কীভাবে আমরা ‘অপেক্ষা করিবার’ মনোভাব বজায় রাখতে পারি?
“আমি . . . অপেক্ষা করিব।”—মীখা ৭:৭.
১. কেন হয়তো আমরা অধৈর্য হয়ে পড়েছি?
উনিশ-শো চোদ্দো সালে যখন মশীহ রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তখন শয়তানের বিধিব্যবস্থা এর শেষ সময়ে প্রবেশ করেছে। স্বর্গে যুদ্ধ হওয়ার কারণে, দিয়াবল এবং মন্দদূতদেরকে যিশু পৃথিবীর সীমার মধ্যে নিক্ষেপ করেছিলেন। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১২:৭-৯.) শয়তান জানে যে, তার “কাল সংক্ষিপ্ত।” (প্রকা. ১২:১২) কিন্তু, সেই “কাল” শুরু হওয়ার পর, অনেক দশক কেটে গিয়েছে আর এই কারণে কেউ কেউ হয়তো মনে করে যে, শেষকাল দীর্ঘসময় ধরে চলছে। যিহোবার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করার সময়, ব্যক্তিগতভাবে আমরা কি অধৈর্য হয়ে পড়েছি?
২. এই প্রবন্ধে কী বিবেচনা করা হবে?
২ অধৈর্য মনোভাব বিপদজনক হতে পারে কারণ এটা আমাদেরকে তাড়াহুড়ো করে কাজ করার জন্য পরিচালিত করতে পারে। কীভাবে আমরা অপেক্ষা করার মনোভাব বজায় রাখতে পারি? এই প্রবন্ধ নীচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার মাধ্যমে আমাদেরকে তা করার জন্য সাহায্য করবে। (১) ভাববাদী মীখার দ্বারা স্থাপিত উদাহরণ থেকে ধৈর্য সম্বন্ধে আমরা কী শিখতে পারি? (২) কোন ঘটনাগুলো সংকেত দেবে যে, শেষ সন্নিকট? (৩) আমরা কীভাবে যিহোবার ধৈর্যের প্রতি আমাদের উপলব্ধি প্রকাশ করতে পারি?
মীখার উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৩. মীখার দিনে ইস্রায়েলের অবস্থা কীসের মতো ছিল?
৩ মীখা ৭:২-৬ পদ পড়ুন। যিহোবার ভাববাদী মীখা দেখেছিলেন যে, ইস্রায়েলের আধ্যাত্মিক অবস্থা মন্দ থেকে মন্দতর হয়ে পড়েছিল এবং রাজা আহসের সময় তা চরমে গিয়ে পৌঁছেছিল। অবিশ্বস্ত ইস্রায়েলীয়দের মীখা “শ্যাকুলের” এবং ‘কন্টকময় বেড়ার’ সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। ঠিক যেমন শ্যাকুল অথবা একটা কন্টকময় বেড়ার মধ্যে দিয়ে হেঁটে গেলে একজন ব্যক্তি ক্ষতবিক্ষত হত, তেমনই কলুষিত ইস্রায়েলীয়রা দৈনন্দিন কাজের সময় যেকোনো ব্যক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করত। কলুষতা এতটা বেড়ে গিয়েছিল যে, এমনকী পরিবারের মধ্যেও ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছিল। যেহেতু তিনি জানতেন যে, পরিস্থিতি পরিবর্তন করার জন্য তিনি নিজে কিছু করতে পারবেন না, তাই তিনি মনপ্রাণ উজাড় করে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। এরপর, তিনি ধৈর্য ধরে যিহোবার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। মীখা নিশ্চিত ছিলেন যে, যিহোবা তাঁর নিরূপিত সময়ে হস্তক্ষেপ করবেন।
৪. আমরা কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হই?
৪ মীখার মতো, আমাদেরও স্বার্থপর লোকেদের মধ্যে বাস করতে হয়। অনেক লোক “অকৃতজ্ঞ, অসাধু, স্নেহরহিত।” (২ তীম. ৩:২, ৩) সহকর্মী, সহছাত্র-ছাত্রী এবং প্রতিবেশীরা যখন এক আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব প্রদর্শন করে, তখন তা আমাদের জন্য অনেক দুর্দশা নিয়ে আসে। কিন্তু, ঈশ্বরের কিছু দাসকে এমনকী আরও বড়ো প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়। যিশু বলেছিলেন যে, তাঁর অনুসারীরা পরিবারের কাছ থেকে বিরোধিতা সহ্য করবে এবং তাঁর বার্তার প্রভাব কেমন হবে, সেটা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি মীখা ৭:৬ পদে লিপিবদ্ধ বিষয়ের মতো একই শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। যিশু বলেছিলেন, “আমি পিতার সহিত পুত্রের, মাতার সহিত কন্যার, এবং শাশুড়ীর সহিত বধূর বিচ্ছেদ জন্মাইতে আসিয়াছি; আর আপন আপন পরিজনই মনুষ্যের শত্রু হইবে।” (মথি ১০:৩৫, ৩৬) পরিবারের সেই সদস্যদের কাছ থেকে উপহাস এবং বিরোধিতা সহ্য করা কত কঠিন এক বিষয়, যারা আমাদের বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয়! আমরা যদি এইরকম পরীক্ষার মুখোমুখি হই, তাহলে আসুন আমরা যেন পরিবারের চাপের কাছে নতিস্বীকার না করি। এর পরিবর্তে, আমরা যেন অনুগত থাকি এবং বিষয়গুলো সমাধান করার ব্যাপারে ধৈর্য ধরে যিহোবার জন্য অপেক্ষা করি। আমরা যদি ক্রমাগত তাঁর কাছে সাহায্য চাই, তাহলে তিনি আমাদেরকে সহ্য করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি এবং প্রজ্ঞা দান করবেন।
৫, ৬. যিহোবা কীভাবে মীখাকে পুরস্কৃত করেছিলেন কিন্তু মীখা কী দেখে যেতে পারেননি?
৫ মীখার ধৈর্যের জন্য যিহোবা তাকে পুরস্কৃত করেছিলেন। মীখা রাজা আহস এবং তার মন্দ শাসনের শেষ দেখতে পেরেছিলেন। তিনি আহসের ছেলে, ভালো রাজা হিষ্কিয়কে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হতে এবং বিশুদ্ধ উপাসনা পুনর্স্থাপিত হতে দেখেছিলেন। আর মীখার মাধ্যমে শমরীয়ের বিরুদ্ধে বলা যিহোবার বিচারের বার্তা সেই সময় পরিপূর্ণ হয়েছিল, যখন অশূরীয়রা ইস্রায়েলের উত্তর রাজ্যকে আক্রমণ করেছিল।—মীখা ১:৬.
৬ কিন্তু, মীখাকে যিহোবা যে-সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণী বলার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন, সেগুলোর সবই তিনি পরিপূর্ণ হতে দেখেননি। উদাহরণ স্বরূপ, মীখা লিখেছিলেন: “শেষকালে . . . সদাপ্রভুর গৃহের পর্ব্বত পর্ব্বতগণের মস্তকরূপে স্থাপিত হইবে, উপপর্ব্বতগণ হইতে উচ্চীকৃত হইবে; তাহাতে জাতিগণ তাহার দিকে স্রোতের ন্যায় প্রবাহিত হইবে। আর অনেক জাতি যাইতে যাইতে বলিবে, চল, আমরা সদাপ্রভুর পর্ব্বতে . . . গিয়া উঠি।” (মীখা ৪:১, ২) সেই ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হওয়ার অনেক আগেই মীখা মারা গিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও, তার চারপাশের লোকেরা যা-ই করুক না কেন, মীখা মৃত্যু পর্যন্ত যিহোবার প্রতি অনুগত থাকার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। এই বিষয়ে মীখা লিখেছিলেন: “জাতিমাত্র প্রত্যেকে আপন আপন দেবের নামে চলে; আর আমরা যুগে যুগে চিরকাল আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে চলিব।” (মীখা ৪:৫) কঠিন সময়গুলোতে মীখা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে পেরেছিলেন কারণ এই বিষয়ে তার পূর্ণ আস্থা ছিল যে, যিহোবা তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করবেন। এই বিশ্বস্ত ভাববাদী যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন।
৭, ৮. (ক) কেন আমাদের আস্থা রাখার কারণ রয়েছে? (খ) কী আমাদের সময়কে আরও দ্রুত কেটে যাওয়ার জন্য সাহায্য করবে?
৭ আমাদেরও কি যিহোবার ওপর একই আস্থা রয়েছে? এইরকম নির্ভরতা দেখানোর উত্তম কারণ আমাদের রয়েছে। আমরা সরাসরি মীখার ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা দেখতে পারছি। “শেষকালে” সমস্ত জাতি, বংশ এবং ভাষা থেকে আসা লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি ‘সদাপ্রভুর গৃহের পর্ব্বতের’ দিকে ধাবিত হচ্ছে। ভিন্ন ভিন্ন জাতি থেকে আসা সত্ত্বেও, এই উপাসকরা “আপন আপন খড়্গ ভাঙ্গিয়া লাঙ্গলের ফাল” গড়েছে এবং ‘যুদ্ধ শিখিতে’ প্রত্যাখ্যান করেছে। (মীখা ৪:৩) যিহোবার শান্তিপূর্ণ লোকেদের মধ্যে একজন হওয়ার কী এক বিশেষ সুযোগই না আমাদের রয়েছে!
৮ এটা ঠিক যে, আমরা চাই যেন যিহোবা শীঘ্র এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ নিয়ে আসেন। কিন্তু, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে চাইলে আমাদের বিভিন্ন বিষয়কে যিহোবার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। তিনি একটা দিন স্থির করেছেন, যখন তিনি “আপনার নিরূপিত ব্যক্তি” যিশু খ্রিস্টের মাধ্যমে মানবজাতির বিচার করবেন। (প্রেরিত ১৭:৩১) কিন্তু, এর আগে ঈশ্বর সমস্ত ধরনের মানুষকে “সত্যের তত্ত্বজ্ঞান” বা সঠিক জ্ঞান অর্জন করার, সেই জ্ঞান অনুযায়ী কাজ করার এবং রক্ষা পাওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন। তাদের মূল্যবান জীবন ঝুঁকির মুখে রয়েছে। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ২:৩, ৪.) আমরা যদি অন্যদেরকে ঈশ্বর সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান অর্জন করার জন্য সাহায্য করায় ব্যস্ত থাকি, তাহলে যিহোবার বিচারের দিন আসার আগে যে-সময়টুকু বাকি আছে, তা আরও দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। শীঘ্র—এমনকী আকস্মিকভাবে—সময় কেটে যাবে। সেই সময় উপস্থিত হলে আমরা কতই-না আনন্দিত হব যে, আমরা রাজ্যের প্রচার কাজে ব্যস্ত ছিলাম!
কোন ঘটনাগুলো সংকেত দেবে যে, শেষ সন্নিকট?
৯-১১. প্রথম থিষলনীকীয় ৫:৩ পদ কি পরিপূর্ণ হয়েছে? ব্যাখ্যা করুন।
৯ প্রথম থিষলনীকীয় ৫:১-৩ পদ পড়ুন। নিকট ভবিষ্যতে জাতিগুলো বলবে, “শান্তি ও অভয়।” আমরা যদি এই ঘোষণার দ্বারা প্রভাবিত হতে না চাই, তাহলে আমাদের ‘জাগিয়া থাকিতে ও মিতাচারী হইতে’ হবে। (১ থিষল. ৫:৬) নিজেদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে সজাগ রাখার জন্য আসুন আমরা সংক্ষেপে কিছু ঘটনা বিবেচনা করি, যেগুলো এই উল্লেখযোগ্য ঘোষণার জন্য পথ প্রস্তুত করে দিয়েছে।
১০ দুটো বিশ্বযুদ্ধের পর, জাতিগুলো শান্তির জন্য দাবি জানিয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, শান্তি নিয়ে আসার লক্ষ্যে রাষ্ট্রপুঞ্জ গঠন করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আশা করা হয়েছিল যে, রাষ্ট্রসংঘ পৃথিবীতে শান্তি নিয়ে আসবে। সরকার এবং ধর্মীয় নেতারা মানবজাতির জন্য শান্তিপূর্ণ অবস্থা নিয়ে আসার ক্ষেত্রে ওই সংস্থাগুলোর ওপর নির্ভর করেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, রাষ্ট্রসংঘ ১৯৮৬ সালকে ব্যাপকভাবে প্রচারিত আন্তর্জাতিক শান্তির বছর হিসেবে ঘোষণা করেছিল। সেই বছর অনেক জাতির এবং ধর্মের নেতারা শান্তির ব্যাপারে প্রার্থনা করার জন্য ইতালির অ্যাসিসিতে ক্যাথলিক চার্চ-এর প্রধানের সঙ্গে একত্রিত হয়েছিল।
১১ কিন্তু, শান্তি ও অভয়ের সেই ঘোষণা কিংবা এইরকম কোনো ঘোষণাই ১ থিষলনীকীয় ৫:৩ পদে লিপিবদ্ধ ভবিষ্যদ্বাণীকে পরিপূর্ণ করেনি। কেন? কারণ ভবিষ্যদ্বাণীকৃত “আকস্মিক বিনাশ” তখনও আসেনি।
১২. ‘শান্তি ও অভয়ের’ ঘোষণা সম্বন্ধে আমরা কী জানি?
১২ ভবিষ্যতে ‘শান্তি ও অভয়ের’ এই তাৎপর্যপূর্ণ ঘোষণা কে করবে? খ্রিস্টীয়জগৎ এবং অন্যান্য ধর্মের নেতারা কোন ভূমিকা পালন করবে? বিভিন্ন সরকারের নেতারা কীভাবে এই ঘোষণায় যুক্ত হবে? শাস্ত্র আমাদের তা জানায় না। সেই ঘোষণা যেমনই হোক না কেন এবং তা যত জোরালো বলেই মনে হোক না কেন, এটা হবে কেবল এক প্রতারণামূলক ঘোষণা। এই পুরোনো বিধিব্যবস্থা শয়তানের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। এটা পুরোপুরি মন্দ এবং মন্দই থেকে যাবে। আমাদের মধ্যে কেউ যদি শয়তানের সেই অপপ্রচার বিশ্বাস করে এবং খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতা বজায় না রাখে, তাহলে তা কত দুঃখজনকই-না হবে!
১৩. কেন স্বর্গদূতেরা ধ্বংসাত্মক বায়ু ধরে রেখেছে?
১৩ প্রকাশিত বাক্য ৭:১-৪ পদ পড়ুন। ১ থিষলনীকীয় ৫:৩ পদের পরিপূর্ণতার জন্য অপেক্ষা করার সময় শক্তিশালী স্বর্গদূতেরা মহাক্লেশের ধ্বংসাত্মক বায়ু ধরে রেখেছে। তারা কীসের জন্য অপেক্ষা করছে? একটা প্রধান ঘটনা সম্বন্ধে প্রেরিত যোহন বর্ণনা করেছেন—“আমাদের ঈশ্বরের” অভিষিক্ত ‘দাসগণের’ চূড়ান্ত মুদ্রাঙ্কন।a একবার সেই চূড়ান্ত মুদ্রাঙ্কন সমাপ্ত হওয়ার পর, স্বর্গদূতেরা ধ্বংসাত্মক বায়ু ছেড়ে দেবে। সেই সময় কী ঘটবে?
১৪. কী ইঙ্গিত দেয় যে, মহতী বাবিলের শেষ সন্নিকট?
১৪ মহতী বাবিল অর্থাৎ মিথ্যা ধর্মের বিশ্বসাম্রাজ্য এর প্রাপ্য পরিণতি ভোগ করবে। “প্রজাবৃন্দ ও লোকারণ্য ও জাতিবৃন্দ ও ভাষাসমূহ” তাকে আর সক্রিয়ভাবে সমর্থন করতে পারবে না। ইতিমধ্যেই আমরা যেমন ইঙ্গিত পেয়েছি যে, এর শেষ সন্নিকট। (প্রকা. ১৬:১২; ১৭:১৫-১৮; ১৮:৭, ৮, ২১) আসলে, এই সমর্থনের অভাব বর্তমানে প্রচারমাধ্যমগুলোতে তুলে ধরা হচ্ছে, যেখানে ধর্ম এবং ধর্মীয় নেতারা ক্রমান্বয়ে আক্রমণের মুখোমুখি হচ্ছে। তা সত্ত্বেও, মহতী বাবিলের নেতারা মনে করছে যে, তাদের সামনে কোনো বিপদ নেই। তারা কতই-না ভুল চিন্তা করছে! ‘শান্তি ও অভয়ের’ ঘোষণার পর, শয়তানের জগতের রাজনৈতিক দলগুলো আকস্মিকভাবে মিথ্যা ধর্মের ওপর আক্রমণ নিয়ে আসবে এবং এটাকে নির্মূল করে দেবে। মহতী বাবিলকে আর কখনো দেখা যাবে না! নিশ্চিতভাবেই, এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর জন্য ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করা পুরোপুরি উপযুক্ত।—প্রকা. ১৮:৮, ১০.
আমরা কীভাবে ঈশ্বরের ধৈর্যের প্রতি উপলব্ধি দেখাতে পারি?
১৫. কেন যিহোবা তাড়াহুড়ো করে পদক্ষেপ নেন না?
১৫ লোকেরা তাঁর নামের ওপর নিন্দা নিয়ে আসা সত্ত্বেও, যিহোবা পদক্ষেপ নেওয়ার সঠিক সময়ের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছেন। যিহোবা চান না যে, সৎহৃদয়ের কোনো ব্যক্তি বিনষ্ট হয়ে যাক। (২ পিতর ৩:৯, ১০) আমরাও কি একইরকম অনুভব করি? যিহোবার দিন আসার পূর্বে, নিম্নোক্ত উপায়গুলোর মাধ্যমে আমরা তাঁর ধৈর্যের প্রতি আমাদের উপলব্ধি প্রকাশ করতে পারি।
১৬, ১৭. (ক) কেন আমাদের সেই ব্যক্তিদের সাহায্য করতে চাওয়া উচিত, যারা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে? (খ) নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের জন্য যিহোবার কাছে ফিরে আসা কেন অত্যন্ত জরুরি?
১৬ যারা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে, তাদের সাহায্য করুন। যিশু বলেছিলেন যে, মাত্র একটা হারানো মেষ খুঁজে পেলেও স্বর্গে আনন্দ করা হয়। (মথি ১৮:১৪; লূক ১৫:৩-৭) স্পষ্টতই, যিহোবা তাঁর নামের প্রতি প্রেম প্রকাশ করেছে এমন সমস্ত ব্যক্তির জন্য গভীরভাবে চিন্তা করেন, এমনকী বর্তমানে তারা যদি সক্রিয়ভাবে তাঁকে সেবা না-ও করে থাকে। আমরা যখন এই ধরনের ব্যক্তিদের মণ্ডলীতে ফিরে আসতে সাহায্য করি, তখন আমরা যিহোবা এবং স্বর্গদূতদের আনন্দে অবদান রাখি।
১৭ আপনি কি এমন ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন, যারা এখন সক্রিয়ভাবে ঈশ্বরের সেবা করছে না? হতে পারে, মণ্ডলীর কেউ হয়তো আপনাকে আঘাত দিয়েছেন এবং এর ফলে আপনি যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করে দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই যেহেতু কিছু সময় পার হয়ে গিয়েছে, তাই নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘এখন আমার জীবন কি আরও অর্থপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং আমি কি আগের চেয়ে আরও বেশি সুখী? কে আমাকে অসন্তুষ্ট করেছে, যিহোবা নাকি একজন অসিদ্ধ মানুষ? যিহোবা ঈশ্বর কি কখনো এমন কিছু করেছেন, যা আমার জন্য ক্ষতিকর?’ সত্যি বলতে কী, তিনি আমাদের জন্য সবসময় ভালো বিষয়ই করেন। এমনকী আমরা যদি আমাদের উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে না-ও চলি, তার পরও তিনি আমাদের উপভোগের জন্য উত্তম উত্তম বিষয় জোগান। (যাকোব ১:১৬, ১৭) শীঘ্র, যিহোবার দিন আসবে। এখনই আমাদের স্বর্গীয় পিতার প্রেমময় বাহুতে এবং মণ্ডলীতে—এই শেষকালের একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়স্থলে—ফিরে আসার সময়।—দ্বিতীয়. ৩৩:২৭; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.
১৮. যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাদেরকে কেন আমাদের সমর্থন করা উচিত?
১৮ যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাদের অনুগতভাবে সমর্থন করুন। একজন প্রেমময় পালক হিসেবে, যিহোবা আমাদের পরিচালনা দেন এবং সুরক্ষা করেন। তিনি তাঁর পুত্রকে পালের প্রধান পালক হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। (১ পিতর ৫:৪) ১,০০,০০০-রও বেশি মণ্ডলীতে প্রাচীনরা ঈশ্বরের মেষদেরকে আলাদা আলাদাভাবে পালন করছে। (প্রেরিত ২০:২৮) যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাদেরকে আমরা যখন অনুগতভাবে সমর্থন করি, তখন আমরা যিহোবা এবং যিশু আমাদের জন্য যা-কিছু করেছে, সেগুলোর প্রতি আমাদের উপলব্ধি প্রকাশ করি।
১৯. কীভাবে আমরা একত্রে রুখে দাঁড়াতে পারি?
১৯ পরস্পরের নিকটবর্তী হোন। এর অর্থ কী? উত্তমরূপে প্রশিক্ষিত কোনো সৈন্যদল যখন শত্রুদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়, তখন তারা একত্রে রুখে দাঁড়ায় অর্থাৎ পরস্পরের নিকটবর্তী হয়। এভাবে তারা এক অপ্রতিরোধ্য প্রতিরক্ষা গড়ে তোলে। শয়তান ঈশ্বরের লোকেদের ওপর তার আক্রমণকে জোরদার করছে। এখন নিজেদের মধ্যে লড়াই করার সময় নয়। এখন আমাদের পরস্পরের নিকটবর্তী হওয়ার, অন্যদের অসিদ্ধতাকে উপেক্ষা করার এবং যিহোবার নেতৃত্বপদের প্রতি আস্থা প্রকাশ করার সময়।
২০. এখন আমাদের কী করা উচিত?
২০ আমরা সকলে যেন আধ্যাত্মিকভাবে সতর্ক থাকি এবং অপেক্ষা করার মনোভাব প্রদর্শন করি। আসুন আমরা ‘শান্তি ও অভয়ের’ ঘোষণার এবং মনোনীতদের চূড়ান্ত মুদ্রাঙ্কনের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করি। এরপর, চার জন স্বর্গদূত ধ্বংসাত্মক বায়ু ছেড়ে দেবে এবং মহতী বাবিল ধ্বংস হয়ে যাবে। এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর জন্য অপেক্ষা করার সময়, আসুন আমরা যিহোবার সংগঠনে যাদেরকে নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে, তাদের নির্দেশনা গ্রহণ করে নিই। দিয়াবল এবং মন্দদূতদের বিরুদ্ধে একত্রে রুখে দাঁড়ান! গীতরচকের এই জোরালো পরামর্শে মনোযোগ দেওয়ার সময় এখনই: “হে সদাপ্রভুর অপেক্ষাকারী সকলে, সাহস কর, তোমাদের অন্তঃকরণ সবল হউক।”—গীত. ৩১:২৪.
a অভিষিক্ত ব্যক্তিদের প্রাথমিক মুদ্রাঙ্কন এবং চূড়ান্ত মুদ্রাঙ্কনের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে আলোচনার জন্য ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৩০-৩১ পৃষ্ঠা দেখুন।