জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-র রেফারেন্স
© 2023 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
জানুয়ারি ১-৭
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ইয়োব ৩২-৩৩
দুশ্চিন্তায় ডুবে রয়েছে এমন ভাই-বোনদের সান্ত্বনা দিন
অন্তর্দৃষ্টি-১, ইংরেজি ৭১০
ইলীহূ
ইলীহূ কারো পক্ষ নেননি আর কাউকে মিথ্যা প্রশংসাও করেননি। তিনি বলেছিলেন, তিনিও ইয়োবের মতো মাটি দিয়ে তৈরি এবং তাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন। ইলীহূ ইয়োবকে ভয় দেখিয়ে আতঙ্কিত করতে চাননি বরং একজন বন্ধুর মতো তাকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তিনি ইয়োবের নাম ধরে তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, এর উলটো দিকে ইলীফস, বিল্দদ এবং সোফর এমনটা করেনি।—ইয়োব ৩২:২১, ২২; ৩৩:১, ৬.
প্রহরীদুর্গ ১৪ ৬/১৫ ২৫ অনু. ৮-১০
আপনি কি মানুষের দুর্বলতাগুলোকে যিহোবার মতো করে দেখেন?
৮ আমরা সম্ভবত সেই সময়ে আরও বেশি সহানুভূতিশীল হব, যদি আমরা এটা মনে রাখি যে, আমাদের কোনো কোনো প্রিয় ভাই ও বোন প্রতিকূল পরিস্থিতি অর্থাৎ খারাপ স্বাস্থ্য, বিভক্ত পরিবারে বাস করা অথবা বিষণ্ণতার সঙ্গে মোকাবিলা করার কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে। আমরাও হয়তো একদিন সেইরকম পরিস্থিতিতে পড়তে পারি। ইস্রায়েলীয়রা আগে মিশরে দরিদ্র ও দুর্বল ছিল। আর তাই প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার আগে তাদের মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যেন তারা তাদের দুর্দশাগ্রস্ত ভাইদের প্রতি “আপন হৃদয় কঠিন” না করে। যিহোবা তাদের কাছে আশা করেছিলেন, যেন তারা দরিদ্র ব্যক্তিদেরকে সাহায্য লাভের যোগ্য বলে বিবেচনা করে।—দ্বিতীয়. ১৫:৭, ১১; লেবীয়. ২৫:৩৫-৩৮.
৯ যারা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে, তাদের প্রতি সমালোচক অথবা সন্দেহপ্রবণ হওয়ার পরিবর্তে, আমাদের বরং তাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে সান্ত্বনা দেওয়া উচিত। (ইয়োব ৩৩:৬, ৭; মথি ৭:১) উদাহরণ স্বরূপ: যখন কোনো আকস্মিক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত মোটরসাইকেল আরোহীকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন ডাক্তাররা কি সেই ব্যক্তিই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন কি না, তা বের করতে চেষ্টা করে? না, তারা অবিলম্বে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করতে শুরু করে। একইভাবে, আমাদের কোনো সহবিশ্বাসী যদি ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে দুর্বল হয়ে পড়েন, তাহলে আমাদের প্রথম যে-কাজটা করতে হবে তা হল, আধ্যাত্মিকভাবে সহযোগিতা করা।—পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ৫:১৪.
১০ আমরা যদি আমাদের ভাই-বোনদের পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা করার জন্য একটু সময় করে নিই, তাহলে তাদের যে-বিষয়টাকে দুর্বলতা বলে মনে হয়, সেটাকে আমরা হয়তো ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পারব। এমন বোনদের কথা চিন্তা করুন, যারা বছরের পর বছর ধরে পারিবারিক বিরোধিতা ভোগ করছে। যদিও তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে হয়তো বাইরে থেকে সাধারণ ও দুর্বল দেখা যায়, কিন্তু তারা কি আসলে অসাধারণ বিশ্বাস ও মনের শক্তি প্রকাশ করছে না? আপনি যখন কোনো একক মাকে তার এক বা একাধিক সন্তানকে নিয়ে নিয়মিতভাবে সভাতে আসতে দেখেন, তখন আপনি কি তার বিশ্বাস ও দৃঢ়সংকল্প দেখে অভিভূত হন না? আর সেইসমস্ত কিশোর-কিশোরীর বিষয়ে কী বলা যায়, যারা স্কুলে কুসংসর্গ থাকা সত্ত্বেও সত্যের প্রতি আসক্ত থাকে? আমরা সম্পূর্ণ বিনয়ের সঙ্গে স্বীকার করতে পারি, অপেক্ষাকৃত দুর্বল বলে মনে হয় এমন ব্যক্তিরাও হয়তো আমাদের মধ্যে যারা আরও অনুকূল পরিস্থিতিতে রয়েছে, তাদের মতোই “বিশ্বাসে ধনবান্।”—যাকোব ২:৫.
প্রহরীদুর্গ ২০.০৩ ২৩ অনু. ১৭-১৮
কখন কথা বলা সঠিক হবে?
১৭ ইয়োবের সঙ্গে দেখা করতে আসা চতুর্থ ব্যক্তি ছিলেন ইলীহূ, যিনি অব্রাহামের একজন আত্মীয় ছিলেন। ইয়োব এবং অন্য তিন জন ব্যক্তি যখন কথা বলছিলেন, তখন তিনি তা শুনছিলেন। এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, তিনি তাদের কথা মন দিয়ে শুনেছিলেন কারণ তিনি ইয়োবকে সদয়ভাবে অথচ স্পষ্ট পরামর্শ দিতে পেরেছিলেন, যেগুলো ইয়োবকে নিজের চিন্তাভাবনা সংশোধন করতে সাহায্য করেছিল। (ইয়োব ৩৩:১, ৬, ১৭) ইলীহূর প্রধান চিন্তার বিষয় ছিল যিহোবার প্রশংসা করা, নিজের অথবা অন্য কোনো মানুষের প্রশংসা করা নয়। (ইয়োব ৩২:২১, ২২; ৩৭:২৩, ২৪) ইলীহূর উদাহরণ থেকে আমরা শিখি যে, নীরব থাকার এবং কথা শোনার সময় রয়েছে। (যাকোব ১:১৯) আমরা এও শিখি যে, আমরা যখন অন্যদের পরামর্শ দিই, তখন আমাদের প্রধান লক্ষ যেন যিহোবার গৌরব করা হয়, নিজেদের গৌরব করা নয়।
১৮ আমরা কীভাবে কথা বলব এবং কখন কথা বলব, সেই বিষয়ে বাইবেলের পরামর্শ অনুসরণ করার মাধ্যমে কথা বলার উপহারের প্রতি সম্মান দেখাতে পারি। জ্ঞানী রাজা শলোমন এই কথাগুলো লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন: “উপযুক্ত সময়ে কথিত বাক্য রৌপ্যের ডালিতে সুবর্ণ নাগরঙ্গ ফলের [“সোনার আপেলের,” ইজি-টু-রিড ভারশন] তুল্য।” (হিতো. ২৫:১১) আমরা যখন অন্যদের কথা মন দিয়ে শুনি এবং ভেবে-চিন্তে কথা বলি, তখন আমাদের কথাগুলো সোনার আপেলের মতো মূল্যবান ও সুন্দর হবে। তাই, আমরা কম কথা বলি অথবা বেশি, আমাদের কথা অন্যদের গেঁথে তুলবে এবং যিহোবা আমাদের জন্য গর্বিত হবেন। (হিতো. ২৩:১৫; ইফি. ৪:২৯) ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এই উপহারের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানোর এটাই হল সর্বোত্তম উপায়।
অমূল্য রত্ন
প্রহরীদুর্গ ১৩ ১/১৫ ১৯ অনু. ১০
ক্রমাগত যিহোবার নিকটবর্তী হোন
১০ একইভাবে, আমাদের বাহ্যিক চেহারা নিয়েও চিন্তা করা উপযুক্ত। কিন্তু, আমাদের বয়সের সমস্ত ছাপ মুছে ফেলার জন্য উঠে-পড়ে লাগার প্রয়োজন নেই। এই ছাপগুলো পরিপক্বতা, মর্যাদা এবং অন্তরস্থ সৌন্দর্যের প্রমাণ হিসেবে কাজ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বাইবেল বলে: “পক্ব কেশ শোভার মুকুট; তাহা ধার্ম্মিকতার পথে পাওয়া যায়।” (হিতো. ১৬:৩১) যিহোবা আমাদেরকে এভাবেই দেখেন এবং আমাদেরও নিজেদেরকে তাঁর মতো করে দেখার চেষ্টা করা উচিত। (পড়ুন, ১ পিতর ৩:৩, ৪.) তাহলে, কেবল দৈহিকভাবে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য অযথা এবং সম্ভাব্য বিপদজনক অপারেশন অথবা চিকিৎসাপদ্ধতির ঝুঁকি নেওয়া কি বিজ্ঞতার কাজ? “সদাপ্রভুতে যে আনন্দ, তাহাই” প্রকৃত সৌন্দর্যের উৎস, যা আমাদের বয়স অথবা স্বাস্থ্য যেমনই হোক না কেন, আমাদের ভিতর থেকে বিচ্ছুরিত হয়। (নহি. ৮:১০) একমাত্র নতুন জগতেই আমরা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য এবং পুনরায় যৌবনকালের সৌন্দর্য লাভ করতে পারব। (ইয়োব ৩৩:২৫; যিশা. ৩৩:২৪) সেই সময়ের আগে পর্যন্ত, ব্যবহারিক প্রজ্ঞা ও বিশ্বাস দেখানো আমাদেরকে যিহোবার নিকটবর্তী থাকতে আর এর পাশাপাশি আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিগুলোকে সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করবে।—১ তীম. ৪:৮.
জানুয়ারি ৮-১৪
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ইয়োব ৩৪-৩৫
যখন মনে হয়, ভালো লোকদের প্রতিই খারাপ বিষয়গুলো ঘটে
প্রহরীদুর্গ জনসাধারণের সংস্করণ ১৯.১ ৮ অনু. ২
ঈশ্বরের কোন গুণাবলি রয়েছে?
ঈশ্বর সবসময় সঠিক কাজ করেন। সত্যি বলতে কী, “ইহা দূরে থাকুক যে, ঈশ্বর দুষ্কার্য্য করিবেন, সর্ব্বশক্তিমান্ অন্যায় করিবেন।” (ইয়োব ৩৪:১০) তাঁর বিচার সঠিক, ঠিক যেমনটা গীতরচক বলেছিলেন: “তুমি ন্যায়ে জাতিগণের বিচার করিবে।” (গীতসংহিতা ৬৭:৪) যেহেতু ঈশ্বর “অন্তঃকরণের প্রতি দৃষ্টি করেন,” তাই তাঁকে কেউ মিথ্যা কথা বলার মাধ্যমে ঠকাতে পারবে না আর তিনি সবসময় সত্য বিষয়টা বুঝতে পারেন এবং সঠিক বিচার করতে পারেন। (১ শমূয়েল ১৬:৭) এ ছাড়া, আজ পৃথিবীতে ঘটে চলা প্রতিটা অন্যায় ও দুর্নীতিপূর্ণ কাজ সম্বন্ধে ঈশ্বর অবগত রয়েছেন আর তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, খুব শীঘ্র “দুষ্টগণ দেশ হইতে উচ্ছিন্ন হইবে।”—হিতোপদেশ ২:২২.
ঈশ্বরের রাজ্য আসার পর কী দূর হয়ে যাবে?
৫ যিহোবা কী করবেন? এই মুহূর্তে যিহোবা দুষ্ট লোকেদের পরিবর্তিত হওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন। (যিশা. ৫৫:৭) যদিও এই বিধিব্যবস্থাকে শীঘ্রই ধ্বংস করা হবে কিন্তু এখনও তাদের চূড়ান্ত বিচার করা হয়নি। তা হলে, সেই লোকেদের কী হবে, যারা পরিবর্তিত হতে চায় না এবং যারা একেবারে মহাক্লেশের সময় পর্যন্ত এই বিধিব্যবস্থাকে সমর্থন করে চলবে? যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি পৃথিবী থেকে সমস্ত দুষ্ট লোককে দূর করে দেবেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৭:১০.) বর্তমানে, অনেক ব্যক্তি তাদের খারাপ কাজগুলোকে গোপন করার চেষ্টা করে আর প্রায় সময়ই তারা তাদের কাজগুলোর জন্য কোনো শাস্তি পায় না। (ইয়োব ২১:৭, ৯) কিন্তু, বাইবেল আমাদের মনে করিয়ে দেয়: “মানুষের পথে তাঁহার [ঈশ্বরের] দৃষ্টি আছে; তিনি তাহার সমস্ত পাদসঞ্চার দেখেন; এমন অন্ধকার কি মৃত্যুচ্ছায়া নাই, যেখানে অধর্ম্মাচারিগণ লুকাইতে পারে।” (ইয়োব ৩৪:২১, ২২) তাই, যিহোবার কাছে কোনো কিছুই গোপন করা যায় না। তিনি দুষ্ট লোকেদের সমস্ত কাজই দেখতে পান। আরমাগিদোনের পরে আমরা হয়তো তাদের খুঁজব, কিন্তু তাদের আর দেখতে পাব না। তারা চিরকালের জন্য দূর হয়ে যাবে!—গীত. ৩৭:১২-১৫.
প্রহরীদুর্গ ২১.০৫ ৭ অনু. ১৯-২০
আপনি কি যিশুর ব্যাপারে সন্দেহ করেন?
১৯ লোকেরা কি আজও একইরকম রয়েছে? হ্যাঁ রয়েছে। অনেক লোক এই অভিযোগ করে থাকে যে, যিহোবার সাক্ষিরা ভোট দেয় না। কিন্তু সাক্ষিরা জানে, যদি তারা কোনো মানবসরকারকে বেছে নেয়, তা হলে সেটার অর্থ হবে, তারা যিহোবাকে প্রত্যাখ্যান করছে। (১ শমূ. ৮:৪-৭) তারা রাজনৈতিক ব্যাপারে নিরপেক্ষতা বজায় রাখে, তাই লোকেরা তাদের বার্তা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে। এ ছাড়া, লোকেরা মনে করে, সাক্ষিদের স্কুল ও হাসপাতাল তৈরি করা উচিত এবং সমাজসেবামূলক কাজ করা উচিত। কিন্তু, সাক্ষিরা যখন লোকদের সমস্যাগুলো সমাধান করার পরিবর্তে, প্রচার কাজে ব্যস্ত থাকে, তখন লোকেরা তাদের বার্তা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে।
২০ আপনি কী করতে পারেন, যাতে আপনি যিশুকে অনুসরণ করা বন্ধ করে না দেন? (পড়ুন, মথি ৭:২১-২৩.) যিশু তাঁর প্রকৃত অনুসারীদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দায়িত্ব দিয়েছেন আর সেটা হল প্রচার কাজ। (মথি ২৮:১৯, ২০) তারা জগতের সমস্যাগুলো সমাধান করার উপর নয় বরং প্রচার কাজের উপর বেশি মনোযোগ দিয়ে থাকে। যদিও তারা লোকদের ভালোবাসে এবং তাদের কষ্ট দেখে দুঃখ পায়, কিন্তু তারা জানে, একমাত্র ঈশ্বরের রাজ্যই মানবজাতির সমস্ত সমস্যার সমাধান নিয়ে আসবে। তাই, তারা লোকদের ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে শিক্ষা দেয় এবং তাঁর সঙ্গে এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
অমূল্য রত্ন
স্বেচ্ছাসেবকের মনোভাব নিয়ে যিহোবার প্রশংসা করুন!
৩ ইলীহূ নামে একজন কমবয়সি ব্যক্তি, ইয়োব এবং সেই তিন জন ব্যক্তির কথাবার্তা মন দিয়ে শুনছিলেন। তাদের কথাবার্তা শেষ হওয়ার পর ইলীহূ যিহোবা সম্বন্ধে ইয়োবকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করেছিলেন: “[আপনি] যদি ধার্ম্মিক হন, তাঁহাকে কি দিতে পারেন? আপনার হস্ত হইতেই বা তিনি কি গ্রহণ করিবেন?” (ইয়োব ৩৫:৭) ইলীহূও কি এই বলার চেষ্টা করছিলেন যে, যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টা নিরর্থক? না। কারণ যিহোবা ইলীহূকে সংশোধন করেননি, যেমনটা অন্য তিন জন ব্যক্তিকে করেছিলেন। ইলীহূ ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে কথা বলছিলেন। তিনি বলছিলেন যে, আমাদের কাছ থেকে যিহোবার উপাসনা পাওয়ার প্রয়োজন নেই। যিহোবার কোনো কিছুরই প্রয়োজন নেই। যিহোবার জন্য আমরা এমন কিছুই করতে পারি না, যা তাঁকে আরও সমৃদ্ধশালী কিংবা আরও শক্তিশালী করতে পারে। সত্যি বলতে কী, সমস্ত উত্তম গুণ বা ক্ষমতা ঈশ্বরের কাছ থেকেই আসে আর আমরা যেভাবে তা ব্যবহার করি, তা তিনি লক্ষ করেন।
জানুয়ারি ১৫-২১
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ইয়োব ৩৬-৩৭
ঈশ্বর অনন্তজীবন দেওয়ার যে-প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেটার উপর কেন আমরা বিশ্বাস রাখতে পারি?
প্রহরীদুর্গ জনসাধারণের সংস্করণ ১৬ নং ১ ১৩ অনু. ১-২
আমরা কি সত্যিই ঈশ্বরের সন্ধান পেতে পারি?
ঈশ্বরের অনন্ত অস্তিত্ব: বাইবেল জানায়, ঈশ্বর “অনাদিকাল হইতে অনন্তকাল” ধরে অস্তিত্বে রয়েছেন। (গীতসংহিতা ৯০:২) আরেকভাবে বললে, ঈশ্বরের কোনো শুরু নেই আর তাঁর কোনো শেষও নেই। মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে “তাহার বর্ষ-সংখ্যার সন্ধান পাওয়া যায় না।”—ইয়োব ৩৬:২৬.
আপনি যেভাবে উপকৃত হতে পারেন: ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছেন, আপনি যদি সত্যিই তাঁকে জানেন, তা হলে তিনি আপনাকে অনন্তজীবন দেবেন। (যোহন ১৭:৩) ঈশ্বর নিজেই যদি অনন্তকাল বেঁচে না থাকেন, তা হলে এই প্রতিজ্ঞা কী আদৌ বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে? শুধুমাত্র “যুগপর্য্যায়ের রাজা” এই ধরনের প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে পারেন।—১ তীমথিয় ১:১৭.
আপনি কি ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া উপহারগুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখাচ্ছেন?
৬ পৃথিবীতে জল তরল অবস্থায় পাওয়া যায় কারণ আমাদের গ্রহ সূর্য থেকে একেবারে সঠিক দূরত্বে অবস্থিত। এই দূরত্ব একটু কম হলে পৃথিবীর জল বাষ্প হয়ে উবে যেত এবং পৃথিবী গরম ও শুষ্ক হয়ে যেত আর এর ফলে এখানে জীবনের কোনো অস্তিত্ব থাকত না। আবার এই দূরত্ব একটু বেশি হয়ে গেলে পৃথিবীর সমস্ত জল জমে যেত এবং পৃথিবী একটা বড়ো বরফের গোলায় পরিণত হয়ে যেত। যিহোবা যেহেতু পৃথিবীকে একেবারে সঠিক অবস্থানে রেখেছেন, তাই জলচক্র সম্ভবপর হয়েছে আর এর ফলে এখানে জীবনের অস্তিত্ব রয়েছে। সূর্যের উত্তাপে সমুদ্র ও ভূপৃষ্ঠের জল গরম হয়। আর এর ফলে যে-বাষ্প উৎপন্ন হয়, তা মেঘ তৈরি করে। পৃথিবীর সমস্ত হ্রদে যত জল রয়েছে, প্রতি বছর তার চেয়েও বেশি জল সূর্যের উত্তাপের কারণে বাষ্প হয়ে উবে যায়। এই জল প্রায় দশ দিন ধরে বাতাসে থাকে আর তারপর তা বৃষ্টি ও তুষারের আকারে নীচে নেমে আসে। পরিশেষে এই জল প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রে অথবা অন্য কোনো জলাশয়ে গিয়ে মেশে আর এভাবে জলচক্র চলতে থাকে। যিহোবা এই চক্র তৈরি করেছেন, যাতে পৃথিবীতে সবসময় জল থাকে। এটা প্রমাণ করে যে, যিহোবা হলেন বিজ্ঞ ও শক্তিশালী ঈশ্বর।—ইয়োব ৩৬:২৭, ২৮; উপ. ১:৭.
আপনার প্রত্যাশাকে দৃঢ় করে চলুন!
১৬ যিহোবা আমাদের চিরকাল বেঁচে থাকার এক অপূর্ব প্রত্যাশা দিয়েছেন। আর আমরা সেই সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, যখন আমাদের এই প্রত্যাশা পূরণ হবে। আমরা নিশ্চিত, এটা পূরণ হবেই। আমাদের প্রত্যাশা একটা নোঙরের মতো আর ঝড়ের মতো সমস্যার সময়েও এটা আমাদের স্থির থাকতে সাহায্য করে। প্রত্যাশার কারণে আমরা তাড়না সহ্য করতে পারি এবং যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারি, তা আমাদের জীবন যতই ঝুঁকির মুখে থাকুক না কেন। এ ছাড়া, আমাদের প্রত্যাশা একটা হেলমেটের মতো, এটা আমাদের চিন্তাভাবনাকে রক্ষা করে। এটার মাধ্যমে আমরা খারাপ বিষয়গুলো চিন্তা করার পরিবর্তে ভালো বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দিতে পারি। আমাদের প্রত্যাশার কারণে আমরা যিহোবার আরও নিকটবর্তী হতে পারি এবং নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি আমাদের খুব ভালোবাসেন। সত্যিই, নিজেদের প্রত্যাশাকে দৃঢ় করলে আমরা অনেক উপকার পাই!
অমূল্য রত্ন
অন্তর্দৃষ্টি-১, ইংরেজি ৪৯২
যোগাযোগ
প্রাচীন কালে বাইবেলে বলা জায়গাগুলোতে খবর এবং তথ্য বিভিন্ন উপায়ে পৌঁছানো হত। যেমন, লোকেরা কারো মাধ্যমে তাদের এলাকা এবং অন্যান্য জায়গার তথ্য পেত। কেউ কেউ নিজে গিয়ে তাদের জানাত অথবা কারো মাধ্যমে বার্তা পাঠাত। (২শমূ ৩:১৭, ১৯; ইয়োব ৩৭:২০) লোকেরা পথযাত্রীদের কাছ থেকেও খবর পেত। পথযাত্রীরা প্রায়ই উটের গাড়ি করে যাওয়া-আসা করত এবং তারা যখন খাবারদাবার বা অন্য কোনো কিছু কেনার জন্য কোথাও থামত, তখন সেখানকার লোকদের দূরদূরান্তের খবর জানাত। পথযাত্রীদের উটের গাড়ি অনেকসময় প্যালেস্টাইনের উপর যেত কারণ এটা এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপের একেবারে মাঝে ছিল। তাই, সেখানকার লোকেরা অনেক সহজেই দূরের দেশগুলোর বড়ো বড়ো ঘটনার বিষয়ে জানতে পারত। এ ছাড়া, নগরের বাজারগুলোতেও লোকেরা তাদের দেশ এবং অন্যান্য দেশের খবর পেত।
জানুয়ারি ২২-২৮
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ইয়োব ৩৮-৩৯
আপনি কি সৃষ্টির বিষয়গুলো ভালোভাবে দেখার জন্য সময় বের করেন?
আপনি কি যিহোবার সময়ের জন্য অপেক্ষা করবেন?
৭ বাইবেল জানায়, যিহোবা “পৃথিবীর পরিমাণ নিরূপণ” করলেন, “চুঙ্গী সকল” আর “তাহার কোণের প্রস্তর” স্থাপন করলেন। (ইয়োব ৩৮:৫, ৬) তিনি সময় বের করে নিজের কাজ লক্ষও করলেন। (আদি. ১:১০, ১২) একটু চিন্তা করে দেখুন, যিহোবা যখন এক এক করে সমস্ত কিছু সৃষ্টি করছিলেন, তখন স্বর্গদূতেরা তা দেখে কেমন অনুভব করেছিলেন! তারা নিশ্চয়ই আনন্দে “জয়ধ্বনি” করতে লাগলেন। (ইয়োব ৩৮:৭) এটা থেকে আমরা যিহোবা সম্বন্ধে কী শিখি? পৃথিবী, সূর্য, চাঁদ, তারা ও প্রত্যেক জীবিত প্রাণী সৃষ্টি করার জন্য যিহোবার হাজার হাজার বছর লেগেছিল। কিন্তু, এত সময় দেওয়া উপকারজনক ছিল কারণ এই সমস্ত কিছু সৃষ্টি করার পর যিহোবা যখন সেগুলো দেখেছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, “অতি উত্তম।”—আদি. ১:৩১.
পুনরুত্থান ঈশ্বরের প্রেম, প্রজ্ঞা ও ধৈর্যকে প্রকাশ করে
২ প্রথমে, যিহোবা একজন সহকর্মীকে অর্থাৎ তাঁর পুত্র যিশুকে সৃষ্টি করেছিলেন। তারপর, সেই পুত্রের মাধ্যমে তিনি ‘সকলই সৃষ্টি’ করেছেন, যার অন্তর্ভুক্ত হল বুদ্ধিবিশিষ্ট লক্ষ লক্ষ আত্মিক প্রাণী। (কল. ১:১৬) যিশু তাঁর পিতার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আনন্দিত ছিলেন। (হিতো. ৮:৩০) আর ঈশ্বরের আত্মিক পুত্ররাও আনন্দিত ছিল। যিহোবা ও তাঁর দক্ষ কর্মী যিশু যখন স্বর্গ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন, তখন সেই আত্মিক পুত্ররা তা দেখেছিল। সেই স্বর্গদূতেরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল? তারা ঈশ্বরের গৌরব করেছিল এবং ঈশ্বর যখন অন্যান্য বিষয় সৃষ্টি করেছিলেন, বিশেষভাবে মানুষকে, তখন তারা ক্রমাগত যিহোবার গৌরব করেছিল। (ইয়োব ৩৮:৭; হিতো. ৮:৩১) এই সমস্ত সৃষ্টি যিহোবার প্রেম ও প্রজ্ঞাকে প্রকাশ করে।—গীত. ১০৪:২৪; রোমীয় ১:২০.
সৃষ্টি দেখুন এবং যিহোবা সম্বন্ধে জানুন!
৮ যিহোবার উপর আমরা সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি। যিহোবা ইয়োবকে এমন অনেক বিষয় বলেছিলেন, যেগুলোর মাধ্যমে ইয়োব তাঁর উপর আরও আস্থা রাখতে পেরেছিলেন। (ইয়োব ৩২:২; ৪০:৬-৮) যিহোবা ইয়োবকে তাঁর সৃষ্টির বিভিন্ন বিষয় সম্বন্ধে বলেছিলেন, যেমন মেঘ, তারা ও বিদ্যুৎ। যিহোবা তাকে কিছু জীবজন্তুর বিষয়েও বলেছিলেন, যেমন বুনো ষাঁড় ও ঘোড়া। (ইয়োব ৩৮:৩২-৩৫; ৩৯:৯, ১৯, ২০) এই সমস্ত বিষয় চিন্তা করার মাধ্যমে ইয়োব বুঝতে পেরেছিলেন, যিহোবা কেবল শক্তিশালীই নন, কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি অনেক প্রজ্ঞাবানও আর আমাদের খুব ভালোবাসেন। এভাবে ইয়োব যিহোবার উপর আরও আস্থা রাখতে পেরেছিলেন। (ইয়োব ৪২:১-৬) আজ আমরা যখন যিহোবার সৃষ্টির উপর মনোযোগ দিই, তখন বুঝতে পারি, যিহোবা আমাদের চেয়ে কত বেশি প্রজ্ঞাবান এবং শক্তিশালী। তিনি আমাদের সমস্ত সমস্যাও দূর করতে পারেন আর তিনি অবশ্যই তা করবেন। এই বিষয়টা মনে রাখার মাধ্যমে আমরা যিহোবার উপর আরও আস্থা রাখতে পারব।
অমূল্য রত্ন
অন্তর্দৃষ্টি-২, ইংরেজি ২২২
আইনদাতা
আইনদাতা যিহোবা। একমাত্র যিহোবাই হলেন সর্বোচ্চ আইনদাতা। তিনিই প্রকৃতির নিয়ম তৈরি করেছেন। (ইয়োব ৩৮:৪-৩৮; গীত ১০৪:৫-১৯) তিনি জীবজন্তুর জন্যও বিভিন্ন নিয়ম তৈরি করেছেন। (ইয়োব ৩৯:১-৩০) যিহোবা মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তাই তাদের তাঁর তৈরি করা প্রকৃতির নিয়ম এবং নৈতিক নিয়ম মেনে চলতে হবে। (রোমীয় ১২:১; ১করি ২:১৪-১৬) স্বর্গদূতেরাও যিহোবার তৈরি করা নিয়ম মেনে চলেন।—গীত ১০৩:২০; ২পিতর ২:৪, ১১.
যিহোবার তৈরি করা প্রকৃতির নিয়মকে কেউ পালটাতে পারবে না। (যির ৩৩:২০, ২১) এই নিয়ম এতটাই নিখুঁত যে, এটার সাহায্যে বিজ্ঞানীরা চাঁদ, তারা এবং গ্রহগুলোর গতি সঠিকভাবে জানতে পারে। প্রকৃতির নিয়ম ভাঙলেই এর পরিণতি আমাদের ভোগ করতে হয়। যিহোবার তৈরি করা নৈতিক নিয়মও কেউ পালটাতে পারবে না। কেউ যদি তা না মেনে চলে, তা হলে তাকে সেটার পরিণতি ভোগ করতে হবে। আমরা হয়তো সঙ্গেসঙ্গে তা ভোগ করব না, তবে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, প্রকৃতির নিয়মের মতো নৈতিক নিয়ম ভাঙার পরিণতিও খারাপ হয়। বাইবেলে লেখা রয়েছে, “ঈশ্বরকে ঠকানো যায় না। কারণ একজন ব্যক্তি যা বুনবে, তা-ই কাটবে।”—গালা ৬:৭; ১তীম ৫:২৪.
জানুয়ারি ২৯–ফেব্রুয়ারি ৪
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ইয়োব ৪০-৪২
ইয়োব যা শিখেছিলেন, তা থেকে আমরাও শিখতে পারি
প্রহরীদুর্গ ১০ ১০/১৫ ৩-৪ অনু. ৪-৬
‘কে ঈশ্বরের মন জানিয়াছে?’
৪ যিহোবার কাজকর্ম নিয়ে ধ্যান করার সময় আমাদের মানুষের মানদণ্ড অনুযায়ী ঈশ্বরের বিচার করার প্রবণতা এড়িয়ে চলতে হবে। এই প্রবণতা সম্বন্ধে গীতসংহিতা ৫০:২১ পদে লিপিবদ্ধ যিহোবার এই কথাগুলোতে পরোক্ষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে: “তুমি মনে করিয়াছ, আমি তোমারই মতন।” এই কথাগুলো ১৭৫ বছরেরও বেশি সময় আগে বলা একজন বাইবেল পণ্ডিতের কথার মতো: “মানুষের প্রবণতা হচ্ছে নিজেদের মান অনুযায়ী ঈশ্বরের বিচার করা আর এইরকম মনে করা যে, ঈশ্বরও সেই একই আইনগুলো দ্বারা সীমাবদ্ধ, যেগুলো তারা নিজেরা পালন করুক বলে চায়।”
৫ আমাদের এই বিষয়ে সতর্ক হতে হবে, যেন আমরা যিহোবা সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে নিজেদের মানদণ্ড ও আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হতে না দিই। কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ? কারণ শাস্ত্র অধ্যয়ন করার সময়, যিহোবার কিছু পদক্ষেপ হয়তো আমাদের সীমিত, অসিদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী সঠিক বলে মনে না-ও হতে পারে। প্রাচীন ইস্রায়েলীয়রা একই ধরনের চিন্তাভাবনা পোষণ করেছিল এবং তাদের সঙ্গে যিহোবার আচরণ সম্বন্ধে এক ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল। লক্ষ করুন যে, যিহোবা তাদেরকে কী বলেছিলেন: “তোমরা বলিতেছ, ‘প্রভুর পথ সরল নয়’। হে ইস্রায়েল-কুল, এক বার শুন; আমার পথ কি সরল নয়? তোমাদের পথ কি অসরল নয়?”—যিহি. ১৮:২৫.
৬ আমাদের নিজেদের মানদণ্ড অনুযায়ী যিহোবার বিচার করার ফাঁদ এড়িয়ে চলার একটা চাবিকাঠি হল এই বিষয়টা স্বীকার করা যে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সীমিত এবং মাঝে মাঝে গুরুতরভাবে ভুল হয়ে থাকে। ইয়োবকে এই বিষয়ে শিক্ষা লাভ করতে হয়েছিল। তার কষ্টের সময়ে ইয়োব হতাশার সঙ্গে লড়াই করেছিলেন এবং কিছুটা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছিলেন। তিনি আরও বড়ো বড়ো বিচার্য বিষয়ে তার দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু, যিহোবা প্রেমের সঙ্গে তার দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রশস্ত করতে সাহায্য করেছিলেন। ৭০টারও বেশি প্রশ্ন, যেগুলোর কোনোটার উত্তরই ইয়োব দিতে পারেননি, সেগুলো জিজ্ঞেস করার মাধ্যমে যিহোবা ইয়োবের বোধগম্যতার সীমাবদ্ধতার ওপর জোর দিয়েছিলেন। ইয়োব নম্রভাবে সাড়া দিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি রদবদল করেছিলেন।—পড়ুন, ইয়োব ৪২:১-৬.
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টার উপর আপনার দৃষ্টি রাখুন
১২ ইয়োব এত কষ্ট ভোগ করার পর, এই ধরনের কথা বলার মাধ্যমে যিহোবা কি নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়েছিলেন? না। আর ইয়োব নিজেও এমনটা মনে করেননি। ইয়োব যিহোবার পরামর্শ বুঝতে পেরেছিলেন এবং সেটাকে মূল্যবান বলে মনে করেছিলেন। তিনি এমনকী বলেছিলেন: “আমি আপনাকে ঘৃণা করিতেছি [“আমি যা বলেছি তা এখন ফিরিয়ে নিচ্ছি,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন], ধূলায় ও ভস্মে বসিয়া অনুতাপ করিতেছি।” (ইয়োব ৪২:১-৬) এর আগে, ইলীহু নামে তুলনামূলকভাবে কমবয়সি একজন ব্যক্তিও ইয়োবকে তার চিন্তাভাবনা রদবদল করতে সাহায্য করেছিলেন। (ইয়োব ৩২:৫-১০) ইয়োব যিহোবার প্রেমময় পরামর্শ মন দিয়ে শোনার ও সেইসঙ্গে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার পর যিহোবা অন্যদের জানিয়েছিলেন যে, তিনি ইয়োবের বিশ্বস্ততার কারণে তার উপর খুশি।—ইয়োব ৪২:৭, ৮.
প্রহরীদুর্গ ২২.০৬ ২৫ অনু. ১৭-১৮
“তোমরা সদাপ্রভুর উপর আশা রাখ”
১৭ ইয়োবের মতো আরও অনেক ব্যক্তি ছিল, যারা সাহসের সঙ্গে সমস্যার মোকাবিলা করেছিল এবং যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিল। ইব্রীয়দের প্রতি লেখা চিঠিতে পৌল এইরকমই কিছু বিশ্বস্ত ভাই-বোনের বিষয়ে লিখেছিলেন এবং তাদের “সাক্ষিদের এক বড়ো দল” হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। (ইব্রীয় ১২:১) তাদের জীবনে বড়ো বড়ো সমস্যা এসেছিল, কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিল। (ইব্রীয় ১১:৩৬-৪০) এটা ঠিক যে, তারা যিহোবার করা সমস্ত প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হতে দেখেনি, কিন্তু তারা তাঁর উপর আশা রেখেছিল। তারা নিশ্চিত ছিল যে, যিহোবা তাদের উপর সন্তুষ্ট আর ভবিষ্যতে তারা তাঁর করা সমস্ত প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হতে দেখতে পাবে। (ইব্রীয় ১১:৪, ৫) তাই আসুন, আমরা তাদের কাছ থেকে শিখি এবং জীবনে যা-ই ঘটুক না কেন, যিহোবার উপর আশা রাখি।
১৮ এই জগৎ দিনের পর দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে আর শয়তান যিহোবার লোকদের উপর একের-পর-এক সমস্যা নিয়ে আসছে। (২ তীম. ৩:১৩) কিন্তু, আমাদের সামনে যত সমস্যাই আসুক না কেন, আমাদের মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করে যাওয়া উচিত কারণ “আমরা জীবন্ত ঈশ্বরের উপর প্রত্যাশা রেখেছি।” (১ তীম. ৪:১০) ইয়োব যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন, তাই যিহোবা তাকে পুরস্কার দিয়েছিলেন এবং প্রমাণ করেছিলেন যে, তিনি “অত্যন্ত স্নেহময় ও করুণাময়” ঈশ্বর। (যাকোব ৫:১১) তাই আসুন, আমরাও যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকি আর এই আস্থা রাখি, “যারা আন্তরিকভাবে তাঁর অন্বেষণ করে, তিনি তাদের পুরস্কার দেন।”—পড়ুন, ইব্রীয় ১১:৬.
অমূল্য রত্ন
অন্তর্দৃষ্টি-২, ইংরেজি ৮০৮
হাসিঠাট্টা
ইয়োবকে নিয়ে অনেক হাসিঠাট্টা করা হয়েছিল, তারপরও তিনি বিশ্বস্ত থাকতে পেরেছিলেন। কিন্তু, তিনি তার পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে দেখেননি। এই কারণে তিনি একটা ভুল করেছিলেন এবং তাকে সংশোধন করা হয়েছিল। ইলীহূ তার বিষয়ে বলেছিলেন: “ইয়োবের মতো আর কে রয়েছে, যে জলের মতোই উপহাস পান করে?” (ইয়োব ৩৪:৭, NW) ইয়োব প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন, ঈশ্বরের পরিবর্তে তিনি নিজে সঠিক এবং তাঁর চেয়েও ধার্মিক। (ইয়োব ৩৫:২; ৩৬:২৪) ইয়োব বুঝতে পারেননি যে, তার তিন ‘সঙ্গী’ ঈশ্বরকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করছে। তিনি মনে করেছিলেন, তারা তাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করছে। পরে যিহোবা বলেছিলেন যে, এই তিন জন আসলে ঈশ্বরের বিষয়ে মিথ্যা কথা বলছে। (ইয়োব ৪২:৭, NW; ১ শমূ ৮:৭ এবং মথি ২৪:৯ পদ দেখুন।) খ্রিস্টানদের নিয়ে যখন মজা করা হয় অথবা তাদের নিয়ে হাসিঠাট্টা করা হয়, তখন তাদের এই বিষয়টা মনে রাখা উচিত। এর ফলে, তারা সঠিকভাবে বিষয়টাকে দেখতে পারবে এবং সমস্ত কিছু সহ্য করতে পারবে। আর পরে গিয়ে তারা পুরস্কারও পাবে।—লূক ৬:২২, ২৩.
ফেব্রুয়ারি ৫-১১
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | গীতসংহিতা ১-৪
ঈশ্বরের রাজ্যের পক্ষ নিন
প্রহরীদুর্গ ২১.০৯ ১৫-১৬ অনু. ৮
“আমি সর্ব্বজাতিকে কম্পান্বিত করিব”
৮ এই বার্তা শুনে লোকেরা কী করে? বেশিরভাগ লোক তা প্রত্যাখ্যান করে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ২:১-৩.) অনেক জাতি রেগে আছে। তারা যিশুকে তাদের শাসক হিসেবে গ্রহণ করতে চায় না। তারা স্বীকার করে না যে, এই বার্তা আনন্দের এক বার্তা। কিছু দেশের সরকার প্রচার কাজের উপর পুরোপুরিভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অনেক শাসক বলে থাকে, তারা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে, কিন্তু তাঁর রাজ্যকে সমর্থন করতে প্রস্তুত নয় কারণ তারা তাদের পদ কিংবা ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। প্রথম শতাব্দীর শাসকদের মতো বর্তমানের শাসকেরাও যিশুর শিষ্যদের বিরোধিতা করে আর এভাবে তাঁর বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়ায়।—প্রেরিত ৪:২৫-২৮.
প্রহরীদুর্গ ১৬.০৪ ২৯-৩০ অনু. ১১
এক বিভক্ত জগতে আপনার নিরপেক্ষতা বজায় রাখুন
১১ বস্তুবাদিতা। আমাদের কাছে যখন টাকাপয়সা ও বস্তুগত বিষয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, তখন নিরপেক্ষতা বজায় রাখা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে উঠতে পারে। ১৯৭০ সালের পর, মালাউইর অনেক সাক্ষি একটা রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে প্রত্যাখ্যান করেছিল আর তাই তাদেরকে নিজেদের সমস্ত কিছু পরিত্যাগ করতে হয়েছিল। দুঃখের বিষয় হল, কেউ কেউ তাদের আরামদায়ক জীবন পরিত্যাগ করেনি। রূথ নামে একজন বোন স্মরণ করে বলেন, “কেউ কেউ প্রথমে আমাদের সঙ্গে নির্বাসনে গিয়েছিল, কিন্তু পরে রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে ঘরে ফিরে গিয়েছিল। তারা শরণার্থী শিবিরের কষ্টকর জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি।” কিন্তু ঈশ্বরের অধিকাংশ দাস তাদের মতো নয়। নিরপেক্ষ থাকার কারণে তাদের যদি আর্থিক সমস্যায় পড়তে হয় অথবা নিজেদের সমস্ত কিছু পরিত্যাগ করতে হয়, তারপরও তারা নিরপেক্ষ থাকে।—ইব্রীয় ১০:৩৪.
অমূল্য রত্ন
অন্তর্দৃষ্টি-১, ইংরেজি ৪২৫
তুষ
কোনো শস্যের খোলাকে তুষ বলা হয়, যেমন যব ও গম। তুষ কোনো কাজে লাগত না এবং প্রাচীন কালে শস্য মাড়াই করার এবং ঝাড়ার পর তুষ আলাদা করে রাখা হত। এইজন্য বাইবেলে তুষ শব্দটাকে এটা বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, যে-বিষয়গুলো বেকার এবং খারাপ, সেগুলো যেন আলাদা করা হয় এবং ফেলে দেওয়া হয়।
শস্য মাড়াই করলে এর তুষ বের হয়ে যেত। এরপর, শস্য ঝাড়ার সময়ে তুষ বাতাসে উড়ে যেত। এই উদাহরণ দেখায় যে, কীভাবে যিহোবা তাঁর লোকদের থেকে ধর্মভ্রষ্টদের আলাদা করেন এবং দুষ্ট লোকদের এবং বিরোধী দেশগুলোকে ধ্বংস করেন। (ইয়োব ২১:১৮; গীত ১:৪; ৩৫:৫; যিশা ১৭:১৩; ২৯:৫; ৪১:১৫; হোশেয় ১৩:৩) ঈশ্বরের রাজ্য তাঁর সমস্ত শত্রুকে শেষ করবে এবং তুষের মতো সেগুলো বাতাসে উড়িয়ে দেবে।—দানি ২:৩৫.
বেশিরভাগ সময়ে তুষকে পুড়িয়ে দেওয়া হত, যাতে সেগুলো আবারও বাতাসে উড়ে শস্যের সঙ্গে মিশে না যায়। যোহন বাপ্তাইজক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, মিথ্যা ধর্মের খারাপ লোকদের এভাবেই ধ্বংস করে দেওয়া হবে। এখানে শস্য ঝাড়াই করার ব্যক্তি যিশু খ্রিস্টকে চিত্রিত করে, যিনি গম সংগ্রহ করবেন, “কিন্তু তুষ এমন আগুনে পুড়িয়ে দেবেন, যা নেভানো যায় না।”—মথি ৩:৭-১২; লূক ৩:১৭.
ফেব্রুয়ারি ১২-১৮
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | গীতসংহিতা ৫-৭
অন্যেরা যা করে করুক, আপনি যিহোবার প্রতি অনুগত থাকুন
সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য বাইবেল আপনাকে সাহায্য করতে পারে
৭ আপনার কোনো বন্ধু বা পরিবারের সদস্য কি আপনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে? যদি এমনটা হয়ে থাকে, তা হলে রাজা দায়ূদের উদাহরণের প্রতি মনোযোগ দিন। তার ছেলে অবশালোম তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন এবং তার রাজ্য কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।—২ শমূ. ১৫:৫-১৪, ৩১; ১৮:৬-১৪.
৮ (১) প্রার্থনা। দায়ূদের ঘটনা মাথায় রেখে যিহোবাকে নির্দিষ্টভাবে বলুন, আপনার সঙ্গে যে-খারাপ আচরণ করা হয়েছে, সেই বিষয়ে আপনি কেমন অনুভব করছেন। (গীত. ৬:৬-৯) এরপর, যিহোবার কাছে অনুরোধ করুন, যাতে তিনি আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বাইবেল থেকে নীতি খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারেন।
প্রহরীদুর্গ ২০.০৭ ৮-৯ অনু. ৩-৪
আপনার কাছে যে সত্য রয়েছে, এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হোন
৩ আমরা যেন শুধুমাত্র আমাদের ভাই-বোনদের দ্বারা দেখানো প্রমের উপর ভিত্তি করে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস গড়ে না তুলি। কেন? ধরুন, একজন সহবিশ্বাসী কোনো গুরুতর পাপ করেছেন আর তিনি এমনকী একজন প্রাচীন অথবা অগ্রগামী হতে পারেন। অথবা আপনি যদি কোনো ভাই কিংবা বোনের কাছ থেকে দুঃখ পেয়ে থাকেন, তা হলে? অথবা হতে পারে কোনো ব্যক্তি ধর্মভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছেন কারণ তিনি দাবি করেন যে, আমাদের কাছে সত্য নেই। যদি এমনটা ঘটে, তা হলে আপনি কি বিঘ্ন পাবেন এবং যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দেবেন? শিক্ষণীয় বিষয়টা হল: ঈশ্বরের সঙ্গে এক ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে না তুলে বরং অন্য ব্যক্তিরা ঈশ্বরের সেবায় যা-কিছু করে, কেবল সেগুলো দেখে যদি আপনি ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করেন, তা হলে আপনার এক দৃঢ়বিশ্বাস গড়ে উঠবে না। যিহোবা এবং তাঁর লোকেদের বিষয়ে আপনি যেমন অনুভব করেন, সেটা আপনাকে কিছুটা মাত্রায় বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করতে পারে। তবে, গুরুত্বের সঙ্গে বাইবেল অধ্যায়ন করা এবং যা শিখছেন, তা বোঝা আর সেইসঙ্গে যিহোবা সম্বন্ধে শেখা সত্যগুলোর বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হওয়ার জন্য গবেষণা করা খুবই জরুরি। আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে এটা পরীক্ষা করে জানতে হবে, বাইবেলে যিহোবা সম্বন্ধে সত্য রয়েছে।—রোমীয় ১২:২.
৪ যিশু বলেছিলেন, কোনো কোনো ব্যক্তি “আনন্দপূর্ব্বক” সত্য গ্রহণ করবে কিন্তু পরীক্ষার সময়ে তাদের বিশ্বাস দুর্বল হয়ে যাবে। (পড়ুন, মথি ১৩:৩-৬, ২০, ২১.) হতে পারে, তারা এটা উপলব্ধি করেনি যে, যারা যিশুকে অনুকরণ করবে, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। (মথি ১৬:২৪) অথবা তারা হয়তো ভেবেছিল যে, খ্রিস্টান হওয়ার মাধ্যমে তাদের জীবনের সমস্ত সমস্যা দূর হয়ে যাবে। কিন্তু, শয়তানের এই জগতে সবসময়ই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে পারে আর এই কারণে কিছু সময়ে জন্য আমাদের আনন্দ কমে যেতে পারে।—গীত. ৬:৬; উপ. ৯:১১.
অমূল্য রত্ন
অন্তর্দৃষ্টি-১, ইংরেজি ৯৯৫
কবর
রোমীয় ৩:১৩ পদে প্রেরিত পৌল গীতসংহিতা ৫:৯ পদের কথাগুলো উল্লেখ করেছিলেন। তিনি খারাপ ও প্রতারক লোকদের গলাকে “খোলা কবরের” সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। যেমন খোলা কবরে মৃতদেহ ফেলে দেওয়া হয় এবং সেখানে সেটা পচতে থাকে, ঠিক একইভাবে তাদের গলা থেকে বিপদজনক ও পচা কথা বের হয়।—তুলনা করুন, মথি ১৫:১৮-২০.
ফেব্রুয়ারি ১৯-২৫
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | গীতসংহিতা ৮-১০
“আমি . . . সদাপ্রভুর স্তব করিব”!
যিহোবার পরিবারে আপনার মূল্য রয়েছে
৬ যিহোবা আমাদের জন্য এক অপূর্ব বাড়ি প্রস্তুত করেছেন। মানুষকে সৃষ্টি করার অনেক আগে যিহোবা পৃথিবীকে প্রস্তুত করেছিলেন। (ইয়োব ৩৮:৪-৬; যির. ১০:১২) যিহোবা খুবই দয়ালু, তাই মানুষের খুশির জন্য তিনি অনেক কিছু সৃষ্টি করেছেন। (গীত. ১০৪:১৪, ১৫, ২৪) তিনি সেগুলো লক্ষ করলেন আর দেখলেন যে, সবই “অতি উত্তম।” (আদি. ১:১০, ১২, ৩১) এরপর, যিহোবা সেগুলোর উপর মানুষকে “কর্ত্তৃত্ব” করতে দিলেন। এভাবে, তিনি তাদের মূল্যবান হিসেবে গণ্য করেছেন। (গীত. ৮:৬) যিহোবা চান যেন সিদ্ধ মানুষ সবসময় তাঁর সৃষ্টির দেখাশোনা করে। আপনি কি এরজন্য যিহোবাকে ধন্যবাদ দেন?
আপনি কি ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া উপহারগুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখাচ্ছেন?
১০ একটা যে-উপায়ে আমরা কথা বলার উপহারের প্রতি উপলব্ধি দেখাতে পারি, সেটা হল বিবর্তনবাদে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের কাছে এই বিষয়টা ব্যাখ্যা করা যে, কেন আমরা এটা বিশ্বাস করি, ঈশ্বর সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন। (গীত. ৯:১; ১ পিতর ৩:১৫) যারা বিবর্তনবাদের মতবাদে বিশ্বাস করে, তারা হয়তো আমাদের এটা বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করতে পারে যে, পৃথিবী এবং এর মধ্যে থাকা জীবিত সমস্ত কিছু সুপরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট হয়নি। বাইবেল এবং এই প্রবন্ধে আলোচিত কয়েকটা বিষয় নিয়ে আমরা এমন ব্যক্তিদের কাছে আমাদের স্বর্গীয় পিতার অস্তিত্ব নিয়ে যুক্তি করতে এবং ব্যাখ্যা করতে পারি, যারা এই বিষয়ে আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে শুনতে আগ্রহী। আমরা তাদের বলতে পারি, কেন আমরা নিশ্চিত যে, যিহোবা আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।—গীত. ১০২:২৫; যিশা. ৪০:২৫, ২৬.
আপনি কি কথা বলার ব্যাপারে উদাহরণযোগ্য?
১৩ উদ্যোগ সহকারে গান করুন। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা যখন সভাগুলোতে গান গাই, তখন এর ফলে যিহোবার প্রশংসা হয়। সারা নামে একজন বোন বলেন, তিনি খুব ভালোভাবে গান গাইতে পারেন না। তারপরও, তিনি গান গাওয়ার মাধ্যমে যিহোবার প্রশংসা করতে চান। তাই, সভাগুলোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তিনি গানও প্র্যাকটিস করেন। তিনি বিশেষ করে এই বিষয়ে লক্ষ রাখেন, গানের কথাগুলো সভার আলাদা আলাদা ভাগের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কযুক্ত। তিনি বলেন: “আমি যখন গানের কথাগুলোর উপর মনোযোগ দিই, তখন আমি এই বিষয়ে চিন্তা করি না যে, আমি কীভাবে গাইছি।”
অমূল্য রত্ন
অন্তর্দৃষ্টি-১, ইংরেজি ৮৩২
আঙুল
বাইবেলের অনেক পদে বলা হয়েছে, ঈশ্বর বিভিন্ন কাজ করার জন্য রূপকভাবে তাঁর হাতের আঙুল বা আঙুলগুলো ব্যবহার করেছেন, যেমন দশ আজ্ঞা লিখতে (যাত্রা ৩১:১৮; দ্বিতীয় ৯:১০), অলৌকিক কাজ করতে (যাত্রা ৮:১৮, ১৯) এবং আকাশ তৈরি করতে (গীত ৮:৩)। যখন বলা হয়েছে যে, ঈশ্বর তাঁর “আঙুল দিয়ে” সৃষ্টি করেছেন, এর অর্থ হল তিনি তাঁর পবিত্র শক্তি ব্যবহার করেছেন। এটা আমরা আদিপুস্তক বই থেকে জানতে পারি, যেখানে বলা হয়েছে যে, ঈশ্বরের সক্রিয় শক্তি (রুয়াখ) জলের উপরে চলাফেরা করছিল। (আদি ১:২) খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ এটা আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। মথি বই বলে, যিশু “ঈশ্বরের পবিত্র শক্তির সাহায্যে” মন্দ স্বর্গদূতদের বের করেছিলেন এবং লূকের বই বলে যে, তিনি “ঈশ্বরের আঙুলের সাহায্যে” তা করেছিলেন।—মথি ১২:২৮; লূক ১১:২০, পাদটীকা।
ফেব্রুয়ারি ২৬–মার্চ ৩
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | গীতসংহিতা ১১-১৫
কল্পনা করুন, আপনি এমন এক জগতে রয়েছেন, যেখানে শুধুই শান্তি আর শান্তি
গীতসংহিতা বইয়ের প্রথম বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো
১১:৩—কোন মূলবস্তু সকল উৎপাটিত হয়? এগুলো হল ঠিক সেই মূলবস্তু, যেগুলোর ওপর মানবসমাজ নির্ভর করে থাকে—আইন, শৃঙ্খলা এবং ন্যায়বিচার। যখন এগুলো সুসংগঠিত থাকে না, তখন সামাজিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এবং ন্যায়বিচার বলে কিছু থাকে না। এইরকম পরিস্থিতিতে “ধার্ম্মিক” ব্যক্তিকে অবশ্যই ঈশ্বরের ওপর পূর্ণরূপে নির্ভর করতে হবে।—গীতসংহিতা ১১:৪-৭.
প্রহরীদুর্গ জনসাধারণের সংস্করণ ১৬.৩ ১৩
দৌরাত্ম্যমুক্ত এক জগৎ কি সম্ভব?
বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে, ঈশ্বর শীঘ্রই এই পৃথিবীকে দৌরাত্ম্যের হাত থেকে মুক্ত করবেন। বর্তমানের এই দৌরাত্ম্যপ্রিয় জগতের উপর ঈশ্বরের সেই ‘বিচারের দিন’ আসতে চলেছে, যে-দিন তিনি ‘ভক্তিহীন মনুষ্যদের বিনাশ’ করবেন। (২ পিতর ৩:৫-৭) দৌরাত্ম্যপ্রিয় লোকেরা না থাকায় কেউ অপরাধের শিকার হবে না। কীভাবে আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি, ঈশ্বর চিরকালের জন্য দৌরাত্ম্যকে দূর করে দিতে চান?
বাইবেল বলে, “দৌরাত্ম্যপ্রিয় লোক” ঈশ্বরের “প্রাণের ঘৃণাস্পদ।” (গীতসংহিতা ১১:৫) সৃষ্টিকর্তা হিসেবে তিনি শান্তি ও ন্যায়বিচার ভালোবাসেন। (গীতসংহিতা ৩৩:৫; ৩৭:২৮) আর এইজন্য তিনি চিরকাল ধরে দৌরাত্ম্যপ্রিয় লোকেদের সহ্য করবেন না।
আপনি কি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে ইচ্ছুক?
১৫ কেন দায়ূদ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে ইচ্ছুক ছিলেন? তিনি আমাদের এর উত্তর সেই একই গীতে দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি চার বার এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন: “কত কাল?” তিনি বলেছিলেন: “আমি তোমার দয়াতে [“অনুগত প্রেমে,” NW] বিশ্বাস করিয়াছি; আমার চিত্ত তোমার পরিত্রাণে উল্লাসিত হইবে। আমি সদাপ্রভুর উদ্দেশে গীত গাহিব, কেননা তিনি আমার মঙ্গল করিয়াছেন।” (গীত. ১৩:৫, ৬) দায়ূদ জানতেন, যিহোবা তাকে ভালোবাসেন এবং তিনি সবসময় দায়ূদের প্রতি অনুগত থাকবেন। তিনি অতীতের সেই সময়গুলো নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, যখন যিহোবা তাকে সাহায্য করেছিলেন আর সেইসঙ্গে তিনি ভবিষ্যতের সেই সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিলেন, যখন যিহোবা তার পরীক্ষাগুলো দূর করে দেবেন। দায়ূদ জানতেন যে, যিহোবার আশীর্বাদগুলোর জন্য অপেক্ষা করা সত্যিই সার্থক হবে।
ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করছে! (ইংরেজি) ২৩৬ অনু. ১৬
রাজ্য পৃথিবীতে ঈশ্বরের ইচ্ছা পূরণ করবে
১৬ নিরাপত্তা। অবশেষে যিশাইয় ১১:৬-৯ পদের সুন্দর কথাগুলো সম্পূর্ণ এবং আক্ষরিক অর্থে পরিপূর্ণ হবে। পুরুষ, নারী, শিশু সবাই নিরাপদে থাকবে। তারা পৃথিবীতে যেখানেই যাক না কেন, তাদের কোনো বিপদ হবে না, পশুদের থেকেও নয় আর মানুষদের থেকেও নয়। সেই সময়টা কল্পনা করুন, যখন এই পুরো পৃথিবী আপনার বাড়ি হবে! আপনি পুকুর, নদী ও সমুদ্রে সাঁতার কাটতে পারবেন, পাহাড় চড়তে পারবেন, মাঠে ঘুরে বেড়াতে পারবেন এবং আপনি কোনো কিছুকেই ভয় পাবেন না। রাতেও ভয় পাবেন না। যিহিষ্কেল ৩৪:২৫ পদের এই কথাগুলো সত্যি হবে: “[ঈশ্বরের লোকেরা] নির্ভয়ে প্রান্তরে বাস করিবে ও বনে নিদ্রা যাইবে।”
অমূল্য রত্ন
প্রহরীদুর্গ ১৩ ৯/১৫ ১৯ অনু. ১২
আপনি কি রূপান্তরিত হয়েছেন?
১২ দুঃখের বিষয় হল, পৌলের দ্বারা বর্ণিত লোকেরা আমাদের চারপাশের জগতেও রয়েছে। তারা হয়তো এইরকমটা চিন্তা করে থাকে যে, বিভিন্ন মান এবং নীতি পালন করে চলা সেকেলে অথবা সেগুলো দুর্বহ। অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং বাবা-মা এক প্রশ্রয়ী মনোভাব এবং এক “স্বাধীনচেতা” মনোভাব গড়ে তোলে। তাদের কাছে সমস্ত কিছুই আপেক্ষিক, কোনো কিছুই অপরিবর্তনশীল নয়। এমনকী নিজেদেরকে ধর্মপ্রাণ বলে দাবি করে এমন অনেক ব্যক্তি মনে করে থাকে যে, তারা যেটাকে সঠিক বলে মনে করে, সেটা করার স্বাধীনতা তাদের রয়েছে আর এর জন্য ঈশ্বর বা তাঁর আজ্ঞাগুলোর বাধ্য হওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। (গীত. ১৪:১) এইরকম মনোভাব সত্য খ্রিস্টানদের জন্য হুমকি স্বরূপ। অসতর্ক ব্যক্তিরা ঈশতান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলোর প্রতি একই দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে পারে। তারা হয়তো সংগঠনের কার্যপ্রণালীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ব্যাপারে অনিচ্ছুক মনোভাব দেখায় এবং এমনকী কোনো কিছু তাদের পছন্দ অনুযায়ী না হলে, সেটা নিয়েও অভিযোগ করে। কিংবা তারা হয়তো আমোদপ্রমোদ, ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং উচ্চশিক্ষার পিছনে ছোটার বিষয়ে বাইবেলভিত্তিক যে-পরামর্শ রয়েছে, সেটার সঙ্গে একমত হয় না।