“ঈশ্বরের ইস্রায়েল” এবং “বিস্তর লোক”
“আমি দৃষ্টি করিলাম, আর দেখ, . . . বিস্তর লোক, তাহা গণনা করিতে সমর্থ কেহ ছিল না।”—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯.
১-৩. (ক) অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের কোন্ অপূর্ব স্বর্গীয় আশা রয়েছে? (খ) কিভাবে শয়তান প্রথম-শতাব্দীর মণ্ডলীকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে? (গ) ১৯১৯ সালে কী ঘটে যা প্রমাণ করে যে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের মণ্ডলীকে দূষিত করার যে শয়তানের প্রচেষ্টা তা ব্যর্থ হয়েছে?
যিহোবার উদ্দেশ্য সাধনের এক প্রধান দিক ছিল সা.শ. ৩৩ সালে “ঈশ্বরের ইস্রায়েল” এর প্রতিষ্ঠা। (গালাতীয় ৬:১৬) এর অভিষিক্ত সদস্যদের আশা হল অমর আত্মিক প্রাণী হওয়া আর খ্রীষ্টের সাথে ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যে শাসন করা। (১ করিন্থীয় ১৫:৫০, ৫৩, ৫৪) এই অবস্থায়, যিহোবার নামকে মহিমান্বিত করার এবং পরম শত্রু, শয়তান দিয়াবলের মস্তক চূর্ণ করার ক্ষেত্রে তাদের এক প্রধান ভূমিকা রয়েছে। (আদিপুস্তক ৩:১৫; রোমীয় ১৬:২০) এটি কোন আশ্চর্যের বিষয় নয় যে শয়তান তাড়িত ও দূষিত করতে চেষ্টা করার দ্বারা তার সমস্ত শক্তিকে ব্যবহার করেছে এই নতুন মণ্ডলীকে ধ্বংস করতে!—২ তীমথিয় ২:১৮; যিহূদার পত্র ৪; প্রকাশিত বাক্য ২:১০.
২ যখন প্রেরিতেরা জীবিত ছিলেন, তখন শয়তান এই বিষয়ে সফল হতে পারেনি। কিন্তু, তাদের মৃত্যুর পর, অনিয়ন্ত্রিতরূপে ধর্মভ্রষ্টতা ছড়িয়ে পড়ে। পরিশেষে, মানুষের চোখে, যীশুর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত প্রকৃত খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীটি আপাতদৃষ্টিতে দূষিত হওয়ার আভাস দেয় বিশেষ করে যখন শয়তান এক ধর্মীয় ভ্রষ্টতার হাস্যস্কর অনুকরণের প্রবর্তন করে যা আজকে খ্রীষ্টজগৎ হিসাবে পরিচিত। (২ থিষলনীকীয় ২:৩-৮) তৎসত্ত্বেও, সত্য খ্রীষ্টতত্ত্বের অস্তিত্ব কিন্তু থেকেই গেছে।—মথি ২৮:২০.
৩ গোম ও শ্যামাঘাস সম্বন্ধীয় তাঁর দৃষ্টান্তে, যীশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে কিছু সময়ের জন্য সত্য খ্রীষ্টানেরা “শ্যামাঘাস,” অর্থাৎ মিথ্যা খ্রীষ্টানদের সাথে বৃদ্ধি পাবে; এবং এটাই ঘটেছিল। কিন্তু তিনি এও বলেছিলেন যে শেষকালে দৃশ্যতভাবে “রাজ্যের সন্তানগণ”-কে “শ্যামাঘাসের” মধ্য থেকে আবার আলাদা করে বেছে নেওয়া হবে। (মথি ১৩:৩৬-৪৩) এটাও সত্য প্রমাণিত হয়। ১৯১৯ সালে প্রকৃত অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা বাবিলনীয় বন্দীত্ব থেকে বেরিয়ে আসে। ঐশিকভাবে তারা “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” হিসাবে স্বীকৃতি পায় এবং সাহসের সাথে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করতে আরম্ভ করে। (মথি ২৪:১৪, ৪৫-৪৭; প্রকাশিত বাক্য ১৮:৪) এদের মধ্যে প্রায় সকলেই পরজাতীয় ছিল; কিন্তু যেহেতু তাদের অব্রাহামের মত বিশ্বাস ছিল, তাই তারা প্রকৃতপক্ষে ‘অব্রাহামের বংশ।’ তারা ছিল “ঈশ্বরের ইস্রায়েল” এর সদস্য।—গালাতীয় ৩:৭, ২৬-২৯.
“বিস্তর লোক”
৪. ১৯৩০ এর দশকে খ্রীষ্টানদের কোন্ দলটি বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় হয়ে পড়ে?
৪ শুরুতে, যারা এই অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের প্রচারের প্রতি সাড়া দিয়েছিল তারাও আত্মিক ইস্রায়েল হিসাবে পরিচিত হয়, অর্থাৎ ১,৪৪,০০০ এর অবশিষ্টাংশ, যাদের স্বর্গীয় আশা আছে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭) কিন্তু, বিশেষকরে ১৯৩০ এর দশকে আরেকটি দল লক্ষ্যণীয়ভাবে প্রকাশ পায়। এদের শনাক্ত করা হয় মেষপালের দৃষ্টান্তে উল্লেখিত “অপর মেষ” এর সাথে। (যোহন ১০:১৬, NW) এরা ছিল খ্রীষ্টের শিষ্য যাদের আশা হল পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্ত জীবন লাভ করা। এরা হল রূপক অর্থে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের আত্মিক বংশধর। (যিশাইয় ৫৯:২১; ৬৬:২২; তুলনা করুন ১ করিন্থীয় ৪:১৫, ১৬.) তারা অভিষিক্ত খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীকে বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস হিসাবে স্বীকার করে এবং তাদের অভিষিক্ত ভাইদের মত, তাদেরও যিহোবার প্রতি গভীর প্রেম, যীশুর বলিদানের উপর বিশ্বাস, ঈশ্বরকে প্রশংসা করার উদ্যোগ এবং ধার্মিকতার জন্য কষ্ট সহ্য করার ইচ্ছা আছে।
৫. কিভাবে অপর মেষের পরিস্থিতি ক্রমশই পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারা যায়?
৫ প্রথমে এই অপর মেষের অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণায় উপনীত হওয়া সম্ভব হয়নি, কিন্তু যতই সময় অতিবাহিত হতে থাকে, ততই বিষয়গুলি স্পষ্ট হয়ে পড়ে। ১৯৩২ সালে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের উৎসাহ দেওয়া হয় প্রচার কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য অপর মেষদের আমন্ত্রণ জানাতে—যা ইতিমধ্যেই অনেক অপর মেষেরা করতে আরম্ভ করে দিয়েছিল। ১৯৩৪ সালে এই অপর মেষদের উৎসাহ দেওয়া হয় জলে বাপ্তিস্ম নিতে। ১৯৩৫ সালে তাদের প্রকাশিত বাক্যের ৭ অধ্যায় অনুসারে “বিস্তর লোক” হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ১৯৩৮ সালে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয় দর্শক হিসাবে যীশু খ্রীষ্টের স্মরণার্থক সভায় যোগদান করতে। ১৯৫১ সালে তাদের মধ্যে পরিপক্ব ব্যক্তিদের “রাজকুমার” হিসাবে চিহ্নিত করা হয় যারা “বাত্যা হইতে আচ্ছাদন, ও ঝটিকা হইতে অন্তরাল” হিসাবে সেবা করবে। (গীতসংহিতা ৪৫:১৬, NW; যিশাইয় ৩২:১, ২) ১৯৫৩ সালে, এটি স্পষ্ট হয় যে ঈশ্বরের পার্থিব সংগঠন—যার অধিকাংশই অপর মেষদের দ্বারা গঠিত—সেটাই হবে নতুন জগতে অস্তিত্ব প্রাপ্ত পার্থিব সমাজের কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৮৫ সালে এটি জানা যায় যে যীশুর মুক্তির মূল্যের ভিত্তিতে, অপর মেষকে ঈশ্বরের বন্ধু হিসাবে ধার্মিক বলে ঘোষণা করা হয় এবং এরই ভিত্তিতে তারা হর্মাগিদোন থেকে রক্ষা পাবে।
৬. আজকের দিনে অভিষিক্ত ও অপর মেষেদের পাক্ষিক পরিস্থিতি কী এবং এই সম্বন্ধে কোন্ প্রশ্নগুলি উত্থাপিত হয়?
৬ এখন এই “শেষকালের” শেষের দিকে ১,৪৪,০০০ এর অধিকাংশই মারা গেছে এবং তারা তাদের স্বর্গীয় পুরস্কার লাভ করেছে। (২ তীমথিয় ৩:১; প্রকাশিত বাক্য ৬:৯-১১; ১৪:১৩) খ্রীষ্টানের যাদের আশা হল পার্থিব তারাই এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুসমাচার প্রচার করে থাকে এবং এইভাবে যীশুর অভিষিক্ত ভাইদের সাহায্য করাকে তারা এক সুযোগ বলে মনে করে। (মথি ২৫:৪০) যাইহোক, এই অভিষিক্তেরা হল বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস যাদের মাধ্যমে এই সমগ্র শেষকালে আধ্যাত্মিক খাদ্য সরবরাহ করা হয়। যখন সমস্ত অভিষিক্তেরা তাদের স্বর্গীয় পুরস্কার পেয়ে যাবে তখন এই অপর মেষেদের কিধরনের পরিস্থিতি হবে? তখন অপর মেষেদের জন্য কী ব্যবস্থা করা হবে? প্রাচীন ইস্রায়েলের প্রতি একঝলক দৃষ্টি আমাদের সাহায্য করবে ওই প্রশ্নগুলির উত্তর পেতে।
তৎসদৃশ “যাজকদের এক রাজ্য”
৭, ৮. নিয়ম চুক্তির অধীনস্থ প্রাচীন ইস্রায়েলকে কতখানি যাজকের এক রাজ্য এবং এক পবিত্র জাতি বলা যায়?
৭ যিহোবা যখন ইস্রায়েলকে তাঁর মনোনীত জাতি হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন তখন তিনি তাদের সাথে এক চুক্তি করেন, এই বলে: “যদি তোমরা আমার রবে অবধান কর ও আমার নিয়ম পালন কর, তবে তোমরা সকল জাতি অপেক্ষা আমার নিজস্ব অধিকার হইবে, কেননা সমস্ত পৃথিবী আমার; আর আমার নিমিত্তে তোমরাই যাজকদের এক রাজ্য ও পবিত্র এক জাতি হইবে।” (যাত্রাপুস্তক ১৯:৫, ৬) নিয়ম চুক্তির ভিত্তিতে ইস্রায়েল ছিল যিহোবার বিশেষ লোক। কিন্তু যাজকদের এক রাজ্য এবং পবিত্র এক জাতি সম্বন্ধীয় যে প্রতিজ্ঞা তা কিভাবে পরিপূর্ণতা লাভ করবে?
৮ ইস্রায়েল, যখন বিশ্বস্ত ছিল, তখন তারা যিহোবার সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করেছিল এবং তাঁকে তাদের রাজা হিসাবে গ্রহণ করেছিল। (যিশাইয় ৩৩:২২) অতএব, তারা এক রাজ্য ছিল। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে যেমন প্রকাশিত হয়েছিল তা দেখায় যে, “এক রাজ্য” সম্বন্ধীয় যে প্রতিজ্ঞা এর সাথে আরও অতিরিক্ত কিছু অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও, তারা যখন যিহোবার নিয়মকে মেনে চলত, তখন তারা তাদের চারপাশে অবস্থিত জাতিগুলির তুলনায় পরিচ্ছন্ন ও আলাদা ছিল। তারা ছিল এক পবিত্র জাতি। (দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৫, ৬) তাদের যাজকদের কি এক রাজ্য ছিল? ইস্রায়েল জাতিদের মধ্যে লেবীয়দের আলাদা করে বেছে নেওয়া হয় মন্দিরেতে পরিচর্যা করার জন্য এবং সেই সম্প্রদায়ের মধ্যে এক লেবীয় যাজকবর্গ ছিল। যখন মোশির নিয়ম প্রবর্তিত হয়, তখন প্রত্যেকটি ন-লেবীয় পরিবারের প্রথমজাতদের বিনিময়ে লেবীয় পুরুষদের গ্রহণ করা হয়।a (যাত্রাপুস্তক ২২:২৯; গণনাপুস্তক ৩:১১-১৬, ৪০-৫১) এইভাবে, ইস্রায়েলের প্রত্যেকটি পরিবার, পরোক্ষভাবে মন্দিরের যে পরিচর্যা তার প্রতিনিধিত্ব করত। এটি ছিল সবচাইতে নিবিড়তম উপায় যার দ্বারা এই জাতি যাজকগোষ্ঠীর সন্নিকট পৌঁছাতে পারত। তবুও, তারা জাতিগণের সামনে যিহোবার প্রতিনিধিত্ব করত। যদি কোন বিদেশী সত্য ঈশ্বরকে উপাসনা করতে চাইত তাহলে ইস্রায়েলের সংসর্গে আসার মাধ্যমেই সে তা করতে পারত।—২ বংশাবলি ৬:৩২, ৩৩; যিশাইয় ৬০:১০.
৯. ‘যাজক হিসাবে তাঁকে সেবা করার ক্ষেত্রে’ কেন যিহোবা ইস্রায়েলের উত্তর রাজ্যকে প্রত্যাখ্যান করেন?
৯ শলোমনের মৃত্যুর পর, ঈশ্বরের লোকেরা রাজা যারবিয়ামের অধীনে ইস্রায়েলের উত্তর রাজ্য এবং রাজা রহবিয়ামের অধীনস্থ যিহূদার দক্ষিণ রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যেহেতু মন্দির, যা ছিল পবিত্র উপাসনার কেন্দ্রস্থল, যিহূদা অঞ্চলে ছিল, তাই যারবিয়াম তার নিজস্ব জাতীয় অঞ্চলে গোবৎসের প্রতিমা নির্মাণ করার দ্বারা এক অনৈতিক উপাসনার প্রবর্তন করেন। এছাড়াও, “তিনি কতকগুলি উচ্চস্থলীর গৃহ নির্ম্মাণ করিলেন, এবং যাহারা লেবির সন্তান নয়, এমন সকল লোকের মধ্য হইতে যাজক করিলেন।” (১ রাজাবলি ১২:৩১) উত্তরের রাজ্য আরও গভীরভাবে মিথ্যা উপাসনার মধ্যে ডুবে যায় যখন রাজা আহব তার বিদেশী স্ত্রী, ঈষাবলকে, সেই দেশে বাল্ উপাসনার প্রতিষ্ঠা করতে অনুমতি দেন। পরিশেষে, যিহোবা সেই বিদ্রোহী রাজ্যের উপর বিচার ঘোষণা করেন। হোশেয়র মাধ্যমে, তিনি বলেছিলেন: “জ্ঞানের অভাব প্রযুক্ত আমার প্রজাগণ বিনষ্ট হইতেছে; তুমি ত জ্ঞান অগ্রাহ্য করিয়াছ, এই জন্য আমিও তোমাকে নিতান্ত অগ্রাহ্য করিলাম, তুমি আর আমার যাজক থাকিবে না।” (হোশেয় ৪:৬) এর কিছু দিন পরেই, অশূরীয়রা ইস্রায়েলের উত্তর রাজ্যকে ধ্বংস করে।
১০. যিহূদার দক্ষিণ রাজ্য বিশ্বস্ত থাকাকালীন, কিভাবে জাতিগণের কাছে যিহোবার প্রতিনিধিত্ব করত?
১০ যিহূদার, দক্ষিণ রাজ্যের কী হয়? হিষ্কিয়ের দিনে, যিহোবা যিশাইয়ের মাধ্যমে বলেছিলেন: “তোমরাই আমার সাক্ষী, এবং আমার মনোনীত দাস, . . . যে প্রজাবৃন্দকে আমি আপনার নিমিত্ত নির্ম্মাণ করিয়াছি, তাহারা আমার প্রশংসা প্রচার করিবে।” (যিশাইয় ৪৩:১০, ২১; ৪৪:২১) বিশ্বস্ত থাকাকালীন, দক্ষিণ রাজ্য জাতিগণের কাছে যিহোবার মহিমা প্রচার করার জন্য এবং সহৃদয় ব্যক্তিদের মন্দিরেতে তাঁকে উপসনা করতে আকৃষ্ট করানোর জন্য এবং যোগ্য লেবীয় পৌরোহিত্বের দ্বারা পরিচর্যা পাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়।
ইস্রায়েলের মাঝে বিদেশীরা
১১, ১২. কিছু বিদেশীদের নাম করুন যারা ইস্রায়েলের সংসর্গে এসে যিহোবার সেবা করে।
১১ যে সমস্ত বিদেশীরা এই জাতীয় সাক্ষ্যদানের প্রতি সাড়া দিয়েছিল, মোশির মাধ্যমে দেওয়া নিয়মে তাদের জন্যও ব্যবস্থা ছিল—বিশেষ করে মোশি, যার স্ত্রী, সিপ্পোরা, একজন মিদীয়নীয় ছিলেন। ন-ইস্রায়েলীয়দের অন্তর্ভুক্ত “মিশ্রিত লোকদের মহাজনতা” ইস্রায়েলীয়দের সাথে মিশর পরিত্যাগ করে এবং নিয়ম যখন দেওয়া হয় তখন তারা সেই স্থানে উপস্থিত থাকে। (যাত্রাপুস্তক ২:১৬-২২; ১২:৩৮; গণনাপুস্তক ১১:৪) রাহব ও তার পরিবার যিরীহোর ধ্বংস থেকে রক্ষা পায় এবং পরে তারা যিহূদী মণ্ডলীর মধ্যে গৃহীত হয়। (যিহোশূয়ের পুস্তক ৬:২৩-২৫) এর কিছুকাল পরেই, গিবীয়নীয়রা ইস্রায়েলের সাথে শান্তি স্থাপন করে এবং আবাসের কাজ করার ক্ষেত্রে নিযুক্ত হয়।—যিহোশূয়ের পুস্তক ৯:৩-২৭; এছাড়াও দেখুন ১ রাজাবলি ৮:৪১-৪৩; ইষ্টের ৮:১৭.
১২ পরিশেষে, বিদেশীরা উচ্চপদে সেবা করার সুযোগ পেয়েছিল। বাৎশেবার স্বামী হিত্তীয় ঊরিয়কে দায়ূদের এক “বীর্য্যবান” লোক হিসাবে ধরা হত, এমনকি অম্মোনীয় সেলকও এই খ্যাতি পেয়েছিলেন। (১ বংশাবলি ১১:২৬, ৩৯, ৪১; ২ শমূয়েল ১১:৩, ৪) এবদ-মেলক, একজন ইথিয়পীয়, তিনিও রাজপ্রাসাদে কাজ করতেন রাজার কাছে যাওয়ার অনুমতি তার ছিল। (যিরমিয় ৩৮:৭-৯) যখন ইস্রায়েলীয়রা বাবিলনের বন্দীত্ব থেকে ফিরে আসে, তখন যাজকদের সাহায্য করার জন্য ন-ইস্রায়েলীয় নথীনীমদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। (ইষ্রা ৭:২৪) যেহেতু বহুসংখ্যক এই বিশ্বস্ত বিদেশীরা অর্থাৎ প্রবাসীরা, যারা আজকের দিনে বিস্তর লোককে চিত্রিত করছে বলে ধরে নেওয়া হয়, সেইহেতু তাদের পরিস্থিতি আমাদের জন্য এক উৎসাহের বিষয়।
১৩, ১৪. (ক) ইস্রায়েল দেশে ধর্মান্তরিতদের জন্য কোন্ সুযোগ ও দায়িত্বগুলি ছিল? (খ) বিশ্বস্ত ধর্মান্তরিতদের প্রতি ইস্রায়েলীয়দের কিধরনের দৃষ্টিভঙ্গি থাকা প্রয়োজন ছিল?
১৩ সেইসব ব্যক্তিরা ছিল ধর্মান্তরিত, মোশির নিয়মের অধীনস্থ যিহোবার উৎসর্গীকৃত উপাসক যারা ইস্রায়েলীয়দের মত অন্যান্য জাতিদের থেকে পৃথক ছিল। (লেবীয় পুস্তক ২৪:২২) তারা বলিদান উৎসর্গ করত, মিথ্যা উপাসনার থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখত এবং রক্ত থেকে দূরে থাকত, ঠিক ইস্রায়েলীয়রা যা করত। (লেবীয় পুস্তক ১৭:১০-১৪; ২০:২) তারা শলোমনের মন্দির নির্মাণে সাহায্য করেছিল এবং রাজা আসা ও রাজা হিষ্কিয়ের অধীনে সত্য উপাসনাকে পুনর্স্থাপন করার ক্ষেত্রে যোগদান করেছিল। (১ বংশাবলি ২২:২; ২ বংশাবলি ১৫:৮-১৪; ৩০:২৫) যখন সা.শ. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিন পিতর রাজ্যের প্রথম চাবিটি ব্যবহার করেন, তার কথাগুলি “কি যিহূদী কি [ন-যিহূদী] যিহূদী-ধর্ম্মাবলম্বী” সকলেই শুনেছিল। সম্ভবত, ঐদিনে তিন হাজার জন যারা বাপ্তাইজিত হয় তাদের মধ্যে ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরাও ছিল। (প্রেরিত ২:১০, ৪১) কিছুদিন পর, ইথিয়পীয়বাসী এক ধর্মান্তরিত ব্যক্তি ফিলিপের দ্বারা বাপ্তাইজিত হয়—কর্ণীলিয় ও তার পরিবারের উপর রাজ্যের শেষ চাবিটি পিতর ব্যবহার করার ঠিক আগে। (মথি ১৬:১৯; প্রেরিত ৮:২৬-৪০; ১০:৩০-৪৮) স্পষ্টতই, ধর্মান্তরিতদের কখনও পরজাতীয় বলে গণ্য করা হত না।
১৪ কিন্তু, সেই দেশে ইস্রায়েলীয়দের মত ধর্মান্তরিতদের অবস্থা ছিল না। ধর্মান্তরিতেরা যাজক হিসাবে কাজ করতে পারত না এবং তাদের প্রথমজাতদের লেবীয় যাজকবর্গের মধ্যে কোন প্রতিনিধি থাকত না।b আর এই ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা ইস্রায়েল দেশের কোন উত্তরাধিকারী হতে পারত না। তবুও, ইস্রায়েলীয়দের আদেশ দেওয়া হয়েছিল যে তারা যেন বিশ্বস্ত ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতি দেখায় এবং ভাই হিসাবে তাদের গণ্য করে।—লেবীয় পুস্তক ১৯:৩৩, ৩৪.
আত্মিক জাতি
১৫. কী ফল দাঁড়ায় যখন সাধারণ ইস্রায়েল মশীহকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করে?
১৫ এমনভাবে নিয়ম গঠিত হয়েছিল যাতে করে তাদের পারিপার্শ্বিক জাতিদের থেকে ইস্রায়েলকে পরিষ্কার ও পৃথক রাখা যায়। কিন্তু এটি আরেকটি উদ্দেশ্য সম্পাদন করেছিল। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “ব্যবস্থা খ্রীষ্টের কাছে আনিবার জন্য আমাদের পরিচালক দাস হইয়া উঠিল, যেন আমরা বিশ্বাস হেতু ধার্ম্মিক গণিত হই।” (গালাতীয় ৩:২৪) কিন্তু দুঃখের বিষয় হল যে, অধিকাংশ ইস্রায়েলীয়রা নিয়মের দ্বারা খ্রীষ্টের কাছে পরিচালিত হতে ব্যর্থ হয়। (মথি ২৩:১৫; যোহন ১:১১) অতএব যিহোবা ঈশ্বর সেই জাতিকে পরিত্যাগ করেন এবং “ঈশ্বরের ইস্রায়েল” এর জন্মের জন্য দায়ী হন। এছাড়াও, তিনি এই নতুন ইস্রায়েলের সম্পূর্ণ নাগরিক হওয়ার জন্য ন-যিহূদীদের আমন্ত্রণ জানান। (গালাতীয় ৩:২৮; ৬:১৬) এই নতুন জাতির উপরে, যাত্রাপুস্তক ১৯:৫, ৬ পদে উল্লেখিত রাজকীয় যাজকবর্গ সম্বন্ধে যিহোবার যে প্রতিজ্ঞা তা অপূর্বরূপে, চরম পরিপূর্ণতা লাভ করবে। কিভাবে?
১৬, ১৭. পৃথিবীর অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা কোন্ অর্থে “রাজকীয়”? এবং “যাজকবর্গ”?
১৬ তার সময়ের অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের উদ্দেশ্যে লেখার সময় পিতর যাত্রাপুস্তক ১৯:৬ পদ উদ্ধৃত করে বলেছিলেন: “তোমরা ‘মনোনীত বংশ, রাজকীয় যাজকবর্গ, পবিত্র জাতি [ঈশ্বরের] নিজস্ব প্রজাবৃন্দ।’” (১ পিতর ২:৯) এর অর্থ কী? পৃথিবীর এই অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা কী রাজা? না, তাদের রাজার পদ হল এখনও ভবিষ্যতের বিষয়। (১ করিন্থীয় ৪:৮) তবুও, তারা “রাজকীয়” এই অর্থে যে ভবিষ্যতে রাজকীয় সুযোগগুলি পাওয়ার জন্য তারা চিহ্নিত। এমনকি এখনই তারা এক জাতি হিসাবে রাজার অধীনস্থ অর্থাৎ যীশুর, যিনি মহান সার্বভৌম, যিহোবা ঈশ্বরের দ্বারা মনোনীত। পৌল লিখেছিলেন: “[যিহোবা] আমাদিগকে অন্ধকারের কর্ত্তৃত্ব হইতে উদ্ধার করিয়া আপন প্রেমভূমি পুত্ত্রের রাজ্যে আনয়ন করিয়াছেন।”—কলসীয় ১:১৩.
১৭ পৃথিবীতে যে সমস্ত অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা আছেন তারা কি যাজকবর্গের অন্তর্ভুক্ত? এক অর্থে, হ্যাঁ। মণ্ডলীগতভাবে, তারা অবিতর্কিতরূপে যাজকের কাজ করে চলেছে। পিতর এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন যখন তিনি বলেছিলেন: “তোমরা . . . আত্মিক গৃহস্বরূপে গাঁথিয়া তোলা যাইতেছ, যেন পবিত্র যাজকবর্গ” হতে পার। (১ পিতর ২:৪, ৫; ১ করিন্থীয় ৩:১৬) আজকে, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের অবশিষ্টাংশ গোষ্ঠী হিসাবে “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস,” যাদের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক খাদ্য সরবরাহ করা হয়। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) প্রাচীন ইস্রায়েলের ক্ষেত্রে যেমন ছিল, যে কেউ যিহোবাকে উপাসনা করতে চাইবে তাকে এই অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের সংসর্গে এসে তা করতে হবে।
১৮. যাজকবর্গ হিসাবে, পৃথিবীস্থ অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের মণ্ডলীর প্রাথমিক দায়িত্বটি কী?
১৮ এছাড়াও, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা আজ ইস্রায়েলের পরিবর্তে জাতিগণের কাছে যিহোবার মহিমা সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার এক মহান সুযোগ পেয়েছে। প্রসঙ্গ দেখায় যে যখন পিতর অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের এক পবিত্র যাজকবর্গ বলে সম্বোধন করেছিলেন, তখন প্রচার কাজের কথাই তার মনে ছিল। অবশ্যই, তিনি যাত্রাপুস্তক ১৯:৬ পদে যিহোবার প্রতিজ্ঞার যে বাক্যগুলি তার সাথে ইস্রায়েলের উদ্দেশ্যে যিশাইয় ৪৩:২১ পদে তাঁর বাক্যগুলির সমন্বয় ঘটান, যখন তিনি বলেন: “তোমরা . . . রাজকীয় যাজকবর্গ, . . . যেন তাঁহারই গুণকীর্ত্তন কর, যিনি তোমাদিগকে অন্ধকার হইতে আপনার আশ্চর্য্য জ্যোতির মধ্যে আহ্বান করিয়াছেন।” (১ পিতর ২:৯) এরই সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে, পৌল মন্দিরে উৎসর্গ হিসাবে যিহোবার গুণকীর্ত্তন করার কথা ঘোষণা করেন। তিনি লিখেছিলেন: “অতএব আইস, আমরা [যীশুর] দ্বারা ঈশ্বরের উদ্দেশে নিয়ত স্তব-বলি, অর্থাৎ তাঁহার নাম স্বীকারকারী ওষ্ঠাধরের ফল, উৎসর্গ করি।”—ইব্রীয় ১৩:১৫.
এক স্বর্গীয় পরিপূর্ণতা
১৯. ইস্রায়েল যে এক যাজকের রাজ্য হবে এই বিষয় সম্বন্ধে যে প্রতিজ্ঞা তার চরম ও অপূর্ব পরিপূর্ণতা কী?
১৯ কিন্তু, অবশেষে, যাত্রাপুস্তক ১৯:৫, ৬ পদ আরও ব্যাপকভাবে পরিপূর্ণতা লাভ করবে। প্রকাশিত বাক্য পুস্তকে, প্রেরিত যোহন শুনতে পান স্বর্গীয় প্রাণীরা পুনরুত্থিত যীশুকে প্রশংসা করার সময় এই শাস্ত্রটি প্রয়োগ করছে: “তুমি হত হইয়াছ, এবং আপনার রক্ত দ্বারা সমুদয় বংশ ও ভাষা ও জাতি ও লোকবৃন্দ হইতে ঈশ্বরের নিমিত্ত লোকদিগকে ক্রয় করিয়াছ; এবং আমাদের ঈশ্বরের উদ্দেশে তাহাদিগকে রাজ্য ও যাজক করিয়াছ; আর তাহারা পৃথিবীর উপরে রাজত্ব করিবে।” (প্রকাশিত বাক্য ৫:৯, ১০) তাহলে এর চরম অর্থে এই রাজকীয় যাজকবর্গ হল ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্য, শাসনকারী কর্তৃপক্ষ যার জন্য যীশু আমাদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন। (লূক ১১:২) সমগ্র ১,৪৪,০০০ অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা যারা শেষ পর্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে সহনশীলতা দেখাবে তাদের প্রত্যেকের এই রাজ্যের ব্যবস্থায় অধিকার থাকবে। (প্রকাশিত বাক্য ২০:৪, ৬) এত বছর আগে মোশির মাধ্যমে করা প্রতিজ্ঞার কী অপূর্ব পরিপূর্ণতা!
২০. কোন্ প্রশ্নের উত্তর এখনও দেওয়ার প্রয়োজন আছে?
২০ বিস্তর লোকের অবস্থা ও তাদের ভবিষ্যতের সাথে এই সব কিছুর কী সম্পর্ক যখন সমস্ত অভিষিক্তেরা তাদের অপূর্ব উত্তরাধিকার লাভ করবে? এই ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলির শেষ প্রবন্ধটিতে এই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
[পাদটীকাগুলো]
a যখন ইস্রায়েলে যাজকগোষ্ঠীর প্রবর্তন হয়, তখন ইস্রায়েল জাতির অন্তর্ভুক্ত ন-লেবীয় বংশের প্রথমজাত পুরুষ সন্তানদের এবং লেবীয় বংশের পুরুষ সন্তানদের গণনা করা হয়। এর ফলে দেখা যায় যে লেবীয় পুরুষ সন্তানদের তুলনায় অপর বংশের মধ্যে ২৭৩টি বেশি প্রথমজাত রয়েছে। অতএব, যিহোবা আদেশ দেন যে প্রত্যেকটি ২৭৩রের জন্য পাঁচ সেকেল দেওয়া হবে মুক্তির অতিরিক্ত মূল্য হিসাবে।
b সা.শ.পূ. ১৫১৩ সালে যখন নিয়মের প্রবর্তন করা হয় তখন ন-ইস্রায়েলীয়দের মিশ্রিত জনতা সেখানে উপস্থিত ছিল, কিন্তু তাদের প্রথমজাতদের মধ্যে নেওয়া হয়নি যখন ইস্রায়েলদের প্রথমজাতদের বিনিময়ে লেবীয়দের গ্রহণ করা হয়েছিল। (৮ম অনুচ্ছেদ দেখুন।) তাই ন-ইস্রায়েলীয়দের যে প্রথমজাত তাদের পরিবর্তে কোন লেবীয়দের গ্রহণ করা হয়নি।
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারবেন?
◻ কিভাবে অপর মেষের অবস্থা ক্রমশই পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারা যায়?
◻ যাজক হিসাবে তাঁকে সেবা করার ক্ষেত্রে কেন ইস্রায়েলের উত্তর রাজ্যকে যিহোবা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন?
◻ বিশ্বস্ত থাকাকালীন, জাতিগণের সামনে যিহূদার কিধরনের অবস্থা ছিল?
◻ ইস্রায়েলে বিশ্বস্ত ধর্মান্তরিতদের কী অবস্থা ছিল?
◻ অভিষিক্ত মণ্ডলী কিভাবে এক যাজকের রাজ্য হিসাবে কাজ করে?
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
রাজকীয় যাজকবর্গ হিসাবে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা পৃথিবীতে যিহোবার মহিমা ঘোষণা করে
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
যাত্রাপুস্তক ১৯:৬ পদের চরম পরিপূর্ণতা হল রাজ্য