মানবজাতির ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের প্রয়োজন
“সদাপ্রভুর ভয় বুঝিতে পারিবে, ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।”—হিতোপদেশ ২:৫.
১. কেন এটি বলা যেতে পারে যে মানুষের হৃদয় হল ঐশিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর এক শ্রেষ্ঠ অবদান?
এখনই পৃথিবীতে প্রায় ৫,৬০,০০,০০,০০০ জন মানুষের হৃদস্পন্দন হচ্ছে। প্রতিদিন ১,০০,০০০ বার আপনার নিজের হৃদস্পন্দন হয় এবং আপনার দেহের ১,০০,০০০ কিলোমিটার বিশিষ্ট কারডিওভাসকুলার সিস্টেমের মাধ্যমে ৭,৬০০ লিটার রক্ত পাম্প করে। ঐশিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর এই শ্রেষ্ঠ নিদর্শনের চাইতে অন্য কোন পেশিই এত কঠোর পরিশ্রম করে না।
২. রূপক হৃদয়কে আপনি কিভাবে বর্ণনা করবেন?
২ পৃথিবীতে ৫৬০,০০,০০,০০০টি রূপক হৃদয়ও কাজ করে। এই রূপক হৃদয়ের মধ্যে থাকে আমাদের আবেগ, আমাদের উদ্দেশ্য ও আমাদের আকাঙ্ক্ষাগুলি। এটি হল আমাদের চিন্তাধারা, আমাদের বোধগম্যতা, আমাদের ইচ্ছার কেন্দ্রস্থল। এই রূপক হৃদয় অহঙ্কারী অথবা নম্র, বিষণ্ণ অথবা প্রফুল্ল, অন্ধকারাচ্ছন্ন অথবা জ্ঞানালোকিত হতে পারে।—নহিমিয় ২:২; হিতোপদেশ ১৬:৫; মথি ১১:২৯; প্রেরিত ১৪:১৭; ২ করিন্থীয় ৪:৬; ইফিষীয় ১:১৬-১৮.
৩, ৪. সুসমাচার কিভাবে হৃদয়ে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে?
৩ যিহোবা ঈশ্বর মানুষের হৃদয় পড়তে পারেন। হিতোপদেশ ১৭:৩ পদ বলে: “মুষী রৌপ্যের জন্য ও হাফর সুবর্ণের জন্য, কিন্তু সদাপ্রভুই চিত্তের পরীক্ষা করেন।” কেবলমাত্র প্রতিটি হৃদয় পড়া এবং দণ্ডাজ্ঞা ঘোষণা করার পরিবর্তে যিহোবা কিন্তু, সুসমাচারের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে পৌঁছানোর জন্য তাঁর সাক্ষীদের ব্যবহার করছেন। এটি প্রেরিত পৌলের এই কথাগুলির সাথে সামঞ্জস্য রাখে: “‘যে কেহ প্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে ডাকে, সে পরিত্রাণ পাইবে।’ তবে তাহারা যাঁহাতে বিশ্বাস করে নাই, কেমন করিয়া তাঁহাকে ডাকিবে? আর যাঁহার কথা শুনে নাই, কেমন করিয়া তাঁহাতে বিশ্বাস করিবে? আর প্রচারক না থাকিলে কেমন করিয়া শুনিবে? আর প্রেরিত না হইলে কেমন করিয়া প্রচার করিবে? যেমন লিখিত আছে, ‘যাহারা মঙ্গলের সুসমাচার প্রচার করে, তাহাদের চরণ কেমন শোভা পায়।’”—রোমীয় ১০:১৩-১৫.
৪ “মঙ্গলের সুসমাচার প্রচার” করতে জগতের প্রান্ত পর্যন্ত তাঁর সাক্ষীদের পাঠোনো এবং যারা তা গ্রহণ করতে তৎপর এইরূপ হৃদয় খুঁজে পাওয়া যিহোবাকে খুশি করেছে। এখন আমাদের সংখ্যা প্রায় ৫০,০০,০০০ এর বেশি—পৃথিবীতে প্রতিটি সাক্ষীর মাথাপিছু প্রায় ১,২০০ জন। পৃথিবীর শত শত কোটি লোকের কাছে সুসমাচার পৌঁছে দেওয়া সহজ কাজ নয়। কিন্তু যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে ঈশ্বর এই কাজ পরিচালনা করছেন এবং সহৃদয় ব্যক্তিদের কাছে নিয়ে আসছেন। এইভাবে, যিশাইয় ৬০:২২ পদে লিপিবদ্ধ ভবিষ্যদ্বাণীটি সত্য বলে প্রমাণিত হচ্ছে: “যে ছোট, সে সহস্র হইয়া উঠিবে, যে ক্ষুদ্র, সে বলবান্ জাতি হইয়া উঠিবে; আমি সদাপ্রভু যথাকালে ইহা সম্পন্ন করিতে সত্বর হইব।”
৫. জ্ঞান কী এবং জগতের প্রজ্ঞা সম্বন্ধে কী বলা যেতে পারে?
৫ সেই সময়টি হল এখন আর একটি বিষয় স্পষ্ট—পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের জ্ঞানের প্রয়োজন আছে। বস্তুতপক্ষে, অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ অথবা অধ্যয়নের দ্বারা অর্জিত বাস্তবের সাথে পরিচিতি হল জ্ঞান। পৃথিবী বহুবিধ জ্ঞানে ভরপূর হয়েছে। পরিবহণ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ও যোগাযোগের ক্ষেত্রগুলিতে উন্নতি হয়েছে। কিন্তু মানবজাতির প্রকৃতই যে জ্ঞানের প্রয়োজন সেটি কি সেই জাগতিক জ্ঞান? কখনই নয়! যুদ্ধ, উৎপীড়ন, ব্যাধি এবং মৃত্যু নিয়মিত মানবজাতিকে আঘাত করে চলেছে। জগতের এই প্রজ্ঞা প্রায়ই মরুভূমির ঝড়ে উড়ে যাওয়া বালুকণার মত বলে প্রমাণিত হয়েছে।
৬. রক্তের পরিপ্রেক্ষিতে, কিভাবে ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের সাথে জাগতিক প্রজ্ঞার তুলনা করা হয়?
৬ উদাহরণস্বরূপ: দুই শতাব্দী পূর্বে, শিরা কেটে রক্তমোক্ষণ করাকে আরোগ্যলাভের উপায় হিসাবে মনে করা রীতি হয়ে উঠেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটন, তার জীবনের শেষ মুহূর্তটিতে বারংবার রক্তমোক্ষণ করানো হয়। একটি মুহূর্তে তিনি বলেছিলেন: “আমাকে শান্তভাবে মরতে দাও, আমি শেষ অবধি টিকে থাকতে পারব না।” তিনি ঠিকই বলেছিলেন, কারণ সেইদিনই তিনি মারা যান—ডিসেম্বর ১৪, ১৭৯৯ সাল। শিরা কেটে রক্তমোক্ষণ করার পরিবর্তে বর্তমানে মানুষের শরীরের ভিতরে রক্তগ্রহণের উপর জোর দেওয়া হয়। দুটি প্রণালীই প্রাণ-ঘাতী সমস্যাগুলি দ্বারা পরিপূর্ণ হয়েছে। কিন্তু, ঈশ্বরের বাক্য বরাবর বলে এসেছে: “রক্ত . . . হইতে পৃথক্” থাক। (প্রেরিত ১৫:২৯) ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান সর্বদাই সঠিক, নির্ভরযোগ্য ও সময়োপযোগী।
৭. সন্তান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কিভাবে যথার্থ শাস্ত্রীয় জ্ঞানের সাথে জাগতিক প্রজ্ঞার তুলনা করা হয়?
৭ নির্ভরযোগ্য নয় এমন আরেকটি জাগতিক প্রজ্ঞার কথা বিবেচনা করুন। বছরের পর বছর ধরে মনস্তত্ত্ববিদেরা শিশু পালনের ক্ষেত্রে প্রশ্রয়তাকে সমর্থন করে এসেছেন, কিন্তু পরে এদের একজন স্বীকার করেছিলেন যে এটি ছিল ভুল। জার্মান ফিলোলজিক্যাল সংস্থা একবার বলেছিল যে প্রশ্রয়তা “বর্তমানে যুবক-যুবতীদের সাথে আমাদের যে সমস্যাগুলি রয়েছে তার জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী।” জাগতিক প্রজ্ঞা হয়ত ঝড়ের মত এদিক ওদিক আন্দোলিত হতে পারে, কিন্তু যথার্থ শাস্ত্রীয় জ্ঞান অটল থেকে গেছে। সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্বন্ধে বাইবেল ভারসাম্যমূলক উপদেশ দিয়ে থাকে। “তোমার পুত্ত্রকে শাস্তি দেও, সে তোমাকে শান্তি দিবে, সে তোমার প্রাণকে আনন্দিত করিবে,” বলে হিতোপদেশ ২৯:১৭ পদ। এইধরনের শাসন প্রেমের সাথে করতে হবে, কারণ পৌল লিখেছিলেন: “পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, বরং প্রভুর শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।”—ইফিষীয় ৬:৪.
“ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান”
৮, ৯. হিতোপদেশ ২:১-৬ পদ জ্ঞান সম্বন্ধে যা বলে, যা মানবজাতির সত্যই প্রয়োজন তা কিভাবে আপনি ব্যাখ্যা করবেন?
৮ যদিও পৌল একজন শিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন, তিনি বলেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যদি আপনাকে এই যুগে জ্ঞানবান্ বলিয়া মনে করে, তবে সে জ্ঞানবান্ হইবার জন্য মূর্খ হউক। যেহেতুক এই জগতের যে জ্ঞান, তাহা ঈশ্বরের নিকটে মূর্খতা।” (১ করিন্থীয় ৩:১৮, ১৯) প্রকৃতপক্ষে মানবজাতির যে জ্ঞানের প্রয়োজন, তা একমাত্র ঈশ্বরই প্রদান করতে পারেন। এই সম্বন্ধে হিতোপদেশ ২:১-৬ পদ বলে: “বৎস, তুমি যদি আমার কথা সকল গ্রহণ কর, যদি আমার আজ্ঞা সকল তোমার কাছে সঞ্চয় কর, যদি প্রজ্ঞার দিকে কর্ণপাত কর, যদি বুদ্ধিতে মনোনিবেশ কর; হাঁ, যদি সুবিবেচনাকে আহ্বান কর, যদি বুদ্ধির জন্য উচ্চৈঃস্বর কর; যদি রৌপ্যের ন্যায় তাহার অন্বেষণ কর, গুপ্ত ধনের ন্যায় তাহার অনুসন্ধান কর; তবে সদাপ্রভুর ভয় বুঝিতে পারিবে, ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে। কেননা সদাপ্রভুই প্রজ্ঞা দান করেন, তাঁহারই মুখ হইতে জ্ঞান ও বুদ্ধি নির্গত হয়।”
৯ যারা উত্তম হৃদয়ের দ্বারা অনুপ্রাণিত তারা ঈশ্বর-দত্ত জ্ঞানকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে প্রজ্ঞার প্রতি মনোযোগ দেয়। তারা যা শিখছে সেই তথ্যগুলিকে সতর্কতার সাথে মূল্যায়ন করার দ্বারা তারা তাদের আন্তরিক বিচক্ষণতা প্রকাশ করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে, তারা বোধগম্যতা অথবা একটি বিষয়ের দিকগুলি কিভাবে অন্যটির সাথে সম্পর্কযুক্ত, সেটি দেখার ক্ষমতা অর্জন করে থাকে। সরলচিত্তের ব্যক্তিরা এমনভাবে কাজ করে যেন তারা রৌপ্যের জন্য খনন এবং গুপ্ত ধনের জন্য অনুসন্ধান করছে। কিন্তু যে ব্যক্তিরা গ্রহণ করতে আগ্রহী তারা কোন্ মহান সম্পদ খুঁজে পায়? এটি হল “ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান।” সেটি কী? সহজভাবে বললে সেটি হল, ঈশ্বরের বাক্য, বাইবেলে পাওয়া জ্ঞান।
১০. উত্তম আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য উপভোগ করার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?
১০ ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান হল নির্ভুল, নির্ভরযোগ্য, জীবন-দানকারী। এটি আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে। পৌল তীমথিয়কে উপদেশ দিয়েছিলেন: “তুমি আমার কাছে যাহা যাহা শুনিয়াছ, সেই নিরাময় বাক্যসমূহের আদর্শ খ্রীষ্ট যীশু সম্বন্ধীয় বিশ্বাসে ও প্রেমে ধারণ কর।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (২ তীমথিয় ১:১৩) যে কোন ভাষায় কথাগুলির একটি ধারা আছে। একইভাবে, শাস্ত্রীয় সত্যের “বিশুদ্ধ ওষ্ঠ,” এর “নিরাময় বাক্যসমূহের আদর্শ” রয়েছে যা প্রধানত বাইবেলের মূলবিষয়, রাজ্যের মাধ্যমে যিহোবার সার্বভৌমত্বের প্রতিপাদন, তার উপর ভিত্তি করে। (সফনিয় ৩:৯) আমাদের নিরাময় বাক্যের এই আদর্শকে মনে ও হৃদয়ে রাখা প্রয়োজন। যদি আমরা আমাদের রূপক হৃদয়কে সমস্যায় পড়া থেকে রক্ষা করি এবং আধ্যাত্মিকভাবে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখি, তাহলে আমরা অবশ্যই প্রাত্যহিক জীবনে বাইবেল প্রয়োগ করব এবং “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” এর মাধ্যমে ঈশ্বর যে আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলি প্রস্তুত করেছেন তার সদ্ব্যবহার করব। (মথি ২৪:৪৫-৪৭; তীত ২:২) তাই আসুন আমরা সর্বদাই মনে রাখি উত্তম আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য আমাদের ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের প্রয়োজন।
১১. কেন মানবজাতির ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের প্রয়োজন তার কয়েকটি কারণ কী?
১১ পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের কেন ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের প্রয়োজন তার অন্যান্য কারণগুলি বিবেচনা করুন। কিভাবে এই পৃথিবী ও মানুষ অস্তিত্বে এসেছিল তারা সকলে কি তা জানে? না, তারা জানে না। সকল মানবজাতি কি সত্য ঈশ্বর এবং তাঁর পুত্রকে জানে? ঐশিক সার্বভৌমত্ব ও মানুষের বিশ্বস্ততা সম্বন্ধে শয়তান যে বিচার্য বিষয়গুলি উত্থাপন করেছিল সেই বিষয়ে কি সকলে অবগত? পুনরায় না। সাধারণভাবে লোকেরা কি জানে আমরা কেন বৃদ্ধ হই ও মারা যাই? আবার আরেকবার আমরা অবশ্যই বলব না। পৃথিবীনিবাসী সকলে কি উপলব্ধি করে যে ঈশ্বরের রাজ্য এখনই শাসন করছে এবং আমরা শেষ কালে বাস করছি? তারা কি মন্দ আত্মাগণদের বিষয়ে অবগত আছে? কিভাবে পারিবারিক জীবন সুখী থাকতে পারে সেই সম্বন্ধে কি সমস্ত মানুষের নির্ভরযোগ্য জ্ঞান রয়েছে? আর অধিকাংশ লোকেরা কি জানে যে পরমদেশে আনন্দপূর্ণ জীবন হল বাধ্য মানবজাতির জন্য আমাদের স্রষ্টার উদ্দেশ্য? এই প্রশ্নগুলিরও উত্তর হল না। তাহলে, স্পষ্টতই, মানবজাতির ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের প্রয়োজন।
১২. “আত্মায় ও সত্যে” কিভাবে আমরা ঈশ্বরকে উপাসনা করতে পারি?
১২ তাঁর পার্থিব জীবনের শেষ রাতে প্রার্থনায় যীশু যা বলেছিলেন তা দেখায় যে মানবজাতির ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের প্রয়োজন আছে। তাঁর প্রেরিতেরা অবশ্যই তাঁর এই কথাগুলি শুনে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিল: “আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়।” (যোহন ১৭:৩) এইধরনের জ্ঞানের প্রয়োগই হল ঈশ্বরকে গ্রহণযোগ্যভাবে উপাসনা করার একমাত্র উপায়। “ঈশ্বর আত্মা; আর যাহারা তাঁহার ভজনা করে, তাহাদিগকে আত্মায় ও সত্যে ভজনা করিতে হইবে,” যীশু বলেছিলেন। (যোহন ৪:২৪) যখন আমরা বিশ্বাস ও প্রেমপূর্ণ হৃদয় দ্বারা পরিচালিত হই, তখন আমরা “আত্মায়” ঈশ্বরের উপাসনা করি। কিভাবে আমরা “সত্যে” তাঁকে উপাসনা করি? তাঁর বাক্য অধ্যয়ন ও তাঁর দ্বারা প্রকাশিত সত্য—“ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান” অনুসারে তাঁকে উপাসনা করার দ্বারা।
১৩. প্রেরিত ১৬:২৫-৩৪ পদে কোন্ ঘটনার বিষয় লিপিবদ্ধ করা আছে এবং তার থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৩ প্রতি বছর হাজার হাজার ব্যক্তি যিহোবার উপাসনা করতে আরম্ভ করে। কিন্তু, অনেকদিন ধরে কি আগ্রহী ব্যক্তিদের সাথে বাইবেল অধ্যয়ন চালিয়ে যেতে হবে অথবা সহৃদয় ব্যক্তিদের পক্ষে কি খুব শীঘ্রই বাপ্তিস্মের ধাপে পৌঁছানো সম্ভব? কারারক্ষক এবং তার পরিবারের ক্ষেত্রে কী ঘটেছিল তা বিবেচনা করুন যা প্রেরিত ১৬:২৫-৩৪ পদে বর্ণনা করা আছে। পৌল ও সীল ফিলিপীতে কারাগারবদ্ধ ছিলেন, কিন্তু মধ্যরাত্রে এক বিরাট ভূমিকম্প কারাগারের দরজা খুলে দেয়। সমস্ত বন্দীরা পালিয়ে গেছে এবং তিনি কঠোর শাস্তি পাবেন এই কথা চিন্তা করে কারারক্ষক যখন আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন তখন পৌল তাকে বলেন যে তারা সকলেই সেখানে উপস্থিত আছেন। পৌল ও সীল “তাহাকে এবং তাহার বাটীতে উপস্থিত সকল লোককে ঈশ্বরের বাক্য বলিলেন।” সেই কারারক্ষক এবং তার পরিবার পরজাতীয় ছিলেন যাদের পবিত্র শাস্ত্র সম্বন্ধে কোন জ্ঞান ছিল না। তবুও, সেই এক রাতেই, তারা বিশ্বাসী হন। এর চেয়ে আরও বেশি, “সে আপনি ও তাহার সকল লোক . . . বাপ্তাইজিত হইল।” সেগুলি ছিল অস্বাভাবিক পরিস্থিতি, কিন্তু সেই নতুন ব্যক্তিদের প্রাথমিক সত্যগুলি শেখানো হয় এবং পরে অন্যান্য বিষয়গুলি মণ্ডলীর সভাগুলি থেকে তারা শেখে। আজকের দিনেও একই রকম কিছু হওয়া সম্ভব।
শস্য প্রচুর!
১৪. সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে অধিক সংখ্যক ফলপ্রসূ বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার কেন প্রয়োজন আছে?
১৪ সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে যিহোবার সাক্ষীরা যদি অধিক সংখ্যার ফলপ্রসূ বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করতে পারত তাহলে তা উত্তম হত। এর সত্যই প্রয়োজন রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলিতে, লোকেদের বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হয়। অন্যত্রও সেই একই অবস্থা। ডোমিনিকান গণতন্ত্রের একটি শহরে, পাঁচ জন সাক্ষী অধ্যয়ন করার এত অনুরোধ পান যে তারা সমস্ত অধ্যয়ন পরিচালনা করতে পারেন না। তারা কী করেছিলেন? তারা আগ্রহী ব্যক্তিদের কিংডম হলের সভাগুলিতে যোগদান করতে এবং বাইবেল অধ্যয়নের জন্য অপেক্ষা করতে উৎসাহিত করেছিলেন। পৃথিবীর চতুর্দিকে বহু স্থানে একই পরিস্থিতি বিদ্যমান।
১৫, ১৬. ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানকে আরও দ্রুতভাবে প্রসারিত করার জন্য কী প্রদান করা হয়েছে এবং এই সম্বন্ধে কয়েকটি বিষয় কী কী?
১৫ বিশাল এলাকা—শস্যছেদনের বিরাট ক্ষেত্র—ঈশ্বরের লোকেদের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে। যদিও “শস্যক্ষেত্রের স্বামী” যিহোবা, আরও কর্মী পাঠাচ্ছেন, তবুও আরও কিছু করার আছে। (মথি ৯:৩৭, ৩৮) তাই, আরও দ্রুতগতিতে ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানকে প্রসারিত করতে, ‘বিশ্বস্ত দাস’ কিছু ব্যবস্থা করেছেন যা সংক্ষেপে নির্দিষ্ট তথ্য যোগায় যাতে করে প্রতিটি পাঠের সাথে বাইবেল ছাত্রেরা আধ্যাত্মিক উন্নতি করতে পারে। এটি হল একটি নতুন প্রকাশনা যা গৃহ বাইবেল অধ্যয়নে আলোচনা করা যেতে পারে অপেক্ষাকৃত তাড়াতাড়ি—সম্ভবত কয়েক মাসের মধ্যে। আর এটিকে সহজেই আমাদের ব্রিফকেস্, আমাদের হাতব্যাগ অথবা এমনকি আমাদের পকেটে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে! যিহোবার সাক্ষীদের “আনন্দিত প্রশংসাকারীগণ” জেলা সম্মেলনে সমবেত হাজার হাজার ব্যক্তিরা ১৯২-পৃষ্ঠার এই নতুন বইটি যার শিরোনাম জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে পেয়ে আনন্দিত হয়েছিল।
১৬ বিভিন্ন দেশের লেখকেরা বিষয়বস্তু প্রস্তুত করেছিলেন যেটি জ্ঞান বইটিতে চূড়ান্ত আকারে সতর্কতার সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তাই এটির আন্তর্জাতিক আবেদন থাকা উচিত। কিন্তু পৃথিবীর চতুর্দিকের লোকেদের নিজেদের ভাষায় এই নতুন প্রকাশনাটি কি প্রকাশ হতে অনেক দেরি হবে? না, কারণ বড় বইয়ের চাইতে ১৯২-পৃষ্ঠার একটি বই খুব তাড়াতাড়ি অনুবাদ করা যেতে পারে। অক্টোবর ১৯৯৫ সালের পর থেকে পরিচালক গোষ্ঠীর লিখন কমিটি এই বইটিকে ইংরাজি থেকে ১৩০টিরও বেশি ভাষায় অনুবাদ করার অনুমতি দিয়েছে।
১৭. কোন্ বিষয়গুলি জ্ঞান বইটিকে ব্যবহার করতে সহজ করা উচিত?
১৭ জ্ঞান বইটির প্রতিটি অধ্যায়ে নির্দিষ্ট বিষয়গুলির মোটের উপর দ্রুত আধ্যাত্মিক উন্নতি করতে ছাত্রদের সক্ষম করা উচিত। এক গঠনমূলক উপায়ে এই বইটি শাস্ত্রীয় সত্যগুলিকে তুলে ধরে। এটি মিথ্যা মতবাদগুলিকে নিয়ে আলোচনা করে না। ভাষার স্পষ্টতা ও যুক্তিযুক্ত বিষয় বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার জন্য বইটিকে ব্যবহার করতে সহজ করে এবং ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। উদ্ধৃত শাস্ত্রপদগুলি ছাড়াও, উল্লেখিত বাইবেল পদগুলি রয়েছে যা ছাত্র আলোচনার জন্য প্রস্তুতি করার সময় পরীক্ষা করে দেখতে পারে। যদি সময় থাকে, তাহলে অধ্যয়ন চলাকালীন সেগুলি পড়া যেতে পারে, কিন্তু অতিরিক্ত বিষয়বস্তু যা মূল বিষয়গুলিকে অস্পষ্ট করে তুলতে পারে তা উল্লেখ করা বিজ্ঞের কাজ হবে না। বরঞ্চ, যারা বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করছেন তাদের বিচক্ষণ হওয়ার চেষ্টা করা এবং প্রতিটি অধ্যায়ে বইটি কী প্রমাণ করছে তা ছাত্রকে জানানো উচিত। এর অর্থ হল যে শিক্ষককে অবশ্যই মনোযোগ সহকারে এটিকে পড়তে হবে, যাতে করে মূল চিন্তাধারাগুলি তার মনের মধ্যে স্পষ্ট থাকে।
১৮. জ্ঞান বইটি ব্যবহার করা সম্বন্ধে কোন্ প্রস্তাবগুলির কথা বলা হয়েছে?
১৮ কিভাবে জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বইটি শিষ্যকরণ কাজের গতিকে বাড়াতে পারে? তুলনামূলকভাবে অল্প সময়ের মধ্যে ১৯২-পৃষ্ঠার এই বইটি অধ্যয়ন করা যেতে পারে এবং যারা “অনন্ত জীবনের জন্য নিরূপিত” তারা অধ্যয়নের মাধ্যমে যিহোবার কাছে উৎসর্গীকরণ ও বাপ্তিস্ম গ্রহণ করার জন্য যথেষ্ট শিখতে সমর্থ হবে। (প্রেরিত ১৩:৪৮) তাই আসুন পরিচর্যার ক্ষেত্রে জ্ঞান বইটির সদ্ব্যবহার করি। যদি ছাত্র ইতিমধ্যেই অন্য কোন বইয়ের বেশির ভাগ অংশটাই অধ্যয়ন করে থাকে, তাহলে সেটিকে শেষ করা হয়ত বাস্তবধর্মী হবে। অন্যথায়, জ্ঞান বইটির দ্বারা বাইবেল অধ্যয়ন পরিবর্তন করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। এই নতুন প্রকাশনাটি শেষ করার পর, এটি প্রস্তাব করা হচ্ছে না যে সেই একই ছাত্রের সাথে দ্বিতীয় কোন বই দিয়ে অধ্যয়ন পরিচালিত করা হোক। যারা সত্যকে গ্রহণ করে তারা যিহোবার সাক্ষীদের সভাগুলিতে যোগদান করার ও সেই সাথে বাইবেল এবং বিভিন্ন খ্রীষ্টীয় প্রকাশনাগুলি নিজেরা পড়ার দ্বারা তাদের জ্ঞানকে এক পূর্ণ আকার দিতে পারে।—২ যোহন ১.
১৯. জ্ঞান বইটি দিয়ে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার পূর্বে, কেন আমাদের পরিচর্যা সম্পাদন করতে সংগঠিত বইটির পৃষ্ঠা ১৭৫ থেকে ২১৮ পুনরালোচনা করা সাহায্যকারী হবে?
১৯ জ্ঞান বইটি একজন ব্যক্তিকে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে সাহায্য করার উদ্দেশ্য নিয়ে লেখা হয় যেটি প্রাচীনেরা অবাপ্তাইজিত প্রকাশক, যারা যিহোবার সাক্ষী হিসাবে বাপ্তিস্ম গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করে তাদের সাথে পুনরালোচনা করে থাকেন। অতএব, আপনাকে আপনার বর্তমান বাইবেল অধ্যয়নকে এই নতুন প্রকাশনাটি পড়ানোর আগে, আমাদের পরিচর্যা সম্পন্ন করতে সংগঠিত (ইংরাজি) বইটির পৃষ্ঠা ১৭৫ থেকে ২১৮ এর প্রশ্নগুলির পুনরালোচনা করার জন্য কিছুটা সময় ব্যয় করতে সুপারিশ করা হচ্ছে।a এটি আপনাকে জ্ঞান বইটি দিয়ে বাইবেল অধ্যয়ন করার সময় এইধরনের প্রশ্নের উত্তরগুলিতে জোর দিতে সাহায্য করবে।
২০. জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বইটি দিয়ে আপনি কী করার পরিকল্পনা নিয়েছেন?
২০ প্রতিটি স্থানের লোকেদের সুসমাচার শোনা উচিত। হ্যাঁ, মানবজাতির ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের প্রয়োজন আছে আর সেটিকে পরিচিত করানোর জন্য যিহোবার সাক্ষীরা রয়েছে। বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের মাধ্যমে আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতার দ্বারা প্রদত্ত এখন একটি নতুন বই রয়েছে। আপনি কি সত্য শিক্ষা দিতে এবং যিহোবার পবিত্র নামের প্রতি সম্মান আনতে এটি ব্যবহার করবেন। সেই জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে সেটি অনেকের কাছে প্রাপ্তিসাধ্য করতে আপনার প্রতিটি প্রচেষ্টাকে যিহোবা অবশ্যই আশীর্বাদ করবেন।
[পাদটীকাগুলো]
a ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটির দ্বারা প্রকাশিত।
কিভাবে আপনি উত্তর দেবেন?
◻ রূপক হৃদয়কে আপনি কিভাবে বর্ণনা করবেন?
◻ ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান কী?
◻ মানবজাতির কেন ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের প্রয়োজন?
◻ কোন্ নতুন বইটি পাওয়া যাচ্ছে এবং সেটি ব্যবহার করতে আপনি কী পরিকল্পনা নিয়েছেন?
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের কেন ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের প্রয়োজন তার বহুবিধ কারণ রয়েছে