পাঠকদের কাছ থেকে প্রশ্ন
কখন ঈশ্বরের লোকেরা মহতী বাবিলের দ্বারা বন্দি হয়েছিল?
এই আধ্যাত্মিক বন্দিত্ব দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে শুরু হয়ে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। রদবদলকৃত এই ধারণাকে কেন উপযুক্ত বলা যায়?
সমস্ত প্রমাণ ইঙ্গিত দেয়, এই বন্দিত্ব ১৯১৯ সালে শেষ হয়েছিল এবং সেই সময় থেকে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের পুনর্স্থাপিত মণ্ডলীতে একত্রিত করা হয়েছিল। এই বিষয়গুলো বিবেচনা করুন: ১৯১৪ সালে স্বর্গে ঈশ্বরের রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরের বছরগুলোতে ঈশ্বরের লোকেরা পরীক্ষিত ও পরিশোধিত হয়েছিল।a (মালাখি ৩:১-৪) এরপর ১৯১৯ সালে, যিশু ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসকে’ নিযুক্ত করেছিলেন, যাতে এই দাস ঈশ্বরের পরিষ্কৃত লোকেদের “উপযুক্ত সময়ে” আধ্যাত্মিক “খাদ্য” দেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) সেই বছরই ঈশ্বরের লোকেরা তাদের ঈশ্বরদত্ত আধ্যাত্মিক রাজ্যে ফিরে আসতে শুরু করেছিল। এ ছাড়া, সেই সময়ই তারা মহতী বাবিলের রূপক বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হয়েছিল। (প্রকা. ১৮:৪) কিন্তু, সেই বন্দিত্ব আসলে কখন শুরু হয়েছিল?
অনেক বছর ধরে আমরা এভাবে ব্যাখ্যা করে এসেছি, এই বন্দিত্ব ১৯১৮ সালে শুরু হয়েছিল এবং তা সংক্ষিপ্ত সময় ধরে চলেছিল আর এই সময়ে ঈশ্বরের লোকেরা মহতী বাবিলের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৯৯২ সালের ১৫ মার্চ প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকায় বলা হয়েছিল: “কিন্তু, ঈশ্বরের প্রাচীন কালের লোকেরা যেমন একটা সময়ের জন্য বাবিলের বন্দিত্বে চলে গিয়েছিল, তেমনই ১৯১৮ সালে যিহোবার দাসেরা মহতী বাবিলের বন্দিত্বে চলে গিয়েছিল।” তবে, আরও গবেষণা করার ফলে জানা যায়, এই বন্দিত্ব আসলে ১৯১৮ সালের অনেক আগে শুরু হয়েছিল।
উদাহরণ স্বরূপ, আসুন আমরা এখন ঈশ্বরের লোকেদের বন্দিত্ব ও মুক্তি সম্বন্ধে বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে একটা বিবেচনা করি। এই ভবিষ্যদ্বাণী যিহিষ্কেল ৩৭:১-১৪ পদে রয়েছে। যিহিষ্কেল একটা দর্শনে এমন এক সমস্থলী বা উপত্যকা দেখতে পান, যেটা অস্থিতে পরিপূর্ণ। যিহোবা যিহিষ্কেলের কাছে ব্যাখ্যা করেন, এসব অস্থি ‘সমস্ত ইস্রায়েলকুলকে’ চিত্রিত করে। ব্যাপক অর্থে, পুনর্স্থাপনের এই ভবিষ্যদ্বাণী ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েলের’ প্রতি প্রযোজ্য। (গালা. ৬:১৬; প্রেরিত ৩:২১) এরপর, যিহিষ্কেল দেখতে পান, অস্থিগুলো জীবন ফিরে পেয়ে এক বিরাট বাহিনী হয়ে উঠেছে। ঈশ্বরের লোকেদের আধ্যাত্মিক পুনরুত্থান সম্বন্ধে বর্ণনা করার জন্য কতই-না উপযুক্ত এক উপায়, যে-পুনরুত্থান ১৯১৯ সালের বিভিন্ন ঘটনার শেষে ঘটেছিল! কিন্তু, এর সঙ্গে জড়িত সময়ের দীর্ঘতা সম্বন্ধে এই দর্শন আমাদের কাছে কী প্রকাশ করে?
প্রথমত, আমরা লক্ষ করি যে, অস্থিগুলোকে “শুষ্ক” বা “অতিশয় শুষ্ক” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। (যিহি. ৩৭:২, ১১) এটা ইঙ্গিত দেয়, এই অস্থিগুলো যাদের, তারা অনেক আগে মারা গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, এই পুনর্স্থাপনকে এমনভাবে বর্ণনা করা হয়নি, যা হঠাৎ করে ঘটেছে, বরং এটাকে এক ধারাবাহিক প্রক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রক্রিয়ার শুরুতে, শব্দ ও মড়মড়ধ্বনি শোনা যায় আর “সেই সকল অস্থির মধ্যে প্রত্যেক অস্থি আপন আপন অস্থির সহিত সংযুক্ত” হয়। এরপর, ‘শিরা ও মাংস’ যুক্ত হয়। তারপর, সেই অস্থি, শিরা এবং মাংস চর্মের দ্বারা আচ্ছাদিত হয়। শেষে, “আত্মা [নিঃশ্বাস, পাদটীকা] তাহাদের মধ্যে প্রবেশ করিল, এবং তাহারা জীবিত হইল।” সব শেষে, যিহোবা পুনরুজ্জীবিত লোকেদেরকে তাদের দেশে বাস করার সুযোগ দেন। এই সমস্ত কিছু ঘটার জন্য সময় প্রয়োজন।—যিহি. ৩৭:৭-১০, ১৪.
প্রাচীন ইস্রায়েল জাতির বন্দিত্ব দীর্ঘসময় ধরে স্থায়ী ছিল। এই বন্দিত্ব শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৭৪০ সালে, যখন উত্তরের দশ বংশের রাজ্যের পতন হয়েছিল ও সেখানকার অনেক লোককে নির্বাসনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপর, খ্রিস্টপূর্ব ৬০৭ সালে, যিরূশালেমকে ধ্বংস করা হয়েছিল এবং দক্ষিণের যিহূদা রাজ্যের লোকেদেরও নির্বাসনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বন্দিত্বের এই সময়কাল শেষ হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৭ সালে, যখন অবশিষ্ট যিহুদিরা মন্দির পুনর্নির্মাণ এবং বিশুদ্ধ উপাসনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য যিরূশালেমে ফিরে এসেছিল।
শাস্ত্রের এই বিস্তারিত বিষয়গুলো বিবেচনা করার পর স্পষ্ট বোঝা যায়, মহতী বাবিলের দ্বারা ঈশ্বরের লোকেদের এই বন্দিত্বের সময়কাল নিশ্চয়ই ১৯১৮-১৯১৯ সালে ঘটা ঘটনাগুলোর সময়কালের চেয়ে আরও দীর্ঘ ছিল। এই বন্দিত্ব সেই সময়েই ঘটে, যখন রূপক শ্যামাঘাস, গমতুল্য ‘রাজ্যের সন্তানগণের’ সঙ্গে একত্রে বৃদ্ধি পায়। (মথি ১৩:৩৬-৪৩) বৃদ্ধির এই সময় সেই সময়কালকে নির্দেশ করে, যখন প্রকৃত খ্রিস্টানদের চেয়ে ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তাই, খ্রিস্টীয় মণ্ডলী বলতে গেলে মহতী বাবিলের বন্দিত্বে চলে গিয়েছিল। সেই বন্দিত্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর কোনো এক সময়ে শুরু হয়েছিল এবং শেষকালে আধ্যাত্মিক মন্দির পরিষ্করণের সময় পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।—প্রেরিত ২০:২৯, ৩০; ২ থিষল. ২:৩, ৬; ১ যোহন ২:১৮, ১৯.
আধ্যাত্মিক বন্দিত্বের সেই দীর্ঘ সময়কালে, পাদরিরা ও তাদের রাজনৈতিক সঙ্গীরা নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য আকাঙ্ক্ষী ছিল আর তারা ঈশ্বরের বাক্যকে সাধারণ লোকেদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। একটা সময় ছিল, যখন প্রচলিত কোনো ভাষায় বাইবেল পাঠ করাকে দণ্ডণীয় এক অপরাধ বলে মনে করা হতো। এমনকী পাঠ করার কারণে কাউকে কাউকে দণ্ডেও পোড়ানো হয়েছিল। পাদরিদের শিক্ষার বিপরীত মতামত প্রকাশ করে এমন যেকোনো ব্যক্তির সঙ্গেই নিষ্ঠুর আচরণ করা হতো আর এভাবেই সত্যের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টাকে দমন করা হয়েছিল।
দ্বিতীয় ঘটনা অর্থাৎ পুনর্স্থাপন সম্বন্ধে কী বলা যায়? সেটা কখন ও কীভাবে ঘটেছিল? আধ্যাত্মিক পুনর্স্থাপনের এই কাজ ছিল এক ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। শেষকাল শুরু হওয়ার আগের শতাব্দীগুলোতে, এই প্রক্রিয়া চলাকালীন “মড়মড়ধ্বনি” শোনা গিয়েছিল। যদিও চারিদিকে মূলত মিথ্যা ধর্মীয় শিক্ষার ব্যাপক প্রভাব ছিল, তবে কিছু বিশ্বস্ত ব্যক্তি সত্য উপাসনার পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য তাদের যথাসাধ্য করেছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সাধারণ লোকেদের মধ্যে প্রচলিত বিভিন্ন ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করার প্রচেষ্টা করেছিলেন। অন্যেরা সেইসমস্ত সত্য অন্যদের জানিয়েছিলেন, যেগুলো তারা ঈশ্বরের বাক্যে খুঁজে পেয়েছিলেন।
এরপর ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, চার্লস্ টেজ রাসেল ও তার সহযোগীরা পুনরায় বাইবেলের সত্য খুঁজে বের করার জন্য উদ্যোগের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। এটা এমন ছিল যেন আধ্যাত্মিক কঙ্কালের উপর রূপক মাংস ও চর্ম উৎপন্ন হতে শুরু করেছিল। জায়ন্স ওয়াচ টাওয়ার ও অন্যান্য প্রকাশনা সৎহৃদয়ের ব্যক্তিদের আধ্যাত্মিক সত্য খুঁজে পেতে সাহায্য করেছিল। পরে, বিভিন্ন হাতিয়ার যেমন, ১৯১৪ সালে প্রকাশিত “ফটো-ড্রামা অভ্ ক্রিয়েশন” এবং ১৯১৭ সালে প্রকাশিত উন্মোচিত রহস্য (ইংরেজি) বইটা ঈশ্বরের লোকেদের শক্তিশালী করেছিল। সব শেষে, ১৯১৯ সালে আধ্যাত্মিক অর্থে ঈশ্বরের লোকেদের জীবন দেওয়া হয়েছিল এবং তাদেরকে নতুন আধ্যাত্মিক রাজ্যে বাস করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, অভিষিক্ত ব্যক্তিদের অবশিষ্টাংশের সঙ্গে সেই ব্যক্তিরা যুক্ত হয়েছে, যাদের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশা রয়েছে। আর এই দুই দল একত্রে মিলে “অতিশয় মহতী বাহিনী” হয়ে উঠেছে।—যিহি. ৩৭:১০; সখ. ৮:২০-২৩.b
এই বিষয়গুলো বিবেচনা করার পর এটা স্পষ্ট, দ্বিতীয় শতাব্দীতে ধর্মভ্রষ্টতা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরের লোকেরা মহতী বাবিলের বন্দিত্বে চলে গিয়েছিল। এটা ছিল এক অন্ধকার যুগ, ঠিক যেমন প্রাচীন ইস্রায়েলীয়রা নির্বাসনে থাকার সময় অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল। তবে, আমরা কতই-না আনন্দিত যে, ঈশ্বরের লোকেরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আধ্যাত্মিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর, আমরা এখন সেই সময়ে বাস করছি, যে-সময়ে “যাহারা বুদ্ধিমান্, তাহারা . . . দেদীপ্যমান হইবে” এবং “অনেকে আপনাদিগকে পরিষ্কৃত . . . করিবে” ও তারা “পরীক্ষাসিদ্ধ হইবে!”—দানি. ১২:৩, ১০.
শয়তান কি যিশুকে প্রলোভিত করার সময় তাঁকে আক্ষরিকভাবে মন্দিরে নিয়ে গিয়েছিল?
সহজভাবে বললে, যিশু আসলে মন্দিরের উপর দাঁড়িয়েছিলেন, না কি শুধু একটা দর্শন দেখেছিলেন, সেই বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই। আমাদের প্রকাশনায় কখনো কখনো দুটো সম্ভাবনার বিষয়েই তুলে ধরা হয়েছে।
প্রথমে, বাইবেল কী বলে তা বিবেচনা করুন। প্রেরিত মথি তার সুসমাচারের বিবরণে এই ঘটনা সম্বন্ধে এভাবে লেখার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন: “তখন দিয়াবল তাঁহাকে [যিশুকে] পবিত্র নগরে লইয়া গেল, এবং ধর্ম্মধামের চূড়ার উপরে দাঁড় করাইল।” (মথি ৪:৫) একই ঘটনা সম্বন্ধে লূকের বিবরণ এভাবে তুলে ধরে: “আর সে তাঁহাকে যিরূশালেমে লইয়া গেল, ও ধর্ম্মধামের চূড়ার উপরে দাঁড় করাইল।”—লূক ৪:৯.
অতীতে আমাদের প্রকাশনায় যুক্তি করা হয়েছিল, এই ঘটনা হয়তো আক্ষরিকভাবে ঘটেনি। উদাহরণ স্বরূপ, ১৯৬১ সালের ১ মার্চ প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকা এভাবে ব্যাখ্যা করেছিল: “প্রান্তরে যিশুকে প্রলোভিত করার বিবরণে যে-সমস্ত ঘটনা পাওয়া যায়, সেই সমস্ত ঘটনা আক্ষরিকভাবে ব্যাখ্যা করা যুক্তিসংগত বলে মনে হয় না। নিশ্চিতভাবেই এমন কোনো পর্বত নেই, যেখান থেকে একজন ব্যক্তিকে ‘জগতের সমস্ত রাজ্য ও সেই সকলের প্রতাপ’ দেখানো যেত। তাই আমাদেরও নিশ্চয়ই যুক্তিসংগতভাবে এই উপসংহারে আসতে হয়, শয়তান যিশুকে আক্ষরিকভাবে বা দৈহিকভাবে ‘পবিত্র নগরে’ নিয়ে যায়নি এবং তাঁকে ‘ধর্ম্মধামের চূড়ার’ উপর দাঁড় করায়নি। প্রলোভনকে জোরালো করার জন্য এই ধরনের কিছু করার প্রয়োজন ছিল না।” কিন্তু, পরে এই পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যায় আমরা এমন বিষয় লক্ষ করেছিলাম, খ্রিস্ট যদি শয়তানের অনুরোধ মেনে নিতেন, তা হলে যিশুকে আত্মহত্যা করতে হতো, যেটা ইঙ্গিত দেয় তারা আসলেই উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।
কেউ কেউ বলেছে, যিশু লেবীয় ছিলেন না আর তাই মন্দিরের পবিত্র স্থানের উপর দাঁড়ানোর অধিকার তাঁর ছিল না। তাই মনে করা হয়েছিল, যিশুকে হয়তো একটা দর্শনের মাধ্যমে মন্দিরে ‘লইয়া যাওয়া’ হয়েছিল। এটা শত শত বছর আগে ভাববাদী যিহিষ্কেলের ক্ষেত্রে যা ঘটেছিল, সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।—যিহি. ৮:৩, ৭-১০; ১১:১, ২৪; ৩৭:১, ২.
কিন্তু, এই প্রলোভন যদি কেবল দর্শনের মাধ্যমে ঘটে থাকে, তা হলে নীচের প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়:
এই প্রলোভন কি বাস্তব ছিল, না কি কাল্পনিক?
অন্যান্য প্রলোভনের ক্ষেত্রে যিশুকে দিয়ে আক্ষরিকভাবে কাজ করানোর প্রচেষ্টা করা হয়েছিল, যেমন আক্ষরিক পাথরকে রুটিতে পরিণত করানোর অথবা শয়তানের সামনে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করানোর প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। তা হলে, এই প্রলোভনও কি একইরকম হবে না অর্থাৎ যিশুকে দিয়ে আক্ষরিকভাবে মন্দিরের উপর থেকে লাফ দেওয়ানোর প্রচেষ্টা করা হবে না?
অন্যদিকে, যিশু যদি আক্ষরিকভাবে মন্দিরের চূড়ার উপর দাঁড়িয়ে থাকেন, তা হলে অন্য প্রশ্নও উত্থাপিত হয়:
পবিত্র স্থানের উপর দাঁড়ানোর মাধ্যমে যিশু কি ব্যবস্থা লঙ্ঘন করেছিলেন?
কীভাবে যিশু প্রান্তর থেকে যিরূশালেমে পৌঁছেছিলেন?
আরও গবেষণা করার ফলে আমরা কিছু সম্ভাবনা সম্বন্ধে জানতে পেরেছি, যেগুলো হয়তো শেষের দুটো প্রশ্নের উত্তর দেয়।
প্রথমত, অধ্যাপক ডি. এ. কারসন মন্তব্য করেন, দুটো বিবরণে “মন্দির” হিসেবে অনুবাদিত গ্রিক শব্দ (হা·ই·রন) “সম্ভবত পবিত্র স্থানকে নয় বরং মন্দিরের পুরো এলাকাকে নির্দেশ করে।” তাই, যিশু যে একেবারে পবিত্র স্থানের উপরই দাঁড়িয়েছিলেন, এমন নয়। তিনি হয়তো অন্য কোনো জায়গায় যেমন, মন্দিরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে দাঁড়াতে পারতেন, যেখানে পাঁচিল দেওয়া এক সমতল ছাদ ছিল। সেই ছাদ থেকে কিদ্রোণ উপত্যকা প্রায় ১৩৭ মিটার (৪৫০ ফুট) নীচে ছিল আর মন্দিরের এলাকার যেকোনো জায়গা থেকে এই অংশে উপত্যকার গভীরতা সবচেয়ে বেশি ছিল। প্রাচীন কালের ইতিহাসবেত্তা জোসিফাস বলেছিলেন, কোনো ব্যক্তি যদি সেখানে দাঁড়িয়ে নীচের দিকে তাকায়, তা হলে উচ্চতার কারণে তার “মাথা ঘুরে যাবে।” একজন ন-লেবীয় ব্যক্তি হিসেবে যিশু সেই স্থানে দাঁড়াতে পারতেন আর এই দাঁড়ানোর কারণে কোনো বিক্ষোভ সৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল না।
কিন্তু, কীভাবে যিশুকে প্রান্তর থেকে মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল? সাধারণ উত্তর হল, আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিতভাবে জানি না। প্রলোভনের ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থেকে এর সঙ্গে কতটা সময় জড়িত ছিল অথবা যিশু প্রান্তরের কোন জায়গায় ছিলেন, তা জানা যায় না। তবে আমরা এই সম্ভাবনাও বাদ দিতে পারি না, যিশু হয়তো হেঁটে যিরূশালেমে ফিরে গিয়েছিলেন, যদিও এর জন্য হয়তো কিছুটা সময় প্রয়োজন ছিল। বিবরণ নির্দিষ্টভাবে এটা বলে না, যিশু প্রলোভনের পুরো সময়জুড়ে প্রান্তরে ছিলেন। এটা শুধু বলে, তাঁকে যিরূশালেমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
তা হলে, সেই প্রলোভনের বিষয়ে কী বলা যায়, যে-প্রলোভনের সময় যিশুকে “জগতের সমস্ত রাজ্য” দেখানো হয়েছিল? এই বিষয়টা স্পষ্ট, তিনি আক্ষরিকভাবে সমস্ত রাজ্য দেখেননি; এইরকম কোনো আক্ষরিক পর্বতের অস্তিত্ব নেই, যেখান থেকে সমস্ত রাজ্য দেখা যায়। তাই, যিশুকে এগুলো দেখানোর জন্য শয়তান হয়তো কোনো ধরনের দর্শন ব্যবহার করেছিল, ঠিক যেমন কোনো ব্যক্তিকে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার ছবি দেখানোর জন্য একটা প্রোজেক্টর ও স্ক্রিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে, এক্ষেত্রে যদি কোনো দর্শন ব্যবহার করা হয়েও থাকে, ‘প্রণাম করিবার’ বিষয়টা কাল্পনিকভাবে নয় বরং বাস্তবিকই করতে হতো। (মথি ৪:৮, ৯) তা হলে, এইরকম যুক্তি করা যেতে পারে, মন্দিরের চূড়া থেকে লাফ দিয়ে পড়ার সঙ্গে একটা বাস্তব কাজ ও সেইসঙ্গে বাস্তব পরিণতি জড়িত ছিল আর এটা এই প্রলোভনকে আরও জোরালো করেছিল, যা শুধু দর্শন দেখানোর মাধ্যমে করা যেত না।
শুরুতে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, এই বিষয়ে আমরা একেবারে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারি না। তাই, আমরা এইরকম সম্ভাবনাও বাদ দিতে পারি না, যিশু সত্যিই যিরূশালেমে গিয়েছিলেন এবং মন্দিরের চূড়ার উপর দাঁড়িয়েছিলেন। তবে আমরা একটা ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারি, এই প্রলোভনগুলো বাস্তব ছিল এবং প্রতিটা প্রলোভনের ক্ষেত্রে যিশু শয়তানকে একেবারে উপযুক্ত উত্তর দিয়েছিলেন।
a ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১০-১২ পৃষ্ঠার ৫-৮, ১২ অনুচ্ছেদ দেখুন।
b যিহিষ্কেল ৩৭:১-১৪ পদে ও সেইসঙ্গে প্রকাশিত বাক্য ১১:৭-১২ পদে এক আধ্যাত্মিক পুনর্স্থাপন সম্বন্ধে বলা হয়েছে, যা ১৯১৯ সালে ঘটেছিল। কিন্তু, যিহিষ্কেলের ভবিষ্যদ্বাণীতে ঈশ্বরের সমস্ত লোকের চূড়ান্ত আধ্যাত্মিক পুনর্স্থাপন সম্বন্ধে বলা হয়েছে, যা এক দীর্ঘ সময়কাল ধরে বন্দিত্বে থাকার পর ঘটবে। অন্যদিকে, প্রকাশিত বাক্যে বলা ভবিষ্যদ্বাণী অভিষিক্ত ভাইদের সেই ছোটো দলের আধ্যাত্মিক পুনর্জন্মকে নির্দেশ করে, যারা তুলনামূলকভাবে অল্পসময়ের জন্য নিষ্ক্রিয় থাকতে বাধ্য হয়েছিল কিন্তু পরে নেতৃত্ব নিয়েছিল।