ঈশ্বরের বিশ্রাম—এর অর্থ কী?
“ঈশ্বরের প্রজাদের নিমিত্ত বিশ্রামকালের ভোগ বাকী রহিয়াছে।”—ইব্রীয় ৪:৯.
১, ২. আদিপুস্তক ২:৩ পদের সঠিক বর্ণনা থেকে আমরা কোন উপসংহারে আসতে পারি আর এর ফলে কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়?
আদিপুস্তকের প্রথম অধ্যায় থেকে আমরা জানতে পারি যে, ঈশ্বর ছয়টা রূপক দিনের মধ্যে এই পৃথিবীকে মানব বসবাসের উপযোগী করার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। এইসমস্ত সময়কালের প্রত্যেকটার শেষে এই কথাগুলো লক্ষ করা যায়: “আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে।” (আদি. ১:৫, ৮, ১৩, ১৯, ২৩, ৩১) কিন্তু, সপ্তম দিন সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “ঈশ্বর সেই সপ্তম দিনকে আশীর্ব্বাদ করিয়া পবিত্র করিলেন, কেননা সেই দিনে ঈশ্বর আপনার সৃষ্ট . . . সমস্ত কার্য্য হইতে বিশ্রাম করিলেন।”—আদি. ২:৩.
২ “বিশ্রাম করিলেন” ক্রিয়ার রূপটি লক্ষ করুন। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, সপ্তম দিন—ঈশ্বরের বিশ্রাম ‘দিন’—সা.কা.পূ. ১৫১৩ সালেও চলছিল, যখন মোশি আদিপুস্তক বইটি লিখেছিলেন। ঈশ্বরের বিশ্রাম দিন কি এখনও চলছে? যদি তা-ই হয়, তাহলে আমরা কি বর্তমানে এতে প্রবেশ করতে পারি? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা আমাদের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
যিহোবা কি এখনও ‘বিশ্রাম করিতেছেন’?
৩. যোহন ৫:১৬, ১৭ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর কথাগুলো কীভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, সপ্তম দিন প্রথম শতাব্দীতেও চলছিল?
৩ দুটো প্রমাণ আমাদেরকে এই উপসংহারে আসতে পরিচালিত করে যে, সপ্তম দিন সা.কা. প্রথম শতাব্দীতেও চলছিল। প্রথমত, সেই বিরোধীদের উদ্দেশে বলা যিশুর কথাগুলো বিবেচনা করুন, যারা বিশ্রামবারে সুস্থ করার কারণে তাঁর সমালোচনা করেছিল এবং সুস্থ করার বিষয়টাকে এক ধরনের কাজ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিল। প্রভু তাদের বলেছিলেন: “আমার পিতা এখন পর্য্যন্ত কার্য্য করিতেছেন, আমিও করিতেছি।” (যোহন ৫:১৬, ১৭) মূল বিষয়টা কী ছিল? যিশুকে বিশ্রামবারে কাজ করার দোষে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তাঁর এই উত্তর: “আমরা পিতা এখন পর্য্যন্ত কার্য্য করিতেছেন,” সেই অভিযোগের প্রত্যুত্তর দিয়েছিল। মূলত, যিশু তাঁর সমালোচকদের এই কথা বলছিলেন: ‘আমার পিতা ও আমি একই ধরনের কাজে রত আছি। যেহেতু আমার পিতা হাজার হাজার বছর দীর্ঘ বিশ্রামবারে কাজ করে যাচ্ছেন, তাই আমার জন্য এমনকী বিশ্রামবারেও কাজ করা উপযুক্তভাবেই অনুমোদনযোগ্য।’ এভাবে, যিশু পরোক্ষভাবে প্রকাশ করেছিলেন যে, পৃথিবীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ঈশ্বরের মহান বিশ্রামবার অর্থাৎ সপ্তম দিন তাঁর সময়কালেও শেষ হয়নি।a
৪. পৌল আর কোন প্রমাণ তুলে ধরেছিলেন, যা দেখিয়েছিল যে, সপ্তম দিন তার সময়েও চলছিল?
৪ দ্বিতীয় প্রমাণটা প্রেরিত পৌল তুলে ধরেছিলেন। ঈশ্বরের বিশ্রামের বিষয়ে আদিপুস্তক ২:২ উল্লেখ করার সময় পৌল অনুপ্রাণিত হয়ে এই কথা লিখেছিলেন: “আমরা সেই বিশ্রামে প্রবেশ করিতে পাইতেছি।” (ইব্রীয় ৪:৩, ৪, ৬, ৯) তাই, সপ্তম দিন পৌলের সময়েও চলছিল। সেই বিশ্রাম দিন কতটা দীর্ঘ সময় ধরে চলবে?
৫. সপ্তম দিনের উদ্দেশ্য কী ছিল এবং কখন সেই উদ্দেশ্যকে সম্পূর্ণভাবে বাস্তবে রূপদান করা হবে?
৫ সেই প্রশ্নের উত্তর লাভ করার জন্য আমাদের সপ্তম দিনের উদ্দেশ্য মনে রাখতে হবে। আদিপুস্তক ২:৩ পদ তা ব্যাখ্যা করে: “ঈশ্বর সেই সপ্তম দিনকে আশীর্ব্বাদ করিয়া পবিত্র করিলেন।” সেই দিনকে ‘পবিত্র করা হইয়াছিল’—যিহোবার দ্বারা পবিত্রীকৃত বা আলাদা করা হয়েছিল—যাতে তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হয়। সেই উদ্দেশ্য হল পৃথিবীকে এমন বাধ্য পুরুষ ও নারীদের দ্বারা পরিপূর্ণ করা, যারা এই পৃথিবীর এবং এতে বিদ্যমান সমস্ত জীবনের যত্ন নেবে। (আদি. ১:২৮) সেই উদ্দেশ্যকে বাস্তবে রূপদান করার জন্য যিহোবা ঈশ্বর এবং “বিশ্রামবারের কর্ত্তা” যিশু খ্রিস্ট দুজনেই “এখন পর্য্যন্ত কার্য্য করিতেছেন।” (মথি ১২:৮) ঈশ্বরের বিশ্রাম দিন সেই সময় পর্যন্ত চলবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তাঁর উদ্দেশ্য খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্বের শেষে সম্পূর্ণভাবে বাস্তবে রূপ লাভ করে।
“অবাধ্যতার সেই দৃষ্টান্ত অনুসারে পতিত” হবেন না
৬. কোন উদাহরণগুলো আমাদের জন্য সাবধানবাণী হিসেবে কাজ করে এবং সেগুলো থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৬ যদিও ঈশ্বরের উদ্দেশ্য আদম ও হবার কাছে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল, কিন্তু তারা এটার সঙ্গে সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হয়েছিল। অবশ্য, আদম ও হবা অবাধ্যতার পথের অনুধাবন করে এমন মানুষদের মধ্যে কেবল প্রথম দুজন। তখন থেকে অন্যান্য কোটি কোটি লোক সেই পথ অনুধাবন করেছে। এমনকী ঈশ্বরের মনোনীত লোকেরা অর্থাৎ ইস্রায়েল জাতি অবাধ্যতার দৃষ্টান্ত অনুসারে পতিত হয়েছিল। আর উপযুক্তভাবেই, পৌল প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের সাবধান করেছিলেন যে, এমনকী তাদের মধ্যেও কেউ কেউ প্রাচীন ইস্রায়েলীয়দের মতো একইরকম ফাঁদে পতিত হতে পারে। তিনি লিখেছিলেন: “অতএব আইস, আমরা সেই বিশ্রামে প্রবেশ করিতে যত্ন করি, যেন কেহ অবাধ্যতার সেই দৃষ্টান্ত অনুসারে পতিত না হয়।” (ইব্রীয় ৪:১১) লক্ষ করুন যে, পৌল অবাধ্যতাকে ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করেছেন। আমাদের জন্য এর মানে কী? এর মানে কী এই যে, আমরা যদি কোনোভাবে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি, তাহলে আমরা ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করতে পারব না? স্পষ্টতই, এই প্রশ্নের উত্তরটা আমাদের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ আর আমরা এই বিষয়ে আরও বিবেচনা করব। কিন্তু, এখন আসুন আমরা দেখি যে, ইস্রায়েলীয়দের মন্দ উদাহরণ বিবেচনা করার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করার বিষয়ে আরও কী জানতে পারি।
“ইহারা আমার বিশ্রামে প্রবেশ করিবে না”
৭. যিহোবা যখন ইস্রায়েলীয়দের মিশরের দাসত্ব থেকে উদ্ধার করেছিলেন, তখন তাঁর উদ্দেশ্য কী ছিল আর তাদের কাছ থেকে কী আশা করা হয়েছিল?
৭ সা.কা.পূ. ১৫১৩ সালে, যিহোবা তাঁর দাস মোশির কাছে ইস্রায়েলীয়দের বিষয়ে তাঁর উদ্দেশ্য প্রকাশ করেছিলেন। ঈশ্বর বলেছিলেন: “মিস্রীয়দের হস্ত হইতে তাহাদিগকে উদ্ধার করিবার জন্য, এবং সেই দেশ [মিশর] হইতে উঠাইয়া লইয়া উত্তম ও প্রশস্ত এক দেশে, . . . সেই দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশে তাহাদিগকে আনিবার জন্য নামিয়া আসিয়াছি।” (যাত্রা. ৩:৮) যিহোবা যেমন তাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহামের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হল “মিস্রীয়দের হস্ত হইতে” ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার করে তাঁর নিজস্ব প্রজা করে তোলা। (আদি. ২২:১৭) ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের এমন এক আইনবিধি দিয়েছিলেন, যা তাদেরকে তাঁর সঙ্গে এক শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সমর্থ করেছিল। (যিশা. ৪৮:১৭, ১৮) তিনি ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন: “যদি তোমরা আমার রবে অবধান কর ও আমার নিয়ম [যেমনটা আইনবিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে] পালন কর, তবে তোমরা সকল জাতি অপেক্ষা আমার নিজস্ব অধিকার হইবে, কেননা সমস্ত পৃথিবী আমার।” (যাত্রা. ১৯:৫, ৬) তাই, ইস্রায়েলীয়রা ঈশ্বরের সঙ্গে যে-বিশেষ সম্পর্ক উপভোগ করছিল, সেটা তাঁর রবের প্রতি অবধান করার বা বাধ্য হওয়ার ওপর নির্ভর করেছিল।
৮. ইস্রায়েলীয়রা যদি ঈশ্বরের বাধ্য থাকত, তাহলে তারা কোন ধরনের জীবনযাত্রা উপভোগ করতে পারত?
৮ ইস্রায়েলীয়রা যদি কেবল ঈশ্বরের রবের বাধ্য থাকত, তাহলে তাদের জীবন কেমন হতো, তা একটু চিন্তা করে দেখুন! যিহোবা তাদের খেতখামার, তাদের দ্রাক্ষাক্ষেত্র ও তাদের পশুপালকে আশীর্বাদ করতেন। তাদের শত্রুরা তাদের ওপর স্থায়ীভাবে শোষণ করতে পারত না। (পড়ুন, ১ রাজাবলি ১০:২৩-২৭.) যখন মশীহ আবির্ভূত হতেন, তখন তিনি সম্ভবত ইস্রায়েলকে রোমীয় কশাঘাতে জড়সড় হয়ে পড়া এক জাতি হিসেবে নয় বরং এক স্বাধীন জাতি হিসেবে উত্তমভাবে কাজ করতে দেখতে পেতেন। ইস্রায়েল এর প্রতিবেশী জাতিগুলোর কাছে এক আদর্শ রাজ্য হয়ে উঠত, যে-রাজ্য এই বাস্তব প্রমাণ তুলে ধরত যে, সত্য ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত আশীর্বাদ এনে দেয়।
৯, ১০. (ক) কেন ইস্রায়েলীয়দের মিশরে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা এক গুরুতর বিষয় ছিল? (খ) মিশরে ফিরে যাওয়া কীভাবে ইস্রায়েলীয়দের উপাসনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারত?
৯ ইস্রায়েল কতই না বিশেষ এক সুযোগ—যিহোবার উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করার এবং এর ফল স্বরূপ অবশেষে শুধুমাত্র নিজেদের জন্যই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে পৃথিবীর সকল পরিবারের জন্য আশীর্বাদ নিয়ে আসার সুযোগ—লাভ করেছিল! (আদি. ২২:১৮) কিন্তু, দলগতভাবে সেই বিদ্রোহী প্রজন্ম ঈশতান্ত্রিক শাসনের অধীনে এক আদর্শ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে সামান্যই আগ্রহ দেখিয়েছিল। তারা এমনকী মিশরে ফিরে যাওয়ার দাবি করেছিল! (পড়ুন, গণনাপুস্তক ১৪:২-৪.) কিন্তু, তারা যদি মিশরে ফিরে যেত, তাহলে কীভাবে ইস্রায়েলকে এক আদর্শ রাজ্যে পরিণত করার বিষয়ে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের অগ্রগতি হতো? তা হতো না। সত্যি বলতে কী, ইস্রায়েলীয়রা যদি তাদের পৌত্তলিক বন্দিকর্তাদের অধীনে ফিরে যেত, তাহলে তারা কখনোই মোশির ব্যবস্থা পালন করতে এবং তাদের পাপের জন্য যিহোবার ক্ষমার ব্যবস্থা থেকে উপকৃত হতে পারত না। তারা কতই না মাংসিক প্রবণতাপূর্ণ—কতই না অদূরদর্শী—ছিল! তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, যিহোবা সেই বিদ্রোহীদের সম্বন্ধে বলেছিলেন: “আমি এই জাতির প্রতি অসন্তুষ্ট হইলাম, আর কহিলাম, ইহারা সর্ব্বদা হৃদয়ে ভ্রান্ত হয়; আর তাহারা আমার পথ জ্ঞাত হইল না; তখন আমি আপন ক্রোধে এই শপথ করিলাম, ইহারা আমার বিশ্রামে প্রবেশ করিবে না।”—ইব্রীয় ৩:১০, ১১; গীত. ৯৫:১০, ১১.
১০ তাদের মিশরে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা দেখিয়েছিল যে, তারা যিহোবার কাছ থেকে যে-আশীর্বাদগুলো লাভ করেছে, সেগুলোকে মূল্যবান বলে গণ্য করে না। এর পরিবর্তে, সেই অবাধ্য ইস্রায়েলীয়রা মিশরের উত্তম খাদ্যদ্রব্য পেতে চেয়েছিল। (গণনা. ১১:৫) অকৃতজ্ঞ এষৌর মতো, এই বিদ্রোহীরা এক সুস্বাদু খাবারের বিনিময়ে মূল্যবান আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারকে বিসর্জন দিতে রাজি ছিল।—আদি. ২৫:৩০-৩২; ইব্রীয় ১২:১৬.
১১. মোশির দিনের ইস্রায়েলীয়দের অবিশ্বস্ততা কীভাবে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যকে প্রভাবিত করেছিল?
১১ ইস্রায়েলীয়দের যে-প্রজন্ম মিশর থেকে বের হয়ে এসেছিল, তারা যদিও অবিশ্বস্ততা দেখিয়েছিল, কিন্তু যিহোবা তখনও তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে ধৈর্য সহকারে ‘কার্য্য করিতেছিলেন।’ সেই নতুন প্রজন্মের সদস্যরা তাদের পূর্বপুরুষদের চেয়ে আরও বেশি বাধ্য ছিল। যিহোবার আজ্ঞার সঙ্গে মিল রেখে তারা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করেছিল এবং তা জয় করতে শুরু করেছিল। যিহোশূয় ২৪:৩১ পদে আমরা পড়ি: “যিহোশূয়ের সমস্ত জীবনকালে, এবং যে প্রাচীনবর্গ যিহোশূয়ের মরণের পরে জীবিত ছিলেন, ও ইস্রায়েলের জন্য সদাপ্রভুর কৃত সমস্ত কার্য্য জ্ঞাত ছিলেন, তাঁহাদেরও সমস্ত জীবনকালে ইস্রায়েল সদাপ্রভুর সেবা করিল।”
১২. কীভাবে আমরা জানি যে, বর্তমানে ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করা সম্ভব?
১২ কিন্তু, সেই বাধ্য প্রজন্ম ধীরে ধীরে মারা গিয়েছিল আর এর স্থলে এমন এক প্রজন্ম এসেছিল, যারা “সদাপ্রভুকে জানিত না, এবং ইস্রায়েলের জন্য তাঁহার কৃত কার্য্য জ্ঞাত ছিল না।” ফল স্বরূপ, “ইস্রায়েল-সন্তানগণ সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ তাহাই করিতে লাগিল; এবং বাল দেবগণের সেবা করিতে লাগিল।” (বিচার. ২:১০, ১১) প্রতিজ্ঞাত দেশ তাদের জন্য প্রকৃত “বিশ্রাম” বা বিশ্রামের স্থান হিসেবে প্রমাণিত হয়নি। তাদের অবাধ্যতার কারণে তারা ঈশ্বরের সঙ্গে স্থায়ী শান্তি উপভোগ করতে পারেনি। পরবর্তী সময়ের বিষয়ে বলতে গিয়ে পৌল লিখেছিলেন: “যিহোশূয় যদি তাহাদিগকে বিশ্রাম দিতেন, তবে ঈশ্বর তৎপরে অন্য দিনের কথা কহিতেন না। সুতরাং ঈশ্বরের প্রজাদের নিমিত্ত বিশ্রামকালের ভোগ বাকী রহিয়াছে।” (ইব্রীয় ৪:৮, ৯) ‘ঈশ্বরের প্রজা’ বলতে পৌল খ্রিস্টানদের নির্দেশ করেছিলেন। তার মানে কি এই যে, খ্রিস্টানরা ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করতে পারত? অবশ্যই পারত—যিহুদি ও ন-যিহুদি খ্রিস্টানরা, উভয়েই!
কেউ কেউ ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়
১৩, ১৪. মোশির ব্যবস্থা পালন করা ও ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করার মধ্যে কী সম্পর্ক ছিল (ক) মোশির দিনে? (খ) প্রথম শতাব্দীতে?
১৩ পৌল যখন ইব্রীয় খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লিখেছিলেন, তখন তিনি এই বিষয়ে চিন্তিত ছিলেন যে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের অগ্রগতির সঙ্গে সহযোগিতা করছিল না। (পড়ুন, ইব্রীয় ৪:১.) কোন অর্থে সহযোগিতা করছিল না? আশ্চর্যের বিষয়টা হল, এর সঙ্গে মোশির ব্যবস্থা পালন করার বিষয়টা জড়িত ছিল। প্রায় ১,৫০০ বছর ধরে, এমন যেকোনো ইস্রায়েলীয়কে ব্যবস্থা পালন করতে হয়েছিল, যিনি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করতে আকাঙ্ক্ষী ছিলেন। কিন্তু, যিশুর মৃত্যুর মাধ্যমে সেই ব্যবস্থা লোপ পেয়েছিল। কিছু খ্রিস্টান সেটা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল আর তারা ব্যবস্থার নির্দিষ্ট কিছু বিষয় পালন করেই চলছিল।b
১৪ যে-খ্রিস্টানরা ব্যবস্থা পালন করার ব্যাপারে উৎসুক ছিল, তাদের উদ্দেশে পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, যিশুর মহাযাজকত্ব, নতুন নিয়ম বা চুক্তি এবং আত্মিক মন্দির সবই তাদের প্রাক-খ্রিস্টীয় সময়ের অনুরূপ বিষয়গুলোর চেয়ে আরও মহত্তর ছিল। (ইব্রীয় ৭:২৬-২৮; ৮:৭-১০; ৯:১১, ১২) তাই, সম্ভবত ব্যবস্থার অধীন সাপ্তাহিক বিশ্রামবারের বিষয়টা মনে রেখে পৌল যিহোবার বিশ্রাম দিনে প্রবেশ করার বিশেষ সুযোগ সম্বন্ধে এই কথা লিখেছিলেন: “সুতরাং ঈশ্বরের প্রজাদের নিমিত্ত বিশ্রামকালের ভোগ বাকী রহিয়াছে। ফলতঃ যেরূপ ঈশ্বর আপন কর্ম্ম হইতে বিশ্রাম করিয়াছিলেন, তেমনি যে ব্যক্তি তাঁহার বিশ্রামে প্রবেশ করিয়াছে, সেও আপনার কর্ম্ম হইতে বিশ্রাম করিতে পাইল।” (ইব্রীয় ৪:৮-১০) সেই ইব্রীয় খ্রিস্টানদের এইরকম চিন্তা করা বাদ দিতে হয়েছিল যে, তারা মোশির ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে কাজ করার মাধ্যমে যিহোবার অনুগ্রহ লাভ করতে পারে। সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিন থেকে ঈশ্বর উদারভাবে সেই ব্যক্তিদের ওপর তাঁর অনুগ্রহ বর্ষণ করে আসছেন, যারা যিশু খ্রিস্টের প্রতি বিশ্বাস দেখিয়ে চলে।
১৫. আমরা যদি ঈশ্বরের বিশ্রাম প্রবেশ করতে চাই, তাহলে কেন বাধ্যতা অপরিহার্য?
১৫ কোন বিষয়টা মোশির দিনে ইস্রায়েলীয়দেরকে প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করায় বাধা দিয়েছিল? অবাধ্যতা। কোন বিষয়টা পৌলের দিনে কিছু খ্রিস্টানকে ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করায় বাধা দিয়েছিল? সেই একই বিষয়—অবাধ্যতা। তারা এটা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল যে, ব্যবস্থা এর উদ্দেশ্য সাধন করেছে এবং যিহোবা তাঁর লোকেদের ভিন্ন এক দিকে পরিচালিত করছিলেন।
বর্তমানে ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করা
১৬, ১৭. (ক) বর্তমানে ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করার মানে কী? (খ) পরবর্তী প্রবন্ধে কী আলোচনা করা হবে?
১৬ বর্তমানে আমাদের মধ্যে কেউই এটা বিশ্বাস করে না যে, পরিত্রাণ লাভ করার জন্য খ্রিস্টানদেরকে মোশির ব্যবস্থা পালন করতে হবে। ইফিষীয়দের উদ্দেশে পৌলের অনুপ্রাণিত কথাগুলো একেবারে স্পষ্ট: “কেননা অনুগ্রহেই, বিশ্বাস দ্বারা তোমরা পরিত্রাণ পাইয়াছ; এবং ইহা তোমাদের হইতে হয় নাই, ঈশ্বরেরই দান; তাহা কর্ম্মের ফল নয়, যেন কেহ শ্লাঘা না করে।” (ইফি. ২:৮, ৯) তাহলে, খ্রিস্টানদের জন্য ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করার মানে কী? যিহোবা সপ্তম দিনকে—তাঁর বিশ্রাম দিনকে—পৃথক করে রেখেছিলেন, যাতে পৃথিবীর বিষয়ে তাঁর উদ্দেশ্য চমৎকারভাবে পরিপূর্ণ করতে পারেন। আমরা যিহোবার বিশ্রামে প্রবেশ করতে পারি—অথবা তাঁর বিশ্রামে তাঁর সঙ্গে যোগ দিতে পারি—যদি আমরা তাঁর অগ্রগতিশীল উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে বাধ্যতা সহকারে কাজ করি, যে-উদ্দেশ্যকে তিনি তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের কাছে প্রকাশ করেছেন।
১৭ অন্যদিকে, যদি আমরা বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণীর মাধ্যমে প্রাপ্ত বাইবেলভিত্তিক পরামর্শকে তুচ্ছ বলে গণ্য করে এক স্বাধীন পথ অনুসরণ করা বেছে নিই, তাহলে আমরা নিজেদেরকে ঈশ্বরের প্রকাশিত উদ্দেশ্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার মতো অবস্থানে রাখব। এটা যিহোবার সঙ্গে আমাদের শান্তিপূর্ণ সম্পর্ককে ঝুঁকির মুখে ফেলে। পরবর্তী প্রবন্ধে, আমরা এমন কিছু পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো আমাদেরকে আমরা যে বাধ্য, তা দেখানোর সুযোগ করে দেবে। আর ওই পরিস্থিতিগুলোতে আমাদের নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত দেখাবে যে, আমরা ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করেছি কি না।
[পাদটীকাগুলো]
a যাজকরা ও লেবীয়রা বিশ্রামবারে মন্দিরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কাজ সম্পাদন করত এবং ‘নির্দোষ থাকিত।’ ঈশ্বরের মহান আধ্যাত্মিক মন্দিরের মহাযাজক হিসেবে যিশুও বিশ্রামবার লঙ্ঘন করে ফেলার ভয় না করে তাঁর আধ্যাত্মিক কার্যভার সম্পন্ন করতে পারতেন।—মথি ১২:৫, ৬.
b সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনের পর, কোনো যিহুদি খ্রিস্টান প্রায়শ্চিত্ত দিনের ব্যবস্থাগুলো পালন করার পর্যায় পর্যন্ত গিয়েছিলেন কি না, তা জানা যায় না। তা করা নিশ্চিতভাবেই যিশুর বলিদানের প্রতি সম্মানের অভাব প্রদর্শন করত। তবে, কিছু যিহুদি খ্রিস্টান ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য প্রথা ধরে রেখেছিল।—গালা. ৪:৯-১১.
ধ্যানের জন্য প্রশ্নগুলো
• ঈশ্বরের সপ্তম দিনের বিশ্রামের উদ্দেশ্য কী?
• কীভাবে আমরা জানি যে, সপ্তম দিন বর্তমানেও চলছে?
• কোন বিষয়টা মোশির দিনে ইস্রায়েলীয়দেরকে আর সেইসঙ্গে প্রথম শতাব্দীর কিছু খ্রিস্টানকে ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করায় বাধা দিয়েছিল?
• বর্তমানে ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করার মানে কী?
[২৭ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
আমরা যিহোবার বিশ্রামে প্রবেশ করতে পারি, যদি আমরা তাঁর অগ্রগতিশীল উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে বাধ্যতা সহকারে কাজ করি, যে-উদ্দেশ্যকে তিনি তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের কাছে প্রকাশ করেছেন
[২৬, ২৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করার জন্য তাঁর লোকেদের কোন বিষয়টা করা সবসময় আবশ্যক?