এইভাবে ‘এমন ব্যভিচার, যাহা পরজাতীয়দের মধ্যেও ছিল না’ অভ্যাস করেছিল। পরিষ্কারভাবে পৌল লিখেছিলেন: “তোমরা আপনাদের মধ্য হইতে সেই দুষ্টকে বাহির করিয়া দেও।” (১ করিন্থীয় ৫:১, ১১-১৩) সমাজচ্যুত করা—বিষয়টি খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর কাছে সম্পূর্ণ নতুন ছিল। আর একটি বিষয়ে করিন্থীয় মণ্ডলীকে জাগিয়ে তোলার প্রয়োজন ছিল, সেটি হল সেখানকার সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের আধ্যাত্মিক ভাইদের জাগতিক বিচারালয়ে নিয়ে গিয়ে তাদের ক্ষোভ মেটাচ্ছিল। এই কাজের জন্য পৌল তাদের দৃঢ়তার সাথে তিরষ্কার করেছিলেন।—১ করিন্থীয় ৬:৫-৮.
১৬ আরেকটি বিষয়, যা করিন্থীয় মণ্ডলীকে দূষিত করছিল তা হল যৌন সম্পর্ক। ১ করিন্থীয়ের ৭ অধ্যায়ে পৌল দেখিয়ে দেন যে যৌন অনৈতিকতা থাকার দরুন প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত তার স্ত্রী থাকা, এবং প্রতিটি নারীর উচিত আপন স্বামী থাকা। পৌল এও বলেছিলেন যে অবিবাহিত ব্যক্তিরা যিহোবার সেবায় একনিষ্ঠ হতে পারে, কিন্তু এই অবিবাহিত থাকার সুযোগ সকলের হয় না। আর যদি এক স্ত্রীর স্বামী মারা যায়, তাহলে সে পুনরায় বিবাহ করতে পারে, কিন্তু “কেবল প্রভুতেই।”—১ করিন্থীয় ৭:৩৯.
১৭. পুনরুত্থানের শিক্ষার উপরে পৌল কিভাবে আলোকপাত করেন?
১৭ পুনরুত্থানের বিষয়ে সত্যের কোন্ আলোক প্রকাশ করার জন্য প্রভু পৌলকে ব্যবহার করেন! কিধরনের শরীরে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা উত্থিত হবে? “প্রাণিক দেহ বপন করা যায়, আত্মিক দেহ উত্থাপন করা হয়,” পৌল লিখেছিলেন। কোন মাংসিক শরীরই স্বর্গে যেতে পারে না, কারণ “রক্ত মাংস ঈশ্বরের রাজ্যের অধিকারী হইতে পারে না।” পৌল আরও বলেন যে, সকল অভিষিক্ত জনকেই মৃত্যুতে ঘুমিয়ে পড়তে হবে না, কিন্তু যীশুর উপস্থিতি কালে কিছু জন মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে স্বর্গে অমর জীবনে উত্থিত হবে।—১ করিন্থীয় ১৫:৪৩-৫৩.
১৮. থিষলনীকীয়দের প্রতি লিখিত পৌলের প্রথম পত্র ভবিষ্যতের বিষয়ে কী আশা দেয়?
১৮ থিষলনীকীয়তে খ্রীষ্টানদের প্রতি লিখিত তার পত্রে পৌল ভবিষ্যতের বিষয়ে দীপ্তি প্রদর্শন করতে ব্যবহৃত হয়েছিলেন। যিহোবার দিন রাত্রে চোরের ন্যায় আসবে। পৌল আরও ব্যাখ্যা করে বলেন: “লোকে যখন বলে, শান্তি ও অভয়, তখনই তাহাদের কাছে যেমন গর্ব্ভবতীর প্রসব-বেদনা উপস্থিত হইয়া থাকে, তেমনি আকস্মিক বিনাশ উপস্থিত হয়; আর তাহারা কোন ক্রমে এড়াইতে পারিবে না।”—১ থিষলনীকীয় ৫:২, ৩.
১৯, ২০. ইব্রীয়দের প্রতি লিখিত পৌলের পত্র থেকে যিরূশালেম এবং যিহূদার খ্রীষ্টানেরা কী দীপ্তির ঝলক পায়?
১৯ ইব্রীয়দের প্রতি লিখিত তার পত্রের মাধ্যমে পৌল যিরূশালেম এবং যিহূদার প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের কাছে দীপ্তির ঝলক প্রেরণ করেন। কত প্রখরভাবে তিনি মোশির নিয়মের অধীনে উপাসনার চাইতে, খ্রীষ্টীয় ব্যবস্থার উপাসনার উৎকৃষ্টতা দেখিয়ে দেন! দূতেদের দ্বারা দেওয়া নিয়ম মেনে চলার চাইতে খ্রীষ্টানদের বিশ্বাস রয়েছে ঈশ্বরের পুত্রের দ্বারা প্রথম কথিত পরিত্রাণের উপর, যিনি সংবাদবাহক দূতেদের চেয়ে অনেক বেশি উৎকৃষ্ট। (ইব্রীয় ২:২-৪) ঈশ্বরের গৃহে মোশি কেবলমাত্র একজন পরিচালক ছিলেন। কিন্তু, যীশু খ্রীষ্ট সমস্ত গৃহেরই সভাপতিত্ব করেন। মল্কীষেদকের রীতি অনুসারে যীশু হলেন একজন মহাযাজক, যা হারোণের পৌরহিত্য ব্যবস্থার চেয়ে অনেক বেশি উচ্চতর। পৌল আরও উল্লেখ করেন যে ইস্রায়েলীয়রা অবিশ্বস্ততা এবং অবাধ্যতার কারণে ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করতে পারেনি। কিন্তু খ্রীষ্টানেরা তাদের বাধ্যতা এবং বিশ্বস্ততার জন্য তা করতে পারে।—ইব্রীয় ৩:১-৪:১১.
২০ এছাড়াও, নিয়ম চুক্তির তুলনায় নতুন চুক্তি অনেক উৎকৃষ্ট। ৬০০ বছর আগে যিরমিয় ৩১:৩১-৩৪ পদে যেমন ভাববাণী করা হয়েছিল, যারা নতুন চুক্তির অন্তর্ভুক্ত, ঈশ্বরের নিয়ম তাদের হৃদয়ে লিখিত থাকে এবং পাপ থেকে প্রকৃত ক্ষমা উপভোগ করে। এমন একজন মহাযাজক যাকে প্রতি বছর নিজের ও অপরের জন্য প্রায়শ্চিত্তমূলক বলিদান করতে হয়, তেমন না হয়ে খ্রীষ্টানদের জন্য রয়েছেন মহাযাজক, যীশু খ্রীষ্ট, যিনি নিষ্পাপ এবং একবারই এবং সকলের পাপের নিমিত্ত বলি উৎসর্গ করেছেন। হস্তনির্মিত পবিত্র স্থানে তাঁর নৈবেদ্য উৎসর্গ করার জন্য প্রবেশ করার পরিবর্তে তিনি স্বর্গেই যিহোবার সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্য প্রবেশ করেন। এছাড়াও, মোশির নিয়ম চুক্তির অধীনে পশুবলি সম্পূর্ণরূপে পাপ হরণ করতে পারত না, কেননা তা না হলে প্রতি বছর তা করার প্রয়োজন থাকত না। কিন্তু খ্রীষ্টের বলিদান পাপ সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলতে পারে যা সর্বকালের জন্য একবারই অর্পণ করা হয়েছে। এই সব কিছুই সেই বৃহৎ আত্মিক মন্দিরের প্রতি আলোকপাত করায়, যার প্রাঙ্গণে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা এবং “অপর মেষ” আজ উপাসনা করে।—যোহন ১০:১৬; ইব্রীয় ৯:২৪-২৮, NW.
২১. প্রেরিতদের সময়ে গীতসংহিতা ৯৭:১১ এবং হিতোপদেশ ৪:১৮ পদের পরিপূর্ণতার বিষয়ে এই আলোচনা কী জানায়?
২১ আরও অধিক কিছু দীপ্তির ঝলকের দৃষ্টান্ত দেওয়ার মত জায়গা নেই, যে ধরনের দীপ্তির ঝলকের দৃষ্টান্ত প্রেরিত পিতর, শিষ্য যাকোব ও যিহূদার পত্রগুলিতে দেখা যায়। কিন্তু এতক্ষণ যেগুলি আলোচিত হয়েছে, সেগুলি প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট যে গীতসংহিতা ৯৭:১১ এবং হিতোপদেশ ৪:১৮ পদ প্রেরিতদের সময়ে জোরদারভাবে পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল। সত্য, প্রতীক এবং ছায়া অতিক্রম করে পরিপূর্ণতার এবং বাস্তবতার দিকে এগিয়ে চলে।—গালাতীয় ৩:২৩-২৫; ৪:২১-২৬.
২২. প্রেরিতদের মৃত্যুর পরে কী ঘটে এবং পরবর্তী প্রবন্ধ কী দেখাবে?
২২ যীশুর প্রেরিতদের মৃত্যুর পরে এবং পূর্বকথিত ধর্মভ্রষ্টতা শুরু হওয়ার সাথে সাথেই সত্যের দীপ্তি খুব ক্ষীণ হয়ে আসে। (২ থিষলনীকীয় ২:১-১১) যাইহোক, যীশুর প্রতিজ্ঞার সত্যতা অনুসারে বহু শতাব্দী অতিক্রান্ত হওয়ার পরে প্রভু প্রত্যাবর্তন করেন এবং দেখতে পান যে “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” যথাসময়ে “পরিজনের” খাদ্য পরিবেশনে ব্যস্ত। আর তাই যীশু খ্রীষ্ট সেই দাসকে “আপন সর্ব্বস্বের অধ্যক্ষ” করেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) এর পরে আর কী দীপ্তির ঝলক দৃশ্যপটে ভাসে? তা পরবর্তী প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে।
[পাদটীকাগুলো]
a এখানে জমি, পরিস্থিতিকে চিত্রিত করে, যেখানে খ্রীষ্টানেরা তাদের ব্যক্তিত্বের গুণগুলিকে অনুশীলন করার সুযোগ পায়।—দেখুন প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি), জুন ১৫, ১৯৮০, পৃষ্ঠা ১৮-১৯.
-
-
দীপ্তির ঝলকগুলি মুখ্য এবং গৌণ—প্রথম ভাগ১৯৯৫ প্রহরীদুর্গ | মে ১৫
-
-
দীপ্তির ঝলকগুলি মুখ্য এবং গৌণ—প্রথম ভাগ
“ধার্ম্মিকদের পথ প্রভাতীয় জ্যোতির ন্যায়, যাহা মধ্যাহ্ন পর্য্যন্ত উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান হয়।”—হিতোপদেশ ৪:১৮.
১. সত্যকে কেন ধীরে ধীরে প্রকাশ করা হয়েছে?
ঐশিক প্রজ্ঞা এটাই প্রমাণ দেয় যে হিতোপদেশ ৪:১৮ পদের সাথে মিল রেখে আধ্যাত্মিক সত্যগুলি দীপ্তির ঝলক পেয়ে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়েছে। আগের প্রবন্ধে আমরা দেখেছি এই শাস্ত্রপদটি কিভাবে প্রেরিতদের সময়ে পরিপূর্ণতা লাভ করছিল। যদি একসাথে অনেক শাস্ত্রীয় সত্যের উন্মোচন ঘটে, তাহলে বিশৃঙ্খলা এবং বিভ্রান্তি, উভয়েরই সৃষ্টি হতে পারে—ঠিক যেমন অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি গুহা থেকে বেরিয়ে উজ্জ্বল সূর্যালোকের সামনে আসা। এছাড়াও, ধীরে ধীরে প্রকাশিত সত্যগুলি খ্রীষ্টানদের বিশ্বাসকে ক্রমাগতভাবে দৃঢ় করে। এটা তাদের তাদের আশাকে প্রাণবন্ত করে এবং যাত্রাপথকে আরও পরিষ্কার করে।
“বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস”
২. যীশু তাঁর অনুগামীদের আধ্যাত্মিক দীপ্তি দান করার জন্য কাদের ব্যবহার করবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এবং কাদের নিয়ে এই সংগঠনটি গঠিত?
২ প্রেরিতদের সময়ে, যীশু খ্রীষ্ট তাঁর অনুগামীদের প্রাথমিক দীপ্তির ঝলকগুলি প্রদান করতে অতিপ্রাকৃত উপায়গুলি ব্যবহার করাকে উপযুক্ত বলে মনে করেছিলেন। এর দুটি উদাহরণ আমাদের সামনে রয়েছে: সা.শ. ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমী দিন এবং সা.শ. ৩৬ সালে কর্ণীলিয়ের ধর্মান্তকরণ। পরবর্তীকালে, খ্রীষ্ট একটি মানুষের মাধ্যমকে ব্যবহার করাকে উপযুক্ত বলে মনে করেছিলেন, এমনকি তিনি যেমন ভাববাণীও করেছিলেন: “এখন, সেই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস কে, যাহাকে তাহার প্রভু নিজ পরিজনের উপরে নিযুক্ত করিয়াছেন, যেন সে তাহাদিগকে উপযুক্ত সময়ে খাদ্য দেয়? ধন্য সেই দাস, যাহাকে তাহার প্রভু আসিয়া সেইরূপ করিতে দেখিবেন। আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তিনি তাঁহাকে আপন সর্ব্বস্বের অধ্যক্ষ করিবেন।” (মথি ২৪:৪৫-৪৭) এই দাস শুধুমাত্র একজন ব্যক্তিবিশেষ হতে পারে না, কারণ যখন থেকে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী স্থাপিত হয়েছে, তখন অর্থাৎ পঞ্চাশত্তমী থেকে শুরু করে যতক্ষণ না যীশু খ্রীষ্ট জবাবদিহি নেওয়ার জন্য আসেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে আধ্যাত্মিক খাদ্য দিয়ে যেতে হবে। ঘটনাবলী ইঙ্গিত দেয় যে এই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসশ্রেণী হল পৃথিবীতে যে কোন নির্দিষ্ট সময়ে সমস্ত অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের নিয়ে তৈরি দলবিশেষ।
৩. দাসশ্রেণীর প্রথম সদস্যদের মধ্যে কারা অন্তর্ভুক্ত ছিল?
৩ বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসশ্রেণীর প্রথম সদস্য কারা ছিলেন? একজন ছিলেন প্রেরিত পিতর, যিনি যীশুর আদেশ মান্য করেছিলেন: “আমার মেষগণকে চরাও।” (যোহন ২১:১৭) দাসশ্রেণীর অন্যান্য প্রাথমিক সদস্যদের মধ্যে ছিলেন মথি, যিনি তার নামের অনুকরণে সুসমাচারের পুস্তকটি লেখেন এবং পৌল, যাকোব এবং যিহূদা, যারা অনুপ্রাণিত পত্রগুলি লিখেছিলেন। প্রেরিত যোহন, যিনি প্রকাশিত বাক্য পুস্তকটি, তার সুসমাচারের পুস্তক এবং তার পত্রগুলি লিপিবদ্ধ করেছিলেন, তিনিও বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসশ্রেণীর একজন সদস্য ছিলেন। যীশুর নির্দেশ অনুসারে এইসব লোকেরা বাইবেলের পুস্তকগুলি লিখেছিলেন।
৪. “পরিজন” কারা?
৪ যদি সমস্ত অভিষিক্তেরা দলগতভাবে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই থাকুক না কেন, এই দাসশ্রেণীর অংশ হন, তাহলে ‘পরিজন’ কারা? তারা হলেন সেই একই অভিষিক্ত জনেরা, কিন্তু একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে—ব্যক্তিবিশেষ হিসাবে। হ্যাঁ, ব্যক্তিবিশেষ হিসাবে তারা “দাস” অথবা ‘পরিজন,’ তা নির্ভর করে তারা আধ্যাত্মিক খাদ্য দিচ্ছেন না গ্রহণ করছেন তার উপর। উদাহরণস্বরূপ বলতে গেলে: ২ পিতর ৩:১৫, ১৬ পদে যেমন লিপিবদ্ধ আছে, প্রেরিত পিতর পৌলের পত্রগুলির প্রতি দৃষ্টি আরোপ করান। সেগুলি পড়ার সময় পিতর হলেন পরিজনের একজন, আধ্যাত্মিক খাদ্য গ্রহণ করছেন যেটি পৌল দাস শ্রেণীর প্রতিনিধি হিসাবে যোগান দিচ্ছেন।
৫. (ক) প্রেরিতদের পরের শতাব্দীগুলিতে দাসেদের কী ঘটেছিল? (খ) উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে কী কী ঘটনা ঘটেছিল?
৫ এই বিষয়ে সহস্র বছরব্যাপী ঈশ্বরের রাজ্য সন্নিকট (ইংরাজি) বইটি জানায়: “যীশু খ্রীষ্টের প্রেরিতদের মৃত্যুর পর থেকে ঠিক কিভাবে ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস’ দীর্ঘ শতাব্দী ধরে অস্তিত্বে থেকেছে এবং পরিচর্যা করে এসেছে, তার সঠিক কোন ঐতিহাসিক চিত্র আমাদের নেই। মনে হয়, ‘দাস’ শ্রেণী তাদের পরবর্তী বংশকে খাদ্য যুগিয়ে এসেছে। (২ তীমথিয় ২:২) কিন্তু উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ঈশ্বরভীরু লোকেরা ছিলেন যারা পবিত্র বাইবেলের আধ্যাত্মিক খাদ্যকে ভালবাসতেন এবং যারা এই আধ্যাত্মিক খাদ্যকে ক্রমাগতভাবে গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। . . . বাইবেল অধ্যয়ন ক্লাসগুলির . . . আয়োজন করা হয় এবং পবিত্র শাস্ত্রের প্রাথমিক সত্যগুলি বুঝতে পারার দিকে অগ্রগতি লাভ করতে থাকে। এই বাইবেল ছাত্রদের মধ্যে যারা অকপট নিঃস্বার্থপর ছিলেন, তারা সেই আধ্যাত্মিক খাদ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি অপরের সাথে ভাগ করে নিতে উৎসুক ছিলেন। উপযুক্ত সময়ে ‘পরিজনদের’ প্রয়োজনীয় ‘আত্মিক খাদ্যের যোগান দিতে’ নিযুক্ত ‘দাস’ এর বিশ্বস্ত আত্মা ছিল। তারা ‘বুদ্ধিমান্’ ছিলেন কারণ তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে এটাই হল সঠিক ও উপযুক্ত সময় ও কী উপায়ে পরিবেশন করা সর্বোৎকৃষ্ট হবে। তারা তা করতে প্রচেষ্টা করেছিলেন।—পৃষ্ঠা ৩৪৪-৫.a
বর্তমান সময়ে প্রাথমিক দীপ্তির ঝলকগুলি
৬. ধীরে ধীরে সত্যকে প্রকাশ করার পরিপ্রক্ষিতে কোন্ ঘটনা পরিষ্কার হয়ে ফুটে ওঠে?
৬ যিহোবা যাদের এই আধ্যাত্মিক জ্যোতি বৃদ্ধি করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তাদের বিষয়ে একটি জিনিস লক্ষনীয় ছিল যে তারা কখনও নিজেদের জন্য প্রশংসা আনার চেষ্টা করেনি। ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির প্রথম সভাপতি সি. টি. রাসেলের মনোভাব এটাই ছিল যে তারা তাদের কর্মদক্ষতাকে নম্রভাবে প্রভুর কাজে ব্যবহার করলে প্রভু তাতেই খুশি হন। তার শত্রুরা যে সব পদবি ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিল, সেই বিষয়ে ভাই রাসেল পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি কখনও কোন “রাসেলাইট” এর সাক্ষাৎ পাননি, “রাসেলিজম” বলে কোন জিনিস নেই। সমস্ত প্রশংসা ঈশ্বরের কাছে গিয়েছিল।
৭. ভাই রাসেল এবং তার সহকর্মীরা কী প্রমাণ রেখেছিলেন যা দেখায় যে তারা অবশ্যই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসের সাথে জড়িত ছিল?
৭ ফল দেখে বিচার করার ক্ষেত্রে অবশ্যই দেখা যায় যিহোবার পবিত্র আত্মা রাসেল ও যারা তার সাথে মেলামেশা করছিল, তাদের সাহায্য করেছিল। তারা যে বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসশ্রেণীর অংশ, তা তারা প্রমাণ করেছিলেন। যদিও সেই সময়ের অনেক পাদ্রী বিশ্বাস করত যে বাইবেল ছিল ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য এবং যীশু ছিলেন ঈশ্বরের পুত্র, তবুও তারা মিথ্যা বাবিলনীয় শিক্ষা, যেমন ত্রিত্ব, মানব প্রাণ অমর এবং অনন্ত যাতনার শিক্ষাগুলিকে গ্রহণ করেছিল। যীশুর প্রতিজ্ঞা অনুসারে, সত্যই পবিত্র আত্মার সহায়তায়, ভাই রাসেল এবং তার সঙ্গীদের একান্ত চেষ্টার ফলে সত্য স্পষ্টতর হতে শুরু করে, যা আগে কখনও হয়নি। (যোহন ১৬:১৩) এইসব অভিষিক্ত বাইবেল ছাত্ররা প্রমাণ করেছিলেন যে তারা সত্যই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসশ্রেণীর অংশ ছিলেন, যাদের কাজ হল প্রভুর পরিজনদের আধ্যাত্মিক খাদ্য যোগানো। অভিষিক্তদের একত্রীকরণের কাজে তাদের প্রচেষ্টা ছিল প্রচুর।
৮. যিহোবা ঈশ্বর, বাইবেল, যীশু খ্রীষ্ট এবং পবিত্র আত্মার বিষয়ে কোন্ প্রাথমিক সত্যগুলি বাইবেল ছাত্ররা বুঝতে পেরেছিলেন?
৮ এটা দেখা কতই না আনন্দের যে কী দারুণভাবে যিহোবা, পবিত্র আত্মার সহায়তায় এই প্রাথমিক বাইবেল ছাত্রদের দীপ্তির ঝলক দিয়ে সহায়তা করেছিলেন। শুরুতেই তারা দৃঢ়ভাবে প্রমাণ করেছিলেন যে সৃষ্টিকর্তা আছেন এবং তাঁর অদ্বিতীয় নাম হল যিহোবা। (গীতসংহিতা ৮৩:১৮; রোমীয় ১:২০) তারা উপলব্ধি করেছিলেন যে যিহোবার চারটি বিশেষ গুণ আছে—শক্তি, ন্যায়বিচার, প্রজ্ঞা এবং প্রেম। (আদিপুস্তক ১৭:১; দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪; রোমীয় ১১:৩৩; ১ যোহন ৪:৮) এই অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা পরিষ্কার করে দেখিয়ে দেন যে বাইবেল হল ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য এবং তা হল সত্য। (যোহন ১৭:১৭; ২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭) এছাড়া, তারা এও বিশ্বাস করতেন যে ঈশ্বরের পুত্র যীশু খ্রীষ্টকে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং তিনি তাঁর জীবন মুক্তির মূল্যরূপে সকল মানবজাতি জন্য দিয়েছিলেন। (মথি ২০:২৮; কলসীয় ১:১৫) পবিত্র আত্মা ত্রিত্বের তৃতীয় ব্যক্তি হওয়া ত দূরের কথা, কিন্তু তা হল ঈশ্বরের কার্যকারী শক্তি।—প্রেরিত ২:১৭.
৯. (ক) মানুষের প্রকৃতি এবং বাইবেলে যে গন্তব্যস্থলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে কোন্ সত্যগুলি বাইবেল ছাত্ররা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছিলেন? (খ) অন্যান্য কোন্ সত্যগুলি যিহোবার দাসেরা পরিষ্কারভাবে দেখতে পেয়েছিলেন?
৯ বাইবেল ছাত্ররা পরিষ্কারভাবে দেখেছিলেন যে মানুষের একটি অমর প্রাণ নেই, কিন্তু সে একজন মরণশীল প্রাণী। তারা উপলব্ধি করেছিলেন যে, “পাপের বেতন মৃত্যু,” অনন্তকালীন যাতনা নয়, কারণ জলন্ত নরকাগ্নি বলে কোন স্থান নেই। (রোমীয় ৫:১২; ৬:২৩; আদিপুস্তক ২:৭; যিহিষ্কেল ১৮:৪) এছাড়াও তারা পরিষ্কারভাবে দেখেছিলেন যে ক্রমবিবর্তনবাদ শুধুমাত্র অশাস্ত্রীয়ই নয়, কিন্তু সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। (আদিপুস্তক ১ ও ২ অধ্যায়) তারা এটাও বুঝতে পারেন যে বাইবেল দুটি গন্তব্য পথের বিষয়ে উল্লেখ করে—একটি হল স্বর্গীয়, খ্রীষ্টের পদানুসরণকারীদের অভিষিক্ত ১,৪৪,০০০ জনের জন্য এবং আর একটি পরমদেশ পৃথিবীতে থাকার জন্য অগণিত “অপর মেষ” এর “বিস্তর লোক।” (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯; ১৪:১; যোহন ১০:১৬) এইসব প্রাথমিক বাইবেল ছাত্ররা এও উপলব্ধি করেছিলেন যে পৃথিবী চিরকাল থাকবে এবং তা জ্বলে যাবে না, যেমন অনেক ধর্ম শিক্ষা দিয়ে থাকে। (উপদেশক ১:৪; লূক ২৩:৪৩) তারা এও শিখেছিলেন যে খ্রীষ্টের প্রত্যাবর্তন হবে অদৃশ্য, আর তখন তিনি জাতিগণের উপর বিচার করবেন এবং পার্থিব পরমদেশ নিয়ে আসবেন।—প্রেরিত ১০:৪২; রোমীয় ৮:১৯-২১; ১ পিতর ৩:১৮.
১০. বাপ্তিস্ম, যাজকীয় এবং অযাজকীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে পার্থক্য এবং খ্রীষ্টের মৃত্যুর স্মরণার্থক সভার বিষয়ে কোন্ সত্যগুলি বাইবেল ছাত্ররা শিখেছিলেন?
১০ বাইবেল ছাত্ররা শিখেছিলেন যে শাস্ত্রীয় বাপ্তিস্ম শিশুদের মাথায় জল ছিটিয়ে হয় না, কিন্তু মথি ২৮:১৯, ২০ পদে যীশুর আদেশ অনুসারে হয়, যা হল যারা সত্য শিখেছে, তাদের অবগাহনের মাধ্যমে বাপ্তিস্ম দেওয়া। তারা দেখেছিলেন যে যাজকীয় এবং অযাজকীয় সাধারণ লোকেদের মধ্যে শাস্ত্রীয় কোন ভেদাভেদ নেই। (মথি ২৩:৮-১০) পরিবর্তে, সকল খ্রীষ্টানদেরই সুসমাচারের প্রচারক হওয়া উচিত। (প্রেরিত ১:৮) বাইবেল ছাত্ররা উপলব্ধি করেছিলেন যে যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যুর স্মরণার্থক সভা, বছরে একবারই হওয়া উচিত, আর তা হল ১৪ই নিশান। তাছাড়াও, তারা দেখেছিলেন যে ইস্টার হল পৌত্তলিক উৎসব। এর সাথে তাদের কাজের পিছনে যে যিহোবা আছেন, সেই বিষয়ে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা এতই নিশ্চিত ছিলেন যে তারা কখনও দান চাননি। (মথি ১০:৮) প্রথম থেকেই, তারা বুঝেছিলেন যে খ্রীষ্টানেরা যেন বাইবেলের মান অনুসারে জীবন-যাপন করে, যার অন্তর্ভুক্ত হল ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার ফল উৎপন্ন করা।—গালাতীয় ৫:২২, ২৩.
দীপ্তির ঝলকগুলি বেড়ে উঠে
১১. খ্রীষ্টীয় দায়িত্ব এবং যীশুর দেওয়া মেষ ও ছাগের দৃষ্টান্তের উপরে কোন্ আলোকপাত করা হয়েছে?
১১ বিশেষ করে ১৯১৯ সাল থেকে যিহোবার সাক্ষীরা ক্রমবর্ধমান দীপ্তির ঝলকগুলির দ্বারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছে। ১৯২২ সালে সিডার পয়েন্ট সম্মেলনে কী প্রখর দীপ্তির ঝলকই না দেখা গিয়েছিল যখন ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির দ্বিতীয় সভাপতি জে. এফ. রাদারফোর্ড যিহোবার দাসেদের যে প্রধান দায়িত্ব, “রাজা এবং তাঁর রাজ্যকে ঘোষণা কর, ঘোষণা কর, ঘোষণা কর,” এই বিষয়ের উপর দৃঢ়ভাবে জোর দেন! তার ঠিক পরের বছরে এক প্রখর দীপ্তি প্রকাশ পায় মেষ ও ছাগের দৃষ্টান্তের উপর। এটা বুঝা যায় যে এই ভাববাণীটি বর্তমান সময়ে প্রভুর দিনে পরিপূর্ণ হওযার কথা, ভবিষ্যতে হাজার বছরের রাজত্বকালে নয়, যেমন আগে ভাবা হয়েছিল। হাজার বছরের রাজত্বকালে খ্রীষ্টের ভাইরা অসুস্থ হবে না বা জেলে বন্দীও থাকবে না। এছাড়াও, হাজার বছরের শেষে যীশু খ্রীষ্ট নয়, কিন্তু যিহোবা ঈশ্বরই বিচার সম্পাদন করবেন।—মথি ২৫:৩১-৪৬.
১২. হর্মাগিদোনের বিষয়ে কোন্ দীপ্তির ঝলক আসে?
১২ ১৯২৬ সালে আরেকটি উজ্জ্বল দীপ্তির ঝলক দেখা যায়, যখন বলা হয় যে হর্মাগিদোনের যুদ্ধ কোন সামাজিক বিপ্লব নয়, যা একসময়ে বাইবেল ছাত্ররা ভাবতেন। পরিবর্তে, এটা হবে এমন এক যুদ্ধ, যেখানে যিহোবা এমন পরিষ্কারভাবে তার শক্তি প্রদর্শন করবেন যাতে সকল লোকে নিশ্চিত হবে যে তিনি হলেন ঈশ্বর।—প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪-১৬; ১৯:১৭-২১.
বড়দিন—একটি পৌত্তলিকতামূলক ছুটি
১৩. (ক) বড়দিন উৎসবের উপরে কোন্ দীপ্তি প্রকাশ পায়? (খ) জন্মদিন আর কেন পালন করা হয় না? (পাদটীকা অন্তর্ভুক্ত)
১৩ এর অল্পকাল পরেই, দীপ্তির এক ঝলক বাইবেল ছাত্রদের বড়দিন পালন করা থেকে বিরত করে। কিন্তু এর আগে, পৃথিবীব্যাপী বাইবেল ছাত্ররা সর্বদা বড়দিন পালন করতেন এবং ব্রুকলিন প্রধান কার্যালয়ের উদ্যাপন হত খুব ধুমধাম করে। কিন্তু তখন বুঝা যায় যে ২৫শে ডিসেম্বরের উদ্যাপন ছিল আসলে পৌত্তলিক এবং ধর্মভ্রষ্ট খ্রীষ্টীয় জগৎ তা বেছে নিয়েছিল, যাতে করে পৌত্তলিক উপাসকদের সহজে ধর্মান্তকরণ করা যায়। এছাড়াও, এও জানা যায় যে যীশু শীতকালে জন্মাতে পারেন না, কারণ তাঁর জন্মের সময়ে মেষপালকেরা মাঠে তখনও মেষদের চড়াচ্ছিল—যা ডিসেম্বরের শেষে রাত্রিকালে করতে পারা সম্ভব নয়। (লূক ২:৮) বরং শাস্ত্র ইঙ্গিত দেয় যে যীশুর জন্ম ১লা অক্টোবর হয়েছিল। বাইবেল ছাত্ররা আরও বুঝতে পারে যে তথাকথিত যে জ্ঞানী ব্যক্তিরা যারা যীশুর জন্মের দুবছর পরে সাক্ষাৎ করতে এসেছিল, তারা হল পৌত্তলিক জ্ঞানী ব্যক্তিরা মেজাই।b
একটি নতুন নাম
১৪. যিহোবার লোকেদের কাছে বাইবেল ছাত্র নামটি কেন উপযুক্ত নয়?
১৪ ১৯৩১ সালে একটি উপযুক্ত শাস্ত্রীয় নামকে কেন্দ্র করে বাইবেল ছাত্ররা উজ্জ্বল সত্যের এক ঝলক পায়। যিহোবার সাক্ষীরা বুঝতে পেরেছিল যে তাদের দেওয়া কোন উপাধিই তারা গ্রহণ করতে পারে না, যেমন রাসেলাইট, মিলেনিয়েল ডনিস্ট এবং নো হেলারস।c কিন্তু তারা এও বুঝতে শুরু করে, যে নাম তারা নিজেরা নিয়েছে—আন্তর্জাতিক বাইবেল ছাত্ররা—তাদের যথাযথভাবে প্রতিনিধিত্ব করেনি। এরা বাইবেল ছাত্রদের থেকেও আরও বেশি কিছু ছিল। এছাড়াও, সেখানে আরও অন্যান্য বাইবেল ছাত্ররাও ছিল, যারা বাইবেলের ছাত্র ছিল বটে, কিন্তু সকল বাইবেল ছাত্রদের সাথে এদের কোন মিল ছিল না।
১৫. বাইবেল ছাত্ররা ১৯৩১ সালে কোন্ নাম গ্রহণ করে এবং এই নাম কেন উপযুক্ত?
১৫ কী করে বাইবেল ছাত্ররা নতুন নাম পান? বছরের পর বছর ধরে প্রহরীদুর্গ পত্রিকা যিহোবার নামকে খুব স্পষ্ট করে তুলে ধরেছিল। সেইজন্য, এটাই ছিল সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত যে বাইবেল ছাত্ররা যিশাইয় ৪৩:১০, (NW) পদে উল্লেখিত নামটি গ্রহণ করবে: “যিহোবা বলেন, তোমরাই আমার সাক্ষী, এবং আমার মনোনীত দাস; যেন তোমরা জানতে ও আমাকে বিশ্বাস করতে পার, এবং বুঝতে পার যে, আমিই তিনি; আমার আগে কোন ঈশ্বর নির্ম্মিত হয়নি, এবং আমার পরেও হবে না।”
মহিমান্বিতকরণ এবং “বিস্তর লোক”
১৬. যে সব মাংসিক যিহূদীরা প্যালেষ্টাইনে ফিরে আসে, তাদের প্রতি প্রত্যাবর্তনের ভাববাণীগুলি কেন প্রযোজ্য নয়, কিন্তু কাদের প্রতি সেগুলি প্রযোজ্য?
১৬ ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির দ্বারা ১৯৩২ সালে প্রকাশিত ভিনডিকেশন পুস্তকটির দ্বিতীয় খণ্ডে দীপ্তির এক ঝলক প্রকাশ হয়ে পড়ে যে প্রত্যাবর্তনের ভাববাণীগুলি যা যিশাইয়, যিরমিয়, যিহিষ্কেল এবং অন্যান্য ভাববাদীরা করেছিলেন, তা মাংসিক যিহূদীদের প্রতি প্রযোজ্য নয় (যা একসময় ভাবা হয়েছিল), যারা অবিশ্বাসী এবং রাজনৈতিক চক্রান্ত নিয়ে প্যালেষ্টাইনে ফিরে আসছিল। বরং, এইসব প্রত্যাবর্তনের ভাববাণীগুলি যেগুলি সা.শ.পূ. ৫৩৭ সালে যিহূদীরা যখন বাবিলনের বন্দীত্ব থেকে ফিরছিল, তাদের প্রতি ক্ষুদ্র আকারে পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল, তার বৃহত্তর পরিপূর্ণতা ঘটে যখন আত্মিক ইস্রায়েল পরিত্রাণ পায় ও প্রত্যাবর্তন করে ১৯১৯ সালের পরে এবং যার ফলস্বরূপ আত্মিক পরমদেশের উন্নতি ঘটে যা যিহোবার সত্য উপাসকেরা বর্তমানে উপভোগ করে থাকে।
১৭, ১৮. (ক) উপযুক্ত সময়ে, দীপ্তির এক ঝলকের মাধ্যমে যিহোবার মুখ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে কী প্রকাশ করে দেয়? (খ) ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৭ পদের উপর কী দীপ্তির ঝলক ঘটে?
১৭ উপযুক্ত সময়ে, দীপ্তির ঝলক প্রকাশ করে দেয় যে যিহোবার মুখ্য উদ্দেশ্য পরিত্রাণ নয়, কিন্তু তাঁর সার্বভৌমত্বকে মহিমান্বিত করা। বাইবেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু মুক্তির মূল্য নয়, কিন্তু রাজ্যই হল মুখ্য বিষয়বস্তু, কারণ তা যিহোবার সার্বভৌমত্বকে মহিমান্বিত করে। কী দীপ্তির ঝলকই না তা ছিল! উৎসর্গীকৃত খ্রীষ্টানেরা আর শুধুমাত্র স্বর্গে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব নয়।
১৮ ১৯৩৫ সালে উজ্জ্বল এক সত্যের ঝলক প্রকাশ করে যে প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৭ পদে যে বিরাট জনতার কথা বলা হয়েছিল, তারা দ্বিতীয় শ্রেণীর স্বর্গীয় আশাযুক্ত ব্যক্তিরা নয়। এটা ভাবা হয়েছিল যে এই শাস্ত্রপদে উল্লেখিত ব্যক্তিদের মধ্যে কিছু অভিষিক্ত জনেরাও আছেন, যারা সম্পূর্ণরূপে বিশ্বস্ত নয় এবং সেইজন্য সিংহাসনে বসে যীশু খ্রীষ্টের সাথে রাজা এবং যাজকরূপে শাসন করার পরিবর্তে সিংহাসনের সামনে তারা দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আংশিকভাবে বিশ্বস্ত থাকার কোন স্থান সেখানে নাই। একজন ব্যক্তি আংশিক বিশ্বস্ত এবং আংশিক অবিশ্বস্ত হতে পারে না। সেইজন্য দেখা যায় যে এই ভাববাণীটি অগণিত সংখ্যক বিস্তর লোকের প্রতি ইঙ্গিত করে, যারা বিভিন্ন জাতি থেকে এসে একত্রিত হয়েছে এবং যাদের আশা হল পার্থিব। এরা হল মথি ২৫:৩১-৪৬ পদের “মেষ” এবং যোহন ১০:১৬ পদের “অপর মেষ”।
ক্রুশ—একটি খ্রীষ্টীয় প্রতীক নয়
১৯, ২০. কেন ক্রুশ সত্য খ্রীষ্টতত্ত্বের একটি প্রতীক হতে পারে না?
১৯ বহু বছর যাবৎ বাইবেল ছাত্ররা ক্রুশকে খ্রীষ্টতত্ত্বের এক প্রতীকরূপে ব্যবহার করে এসেছে। এমনকি তারা জামায় লাগাবার “ক্রস-অ্যান্ড-ক্রাউন” পিনও ব্যবহার করেছে। কিং জেমস সংস্করণ অনুসারে, যীশু তাঁর অনুগামীদের বলেছিলেন “ক্রুশ” তুলে নিতে, আর তাই অনেকে বিশ্বাস করতে শুরু করে যে তিনি ক্রুশে নিহত হয়েছিলেন। (মথি ১৬:২৪; ২৭:৩২) বেশ কয়েক দশক ধরে প্রহরীদুর্গ পত্রিকার মলাটে এই প্রতীকটি ছাপানোও হয়েছিল।
২০ সমিতির দ্বারা ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত রিচেস বইটি পরিষ্কার করে দেয় যীশু খ্রীষ্ট ক্রুশে হত হননি, কিন্তু খাঁড়া করা একটি খুঁটি বা গাছের গুঁড়িতে হত হন। একজন কর্তৃপক্ষের কথা অনুযায়ী, “ক্রুশ” এর গ্রীক শব্দ যাকে (স্টেরস) বলা হয়েছে কিং জেমস সংস্করণে “প্রাথমিকভাবে খাঁড়া করা কোন খুঁটি বা গাছের গুঁড়িকে বুঝায়। এটিকে গির্জায় ব্যবহৃত আড়াআড়িভাবে দুটি কাঠকে রাখার পদ্ধতি থেকে স্বতন্ত্র করা উচিত। . . .পরবর্তীটির উদ্ভব হয় প্রাচীন কলদীয় এবং তামুজ দেবতার প্রতীকরূপে ব্যবহৃত হত।” যার উপরে যীশুকে বিদ্ধ করা হয়েছিল, তাকে উপাসনার বস্তু হিসাবে ব্যবহার করার পরিবর্তে সেই জিনিসটিকে ঘৃণা করা দরকার।
২১. পরের প্রবন্ধে কী আলোচনা করা হবে?
২১ উভয় প্রকার আরও দৃষ্টান্ত রয়েছে, যার কোনটি মুখ্য এবং কোনটি বা গৌণ দীপ্তির ঝলক বলে বিবেচিত হতে পারে। সেগুলি আলোচনার জন্য অনুগ্রহ করে পরবর্তী প্রবন্ধটি দেখুন।
[পাদটীকাগুলো]
a ওয়াচ টাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি অফ নিউ ইয়র্ক ইনক্ দ্বারা প্রকাশিত।
b যথাসময়ে, এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে জন্মদিন যেটা কখনও ঘটেছিল তা যদি পালন না করা হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের কোন জন্মদিনই পালন করা উচিত নয়। এছাড়াও, ইস্রায়েলীয়রা বা প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা, কেউই জন্মদিন পালন করেনি। বাইবেলে শুধুমাত্র দুটি জন্মদিনের উল্লেখ আছে। একটি হল ফরৌণের এবং অপরটি হল হেরোদ আন্তিপার। প্রতিটি অনুষ্ঠানই হত্যামূলক ঘটনার দ্বারা ম্লান হয়ে গিয়েছিল। যিহোবার সাক্ষীরা জন্মদিন পালন করে না কারণ সেগুলির উৎপত্তি পৌত্তলিকতা থেকে, যা একজন ব্যক্তিকে উচ্চে তুলে ধরে।—আদিপুস্তক ৪০:২০-২২; মার্ক ৬:২১-২৮.
c খ্রীষ্টীয় জগতের বেশ কিছু সম্প্রদায় এই একই ভুল করেছিল। লুথারান হল সেই উপাধি যেটা মার্টিন লুথারের শত্রুরা তার অনুগামীদের দিয়েছিল, যেটি তারা গ্রহণ করেছিল। ব্যাপটিস্টরাও একটি উপাধি গ্রহণ করে, যেটি বাইরের লোকেরা তাদের দিয়েছিল, কারণ তারা অবগাহনের দ্বারা বাপ্তিস্মের শিক্ষার বিষয়ে প্রচার করত। এইভাবে, মেথডিস্টরা একটি নাম গ্রহণ করেছিল, যা বাইরের লোকেরা তাদের দিয়েছিল। কিভাবে সোসাইটি অফ ফ্রেন্ডস, কোয়েকার নামে পরিচিত হয়, সেই বিষয়ে দ্যা ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া জানায়: “কোয়েকার শব্দটির শুরুতে ফক্স অপমান করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল, যিনি ইংরাজ বিচারককে বলেছিলেন ‘প্রভুর ভয়ে কাঁপতে’। বিচারকটি ফক্সকে ‘কোয়েকার’ বলে ডেকেছিলেন।”
-