অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৫০
উত্তম মেষপালকের রবে মনোযোগ দিন
“তারা আমার রবে মনোযোগ দেবে।”—যোহন ১০:১৬.
গান ২৩ যিহোবা, মোদের বল
সারাংশa
১. কেন যিশু তাঁর শিষ্যদের মেষদের সঙ্গে তুলনা করেন?
যিশুর সঙ্গে তাঁর শিষ্যদের সম্পর্ক কতটা ঘনিষ্ঠ ছিল, তা বোঝানোর জন্য তিনি নিজেকে একজন উত্তম মেষপালকের সঙ্গে আর তাঁর শিষ্যদের মেষদের সঙ্গে তুলনা করেন। (যোহন ১০:১৪) এই তুলনা একেবারে উপযুক্ত ছিল। মেষেরা তার পালককে চেনে এবং সেটাই করে, যা পালক তাদের করতে বলে। একজন ব্যক্তি এইরকমটা হতে দেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমরা কিছু মেষের ছবি তুলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু শত চেষ্টার পরও মেষেরা আমাদের কাছে আসছিল না। পরে, এক ছোট্ট ছেলে আসে। সে ওই মেষদের পালক ছিল। যখনই সে তাদের ডাকল, তখনই সমস্ত মেষ সেই পালকের কাছে চলে গেল।”
২-৩. (ক) কীভাবে যিশুর শিষ্যেরা তাঁর রবে মনোযোগ দিতে পারে? (খ) এই প্রবন্ধে এবং পরের প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?
২ সেই ব্যক্তি সেটাই হতে দেখেছিলেন, যেটা যিশু তাঁর মেষদের অর্থাৎ তাঁর শিষ্যদের বিষয়ে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “তারা আমার রবে মনোযোগ দেবে।” (যোহন ১০:১৬) কিন্তু, যিশু তো এখন স্বর্গে আছেন, তা হলে কীভাবে আমরা তাঁর রবে মনোযোগ দিতে পারি? তাঁর শিক্ষাগুলো মেনে চলার মাধ্যমে।—মথি ৭:২৪, ২৫.
৩ এই প্রবন্ধে এবং পরের প্রবন্ধে আমরা যিশুর দেওয়া কিছু শিক্ষা সম্বন্ধে আলোচনা করব। আমরা জানব, আমাদের কোন বিষয়গুলো করা উচিত আর কোন বিষয়গুলো বন্ধ করা উচিত। এই প্রবন্ধে আমরা বিশেষভাবে দুটো বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো যিশু আমাদের বন্ধ করতে বলেছেন।
“অতিরিক্ত চিন্তিত হওয়া বন্ধ করো”
৪. লূক ১২:২৯ পদ অনুযায়ী কোন কারণে আমরা “অতিরিক্ত চিন্তিত” হয়ে পড়তে পারি?
৪ লূক ১২:২৯ পদ পড়ুন। যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, যেন তারা প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে “অতিরিক্ত চিন্তিত হওয়া বন্ধ” করে। (পাদটীকা) আমরা জানি যে, যিশুর দেওয়া পরামর্শ সবসময় বিজ্ঞ ও সঠিক আর আমরা তা কাজে লাগাতে চাই। কিন্তু, কখনো কখনো তা কাজে লাগানো আমাদের পক্ষে কঠিন হতে পারে। আসুন দেখি, কেন।
৫. কেন কিছু লোক অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান নিয়ে চিন্তা করে?
৫ কিছু লোক হয়তো অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান নিয়ে চিন্তা করে। কারণ তারা এমন দেশে বাস করে, যেখানে বেশিরভাগ লোক গরিব এবং চাকরি খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। কিংবা যে-ব্যক্তি পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগাতেন, তিনি মারা গিয়েছেন। অথবা কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে তাদের চাকরি চলে গিয়েছে আর সংসার চালানোর জন্য তাদের যথেষ্ট টাকাপয়সা নেই। (উপ. ৯:১১) এইরকম ক্ষেত্রে আমরা কী করতে পারি, যাতে আমরা অতিরিক্ত চিন্তিত হওয়া বন্ধ করি?
৬. একবার পিতরের প্রতি কী ঘটেছিল?
৬ একবার, পিতর ও অন্যান্য প্রেরিত গালীল সাগরে একটা নৌকায় যাত্রা করছিলেন। সেইসময় ঝোড়ো বাতাস বইছিল। তারা দেখলেন যে, যিশু জলের উপর দিয়ে হাঁটছেন। পিতর যিশুকে বললেন: “প্রভু, যদি আপনিই হন, তা হলে আদেশ দিন, যেন আমি জলের উপর দিয়ে হেঁটে আপনার কাছে যেতে পারি।” তখন যিশু তাকে বললেন: “এসো!” তা শুনে পিতর নৌকা থেকে নামলেন এবং “জলের উপর দিয়ে হেঁটে যিশুর কাছে যেতে লাগলেন।” কিন্তু তারপর, “ঝোড়ো বাতাস দেখে পিতর ভয় পেয়ে গেলেন। আর যখন তিনি ডুবে যেতে লাগলেন, তখন চিৎকার করে বলে উঠলেন: ‘প্রভু, আমাকে রক্ষা করুন!’” যিশু সঙ্গেসঙ্গে তাঁর হাত বাড়িয়ে তাকে রক্ষা করলেন। লক্ষ করুন, যতক্ষণ পর্যন্ত পিতরের মনোযোগ যিশুর উপর ছিল, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি জলের উপর দিয়ে হাঁটতে পারছিলেন। কিন্তু, যখন পিতর ঝোড়ো বাতাসের দিকে তাকান, তখন তিনি ভয় পেয়ে যান আর ডুবতে শুরু করেন।—মথি ১৪:২৪-৩১.
৭. পিতরের প্রতি যা ঘটেছিল, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৭ পিতরের প্রতি যা ঘটেছিল, তা থেকে আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখতে পারি। পিতর যখন নৌকা থেকে নেমেছিলেন, তখন তিনি জলের উপর দিয়ে হেঁটে যিশুর কাছে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন। তিনি চিন্তাই করেননি যে, তার মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে আর তিনি ডুবতে শুরু করবেন। কিন্তু, এমনটাই ঘটেছিল। আজ আমরাও ঝড়ের মতো বিভিন্ন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে পারি। সেগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের যিহোবা ও তাঁর প্রতিজ্ঞার উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। আমরা যদি তা না করি, তা হলে আমাদের বিশ্বাস দুর্বল হয়ে যেতে পারে আর আমরা চিন্তায় ডুবে যেতে পারি। যিহোবা যে সত্যিই আমাদের সাহায্য করবেন, এই বিষয়ে কীভাবে আমরা আমাদের বিশ্বাস শক্তিশালী করতে পারি?
৮. নিজেদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করার পরিবর্তে আমাদের কী করা উচিত?
৮ অতিরিক্ত চিন্তা করার পরিবর্তে আমাদের যিহোবার উপর নির্ভর করা উচিত। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন, আমরা যদি তাঁকে আমাদের জীবনে প্রথম স্থান দিই, তা হলে তিনি আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর যত্ন নেবেন। (মথি ৬:৩২, ৩৩) তিনি সবসময় তাঁর এই প্রতিজ্ঞা পূরণ করেছেন। (দ্বিতীয়. ৮:৪, ১৫, ১৬; গীত. ৩৭:২৫) তিনি যদি বিভিন্ন পাখি ও ফুলের যত্ন নিতে পারেন, তা হলে তিনি নিশ্চয়ই আমাদের খাওয়া-পরার যত্ন নেবেন! (মথি ৬:২৬-৩০; ফিলি. ৪:৬, ৭) ঠিক যেমন বাবা-মায়েরা সন্তানদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগায় কারণ তারা তাদের ভালোবাসে, তেমনই যিহোবাও আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগান কারণ তিনি আমাদের ভালোবাসেন।
৯. এক দম্পতির উদাহরণ থেকে আপনি কী শিখেছেন?
৯ যিহোবা যে আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর যত্ন নিতে পারেন, এই বিষয়টা বোঝার জন্য আসুন এক অগ্রগামী দম্পতির উদাহরণ লক্ষ করি। একবার, তারা তাদের পুরোনো গাড়ি করে শরণার্থী শিবিরে থাকা কয়েক জন বোনকে সভাতে নিয়ে যান। এরজন্য তাদের প্রায় এক ঘণ্টা যাত্রা করতে হয়েছিল। ভাই বলেন: “সভার পর, আমরা তাদের খাবারের জন্য আমাদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাই। কিন্তু পরে, আমরা খেয়াল করি, আমাদের ঘরে তো কোনো খাবারই নেই!” এখন তারা কী করবেন? ভাই বলেন: “যখন আমরা ঘরে পৌঁছাই, তখন দেখি, দরজার সামনে খাবার ভরতি দুটো বড়ো বড়ো থলি রাখা ছিল। সেই খাবার কারা সেখানে রেখেছিল, তা আমরা জানতাম না। কিন্তু আমরা এটা জানতাম, যিহোবা আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর যত্ন নিয়েছেন।” কিছুদিন পর, সেই দম্পতির গাড়ি খারাপ হয়ে যায়। এই গাড়ি তাদের খুবই প্রয়োজন ছিল কারণ তারা এটা করেই প্রচারে যেতেন। কিন্তু, এটা মেরামত করার জন্য তাদের কাছে টাকা ছিল না। পরে, তারা তাদের গাড়ি গ্যারেজে নিয়ে যান, যাতে তারা জানতে পারেন, সেটা মেরামত করতে কত টাকা লাগবে। তখনই একজন ব্যক্তি আসেন এবং জিজ্ঞেস করেন: “এটা কার গাড়ি?” ভাই বলেন যে, এটা তাদের গাড়ি আর এখন এটা খারাপ হয়ে গিয়েছে। সেই ব্যক্তি বলেন: “ঠিক আছে, কোনো অসুবিধা নেই। আমার স্ত্রীর এমন একটা গাড়ি এই রঙেরই চাই। বলো, তুমি এটাকে কত দামে বিক্রি করবে?” সেই ব্যক্তি ভাইকে এত টাকা দেন যে, ভাই সেটা দিয়ে অন্য একটা গাড়ি কিনতে পারতেন। ভাই বলেন: “আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না, সে-দিন আমি কতটা খুশি হয়েছিলাম। আমরা জানতাম, এটা হঠাৎ করে ঘটেনি। এটার পিছনে যিহোবার হাত ছিল।”
১০. গীতসংহিতা ৩৭:৫ পদ আমাদের কী করার জন্য উৎসাহিত করে?
১০ আমরা যদি উত্তম মেষপালকের উপর মনোযোগ দিই আর নিজেদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা বন্ধ করি, তা হলে আমরা নিশ্চিত হতে পারব, যিহোবা আমাদের যত্ন নেবেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৭:৫; ১ পিতর ৫:৭) হতে পারে, এখনও পর্যন্ত যিহোবা আমাদের পরিবারের মস্তকের মাধ্যমে কিংবা আমাদের চাকরির মাধ্যমে আমাদের যত্ন নিয়েছেন। কিন্তু, পরিস্থিতি পালটাতে পারে। আমাদের পরিবারের মস্তক হয়তো আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগাতে পারছেন না কিংবা আমাদের হয়তো চাকরি চলে গিয়েছে। এইরকম ক্ষেত্রে আমাদের আস্থা রাখা উচিত যে, যিহোবা কোনো-না-কোনো উপায়ে নিশ্চয়ই আমাদের যত্ন নেবেন। এখন আসুন, আমরা আলোচনা করে দেখি, যিশু আমাদের আর কোন বিষয়টা বন্ধ করতে বলেছেন।
“অন্যদের বিচার করা বন্ধ করো”
১১. মথি ৭:১, ২ পদ অনুযায়ী যিশু আমাদের কী করা বন্ধ করতে বলেছেন আর কেন তা করা কঠিন হতে পারে?
১১ মথি ৭:১, ২ পদ পড়ুন। যিশু জানতেন, অসিদ্ধ হওয়ার কারণে মানুষ প্রায়ই অন্যদের দোষ ধরে। তাই, তিনি বলেছেন: “তোমরা অন্যদের বিচার করা বন্ধ করো।” (পাদটীকা) আমরা সবাই যিশুর এই পরামর্শ কাজে লাগানোর অনেক প্রচেষ্টা করি, কিন্তু তারপরও আমরা ব্যর্থ হই। এইরকম ক্ষেত্রে আমাদের কী করা উচিত? আমাদের যিশুর রবে মনোযোগ দেওয়া উচিত এবং কঠোর প্রচেষ্টা করা উচিত যেন আমরা অন্যদের বিচার করা বন্ধ করি।
১২-১৩. অন্যদের বিচার করা বন্ধ করার ব্যাপারে আমরা যিহোবার কাছ থেকে কী শিখতে পারি?
১২ এই ব্যাপারে আমরা যিহোবার কাছ থেকে শিখতে পারি। তিনি লোকদের মধ্যে ভালো বিষয়গুলো লক্ষ করেন। তিনি রাজা দায়ূদের প্রতি এমনই কিছু করেছিলেন। দায়ূদ বড়ো বড়ো পাপ করেছিলেন। যেমন, তিনি বৎশেবার সঙ্গে ব্যভিচার করেছিলেন এবং তার স্বামীকে হত্যা করিয়েছিলেন। (২ শমূ. ১১:২-৪, ১৪, ১৫, ২৪) এর পরিণতি শুধু তিনি একাই ভোগ করেননি বরং তার স্ত্রীদের আর সেইসঙ্গে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও ভোগ করতে হয়েছিল। (২ শমূ. ১২:১০, ১১) পরে দায়ূদ আরেকটা পাপ করেছিলেন। তিনি যিহোবার অনুমতি ছাড়াই ইজরায়েলের সৈন্যবাহিনীর সংখ্যা গণনা করেছিলেন। তিনি হয়তো গর্বিত হয়ে পড়ার কারণে এমনটা করেছিলেন। যিহোবার উপর নির্ভর করার পরিবর্তে, দায়ূদ তার সৈন্যবাহিনীর উপর নির্ভর করেছিলেন। এর পরিণতি কী হয়েছিল? প্রায় ৭০,০০০ ইজরায়েলীয় মহামারির কারণে মারা গিয়েছিল।—২ শমূ. ২৪:১-৪, ১০-১৫.
১৩ আপনি যদি সেখানে থাকতেন, তা হলে দায়ূদকে কোন দৃষ্টিতে দেখতেন? আপনি কি এইরকম চিন্তা করতেন, তিনি এত বড়ো পাপ করেছেন যে, তিনি ক্ষমা লাভ করার যোগ্য নন? যিহোবা এইরকমটা চিন্তা করেননি। তিনি এই বিষয়ের উপর মনোযোগ দিয়েছিলেন যে, দায়ূদ সারাজীবন ধরে তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন আর পাপ করার পর তিনি প্রকৃত অনুতপ্ত হয়েছিলেন। তাই, যিহোবা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। যিহোবা জানতেন, দায়ূদ তাঁকে খুব ভালোবাসেন আর সঠিক কাজ করতে চান। সত্যিই, আমরা যিহোবার প্রতি কতই-না কৃতজ্ঞ যে, তিনি আমাদের মধ্যে ভালো বিষয়গুলো লক্ষ করেন!—১ রাজা. ৯:৪; ১ বংশা. ২৯:১০, ১৭.
১৪. আমরা যাতে অন্যদের দোষ না ধরি, এরজন্য আমাদের কী করা উচিত?
১৪ অন্যদের দোষ ধরা খুবই সহজ। কিন্তু, এইরকমটা করার পরিবর্তে আমাদের যিহোবার মতো হওয়া উচিত। যিহোবা আশা করেন না যে, আমাদের দিয়ে কখনো কোনো ভুল হবে না। আমাদেরও ভাই-বোনদের কাছ থেকে তা আশা করা উচিত নয়। এর পরিবর্তে, তাদের মধ্যে ভালো বিষয়গুলো আমাদের লক্ষ করা উচিত। অন্যদের অসিদ্ধতা জানা সত্ত্বেও তাদের সঙ্গে আমাদের ভালোভাবে আচরণ করা উচিত। একটা হিরে শুরুতে দেখতে খুব-একটা সুন্দর না-ও হতে পারে। কিন্তু, একজন জহুরিই সেটার আসল মূল্য সম্বন্ধে জানেন। তিনি জানেন যে, যখন সেটাকে কেটে পালিশ করা হবে, তখন সেটা দেখতে অনেক সুন্দর হবে এবং সেটার মূল্য আরও বেড়ে যাবে। আমাদেরও অন্যদের অসিদ্ধতার উপর নয় বরং তাদের ভালো বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দেওয়া উচিত, ঠিক যেমনটা যিহোবা ও যিশু করে থাকেন।
১৫. অন্যদের বিচার করা বন্ধ করার জন্য আমরা আর কী করতে পারি?
১৫ অন্যদের বিচার করা বন্ধ করার জন্য আমরা আর কী করতে পারি? আমরা তাদের পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা করতে পারি। উদাহরণ স্বরূপ, একবার যিশু মন্দিরে একজন দরিদ্র বিধবাকে দুটো মুদ্রা রাখতে দেখেছিলেন, যেটার মূল্য খুবই কম ছিল। এটা দেখে যিশু এমনটা বলেননি, “কেন তিনি আরও বেশি দিলেন না?” এর পরিবর্তে, তিনি চিন্তা করেছিলেন যে, কেন সেই বিধবা মুদ্রা রেখেছিলেন আর তার পরিস্থিতি কেমন ছিল। এই কারণে তিনি সেই বিধবার প্রশংসা করতে পেরেছিলেন।—লূক ২১:১-৪.
১৬. আপনি বোন ভেরোনিকার কাছ থেকে কী শিখেছেন?
১৬ আসুন, বোন ভেরোনিকার উদাহরণ লক্ষ করি। তার মণ্ডলীতে একজন বোন একা তার সন্তানকে বড়ো করে তুলছিলেন। বোন ভেরোনিকা বলেন: “আমার মনে হত, তারা সত্যে খুব-একটা মজবুত নয় কারণ তারা নিয়মিতভাবে সভায় যোগ দিত না এবং প্রচারে অংশ নিত না। কিন্তু একবার, সেই বোনের সঙ্গে প্রচার করার সময় আমি জানতে পারি, তার ছেলে অটিজম রোগে (এক ধরনের মানসিক রোগ) ভুগছিল। এইরকম পরিস্থিতিতে সংসার চালানো এবং যিহোবার সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত রাখা তার জন্য সহজ ছিল না। তার ছেলের অসুস্থতার কারণে কখনো কখনো তাকে অন্য মণ্ডলীতে যেতে হত। আমি জানতাম না যে, এই বোনের জীবনে এত সমস্যা রয়েছে। কিন্তু, এখন আমি তাকে অনেক ভালোবাসি এবং তাকে অনেক সম্মান করি।”
১৭. যাকোব ২:৮ পদ অনুযায়ী আমাদের কী করা উচিত আর কীভাবে আমরা তা করতে পারি?
১৭ আমরা যদি বুঝতে পারি, আমরা কোনো ভাই কিংবা বোনের বিচার করছি, তা হলে আমাদের কী করা উচিত? আমাদের মনে রাখা উচিত, আমাদের ভাই-বোনদের ভালোবাসতে হবে। (পড়ুন, যাকোব ২:৮.) আমাদের যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করা উচিত যেন আমরা সেই ভাই কিংবা বোনের বিষয়ে ভুল চিন্তাভাবনা না করি। তারপর, আমাদের সেই প্রার্থনা অনুযায়ী কাজ করা উচিত। আমাদের তার সঙ্গে সময় কাটানো উচিত। যেমন, আমরা তার সঙ্গে প্রচারে যেতে পারি অথবা খাবারের জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানাতে পারি। এভাবে আমরা তাকে আরও ভালোভাবে জানতে পারব এবং যিহোবা ও যিশুর মতো তার মধ্যে ভালো বিষয়গুলো দেখতে পারব। এমনটা করার মাধ্যমে আমরা অন্যদের বিচার করা বন্ধ করতে পারব আর আমাদের উত্তম মেষপালকের রবে মনোযোগ দিতে পারব।
১৮. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা উত্তম মেষপালকের রবে মনোযোগ দিচ্ছি?
১৮ মেষেরা যেভাবে তাদের পালকের রব শোনে, একইভাবে যিশুর শিষ্যেরাও তাঁর রব শোনে। আমরা যদি নিজেদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তিত হওয়া এবং অন্যদের বিচার করা বন্ধ করি, তা হলে যিহোবা ও যিশু আমাদের আশীর্বাদ করবেন। আমরা ‘ছোটো মেষপালের’ অংশ হই কিংবা ‘আরও মেষের’ অংশ হই, আসুন আমরা আমাদের উত্তম মেষপালকের রবে মনোযোগ দিয়ে চলি। (লূক ১২:৩২; যোহন ১০:১১, ১৪, ১৬) পরের প্রবন্ধে, আমরা আলোচনা করব যে, যিশু তাঁর শিষ্যদের কোন দুটো বিষয় করতে বলেছিলেন।
গান ৫৩ একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা
a যিশু বলেছিলেন যে, তাঁর মেষেরা তাঁর রব শুনবে। এর অর্থ ছিল, যিশুর শিষ্যেরা তাঁর দেওয়া শিক্ষার উপর মনোযোগ দেবে এবং সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করবে। এই প্রবন্ধে আমরা তাঁর দেওয়া দুটো শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করব: আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তিত হওয়া এবং অন্যদের বিচার করা বন্ধ করতে হবে। আমরা এও আলোচনা করব, কীভাবে আমরা তাঁর এই কথাগুলো মেনে চলতে পারি।
b ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন ভাইয়ের চাকরি চলে গিয়েছে, সংসার চালানোর জন্য তার কাছে যথেষ্ট টাকাপয়সা নেই এবং তাকে ঘর পালটাতে হচ্ছে। এইরকম পরিস্থিতিতে খুব সহজেই যিহোবার উপর থেকে তার মনোযোগ সরে যেতে পারে এবং তিনি চিন্তায় ডুবে যেতে পারেন।
c ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন ভাই সভায় দেরি করে এসেছেন। তবে, তিনি ভালোভাবে প্রচার করছেন, বয়স্ক ব্যক্তিদের সাহায্য করছেন এবং কিংডম হলের রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করছেন।