অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৮
আপনি কি যিশুর ব্যাপারে সন্দেহ করেন?
“সুখী সেই ব্যক্তি, যে আমার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ করে না।”—মথি ১১:৬.
গান ৩২ সুস্থির হও, নিশ্চল হও!
সারাংশa
১. আমরা যখন সত্য সম্বন্ধে আমাদের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনকে জানাই, তখন কী হতে পারে?
আপনার কি সেই মুহূর্তের কথা মনে আছে, যখন আপনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, আপনি সত্য খুঁজে পেয়েছেন? নিশ্চয়ই আপনি সেই সময়ে অনেক খুশি হয়েছিলেন! আপনার মনে হয়েছিল, অন্যেরা যদি এই সত্য সম্বন্ধে শেখে, তা হলে তাদের জীবন ভালো হয়ে যাবে আর তারা অনন্তজীবনের আশাও লাভ করতে পারবে। (গীত. ১১৯:১০৫) তাই, আপনি উদ্যোগের সঙ্গে আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনকে এই সত্য সম্বন্ধে বলতে শুরু করেন। কিন্তু, আপনি হয়তো যেভাবে চিন্তা করেছিলেন, সেইরকম কিছুই হয়নি। তারা আপনার কথা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে।
২-৩. যিশুর দিনে বেশিরভাগ লোক কী করেছিল?
২ লোকেরা যখন আমাদের বার্তা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে, তখন আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয়। যিশুর দিনে বেশিরভাগ লোক তাঁকে বড়ো বড়ো অলৌকিক কাজ করতে দেখেছিল। আর এটা স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছিল যে, ঈশ্বর তাঁকে সাহায্য করছেন। তা সত্ত্বেও, তারা যিশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, যিহুদি নেতারা এই বিষয়টা অস্বীকার করতে পারেনি, লাসারকে যিশুই পুনরুত্থিত করেছিলেন। কিন্তু, তারা এটা মানতে চায়নি, যিশুই মশীহ ছিলেন। তারা এমনকী যিশু ও লাসার উভয়কে হত্যা করতে চেয়েছিল।—যোহন ১১:৪৭, ৪৮, ৫৩; ১২:৯-১১.
৩ যিশু জানতেন, বেশিরভাগ লোক তাঁকে মশীহ হিসেবে মেনে নেবে না। (যোহন ৫:৩৯-৪৪) যিশু যোহন বাপ্তাইজকের দু-জন শিষ্যকে বলেছিলেন: “সুখী সেই ব্যক্তি, যে আমার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ করে না।” (মথি ১১:২, ৩, ৬) কেন লোকেরা যিশুর ব্যাপারে সন্দেহ করেছিল অর্থাৎ তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল?
৪. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?
৪ এই প্রবন্ধে ও পরের প্রবন্ধে কিছু কারণ নিয়ে আমরা আলোচনা করব যে, কেন প্রথম শতাব্দীতে অনেক লোক যিশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। এ ছাড়া, আমরা আলোচনা করব, কেন আজকে লোকেরা আমাদের বার্তা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে। আমরা এও জানতে পারব, কীভাবে একজন ব্যক্তি নিজের বিশ্বাস দৃঢ় করতে পারেন, যাতে তিনি যিশুকে অনুসরণ করা বন্ধ করে না দেন।
(১) যিশু খুবই ছোটো নগর নাসরৎ থেকে এসেছিলেন
৫. কেন কিছু লোকের মনে হয়েছিল, যিশু মশীহ হতে পারেন না?
৫ অনেকে স্বীকার করেছিল, যিশু হলেন একজন উত্তম শিক্ষক আর তিনি অলৌকিক কাজ করতেন। কিন্তু, তারা যিশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কেন? কারণ তিনি একজন দরিদ্র ছুতোর মিস্ত্রির ছেলে এবং নাসরতীয় ছিলেন। আর লোকদের দৃষ্টিতে নাসরৎ খুবই ছোটো একটা নগর ছিল। যিশুর শিষ্য নথনেলও প্রথমে বলেছিলেন: “নাসরৎ থেকে কি ভালো কিছু আসতে পারে?” (যোহন ১:৪৬) নথনেলও হয়তো বিশ্বাস করেছিলেন, নাসরৎ খুবই ছোটো একটা নগর কিংবা তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, মীখা ৫:২ পদে পাওয়া ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী মশীহের জন্ম নাসরতে নয় বরং বেথলেহেমে হবে।
৬. কীভাবে লোকেরা বুঝতে পারত, যিশুই মশীহ ছিলেন?
৬ শাস্ত্র কী জানায়? ভাববাদী যিশাইয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যিশুর শত্রুরা জানার চেষ্টা করবে না যে, মশীহ “কে ছিলেন, কোথা থেকে এসেছিলেন।” (যিশা. ৫৩:৮, NW) মশীহ সম্বন্ধে অনেক ভবিষ্যদ্বাণীতে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল। তারা যদি সেগুলো পরীক্ষা করে দেখত, তা হলে বুঝতে পারত, মশীহ সম্বন্ধে করা ভবিষ্যদ্বাণীগুলো যিশুতে পরিপূর্ণ হয়েছিল। তাঁর জন্ম বেথলেহেমে হয়েছিল, ঠিক যেমনটা মীখা ৫:২ পদে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল আর তিনি রাজা দায়ূদের একজন বংশধর ছিলেন। (লূক ২:৪-৭) কিন্তু, এই লোকেরা সমস্ত তথ্য পরীক্ষা না করেই তাঁর সম্বন্ধে ভুল ধারণা গড়ে তুলেছিল আর যিশুকে মশীহ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
৭. কেন আজকে বেশিরভাগ লোক সাক্ষিদের বার্তা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে?
৭ লোকেরা কি আজও একইরকম রয়েছে? হ্যাঁ রয়েছে। অনেক লোক মনে করে, যিহোবার সাক্ষিরা ধনী নয় বরং “অশিক্ষিত এবং সাধারণ ব্যক্তি।” (প্রেরিত ৪:১৩) তারা বলে থাকে, ‘সাক্ষিরা বাইবেল সম্বন্ধে আমাদের কী শিক্ষা দেবে কারণ ওরা নিজেরাই তো বড়ো বড়ো ধর্মীয় স্কুলে পড়াশোনা করেনি।’ অন্যেরা আবার বলে থাকে, যিহোবার সাক্ষি “আমেরিকার একটা ধর্ম।” সত্যি বলতে কী, বেশিরভাগ সাক্ষি আমেরিকায় নয় বরং অন্যান্য দেশে রয়েছে। কেউ কেউ এমনটা চিন্তা করে থাকে, যিহোবার সাক্ষিরা “পরিবার ভেঙে দেয়,” “আমেরিকার গুপ্তচর” আর “দেশের জন্য বিপদজনক।” আবার কিছু ব্যক্তি শুনেছে যে, যিহোবার সাক্ষিরা যিশুকে মানে না। এই সমস্ত মিথ্যা গল্পে বিশ্বাস করার কারণে বেশিরভাগ লোক সাক্ষিদের বার্তা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে।
৮. প্রেরিত ১৭:১১ পদ অনুযায়ী আজ যিহোবার লোকদের কীভাবে আপনি শনাক্ত করতে পারেন?
৮ আপনি কী করতে পারেন, যাতে আপনি যিশুকে অনুসরণ করা বন্ধ করে না দেন? আপনাকে সমস্ত তথ্য ভালোভাবে পরীক্ষা করতে হবে। লূকও ঠিক এমনটাই করেছিলেন। তিনি নিজের বই লেখার সময় “সমস্ত বিষয় শুরু থেকে ভালোভাবে পরীক্ষা” করেছিলেন, যাতে লোকেরা “পুরোপুরিভাবে জানতে” পারে, তারা যিশুর বিষয়ে যা-কিছু শুনেছে, ‘সেগুলো সত্য।’ (লূক ১:১-৪) বিরয়াতে বসবাসকারী যিহুদি লোকেরাও লূকের মতো ছিল। তারা যিশুর বিষয়ে যা-কিছু শুনেছিল, সেগুলো ইব্রীয় শাস্ত্র থেকে পরীক্ষা করে দেখেছিল। (পড়ুন, প্রেরিত ১৭:১১.) একইভাবে, যিহোবার লোকেরা যখন আপনাকে কিছু শেখায়, তখন আপনারও সেগুলো শাস্ত্র থেকে পরীক্ষা করে দেখা উচিত। আপনার যিহোবার সাক্ষিদের ইতিহাস সম্বন্ধেও খোঁজখবর নেওয়া উচিত। আপনি যখন ভালোভাবে সমস্ত কিছু পরীক্ষা করে দেখবেন, তখন আপনি লোকদের শোনা কথার দ্বারা প্রভাবিত হবেন না।
(২) যিশু লোকদের দেখানোর জন্য অলৌকিক কাজ করেননি
৯. যিশু যখন স্বর্গ থেকে কোনো চিহ্ন দেখাতে অস্বীকার করেন, তখন কী হয়?
৯ যিশু যা শেখাচ্ছিলেন, তাতে কিছু লোক খুশি ছিল না। যিশুই যে মশীহ, সেই বিষয়ে তারা আরও প্রমাণ দেখতে চেয়েছিল। তাই, তারা যিশুকে “স্বর্গ থেকে কোনো চিহ্ন” দেখাতে বলেছিল। (মথি ১৬:১) হতে পারে, তারা দানিয়েল ৭:১৩, ১৪ পদের ভবিষ্যদ্বাণী পড়ার কারণে এমনটা বলেছিল। তবে, সেই ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হওয়ার সময় তখনও আসেনি। তারা যদি যিশু যা শেখাচ্ছিলেন, সেটার উপর মনোযোগ দিত, তা হলে প্রমাণ পেত যে, যিশুই হলেন মশীহ। কিন্তু, যিশু যখন তাদের কোনো চিহ্ন দেখাতে অস্বীকার করেন, তখন তারা যিশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।—মথি ১৬:৪.
১০. কীভাবে যিশু মশীহ সম্বন্ধে লেখা যিশাইয়ের কথাগুলো পরিপূর্ণ করেছিলেন?
১০ শাস্ত্র কী জানায়? ভাববাদী যিশাইয় মশীহ সম্বন্ধে বলেছিলেন: “তিনি চীৎকার করিবেন না, উচ্চশব্দ করিবেন না, পথে আপন রব শুনাইবেন না।” (যিশা. ৪২:১, ২) যিশু কখনো নিজের প্রতি লোকদের মনোযোগ আকর্ষণ করানোর চেষ্টা করেননি। তিনি বড়ো বড়ো মন্দির নির্মাণ করেননি এবং বিশেষ কোনো ধর্মীয় পোশাকও পরেননি। এ ছাড়া, তিনি চাননি যে, লোকেরা তাঁকে ধর্মীয় উপাধি দিয়ে সম্বোধন করুক। যিশু এমনকী তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্তেও রাজা হেরোদকে খুশি করার জন্য কোনো অলৌকিক কাজ করেননি। (লূক ২৩:৮-১১) যদিও অন্যান্য সময় যিশু কিছু অলৌকিক কাজ করেছিলেন, কিন্তু তাঁর প্রধান লক্ষ্য ছিল, সুসমাচার প্রচার করা। তাই, তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “আমি এইজন্যই এসেছি।”—মার্ক ১:৩৮.
১১. আজকে কিছু লোকের মধ্যে কোন ভুল ধারণা রয়েছে?
১১ লোকেরা কি আজও একইরকম রয়েছে? হ্যাঁ রয়েছে। আজও বেশিরভাগ লোক বড়ো বড়ো বিলাসবহুল ধর্মীয় ভবন আর বিশেষ বিশেষ উপাধি রয়েছে এমন লোকদের পছন্দ করে। তারা এমন ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে যোগ দিতে পছন্দ করে, যেগুলো বাইবেলের শিক্ষা অনুযায়ী সঠিক নয়। তারা মনে করে, এগুলোই তাদের ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে সাহায্য করবে। সত্যি বলতে কী, তারা তাদের ধর্মীয় সভা অথবা অনুষ্ঠানগুলোতে যোগ দিয়ে ঈশ্বর এবং তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে কিছুই শেখে না। অপর দিকে, যিহোবার সাক্ষিদের সভায় ঈশ্বর সম্বন্ধে অনেক কিছু শেখানো হয়। তাদের কিংডম হল বিলাসবহুল নয় ঠিকই, কিন্তু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। আর যারা সেখানে নেতৃত্ব নিয়ে থাকেন, তারা বিশেষ কোনো ধর্মীয় পোশাক পরেন না আর তারা চান না, লোকেরা তাদের বিশেষ উপাধি দিয়ে সম্বোধন করুক। সাক্ষিরা যা-কিছু শেখায়, সেগুলোর ভিত্তি হল বাইবেল। তারা লোকদের দেখানোর কিংবা তাদের খুশি করার জন্য শিক্ষা দেয় না। তাই, লোকেরা তাদের বার্তা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে।
১২. ইব্রীয় ১১:১, ৬ পদ অনুযায়ী আপনি আপনার বিশ্বাস বৃদ্ধি করার জন্য কী করতে পারেন?
১২ আপনি কী করতে পারেন, যাতে আপনি যিশুকে অনুসরণ করা বন্ধ করে না দেন? প্রেরিত পৌল রোমের খ্রিস্টানদের বলেছিলেন: “বাক্য শোনার পরই একজন ব্যক্তি বিশ্বাস করে। আর বাক্য তখনই শোনা যায়, যখন কেউ খ্রিস্ট সম্বন্ধে প্রচার করে।” (রোমীয় ১০:১৭) তাই, অশাস্ত্রীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো যতই আনন্দদায়ক হোক না কেন, এগুলোতে অংশ নিয়ে নয় বরং বাইবেল অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আপনার বিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে। শুধু তা-ই নয়, এটাকে সঠিক জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে শক্তিশালীও করতে হবে কারণ “বিশ্বাস ছাড়া ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা অসম্ভব।” (পড়ুন, ইব্রীয় ১১:১, ৬.) আপনি যদি ভালোভাবে বাইবেল অধ্যয়ন করেন, তা হলে আপনি পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত হবেন যে, এটাই হল সত্য। তখন স্বর্গ থেকে আর কোনো চিহ্নের প্রয়োজন হবে না।
(৩) যিশু যিহুদিদের অনেক পরম্পরাগত রীতিনীতি পালন করেননি
১৩. কেন অনেক লোক যিশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল?
১৩ যোহন বাপ্তাইজকের শিষ্যেরা বুঝতে পারছিল না, কেন যিশুর শিষ্যেরা উপবাস করে না। যিশু তাদের বুঝতে সাহায্য করেছিলেন, যতদিন তিনি জীবিত আছেন, ততদিন তাঁর শিষ্যদের উপবাস করার প্রয়োজন নেই। (মথি ৯:১৪-১৭) ফরীশীরা এবং যিশুর অন্য বিরোধীরা তাঁকে নিন্দা করেছিল কারণ তিনি তাদের পরম্পরাগত রীতিনীতি পালন করতেন না। তারা যিশুর উপর আরও রেগে গিয়েছিল, যখন যিশু বিশ্রামবারে একজন ব্যক্তিকে সুস্থ করেছিলেন। (মার্ক ৩:১-৬; যোহন ৯:১৬) একদিকে, তারা গর্বের সঙ্গে বলত যে, তারা বিশ্রামবারের আইন পালন করে; আবার অন্যদিকে, তারা মন্দিরের ভিতরে ব্যাবসা করতে অনুমতি দিত। যিশু যখন এই কারণে তাদের নিন্দা করেছিলেন, তখন তারা যিশুর উপর প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিল। (মথি ২১:১২, ১৩, ১৫) আর পরে, যিশু যখন নাসরতের সমাজগৃহে লোকদের কাছে প্রচার করছিলেন, তখন তিনি তাদের ইজরায়েলীয়দের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। কারণ তারা ইজরায়েলীয়দের মতোই স্বার্থপর এবং অবিশ্বাসী ছিল। আর এই কথা শোনা মাত্রই তারা উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল। (লূক ৪:১৬, ২৫-৩০) যিশু লোকদের ইচ্ছা মতো কোনো কাজ করেননি বলে অনেক লোক তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।—মথি ১১:১৬-১৯.
১৪. কেন যিশু মানুষের তৈরি পরম্পরাগত রীতিনীতিকে নিন্দা করেছিলেন?
১৪ শাস্ত্র কী জানায়? যিহোবা তাঁর ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে বলেছিলেন: “এই লোকেরা আমার নিকটবর্ত্তী হয়, এবং আপন আপন মুখে ও ওষ্ঠাধরে আমার সম্মান করে, কিন্তু আপন আপন অন্তঃকরণ আমা হইতে দূরে রাখিয়াছে, এবং আমা হইতে তাহাদের যে ভয়, তাহাও মানুষের আদেশ, মুখস্থ করা মাত্র।” (যিশা. ২৯:১৩) যিশু মানুষের তৈরি এমন সব পরম্পরাগত রীতিনীতিকে নিন্দা করেছিলেন, যেগুলোর সঙ্গে বাইবেলের শিক্ষার মিল ছিল না। যে-লোকেরা শাস্ত্রে লেখা কথাগুলোর চেয়ে মানুষের তৈরি নিয়ম ও পরম্পরাগত রীতিনীতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করত, তারা যিহোবা ও মশীহকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
১৫. কেন আজকে অনেক লোক যিহোবার সাক্ষিদের পছন্দ করে না?
১৫ লোকেরা কি আজও একইরকম রয়েছে? হ্যাঁ রয়েছে। আজকে অনেক লোক যিহোবার সাক্ষিদের পছন্দ করে না কারণ তারা জন্মদিন এবং বড়োদিন পালন করে না। আবার অন্যান্য কারণে লোকেরা সাক্ষিদের উপর রেগে যায়। যেমন, তারা কোনো জাতীয় অনুষ্ঠানে এবং ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে মিল নেই এমন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রথায় অংশ নেয় না। লোকেরা মনে করে, এই ধরনের পরম্পরাগত রীতিনীতি পালন করলেই ঈশ্বর খুশি হন। সত্যি বলতে কী, ঈশ্বর তখনই খুশি হবেন, যখন তারা বাইবেলের শিক্ষা অনুযায়ী তাঁর উপাসনা করবে।—মার্ক ৭:৭-৯.
১৬. গীতসংহিতা ১১৯:৯৭, ১১৩, ১৬৩-১৬৫ পদ অনুযায়ী আপনাকে অবশ্যই কী করতে হবে আর কী প্রত্যাখ্যান করতে হবে?
১৬ আপনি কী করতে পারেন, যাতে আপনি যিশুকে অনুসরণ করা বন্ধ করে না দেন? আপনাকে অবশ্যই যিহোবার দেওয়া আইন এবং নীতিগুলোর প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি করতে হবে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:৯৭, ১১৩, ১৬৩-১৬৫.) আর যদি যিহোবার প্রতি ভালোবাসা থাকে, তা হলে আপনি সেই সমস্ত পরম্পরাগত রীতিনীতি পালন করা প্রত্যাখ্যান করবেন, যেগুলো যিহোবা পছন্দ করেন না। তাই মনে রাখবেন, আপনি যেন যিহোবার চেয়ে অন্য কোনো বিষয়কে বেশি ভালো না বাসেন।
(৪) যিশু সরকার পরিবর্তন করেননি
১৭. যিশুর দিনে লোকেরা আর কোন কারণে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল?
১৭ যিশুর দিনে কেউ কেউ দ্রুত সরকার পরিবর্তন করতে চেয়েছিল। তারা আশা করেছিল, মশীহ এসে রোমীয় সরকারের অত্যাচারের হাত থেকে তাদের রক্ষা করবে। কিন্তু, তারা যখন যিশুকে রাজা করার চেষ্টা করেছিল, তখন যিশু তাদের তা করতে দেননি। (যোহন ৬:১৪, ১৫) অপর দিকে, রোমীয় সরকার যাজক এবং অন্যদের কিছু ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দিয়েছিল। তাদের ভয় ছিল যে, যিশু যদি সরকার পরিবর্তন করার চেষ্টা করেন, তা হলে রোমীয় সরকার তাদের কাছ থেকে সেই ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব কেড়ে নেবে। এই কারণে অনেক লোক যিশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
১৮. কেন মশীহ সম্বন্ধে লোকদের চিন্তাভাবনা ভুল ছিল?
১৮ শাস্ত্র কী জানায়? শাস্ত্রে এমন অনেক ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, মশীহ শেষপর্যন্ত একজন বিজয়ী যোদ্ধা হবেন। আবার এমনও ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, মশীহকে প্রথমে আমাদের পাপের জন্য মারা যেতে হবে। (যিশা. ৫৩:৯, ১২) তাহলে, কেন মশীহ সম্বন্ধে লোকদের চিন্তাভাবনা ভুল ছিল? কারণ তারা সেইসমস্ত ভবিষ্যদ্বাণীর উপর মনোযোগ দেয়নি। তারা শুধু নিজেদের সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান চেয়েছিল।—যোহন ৬:২৬, ২৭.
১৯. কেন আজকে লোকেরা সাক্ষিদের বার্তা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে?
১৯ লোকেরা কি আজও একইরকম রয়েছে? হ্যাঁ রয়েছে। অনেক লোক এই অভিযোগ করে থাকে যে, যিহোবার সাক্ষিরা ভোট দেয় না। কিন্তু সাক্ষিরা জানে, যদি তারা কোনো মানবসরকারকে বেছে নেয়, তা হলে সেটার অর্থ হবে, তারা যিহোবাকে প্রত্যাখ্যান করছে। (১ শমূ. ৮:৪-৭) তারা রাজনৈতিক ব্যাপারে নিরপেক্ষতা বজায় রাখে, তাই লোকেরা তাদের বার্তা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে। এ ছাড়া, লোকেরা মনে করে, সাক্ষিদের স্কুল ও হাসপাতাল তৈরি করা উচিত এবং সমাজসেবামূলক কাজ করা উচিত। কিন্তু, সাক্ষিরা যখন লোকদের সমস্যাগুলো সমাধান করার পরিবর্তে, প্রচার কাজে ব্যস্ত থাকে, তখন লোকেরা তাদের বার্তা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে।
২০. মথি ৭:২১-২৩ পদ অনুযায়ী যিশুর প্রকৃত অনুসারীদের কোন বিষয়ের উপর মনোযোগ দিতে হবে?
২০ আপনি কী করতে পারেন, যাতে আপনি যিশুকে অনুসরণ করা বন্ধ করে না দেন? (পড়ুন, মথি ৭:২১-২৩.) যিশু তাঁর প্রকৃত অনুসারীদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দায়িত্ব দিয়েছেন আর সেটা হল প্রচার কাজ। (মথি ২৮:১৯, ২০) তারা জগতের সমস্যাগুলো সমাধান করার উপর নয় বরং প্রচার কাজের উপর বেশি মনোযোগ দিয়ে থাকে। যদিও তারা লোকদের ভালোবাসে এবং তাদের কষ্ট দেখে দুঃখ পায়, কিন্তু তারা জানে, একমাত্র ঈশ্বরের রাজ্যই মানবজাতির সমস্ত সমস্যার সমাধান নিয়ে আসবে। তাই, তারা লোকদের ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে শিক্ষা দেয় এবং তাঁর সঙ্গে এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
২১. আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?
২১ এই প্রবন্ধে আমরা চারটে কারণ নিয়ে আলোচনা করে দেখেছি যে, কেন যিশুর দিনে অনেকে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। আজকেও সেই চারটে কারণে লোকেরা যিশুর অনুসারীদের কথা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু, আমরা যেমনটা এই প্রবন্ধে আলোচনা করলাম, আমাদের সবসময় যিশুর কথা শুনতে হবে এবং আমাদের বিশ্বাস দৃঢ় করতে হবে। পরের প্রবন্ধে আমরা আরও চারটে কারণ নিয়ে আলোচনা করব যে, কেন লোকেরা যিশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
গান ৩৪ নামের যোগ্যরূপে চলা
a যিশু একজন সর্বমহান শিক্ষক ছিলেন। তা সত্ত্বেও, বেশিরভাগ লোক তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কেন? এই প্রবন্ধে আমরা সেটার চারটে কারণ নিয়ে আলোচনা করব। এ ছাড়া, আমরা আলোচনা করব, কেন আজকে অনেক লোক যিশুর প্রকৃত অনুসারীদের কথা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে। আমরা এও জানতে পারব, কীভাবে একজন ব্যক্তি নিজের বিশ্বাস দৃঢ় করতে পারেন, যাতে তিনি যিশুকে অনুসরণ করা বন্ধ করে না দেন। এই প্রবন্ধ এবং পরের প্রবন্ধ বিশেষভাবে সেই ব্যক্তিদের সাহায্য করবে, যারা সাক্ষিদের সঙ্গে মেলামেশা করে ঠিকই, কিন্তু যিহোবার সাক্ষি হতে ইতস্তত বোধ করে। তবে, এখানে দেওয়া পরামর্শগুলো সাক্ষিদের প্রতিও প্রযোজ্য।
b ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: ফিলিপ নথনেলকে যিশুর সঙ্গে দেখা করতে উৎসাহিত করছেন।
c ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: যিশু রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করছেন।
d ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: যিশু একজন ব্যক্তিকে সুস্থ করছেন, যার একটা হাত শুকিয়ে গিয়েছিল আর যিশুর বিরোধীরা তা দেখছে।
e ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: যিশু একা একটা পর্বতে উঠছেন।