পিতামাতা এবং ছেলেমেয়েরা: ঈশ্বরকে প্রথম স্থান দিন!
“ঈশ্বরকে ভয় কর, ও তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন কর।”—উপদেশক ১২:১৩.
১. কিধরনের ভয় পিতামাতা ও ছেলেমেয়েদের গড়ে তোলা উচিত এবং তা তাদের জন্য কী নিয়ে আসবে?
যীশু খ্রীষ্ট সম্বন্ধে একটি ভবিষ্যদ্বাণী বলেছিল যে, “তিনি সদাপ্রভু-ভয়ে আমোদিত হইবেন।” (যিশাইয় ১১:২) তাঁর ভয় বিশেষত ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সশ্রদ্ধ ভয় হেতু ছিল, ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করার ভয়, কারণ তিনি তাঁকে ভালবাসতেন। পিতামাতা এবং ছেলেমেয়েদের সেই একইধরনের খ্রীষ্টতুল্য ভয় গড়ে তুলতে হবে, যা তাদের জন্য আনন্দ নিয়ে আসবে, ঠিক যেমন যীশুর জীবনে তা এনেছিল। তাঁর আদেশগুলির বাধ্য হওয়ার দ্বারা তাদের জীবনে ঈশ্বরকে প্রথম স্থান দিতে হবে। একজন বাইবেল লেখকের কথা অনুযায়ী, “ইহাই সকল মনুষ্যের কর্ত্তব্য।”—উপদেশক ১২:১৩.
২. নিয়মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদেশটি কী ছিল এবং কাদের এটি প্রাথমিকভাবে দেওয়া হয়েছিল?
২ নিয়মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদেশটি হল যে আমরা যেন, ‘আমাদের সমস্ত হৃদয়, প্রাণ ও শক্তি দিয়ে আমাদের ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করি,’ তা মুখ্যত পিতামাতাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছিল। এটি নিয়মের পরবর্তী কথাগুলির দ্বারা দেখানো হয়েছে: “তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল [প্রেমময় যিহোবা সম্বন্ধে এই কথাগুলি] যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে ঐ সমস্তের কথোপকথন করিবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪-৭; মার্ক ১২:২৮-৩০) ঈশ্বরকে প্রেম করার এবং তাদের ছেলেমেয়েদের তা করতে শিক্ষা দেওয়ার দ্বারা পিতামাতাদের আদেশ করা হয়েছিল ঈশ্বরকে প্রথম স্থান দিতে।
এক খ্রীষ্টীয় দায়িত্ব
৩. ছেলেমেয়েদের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার গুরুত্ব যীশু কিভাবে দেখিয়েছিলেন?
৩ এমনকি ছোট ছেলেমেয়েদের মনোযোগ দেওয়ার গুরুত্ব যীশু দেখিয়েছিলেন। একবার যীশুর পৃথিবীতে তাঁর পরিচর্যার শেষের দিকে, লোকেরা তাদের ছোট ছেলেমেয়েদের তাঁর কাছে নিয়ে আসতে শুরু করে। যীশুকে বিরক্ত করা উচিত হবে না এই চিন্তা করে, শিষ্যেরা লোকেদের বারণ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু যীশু তাঁর শিষ্যদের ভর্ৎসনা করেছিলেন: “শিশুগণকে আমার নিকটে আসিতে দেও, উহাদিগকে বারণ করিও না,” যীশু এমনকি “তাহাদিগকে কোলে করিলেন,” এবং এইভাবে স্পর্শ করার দ্বারা ছোট ছেলেমেয়েদের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার গুরুত্ব দেখিয়েছিলেন।—লূক ১৮:১৫-১৭; মার্ক ১০:১৩-১৬.
৪. “সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর” এই আদেশটি কাদের দেওয়া হয়েছিল এবং এটি তাদের কী করতে প্রয়োজন করেছিল?
৪ যীশু এই বিষয়টিও তাঁর অনুগামীদের পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন যে তাদের নিজেদের ছেলেমেয়ে ব্যতিরেকে অন্যদেরও শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে। তাঁর মৃত্যু এবং পুনরুত্থানের পর, যীশু “একেবারে পাঁচ শতের অধিক ভ্রাতাকে দেখা দিলেন”—যার অন্তর্ভুক্ত কিছু পিতামাতা ছিল। (১ করিন্থীয় ১৫:৬) মনে হয় যে এই ঘটনাটি ঘটেছিল গালীলের এক পাহাড়ে যেখানে তাঁর ১১ জন প্রেরিতও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে যীশু তাদের সকলকে উৎসাহ দিয়েছিলেন: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; . . . আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি, সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (মথি ২৮:১৬-২০) ন্যায়সম্মতভাবে কোন খ্রীষ্টান এই আদেশকে অবজ্ঞা করতে পারে না! পিতামাতাদের জন্য তা পালন করার এর অর্থ হল যে তারা তাদের ছেলেমেয়েদের যত্ন নেওয়া এবং সাথে সাথে জনসাধারণ্যে প্রচার এবং শিক্ষা দেওয়ার কাজে অংশ নেবেন।
৫. (ক) কী দেখায় যে অধিকাংশ প্রেরিতেরা বিবাহিত ছিল এবং তাই তাদের ছেলেমেয়ে ছিল? (খ) পরিবারের মস্তকের কোন্ উপদেশ গুরুত্বের সাথে নেওয়া উচিত?
৫ উল্লেখযোগ্যরূপে, এমনকি প্রেরিতদেরও পারিবারিক দায়িত্বগুলির সাথে প্রচার এবং সাথে সাথে ঈশ্বরের পালকে পালন করার মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে হয়েছিল। (যোহন ২১:১-৩, ১৫-১৭; প্রেরিত ১:৮) কারণ বেশির ভাগ, হয়ত তাদের সবাই, বিবাহিত ছিল। তাই প্রেরিত পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন: “অন্য সকল প্রেরিত ও প্রভুর ভ্রাতৃগণ ও কৈফা, ইহাঁদের ন্যায় কোন ধর্ম্মভগিনীকে বিবাহ করিয়া সঙ্গে লইয়াই নানা স্থানে যাইবার অধিকার কি আমাদের নাই?” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (১ করিন্থীয় ৯:৫; মথি ৮:১৪) কয়েকজন প্রেরিতদের হয়ত ছেলেমেয়েও ছিল। প্রাচীন ইতিহাসবিদ্, যেমন ইউসেবিয়াস, বলেন যে পিতরের ছিল। প্রাচীনকালের সকল খ্রীষ্টীয় পিতামাতাদের এই শাস্ত্রীয় উপদেশটি মেনে চলার প্রয়োজন ছিল: “কিন্তু কেহ যদি আপনার সম্পর্কীয় লোকদের বিশেষতঃ নিজ পরিজনগণের জন্য চিন্তা না করে, তাহা হইলে সে বিশ্বাস অস্বীকার করিয়াছে, এবং অবিশ্বাসী অপেক্ষা অধম হইয়াছে।”—১ তীমথিয় ৫:৮.
প্রাথমিক দায়িত্ব
৬. (ক) খ্রীষ্টীয় প্রাচীনেরা যাদের পরিবার রয়েছে তাদের কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে? (খ) একজন প্রাচীনের প্রাথমিক দায়িত্ব কী?
৬ খ্রীষ্টীয় প্রাচীনগণ যাদের পরিবার রয়েছে তারা প্রেরিতদের মত একই পরিস্থিতিতে রয়েছে। পরিবারের আধ্যাত্মিক এবং দৈহিক প্রয়োজনীয়তার যত্ন নেওয়ার সাথে জনসাধারণ্যে প্রচার করা এবং ঈশ্বরের পালকে পালন করার যে দায়িত্ব তার সাথে তাদের অবশ্যই সামঞ্জস্য রাখতে হবে। কোন্ কাজটি এখানে প্রাধান্য পাবে? মার্চ ১৫, ১৯৬৪ সালের প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি) বলে: “[পিতার] প্রথম দায়িত্ব হল তার পরিবারের প্রতি এবং তিনি প্রকৃতপক্ষে পরিচর্যা করতে পারবেন না যদি তিনি এই দায়িত্ব পরিপূর্ণ না করেন।”
৭. কিভাবে খ্রীষ্টীয় পিতারা ঈশ্বরকে প্রথম স্থান দিতে পারেন?
৭ তাই ‘প্রভুর শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করে তোলার’ এই আদেশটি পালন করার দ্বারা পিতারা ঈশ্বরকে প্রথম স্থান দেন। (ইফিষীয় ৬:৪) সেই দায়িত্ব কারও উপর দেওয়া যাবে না, এমনকি যদিও পিতার হয়ত খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর কার্যাদি দেখাশোনার কার্যভার থাকতে পারে। এইধরনের পিতারা কিভাবে তাদের দায়িত্বের প্রতি যত্ন নিতে পারেন—পরিবারের সদস্যদের জন্য দৈহিক, আধ্যাত্মিক এবং মানসিক দিক দিয়ে দেখাশোনা—এবং একই সময়ে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর তত্ত্বাবধান এবং দেখাশোনা করার দ্বারা?
প্রয়োজনীয় সাহায্য দেওয়া
৮. একজন প্রাচীনের স্ত্রী কিভাবে তাকে সাহায্য করতে পারে?
৮ স্পষ্টত, যেসব প্রাচীনদের পারিবারিক দায়িত্বাদি রয়েছে তারা এই সাহায্য থেকে উপকার লাভ করবেন। উপরে উদ্ধৃত প্রহরীদুর্গ উল্লেখ করে যে এক খ্রীষ্টীয় স্ত্রী তার স্বামীর কাছে সাহায্যস্বরূপ হতে পারে। এটি বলে: “বিভিন্ন কার্যভার প্রস্তুত করতে তিনি তার জন্য আরও সুবিধাজনক করে দিতে পারে এবং ঘরেতে সঠিক নিয়মানুবর্তিতার ফলে বহুমূল্য সময় স্বামীর জন্য এবং নিজের জন্য বাঁচাতে পারে, যেমন সঠিক সময়ে খাবার প্রস্তুত করে রাখা, মণ্ডলীর সভাগুলিতে যাওয়ার জন্য সঠিক সময়ে প্রস্তুত হওয়া। . . . তার স্বামীর পরিচালনায়, একজন খ্রীষ্টীয় স্ত্রী যিহোবাকে খুশি করার জন্য ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকখানি সাহায্য করতে পারে।” (হিতোপদেশ ২২:৬) হ্যাঁ, স্ত্রীকে সৃষ্টি করা হয়েছিল “সহকারিণী” রূপে এবং তার স্বামী বিজ্ঞতার সাথে তার সহায়তা গ্রহণ করবেন। (আদিপুস্তক ২:১৮) তার সাহায্য তাকে আরও কার্যকারীরূপে তার পরিবার এবং তার মণ্ডলী সংক্রান্ত উভয়েরই দায়িত্বগুলি পালন করতে সমর্থন করতে পারে।
৯. থিষলনীকীয় মণ্ডলীতে কাদের উৎসাহ দান করা হয়েছিল যাতে করে তারা মণ্ডলীর অন্যান্য সদস্যদের সাহায্য করতে পারে?
৯ কিন্তু, শুধুমাত্র খ্রীষ্টীয় প্রাচীনদের স্ত্রীরাই এমন কাজে অংশ নিতে পারে তা নয় যাতে করে একজন অধ্যক্ষ উভয় “ঈশ্বরের যে পাল আছে; তাহা পালন,” এবং তার নিজের পরিবারের দেখাশোনা করতে পারেন। (১ পিতর ৫:২) আর কারা করতে পারেন? প্রেরিত পৌল থিষলনীকীয় ভাইয়েদের উৎসাহ দিয়েছিলেন যারা “নিযুক্ত আছেন” তাদের প্রতি সম্মান করতে। তবুও, এই একই ভাইয়েদের বিষয় বলতে গিয়ে—বিশেষকরে যারা তত্ত্ববধান করেন না—পৌল লিখেছিলেন: “হে ভ্রাতৃগণ, আমরা তোমাদিগকে বিনয় করিতেছি, যাহারা অনিয়মিতরূপে চলে, তাহাদিগকে চেতনা দেও, ক্ষীণসাহসদিগকে সান্ত্বনা কর, দুর্ব্বলদিগের সাহায্য কর, সকলের প্রতি দীর্ঘসহিষ্ণু হও।”—১ থিষলনীকীয় ৫:১২-১৪.
১০. সকল ভাইদের প্রেমপূর্ণ সাহায্য মণ্ডলীর উপর কোন্ উত্তম প্রভাব ফেলে?
১০ এটি দেখা কতই না উত্তম যখন মণ্ডলীতে ভাইয়েরা এমন প্রেম দেখান যাতে করে তারা যারা বিষণ্ণ তাদের সান্ত্বনা, দুর্বলদের সাহায্য, যারা অনিয়মিতরূপে চলে তাদের চেতনা দান এবং সকলের প্রতি দীর্ঘসহিষ্ণুতা দেখায়! থিষলনীকীয় ভাইয়েরা যারা ক্লেশ সত্ত্বেও সবেমাত্র বাইবেলের সত্য গ্রহণ করেছে, পৌলের উপদেশ পালন করতে এটি প্রয়োগ করেছিল। (প্রেরিত ১৭:১-৯; ১ থিষলনীকীয় ১:৬; ২:১৪; ৫:১১) তাদের প্রেমপূর্ণ সহযোগিতার ফলে যে দৃঢ়তা এবং একতার প্রভাব সম্পূর্ণ মণ্ডলীর উপরে পড়েছিল তার কথা চিন্তা করুন! একইভাবে, যখন ভাইয়েরা আজকের দিনে একে অপরকে সান্ত্বনা, সাহায্য এবং চেতনা প্রদান করেন তখন প্রাচীনদের পালকের দায়িত্বগুলি, যাদের বেশির ভাগ নিজের পরিবার দেখাশোনা করার রয়েছে, তা করা সহজ হয়ে ওঠে।
১১. (ক) ‘ভ্রাতৃসমাজের’ মধ্যে স্ত্রীরা অন্তর্ভুক্ত ছিল এই উপসংহারে আসা কেন যুক্তিযুক্ত? (খ) যুবতী নারীদের পরিপক্ক খ্রীষ্টীয় স্ত্রীরা কোন্ সাহায্য আজকে দান করতে পারে?
১১ প্রেরিত পৌল যাদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন সেই স্ত্রীরা কি সেই ‘ভ্রাতৃসমাজের’ অন্তর্ভুক্ত ছিল? হ্যাঁ, তারা ছিল, কারণ অনেক স্ত্রীরা বিশ্বাসী হয়েছিল। (প্রেরিত ১৭:১, ৪; ১ পিতর ২:১৭; ৫:৯) স্ত্রীরা কিধরনের সাহায্য করতে পারে? হ্যাঁ, হয়ত, মণ্ডলীগুলিতে যুবতী নারীরা ছিল যাদের ‘বিলাসিতা’ [“যৌন ইচ্ছা,” NW] নিয়ন্ত্রণ করা সম্বন্ধে সমস্যা ছিল অথবা যারা ‘ক্ষীনসাহস’ হয়ে উঠেছিল। (১ তীমথিয় ৫:১১-১৩) কিছু নারীদের আজকেও এই একইধরনের সমস্যা রয়েছে। সবচেয়ে তাদের যা দরকার রয়েছে তা হল কেউ যেন তাদের কথা শোনে অথবা সমব্যথী হন। বেশির ভাগ সময় পরিপক্ক খ্রীষ্টীয় স্ত্রী এইধরনের সাহায্য দেওয়ার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। সে হয়ত, উদাহরণস্বরূপ, আরেকজন স্ত্রীয়ের সাথে ব্যক্তিগত সমস্যা আলোচনা করতে পারে যা হয়ত একজন খ্রীষ্টান পুরুষ নিজে উপযুক্তরূপে মোকাবিলা করতে পারেন না। এইধরনের সাহায্য যোগানোর মূল্য তুলে ধরতে গিয়ে পৌল লিখেছিলেন: “প্রাচীনাদিগকে বল, যেন . . . সুশিক্ষাদায়িনী হন; তাঁহারা যেন যুবতীদিগকে সংযত করিয়া তুলেন, যেন ইহারা পতিপ্রিয়া, সন্তানপ্রিয়া, সংযতা, সতী, গৃহকার্য্যে ব্যাপৃতা, সুশীলা, ও আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হয়, এইরূপে যেন ঈশ্বরের বাক্য নিন্দিত না হয়।”—তীত ২:৩-৫.
১২. কাদের পরিচালনা মণ্ডলীর সকলকে অনুকরণ করা গুরুত্বপূর্ণ?
১২ যখন মণ্ডলীতে নম্র বোনেরা সহযোগিতার সাথে তাদের স্বামীদের এবং প্রাচীনদের সাহায্য করেন তখন তা কতই না আশীর্বাদস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়! (১ তীমথিয় ২:১১, ১২; ইব্রীয় ১৩:১৭) যেসব প্রাচীনদের পারিবারিক দায়িত্বাদি রয়েছে তারা বিশেষকরে উপকার লাভ করে যখন একজন অপরজনকে প্রেমের মনোভাবের সাথে সহযোগিতা করে সাহায্য করে এবং যখন সকলে নিযুক্ত পালকদের অধীনে বশীভূত হয়।—১ পিতর ৫:১, ২.
পিতামাতারা, আপনারা কোন্টিকে প্রথম স্থান দেন?
১৩. কিভাবে অনেক পিতারা তাদের পরিবারের প্রত্যাশাকে ব্যর্থ করে?
১৩ বহু বছর আগে একজন প্রসিদ্ধ আমোদ-প্রমোদ প্রদর্শনকারী ব্যক্তি বলেছিলেন: “আমি অনেক লোককে দেখি যারা শত শত লোকসহ কোম্পানি চালাচ্ছে; তারা সকল পরিস্থিতির কিভাবে মোকাবিলা করতে হয় তা জানে, কিভাবে ব্যবসা জগতে শাসন এবং পুরস্কার দিতে হয় তারা জানে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা যা তারা চালাচ্ছে অর্থাৎ তাদের পরিবার তাতে তারা অকৃতকার্য হয়।” কেন? তারা ব্যবসা এবং অন্যান্য আগ্রহগুলিকে প্রথমে রেখে ঈশ্বরের উপদেশ কি প্রত্যাখ্যান করে না? তাঁর বাক্য বলে: “এই যে সকল কথা আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি, . . . , আপন আপন সন্তানগণকে . . . শিক্ষা দিবে।” আর এটি প্রতিদিন করতে হত। পিতামাতাদের উদাররূপে তাদের সময় দেওয়া উচিত—এবং বিশেষকরে তাদের প্রেম এবং গভীর চিন্তা।—দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬-৯.
১৪. (ক) পিতামাতারা কিভাবে তাদের ছেলেমেয়েদের যত্ন নিতে পারেন? (খ) ছেলেমেয়েদের সঠিক শিক্ষাদানের মধ্যে কী অন্তর্ভুক্ত?
১৪ বাইবেল আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ছেলেমেয়েরা হল যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া এক উত্তরাধিকার। (গীতসংহিতা ১২৭:৩) আপনি কি আপনার ছেলেমেয়েদের সম্পদ হিসাবে যত্ন নেন, এক পুরস্কার যা আপনার উপরে দত্ত হয়েছে? আপনার ছেলেমেয়েরা সম্ভবত ইতিবাচক সাড়া দেবে যদি আপনি তাদের কোলে নেন, যার দ্বারা আপনি আপনার প্রেমপূর্ণ যত্ন এবং মনোযোগ প্রদর্শন করতে পারেন। (মার্ক ১০:১৬) কিন্তু ‘বালককে তাহার গন্তব্য পথানুরূপ শিক্ষা দিতে’ শুধুমাত্র কোলে তোলা এবং চুম্বন থেকে আরও বেশি কিছু প্রয়োজন। যাতে করে জীবনের ভুলত্রুটি এড়ানো যায় তার জন্য প্রজ্ঞাসহ প্রস্তুত হওয়ার জন্য, সন্তানের প্রেমপূর্ণ শাসনেরও প্রয়োজন রয়েছে। একজন পিতামাতা প্রকৃত প্রেম দেখাবে ‘সযত্নে শাস্তি দিয়ে।’—হিতোপদেশ ১৩:১, ২৪; ২২:৬.
১৫. কী দেখায় যে পিতামাতাদের কাছ থেকে আসা শাসন প্রয়োজনীয়?
১৫ পিতামাতাদের কাছ থেকে আসা শাসনের প্রয়োজন সম্বন্ধে বলতে গিয়ে একজন স্কুলের উপদেষ্টা তার অফিসে আসা ছেলেমেয়েদের সম্বন্ধে বলেন: “তারা করুণ, হতাশাগ্রস্ত এবং আত্ম-বিশ্বাসহীন। পরিস্থিতি কি রকম তা ব্যক্ত করতে গিয়ে তারা কাঁদে। অনেক—একজন যা চিন্তা করতে পারে তার থেকে অনেক বেশি—আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে, অতিরিক্ত আনন্দিত হওয়ার জন্য নয়; কারণ তারা অসুখী, যত্নহীন এবং চাপগ্রস্ত মনে করে কারণ এত ছোট বয়সে তারা ‘ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি’ এবং এটি তাদের পক্ষে মোকাবিলা করা কঠিন।” তিনি আরও বলেছিলেন: “সে সব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করছে এই বিষয়টি একজন কিশোরের পক্ষে একটা ভয়ের ব্যাপার।” সত্য, ছেলেমেয়েরা হয়ত শাসন এড়ানোর চেষ্টা করে, কিন্তু আসলে তারা পিতামাতাদের কাছ থেকে আসা নিয়ম এবং সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করে। তারা খুশি যে তাদের পিতামাতা সীমাবদ্ধতার দ্বারা তাদের যত্ন নিয়ে থাকেন। “এ বিষয়টি আমার মন থেকে অনেক ভার কমিয়ে দিয়েছে,” একজন কিশোরী এই কথা বলেছিল, যার পিতামাতা তাই করেছিল।
১৬. (ক) খ্রীষ্টীয় গৃহেতে বড় হয়ে ওঠা কিছু ছেলেমেয়েদের পক্ষে কী হয়? (খ) যে সব ছেলেমেয়েরা বিপথগামী পথ অবলম্বন করে তার অর্থ কেন এই নয় যে পিতামাতারা যে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তা ভাল ছিল না?
১৬ কিন্তু, পিতামাতা তাদের প্রেম করা সত্ত্বেও এবং যারা তাদের ছেলেমেয়েদের উত্তম প্রশিক্ষণ দান করেন, যীশুর উদাহরণে হারানো পুত্রের মত তারা পিতামাতাদের পরিচালনা প্রত্যাখ্যান করে এবং বিপথে যায়। (লূক ১৫:১১-১৬) এর অর্থ কিন্তু এই নয় যে, পিতামাতারা হিতোপদেশ ২২:৬ পদ যেমনি পরিচালনা দেয় ঠিক তেমনি তাদের ছেলেমেয়েদের সঠিকভাবে শিক্ষা দিতে তাদের দায়িত্বকে পূর্ণ করেনি। ‘বালককে তাহার গন্তব্য পথানুরূপ শিক্ষা দেও, সে তাহা ছাড়িবে না,’ বিবৃতিটি এক সাধারণ নিয়ম হিসাবে দেওয়া হয়েছিল। দুঃখের সাথে বলতে হয়, হারানো পুত্রের মত, কিছু ছেলেমেয়েরা ‘পিতামাতার আজ্ঞা মানিতে অবহেলা করিবে।’—হিতোপদেশ ৩০:১৭.
১৭. বিপথগামী ছেলেমেয়েদের পিতামাতারা কী থেকে সান্ত্বনা পেতে পারেন?
১৭ এক অবাধ্য ছেলের পিতা ক্ষেদ প্রকাশ করে বলেছিলেন: “তার হৃদয়ে পৌঁছাবার জন্য আমি সবকিছু চেষ্টা করেছি। আমি জানি না আমাকে আর কী করতে হবে কারণ আমি সবকিছু চেষ্টা করেছি। কোন কিছুই কাজ করেনি।” আশা করা যায়, যে এইধরনের অবাধ্য ছেলেমেয়েরা, অবশেষে, তারা যে প্রেমপূর্ণ শিক্ষা পেয়েছিল তা মনে করবে এবং হারানো পুত্রের মত ফিরে আসবে। কিন্তু এটি সত্য যে কিছু ছেলেমেয়ে বিপথগামী হয়ে যায় এবং অনৈতিক কাজগুলি করে যা তাদের পিতামাতাদের জন্য অনেক দুঃখ নিয়ে আসে। পিতামাতারা এর থেকে সান্ত্বনা পেতে পারেন যে এমনকি সবচেয়ে মহান শিক্ষক যিনি পৃথিবীতে ছিলেন, তিনি তাঁর দীর্ঘদিনের ছাত্র ইষ্করিয়োতীয় যিহূদাকে বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখেছিলেন। আর যিহোবা নিজেও সন্দেহাতীতরূপে দুঃখিত হয়েছিল যখন তাঁর অনেক আত্মিক পুত্রেরা তাঁর উপদেশ প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং বিদ্রোহী প্রমাণ করেছিল যদিও এই বিষয়ে তাঁর দিক দিয়ে কোন দোষ ছিল না।—লূক ২২:৪৭, ৪৮; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯.
ছেলেমেয়েরা—তোমরা কাকে খুশি করবে?
১৮. কিভাবে ছেলেমেয়েরা দেখাতে পারে যে তারা ঈশ্বরকে প্রথম স্থান দিচ্ছে?
১৮ যিহোবা তোমাদের অর্থাৎ ছোটদের এই উৎসাহ দিচ্ছেন: “সন্তানেরা, তোমরা প্রভুতে পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও।” (ইফিষীয় ৬:১) যুবক-যুবতীরা তা পালন করার দ্বারা ঈশ্বরকে প্রথম স্থান দেয়। বোকামি কর না! “অজ্ঞান আপন পিতার শাসন অগ্রাহ্য করে,” ঈশ্বরের বাক্য বলে। একগুঁয়েমির সাথে তোমরা যেন এও চিন্তা না কর যে আমরা উপদেশ ছাড়াই চলতে পারব। আসল বিষয় হল যে, “একটি বংশ রয়েছে যারা শুদ্ধ তাদের নিজেদের দৃষ্টিতে কিন্তু তখনও তাদের মন্দতা থেকে শুদ্ধ হয়নি।” (হিতোপদেশ ১৫:৫; ৩০:১২, আমেরিকান স্টানডার্ড ভারশন) তাই ঐশিক নির্দেশ পালন কর—পিতামাতাদের আজ্ঞা এবং উপদেশ “শুন,” “সঞ্চয় কর,” “ভুলিও না,” “মনোযোগ কর,” “পালন কর,” এবং “ত্যাগ করিও না।”—হিতোপদেশ ১:৮; ২:১; ৩:১; ৪:১; ৬:২০.
১৯. (ক) ছেলেমেয়েদের জন্য যিহোবার প্রতি বাধ্য হওয়ার কোন্ শক্তিশালী কারণগুলি রয়েছে? (খ) ছোটরা কিভাবে দেখাতে পারে যে তারা ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ?
১৯ যিহোবার প্রতি বাধ্য হওয়ার জন্য তোমার কাছে শক্তিশালী কারণ রয়েছে। তিনি তোমাকে ভালবাসেন আর তিনি তাঁর নিয়ম দিয়েছেন, যার অন্তর্ভুক্ত ছেলেমেয়েদের তাদের পিতামাতার বাধ্য হওয়ার নিয়ম, যা তোমাদের সুরক্ষাস্বরূপ এবং যা তোমাকে এক সুখী জীবন উপভোগ করতে সাহায্য করবে। (যিশাইয় ৪৮:১৭) তোমার জন্য তিনি নিজের পুত্রকে দান করেছেন যাতে করে তুমি পাপ এবং মৃত্যু থেকে বাঁচতে এবং অনন্ত জীবন উপভোগ করতে পার। (যোহন ৩:১৬) তুমি কি কৃতজ্ঞ? ঈশ্বর স্বর্গ থেকে দেখছেন, তোমার হৃদয় দেখছেন এই দেখবার জন্য যে তুমি সত্যই তাঁকে প্রেম কর কি না এবং তাঁর ব্যবস্থাগুলি উপলব্ধি কর কি না। (গীতসংহিতা ১৪:২) শয়তানও দেখছে এবং সে ঈশ্বরকে টিট্কারি দিচ্ছে এই দাবি করে যে তুমি তাঁর বাধ্য হবে না। তুমি শয়তানকে খুশি করছো এবং যিহোবাকে “মনঃপীড়া” দিচ্ছো যখন তুমি তাঁর অবাধ্য হচ্ছ। (গীতসংহিতা ৭৮:৪০, ৪১) যিহোবা তোমার কাছে আবেদন করেন: “বৎস, জ্ঞানবান হও; আমার চিত্তকে আনন্দিত কর; তাহাতে যে আমাকে টিট্কারি দেয়, তাহাকে উত্তর দিতে পারিব।” (হিতোপদেশ ২৭:১১) হ্যাঁ, প্রশ্ন হল, তুমি কাকে খুশি করবে, শয়তানকে অথবা যিহোবাকে?
২০. যদিও সে ভয় পেয়েছিল কিভাবে একজন যুবতী যিহোবাকে সেবা করার সাহস বজায় রেখেছিল?
২০ শয়তান এবং তার জগৎ তোমার উপর যে চাপ বিস্তার করে তার ফলে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করা সহজ হয়ে ওঠে না। এটি ভীতিকর হতে পারে। একজন যুবতী বলে: “ভয় পাওয়ার অর্থ হল ঠাণ্ডা অনুভব করা। সেই বিষয়ে তুমি কিছু করতে পার।” সে ব্যাখ্যা করে: “যখন তুমি ঠাণ্ডা অনুভব কর, তখন তুমি গরম জামা পর। তখনও যদি তুমি ঠাণ্ডা অনুভব কর তাহলে তুমি আরেকটি পর। তুমি একের পর এক পরতে থাক যতক্ষণ না তোমার আর ঠাণ্ডা লাগে না। তাই ভয় পাওয়ার সময় যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা হল ঠাণ্ডার সময়ে গরম জামা পড়ার মত। যদি একটি প্রার্থনার পর আমি তখনও ভয় পাই, আমি প্রার্থনা বারবার করি যতক্ষণ না আমি আর ভয় অনুভব করি না। আর এটি কাজ করে। এটি আমাকে সমস্যা থেকে দূরে রেখেছে!”
২১. যদি আমরা তাঁকে প্রথম স্থান দিই, তাহলে যিহোবা কিভাবে আমাদের সাহায্য করবেন?
২১ যদি আমরা আমাদের জীবনে সত্যই ঈশ্বরকে প্রথম স্থান দিই তাহলে যিহোবা আমাদের সাহায্য করবেন। তিনি আমাদের শক্তিশালী করবেন, স্বর্গদূতেদের দ্বারা সাহায্য যোগাবেন ঠিক যেমন তিনি তাঁর পুত্রের ক্ষেত্রে করেছিলেন। (মথি ১৮:১০; লূক ২২:৪৩) আপনারা পিতামাতারা এবং ছেলেমেয়েরা তোমরা সাহসী হোন। খ্রীষ্টতুল্য ভয় রাখুন এবং তা আপনাকে আনন্দিত করবে। (যিশাইয় ১১:৩) হ্যাঁ, “ঈশ্বরকে ভয় কর, ও তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন কর, কেননা ইহাই সকল মনুষ্যের কর্ত্তব্য।”—উপদেশক ১২:১৩.
আপনি কি উত্তর দিতে পারেন?
◻ যীশুর প্রাথমিক অনুগামীদের কোন্ দায়িত্বাদির সাথে সামঞ্জস্য রাখতে হয়েছিল?
◻ খ্রীষ্টীয় পিতামাতাদের কোন্ দায়িত্ব অবশ্যই পরিপূর্ণ করতে হবে?
◻ খ্রীষ্টীয় প্রাচীন যাদের পরিবার আছে তাদের জন্য কোন্ সাহায্য রয়েছে?
◻ মণ্ডলীতে বোনেরা কোন্ মূল্যবান কাজ সম্পাদন করতে পারে?
◻ কোন্ উপদেশ এবং নির্দেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা ছেলেমেয়েদের মেনে চলা উচিত?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রায়ই একজন পরিপক্ক খ্রীষ্টীয় স্ত্রী এক যুবতী নারীকে প্রয়োজনীয় সাহায্য দান করতে পারেন
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
শাস্ত্র থেকে বিপথগামী ছেলেমেয়েদের পিতামাতারা কী সান্ত্বনা পেতে পারেন?