মিশ্না—ও মোশির প্রতি ঈশ্বরের ব্যবস্থা
“আমরা শুরুই করেছিলাম এমন এক মনোভাব নিয়ে যে আমরা যেন এমন এক কথোপকথনে যোগ দিয়েছি যেটি দীর্ঘ সময় ধরে হয়ে চলেছে আর সেটি এমন বিষয়ভিত্তিক যেটি আমরা কখনও আত্মস্থ করতে পারব না . . . আমরা . . . এমন অনুভব করেছি যেন আমরা দূরবর্তী এক বিমানবন্দরের প্রতীক্ষালয়ে আছি। লোকেরা যে শব্দগুলি বলছে আমরা তা বুঝতে পারছি কিন্তু সেগুলির অর্থ ও কিসের সম্বন্ধে সেগুলি বলা হচ্ছে বিশেষ করে তাদের স্বরের তৎপরতার বিষয়ে আমরা বিভ্রান্ত।” প্রথমবার মিশ্না পড়ার সময় পাঠকের যে অনুভূতি হতে পারে সেই সম্বন্ধে যিহূদী পণ্ডিত যাকোব নইসনার এইভাবেই বর্ণনা করেন। নইসনার আরও বলেন: “মিশ্নার কোন যৌক্তিক সূত্রপাত নেই। এটি শেষও হয়েছে আকস্মিকভাবে।”
যিহূদীবাদের ইতিহাস (ইংরাজি)-এ দানিয়েল জেরোমী সিলভার মিশ্নাকে “রব্বিদের যিহূদীবাদের অত্যাবশ্যক পাঠ” বলে উল্লেখ করেছেন। বস্তুতপক্ষে, তিনি আরও মন্তব্য করেন: “মিশ্না প্রচলিত [যিহূদী] শিক্ষার প্রধান পাঠক্রম হিসাবে বাইবেলের স্থান গ্রহণ করেছে।” কেন এইধরনের এক দুর্বোধ্য শৈলীর পুস্তক এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে?
এর আংশিক উত্তর মিশ্নার এই মন্তব্যের মধ্যেই শায়িত আছে: “মোশি সিনয় পর্বতে তোরা পেয়েছিলেন আর তিনি এটি যিহোশূয়কে দিয়েছিলেন, যিহোশূয় এটি প্রাচীনদের হাতে দিয়েছিলেন আর প্রাচীনেরা ভাববাদীদের হাতে। আর ভাববাদীরা মহাসভার ব্যক্তিদের হাতে সমর্পণ করেছিলেন।” (এভোট ১:১) মিশ্না দাবি করে যে সিনয় পর্বতে মোশিকে দেওয়া তথ্য এর আলোচনার বিষয়বস্তু—ইস্রায়েলের প্রতি ঈশ্বরের ব্যবস্থার এক অলিখিত অংশ। মহাসভার (পরবর্তী সময়ে যেটি ধর্মধাম নামে পরিচিত হয়েছিল) লোকেদের বিদ্বান পণ্ডিত অথবা মহাজ্ঞানী ব্যক্তিদের দীর্ঘ বংশের এক অংশ হিসাবে দেখা হত, যারা এক পুরুষ থেকে আর এক পুরুষে নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষা মৌখিকভাবে প্রবাহিত করেছিল যতদিন পর্যন্ত না তা চূড়ান্তভাবে মিশ্নায় নথিবদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু, এটিই কি প্রকৃত ঘটনা? প্রকৃতপক্ষে কে মিশ্না লিখেছিল এবং কেন? এটির বিষয়বস্তুর উৎস কি সিনয় পর্বতে মোশিকে যা দেওয়া হয়েছিল সেটি? আজকে কি এটি আমাদের জন্য কোন অর্থ রাখে?
মন্দিরবিহীন যিহূদীবাদ
যখন অনুপ্রেরণার অধীনে শাস্ত্র লেখা হচ্ছিল সেই সময় এই ধারণাটি অজানা ছিল যে মোশির লিখিত ব্যবস্থার অতিরিক্ত এক ঐশিক মৌখিক নিয়ম দেওয়া হয়েছিল।a (যাত্রাপুস্তক ৩৪:২৭) অনেক শতাব্দী পরে যিহূদীবাদের মধ্যে ফরীশীরা ছিল সেই দল যারা এই ধারণাটিকে বিকশিত ও উন্নত করেছিল। সা.কা. প্রথম শতাব্দীতে সদ্দূকী ও অন্যান্য যিহূদীরা বাইবেল বহির্ভূত এই শিক্ষাটির বিরোধিতা করেছিল। যতদিন পর্যন্ত যিরূশালেমের মন্দির যিহূদী উপাসনার কেন্দ্রস্থল ছিল, এই মৌখিক নিয়মের বিষয়টি গৌণ ছিল। মন্দিরে উপাসনা প্রত্যেক যিহূদী অস্তিত্বের এক নির্দিষ্ট কাঠামো ও এক নির্দিষ্ট মাত্রায় স্থিরতা প্রদান করেছিল।
কিন্তু, সা.কা. ৭০ সালে যিহূদী জাতি অকল্পনীয় মাত্রায় এক ধর্মীয় সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল। রোমীয় সৈন্যবাহিনীর দ্বারা যিরূশালেম ধ্বংস হয়েছিল আর দশ লক্ষের অধিক যিহূদী হত হয়েছিল। মন্দির, তাদের আধ্যাত্মিক জীবনের কেন্দ্রস্থল আর অবশিষ্ট ছিল না। মোশির ব্যবস্থার দ্বারা জীবন যাপন করা যেটি বলিদান ও মন্দিরে যাজকীয় সেবা দাবি করত, এক অসম্ভব বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। যিহূদীবাদের ভিত্তি প্রস্তর অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছিল। তালমুডের পণ্ডিত এডিন স্টিনসল্টস লেখেন: “সা.কা. ৭০ সালের . . . ধ্বংস ধর্মীয় জীবনের সম্পূর্ণ কাঠামোর পুনর্নির্মাণ করাকে এক জরুরী প্রয়োজনীয়তায় পরিণত করেছিল।” আর তারা এটির পুনর্নির্মাণও করেছিল।
এমনকি মন্দির ধ্বংস হওয়ার পূর্বেই ফরীশী নেতা হিলেলের এক বিশিষ্ট শিষ্য যোহানান বেন জাকাই যিহূদীবাদের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র এবং ধর্মধাম যিরূশালেম থেকে জাবনেহে স্থানান্তরিত করার জন্য ভেসপেসিয়নের (যিনি শীঘ্রই সম্রাট হবেন) কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছিলেন। স্টিনসল্টস যেমন ব্যাখ্যা করেন যিরূশালেমের ধ্বংসের পর যোহানান বেন জাকাই “লোকেদের জন্য এক নতুন কেন্দ্র স্থাপনের ও নতুন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে তাদের সাহায্য করার প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হয়েছিলেন আর এখন যখন মন্দির অস্তিত্বহীন হয়ে গিয়েছিল ধর্মীয় উদ্যোগকে অন্য এক কেন্দ্রবিন্দুর প্রতি পরিবর্তিত করার ছিল।” সেই নতুন কেন্দ্রবিন্দুটি ছিল মৌখিক নিয়ম।
মন্দির ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, সদ্দুকী ও অন্যান্য যিহূদী সম্প্রদায়গুলি কোন প্রত্যয়দানকারী বিকল্প উপস্থিত করতে পারেনি। বিরোধীদের নিজেদের সাথে যুক্ত করে ফরীশীরা যিহূদী প্রধান ধারায় পরিণত হয়েছিল। একতার উপর জোর দিয়ে পরিচালনাকারী রব্বিরা নিজেদের ফরীশী বলা বন্ধ করেছিল, এমন একটি উপাধি যেটির সাথে সাম্প্রদায়িকতা ও গোঁড়ামী বিজড়িত ছিল। তারা সাধারণভাবে রব্বি হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল “ইস্রায়েলের মহাজ্ঞানী ব্যক্তি।” এই মহাজ্ঞানী ব্যক্তিরা তাদের মৌখিক নিয়মের ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এক বিমূর্ত কাঠামো বানাতেন। এটি এমন এক আধ্যাত্মিক অবয়ব যেটি মন্দিরের মত সহজে মনুষ্য আক্রমণের শিকার হবে না।
মৌখিক নিয়মের সুদৃঢ়করণ
যদিও জাবনেহের (যেটি যিরূশালেম থেকে ৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে ছিল) রব্বিদের শিক্ষায়তন এই সময়ে মুখ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল, তবুও সম্পূর্ণ ইস্রায়েল এবং এমনকি বাবিলন ও রোমের মত দূরবর্তী স্থানগুলিতেও মৌখিক নিয়ম শেখানোর জন্য অন্যান্য শিক্ষায়তনগুলি উদ্ভূত হয়েছিল। কিন্তু এটি এক সমস্যা সৃষ্টি করেছিল। স্টিনসল্টস ব্যাখ্যা করেন: “যতক্ষণ পর্যন্ত সব মহাজ্ঞানী ব্যক্তি একসাথে ছিলেন আর বিদ্যাদানের মুখ্য কাজ [যিরূশালেমে] এক দল পুরুষদের দ্বারা সম্পন্ন হত ততদিন পর্যন্ত পরম্পরার ঐক্য সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু শিক্ষকদের সংখ্যাবৃদ্ধি ও ভিন্ন ভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা হওয়ায় . . . অভিব্যক্তির আকার ও পদ্ধতির আধিক্য দেখা দিয়েছিল।”
মৌখিক নিয়মের শিক্ষকদের তানাইম বলে সম্বোধন করা হত, একটি পরিভাষা যা আরামীয় মূল শব্দ থেকে এসেছিল ও যার অর্থ ছিল “অধ্যয়ন করা,” “পুনরাবৃত্তি করা” অথবা “শিক্ষা দেওয়া।” এটি ঐকান্তিকভাবে পুনরাবৃত্তি ও মুখস্থ করার দ্বারা মৌখিক নিয়মকে শেখা ও শেখানোর পদ্ধতির উপর জোর দিয়েছিল। মৌখিক পরম্পরাগত বিধিগুলি মুখস্থ করাকে সহজ করতে প্রত্যেকটি অনুশাসন অথবা পরম্পরাগত বিধিকে এক লঘু, সংক্ষিপ্ত বাক্যাংশগুলিতে হ্রাস করা হয়েছিল। যত কম শব্দ হত সেটি ততই ভাল হত। এক সাবলীল, কাব্যিক শৈলী প্রয়োগ করার চেষ্টা করা হত আর বাক্যাংশগুলিকে প্রায়ই সুর করে আবৃত্তি করা অথবা গাওয়া যেত। তবুও, এই অনুশাসনগুলি অসংগঠিত ছিল আর সেগুলি ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষকের দ্বারা ভীষণভাবে পরিবর্তিত হত।
যে প্রথম রব্বি অনেক মৌখিক পরম্পরাগত বিধিগুলিকে নির্দিষ্ট আকার ও কাঠামো দান করেছিলেন তিনি ছিলেন আকিবা বেন যোষেফ (প্রায় সা.কা. ৫০-১৩৫ সাল)। তার সম্বন্ধে স্টিনসল্টস লেখেন: “তার সমকালীন লোকেরা তার কার্যকলাপকে এমন এক শ্রমিকের কাজের সাথে তুলনা করেন, যে ক্ষেত্রে যায় ও যা কিছুই দেখতে পায় এলোমেলোভাবে তার ঝুড়িতে জড় করে তারপর ঘরে ফেরে ও প্রত্যেকটি প্রজাতিকে পৃথক করে। আকিবা অসংখ্য অসংগঠিত বিষয়গুলিকে অধ্যয়ন করেছিলেন এবং সেগুলিকে পৃথক পৃথক শ্রেণীতে বিন্যস্ত করেছিলেন।”
সা.কা. দ্বিতীয় শতাব্দীতে—যিরূশালেম ধ্বংসের প্রায় ৬০ বছরেরও পরে—বার কোখবার নেতৃত্বে রোমের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বৃহৎ যিহূদী বিদ্রোহ পরিচালিত হয়েছিল। আরও একবার বিদ্রোহ বিপর্যয় নিয়ে এসেছিল। প্রায় দশ লক্ষ যিহূদী হতাহতদের মধ্যে আকিবা ও তার অনেক শিষ্যেরা ছিল। মন্দির পুনর্নির্মাণের সমস্ত আশা সম্পূর্ণভাবে চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল, যেহেতু রোমীয় সম্রাট হেড্রিয়ান ঘোষণা করেছিলেন যে মন্দির ধ্বংসের বার্ষিকী উদ্যাপন করা ব্যতীত যিহূদীরা যিরূশালেমে প্রবেশ করতে পারবে না।
আকিবার পরে যে তানাইমরা জীবিত ছিলেন তারা যিরূশালেমের মন্দির একেবারেই দেখেননি। কিন্তু মৌখিক নিয়মের পরম্পরাগত বিধির সুগঠিত অধ্যয়ন নমুনা তাদের “মন্দির” অথবা উপাসনার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছিল। আকিবা ও তার শিষ্যেরা মৌখিক নিয়মের এই কাঠামোর সুদৃঢ়ীকরণের জন্য যে কাজ শুরু করেছিলেন, শেষ তানাইম যিহূদা হা-নাসি তার উন্নতিবিধান করেছিলেন।
মিশ্নার গঠন
যুড হা-নাসি, হিলেল ও গমলীয়েলের বংশধর ছিলেন।b বার কোখবার বিদ্রোহের সময় জন্মগ্রহণ করায় তিনি সা.কা. দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষ ও তৃতীয় শতাব্দীর শুরু এই সময়কালে ইস্রায়েলে যিহূদী সমাজের নেতা হয়েছিলেন। হা-নাসি এই উপাধিটির অর্থ “রাজকুমার” যেটি তার সহযিহূদীদের চোখে তার স্থানকে ইঙ্গিত করে। প্রায়ই তাকে সাধারণভাবে এক রব্বি বলে উল্লেখ করা হত। যুড হা-নাসি তার নিজস্ব শিক্ষায়তন ও ধর্মধাম উভয় স্থানেই নেতা স্থানীয় ছিলেন, প্রথমে বেত শেয়ারিমে এবং পরে গালিলের সেফোরিসে।
রোমের সাথে ভবিষ্যৎ সংঘর্ষ মৌখিক নিয়মের সঞ্চারকে বিপদে ফেলতে পারে এটি উপলব্ধি করে যুড হা-নাসি এটিকে একটি কাঠামো দিতে স্থিরসংকল্প ছিলেন যেটি এর সংরক্ষণকে সুনিশ্চিত করবে। তিনি তার দিনের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য পণ্ডিতদের তার শিক্ষায়তনে একত্রিত করেছিলেন। মৌখিক নিয়মের প্রত্যেকটি বিষয় ও পরম্পরাগত বিধির উপর বিতর্ক করা হয়েছিল। এই আলোচনার সারসংক্ষেপকে কাব্যিক ইব্রীয় গদ্যের কঠোর নমুনা অনুসরণ করে অবিশ্বাস্য সংক্ষিপ্ত বাক্যাংশে সুদৃঢ় করা হয়েছিল।
এই সারসংক্ষেপটি মুখ্য বিষয়বস্তু অনুসারে ছয়টি বৃহৎ বিভাগ অথবা তন্ত্রে সংগঠিত করা হয়েছিল। যুড এটিকে আরও ৬৩টি খণ্ড অথবা বর্গে বিভাজিত করেছিলেন। আধ্যাত্মিক ভবন এখন তৈরি হয়ে গিয়েছে। এই সময় পর্যন্ত এইধরনের পরম্পরাগত বিধিগুলি সর্বদা মৌখিকভাবে সঞ্চারিত হয়ে এসেছিল। কিন্তু এক অতিরিক্ত সুরক্ষাস্বরূপ এক চূড়ান্ত বিপ্লবাত্মক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল—যেটি ছিল সমস্ত বিষয়গুলি লিখে রাখা। মৌখিক নিয়মের এই প্রভাববিস্তারকারী নতুন লিখিত কাঠামো মিশ্না নামে পরিচিত হয়েছিল। মিশ্না নামটি মূল ইব্রীয় শব্দ শানাহ থেকে আসে যার অর্থ “পুনরাবৃত্তি করা,” “অধ্যয়ন করা” অথবা “শিক্ষা দেওয়া।” এটি অরামিক তেনার সমতুল্য যার থেকে তানাইম এসেছে যে পরিভাষাটি মিশ্নার শিক্ষকদের প্রতি প্রয়োগ করা হয়েছিল।
এক নির্দিষ্ট আইন সংকলন স্থাপন করা মিশ্নার উদ্দেশ্য ছিল না। পাঠকেরা মৌলিক নীতিগুলি জানে এটি অনুমান করে নিয়ে এতে বেশি করে ব্যতিক্রম সম্বন্ধে জানানো হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, এটি যুড হা-নাসির সময়ে রব্বিদের শিক্ষায়তনে যে বিষয়গুলি আলোচিত ও শেখানো হয়েছিল তার সংক্ষিপ্তসার। মিশ্না বলতে বোঝাত পরবর্তী বিতর্কের জন্য মৌখিক নিয়মের এক পরিলেখ, এক কঙ্কালবৎ আকার অথবা এক মৌলিক কাঠামো যার উপর নির্মাণ করা যায়।
সিনয় পর্বতে মোশিকে যা দেওয়া হয়েছিল মিশ্না তার কিছুই প্রকাশ করেনি, বরঞ্চ এটি মৌখিক নিয়মের বিকাশের ক্ষেত্রে অন্তর্দৃষ্টি যুগিয়েছিল, এক ধারণা যা ফরীশীদের দ্বারা শুরু হয়েছিল। মিশ্নায় নথিবদ্ধ তথ্য খ্রীষ্টীয় গ্রীক শাস্ত্রের কিছু উক্তি ও যীশু খ্রীষ্ট এবং ফরীশীদের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু কথোপকথনের উপর আলোকপাত করে। কিন্তু, সাবধানতার প্রয়োজন আছে কারণ মিশ্নায় প্রাপ্ত ধারণা সা.কা দ্বিতীয় শতাব্দীর যিহূদী দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে। দ্বিতীয় মন্দিরের সময়কাল ও তালমুডের মধ্যে মিশ্না এক সেতুস্বরূপ।
[পাদটীকাগুলো]
a অতিরিক্ত তথ্যের জন্য ওয়াচ টাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটির দ্বারা প্রকাশিত যুদ্ধবিহীন জগৎ কি কখনও আসবে? (ইংরাজি) নামক ব্রোশারের পৃষ্ঠা ৮-১১ দেখুন।
b ১৯৯৬ সালের, ১৫ই জুলাই, প্রহরীদুর্গ থেকে “গমলীয়েল—তিনি তার্ষের শৌলকে শিক্ষা দিয়েছিলেন” নামক প্রবন্ধটি দেখুন।
[২৬ পৃষ্ঠার বাক্স]
মিশ্নার বিভাগগুলি
মিশ্না ছয়টি তন্ত্রে বিভক্ত। এগুলি ৬৩টি ক্ষুদ্র পুস্তক অথবা বর্গ নিয়ে গঠিত, যা অধ্যায় এবং মিশ্নায়োট অথবা অনুচ্ছেদগুলিতে বিভক্ত (পদ নয়)।
১. জেরাইম (কৃষি-সংক্রান্ত নিয়ম)
খাদ্য ও কৃষির সাথে সংযুক্ত বিষয়গুলির জন্য প্রার্থনা সম্বন্ধে আলোচনা এই বর্গগুলির অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়াও এগুলিতে দশমাংশ, যাজকীয় অংশ, শস্যচ্ছেদন ও বিশ্রামবারের বছর সম্বন্ধীয় নিয়মাবলীও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
২. মোড (পবিত্র উপলক্ষ, পর্বগুলি)
এই তন্ত্রের বর্গগুলি বিশ্রামবার, প্রায়শ্চিত্তের দিন এবং অন্যান্য পর্বগুলি সম্বন্ধে আলোচনা করেছিল।
৩. নাশিম (স্ত্রী, বিবাহ নিয়ম)
এই বর্গগুলি বিবাহ এবং বিবাহ বিচ্ছেদ, অঙ্গীকার, নাসরীয় এবং সন্দেহভিত্তিক পারদারিকতার ক্ষেত্রগুলি সম্বন্ধে আলোচনা করেছিল।
৪. নেজিকিন (ক্ষয়ক্ষতি ও সামাজিক নিয়ম)
তন্ত্রের এই বর্গগুলি সামাজিক ও সম্পত্তি সম্পর্কিত নিয়ম, আদালত ও শাস্তি, ধর্মধামের কার্যধারা, প্রতিমাপূজা, শপথ এবং ফাদারের নীতিগত দিক প্রভৃতি বিষয়গুলি সম্বন্ধে আলোচনা করে (এভোট)।
৫. কোডাশিম (বলিদান)
এই বর্গগুলি পশু ও শস্য উৎসর্গ সম্বন্ধীয় নিয়মাবলী ও সেই সাথে মন্দিরের বিস্তার সম্বন্ধে আলোচনা করে।
৬. তোহারত (শুদ্ধিকরণ সংক্রান্ত আচারানুষ্ঠান)
এই তন্ত্রটি সেই বর্গগুলি নিয়ে গঠিত ছিল যা শুদ্ধতার আচারানুষ্ঠান, স্নান করা, হাত ধোওয়া, চর্মরোগ এবং বিভিন্ন বিষয়গুলির ক্ষেত্রে বিশুদ্ধিকরণ সম্বন্ধে আলোচনা করে।
[২৮ পৃষ্ঠার বাক্স]
মিশ্না ও খ্রীষ্টীয় গ্রীক শাস্ত্রাবলী
মথি ১২:১, ২: “সেই সময়ে যীশু বিশ্রামবারে শস্যক্ষেত্র দিয়া গমন করিলেন; আর তাঁহার শিষ্যেরা ক্ষুধিত হওয়াতে শীষ ছিঁড়িয়া খাইতে লাগিলেন। কিন্তু ফরীশীরা তাহা দেখিয়া তাঁহাকে বলিল, দেখ, বিশ্রামবারে যাহা করা বিধেয় নয়, তাহাই তোমার শিষ্যগণ করিতেছে।” যীশুর শিষ্যেরা যা করেছিলেন ইব্রীয় শাস্ত্রাবলী তা নিষিদ্ধ করে না। কিন্তু মিশ্নায় আমরা ৩৯টি কার্যের এক তালিকা দেখতে পাই যেগুলি বিশ্রামবারে করা, রব্বিদের দ্বারা নিষিদ্ধ।—সাব্বাত ৭:২.
মথি ১৫:৩: “[যীশু] উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরাও আপনাদের পরম্পরাগত বিধির জন্য ঈশ্বরের আজ্ঞা লঙ্ঘন কর কেন?” মিশ্না এই মনোভাবটিকে নিশ্চিত করে। (সেনহেডরিন ১১:৩) আমরা পড়ি: “[লিখিত] ব্যবস্থার বাক্য [পালনের] চেয়ে অধ্যাপকদের বাক্য [পালনে] বেশি কঠোরতা প্রয়োগ করা প্রয়োজন। যদি এক ব্যক্তি বলে, ‘তাবিজ পরা বাধ্যতামূলক নয়’ যার দ্বারা সে ব্যবস্থার বাক্য লঙ্ঘন করে, সে দোষী নয়; [কিন্তু যদি সে বলে] ‘তাতে পাঁচটি ভাগ থাকা উচিত,’ এটি বলার দ্বারা সে অধ্যাপকদের বাক্যের সাথে কিছু যুক্ত করে, সুতরাং সে দোষী।” হার্বাট ডেনবি প্রণীত দ্যা মিশ্না, পৃষ্ঠা ৪০০.
ইফিষীয় ২:১৪: “তিনিই [যীশু] আমাদের সন্ধি; তিনি উভয়কে এক করিয়াছেন, এবং মধ্যবর্ত্তী বিচ্ছেদের ভিত্তি ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছেন।” মিশ্না বলে: “মন্দির গুহার মধ্যে এক জাফরি-কাটা প্রাচীর (সোরেজ) ছিল যেটি দশ হাত উঁচু।” (মিডোট ২:৩) পরজাতীয়দের জন্য এই স্থানকে অতিক্রম করে ভিতরের প্রাঙ্গণে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ ছিল। প্রেরিত পৌল হয়ত সা.কা ৬০ অথবা ৬১ সালে ইফিষীয়দের কাছে লেখার সময়, যেটি তখনও অবস্থিত ছিল, এই দেওয়াল সম্বন্ধে রূপকভাবে পরোক্ষ উল্লেখ করেছিলেন। এই প্রতীক দেওয়াল ছিল নিয়মচুক্তিস্বরূপ, যা যিহূদী ও পরজাতীয়দের দীর্ঘসময় ধরে পৃথক করে রেখেছিল। কিন্তু, সা.কা. ৩৩ সালে খ্রীষ্টের মৃত্যুর ভিত্তিতে সেই দেওয়াল লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।