যতই শেষ নিকটবর্তী হচ্ছে “সংযত” হওয়া
“সকল বিষয়ের পরিণাম সন্নিকট; অতএব সংযমশীল হও।”—১ পিতর ৪:৭.
১. “সংযমশীল” হওয়ার সাথে কী জড়িত?
প্রেরিত পিতরের উপরোক্ত কথাগুলির খ্রীষ্টানেরা যেভাবে তাদের জীবন যাপন করে তার উপর এক গভীর প্রভাব থাকা উচিত। কিন্তু, পিতর তার পাঠকদের পার্থিব দায়িত্ব এবং জীবনের উদ্বেগগুলি থেকে পশ্চাদপসরণ করতে বলেননি; অথবা তিনি আসন্ন ধ্বংসে অত্যন্ত ভয় করতেও উৎসাহিত করেননি। বরঞ্চ, তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন: “সংযমশীল হও।” “সংযমশীল” হওয়া উত্তম বিচার প্রদর্শন, সুবুদ্ধিপূর্ণ হওয়া, সুবিবেচনাপূর্ণ, আমাদের কথা এবং কাজে যুক্তিবাদী হওয়াকে জড়িত করে। এর অর্থ ঈশ্বরের বাক্যকে আমাদের চিন্তা এবং কাজে কর্তৃত্ব করতে দেওয়া। (রোমীয় ১২:১২) যেহেতু আমরা “কুটিল ও বিপথগামী লোকদের মধ্যে” বাস করি, তাই সমস্যা এবং সংকটগুলি প্রতিহত করার জন্য সংযমশীল হওয়া প্রয়োজন।—ফিলিপীয় ২:১৫.
২. যিহোবার দীর্ঘসহিষ্ণুতা কিভাবে আজকে খ্রীষ্টানদের উপকৃত করে?
২ এছাড়া “সংযত” হওয়া আমাদের নিজেদের সম্বন্ধে সংযমী, নিজেদের সম্বন্ধে এক বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিতে সাহায্য করে। (তীত ২:১২; রোমীয় ১২:৩) ২ পিতর ৩:৯ পদে লিপিবদ্ধ বাক্যগুলির পরিপ্রেক্ষিতে এটি অত্যাবশ্যক: “প্রভু [“যিহোবা,” NW] নিজ প্রতিজ্ঞা বিষয়ে দীর্ঘসূত্রী নহেন—যেমন কেহ কেহ দীর্ঘসূত্রিতা জ্ঞান করে—কিন্তু তোমাদের পক্ষে তিনি দীর্ঘসহিষ্ণু; কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা তাঁহার নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা।” লক্ষ্য করুন যে যিহোবা দীর্ঘসহিষ্ণু, কেবলমাত্র অবিশ্বাসীদের ক্ষেত্রে নয়, কিন্তু “তোমাদের পক্ষে”—খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর সদস্যদের ক্ষেত্রে। কেন? কারণ “কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা তাঁহার নাই।” কিছু ব্যক্তির অনন্ত জীবনের দানের যোগ্য হওয়ার জন্য হয়ত এখনও পরিবর্তন এবং সমন্বয়সাধনের প্রয়োজন রয়েছে। অতএব, আসুন আমরা সেই ক্ষেত্রগুলি লক্ষ্য করি যেখানে হয়ত সমন্বয়সাধন করার প্রয়োজন রয়েছে।
আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলির ক্ষেত্রে “সংযত” হওয়া
৩. পিতামাতারা তাদের সন্তানদের সম্বন্ধে কোন্ প্রশ্নগুলি জিজ্ঞাসা করতে পারেন?
৩ গৃহ, শান্তির এক আশ্রয়স্থল হওয়া উচিত। কিন্তু কারও কারও কাছে এটি এক “বিবাদযুক্ত . . . গৃহ” হয়ে ওঠে। (হিতোপদেশ ১৭:১) আপনার পরিবার সম্বন্ধে কী? আপনার গৃহ কি “রোষ, ক্রোধ, কলহ” থেকে মুক্ত? (ইফিষীয় ৪:৩১) আপনার সন্তানদের সম্বন্ধে কী? তাদের যে ভালবাসা এবং উপলব্ধি করা হয়, তারা কি তা অনুভব করে? (লূক ৩:২২ পদের সাথে তুলনা করুন।) তাদের নির্দেশনা এবং প্রশিক্ষণ দিতে আপনি কি সময় রাখেন? আপনি কি প্রচণ্ড ক্রোধ এবং রাগ করার পরিবর্তে ‘ধার্ম্মিকতায় শাসন’ করেন? (২ তীমথিয় ৩:১৬) যেহেতু সন্তানেরা “সদাপ্রভুদত্ত অধিকার,” তাই তাদের সাথে কিভাবে আচরণ করা হয় সেই সম্বন্ধে তিনি ঐকান্তিকভাবে আগ্রহী।—গীতসংহিতা ১২৭:৩.
৪. (ক) একজন স্বামী যদি তার স্ত্রীর সাথে রূঢ়ভাবে আচরণ করে, তবে ফল কী হতে পারে? (খ) স্ত্রীরা কিভাবে ঈশ্বরের সাথে এবং সমগ্র পরিবারের সুখ উন্নীত করতে পারে?
৪ আমাদের বিবাহ সাথীর সম্বন্ধে কী? “স্বামীরাও আপন আপন স্ত্রীকে আপন আপন দেহ বলিয়া প্রেম করিতে বাধ্য। আপন স্ত্রীকে যে প্রেম করে, সে আপনাকেই প্রেম করে। কেহ ত কখনও নিজ মাংসের প্রতি দ্বেষ করে নাই, বরং সকলে তাহার ভরণ পোষণ ও লালন পালন করে; যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর প্রতি করিতেছেন।” (ইফিষীয় ৫:২৮, ২৯) একজন গালিগালাজপূর্ণ, দাম্ভিক অথবা অযুক্তিবাদী লোক শুধু তার গৃহের শান্তিকেই বিপন্ন করে না কিন্তু ঈশ্বরের সাথে তাঁর সম্পর্কেরও ক্ষতিসাধন করে। (১ পিতর ৩:৭) স্ত্রীদের সম্বন্ধে কী? অনুরূপভাবে তাদেরও “যেমন প্রভুর, তেমনি নিজ নিজ স্বামীর বশীভূতা” হওয়া উচিত। (ইফিষীয় ৫:২২) ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে চিন্তা করা একজন স্ত্রীকে তার স্বামীর ত্রুটি এড়াতে এবং বিরক্তি ছাড়া তার স্বামীর বশীভূতা হতে সাহায্য করতে পারে। মাঝে মাঝে, একজন স্ত্রী হয়ত তার মনের কথা বলতে বাধ্য হতে পারে। হিতোপদেশ ৩১:২৬ পদ গুণবতী স্ত্রীর সম্বন্ধে বলে: “তিনি প্রজ্ঞার সহিত মুখ খোলেন, তাঁহার জিহ্বাগ্রে দয়ার ব্যবস্থা থাকে।” তার স্বামীর সাথে এক দয়ালু, সম্মানজনক আচরণ করার মাধ্যমে তিনি ঈশ্বরের সাথে শান্তি বজায় রাখেন এবং সমগ্র পরিবারের সুখ উন্নীত করেন।—হিতোপদেশ ১৪:১.
৫. তাদের পিতামাতাদের সাথে আচরণ সম্বন্ধে যুবক-যুবতীদের কেন বাইবেলের পরামর্শ অনুসরণ করা উচিত?
৫ ছোটরা, তোমরা তোমাদের পিতামাতার সাথে কিরূপ আচরণ কর? তোমরা কি প্রায়ই জগতের দ্বারা অনুমোদিত ব্যঙ্গপূর্ণ, অসম্মানজনক কথাবার্তা ব্যবহার কর? অথবা তোমরা কি বাইবেলের এই আদেশ মান্য কর: “সন্তানেরা, তোমরা প্রভুতে পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও, কেননা তাহা ন্যায্য। ‘তোমার পিতাকে ও তোমার মাতাকে সমাদর করিও,’—এ ত প্রতিজ্ঞাসহযুক্ত প্রথম আজ্ঞা—‘যেন তোমার মঙ্গল হয়, এবং তুমি দেশে দীর্ঘায়ু হও?’”—ইফিষীয় ৬:১-৩.
৬. সহউপাসকদের সাথে আমরা কিভাবে শান্তির চেষ্টা করতে পারি?
৬ আমরা তখনও “সংযত” মনোভাব প্রদর্শন করি যখন আমরা সহউপাসকদের সাথে ‘শান্তির চেষ্টা করি ও তাহার অনুধাবন করি।’ (১ পিতর ৩:১১) সময় সময় মতভেদ এবং ভুলবোঝাবুঝি দেখা দেয়। (যাকোব ৩:২) শত্রুতাকে যদি কলুষিত হতে অনুমোদন করা হয়, তবে সমগ্র মণ্ডলী ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। (গালাতীয় ৫:১৫) তাই তাড়াতাড়ি বিবাদ মিটিয়ে ফেলুন; শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করুন।—মথি ৫:২৩-২৫; ইফিষীয় ৪:২৬; কলসীয় ৩:১৩, ১৪.
“সংযত” হওয়া এবং পারিবারিক দায়িত্বগুলি
৭. (ক) সাধারণ বিষয়ে “সংযম” দেখানোর ক্ষেত্রে পৌল কিভাবে উৎসাহিত করেছিলেন? (খ) গৃহস্থালীর দায়িত্বগুলির প্রতি খ্রীষ্টীয় স্বামী এবং স্ত্রীদের কোন্ মনোভাব থাকা উচিত?
৭ প্রেরিত পৌল খ্রীষ্টানদের “সংযত . . . জীবন যাপন” করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। (তীত ২:১২) এটি আগ্রহের বিষয় যে পৌল প্রসঙ্গটিতে নারীদের “পতিপ্রিয়া, সন্তানপ্রিয়া, সংযতা, সতী, গৃহকার্য্যে ব্যাপৃতা” হতে পরামর্শ দেন। (তীত ২:৪, ৫) পৌল সেই বিষয়টি সা.কা. ৬১-৬৪ সালে, যিহূদী বিধিব্যবস্থা ধ্বংস হওয়ার অল্প কয়েক বছর পূর্বে লিখেছিলেন। তবুও, সাধারণ বিষয়গুলি যেমন, গৃহস্থালীর কাজ তখনও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই স্বামী এবং স্ত্রী উভয়েরই তাদের গৃহস্থালীর দায়িত্বগুলিতে এক স্বাস্থ্যকর, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখা উচিত যাতে করে “ঈশ্বরের বাক্য নিন্দিত না হয়।” একজন পরিবারের মস্তক এক অতিথির কাছে তার গৃহের অপ্রস্তুতজনক পরিস্থিতির জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে এটি দুর্দশাগ্রস্ত ছিল কারণ “তিনি অগ্রগামীর কাজ করছিলেন।” যখন আমরা রাজ্যের জন্য ত্যাগস্বীকার করি তখন তা প্রশংসনীয় কিন্তু, আমাদের পরিবারগুলির মঙ্গলকে উপেক্ষা করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক হওয়া উচিত।
৮. পরিবারের মস্তকেরা কিভাবে ভারসাম্যপূর্ণ উপায়ে তাদের পরিবারগুলির প্রতি যত্ন নিতে পারেন?
৮ বাইবেল পিতাদের তাদের পরিবারকে প্রাধান্য দিতে পরামর্শ দেয়, এটি বলার দ্বারা, যে একজন ব্যক্তি যে তার পরিবারের ভরণপোষণ করতে ব্যর্থ হয় সে “বিশ্বাস অস্বীকার করিয়াছে, এবং অবিশ্বাসী অপেক্ষা অধম হইয়াছে।” (১ তীমথিয় ৫:৮) জগতের সর্বত্র জীবনযাত্রার মান বিভিন্ন হয় এবং বস্তুগত প্রত্যাশাগুলি পরিমিত রাখা ভাল। হিতোপদেশ ৩০:৮ পদের লেখক প্রার্থনা করেছিলেন, “দরিদ্রতা বা ঐশ্বর্য্য আমাকে দিও না।” কিন্তু, পিতামাতাদের তাদের সন্তানদের বস্তুগত প্রয়োজনগুলি অবহেলা করা উচিত নয়। উদাহরণস্বরূপ, ঐশিক সুযোগগুলিকে অনুধাবন করার জন্য একজনের পরিবারকে জীবনের মৌলিক প্রয়োজনীয়তাগুলি স্বেচ্ছায় না প্রদান করা কি বিজ্ঞতার কাজ হবে? এটি কি একজনের সন্তানকে বিরক্ত করে না? অপর দিকে, হিতোপদেশ ২৪:২৭ পদ বলে: “বাহিরে তোমার কার্য্যের আয়োজন কর, ক্ষেত্রে আপনার জন্য তাহা সম্পন্ন কর, পরে তোমার ঘর বাঁধ।” হ্যাঁ, যদিও বস্তুগত জিনিসের জন্য এর স্থান রয়েছে, তবুও ‘একজনের ঘর বাঁধা—আধ্যাত্মিক এবং আবেগগতভাবে—অত্যাবশ্যক।
৯. পরিবারের মস্তকদের কেন তাদের সম্ভাব্য মৃত্যু অথবা অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনা করা বিজ্ঞের কাজ?
৯ যদি আপনার অসময়ে মৃত্যু হয়, আপনি কি আপনার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য ব্যবস্থা করেছেন? হিতোপদেশ ১৩:২২ পদ বলে: “সৎ লোক পুত্ত্রদের পুত্ত্রগণের জন্য অধিকার রাখিয়া যায়।” যিহোবার কাছ থেকে জ্ঞান এবং তাঁর সাথে এক সম্পর্ক অর্জন ছাড়াও পিতামাতারা তাদের সন্তানদের বস্তুগত সম্পদ সরবরাহের প্রতি আগ্রহী হবেন। অনেক দেশে পরিবারের দায়িত্বশীল মস্তকেরা কিছু সঞ্চয়, একটি বৈধ দলিল এবং জীবন বীমা রাখতে চেষ্টা করবেন। সর্বোপরি, ঈশ্বরের লোকেরা “কাল ও দৈব” থেকে মুক্ত নয়। (উপদেশক ৯:১১) অর্থ “আশ্রয়” এবং যত্নপূর্বক পরিকল্পনা কষ্টকে প্রতিহত করতে পারে। (উপদেশক ৭:১২) কিছু দেশগুলিতে যেখানে চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছ থেকে ভাতা পাওয়া যায় না, কেউ কেউ হয়ত স্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা অথবা স্বাস্থ্যের নিরাপত্তাবিধানের জন্য কিছু পুঁজি আলাদা করে রাখাকে মনোনয়ন করে।a
১০. খ্রীষ্টীয় পিতামাতারা কিভাবে তাদের সন্তানদের জন্য “ধন সঞ্চয়” করতে পারেন?
১০ শাস্ত্র আরও বলে: “পিতা মাতার জন্য ধন সঞ্চয় করা সন্তানদের কর্ত্তব্য নয়, বরং সন্তানদের জন্য পিতামাতার কর্ত্তব্য।” (২ করিন্থীয় ১২:১৪) জগতে পিতামাতাদের তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের শিক্ষা এবং বিবাহের জন্য অর্থ সঞ্চয় করা সাধারণ বিষয়, যাতে করে তা তাদের জীবনে এক উত্তম সূচনা দিতে পারে। আপনার সন্তানের আধ্যাত্মিক ভবিষ্যৎ সঞ্চয়ের বিষয়ে কি আপনি চিন্তা করেছেন? উদাহরণস্বরূপ, ধরুন, প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান পূর্ণ-সময় পরিচর্যা অনুধাবন করছে। যদিও, পূর্ণ-সময়ের সেবকদের বাইরের সাহায্য দাবি অথবা প্রত্যাশা করা উচিত নয়, তবুও প্রেমময় পিতামাতারা তাকে পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যায় রত থাকতে সাহায্য করার জন্য ‘তার অভাবের সহভাগী’ হওয়া মনোনয়ন করবেন।—রোমীয় ১২:১৩; ১ শমূয়েল ২:১৮, ১৯; ফিলিপীয় ৪:১৪-১৮.
১১. অর্থের প্রতি বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি থাকা কি বিশ্বাসের অভাবকে ইঙ্গিত করে? ব্যাখ্যা করুন।
১১ অর্থের প্রতি বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি ইঙ্গিত করে না যে শয়তানের দুষ্ট বিধিব্যবস্থা যে শেষের নিকটবর্তী সেই ক্ষেত্রে বিশ্বাসের অভাব রয়েছে। এটি কেবলমাত্র “সূক্ষ্ম বুদ্ধি” এবং বিচক্ষণ বিচার দেখানোর বিষয়। (হিতোপদেশ ২:৭; ৩:২১) যীশু একবার বলেছিলেন যে “এই যুগের সন্তানেরা . . . দীপ্তির সন্তানগণ অপেক্ষা বুদ্ধিমান।” (লূক ১৬:৮) তাই, আশ্চর্যের বিষয় নয় যে কেউ কেউ তারা যেভাবে তাদের সম্পদ ব্যবহার করে সেই ক্ষেত্রে কিছু সমন্বয়সাধনের প্রয়োজনীয়তা দেখেছে যাতে করে তারা তাদের পরিবারগুলির প্রতি আরও ভালভাবে যত্ন নিতে পারে।
আমাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে “সংযত” হওয়া
১২. যীশু কিভাবে তাঁর শিষ্যদের নতুন পরিস্থিতিগুলিতে মানিয়ে নিতে শিক্ষা দিয়েছিলেন?
১২ “এই সংসারের অভিনয় অতীত হইতেছে” এবং বহুবিস্তৃত অর্থনৈতিক পরিবর্তন এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নগুলি দ্রুত সংঘটিত হচ্ছে। (১ করিন্থীয় ৭:৩১) কিন্তু, যীশু তাঁর শিষ্যদের মানিয়ে নিতে শিক্ষা দিয়েছিলেন। যখন তিনি তাদের প্রথম প্রচার অভিযানে পাঠিয়েছিলেন, তিনি তাদের বলেছিলেন: “তোমাদের গেঁজিয়ায় স্বর্ণ কি রৌপ্য কি পিত্তল, এবং যাত্রার জন্য থলি কি দুইটী আঙ্রাখা কি পাদুকা কি যষ্টি, এ সকলের আয়োজন করিও না; কেননা কার্য্যকারী নিজ আহারের যোগ্য।” (মথি ১০:৯, ১০) কিন্তু, পরবর্তী এক ঘটনায়, যীশু বলেছিলেন: “যাহার থলী আছে, সে তাহা গ্রহণ করুক, সেইরূপ ঝুলিও গ্রহণ করুক।” (লূক ২২:৩৬) কী পরিবর্তিত হয়েছিল? পরিস্থিতিগুলি। ধর্মীয় পরিবেশ অধিকতর প্রতিকূল হয়ে পড়েছিল আর তাই তাদের নিজেদের জন্য ব্যবস্থা করতে হয়েছিল।
১৩. শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য কী এবং এই বিষয়ে পিতামাতারা কিভাবে তাদের সন্তানদের জন্য সমর্থনকারী হতে পারেন?
১৩ অনুরূপভাবে আজকেও, পিতামাতাদের হয়ত বর্তমানের অর্থনৈতিক বাস্তবতাগুলিকে বিবেচনা করার প্রয়োজন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপনার সন্তানেরা পর্যাপ্ত শিক্ষা পাচ্ছে কি না আপনি কি তা লক্ষ্য করছেন? যুবক-যুবতীদের যিহোবার একজন কার্যকারী পরিচারক হতে সজ্জিত করা শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। আর সমস্ত কিছুর চেয়েও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হল আধ্যাত্মিক শিক্ষা। (যিশাইয় ৫৪:১৩) পিতামাতারা তাদের সন্তানদের নিজেদেরকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করার ক্ষমতা সম্বন্ধেও উদ্বিগ্ন। তাই আপনার সন্তানদের নির্দেশনা দিন, বিদ্যালয়ে সঠিক বিষয়গুলি মনোনীত করতে তাদের সাহায্য করুন এবং কোন সম্পূরক শিক্ষা অনুধাবন করা বিজ্ঞতার কাজ হবে কি না, সেই সম্বন্ধে তাদের সাথে আলোচনা করুন। এইধরনের দায়িত্বগুলি পারিবারিক দায়িত্ব এবং অন্যান্যদের গৃহীত সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে সমালোচনা করা উচিত নয়। (হিতোপদেশ ২২:৬) যারা তাদের সন্তানদের গৃহে শিক্ষা দান করা মনোনীত করেছেন, তাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়?b যদিও অনেকে এই ক্ষেত্রে এক প্রশংসনীয় কাজ করেছে, তবুও কেউ কেউ এটিকে কল্পনাতীতভাবে কঠিন মনে করেছে আর তাদের সন্তানেরা এর জন্য কষ্ট ভোগ করেছে। তাই আপনি যদি গৃহে শিক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে থাকেন তবে এর ঝুঁকি সম্বন্ধে নিশ্চিত হোন, আপনার দক্ষতা এবং আত্ম-শাসন উভয়ই রয়েছে কি না যুক্তিসংগতভাবে তা বিবেচনা করুন।—লূক ১৪:২৮.
‘মহৎ মহৎ বিষয়ের চেষ্টা করিও না’
১৪, ১৫. (ক) বারূক কিভাবে তার আধ্যাত্মিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন? (খ) ‘মহৎ মহৎ বিষয়ের চেষ্টা করা’ কেন তার জন্য মূর্খতা ছিল?
১৪ যেহেতু এই বিধিব্যবস্থার শেষ এখনও আসেনি, তাই কেউ কেউ হয়ত জগৎ যা প্রদান করে তা পূর্ণ করার প্রবণতা দেখায়—মর্যাদাজনক কাজ, লাভজনক চাকুরি এবং ধনসম্পদ। যিরমিয়ের সচিব বারূকের কথা বিবেচনা করুন। তিনি বিলাপ করেছিলেন: “হায় হায়, ধিক্ আমাকে! কেননা সদাপ্রভু আমার ব্যথার উপরে দুঃখ যোগ করিয়াছেন; আমি কোঁকাইতে কোঁকাইতে শ্রান্ত হইয়াছি, কিছুমাত্র বিশ্রাম পাইতেছি না।” (যিরমিয় ৪৫:৩) বারূক ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। যিরমিয়ের সচিব হিসাবে কাজ করা একটি কঠিন, পীড়নকর কাজ ছিল। (যিরমিয় ৩৬:১৪-২৬) আর চাপের কোন শেষ ছিল না। এটি যিরূশালেম ধ্বংসের ১৮ বছর পূর্বে ছিল।
১৫ যিহোবা বারূককে বলেছিলেন: “দেখ, আমি যাহা গাঁথিয়াছি, তাহা আমি ভাঙ্গিয়া ফেলিব; যাহা রোপণ করিয়াছি, তাহা আমি উৎপাটন করিব; আর এই সমগ্র দেশে উহা করিব। তবে তুমি কি আপনার জন্য মহৎ মহৎ বিষয় চেষ্টা করিবে? সে চেষ্টা করিও না।” বারূক তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি ‘নিজের জন্য মহৎ মহৎ বিষয়ের চেষ্টা করতে’ শুরু করেছিলেন, হয়ত সম্পদ, মর্যাদা অথবা বস্তুগত নিরাপত্তা। যেহেতু যিহোবা ‘উৎপাটন করছিলেন; আর এই সমগ্র দেশে উহা করছিলেন,’ তাহলে এই বিষয়গুলির চেষ্টা করার লাভ কী? তাই যিহোবা বারূককে এই গুরুত্বপূর্ণ অনুস্মারক দিয়েছিলেন: “কেননা দেখ, আমি সমস্ত মর্ত্ত্যের প্রতি অমঙ্গল ঘটাইব, . . . কিন্তু তুমি যে সকল স্থানে যাইবে, সে সকল স্থানে লুট দ্রব্যের ন্যায় তোমার প্রাণ তোমাকে দিব।” বস্তুগত সম্পদ যিরূশালেমকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে পারত না! যিহোবা নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন “লুট দ্রব্যের ন্যায় তোমার প্রাণ” নেওয়ার মাধ্যমে কেবল পরিত্রাণ।—যিরমিয় ৪৫:৪, ৫.
১৬. বারূকের অভিজ্ঞতা থেকে আজকে যিহোবার লোকেরা কোন্ শিক্ষা লাভ করতে পারে?
১৬ বারূক যিহোবার সংশোধনে মনোযোগ দিয়েছিলেন এবং যিহোবার প্রতিজ্ঞার সত্যতাস্বরূপ বারূক তার জীবন রক্ষা করতে পেরেছিলেন। (যিরমিয় ৪৩:৬, ৭) আজকে যিহোবার লোকেদের জন্য কতই না এক জোরালো শিক্ষা! ‘নিজের জন্য মহৎ মহৎ বিষয়ের চেষ্টা করার’ সময় এখন নয়। কেন? কারণ “জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে।”—১ যোহন ২:১৭.
বাকি সময়ের সদ্ব্যবহার করা
১৭, ১৮. (ক) নীনবীয়রা যখন অনুতপ্ত হয়েছিল, যোনা কিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? (খ) যিহোবা যোনাকে কী শিক্ষা দিয়েছিলেন?
১৭ তাহলে, কিভাবে আমরা বাকি সময়ের সদ্ব্যবহার করতে পারি? ভাববাদী যোনার অভিজ্ঞতা থেকে শিখুন। তিনি “নীনবীতে গেলেন। . . . , এবং ঘোষণা করিলেন, বলিলেন, ‘আর চল্লিশ দিন গত হইলে নীনবী উৎপাটিত হইবে।’” যোনাকে চমৎকৃত করে, নীনবীয়রা তার বার্তায় সাড়া দিয়েছিল এবং অনুতপ্ত হয়েছিল! যিহোবা সেই নগরকে ধ্বংস করার থেকে বিরত হয়েছিলেন। যোনার প্রতিক্রিয়া কী ছিল? “হে সদাপ্রভু, বিনতি করি, আমা হইতে আমার প্রাণ হরণ কর, কেননা আমার জীবন অপেক্ষা মরণ ভাল।”—যোনা ৩:৩, ৪; ৪:৩.
১৮ তারপর যিহোবা যোনাকে এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি “এক এরণ্ড গাছ নিরূপণ করিলেন; আর সেই গাছটী বাড়াইয়া যোনার উপরে আনিলেন, যেন তাঁহার মস্তকের উপরে ছায়া হয়, . . . আর যোনা সেই এরণ্ড গাছটীর জন্য বড় আহ্লাদিত হইলেন।” যেহেতু গাছটি শীঘ্রই শুকিয়ে গিয়েছিল, তাই যোনার আনন্দ অল্প সময়ের জন্যই ছিল। যোনা অস্বাচ্ছন্দ্যতার জন্য হতাশায় ‘ক্রোধী’ হয়ে পড়েন। যিহোবা তাঁর বিষয়টির উপর জোর দিয়েছিলেন, এই বলে: “তথাপি তুমি ইহার প্রতি দয়ার্দ্র হইয়াছ। . . . আমি কি নীনবীর প্রতি, ঐ মহানগরের প্রতি, দয়ার্দ্র হইব না? তথায় এমন এক লক্ষ বিংশতি সহস্রের অধিক মনুষ্য আছে, যাহারা দক্ষিণ হস্ত হইতে বাম হস্তের প্রভেদ জানে না; আর অনেক পশুও আছে।”—যোনা ৪:৬, ৭, ৯-১১.
১৯. কোন্ আত্ম-কেন্দ্রীক চিন্তাধারা আমরা পরিহার করতে চাই?
১৯ যোনার যুক্তি কতই না আত্ম-কেন্দ্রীক ছিল! তিনি একটি গাছের জন্য দুঃখিত হয়েছিলেন কিন্তু তিনি নীনবীর লোকেদের জন্য একটুও অনুকম্পা অনুভব করেননি—যে লোকেরা আধ্যাত্মিকভাবে বলতে গেলে ‘দক্ষিণ হস্ত হইতে বাম হস্তের প্রভেদ জানিত না।’ অনুরূপভাবে আমরাও এই দুষ্ট জগতের ধ্বংস সম্বন্ধে আকাঙ্ক্ষী হতে পারি এবং তা যথার্থ! (২ থিষলনীকীয় ১:৮) এর অপেক্ষায় থাকার সময়ে, আমাদের একটি দায়িত্ব রয়েছে সৎহৃদয়সম্পন্ন ব্যক্তিদের সাহায্য করার, যারা আধ্যাত্মিক অর্থে, ‘দক্ষিণ হস্ত হইতে বাম হস্তের প্রভেদ’ জানে না। (মথি ৯:৩৬; রোমীয় ১০:১৩-১৫) যত লোককে সম্ভব যিহোবার এই মূল্যবান জ্ঞান অর্জন করতে সাহায্য করার জন্য আপনি কি এই বাকি অল্প সময়টুকু ব্যবহার করবেন? কাউকে জীবন পেতে সাহায্য করার মত আনন্দ আর কোন্ কাজে থাকতে পারে?
ক্রমাগত “সংযত” -ভাবে জীবনযাপন করা
২০, ২১. (ক) সম্মুখের দিনগুলিতে আমরা কোন্ উপায়গুলির মাধ্যমে “সংযত” হওয়া প্রদর্শন করতে পারি? (খ) “সংযত”-ভাবে জীবনযাপন করার দ্বারা কোন্ আশীর্বাদগুলি আসবে?
২০ যতই শয়তানের বিধিব্যবস্থা এর ধ্বংসের দিকে ধাবমান হচ্ছে, ততই আমাদের নতুন নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। দ্বিতীয় তীমথিয় ৩:১৩ পদ ভবিষ্যদ্বাণী করে: “দুষ্ট লোকেরা ও বঞ্চকেরা . . . উত্তর উত্তর কুপথে অগ্রসর হইবে।” কিন্তু “প্রাণের ক্লান্তিতে অবসন্ন” হবেন না। (ইব্রীয় ১২:৩) শক্তির জন্য যিহোবার উপর নির্ভর করুন। (ফিলিপীয় ৪:১৩) পূর্বকালে বাস করার পরিবর্তে এই মন্দতর পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলার জন্য নমনীয় হতে শিখুন। (উপদেশক ৭:১০) “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” এর মাধ্যমে সরবরাহকৃত নির্দেশনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ব্যবহারিক প্রজ্ঞা ব্যবহার করুন।—মথি ২৪:৪৫-৪৭.
২১ কত সময় বাকি রয়েছে আমরা তা জানি না। তথাপি, আমরা আস্থার সাথে বলতে পারি যে “সকল বিষয়ের পরিণাম সন্নিকট।” সেই শেষ না আসা পর্যন্ত আসুন আমরা পরস্পরের সাথে আমাদের আচরণের ক্ষেত্রে, যেভাবে আমাদের পরিবারের প্রতি যত্ন নিই, সেই ক্ষেত্রে এবং আমাদের জাগতিক দায়িত্বগুলির ক্ষেত্রে “সংযত” হয়ে জীবনযাপন করি। তা করার দ্বারা আমরা সকলে আস্থা রাখতে পারি যে আমাদের পরিশেষে “নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ অবস্থায় শান্তিতে দেখিতে পাওয়া” যাবে!—২ পিতর ৩:১৪.
[পাদটীকাগুলো]
a উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে অনেকের জীবন বীমা রয়েছে, যদিও এইগুলি অনেক ব্যয়বহুল। কিছু সাক্ষী পরিবার লক্ষ্য করেছে যে কিছু চিকিৎসকেরা যখন পরিবারগুলির চিকিৎসা বীমা থাকে সেই ক্ষেত্রে রক্ত ছাড়া বিকল্প চিকিৎসা বিবেচনা করতে অধিক আগ্রহ দেখায়। অনেক চিকিৎসকেরা সীমিত বীমা পরিকল্পনা অথবা সরকারের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বীমার অধীনে অনুমোদিত খরচ পরিশোধ অনুমোদন করবেন।।
b একজন গৃহ শিক্ষা অনুধাবন করবে কি না তা, তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। ১৯৯৩ সালের এপ্রিল ৮, সচেতন থাক! (ইংরাজি), সংখ্যায় “গৃহ শিক্ষা—এটি কি আপনার জন্য?,” নামক প্রবন্ধটি দেখুন।
পুনরালোচনার বিষয়গুলি
◻ আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলির ক্ষেত্রে আমরা কিভাবে “সংযত” মনোভাব প্রদর্শন করতে পারি?
◻ আমাদের পারিবারিক দায়িত্বগুলির যত্ন নিতে আমরা কিভাবে ভারসাম্যতা দেখাতে পারি?
◻ তাদের সন্তানদের জাগতিক শিক্ষার ক্ষেত্রে পিতামাতারা কেন অবশ্যই আগ্রহ দেখাবে?
◻ বারূক এবং যোনার কাছ থেকে আমরা কোন্ শিক্ষাগুলি পেতে পারি?
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
যখন একজন স্বামী ও স্ত্রী একে অপরের সাথে খারাপ ব্যবহার করে, তারা যিহোবার সাথে তাদের সম্পর্কের ক্ষতিসাধন করে
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
তাদের সন্তানদের শিক্ষার ক্ষেত্রে পিতামাতাদের আগ্রহ দেখান উচিত