প্রলোভনের সঙ্গে লড়াই এবং নিরুৎসাহিতার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য শক্তি লাভ করা
“পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে আসিলে তোমরা শক্তি প্রাপ্ত হইবে।”—প্রেরিত ১:৮.
১, ২. যিশু তাঁর শিষ্যদের কাছে কোন সহায় সম্বন্ধে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আর কেন তাদের সেটা প্রয়োজন ছিল?
যিশু জানতেন যে, তাঁর শিষ্যরা নিজেদের শক্তিতে তাঁর সমস্ত আজ্ঞা পালন করতে সমর্থ নয়। প্রচার কাজের ব্যাপকতা, তাদের বিরোধীদের শক্তি এবং মাংসিক দুর্বলতা বিবেচনা করে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, তাদের অতিমানবীয় শক্তির প্রয়োজন। তাই, যিশু স্বর্গারোহণের ঠিক আগে তাঁর শিষ্যদের এই আশ্বাস দিয়েছিলেন: “পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে আসিলে তোমরা শক্তি প্রাপ্ত হইবে; আর তোমরা যিরূশালেমে, সমুদয় যিহূদীয়া ও শমরিয়া দেশে, এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত আমার সাক্ষী হইবে।”—প্রেরিত ১:৮.
২ সেই প্রতিজ্ঞা, সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে পরিপূর্ণ হতে শুরু করে, যখন পবিত্র আত্মা যিশুর অনুসারীদেরকে পুরো যিরূশালেমে প্রচার করার শক্তি প্রদান করেছিল। কোনো বিরোধিতাই এই কাজকে থামাতে পারেনি। (প্রেরিত ৪:২০) “যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন” যিশুর বিশ্বস্ত অনুসারীদের, যাদের মধ্যে আমরাও রয়েছি, সেই একই ঈশ্বরদত্ত শক্তির অতীব প্রয়োজন হবে।—মথি ২৮:২০.
৩. (ক) পবিত্র আত্মা এবং শক্তির মধ্যে যে-পার্থক্য রয়েছে, তা ব্যাখ্যা করুন। (খ) যিহোবার কাছ থেকে প্রাপ্ত শক্তি আমাদেরকে কী করতে সাহায্য করে?
৩ যিশু তাঁর শিষ্যদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, ‘পবিত্র আত্মা তাহাদের উপরে আসিলে তাহারা শক্তি প্রাপ্ত হইবে।’ “শক্তি” এবং “আত্মা” শব্দগুলোর অর্থগত পার্থক্য রয়েছে। ঈশ্বরের আত্মা অর্থাৎ তাঁর সক্রিয় শক্তিকে এমন কর্মশক্তি হিসেবে বর্ণনা করা যায়, যেটাকে ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্পাদন করার জন্য লোকেদের বা বিভিন্ন বস্তুর ওপর বর্ষণ করা এবং প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু, শক্তিকে “কাজ করার অথবা প্রভাব সৃষ্টি করার সামর্থ্য” হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। এটা কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে সুপ্ত থাকতে পারে, যতক্ষণ পর্যন্ত না কোনো ফল উৎপন্ন করার জন্য এর প্রয়োজন পড়ে। তাই, পবিত্র আত্মাকে বিদ্যুৎপ্রবাহের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যা রিচার্জ করা যায় এমন ব্যাটারিকে কর্মশক্তি প্রদান করে আর অন্যদিকে শক্তি হচ্ছে সুপ্ত কর্মশক্তির মতো, যা সেই সময় ব্যাটারির মধ্যে থাকে। যিহোবা পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তাঁর দাসদের যে-শক্তি প্রদান করেন, তা আমাদের প্রত্যেককে খ্রিস্টীয় উৎসর্গীকরণ অনুযায়ী চলার এবং যখন প্রয়োজন, তখন আমাদের ওপর আসা নেতিবাচক শক্তিকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা প্রদান করে।—পড়ুন, মীখা ৩:৮; কলসীয় ১:২৯.
৪. এই প্রবন্ধে কী বিবেচনা করা হবে এবং কেন?
৪ পবিত্র আত্মার মাধ্যমে আমাদেরকে যে-শক্তি প্রদান করা হয়, তা কীভাবে প্রকাশ পায়? এর প্রভাবাধীনে আমরা কোন ধরনের কাজ করতে অথবা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারি? আমরা যখন বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের সেবা করার প্রচেষ্টা করি, তখন আমরা অসংখ্য বাধার সম্মুখীন হই, যেগুলো হয় শয়তান, নতুবা তার বিধিব্যবস্থা অথবা আমাদের নিজেদের অসিদ্ধতার কারণে এসে থাকে। তাই, খ্রিস্টান হিসেবে দৃঢ় থাকার, নিয়মিতভাবে পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করার এবং যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আমাদের এই ধরনের বাধাগুলো কাটিয়ে ওঠা গুরুত্বপূর্ণ। আসুন আমরা বিবেচনা করে দেখি যে, প্রলোভনের সঙ্গে লড়াই এবং ক্লান্তি ও নিরুৎসাহিতার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য পবিত্র আত্মা কীভাবে আমাদের সাহায্য করে।
প্রলোভনের সঙ্গে লড়াই করার জন্য শক্তি লাভ করা
৫. কীভাবে প্রার্থনা আমাদেরকে শক্তি প্রদান করতে পারে?
৫ যিশু তাঁর অনুসারীদেরকে এই প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন: “আমাদিগকে পরীক্ষাতে” বা প্রলোভনে “আনিও না, কিন্তু মন্দ হইতে রক্ষা কর।” (মথি ৬:১৩) যিহোবা তাঁর সেইসমস্ত বিশ্বস্ত দাসদের পরিত্যাগ করেন না, যারা এই যাচ্ঞা করে থাকে। আরেক বার যিশু বলেছিলেন যে, “স্বর্গস্থ পিতা, যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন।” (লূক ১১:১৩) এটা জানা কতই না আশ্বাসদায়ক যে, যিহোবা আমাদেরকে তাঁর আত্মা, সঠিক কাজ করার এক শক্তিশালী সহায়ক, দান করার প্রতিজ্ঞা করেন! অবশ্য, এর অর্থ এই নয় যে, যিহোবা আমাদের ওপর পরীক্ষা বা প্রলোভন ঘটতে দেবেন না। (১ করি. ১০:১৩) কিন্তু, আমরা যখন প্রলোভনের মুখোমুখি হই, তখনই আরও ঐকান্তিকভাবে প্রার্থনা করতে হবে।—মথি ২৬:৪২.
৬. কীসের ওপর ভিত্তি করে যিশু শয়তানের প্রলোভনগুলোর উত্তর দিয়েছিলেন?
৬ দিয়াবলের প্রলোভনের প্রত্যুত্তরে যিশু শাস্ত্রপদ উদ্ধৃত করেছিলেন। স্পষ্টতই, যিশুর মনে ঈশ্বরের বাক্য ছিল, যখন তিনি এই উত্তর দিয়েছিলেন: “লেখা আছে . . . আবার লেখা আছে, . . . দূর হও, শয়তান; কেননা লেখা আছে, ‘তোমার ঈশ্বর প্রভুকেই প্রণাম করিবে, কেবল তাঁহারই আরাধনা করিবে।’” যিহোবা ও তাঁর বাক্যের প্রতি ভালোবাসা যিশুকে সেইসমস্ত প্রলোভন প্রত্যাখ্যান করতে অনুপ্রাণিত করেছিল, যেগুলো পরীক্ষক বা প্রলোভনকারী তাঁর ওপর নিয়ে এসেছিল। (মথি ৪:১-১০) যিশু বার বার প্রলোভন প্রতিরোধ করার পর, শয়তান তাঁর কাছ থেকে চলে গিয়েছিল।
৭. কীভাবে বাইবেল আমাদেরকে প্রলোভন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে?
৭ যেখানে যিশুই দিয়াবলের প্রলোভনগুলো প্রতিরোধ করার জন্য শাস্ত্রের ওপর নির্ভর করেছিলেন, সেখানে আমাদের আরও কত বেশিই না নির্ভর করা উচিত! বস্তুতপক্ষে, শয়তান ও তার প্রতিনিধিদের প্রতিরোধ করার জন্য সবচেয়ে প্রথমে আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরের মানগুলো জানার এবং সেগুলো পুরোপুরিভাবে পালন করার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। অনেক লোক যখন শাস্ত্র অধ্যয়ন করেছে এবং ঈশ্বরের প্রজ্ঞা ও ধার্মিকতাকে মূল্যবান বলে গণ্য করেছে, তখন তারা বাইবেলের মান অনুযায়ী জীবনযাপন করার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছে। সত্যিই, “ঈশ্বরের বাক্য” এমন কার্যসাধক, যা “হৃদয়ের চিন্তা ও বিবেচনার” সূক্ষ্ম বিচারক। (ইব্রীয় ৪:১২) একজন ব্যক্তি যত বেশি করে শাস্ত্র পাঠ করবেন এবং তা নিয়ে ধ্যান করবেন, তত বেশি তিনি ‘সদাপ্রভুর সত্য সম্বন্ধে বুদ্ধি’ বা অন্তর্দৃষ্টি লাভ করতে পারবেন। (দানি. ৯:১৩) এই কারণে আমাদের এমন শাস্ত্রপদগুলো নিয়ে ধ্যান করা উচিত, যেগুলো আমাদের নির্দিষ্ট দুর্বলতাগুলো সমন্ধে তুলে ধরে।
৮. কীসের মাধ্যমে আমরা পবিত্র আত্মা লাভ করতে পারি?
৮ যিশু প্রলোভনগুলো প্রতিরোধ করতে পেরেছিলেন কারণ শাস্ত্র জানা ছাড়াও তিনি “পবিত্র আত্মায় পূর্ণ” ছিলেন। (লূক ৪:১) একই শক্তি ও সামর্থ্য লাভ করার জন্য আমাদের যিহোবার নিকটবর্তী হতে হবে আর আত্মায় পূর্ণ হওয়ার জন্য তিনি যে-ব্যবস্থাগুলো জুগিয়েছেন, সেগুলোর সদ্ব্যবহার করার দ্বারা আমরা তাঁর নিকটবর্তী হতে পারি। (যাকোব ৪:৭, ৮) এগুলোর মধ্যে রয়েছে, বাইবেল অধ্যয়ন, প্রার্থনা এবং সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে মেলামেশা করা। এ ছাড়া, অনেকে খ্রিস্টীয় কাজকর্মের একটা পূর্ণ তালিকা বজায় রাখার উপকারকে মূল্যবান বলে গণ্য করেছে, যা আমাদের মনকে গঠনমূলক আধ্যাত্মিক চিন্তাভাবনার প্রতি কেন্দ্রীভূত রাখতে সাহায্য করে।
৯, ১০. (ক) আপনার এলাকায় সচরাচর কোন প্রলোভনগুলো দেখা যায়? (খ) ধ্যান ও প্রার্থনা কীভাবে আপনাকে এমনকী ক্লান্ত হয়ে পড়লেও প্রলোভনগুলোর সঙ্গে লড়াই করার জন্য শক্তি প্রদান করতে পারে?
৯ আপনাকে কোন ধরনের প্রলোভনগুলোকে প্রতিরোধ করতে হয়েছে? আপনি কি কখনো এমন কারো সঙ্গে প্রেমের ভান করার প্রলোভনে পড়েছেন, যিনি আপনার বিবাহিত সাথি নন? আপনি যদি বিবাহিত না হয়ে থাকেন, তাহলে কি কখনো অবিশ্বাসী কারো সঙ্গে ডেটিং করার চাপ অনুভব করেছেন? টেলিভিশন দেখার অথবা ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময়, খ্রিস্টানরা হয়তো হঠাৎ করেই অশুচি কোনো কিছু দেখার জন্য প্রলোভিত হতে পারে। আপনার বেলায় কি এমনটা ঘটেছে আর যদি ঘটে থাকে, তাহলে আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? কীভাবে একটা ভুল পদক্ষেপ আরেকটা ভুল পদক্ষেপের দিকে আর এভাবে গুরুতর অন্যায়ের দিকে পরিচালিত করতে পারে, তা নিয়ে ধ্যান করা বিজ্ঞতার কাজ হবে। (যাকোব ১:১৪, ১৫) অবিশ্বস্ততার একটা কাজ যিহোবা, মণ্ডলী এবং আপনার পরিবারের জন্য যে-কষ্ট নিয়ে আসতে পারে, তা চিন্তা করুন। অন্যদিকে, ঐশিক নীতিগুলোর প্রতি আনুগত্য বজায় রাখার মাধ্যমে এক শুদ্ধ বিবেক লাভ করা যায়। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:৩৭; হিতোপদেশ ২২:৩.) যখনই আপনি এই ধরনের পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হন, তখনই সেগুলো প্রতিরোধ করার জন্য শক্তি চেয়ে প্রার্থনা করার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন।
১০ দিয়াবলের প্রলোভনগুলো সম্বন্ধে মনে রাখার মতো আরও একটা বিষয় রয়েছে। যিশু প্রান্তরে ৪০ দিন ধরে উপবাস করার পর, শয়তান তাঁর কাছে এসেছিল। কোনো সন্দেহ নেই, দিয়াবল মনে করেছিল যে, বিশেষভাবে এই সময়টাই যিশুর নীতিনিষ্ঠা পরীক্ষা করার ‘ভাল সুযোগ।’ (লূক ৪:১৩, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন) শয়তান আমাদের নীতিনিষ্ঠা পরীক্ষা করার জন্যও ভালো সুযোগ খুঁজে থাকে। তাই, নিজেদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী রাখা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শয়তান সেই সময় আক্রমণ করে থাকে, যখন সে বুঝতে পারে যে, তার লক্ষবস্তু এর সবচেয়ে দুর্বল জায়গায় রয়েছে। তাই, যখনই আমরা ক্লান্ত বা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি, তখনই যিহোবার কাছে তাঁর সুরক্ষামূলক সাহায্য এবং পবিত্র আত্মা যাচ্ঞা করার জন্য আমাদের আগের চেয়ে আরও বেশি দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত।—২ করি. ১২:৮-১০.
ক্লান্তি ও নিরুৎসাহিতার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য শক্তি লাভ করা
১১, ১২. (ক) কেন বর্তমানে অনেকে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে? (খ) কী আমাদের নিরুৎসাহিতাকে প্রতিরোধ করার জন্য শক্তি প্রদান করতে পারে?
১১ অসিদ্ধ মানুষ হিসেবে আমরা মাঝে মাঝে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি। এটা বিশেষ করে বর্তমানে খুবই সত্য কারণ আমরা এমন একটা সময়ে বাস করছি, যা খুবই চাপপূর্ণ। আমরা হয়তো সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছি, যা সমগ্র মানবজাতি আগে কখনো করেনি। (২ তীম. ৩:১-৫) আরমাগিদোন যতই এগিয়ে আসছে, ততই অর্থনৈতিক, আবেগগত এবং অন্যান্য চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই, এতে অবাক হওয়া উচিত নয় যে, কারো কারো পক্ষে তাদের পরিবারের দেখাশোনা করার এবং ভরণপোষণ জোগানোর দায়িত্ব পালন করা দিন দিন আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। তারা ক্লান্ত, ভারাক্রান্ত, পরিশ্রান্ত আর এমনকী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আপনার বেলায় যদি এইরকমটা হয়ে থাকে, তাহলে কীভাবে আপনি চাপের সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারেন?
১২ মনে রাখবেন, যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তিনি তাদেরকে এক সহায়—ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা—প্রদান করবেন। (পড়ুন, যোহন ১৪:১৬, ১৭.) এটা হচ্ছে নিখিলবিশ্বের সবচেয়ে পরাক্রমী শক্তি। এর মাধ্যমে যিহোবা “অতিরিক্ত” বা অনেক বেশি শক্তি দিতে পারেন, যে-শক্তি যেকোনো পরীক্ষা সহ্য করার জন্য আমাদের প্রয়োজন। (ইফি. ৩:২০) এর ওপর নির্ভর করে, প্রেরিত পৌল বলেছিলেন, আমরা “পরাক্রমের উৎকর্ষ [“অসাধারণ মহাশক্তি,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন]” লাভ করি, এমনকী যদিও আমরা “সর্ব্বপ্রকারে ক্লিষ্ট” হয়ে থাকি। (২ করি. ৪:৭, ৮) যিহোবা চাপ দূর করে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন না কিন্তু তিনি আমাদের এই আশ্বাস দেন যে, তাঁর আত্মার মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করার শক্তি প্রদান করবেন।—ফিলি. ৪:১৩.
১৩. (ক) কীভাবে একজন অল্পবয়সি ব্যক্তি এক কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য শক্তি লাভ করেছে? (খ) আপনি কি এইরকম কোনো উদাহরণের কথা বলতে পারেন?
১৩ উনিশ বছর বয়সি একজন অগ্রগামী বোন স্টিফেনির কথা বিবেচনা করুন। ১২ বছর বয়সে সে স্ট্রোক করে এবং তার ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে। সেই সময় থেকে, তাকে দু-বার অস্ত্রোপচার করতে ও রেডিয়েশন থেরাপি নিতে হয় আর এরপর আরও দু-বার স্ট্রোক করার ফলে তার বাঁ-দিক দিয়ে নড়াচড়া করার শক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি অনেকটা কমে যায়। স্টিফেনিকে সেই বিষয়গুলোর জন্য তার শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে হয়, যেগুলোকে সে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে, যেমন খ্রিস্টীয় সভা এবং ক্ষেত্রের পরিচর্যা। তা সত্ত্বেও, সে এটা উপলব্ধি করে যে, যিহোবার আত্মা তাকে অনেক উপায়ে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করছে। বাইবেলভিত্তিক যে-প্রকাশনাগুলোতে সহখ্রিস্টানদের অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেগুলো তাকে সেই সময়ে শক্তি প্রদান করেছে, যখন সে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিল। ভাইবোনেরা চিঠি দিয়ে অথবা সভার আগে ও পরে উৎসাহজনক কথা বলে তাকে সাহায্য করেছিল। আগ্রহী ব্যক্তিরাও বাইবেলের নির্দেশনা লাভ করার জন্য স্টিফেনির বাড়িতে যাওয়ার মাধ্যমে স্টিফেনি তাদেরকে যা শিক্ষা দিয়ে থাকে, সেটার প্রতি উপলব্ধি দেখিয়েছে। এই সমস্তকিছুর জন্য স্টিফেনি যিহোবার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। তার প্রিয় শাস্ত্রপদ হল গীতসংহিতা ৪১:৩ পদ, যা তার বেলায় সত্য হয়েছে বলে সে বিশ্বাস করে।
১৪. আমরা যখন নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি, তখন আমাদের কী এড়িয়ে চলতে হবে এবং কেন?
১৪ আমরা যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ি বা চাপের মধ্যে থাকি, তখন আমরা কখনো এই যুক্তি দেখাব না যে, এই চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করার উপায়টা হল, আধ্যাত্মিক কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়া। এটা হচ্ছে সবচেয়ে ক্ষতিকর বিষয়, যা হয়তো আমরা করে ফেলতে পারি। কেন? কারণ এই ধরনের বিষয়গুলো যেমন, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বাইবেল অধ্যয়ন, ক্ষেত্রের পরিচর্যা এবং সভায় উপস্থিতি হল এমন মাধ্যম, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা পবিত্র আত্মা লাভ করে থাকি, যা আমাদের পুনরুজ্জীবিত করে। খ্রিস্টীয় কাজকর্ম সবসময়ই সতেজতাদায়ক। (পড়ুন, মথি ১১:২৮, ২৯.) এইরকমটা কত বারই না হয়েছে যে, ভাইবোনেরা ক্লান্ত হয়ে সভাতে আসে ঠিকই কিন্তু বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় এমন হয় যেন তাদের শক্তি পুনরুজ্জীবিত হয়েছে, তাদের আধ্যাত্মিক ব্যাটারি পুনরায় চার্জ হয়েছে!
১৫. (ক) যিহোবা কি এইরকম প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তিনি একজন খ্রিস্টানের জীবনকে সহজ করে দেবেন? শাস্ত্র অনুযায়ী ব্যাখ্যা করুন। (খ) ঈশ্বর আমাদের কাছে কী প্রতিজ্ঞা করেছেন আর এটা কোন প্রশ্ন উত্থাপন করে?
১৫ অবশ্য, এটা বলা হচ্ছে না যে, খ্রিস্টীয় শিষ্যত্বের বোঝা ভারী নয়। একজন বিশ্বস্ত খ্রিস্টান হওয়ার জন্য প্রচেষ্টার প্রয়োজন। (মথি ১৬:২৪-২৬; লূক ১৩:২৪) তবে, পবিত্র আত্মার মাধ্যমে যিহোবা ক্লান্ত ব্যক্তিদের শক্তি দিতে পারেন। “যাহারা সদাপ্রভুর অপেক্ষা করে, তাহারা উত্তরোত্তর নূতন শক্তি পাইবে,” ভাববাদী যিশাইয় লিখেছিলেন। “তাহারা ঈগল পক্ষীর ন্যায় পক্ষসহকারে ঊর্দ্ধে উঠিবে; তাহারা দৌড়িলে শ্রান্ত হইবে না; তাহারা গমন করিলে ক্লান্ত হইবে না।” (যিশা. ৪০:২৯-৩১) তাই, নিজেদেরকে আমাদের জিজ্ঞেস করা উচিত যে, আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ার পিছনে মূল কারণটা আসলে কী?
১৬. ক্লান্তি ও নিরুৎসাহিতার সম্ভাব্য কারণগুলো দূর করার জন্য আমরা কী করতে পারি?
১৬ যিহোবার বাক্য আমাদেরকে ‘যাহা যাহা ভিন্ন প্রকার [“বেশি গুরুত্বপূর্ণ,” NW], তাহা পরীক্ষা করিয়া চিনিবার’ জন্য জোরালো পরামর্শ দেয়। (ফিলি. ১:১০) খ্রিস্টীয় জীবনধারাকে দীর্ঘ দৌড় প্রতিযোগিতার সঙ্গে তুলনা করে, প্রেরিত পৌল অনুপ্রাণিত হয়ে সুপারিশ করেছিলেন: “আইস, আমরাও সমস্ত বোঝা . . . ফেলিয়া দিয়া ধৈর্য্যপূর্ব্বক আমাদের সম্মুখস্থ ধাবনক্ষেত্রে দৌড়ি।” (ইব্রীয় ১২:১) তিনি যা বোঝাতে চেয়েছিলেন, তা হল আমাদের সেই নিরর্থক অনুধাবন ও অপ্রয়োজনীয় ভারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে, যেগুলো আমাদেরকে ক্লান্ত করে দেবে। এমনটা হতে পারে যে, আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ইতিমধ্যে ব্যস্ত জীবনে কেবল আরও ব্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করে। তাই, আপনি যদি প্রায়ই ক্লান্ত হয়ে পড়েন ও চাপের মধ্যে থাকেন, তাহলে চাকরির পিছনে আপনি কতটুকু শক্তি ব্যয় করেন, আমোদপ্রমোদের জন্য কত ঘন ঘন বেড়াতে যান এবং খেলাধুলা করার অথবা অন্যান্য অবসর সময় কাটানোর ওপর কতটা জোর দেন, তা পুনর্বিবেচনা করার দ্বারা আপনি হয়তো উপকার লাভ করতে পারবেন। যুক্তিবাদিতা এবং বিনয়ী মনোভাব যেন আমাদের সকলকে নিজেদের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করতে এবং অপ্রয়োজনীয় কাজগুলো কমাতে অনুপ্রাণিত করে।
১৭. কোন কারণে হয়তো কেউ কেউ নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে কিন্তু এই ব্যাপারে যিহোবা কোন আশ্বাস প্রদান করেছেন?
১৭ এ ছাড়া, এমনও হতে পারে যে, আমাদের মধ্যেই কেউ কেউ এই বিধিব্যবস্থার শেষ যতটা তাড়াতাড়ি আসবে বলে প্রত্যাশা করেছিলাম, তত তাড়াতাড়ি না আসার কারণে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি। (হিতো. ১৩:১২) কিন্তু, যারা এইরকমটা মনে করে, তারা প্রত্যেকেই হবক্কূক ২:৩ পদে প্রাপ্ত এই কথাগুলো থেকে উৎসাহ পেতে পারে: “এই দর্শন এখনও নিরূপিত কালের নিমিত্ত, ও তাহা পরিনামের আকাঙ্ক্ষা করিতেছে, আর মিথ্যা হইবে না; তাহার বিলম্ব হইলেও তাহার অপেক্ষা কর, কেননা তাহা অবশ্য উপস্থিত হইবে, যথাকালে বিলম্ব করিবে না।” যিহোবার কাছ থেকে আমরা এই আশ্বাস পেয়েছি যে, এই বিধিব্যবস্থার শেষ একেবারে যিহোবার নিরূপিত সময়েই আসবে!
১৮. (ক) কোন প্রতিজ্ঞাগুলো আপনাকে শক্তি প্রদান করে? (খ) পরের প্রবন্ধ কীভাবে আমাদের উপকৃত করবে?
১৮ নিশ্চিতভাবেই, যিহোবার সমস্ত বিশ্বস্ত দাস সেই সময়ের জন্য প্রতীক্ষা করে আছে, যখন ক্লান্তি ও নিরুৎসাহিতা দূর হয়ে যাবে এবং জীবিত সকলে “যৌবনকাল” উপভোগ করবে। (ইয়োব ৩৩:২৫) এমনকী এখনই আমরা, সতেজতাদায়ক আধ্যাত্মিক কাজকর্মে অংশ নেওয়ার সময় পবিত্র আত্মার প্রভাবে অন্তরে সবল হতে পারি। (২ করি. ৪:১৬; ইফি. ৩:১৬) দুর্বলতা যেন আপনাকে অনন্ত আশীর্বাদগুলো লাভ করা থেকে বঞ্চিত করতে না পারে। সমস্ত পরীক্ষা—তা সেটা প্রলোভন, ক্লান্তি অথবা নিরুৎসাহিতা, যেটার কারণেই হোক না কেন—দূর হয়ে যাবে, সঙ্গেসঙ্গে না হলেও, ঈশ্বরের নতুন জগতে হবে। পরের প্রবন্ধে আমরা পরীক্ষা করে দেখব যে, কীভাবে পবিত্র আত্মা খ্রিস্টানদেরকে তাড়না প্রতিহত করতে, সঙ্গীসাথিদের ক্ষতিকর চাপ প্রতিরোধ করতে এবং অন্যান্য দুর্দশা সহ্য করতে শক্তি প্রদান করে।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• বাইবেল পাঠ করা কীভাবে আমাদের শক্তি প্রদান করে?
• প্রার্থনা ও ধ্যান করা কীভাবে আমাদের শক্তি প্রদান করে?
• কীভাবে আমরা নিরুৎসাহিতার সম্ভাব্য কারণগুলো দূর করতে পারি?
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
খ্রিস্টীয় সভাগুলো আমাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে সতেজ করতে পারে