আপনাদের কেমন লোক হওয়া উচিত, তা বিবেচনা করুন
“পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তিতে [‘ঈশ্বরের সেবার্থে কাজে,’ ইজি-টু-রিড ভারসন] কিরূপ লোক হওয়া তোমাদের উচিত!”—২ পিতর ৩:১১.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করার জন্য আপনাকে কেমন ব্যক্তি হতে হবে?
কীভাবে শয়তান লোকেদের প্রতারিত করে থাকে?
যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ককে সুরক্ষা করার জন্য আপনি কী করতে পারেন?
১, ২. ঈশ্বরের অনুমোদন লাভের জন্য ‘আমাদের কিরূপ লোক হওয়া উচিত’?
অন্যেরা আমাদের সম্বন্ধে কী মনে করে, তা নিয়ে চিন্তা করা অস্বাভাবিক নয়। তবে খ্রিস্টান হিসেবে, যিহোবা আমাদের সম্বন্ধে কেমন মনে করেন, তা নিয়ে কি আমাদের আরও বেশি চিন্তা করা উচিত নয়? কারণ তিনি হলেন নিখিলবিশ্বের সর্বমহান ব্যক্তি এবং তাঁর কাছে “জীবনের উনুই আছে।”—গীত. ৩৬:৯.
২ যিহোবার দৃষ্টিকোণ থেকে “কিরূপ লোক হওয়া উচিত,” সেই বিষয়ের ওপর জোর দিতে গিয়ে প্রেরিত পিতর আমাদেরকে “পবিত্র আচার ব্যবহার ও ঈশ্বরের সেবার্থে কাজে” রত থাকতে জোরালো পরামর্শ দিয়েছেন। (পড়ুন, ২ পিতর ৩:১১.) ঈশ্বরের অনুমোদন লাভের জন্য আমাদের “আচার ব্যবহার” পবিত্র অর্থাৎ শুচি হতে হবে আর তা নৈতিকভাবে, মানসিকভাবে এবং আধ্যাত্মিকভাবে। এ ছাড়া, আমাদের ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাঁর প্রতি আনুগত্য সহকারে “ঈশ্বরের সেবার্থে কাজ” করতে হবে। তাই, তাঁর অনুমোদন লাভের চেষ্টা করার সঙ্গে কেবল আমাদের আচারব্যবহার নয় কিন্তু সেইসঙ্গে আমাদের ভিতরের ব্যক্তিত্বও জড়িত। যেহেতু যিহোবা ‘অন্তঃকরণের পরীক্ষা করিয়া থাকেন,’ তাই আমরা আচারব্যবহারে পবিত্র কি না এবং তাঁর প্রতি একান্তভাবে নিয়োজিত কি না, তা তিনি জানেন।—১ বংশা. ২৯:১৭.
৩. ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বিষয়ে আমাদের কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা উচিত?
৩ আমাদের শত্রু শয়তান দিয়াবল চায় না যে, আমরা ঈশ্বরের অনুমোদন লাভের চেষ্টা করি। আসলে, যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যাতে আমরা নষ্ট করে ফেলি, সেইজন্য সে আমাদের পিছনে উঠে-পড়ে লাগে। আমাদের প্রলুব্ধ করার এবং আমরা যে-ঈশ্বরের উপাসনা করি, তাঁর কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য শয়তান মিথ্যা বলতে ও আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করতে দ্বিধা করে না। (যোহন ৮:৪৪; ২ করি. ১১:১৩-১৫) তাই, আমাদের নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘কীভাবে শয়তান লোকেদের প্রতারণা করে? যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ককে সুরক্ষা করার জন্য আমি কী করতে পারি?’
কীভাবে শয়তান লোকেদের প্রতারণা করে?
৪. ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলার চেষ্টায়, শয়তান কোন বিষয়টাকে লক্ষ্যবস্তু করে এবং কেন?
৪ “প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কামনা দ্বারা আকর্ষিত ও প্ররোচিত হইয়া পরীক্ষিত হয়,” শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন। “পরে কামনা সগর্ভা হইয়া পাপ প্রসব করে, এবং পাপ পরিপক্ব হইয়া মৃত্যুকে জন্ম দেয়।” (যাকোব ১:১৪, ১৫) ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলার চেষ্টায়, শয়তান আমাদের কামনা বা আকাঙ্ক্ষার উৎসকে—আমাদের হৃদয়কে—লক্ষ্যবস্তু করে।
৫, ৬. (ক) কীসের মাধ্যমে শয়তান আমাদের হৃদয়কে তার লক্ষ্যবস্তু করে? (খ) আমাদের হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষাকে কলুষিত করার চেষ্টায় শয়তান কোন প্রলোভনগুলো ব্যবহার করে আর সেগুলো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সে কতটা অভিজ্ঞ?
৫ কীসের মাধ্যমে শয়তান আমাদের হৃদয়কে তার লক্ষ্যবস্তু করে? বাইবেল বলে, “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” (১ যোহন ৫:১৯) শয়তানের অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ‘জগতীস্থ বিষয় সকল।’ (পড়ুন, ১ যোহন ২:১৫, ১৬.) হাজার হাজার বছর ধরে, দিয়াবল সতর্কতার সঙ্গে আমাদের চারপাশের পরিবেশ তৈরি করেছে। আমরা যেহেতু এই জগতে বাস করি, তাই আমাদের তার সূক্ষ্ম কৌশলগুলোর বিরুদ্ধে সাবধান থাকতে হবে।—যোহন ১৭:১৫.
৬ শয়তান এমন পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে থাকে, যেগুলো হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষাকে কলুষিত করার উদ্দেশে তৈরি করা হয়েছে। প্রেরিত যোহন শয়তানের ব্যবহৃত তিনটে প্রলোভন শনাক্ত করেন: (১) “মাংসের অভিলাষ,” (২) “চক্ষুর অভিলাষ” এবং (৩) “জীবিকার দর্প।” শয়তান প্রান্তরে যিশুকে প্রলোভিত করার জন্য সেগুলো ব্যবহার করেছিল। বছরের পর বছর ধরে এইরকম ফাঁদ ব্যবহার করে এসেছে বলে, শয়তান এখন সেগুলোকে আরও কার্যকরীভাবে ব্যবহার করছে, প্রত্যেক ব্যক্তির প্রবণতা অনুযায়ী তার পদ্ধতিকে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। এই ব্যাপারে নিজেদের সুরক্ষা করার জন্য আমরা যে-পদক্ষেপগুলো নিতে পারি, সেই সম্বন্ধে বিবেচনা করার আগে আসুন আমরা দেখি যে, কীভাবে দিয়াবল নির্দিষ্ট কিছু প্রলোভন ব্যবহার করায় হবার ক্ষেত্রে সফল হয়েছিল, কিন্তু ঈশ্বরের পুত্রের ক্ষেত্রে সফল হয়নি।
“মাংসের অভিলাষ”
৭. হবাকে প্রলোভিত করার জন্য শয়তান কীভাবে ‘মাংসের অভিলাষকে’ ব্যবহার করেছিল?
৭ দেহকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য মানুষের এক মৌলিক চাহিদা—খাদ্যের প্রয়োজন—রয়েছে। সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীকে এমনভাবে তৈরি করেছেন, যা প্রচুর খাদ্য উৎপাদন করতে পারে। শয়তান খাদ্যের জন্য আমাদের স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষাকে এমনভাবে ব্যবহার করতে পারে, যাতে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করা থেকে আমরা দূরে সরে যাই। হবার ক্ষেত্রে সে কীভাবে সেটা করেছিল, তা বিবেচনা করুন। (পড়ুন, আদিপুস্তক ৩:১-৬.) শয়তান হবাকে বলেছিল যে, ‘সদসদ্-জ্ঞানদায়ক বৃক্ষের’ ফল খেলে হবা মারা যাবে না আর এও বলেছিল, হবা যে-দিন সেই ফল খাবে, সেই দিন ঈশ্বরের সদৃশ হয়ে যাবে। (আদি. ২:৯) দিয়াবল এভাবে ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, বেঁচে থাকার জন্য হবার ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য হওয়ার প্রয়োজন নেই। কী এক জলজ্যান্ত মিথ্যা! সেই ধারণা যখন একবার হবার মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তখন তার কাছে বাছাই করার মতো দুটো বিষয় ছিল: সে সেই ধারণা প্রত্যাখ্যান করতে পারত অথবা সেটা নিয়ে ক্রমাগত চিন্তা করে ফলের জন্য তার আকাঙ্ক্ষাকে বাড়তে দিতে পারত। সে যদিও চাইলেই উদ্যানের অন্যান্য গাছের ফল খেতে পারত, কিন্তু সে উদ্যানের মধ্যস্থানে থাকা বৃক্ষের বিষয়ে শয়তান যা বলেছে, তা নিয়ে ক্রমাগত চিন্তা করা বেছে নিয়েছিল এবং সে ‘তাহার ফল পাড়িয়া ভোজন করিয়াছিল।’ এভাবে শয়তান হবার মধ্যে এমন কিছুর জন্য আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলেছিল, যেটার বিষয়ে তার সৃষ্টিকর্তা নিষেধ করেছিলেন।
৮. “মাংসের অভিলাষ” ব্যবহার করে শয়তান কীভাবে যিশুকে প্রলোভিত করার চেষ্টা করেছিল আর কেন সেই প্রলোভন সফল হয়নি?
৮ শয়তান যখন প্রান্তরে যিশুকে প্রলোভিত করার চেষ্টা করেছিল, তখন সে একই কৌশল ব্যবহার করেছিল। যিশু ৪০ দিন ও ৪০ রাত উপবাস করার পর, শয়তান খাদ্যের জন্য যিশুর আকাঙ্ক্ষাকে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিল। শয়তান বলেছিল, “তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে এই পাথরখানিকে বল, যেন ইহা রুটী হইয়া যায়।” (লূক ৪:১-৩) যিশুর কাছে দুটো বাছাই ছিল: তিনি খাদ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য নিজের অলৌকিক ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারতেন অথবা তা না করা বেছে নিতে পারতেন। যিশু জানতেন, তাঁর এই শক্তিকে স্বার্থপর উদ্দেশ্যের জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। তিনি যদিও ক্ষুধার্ত ছিলেন কিন্তু তিনি ক্ষুধা মেটানোর বিষয়টাকে যিহোবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বজায় রাখার চেয়ে অগ্রাধিকার দেননি। যিশু উত্তর দিয়েছিলেন: “লেখা আছে, ‘মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।’”—মথি ৪:৪.
“চক্ষুর অভিলাষ”
৯. “চক্ষুর অভিলাষ” অভিব্যক্তিটি কী ইঙ্গিত করে আর হবার ক্ষেত্রে শয়তান কীভাবে এই আকাঙ্ক্ষা ব্যবহার করেছিল?
৯ এ ছাড়া, যোহন প্রলোভন হিসেবে “চক্ষুর অভিলাষ” সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন। এই অভিব্যক্তি ইঙ্গিত দেয় যে, একজন ব্যক্তি কোনো কিছুর প্রতি শুধুমাত্র তাকানোর মাধ্যমেই সেটার জন্য আকাঙ্ক্ষা গড়ে তোলা শুরু করতে পারেন। হবার ক্ষেত্রে, শয়তান সেই আকাঙ্ক্ষা ব্যবহার করার জন্য এই কথা বলেছিল: “তোমাদের চক্ষু খুলিয়া যাইবে।” হবা যত বেশি সেটার প্রতি তাকিয়ে ছিল, সেই নিষিদ্ধ ফল তার কাছে তত বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল। হবা দেখেছিল যে, ওই বৃক্ষ “চক্ষুর লোভজনক।”
১০. যিশুকে প্রলোভিত করার জন্য শয়তান কীভাবে ‘চক্ষুর অভিলাষকে’ ব্যবহার করেছিল আর যিশু কীভাবে উত্তর দিয়েছিলেন?
১০ যিশুর ক্ষেত্রে কী বলা যায়? শয়তান “[যিশুকে] উপরে লইয়া গিয়া মুহূর্ত্তকাল মধ্যে জগতের সমস্ত রাজ্য দেখাইল। আর দিয়াবল তাঁহাকে বলিল, তোমাকেই আমি এই সমস্ত কর্ত্তৃত্ব ও এই সকলের প্রতাপ দিব।” (লূক ৪:৫, ৬) যদিও যিশু তাঁর আক্ষরিক চোখ দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত রাজ্য দেখেননি, কিন্তু শয়তান নিশ্চয়ই মনে করেছিল যে, একটা দর্শনের মাধ্যমে দেখানো এইসমস্ত রাজ্যের প্রতাপ যিশুর কাছে কিছুটা আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। তারপর, শয়তান নির্লজ্জভাবে বলেছিল: “তুমি যদি আমার সম্মুখে পড়িয়া প্রণাম কর, তবে এ সকলই তোমার হইবে।” (লূক ৪:৭) যিশু কোনোভাবেই সেই রকম ব্যক্তি হতে চাননি, যেমনটা শয়তান চেয়েছিল। তিনি অবিলম্বে উত্তর দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “লেখা আছে, ‘তোমার ঈশ্বর প্রভুকেই প্রণাম করিবে, কেবল তাঁহারই আরাধনা করিবে।’”—লূক ৪:৮.
“জীবিকার দর্প”
১১. কীভাবে হবা শয়তানের দ্বারা প্রলোভিত হয়েছিল?
১১ জগতের বিষয়গুলো সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে যোহন “জীবিকার দর্প” সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন। পৃথিবীতে যখন শুধুমাত্র আদম ও হবাই ছিল, তখন অবশ্য তারা অন্য লোকেদের সামনে “জীবিকার দর্প” প্রকাশ করতে পারেনি। কিন্তু তারা গর্ব প্রকাশ করেছিল। হবাকে প্রলোভিত করার সময় শয়তান ইঙ্গিত দিয়েছিল, ঈশ্বর তাকে অপূর্ব কোনো কিছু থেকে বঞ্চিত করেছেন। দিয়াবল তাকে বলেছিল, “সদসদ্-জ্ঞানদায়ক যে বৃক্ষ,” সেটার ফল হবা যে-দিন খাবে, সেই দিন থেকে সে “ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ্-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।” (আদি. ২:১৭; ৩:৫) শয়তান এভাবে ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, হবা ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বাধীন হতে পারে। হবা যে সেই মিথ্যা মেনে নিয়েছিল, নিশ্চিতভাবেই সেটার পিছনে একটা কারণ ছিল গর্ব। সে সেই নিষিদ্ধ ফল খেয়ে মনে করেছিল যে, সে আসলে মারা যাবে না। সে কত বড়ো ভুলই না করেছিল!
১২. আরেকটা কোন উপায়ে শয়তান যিশুকে প্রলোভিত করার চেষ্টা করেছিল আর যিশু কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?
১২ হবার বৈসাদৃশ্যে, যিশু নম্রতার কত চমৎকার এক উদাহরণই না স্থাপন করেছিলেন! শয়তান তাঁকে আরেকটা উপায়ে প্রলোভিত করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু যিশু এমনকী ঈশ্বরকে পরীক্ষা করার জন্য রোমাঞ্চকর কিছু করার চিন্তাও মাথায় আনেননি। সেটা করা গর্বের এক কাজ হতো! এর পরিবর্তে, যিশু স্পষ্টভাবে ও সরাসরি উত্তর দিয়েছিলেন: “উক্ত আছে, ‘তুমি আপন ঈশ্বর প্রভুর পরীক্ষা করিও না।’”—পড়ুন, লূক ৪:৯-১২.
কীভাবে আমরা যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে সুরক্ষা করতে পারি?
১৩, ১৪. বর্তমানে শয়তান কীভাবে নির্দিষ্ট কিছু প্রলোভন ব্যবহার করে থাকে, তা ব্যাখ্যা করুন।
১৩ বর্তমানে, শয়তান সেই একই প্রলোভনগুলো ব্যবহার করে থাকে, যেগুলো সে হবা ও যিশুর ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছিল। সে “মাংসের অভিলাষ” ব্যবহার করে লোকেদেরকে অনৈতিক কাজ করার ও মাত্রাতিরিক্ত ভোজন-পান করার জন্য প্রলোভিত করে। পর্নোগ্রাফি, বিশেষভাবে যেগুলো ইন্টারনেটে পাওয়া যায়, সেগুলোর মাধ্যমে সে একজন অসতর্ক দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং ‘চক্ষুর অভিলাষকে’ ব্যবহার করে। আর যারা গর্বিত এবং “জীবিকার দর্প” করার মনোভাব দেখাতে চায়, তাদের জন্য বস্তুবাদিতা, ক্ষমতা ও খ্যাতি কতই না প্রলুব্ধকর!
১৪ ‘জগতীস্থ বিষয় সকল’ হচ্ছে একজন জেলের বিভিন্ন টোপের মতো। টোপগুলো আকর্ষণীয় থাকে, কিন্তু প্রতিটা টোপ একটা বঁড়শির সঙ্গে আটকানো থাকে। লোকেরা যেগুলোকে রোজকার স্বাভাবিক চাহিদা বলে মনে করে শয়তান সেগুলো ব্যবহার করে তাদেরকে দিয়ে এমন কিছু করাতে চায় যা ঈশ্বরের আইনের বিপরীত। তবে, এইরকম সূক্ষ্ম প্রলোভন আমাদের আকাঙ্ক্ষাকে প্রভাবিত করার এবং আমাদের হৃদয়কে কলুষিত করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। সেগুলো আসলে আমাদেরকে এমনটা বিশ্বাস করানোর এক প্রচেষ্টা যে, আমাদের ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার চেয়ে বরং ব্যক্তিগত চাহিদা ও আরামআয়েশ পূরণ করার বিষয়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এইরকম প্রলোভনের দ্বারা কি আমরা প্রলুব্ধ হব?
১৫. শয়তানের প্রলোভন প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে আমরা কীভাবে যিশুকে অনুকরণ করতে পারি?
১৫ যদিও হবা শয়তানের প্রলোভনগুলোর কাছে নতিস্বীকার করেছিল, কিন্তু যিশু সেগুলো সফলভাবে প্রতিরোধ করেছিলেন। প্রতি বার তিনি শাস্ত্র থেকে উত্তর দিয়েছিলেন, এই কথা বলেছিলেন: “লেখা আছে” অথবা “উক্ত আছে।” আমরা যদি বাইবেলের অধ্যবসায়ী ছাত্র হই, তাহলে আমরা শাস্ত্রের সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিত হব এবং এমন পদগুলো মনে রাখতে সমর্থ হব, যেগুলো প্রলোভনের মুখোমুখি হলে আমাদের চিন্তাভাবনাকে সঠিক রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। (গীত. ১:১, ২) ঈশ্বরের প্রতি অনুগত ছিল এমন বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের শাস্ত্রীয় উদাহরণগুলো মনে রাখা, আমাদেরকে তাদের অনুকরণ করতে সাহায্য করবে। (রোমীয় ১৫:৪) যিহোবার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা, তিনি যা ভালোবাসেন তা ভালোবাসা এবং তিনি যা ঘৃণা করেন তা ঘৃণা করা, আমাদের সুরক্ষা করবে।—গীত. ৯৭:১০.
১৬, ১৭. আমরা যে-ধরনের ব্যক্তি, সেটার ওপর আমাদের “জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল” কোন প্রভাব ফেলতে পারে?
১৬ প্রেরিত পৌল আমাদেরকে জগতের নয় বরং ঈশ্বরের চিন্তাভাবনার দ্বারা গঠিত এমন ব্যক্তি হয়ে ওঠার জন্য, আমাদের “জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল” ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেন। (ইব্রীয় ৫:১৪) আমরা যা নিয়ে চিন্তা করি, সেই বিষয়ের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে জোর দিয়ে পৌল বলেছিলেন: “আমরা বিতর্ক সকল এবং ঈশ্বর-জ্ঞানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সমস্ত উচ্চ বস্তু ভাঙ্গিয়া ফেলিতেছি, এবং সমুদয় চিন্তাকে বন্দি করিয়া খ্রীষ্টের আজ্ঞাবহ করিতেছি।” (২ করি. ১০:৫) আমরা যে-ধরনের ব্যক্তি, সেটার ওপর যেহেতু আমাদের চিন্তাভাবনার এক জোরালো প্রভাব রয়েছে, তাই আমাদের গঠনমূলক বিভিন্ন বিষয় ‘আলোচনা করিতে’ বা বিবেচনা করে চলতে হবে।—ফিলি. ৪:৮.
১৭ আমরা যদি অনুপযুক্ত চিন্তাভাবনা ও আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে চলি, তাহলে আমরা পবিত্র হওয়ার আশা করতে পারি না। যিহোবাকে আমাদের ‘শুচি হৃদয়ে’ ভালোবাসতে হবে। (১ তীম. ১:৫) কিন্তু, হৃদয় হল বঞ্চক এবং ‘জগতীস্থ বিষয় সকল’ যে আমাদের কতটা গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে, তা এমনকী আমরা হয়তো বুঝতেও পারি না। (যির. ১৭:৯) তাই, বাইবেল অধ্যয়ন করে সেটার আলোকে সৎভাবে আত্মপরীক্ষার মাধ্যমে ‘আমরা বিশ্বাসে আছি কি না; প্রমাণার্থে আপনাদেরই পরীক্ষা করিয়া’ দেখা কি আমাদের উচিত নয়?—২ করি. ১৩:৫.
১৮, ১৯. কেন আমাদের সেই ধরনের ব্যক্তি হওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হবে, যেমনটা যিহোবা চান?
১৮ ‘জগতীস্থ বিষয় সকল’ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে আরেকটা যে-বিষয় আমাদের সাহায্য করতে পারে, তা হল যোহনের এই অনুপ্রাণিত কথাগুলো মনে রাখা: “জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।” (১ যোহন ২:১৭) শয়তানের বিধিব্যবস্থাকে স্থায়ী ও বাস্তব বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, একদিন তা ধ্বংস হয়ে যাবে। শয়তানের জগৎ আমাদের দিতে পারে, এমন কোনো কিছুই স্থায়ী নয়। এই বিষয়টা মনে রাখা আমাদেরকে নিশ্চিতভাবেই দিয়াবলের প্রলোভনের দ্বারা প্রতারিত না হতে সাহায্য করবে।
১৯ প্রেরিত পিতর আমাদেরকে ‘ঈশ্বরের সেই দিনের আগমনের অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা করিবার’ সময়ে ঈশ্বরের অনুমোদিত ব্যক্তি হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন, “যে দিনের হেতু আকাশমণ্ডল জ্বলিয়া বিলীন হইবে, এবং মূলবস্তু সকল পুড়িয়া গিয়া গলিয়া যাইবে।” (২ পিতর ৩:১২) সেই দিন খুব শীঘ্র আসবে এবং যিহোবা শয়তানের জগতের প্রতিটা অংশকে ধ্বংস করে দেবেন। ততদিন পর্যন্ত শয়তান আমাদেরকে প্রলোভিত করার জন্য ‘জগতীস্থ বিষয় সকল’ ব্যবহার করে যাবে, যেমনটা সে হবা এবং যিশুকে প্রলোভিত করার জন্য ব্যবহার করেছিল। আমরা হবার মতো হব না এবং আমাদের নিজেদের আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার চেষ্টা করব না। তা করা, শয়তানকে আমাদের ঈশ্বর হিসেবে স্বীকার করার সমতুল্য হবে। আমাদের যিশুর মতো হতে হবে এবং এইরকম প্রলোভন প্রতিরোধ করতে হবে, তা সেগুলো যত আবেদনময় ও আকর্ষণীয় বলেই মনে হোক না কেন। আসুন আমরা সকলে সেই ধরনের ব্যক্তি হতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই, যেমনটা যিহোবা চান।
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
“মাংসের অভিলাষ” ছিল হবার পতনের কারণ (৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিশু কোনো কিছুকেই তাঁর মনোযোগের বিষয় থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়ার জন্য সুযোগ দেননি (৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
এমন পরিস্থিতিতে আপনার কোন শাস্ত্রীয় নীতিগুলো মনে আসে? (১৩, ১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)