স্বেচ্ছাসেবকের মনোভাব নিয়ে যিহোবার প্রশংসা করুন!
“প্রজারা স্ব-ইচ্ছায় আপনাদিগকে উৎসর্গ করিল, এজন্য তোমরা সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর।”—বিচার. ৫:২.
১, ২. (ক) ঈশ্বর আমাদের সেবাকে কীভাবে দেখেন, সেই সম্বন্ধে ইলীফস ও বিল্দদ কী বলেছিলেন? (খ) সেই সম্বন্ধে যিহোবা কী বলেছিলেন?
তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে, তিন জন ব্যক্তি ঈশ্বরের একজন বিশ্বস্ত দাস ইয়োবের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার কাছে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন তৈমনীয় ইলীফস। তিনি ইয়োবকে এইরকম কিছু আগ্রহজনক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন: “মনুষ্য কি ঈশ্বরের উপকারী হইতে পারে? বরং বিবেচক আপনারই উপকারী হয়। তুমি ধার্ম্মিক হইলে কি সর্ব্বশক্তিমানের আমোদ হয়? তুমি সিদ্ধ আচরণ করিলে কি তাঁহার লাভ হয়?” (ইয়োব ২২:১-৩) স্পষ্টতই, ইলীফস মনে করেছিলেন, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর হল না। এরপর তাদের মধ্যে আরেকজন, শূহীয় বিল্দদ, এর সঙ্গে যুক্ত করে বলেছিলেন, মানুষের পক্ষে ঈশ্বরের কাছে ধার্মিক বলে বিবেচিত হওয়া অসম্ভব।—পড়ুন, ইয়োব ২৫:৪.
২ ইলীফস ও বিল্দদ তাদের কথাবার্তার মাধ্যমে ইয়োবকে এইরকম বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে, যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে ইয়োবের প্রচেষ্টা নিরর্থক। সেই ব্যক্তিরা ইয়োবকে এমনটা মনে করাতে চেয়েছিলেন, ঈশ্বরের কাছে মানুষ কীট বা কৃমির মতোই মূল্যহীন। (ইয়োব ৪:১৯; ২৫:৬) তাদের এইরকম কথা বলার পিছনে কি এই কারণ ছিল যে, তারা নম্র ছিলেন? (ইয়োব ২২:২৯) এটা ঠিক যে, যিহোবা সবচেয়ে মহান এবং তাঁর তুলনায় আমরা একেবারেই নগণ্য। আমরা যদি কোনো পাহাড়ের চূড়া থেকে কিংবা প্লেনের জানালা দিয়ে নীচে তাকাই, তা হলে আমরা যে কত ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ, সেই সম্বন্ধে কিছুটা ধারণা পাই। কিন্তু, যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টা সম্বন্ধে এবং ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে আমাদের কঠোর পরিশ্রম সম্বন্ধে কি যিহোবা এইরকম মনে করেন? না! ইলীফস, বিল্দদ এবং তৃতীয় ব্যক্তি সোফরকে যিহোবা বলেছিলেন যে, তারা মিথ্যা কথা বলছেন। এরপর ঈশ্বর বলেছিলেন, তিনি ইয়োবের উপর খুশি হয়েছেন আর তাই তিনি তাকে “আমার দাস” বলে উল্লেখ করেছিলেন। (ইয়োব ৪২:৭, ৮) সুতরাং, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, অসিদ্ধ মানুষ “ঈশ্বরের উপকারী হইতে” পারে।
‘আপনি তাঁহাকে কি দিতে পারেন?’
৩. যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টা সম্বন্ধে ইলীহূ কী বলেছিলেন আর এর অর্থ কী ছিল?
৩ ইলীহূ নামে একজন কমবয়সি ব্যক্তি, ইয়োব এবং সেই তিন জন ব্যক্তির কথাবার্তা মন দিয়ে শুনছিলেন। তাদের কথাবার্তা শেষ হওয়ার পর ইলীহূ যিহোবা সম্বন্ধে ইয়োবকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করেছিলেন: “[আপনি] যদি ধার্ম্মিক হন, তাঁহাকে কি দিতে পারেন? আপনার হস্ত হইতেই বা তিনি কি গ্রহণ করিবেন?” (ইয়োব ৩৫:৭) ইলীহূও কি এই বলার চেষ্টা করছিলেন যে, যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টা নিরর্থক? না। কারণ যিহোবা ইলীহূকে সংশোধন করেননি, যেমনটা অন্য তিন জন ব্যক্তিকে করেছিলেন। ইলীহূ ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে কথা বলছিলেন। তিনি বলছিলেন যে, আমাদের কাছ থেকে যিহোবার উপাসনা পাওয়ার প্রয়োজন নেই। যিহোবার কোনো কিছুরই প্রয়োজন নেই। যিহোবার জন্য আমরা এমন কিছুই করতে পারি না, যা তাঁকে আরও সমৃদ্ধশালী কিংবা আরও শক্তিশালী করতে পারে। সত্যি বলতে কী, সমস্ত উত্তম গুণ বা ক্ষমতা ঈশ্বরের কাছ থেকেই আসে আর আমরা যেভাবে তা ব্যবহার করি, তা তিনি লক্ষ করেন।
৪. আমরা যখন অন্যদের প্রতি দয়া দেখাই, তখন যিহোবা কেমন বোধ করেন?
৪ আমরা যখন সেই ব্যক্তিদের প্রতি অনুগত প্রেম দেখাই, যারা যিহোবাকে উপাসনা করে, তখন তিনি সেই কাজগুলোকে ব্যক্তিগতভাবে তাঁর প্রতিই করা হয়েছে বলে মনে করেন। হিতোপদেশ ১৯:১৭ পদে আমরা পড়ি: “যে দরিদ্রকে কৃপা করে, সে সদাপ্রভুকে ঋণ দেয়; তিনি তাহার সেই উপকারের পরিশোধ করিবেন।” যত বারই আমরা অন্যদের প্রতি দয়া দেখাই, তত বারই যিহোবা আসলে তা লক্ষ করেন। আর এমনকী নিখিলবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা হওয়া সত্ত্বেও, যিহোবা এই কাজগুলোকে তাঁকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে বলে ধরে নেন, যা তিনি অনেক অপূর্ব দান সহকারে পরিশোধ করেন। ঈশ্বরের পুত্র যিশু এই বিষয়টার সত্যতা তুলে ধরেছিলেন।—পড়ুন, লূক ১৪:১৩, ১৪.
৫. এখন আমরা কোন প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করব?
৫ প্রাচীন কালে, প্রভু যিহোবা তাঁকে প্রতিনিধিত্ব করার এবং এক বিশেষ উপায়ে তাঁর সেবা করার জন্য ভাববাদী যিশাইয়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। (যিশা. ৬:৮-১০) যিশাইয় ইচ্ছুক মনে সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন এবং বলেছিলেন: “এই আমি, আমাকে পাঠাও।” বর্তমানেও, যিহোবা বিশ্বস্ত মানুষকে তাঁর কাজে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। যিহোবার হাজার হাজার দাস দেখাচ্ছে যে, তাদেরও যিশাইয়ের মতো একই মনোভাব রয়েছে। তারা বিভিন্ন উপায়ে এবং বিভিন্ন জায়গায় যিহোবার সেবা করার কার্যভার গ্রহণ করতে এবং কঠিন পরিস্থিতি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে ইচ্ছুক। কিন্তু, একজন ব্যক্তি হয়তো এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারেন: ‘যিহোবার সেবায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার সুযোগের প্রতি আমার উপলব্ধিবোধ রয়েছে, কিন্তু তাঁর সেবায় ব্যক্তিগতভাবে আমার কাজ কি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ? আমি কাজ করি বা না-ই করি, যিহোবা কি তাঁর কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন না?’ আপনারও কি কখনো এইরকমটা মনে হয়েছে? অতীতে, বারক ও দবোরা নামে যিহোবার দু-জন দাসের জীবনের কিছু ঘটনা, কীভাবে আমাদের এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে, আসুন আমরা তা আলোচনা করি।
ঈশ্বর ভয়কে সাহসে পরিণত করেন
৬. কেন মনে হয়েছিল যে, যাবীনের সৈন্যবাহিনী সহজেই ইস্রায়েলীয়দের পরাজিত করতে পারবে?
৬ বারক ছিলেন একজন ইস্রায়েলীয় যোদ্ধা আর দবোরা ছিলেন একজন ভাববাদিনী। ২০ বছর ধরে ইস্রায়েলীয়রা যাবীন নামে এক কনানীয় রাজার কাছ থেকে “কঠোর দৌরাত্ম্য” সহ্য করছিল। যাবীনের সৈন্যবাহিনী এতটাই হিংস্র ও নিষ্ঠুর ছিল যে, ইস্রায়েলীয়রা এমনকী যে-জায়গাগুলোতে লুকিয়ে থাকত, সেই জায়গাগুলো থেকে বের হতেও ভয় পেত। যাবীনের সৈন্যবাহিনীর কাছে ৯০০টা যুদ্ধরথ ছিল কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের কাছে লড়াই করার জন্য কোনো উপযুক্ত অস্ত্র বা আত্মরক্ষার জন্য কোন যুদ্ধসজ্জা ছিল না।—বিচার. ৪:১-৩, ১৩; ৫:৬-৮.a
৭, ৮. (ক) বারকের প্রতি যিহোবার প্রথম নির্দেশনা কী ছিল? (খ) কীভাবে ইস্রায়েল যাবীনের সৈন্যবাহিনীকে পরাজিত করেছিল? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
৭ যাবীনের সৈন্যবাহিনীর তুলনায় ইস্রায়েলীয়দের দেখে মনে হয়েছিল, তারা খুবই দুর্বল এবং তাদের সহজেই পরাজিত করা যাবে। কিন্তু, যিহোবা ভাববাদিনী দবোরার মাধ্যমে বারককে এই আদেশ দিয়েছিলেন: “তাবোর পর্ব্বতে লোক লইয়া যাও, নপ্তালি-সন্তানগণের ও সবূলূন-সন্তানগণের দশ সহস্র লোক সঙ্গে করিয়া লও; তাহাতে আমি যাবীনের সেনাপতি সীষরাকে এবং তাহার রথ সকল ও লোকসমূহকে কীশোন নদীর সমীপে তোমার নিকটে আকর্ষণ করিব; এবং তাহাকে তোমার হস্তে সমর্পণ করিব।”—বিচার. ৪:৪-৭.
৮ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার জন্য যখন অনুরোধ জানানো হয়েছিল, তখন ১০,০০০ জন পুরুষ তাবোর পর্বতে একত্রিত হয়েছিল। এরপর, বারক ও তার লোকেরা শত্রুবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য তানক নামে এক স্থানে উপস্থিত হয়েছিলেন। (পড়ুন, বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৪:১৪-১৬.) যিহোবা কি ইস্রায়েলীয়দের সাহায্য করেছিলেন? হ্যাঁ। হঠাৎ করে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়ে শুষ্ক যুদ্ধক্ষেত্র কর্দমাক্ত হয়ে গিয়েছিল। এটাই ইস্রায়েলীয়দের জন্য সুফল এনে দিয়েছিল। বারক সীষরার সৈন্যবাহিনীকে ২৪ কিলোমিটার (১৫ মাইল) পর্যন্ত তাড়া করে হরোশৎ নামে এক স্থান পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন। যাওয়ার পথে কোনো এক জায়গায় সীষরার যুদ্ধরথ কাদার মধ্যে আটকে গিয়েছিল আর তিনি রথ থেকে নেমে সানন্নীম নামে এক স্থানে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সীষরা সেখানে যায়েল নামে এক মহিলার তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। যেহেতু সীষরা খুবই ক্লান্ত ছিলেন, তাই তিনি খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তিনি ঘুমিয়ে থাকার সময়, যায়েল সাহসের সঙ্গে তাকে হত্যা করেছিলেন। (বিচার. ৪:১৭-২১) এভাবে যিহোবা ইস্রায়েলীয়দেরকে তাদের শত্রুদের পরাজিত করার জন্য সাহায্য করেছিলেন!b
স্বেচ্ছাসেবকের কাজের প্রতি একেবার ভিন্ন মনোভাব
৯. বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৫:২০, ২১ পদ থেকে সীষরার বিরুদ্ধে যুদ্ধ সম্বন্ধে আমরা কী জানতে পারি?
৯ বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ বইয়ের ৪ অধ্যায়ে বর্ণিত ঘটনাগুলো সম্বন্ধে আরও জানার জন্য আমরা পরবর্তী অধ্যায়টা পড়তে পারি। বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৫:২০, ২১ পদ আমাদের জানায়: “আকাশমণ্ডল হইতে যুদ্ধ হইল, স্ব স্ব অয়নে তারাগণ সীষরার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিল। কীশোন নদী তাহাদিগকে ভাসাইয়া লইয়া গেল।” এর অর্থ কি এই যে, যুদ্ধের সময় স্বর্গদূতেরা ইস্রায়েলীয়দের সাহায্য করেছিল, কিংবা আকাশ থেকে কোনো উল্কাবৃষ্টি হয়েছিল? বাইবেল এই সম্বন্ধে কোনো কিছু ব্যাখ্যা করে না। কিন্তু, এইরকমটা চিন্তা করা হয়তো যুক্তিযুক্ত যে, যিহোবা তাঁর লোকেদের সাহায্য করার জন্য একেবারে সঠিক স্থানে ও সঠিক সময়ে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটিয়েছিলেন, যাতে ৯০০টা যুদ্ধরথ সহজেই চলাচল করতে না পারে। বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৪:১৪, ১৫ পদে আমরা তিন বার দেখতে পাই যে, ইস্রায়েলের বিজয়ের কৃতিত্ব যিহোবাকে দেওয়া হয়েছে। ১০,০০০ জন ইস্রায়েলীয় স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে কেউই এই বিজয়ের কৃতিত্ব নিতে পারে না।
১০, ১১. মেরোস আসলে কী ছিল আর কেন এটাকে অভিশাপ দেওয়া হয়েছিল?
১০ আসুন এখন আমরা অত্যন্ত আগ্রহজনক একটা বিষয় পরীক্ষা করি। ইস্রায়েল বিজয় লাভ করার পর, দবোরা ও বারক যিহোবার ধন্যবাদ করেছিলেন বা তাঁর উদ্দেশে প্রশংসা গান গেয়েছিলেন। তারা গেয়েছিলেন: “সদাপ্রভুর দূত বলেন, মেরোসকে শাপ দেও, তথাকার নিবাসীদিগকে দারুণ শাপ দেও; কেননা তাহারা আসিল না সদাপ্রভুর সাহায্যের জন্য, সদাপ্রভুর সাহায্যের জন্য, বিক্রমীদের বিরুদ্ধে।”—বিচার. ৫:২৩.
১১ মেরোস আসলে ঠিক কী ছিল? আমরা নিশ্চিতভাবে তা জানি না। কিন্তু, মেরোসকে যে-অভিশাপ দেওয়া হয়েছিল, তা এতটাই কার্যকরী হয়েছিল যে, এর সমস্ত কিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। হতে পারে মেরোস সেই নগর ছিল, যেখানকার লোকেরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বারকের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেয়নি। যেহেতু ১০,০০০ জন ব্যক্তি কনানীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছিল, তাই মেরোসের লোকেরাও নিশ্চয়ই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার জন্য যে-অনুরোধ জানানো হয়েছিল, সেটা শুনেছিল। কিংবা মেরোস সেই নগরও হতে পারে, যে-নগরের মধ্যে দিয়ে সীষরা বারকের কাছ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পালিয়ে গিয়েছিলেন। মেরোসের লোকেরা হয়তো সীষরাকে বন্দি করার সুযোগ পেয়েছিল কিন্তু তারা তা করেনি। কল্পনা করুন, তারা তাদের রাস্তা দিয়ে সেই হিংস্র যোদ্ধাকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখছে! যিহোবার উদ্দেশ্যকে সমর্থন করার জন্য তারা এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারত। তারা যদি তা করত, তা হলে যিহোবা তাদের পুরস্কৃত করতেন। কিন্তু, তারা যখন যিহোবার জন্য কিছু করার সুযোগ পেয়েছিল, তখন তারা কিছুই করেনি। এটা থেকে বোঝা যায়, মেরোসের লোকেদের মনোভাব যায়েলের মনোভাব থেকে একেবারে ভিন্ন ছিল, যিনি সাহসের সঙ্গে কাজ করেছিলেন।—বিচার. ৫:২৪-২৭.
১২. বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৫:৯, ১০ পদে লোকেদের মনোভাবের মধ্যে কোন পার্থক্য দেখা যায় আর এই বিষয়টা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১২ বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৫:৯, ১০ পদে আমরা দেখি যে, ১০,০০০ জন স্বেচ্ছাসেবকের মনোভাব সেই ব্যক্তিদের থেকে একেবারে ভিন্ন ছিল, যারা স্ব-ইচ্ছায় বা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেনি। দবোরা ও বারক “ইস্রায়েলের অধ্যক্ষগণের” প্রশংসা করেছিলেন, ‘যাঁহারা প্রজাদের মধ্যে স্ব-ইচ্ছায় আপনাদিগকে উৎসর্গ করিয়াছিলেন।’ তারা ‘শুভ্র গর্দ্দভীতে চড়িয়া থাকা’ সেই ব্যক্তিদের থেকে একেবারে ভিন্ন ছিল, যারা নিজেদের এতটাই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছিল যে, তারা স্বেচ্ছাসেবকের কাজকে নীচু চোখে দেখেছিল। এই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে এভাবে বলা হয়েছে যে, তারা ‘দুলিচার উপরে বসিয়া থাকে’ এবং ‘পথে ভ্রমণ করে’ অর্থাৎ এক আরামদায়ক জীবন উপভোগ করে। এর বিপরীতে, সেই স্বেচ্ছাসেবকেরা ইচ্ছুক মনে বারকের সঙ্গে তাবোরের শিলা পাহাড় এবং কীশোন উপত্যকার জলাভূমিতে লড়াই করতে গিয়েছিল। যারা এক সহজ জীবন পেতে চেয়েছিল, তাদের একটা বিষয় বিবেচনা করা উচিত ছিল। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যিহোবার কাজ না করার মাধ্যমে তারা যে-সুযোগগুলো হারিয়েছিল, সেগুলোর প্রতি তাদের মনোযোগ দেওয়ার এবং সেগুলো নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন ছিল। বর্তমানে, আমাদেরও ঈশ্বরের সেবার প্রতি নিজেদের মনোভাব পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন।
১৩. রূবেন, দান ও আশের বংশের লোকেদের মনোভাব কীভাবে সবূলূন ও নপ্তালি বংশের লোকেদের চেয়ে ভিন্ন ছিল?
১৩ সেই ১০,০০০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিজের চোখে এটা দেখার সুযোগ লাভ করেছিল, কীভাবে যিহোবা নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে কাজ করেন। তারা যখন অন্যদের কাছে “সদাপ্রভুর ধর্ম্মক্রিয়া” সম্বন্ধে কথা বলেছিল, তখন তারা সেই বিষয়ে উল্লেখ করতে পেরেছিল। (বিচার. ৫:১১) অন্যদিকে, রূবেন, দান ও আশের বংশের লোকেরা যিহোবার কাজের চেয়ে বরং তাদের ধনসম্পত্তির বিষয়ে, যেমন মেষপাল, জাহাজ ও পোতাশ্রয়ের বিষয়ে বেশি চিন্তিত ছিল। (বিচার. ৫:১৫-১৭) কিন্তু, সব বংশের লোকেরাই এইরকম ছিল না। সবূলূন ও নপ্তালি বংশের লোকেরা দবোরা ও বারককে সাহায্য করার জন্য নিজেদের ‘প্রাণ তুচ্ছ করিয়াছিল’ আর তা এমনকী “মৃত্যু পর্যন্ত।” (বিচার. ৫:১৮) স্বেচ্ছাসেবকের কাজের প্রতি ভিন্ন ভিন্ন এই মনোভাব থেকে আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারি।
“সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর”
১৪. বর্তমানে, কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা যিহোবার শাসনের পক্ষসমর্থন করি?
১৪ বর্তমানে, আমরা লড়াই করার মাধ্যমে যিহোবার শাসনের পক্ষসমর্থন করি না। এর পরিবর্তে, আমরা সাহস ও উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করার মাধ্যমে দেখাই যে, আমরা তাঁর শাসনের পক্ষসমর্থন করি। যিহোবার কাজ করার জন্য এখন আগের চেয়ে আরও বেশি স্বেচ্ছাসেবকের প্রয়োজন। লক্ষ লক্ষ ভাই ও বোন বিভিন্ন ধরনের পূর্ণসময়ের সেবায় নিজেদের বিলিয়ে দিচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ, তারা অগ্রগামী, বেথেলকর্মী এবং কিংডম হল নির্মাণ প্রকল্পের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সেবা করছে। আর অনেকে, যুবক ও বৃদ্ধ সকলেই, সম্মেলনগুলোতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে থাকে। কোনো কোনো প্রাচীন হসপিটাল লিয়েইজন কমিটি-র সদস্য হিসেবে এবং বিভিন্ন সম্মেলন সংগঠিত করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে থাকেন। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, প্রয়োজনীয় যেকোনো উপায়ে তাঁকে সেবা করার বিষয়ে আমাদের ইচ্ছুক মনোভাবকে যিহোবা মূল্যবান বলে মনে করেন এবং তিনি আমাদের প্রচেষ্টা ভুলে যাবেন না।—ইব্রীয় ৬:১০.
১৫. কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, যিহোবার কাজের জন্য আমরা আমাদের উদ্যম হারিয়ে ফেলছি না?
১৫ আমাদের প্রত্যেকেরই স্বেচ্ছাসেবকের কাজের প্রতি নিজেদের মনোভাব পরীক্ষা করে দেখতে হবে। আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘আমি কি বেশিরভাগ কাজ কেবল অন্যদেরই করতে দেখে সন্তুষ্ট থাকি? আমি কি যিহোবাকে সেবা করার চেয়ে বস্তুগত বিষয় লাভ করার জন্য বেশি উদ্বিগ্ন? না কি আমি যিহোবাকে সেবা করার জন্য আমার যা আছে, তা ব্যবহার করার মাধ্যমে বারক, দবোরা, যায়েল এবং ১০,০০০ জন স্বেচ্ছাসেবকের বিশ্বাস ও সাহসকে অনুকরণ করছি? আমি কি আরও বেশি টাকাপয়সা উপার্জন করার এবং আরও উত্তম জীবন লাভ করার জন্য অন্য একটা শহরে বা দেশে যাওয়ার কথা চিন্তা করছি? যদি তা-ই হয়, তা হলে এই বিষয়টা আমার পরিবার ও মণ্ডলীর উপর কেমন প্রভাব ফেলবে, সেই সম্বন্ধে আমি কি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করছি?’c
১৬. যদিও যিহোবার কাছে সব কিছু রয়েছে, তবুও আমরা তাঁকে কী দিতে পারি?
১৬ যিহোবা তাঁর শাসনের পক্ষসমর্থন করার সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের এক অসাধারণ সম্মান প্রদান করেছেন। আদম ও হবার সময় থেকে দিয়াবল চেয়েছে, যেন মানুষ তার পক্ষে থেকে যিহোবার বিরুদ্ধাচরণ করে। কিন্তু, আমরা যখন যিহোবার শাসনের পক্ষসমর্থন করি, তখন আমরা শয়তানকে স্পষ্টভাবে দেখাই যে, আমরা আসলে কার পক্ষে রয়েছি। আমাদের বিশ্বাস ও আনুগত্য যিহোবার সেবায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার জন্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে আর এই বিষয়টা তাঁকে অত্যন্ত খুশি করে। (হিতো. ২৩:১৫, ১৬) আমাদের অনুগত সমর্থন ও বাধ্যতা, ঈশ্বরকে শয়তানের টিটকারির উত্তর দেওয়ার সুযোগ করে দেয়। (হিতো. ২৭:১১) অনুগতভাবে বাধ্যতা দেখানোর মাধ্যমে আমরা আসলে যিহোবাকে এমন কিছু প্রদান করি, যেটাকে তিনি মূল্যবান বলে মনে করেন এবং যেটা তাঁর জন্য প্রচুর আনন্দ নিয়ে আসে।
১৭. ভবিষ্যতে যা ঘটবে, সেই সম্বন্ধে বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৫:৩১ পদ আমাদের কী শিক্ষা দেয়?
১৭ শীঘ্রই পৃথিবীর সমস্ত লোক অন্য যেকোনো শাসনের চেয়ে বরং যিহোবার শাসনকে বেছে নেবে। সেই সময়ের জন্য আমরা কত অধীর আগ্রহেই-না অপেক্ষা করে আছি! আমাদের অনুভূতিও দবোরা ও বারকের মতো, যারা গেয়েছিলেন: “হে সদাপ্রভু, তোমার সর্ব্ব শত্রু এইরূপে বিনষ্ট হউক, কিন্তু তোমার প্রেমকারিগণ সপ্রতাপে গমনকারী সূর্য্যের সদৃশ হউক।” (বিচার. ৫:৩১) এটা সেইসময়ে ঘটবে, যখন যিহোবা শয়তানের দুষ্ট জগৎকে ধ্বংস করে দেবেন। যখন আরমাগিদোনের যুদ্ধ শুরু হবে, তখন শত্রুদের বিনষ্ট করার জন্য যিহোবার কোনো মানব স্বেচ্ছাসেবকের প্রয়োজন হবে না। এর পরিবর্তে, আমরা ‘দাঁড়াইয়া থাকিব’ এবং ‘সদাপ্রভু যে নিস্তার করিবেন, তাহা দেখিব।’ (২ বংশা. ২০:১৭) সেই সময় না আসা পর্যন্ত, সাহস ও উদ্যোগের সঙ্গে যিহোবার শাসনের পক্ষসমর্থন করার জন্য আমাদের বিভিন্ন চমৎকার সুযোগ রয়েছে।
১৮. স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আপনার কাজ কীভাবে অন্যদের জন্য উপকার নিয়ে আসতে পারে?
১৮ দবোরা ও বারক মানুষের নয় বরং যিহোবার ধন্যবাদ বা প্রশংসা করার মাধ্যমে তাদের বিজয়সংগীত শুরু করেছিলেন। তারা গেয়েছিলেন: “প্রজারা স্ব-ইচ্ছায় আপনাদিগকে উৎসর্গ করিল, এজন্য তোমরা সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর।” (বিচার. ৫:১, ২) একইভাবে, আমরা যখন প্রয়োজনীয় যেকোনো উপায়ে যিহোবাকে সেবা করব, তখন অন্যেরাও হয়তো ‘সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করিবার’ জন্য উৎসাহিত হবে।
a সেই যুদ্ধরথগুলোতে ধারালো, লম্বা এবং কখনো কখনো বাঁকানো ব্লেড লাগানো থাকতো, যা সম্ভবত চাকার মাঝখান দিয়ে বেরিয়ে থাকতো। এর ফলে, রথগুলো চলার সময় সেগুলো এক ধ্বংসাত্মক মেশিনে পরিণত হতো।
b এই রোমাঞ্চকর ঘটনাগুলো সম্বন্ধে আরও জানার জন্য আপনি ২০০৩ সালের ১৫ নভেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২৮-৩১ পৃষ্ঠায় দেওয়া “বিশ্বাসে বারক এক পরাক্রমশালী সেনাবাহিনীকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন” প্রবন্ধটা দেখতে পারেন।
c ২০১৫ সালের অক্টোবর–ডিসেম্বর মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় “দুশ্চিন্তার কারণ যখন টাকাপয়সা” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।