“যে কেহ সতর্ক, সে জ্ঞানপূর্ব্বক কর্ম্ম করে”
ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলের নির্দেশনা “স্বর্ণ ও প্রচুর কাঞ্চন অপেক্ষা বাঞ্ছনীয়।” (গীতসংহিতা ১৯:৭-১০) কেন? কারণ “জ্ঞানবানের [যিহোবার] শিক্ষা জীবনের উৎস, তাহা মৃত্যুর ফাঁদ হইতে দূরে যাইবার পথ।” (হিতোপদেশ ১৩:১৪) শাস্ত্রের পরামর্শ যখন প্রয়োগ করা হয়, তখন সেটা শুধু আমাদের জীবনের গুণগত মানকেই উন্নত করে না কিন্তু সেইসঙ্গে আমাদের জীবনকে বিপদগ্রস্ত করতে পারে এমন ফাঁদগুলো এড়িয়ে চলতেও সাহায্য করে। তাই, আমাদের শাস্ত্র থেকে জ্ঞান নেওয়া এবং যা শিখি সেইমতো কাজ করা কতই না গুরুত্বপূর্ণ!
হিতোপদেশ ১৩:১৫-২৫ পদে যেমন লেখা আছে, প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা শলোমন যে-পরামর্শ দিয়েছিলেন, তা আমাদের জ্ঞানপূর্বক কাজ করতে সাহায্য করে, যাতে আমরা আরও উত্তম ও দীর্ঘজীবন উপভোগ করতে পারি।a সংক্ষিপ্ত হিতোপদেশগুলো ব্যবহার করে তিনি দেখান যে, কীভাবে ঈশ্বরের বাক্য আমাদেরকে অন্যদের কাছ থেকে অনুগ্রহ লাভ করতে, আমাদের পরিচর্যায় বিশ্বস্ত থাকতে, শাসনের প্রতি সঠিক মনোভাব বজায় রাখতে এবং বিজ্ঞতার সঙ্গে আমাদের সঙ্গীসাথি বাছাই করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, তিনি আমাদের সন্তানদের জন্য এক উত্তরাধিকার রেখে যাওয়ার এবং তাদেরকে প্রেমের সঙ্গে শাসন করার মধ্যে যে-দূরদর্শিতা রয়েছে, তা আলোচনা করেন।
উত্তম অন্তর্দৃষ্টি অনুগ্রহ অর্জন করে
“সুবুদ্ধি অনুগ্রহজনক,” শলোমন বলেন “কিন্তু বিশ্বাসঘাতকদের পথ অসমান।” (হিতোপদেশ ১৩:১৫) “সুবুদ্ধি” বা উত্তম অন্তর্দৃষ্টি অর্থাৎ উত্তম বোধগম্যতার জন্য মূল ভাষার অভিব্যক্তিটি “উত্তম বোধশক্তি, যুক্তিপূর্ণ বিচার এবং বিজ্ঞ মতামতের ক্ষমতাকে বর্ণনা করে,” একটি তথ্যগ্রন্থ বলে। একজন ব্যক্তির এই ধরনের গুণাবলি থাকলে অন্যদের কাছ থেকে অনুগ্রহ অর্জন করা কঠিন হয় না।
প্রেরিত পৌল ফিলীমনের পলাতক দাস ওনীষিমকে, যিনি পরে একজন খ্রিস্টান হয়েছিলেন, ফেরত পাঠানোর সময়ে তার সহখ্রিস্টান ফিলীমনের সঙ্গে যে-অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ উপায়ে আচরণ করেছিলেন, তা বিবেচনা করুন। পৌল ফিলীমনকে অনুরোধ করেছিলেন যাতে তিনি দয়ার সঙ্গে ওনীষিমকে পুনরায় গ্রহণ করেন, যেভাবে তিনি হয়তো স্বয়ং পৌলকে স্বাগত জানাবেন। বস্তুতপক্ষে, ওনীষিম যদি ফিলীমনের কাছে কোনো বিষয়ে ঋণী থেকে থাকে, তা হলে পৌল তা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। হ্যাঁ, পৌল এখানে তার অধিকার ব্যবহার করতে এবং ফিলীমনকে সঠিক বিষয়টা করতে নির্দেশ দিতে পারতেন। কিন্তু, সেই প্রেরিত বিষয়টা কৌশলতা ও প্রেমের সঙ্গে মীমাংসা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এভাবে করে পৌল দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন যে, তিনি ফিলীমনের সহযোগিতা পাবেন এবং তাকে যা কিছু করতে বলেছিলেন, সেটার চেয়েও বেশি করতে ফিলীমন পরিচালিত হবেন। আমাদেরও কি সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে এভাবে আচরণ করা উচিত নয়?—ফিলীমন ৮-২১.
অন্যদিকে, বিশ্বাসঘাতকদের পথ হল অসমান বা শক্ত। কোন অর্থে? একজন পণ্ডিত ব্যক্তির মতানুসারে, এখানে ব্যবহৃত শব্দটির অর্থ হল “কঠোর বা দৃঢ়, যা দুষ্ট লোকেদের চেতনাহীন ব্যবহারকে নির্দেশ করে। . . . যে-লোক তার মন্দ কাজগুলোতে নাছোড়বান্দা, অন্যদের বিজ্ঞ নির্দেশনার প্রতি অনুভূতিহীন ও উদাসীন, সেই লোক ধ্বংসের পথে রয়েছেন।”
শলোমন আরও বলেন: “যে কেহ সতর্ক, সে জ্ঞানপূর্ব্বক কর্ম্ম করে; কিন্তু হীনবুদ্ধি মূর্খতা বিস্তার করে।” (হিতোপদেশ ১৩:১৬) এখানে সতর্কতা জ্ঞানের সঙ্গে এবং একজন দূরদর্শী ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যিনি কাজ করার আগে চিন্তা করেন। এমনকি কোনো অন্যায্য সমালোচনা বা অপমানজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেও সতর্ক ব্যক্তি তার জিহ্বাকে সংযত রাখেন। তিনি প্রার্থনাপূর্বক পবিত্র আত্মার ফলগুলো প্রকাশ করার চেষ্টা করেন, যাতে তিনি মাত্রাতিরিক্ত বিরক্ত না হয়ে পড়েন। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) দূরদর্শী ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে বা পরিস্থিতিকে তার ওপর নিয়ন্ত্রণ করতে দেন না। এর পরিবর্তে, তিনি শান্ত থাকেন এবং ঝগড়া বিবাদ পরিহার করেন, যা প্রায়ই এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ঘটে থাকে, যিনি অসন্তুষ্ট হলে দ্রুত রেগে যান।
সতর্ক ব্যক্তি বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়েও জ্ঞানপূর্বক কাজ করেন। তিনি জানেন যে, বিজ্ঞ কাজগুলো খুব কম সময়ই অনুমানের ফল, আবেগের বশে নেওয়া সিদ্ধান্ত হয় এবং শুধুমাত্র অন্যেরা করছে বলে আমিও করব, এইরকম হয়ে থাকে। তাই, তিনি তার পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে পরীক্ষানিরীক্ষা করার জন্য সময় নেন। তিনি সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করেন এবং তার সামনে আর কোন সুযোগগুলো খোলা রয়েছে, তা নির্ণয় করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন শাস্ত্রপদ অন্বেষণ করেন এবং বাইবেলের যে-আইন বা নীতিগুলো প্রযোজ্য, তা নির্ধারণ করেন। এইরকম একজন ব্যক্তির পথ সরল থাকে।—হিতোপদেশ ৩:৫, ৬.
“বিশ্বস্ত দূত স্বাস্থ্যস্বরূপ”
যিহোবার সাক্ষি হিসেবে আমাদের ওপর বিশ্বাস সহকারে ঈশ্বরদত্ত বার্তা ঘোষণা করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। পরবর্তী হিতোপদেশের কথাগুলো আমাদের দায়িত্ব পূর্ণ করায় বিশ্বস্ত থাকতে আমাদেরকে সাহায্য করে। এটা বলে: “দুষ্ট দূত বিপদে পড়ে, কিন্তু বিশ্বস্ত দূত স্বাস্থ্যস্বরূপ।”—হিতোপদেশ ১৩:১৭.
এখানে দূত বা বার্তাবাহকের গুণগত মানের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। বার্তাবাহক যদি দুষ্টতাপ্রযুক্ত বার্তাকে বিকৃত বা পরিবর্তিত করেন, তা হলে কী বলা যায়? এইক্ষেত্রে তিনি কি প্রতিকূল বিচার ভোগ করবেন না? ভাববাদী ইলীশায়ের চাকর গেহসির বিষয়ে চিন্তা করুন, যিনি কিনা লোভের কারণে অরামীয় সেনাপতি নামানের কাছে এক মিথ্যা বার্তা নিয়ে গিয়েছিলেন। নামানের যে-কুষ্ঠ ভাল হয়ে গিয়েছিল, সেটা পরে গেহসির ওপর বর্তে ছিল। (২ রাজাবলি ৫:২০-২৭) দূত অবিশ্বস্ত হয়ে পড়লে এবং বার্তা ঘোষণা করা বন্ধ করে দিলে কী হবে? “তুমি তাহার পথের বিষয়ে সেই দুষ্ট লোককে সচেতন করিবার নিমিত্ত যদি কিছু না বল,” বাইবেল বলে, “তবে সেই দুষ্ট নিজ অপরাধ প্রযুক্ত মরিবে; কিন্তু আমি [যিহোবা] তোমার হস্ত হইতে তাহার রক্তের পরিশোধ লইব।”—যিহিষ্কেল ৩৩:৮.
অন্যদিকে, বিশ্বস্ত দূত নিজের এবং যারা তার কথা শুনে, তাদের জন্য স্বাস্থ্যস্বরূপ বা আরোগ্যজনক। পৌল তীমথিয়কে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আপনার বিষয়ে ও তোমার শিক্ষার বিষয়ে সাবধান হও, এ সকলে স্থির থাক; কেননা তাহা করিলে তুমি আপনাকে ও যাহারা তোমার কথা শুনে, তাহাদিগকেও পরিত্রাণ করিবে।” (১ তীমথিয় ৪:১৬) সেই আরোগ্যের বিষয়ে চিন্তা করুন, যা রাজ্যের সুসমাচার বিশ্বস্তভাবে ঘোষণার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এটা সঠিক হৃদয়ের লোকেদের সচেতন করে এবং তাদেরকে সেই সত্যের দিকে পরিচালিত করে, যা তাদের স্বাধীন করে। (যোহন ৮:৩২) এমনকি লোকেরা যদি বার্তার প্রতি মনোযোগ দিতে ব্যর্থও হয়, তবুও অনুগত বার্তাবাহক ‘তাহার নিজ প্রাণ রক্ষা করিবে।’ (যিহিষ্কেল ৩৩:৯) আমাদের প্রচার করার দায়িত্ব পূর্ণ করাকে আমরা যেন কখনও অবহেলা না করি। (১ করিন্থীয় ৯:১৬) আর আসুন আমরা সবসময় ‘বাক্য প্রচার করিবার’ ক্ষেত্রে মনোযোগী হই, কখনও যেন এটাকে হালকা করে না দেখি বা এটাকে আপাতদৃষ্টিতে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য কোনোরকম আপোশ না করি।—২ তীমথিয় ৪:২.
“যে অনুযোগ মান্য করে, সে সম্মানিত হয়”
একজন দূরদর্শী ব্যক্তি যে-সাহায্যকারী উপদেশ লাভ করেন, সেটার জন্য কি তার অসন্তুষ্ট হওয়া উচিত? হিতোপদেশ ১৩:১৮ পদ বলে: “যে শাসন অমান্য করে, সে দরিদ্রতা ও লজ্জা পায়; কিন্তু যে অনুযোগ মান্য করে, সে সম্মানিত হয়।” এমনকি আমরা না বলা সত্ত্বেও, যদি আমাদের সংশোধন করা হয়, সেক্ষেত্রে তা মেনে নিলে আমরা বিজ্ঞতার পরিচয় দিই। উপযুক্ত উপদেশ সর্বোত্তম উপকারজনক হতে পারে, যখন আমরা বুঝতে পারি না যে আমাদের এর প্রয়োজন আছে। এই ধরনের পরামর্শে মনোযোগ দেওয়া আমাদেরকে দুঃখ থেকে রক্ষা করতে এবং দুঃখজনক পরিণতি এড়াতে সাহায্য করতে পারে। তা অমান্য করা লজ্জাজনক পরিণত নিয়ে আসবে।
উপযুক্ত সময়ে প্রশংসা আমাদের গেঁথে তোলে আর তা বাস্তবিকই উৎসাহজনক হয়। কিন্তু, সেইসঙ্গে আমাদের সংশোধন আশা করা এবং তা মেনে নেওয়া দরকার। তীমথিয়কে লেখা পৌলের দুটো চিঠি বিবেচনা করুন। তার বিশ্বস্ততার জন্য যদিও তীমথিয়কে প্রশংসা করা হয়েছে, কিন্তু তীমথিয়ের জন্য লেখা সেই চিঠিগুলো পরামর্শেও পূর্ণ। পৌল সেই যুবক ব্যক্তিকে বিশ্বাস এবং এক উত্তম বিবেক ধরে রাখা, মণ্ডলীর অন্যদের সঙ্গে আচরণ, ঈশ্বরীয় ভক্তি ও সন্তুষ্ট মন গড়ে তোলা, অন্যদের শিক্ষা দেওয়া, ধর্মভ্রষ্টতাকে প্রতিরোধ করা এবং তার পরিচর্যা সম্পন্ন করার বিষয়ে উদারভাবে পরামর্শ দিয়েছিলেন। মণ্ডলীর অল্পবয়স্ক সদস্যদের তাদের চেয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে পরামর্শ চাওয়া এবং তা গ্রহণ করা উচিত।
“জ্ঞানীদের সহচর হও”
“বাসনার সিদ্ধি প্রাণে মধুর বোধ হয়; কিন্তু মন্দ হইতে সরিয়া যাওয়া হীনবুদ্ধিদের ঘৃণিত।” (হিতোপদেশ ১৩:১৯) এই হিতোপদেশের অর্থের বিষয়ে একটি তথ্যগ্রন্থ উল্লেখ করে: “যখন একটা লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় অথবা একটা ইচ্ছা পরিপূর্ণ হয়, তখন মানুষ পরিতৃপ্তিবোধে পূর্ণ হয় . . . যেহেতু একজনের লক্ষ্য সম্পন্ন করাই সবচেয়ে আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা, তাই নির্বোধ লোকেদের কাছে মন্দ থেকে সরে যাওয়া নিশ্চয়ই নিদারুণ ঘৃণ্য বিষয় হয়। তাদের বাসনাগুলো কেবলমাত্র মন্দ উপায়ে চরিতার্থ করা যেতে পারে আর যদি তারা মন্দতাকে পরিত্যাগও করে, তবুও তারা তাদের ইচ্ছাগুলোকে পূর্ণ করার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবে।” তাই, সংগত আকাঙ্ক্ষাগুলো গড়ে তোলা কতই না গুরুত্বপূর্ণ!
আমাদের চিন্তাভাবনা, পছন্দ ও অপছন্দের ওপর আমাদের সঙ্গীসাথিদের কত জোরালো প্রভাবই না রয়েছে! শলোমন এক ধ্রুব সত্য প্রকাশ করেন, যখন তিনি বলেন: “জ্ঞানীদের সহচর হও, জ্ঞানী হইবে; কিন্তু যে হীনবুদ্ধিদের বন্ধু, সে ভগ্ন হইবে।” (হিতোপদেশ ১৩:২০) হ্যাঁ, আমদের মেলামেশা, এমনকি সেটা আমোদপ্রমোদ, ইন্টারনেট এবং কিছু পড়ার মাধ্যমেই হোক, আমরা কেমন ব্যক্তি আর কেমন ব্যক্তি হয়ে উঠব, তার ওপর সেগুলোর এক প্রভাব রয়েছে। তাই বিজ্ঞতার সঙ্গে আমাদের সঙ্গীসাথি বাছাই করা কতই না গুরুত্বপূর্ণ!
“অধিকার রাখিয়া যায়”
“অমঙ্গল পাপীদের পশ্চাতে পশ্চাতে দৌড়ে,” ইস্রায়েলের রাজা ঘোষণা করেন, “কিন্তু ধার্ম্মিকদিগকে মঙ্গলরূপ পুরস্কার দত্ত হয়।” (হিতোপদেশ ১৩:২১) ধার্মিকতার অনুধাবন করা পুরস্কারজনক কারণ যিহোবা ধার্মিকের জন্য চিন্তা করেন। (গীতসংহিতা ৩৭:২৫) কিন্তু আমাদেরকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, আমাদের সকলের প্রতি “কাল ও দৈব” ঘটে। (উপদেশক ৯:১১) অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলোর জন্য প্রস্তুত থাকতে আমরা কি কিছু করতে পারি?
“সৎ লোক পুত্ত্রদের পুত্ত্রগণের জন্য অধিকার রাখিয়া যায়,” শলোমন বলেন। (হিতোপদেশ ১৩:২২ক) বাবামা কী এক মূল্যবান অধিকার বা উত্তরাধিকারই না রেখে যায়, যখন তারা তাদের সন্তানদের যিহোবার সম্বন্ধে জ্ঞান নিতে এবং তাঁর সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে! কিন্তু সম্ভব হলে পরিবারের বস্তুগত মঙ্গলের ব্যবস্থা করাও কি দূরদর্শিতা নয়, যেহেতু কোনো কারণে বাবা অথবা মার অকাল মৃত্যু হতে পারে? অনেক দেশে পরিবারের মস্তকেরা জীবনবিমা, একটি বৈধ দলিল এবং কিছু সঞ্চয় আলাদা করে রাখার চেষ্টা করে।
কিন্তু, দুষ্টদের উত্তরাধিকার সম্বন্ধে কী বলা যেতে পারে? “পাপীর ধন ধার্ম্মিকের নিমিত্ত সঞ্চিত হয়,” শলোমন বলে চলেন। (হিতোপদেশ ১৩:২২খ) এখনকার যেকোনো উপকার ছাড়াও, যখন যিহোবা “নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর” সৃষ্টির বিষয়ে তাঁর প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করেন, যেখানে “ধার্ম্মিকতা বসতি করে” তখন এটা সত্য বলে প্রমাণিত হবে। (২ পিতর ৩:১৩) সেই সময়ে দুষ্টেরা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে আর “মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:১১.
এমনকি সীমিত জ্ঞানের অধিকারী হলেও, একজন দূরদর্শী ব্যক্তি জ্ঞানপূর্বক কাজ করেন। “দরিদ্রগণের ভূমির চাষে খাদ্যবাহুল্য হয়,” হিতোপদেশ ১৩:২৩ পদ বলে, “কিন্তু বিচারের অভাবে কেহ কেহ নষ্ট হয়।” কঠোর পরিশ্রম ও ঈশ্বরের আশীর্বাদে ক্ষুদ্র বিষয় প্রাচুর্যে পরিণত হয়। কিন্তু যখন ন্যায়বিচারের ঘাটতি হয়, তখন অন্যায় বিবেচনা ধনসম্পদকে নিঃশেষ করে দিতে পারে।
“সযত্নে শাস্তি দেয়”
অসিদ্ধ মানুষের শাসনের দরকার রয়েছে আর এটা তাদের শিশু অবস্থা থেকেই দেওয়া দরকার। “যে দণ্ড না দেয়, সে পুত্ত্রকে দ্বেষ করে,” ইস্রায়েলের রাজা শলোমন বলেন, “কিন্তু যে তাহাকে প্রেম করে, সে সযত্নে শাস্তি দেয়।”—হিতোপদেশ ১৩:২৪.
দণ্ড হল কর্তৃত্বের প্রতীক। হিতোপদেশ ১৩:২৪ পদে এটা বাবামায়ের কর্তৃত্বকে বোঝায়। এই প্রসঙ্গে, শাসন দণ্ড ব্যবহার করা বলতে সবসময় সন্তানকে প্রহার করাকে বোঝায় না। বরং, এর অর্থ সংশোধন করার মাধ্যম আর সেটা যেকোনোভাবেই হতে পারে। একটা ক্ষেত্রে কোনো সন্তানকে তার অসংগত ব্যবহার সংশোধন করার জন্য হয়তো সদয়ভাবে তিরস্কার করাই যথেষ্ট হতে পারে। অন্য সন্তানের জন্য হয়তো আরও দৃঢ় শাসনের দরকার। “বুদ্ধিমানের মনে অনুযোগ যত লাগে, হীনবুদ্ধির মনে এক শত প্রহারও তত লাগে না,” হিতোপদেশ ১৭:১০ পদ বলে।
সন্তানদের উপকারের জন্য বাবামার শাসন সবসময় ভালবাসা ও প্রজ্ঞার সঙ্গে পরিচালিত হওয়া উচিত। একজন প্রেমময় বাবা অথবা মা তার সন্তানের ভুলগুলো উপেক্ষা করেন না। এর বিপরীতে তিনি সেগুলো বের করার চেষ্টা করেন, যাতে সেগুলো গভীরভাবে গেঁথে যাওয়ার আগেই সরিয়ে ফেলা যেতে পারে। একজন প্রেমময় বাবা অবশ্যই পৌলের পরামর্শে মনোযোগ দেন: “পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, বরং প্রভুর [“যিহোবার,” NW] শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।”—ইফিষীয় ৬:৪.
একজন বাবা অথবা মা যদি প্রশ্রয়ী হন এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন প্রদানে ব্যর্থ হন, তা হলে কী? এই ধরনের বাবা অথবা মা কি পরবর্তী সময়ে এর জন্য কৃতজ্ঞতা লাভ করবেন? কোনো সম্ভাবনাই নেই! (হিতোপদেশ ২৯:২১, NW) বাইবেল বলে: “অশাসিত বালক মাতার লজ্জাজনক।” (হিতোপদেশ ২৯:১৫) তাই বাবামার কর্তৃত্ব অনুশীলন করা থেকে বিরত থাকা উদাসীনতা বা ভালবাসার অভাবকে প্রকাশ করে। কিন্তু, সদয় অথচ দৃঢ়ভাবে কর্তৃত্বের অনুশীলন করা প্রেমপূর্ণ চিন্তাকে প্রতিফলিত করে।
একজন দূরদর্শী ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি যিনি সত্যের জ্ঞান অনুযায়ী কাজ করেন তিনি আশীর্বাদ লাভ করবেন। শলোমন আমাদের আশ্বাস দেন: “ধার্ম্মিক প্রাণের তৃপ্তি পর্য্যন্ত আহার করে, কিন্তু দুষ্টদের উদর শূন্য থাকে।” (হিতোপদেশ ১৩:২৫) যিহোবা জানেন আমাদের জীবনের যেকোনো একটা ক্ষেত্রে কোন বিষয়টা উপকারজনক আর সেটা হতে পারে আমাদের পারিবারিক বিষয়ে, অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বেলায়, আমাদের পরিচর্যায় অথবা যখন আমাদের শাসন করা হয়। আর তাঁর বাক্যে পাওয়া পরামর্শ বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজে লাগানোর দ্বারা আমরা নিশ্চিতভাবে জীবনের সর্বোত্তম পথ উপভোগ করতে পারব।
[পাদটীকা]
a হিতোপদেশ ১৩:১-১৪ পদের ওপর আলোচনার জন্য ২০০৩ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২১-৫ পৃষ্ঠা দেখুন।
[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
অন্যায় সমালোচনার মুখোমুখি হয়েও সতর্ক ব্যক্তি তার জিহ্বাকে সংযত রাখেন
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
একজন বিশ্বস্ত রাজ্য ঘোষক অনেক ভাল কাজ সম্পন্ন করেন
[৩০ পৃষ্ঠার চিত্র]
যদিও প্রশংসা উৎসাহজনক কিন্তু আমাদের অবশ্যই সংশোধনকে সাদরে মেনে নিতে হবে
[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]
একজন প্রেমময় বাবা অথবা মা তার সন্তানের ভুলত্রুটিকে উপেক্ষা করেন না