জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-র রেফারেন্স
© 2023 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
মার্চ ৪-১০
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | গীতসংহিতা ১৬-১৭
‘সদাপ্রভু, তুমি আমার মঙ্গল’
অল্পবয়সিরা, তোমরা এক পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন লাভ করতে পার
প্রকৃত বন্ধুদের বাছাই করো
১১ গীতসংহিতা ১৬:৩ পদ পড়ুন। দায়ূদ জানতেন, কীভাবে ভালো বন্ধু খুঁজে পেতে হয়। তিনি সেই ব্যক্তিদের বন্ধু হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, যারা যিহোবাকে ভালোবাসে আর এটা তাকে প্রচুর ‘প্রীতি’ বা আনন্দ এনে দিয়েছিল। তিনি তার বন্ধুদের “পবিত্র ব্যক্তিগণ” হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন কারণ তারা যিহোবার শুদ্ধ নৈতিক মান অনুসরণ করার চেষ্টা করেছিল। আরেকজন গীতরচক বন্ধু বাছাই করা সম্বন্ধে একই বিষয় অনুভব করেছিলেন এবং লিখেছিলেন: “আমি সেই সকলের সখা, যাহারা তোমাকে ভয় করে, এবং যাহারা তোমার নিদেশ সকল পালন করে।” (গীত. ১১৯:৬৩) আমরা যেমন আগের প্রবন্ধে আলোচনা করেছি, তুমিও সেই ব্যক্তিদের মধ্যে অনেক ভালো বন্ধু খুঁজে পেতে পার, যারা যিহোবাকে ভালোবাসে ও তাঁর বাধ্য হয়। আর সত্যি বলতে কী, তোমার বন্ধুদেরও যে তোমার বয়সেরই হতে হবে, এমন নয়।
‘সদাপ্রভুর সৌন্দর্য্য দেখুন’
“সদাপ্রভু আমার দায়াংশ ও আমার পানপাত্র,” দায়ূদ গেয়েছিলেন। “তুমিই আমার অধিকার স্থায়ী করিতেছ। আমার জন্য মানরজ্জু মনোহর স্থানে পড়িয়াছে।” (গীত. ১৬:৫, ৬) দায়ূদ তার ‘দায়াংশের’ জন্য অর্থাৎ যিহোবার সঙ্গে এক অনুমোদনযোগ্য সম্পর্কের এবং তাঁকে সেবার করার সুযোগের জন্য কৃতজ্ঞ ছিলেন। দায়ূদের মতো আমরাও হয়তো বিভিন্ন কষ্ট ভোগ করি কিন্তু আমাদের অনেক আধ্যাত্মিক আশীর্বাদ রয়েছে! তাই, আসুন আমরা ক্রমাগত সত্য উপাসনায় আনন্দ করি এবং সবসময় যিহোবার আত্মিক মন্দির নিয়ে ‘অনুসন্ধান করি’ বা ধ্যান করি।
প্রহরীদুর্গ ৮ ২/১৫ ৩ অনু. ২-৩
যিহোবাকে নিয়ত আপনার সম্মুখে রাখুন
২ আমরা সকলেই বাইবেলের সুপরিচিত চরিত্রগুলোর—অব্রাহাম, সারা, মোশি, রূৎ, দায়ূদ, ইষ্টের, প্রেরিত পৌল ও অন্যান্যদের—অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। কিন্তু, কম পরিচিত এমন ব্যক্তিদের বিবরণগুলোও আমাদের উপকৃত করতে পারে। বাইবেলের বিবরণগুলো নিয়ে ধ্যান করা আমাদেরকে গীতরচকের এই কথাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে কাজ করার জন্য সাহায্য করতে পারে: “আমি সদাপ্রভুকে নিয়ত সম্মুখে রাখিয়াছি; তিনি ত আমার দক্ষিণে, আমি বিচলিত হইব না।” (গীত. ১৬:৮) এই কথাগুলোর অর্থ কী?
৩ একজন সৈনিক সাধারণত তার ডানহাত দিয়ে খড়্গ ব্যবহার করতেন আর ঢালটা বাঁহাতে থাকায় তার ডান দিকটা অরক্ষিত থাকত। তা সত্ত্বেও, তিনি সুরক্ষিত থাকতেন, যদি তার কোনো বন্ধু তার ডান দিকে কাছাকাছি থেকে লড়াই করতেন। আমরা যদি যিহোবাকে মনে রাখি এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করি, তাহলে তিনি আমাদের সুরক্ষা করবেন। তাই আসুন আমরা দেখি যে, কীভাবে বাইবেলের বিবরণগুলো বিবেচনা করা আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে পারে, যাতে আমরা ‘সদাপ্রভুকে নিয়ত আমাদের সম্মুখে রাখি।’
অমূল্য রত্ন
অন্তর্দৃষ্টি-২, ইংরেজি ৭১৪
চোখের মণি
ইব্রীয় ভাষাতে যখন আইশোন (দ্বিতীয় ৩২:১০; হিতো ৭:২) শব্দের সঙ্গে এয়িন (চোখ) লেখা থাকে, তখন সেটার আক্ষরিক অর্থ হয়, “চোখের ছেলে।” একইভাবে, বিলাপ ২:১৮ পদে “চক্ষু” শব্দের সঙ্গে যখন বাথ (মেয়ে) শব্দ আসে, তখন সেটার আক্ষরিক অর্থ হয়, “চোখের মেয়ে।” বাইবেলে এই দুই উপায়ে “চোখের মণির” বিষয়ে বলা রয়েছে। কিন্তু, গীতসংহিতা ১৭:৮ পদে ‘নয়নের তারা’ শব্দের উপর জোর দেওয়ার জন্য আইশোন শব্দটাও লেখা আছে এবং বাথ শব্দটাও লেখা আছে। (আইশোন বাথ-এয়িন শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল “চোখের ছেলে ও মেয়ে।”) স্পষ্টভাবেই, এই পদে সামনের ব্যক্তির চোখে আমাদের যে-ছোটো ছবি ভেসে ওঠে, সেটার কথা বলা হয়েছে।
চোখ খুব কোমল এবং এটার অনেক যত্ন নিতে হয়। যদি সেটাতে ছোটো চুল কিংবা ধুলো পড়ে, তখন সঙ্গেসঙ্গে আমরা তা বুঝতে পারি এবং দ্রুত সেটা বের করার চেষ্টা করি। চোখের মণির উপর একটা স্বচ্ছ পর্দা থাকে। আমরা যদি সাবধান না থাকি এবং কোনো কারণে সেটা চোট পায় কিংবা কোনো রোগের কারণে আমরা আবছা দেখি, তা হলে আমাদের দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে অথবা আমরা অন্ধ হয়ে যেতে পারি। বাইবেলে যখন কোনো কিছুকে “চোখের মণির” সঙ্গে তুলনা করা হয়, তখন এর মানে হয়, সেটাকে অনেক যত্ন করে রাখা প্রয়োজন, যেমন ঈশ্বরের আইন। (হিতো ৭:২) ঈশ্বর যেভাবে ইজরায়েলীয়দের যত্ন নিয়েছিলেন, সেই বিষয়ে দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:১০ পদে বলা রয়েছে, ‘নিজের চোখের মণির মতো তিনি তাদের রক্ষা করলেন।’ দায়ূদও নিজেকে যিহোবার চোখের মণির সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। দায়ূদ যিহোবার কাছে বিনতি করেছিলেন, তিনি যেন চোখের মণির মতো তার যত্ন নেন এবং তাকে রক্ষা করেন। (গীত ১৭:৮) তিনি চেয়েছিলেন, যিহোবা যেন তার হয়ে পদক্ষেপ নেন, বিশেষভাবে সেইসময়ে, যখন শত্রুরা তাকে ঘিরে ধরেছিল। (তুলনা করুন, সখ ২:৮.)
মার্চ ১১-১৭
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | গীতসংহিতা ১৮
‘সদাপ্রভু আমার রক্ষাকর্ত্তা’
প্রহরীদুর্গ ০৯ ১০/১ ২০ অনু. ৪-৫
যিহোবা আমাদের যে-আনন্দ দেন, সেটাই আমাদের শক্তিশালী করে
এ ছাড়া, বাইবেল যিহোবাকে জড় বস্তুর সঙ্গে তুলনা করে। তাঁকে “ইস্রায়েলের শৈল,” “উঁচু পাহাড়” এবং “দুর্গ” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। (২ শমূয়েল ২৩:৩; গীতসংহিতা ১৮:২, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন; দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪) এখানে সাদৃশ্য কী? ঠিক যেমন একটা বড়ো শৈল খুব দৃঢ়ভাবে স্থাপিত এবং অনড়, তেমনই যিহোবা ঈশ্বর আপনার জন্য নিরাপত্তার দৃঢ় উৎস হিসেবে প্রমাণিত হতে পারেন।
৫ গীতসংহিতা বইটিতে অনেক শব্দচিত্র রয়েছে, যেগুলো যিহোবার ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দিককে বর্ণনা করে। উদাহরণস্বরূপ, গীতসংহিতা ৮৪:১১ পদ যিহোবা সম্বন্ধে বলে যে, তিনি হলেন “সূর্য্য ও ঢাল” কারণ তিনি হলেন দীপ্তি, জীবন, শক্তি ও সুরক্ষার উৎস। অন্যদিকে, গীতসংহিতা ১২১:৫ পদ বলে যে, “সদাপ্রভুই তোমার ছায়া, তিনি তোমার দক্ষিণ পার্শ্বে।” ঠিক যেমন ছায়াময় স্থান আপনাকে সূর্যের প্রখর তাপ থেকে রক্ষা করতে পারে, তেমনই যিহোবা সেই ব্যক্তিদের রক্ষা করতে পারেন, যারা দুর্দশার তাপের মধ্যে দিয়ে তাঁকে সেবা করে, তিনি তাদেরকে তাঁর ‘হস্ত’ বা তাঁর “পক্ষের” নীচে ছায়াতুল্য সুরক্ষা জোগান।—যিশাইয় ৫১:১৬; গীতসংহিতা ১৭:৮; ৩৬:৭.
অন্তর্দৃষ্টি-২, ইংরেজি ১১৬১ অনু. ৭
কণ্ঠস্বর
যিহোবা তাঁর সেবকদের প্রার্থনা শোনেন। যে-লোকেরা পবিত্র শক্তি এবং সত্যের সঙ্গে মিল রেখে ঈশ্বরের সেবা করে, তারা নিশ্চিত থাকতে পারে, তিনি তাদের প্রার্থনা শোনেন, তা তারা যে-ভাষাতেই প্রার্থনা করুক না কেন। তিনি এমনকী মনে মনে করা প্রার্থনাও শোনেন কারণ তিনি লোকদের হৃদয় পড়তে পারেন। (গীত ৬৬:১৯; ৮৬:৬; ১১৬:১; ১শমূ ১:১৩; নহি ২:৪) ঈশ্বর সেই লোকদের প্রার্থনা শোনেন, যারা সমস্যার সময়ে তাঁকে ডাকে। তিনি সেই লোকদের কথাও শুনতে পারেন এবং তাদের উদ্দেশ্য জানতে পারেন, যারা তাঁর বিরোধিতা করে এবং তাঁর সেবকদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে।—আদি ২১:১৭; গীত ৫৫:১৮, ১৯; ৬৯:৩৩; ৯৪:৯-১১; যির ২৩:২৫.
কীভাবে উদ্বিগ্নতার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করা যায়?
২. স্মরণ করুন। স্মরণ করুন, যখন অতীতে কোনো সমস্যা এসেছিল, তখন কীভাবে যিহোবা আপনাকে সাহায্য করেছিলেন। আপনি যখন স্মরণ করেন, কীভাবে যিহোবা আপনাকে এখনও পর্যন্ত সাহায্য করে আসছেন এবং প্রাচীন কালে তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের সাহায্য করেছিলেন, তখন তাঁর উপর আপনার আস্থা এবং নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়। (গীত. ১৮:১৭-১৯) জশুয়া নামে একজন প্রাচীন বলেন: “যিহোবা আমার কোন কোন প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন, সেটার এক লম্বা তালিকা আমার কাছে রয়েছে। এর মাধ্যমে আমি স্মরণ করতে পারি, আমি যিহোবার কাছে যা চেয়েছিলাম, তিনি আমাকে তা দিয়েছিলেন।” জশুয়ার মতো আমরাও স্মরণ করতে পারি, কীভাবে যিহোবা আমাদের অতীতে সাহায্য করেছিলেন আর এর ফলে, আমরা উদ্বিগ্নতার সঙ্গে মোকাবিলা করার শক্তি লাভ করতে পারব।
অমূল্য রত্ন
অন্তর্দৃষ্টি-১, ইংরেজি ৪৩২ অনু. ২
করূব
অনেক লোকেরা বলে, করূবেরা হল ভয়ংকর এবং বিরাট ডানাওয়ালা চরিত্র। আশেপাশের জাতিরা তাদের উপাসনা করত। প্রাচীন যিহুদি রীতি অনুযায়ী, এই করূবেরা মানুষের মতো দেখতে ছিল, যদিও বাইবেল এই বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলে না। তাদের খুবই চমৎকারভাবে বানানো হয়েছিল এবং তা থেকে বোঝা যায়, স্বর্গদূতেরা কত অপূর্ব। তাদের খুবই নিখুঁতভাবে বানানো হয়েছিল, হুবহু যেমনটা মোশিকে যিহোবা দেখিয়েছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ২৫:৯) প্রেরিত পৌল তাদের বিষয়ে বলেছিলেন: “সেই সিন্দুকের উপরে মহিমাময় দুটো করূব ছিল, যারা তাদের পাখা দিয়ে আচ্ছাদনের উপর ছায়া করে রাখত।” (ইব্রীয় ৯:৫) যিহোবার উপস্থিতি বোঝানোর জন্য করূবদের ব্যবহার করা হত। যিহোবা সাক্ষ্য-সিন্দুকের উপরে থাকা দুই করূবের মধ্য থেকে কথা বলতেন। (যাত্রা ২৫:২২; গণনা ৭:৮৯) বিভিন্ন শাস্ত্রপদে বলা হয়েছে, যিহোবা “করূবদের উপরে সিংহাসনে বসে থাকেন।” (১শমূ ৪:৪; ২শমূ ৬:২; ২রাজা ১৯:১৫; ১বংশা ১৩:৬; গীত ৮০:১; ৯৯:১; যিশা ৩৭:১৬) করূব যিহোবার রথকে চিত্রিত করে। (১বংশা ২৮:১৮) করূবদের ডানার অর্থ হল, ঈশ্বর তাঁর সেবকদের সুরক্ষা জোগান এবং তিনি অনেক দ্রুত গতিতে যাত্রা করেন। দায়ূদ একটা গীতে বলেছিলেন, যিহোবা কীভাবে তাকে সাহায্য করেন। তিনি লিখেছিলেন: “তিনি একটা করূবের উপর চড়ে উড়তে উড়তে নেমে এলেন। তাঁকে একজন স্বর্গদূতের ডানার উপর দেখা গেল।”—২শমূ ২২:১১; গীত ১৮:১০.
মার্চ ১৮-২৪
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | গীতসংহিতা ১৯-২১
“আকাশমণ্ডল ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে”
সকলে যিহোবার গৌরব বর্ণনা করুক
যিশয়ের ছেলে, দায়ূদ বৈৎলেহমের একজন বালক মেষপালক হিসেবে বড় হয়ে উঠেছিলেন। মেষপালের সেই নির্জন চারণক্ষেত্রে বাবার পালগুলো দেখাশোনা করার সময় কতবারই না তিনি নিস্তব্ধ রাতের বিশাল তারাভরা আকাশের দিকে তাকিয়েছিলেন! কোনো সন্দেহ নেই যে, সেই প্রাণবন্ত অভিব্যক্তিগুলো তার মন থেকে উদয় হয়েছিল, যখন তিনি ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯ গীতের এই চমৎকার কথাগুলো রচনা করেছিলেন এবং গেয়েছিলেন: “আকাশমণ্ডল ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে, বিতান তাঁহার হস্তকৃত কর্ম্ম জ্ঞাপন করে। তাহাদের মানরজ্জু সমস্ত পৃথিবীতে ব্যাপ্ত, তাহাদের বাক্য জগতের সীমা পর্য্যন্ত ব্যাপ্ত।”—গীতসংহিতা ১৯:১, ৪.
২ বাক্য, ভাষা এবং রব ছাড়াই যিহোবার বিস্ময়কর সৃষ্টি আকাশমণ্ডল দিনের পর দিন, রাতের পর রাত তাঁর গৌরব বর্ণনা করে। সৃষ্টি ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করতে কখনও ক্ষান্ত হয় না এবং এই নীরব সাক্ষ্যকে মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করা নম্রতার কাজ, যা “সমস্ত পৃথিবীতে” বিস্তৃত যেন এর সকল নিবাসী দেখতে পায়। কিন্তু, সৃষ্টির নীরব সাক্ষ্যই কেবল যথেষ্ট নয়। বিশ্বস্ত মানুষদের শ্রবণসাধ্য স্বর নিয়ে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। নামহীন এক গীতরচক এই অনুপ্রাণিত কথাগুলোর মাধ্যমে বিশ্বস্ত উপাসকদের উদ্দেশে বলেছিলেন: “যিহোবার গৌরব ও শক্তি কীর্ত্তন কর। যিহোবার নামের গৌরব কীর্ত্তন কর।” (গীতসংহিতা ৯৬:৭, ৮) যিহোবার সঙ্গে যাদের নিকট সম্পর্ক রয়েছে, তারা সেই মিনতিতে সাড়া দিয়ে রোমাঞ্চিত হয়। কিন্তু, যিহোবার গৌরব কীর্তন করার সঙ্গে কী জড়িত?
প্রহরীদুর্গ ০৪ ৬/১ ১১ অনু. ৮-১০
সৃষ্টি ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে!
৮ এরপর দায়ূদ যিহোবার সৃষ্টির আরেকটা বিস্ময় সম্বন্ধে বর্ণনা দেন: “তাহাদের [দৃশ্যত আকাশের] মধ্যে তিনি সূর্য্যের নিমিত্ত এক তাম্বু স্থাপন করিয়াছেন। সে বরের ন্যায় আপন বাসরগৃহ হইতে নির্গত হয়, বীরের ন্যায় স্বীয় পথে দৌড়িবার জন্য আমোদ করে। সে আকাশমণ্ডলের প্রান্ত হইতে যাত্রা করে, অপর প্রান্ত পর্য্যন্ত ঘুরিয়া আইসে; তাহার উত্তাপে কোন বস্তু লুক্কায়িত থাকে না।”—গীতসংহিতা ১৯:৪-৬.
৯ অন্য নক্ষত্রগুলোর তুলনায় সূর্য কেবলমাত্র এক মাঝারি আকারের নক্ষত্র। অথচ, এটা এক উল্লেখযোগ্য নক্ষত্র আর এর চারিদিকে পরিক্রমণরত গ্রহগুলোকে খুবই ক্ষুদ্র বলে মনে হয়। একটা উৎস বলে যে, সূর্যের ভর হচ্ছে “২ এর পর ২৭টা শূন্য দিলে যে-সংখ্যা হবে, তত টন—আমাদের সৌরজগতের ভরের ৯৯.৯ শতাংশ! সূর্যের মহাকর্ষীয় বলের কারণে পৃথিবী সূর্য থেকে দূরে সরে না গিয়ে বা আরেকটু কাছে সরে না এসে, এর থেকে ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরত্বে পরিক্রমণ করে। সূর্যের শক্তির অতি ক্ষুদ্র এক অংশ আমাদের গ্রহে এসে পৌঁছে কিন্তু জীবন বাঁচিয়ে রাখার জন্য সেটুকুই যথেষ্ট।
১০ গীতরচক সূর্যকে রূপক ভাষায় বর্ণনা করেন, এটাকে এমন এক ‘বীর’ হিসেবে চিত্রিত করেন, যে দিনের বেলায় এক দিগন্ত হতে আরেক দিগন্তে দৌড়ে যায় এবং রাতের বেলায় ‘এক তাম্বুতে’ বিশ্রাম নেয়। সেই শক্তিশালী নক্ষত্র যখন দিগন্তে ডুবে যায়, তখন পৃথিবীর অবস্থান থেকে মনে হয় যেন বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এটা ‘এক তাম্বুতে’ যাচ্ছে। সকালে, আপাতদৃষ্টিতে এটা হঠাৎ করে উদয় হয়, ‘বরের ন্যায় আপন বাসরগৃহ হইতে নির্গত হইয়া,’ চারিদিক উজ্জ্বল করে। একজন মেষপালক হিসেবে দায়ূদ রাতের প্রচণ্ড ঠাণ্ডা সম্বন্ধে জানতেন। (আদিপুস্তক ৩১:৪০) তিনি স্মরণ করতে পেরেছিলেন যে, কীভাবে সূর্যের রশ্মি দ্রুতগতিতে তাকে ও তার আশেপাশের পরিবেশকে উষ্ণ করত। স্পষ্টতই, পূর্ব থেকে পশ্চিমে “ভ্রমণ” করে এটা ক্লান্ত হয়ে পড়ত না বরং “বীরের” ন্যায় পুনরায় ভ্রমণ করার জন্য তৈরি ছিল।
সজাগ হোন! ৯৫ ১১/৮ ৭ অনু. ৩, ইংরেজি
সবচেয়ে বড়ো শিল্পীকে বেশিরভাগ লোকই অগ্রাহ্য করে
প্রকৃতির মধ্যে অদ্ভুত শিল্পকার্য রয়েছে। আমরা যখন সেগুলোর উপর মনোযোগ দিই, তখন আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে আরও ভালোভাবে জানতে পারি। একবার, যিশু তাঁর শিষ্যদের শেখানোর জন্য তাদের বলেছিলেন, বুনো ফুলের উপর মনোযোগ দেয়। তিনি বলেছিলেন: “মাঠে বেড়ে ওঠা ফুলের কাছ থেকে শেখো; সেগুলো পরিশ্রমও করে না কিংবা সুতোও কাটে না; কিন্তু, আমি তোমাদের বলছি, শলোমনের যদিও অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস ছিল, তবুও তিনি এই ফুলগুলোর একটার মতোও সুসজ্জিত ছিলেন না।” (মথি ৬:২৮, ২৯) একটা ছোটো বুনো ফুলও কতটা সুন্দর হয়! এখান থেকে আমরা শিখতে পারি যে, ঈশ্বর মানুষের কতটা যত্ন নেন।
অমূল্য রত্ন
অন্তর্দৃষ্টি-১, ইংরেজি ১০৭৩
ইব্রীয় ভাষা
ইব্রীয় কবিতায় কোনো কোনো অংশের প্রথম লাইনে যা লেখা থাকে, পরের লাইনে সেটার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কিছু লেখা থাকে অথবা সেটার বিপরীত কিছু লেখা থাকে। কিন্তু, synthetic parallelism-এ আগের লাইনের কথাগুলো পরের লাইনে আরও ভালো করে বোঝানো হয় আর সেই বিষয়ে কিছু তথ্য দেওয়া হয়। এর একটা উদাহরণ হল গীতসংহিতা ১৯:৭-৯ পদ:
সদাপ্রভুর ব্যবস্থা সিদ্ধ,
প্রাণের স্বাস্থ্যজনক;
সদাপ্রভুর সাক্ষ্য বিশ্বসনীয়,
অল্পবুদ্ধির জ্ঞানদায়ক।
সদাপ্রভুর বিধি সকল যথার্থ,
চিত্তের আনন্দবর্দ্ধক;
সদাপ্রভুর আজ্ঞা নির্ম্মল,
চক্ষুর দীপ্তিজনক।
সদাপ্রভুর ভয় শুচি,
চিরস্থায়ী,
সদাপ্রভুর শাসন সকল সত্য,
সর্ব্বংশে ন্যায্য।
লক্ষ করুন, প্রত্যেক দ্বিতীয় লাইনে যা বলা হয়েছে, যেমন “প্রাণের স্বাস্থ্যজনক” এবং “অল্পবুদ্ধির জ্ঞানদায়ক,” এগুলো আগের লাইনের গুরুত্ব সম্বন্ধে বোঝায়। যেভাবে প্রত্যেকটা বাক্যকে দুটো ভাগে ভাগ করা হয়েছে, সেটার ফলে সম্পূর্ণ বাক্য একটা কবিতা হয়ে যায়।
মার্চ ২৫-৩১
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | গীতসংহিতা ২২
যিশুর মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ভবিষ্যদ্বাণীগুলো
প্রহরীদুর্গ ১১ ৮/১৫ ১৫ অনু. ১৬
তারা মশীহের দেখা পেয়েছে!
১৬ মশীহ ঈশ্বরের দ্বারা পরিত্যক্ত হয়েছেন বলে মনে হবে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ২২:১.) এই ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে মিল রেখে “নয় ঘটিকার [দুপুর প্রায় তিনটে] সময়ে যীশু উচ্চরবে ডাকিয়া কহিলেন, এলোই, এলোই, লামা শবক্তানী; অনুবাদ করিলে ইহার অর্থ এই, ‘ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ?’” (মার্ক ১৫:৩৪) যিশু তাঁর স্বর্গীয় পিতার প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেননি। ঈশ্বর তাঁর সুরক্ষা সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে যিশুকে শত্রুদের কাছে পরিত্যাগ করেছিলেন, যাতে খ্রিস্টের নীতিনিষ্ঠা পুরোপুরিভাবে পরীক্ষিত হতে পারে। আর যিশু যেমনটা আর্তনাদ করে উঠেছিলেন, সেটার দ্বারা তিনি গীতসংহিতা ২২:১ পদ পরিপূর্ণ করেছিলেন।
প্রহরীদুর্গ ১১ ৮/১৫ ১৫ অনু. ১৩
তারা মশীহের দেখা পেয়েছে!
১৩ দায়ূদ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, মশীহকে অপমান করা হবে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ২২:৭, ৮.) যাতনাদণ্ডে কষ্টভোগ করার সময় যিশুর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছিল কারণ মথি বলেন: “যে সকল লোক সেই পথ দিয়া যাতায়াত করিতেছিল, তাহারা মাথা নাড়িতে নাড়িতে তাঁহার নিন্দা করিয়া কহিল, ওহে, তুমি না মন্দির ভাঙ্গিয়া ফেল, আর তিন দিনের মধ্যে গাঁথিয়া তুল! আপনাকে রক্ষা কর; যদি ঈশ্বরের পুত্ত্র হও, ক্রুশ হইতে নামিয়া আইস। আর সেইরূপ প্রধান যাজকেরা অধ্যাপকগণের ও প্রাচীনবর্গের সহিত বিদ্রূপ করিয়া কহিল, ঐ ব্যক্তি অন্য অন্য লোককে রক্ষা করিত, আপনাকে রক্ষা করিতে পারে না; ও ত ইস্রায়েলের রাজা! এখন ক্রুশ হইতে নামিয়া আইসুক; তাহা হইলে আমরা উহার উপরে বিশ্বাস করিব; ও ঈশ্বরে ভরসা রাখে, এখন তিনি নিস্তার করুন, যদি উহাকে চান; কেননা ও বলিয়াছে, আমি ঈশ্বরের পুত্ত্র।” (মথি ২৭:৩৯-৪৩) কিন্তু, যিশু নিজের মর্যাদা বজায় রেখে সমস্তকিছু সহ্য করেছিলেন। আমাদের জন্য কত চমৎকার এক উদাহরণ!
প্রহরীদুর্গ ১১ ৮/১৫ ১৫ অনু. ১৪
তারা মশীহের দেখা পেয়েছে!
১৪ মশীহের বস্ত্র নিয়ে গুলিবাঁট করা হবে। “তাহারা আপনাদের মধ্যে আমার বস্ত্র বিভাগ করে,” গীতরচক লিখেছিলেন, “আমার পরিচ্ছদের জন্য গুলিবাঁট করে।” (গীত. ২২:১৮) সেটাই ঘটেছিল, যখন “[রোমীয় সৈন্যরা] তাঁহাকে ক্রুশে দিয়া [যিশুর] বস্ত্র সকল গুলিবাঁটপূর্ব্বক অংশ করিয়া লইল।”—মথি ২৭:৩৫; পড়ুন, যোহন ১৯:২৩, ২৪.
অমূল্য রত্ন
আমাদের পবিত্র সমাবেশগুলোর প্রতি সম্মান দেখানো
৭ বিভিন্ন বাস্তব উপায় রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের সমাবেশগুলোর প্রতি সম্মান দেখাতে পারি। একটা উপায় হল, রাজ্যের গানগুলো গাওয়ার জন্য উপস্থিত থেকে। এগুলোর মধ্যে অনেক গানই প্রার্থনার আকারে রয়েছে আর তাই আমাদের শ্রদ্ধা সহকারে গাওয়া উচিত। প্রেরিত পৌল ২২ গীতের কথাগুলোকে যিশুর এক উক্তি হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন: “আমি আমার ভ্রাতৃগণের কাছে তোমার নাম প্রচার করিব, মণ্ডলীর মধ্যে তোমার প্রশংসা-গান করিব।” (ইব্রীয় ২:১২) তাই, সভাপতি গান সম্বন্ধে বলার আগেই জায়গায় বসাকে আমাদের অভ্যাসে পরিণত করা এবং এরপর গান গাওয়ার সময় কথাগুলোর অর্থের ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত। আমাদের গানে যেন গীতরচকের অনুভূতি প্রকাশ পায়, যিনি লিখেছিলেন: “আমি সর্ব্বান্তঃকরণে সদাপ্রভুর স্তব করিব, সরল লোকদের সভায় ও মণ্ডলীর মধ্যে করিব।” (গীতসংহিতা ১১১:১) হ্যাঁ, যিহোবার উদ্দেশে প্রশংসা গান গাওয়া হল, আমাদের সভাগুলো শুরু হওয়ার আগেই আসার এবং শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার একটা উত্তম কারণ।
“মণ্ডলীর মধ্যে” যিহোবার প্রশংসা করুন
প্রাচীন কালের মতো আজকের দিনে, ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাসীদের “মণ্ডলীর মধ্যে” তাদের বিশ্বাসের অভিব্যক্তি প্রকাশ করার আয়োজনগুলো করা হয়েছে। সবার জন্য যে-সুযোগটি খোলা রয়েছে তা হল, মণ্ডলীর সভাগুলোতে শ্রোতাদের উদ্দেশে করা প্রশ্নগুলোর উত্তরে বিভিন্ন মন্তব্য করা। এটা যে-ভাল কিছু সম্পাদন করতে পারে, সেটাকে তুচ্ছ করবেন না। উদাহরণ হিসেবে, যে-মন্তব্যগুলো দেখায় যে কীভাবে সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা বা এড়ানো যায়, সেগুলো আমাদের ভাইবোনদের বাইবেলের নীতিগুলোকে মেনে চলার জন্য তাদের সংকল্পকে আরও শক্তিশালী করে। যে-মন্তব্যগুলোতে উদ্ধৃত নয় কিন্তু উল্লেখিত রয়েছে এমন শাস্ত্রপদগুলোর যখন ব্যাখ্যা দেওয়া হয় অথবা ব্যক্তিগতভাবে করা গবেষণার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তখন সেগুলো অন্যদেরকে অধ্যয়নের ভাল অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহিত করতে পারে।
এপ্রিল ১-৭
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | গীতসংহিতা ২৩-২৫
“সদাপ্রভু আমার পালক”
প্রহরীদুর্গ ১১ ৫/১ ৩১ অনু. ৩, ইংরেজি
“সদাপ্রভু আমার পালক”
যিহোবা তাঁর মেষদের সঠিক পথে নিয়ে যান। মেষপালক ছাড়া মেষেরা রাস্তা হারিয়ে ফেলতে পারে। একইভাবে, জীবনের পথে চলার জন্য আমাদেরও সাহায্যের প্রয়োজন। (যিরমিয় ১০:২৩) দায়ূদ বলেছিলেন, যিহোবা তাঁর লোকদের ভালো ভালো জায়গায় এবং ধার্মিকতার পথে নিয়ে যান। (গীতসংহিতা ২৩:২, ৩) এই পদগুলো পড়লে যিহোবার উপর আমাদের নির্ভরতা বেড়ে যায়। বাইবেলে ঈশ্বরের পবিত্র শক্তির মাধ্যমে যে-কথাগুলো লেখা আছে, সেগুলো মেনে চললে আমরা সতেজতা লাভ করব, জীবনে সুখী হব এবং সুরক্ষিত থাকব।
“সদাপ্রভু আমার পালক”
যিহোবা তাঁর মেষদের সুরক্ষা জোগান। মেষপালক ছাড়া মেষেরা ভয় পায় এবং নিজেদের অসহায় মনে করে। যিহোবা তাঁর লোকদের বলেন যেন তারা ভয় না পায়। জীবনের কঠিন সময়েও তাদের ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। (গীতসংহিতা ২৩:৪) কেন? কারণ যিহোবা তাদের লক্ষ করেন এবং সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত। সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য তিনি তাদের প্রজ্ঞা ও শক্তি দেন।—ফিলিপীয় ৪:১৩; যাকোব ১:২-৫.
“সদাপ্রভু আমার পালক”
যিহোবা তাঁর মেষদের খাবার জোগান। মেষদের খাবারের জন্য মেষপালকের প্রয়োজন হয়। একইভাবে, আমাদের মধ্যে ঈশ্বরের নির্দেশনা পাওয়ার খিদে রয়েছে আর এই খিদে একমাত্র ঈশ্বরই মেটাতে পারবেন। (মথি ৫:৩) ঈশ্বর আমাদের যে-খাবার দেন, সেগুলো হল বাইবেল এবং সেটার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা প্রকাশনা, যেমন এই পত্রিকা। যিহোবা উদারভাবে তাঁর সেবকদের জন্য এইরকমই প্রচুর বইপত্র দেন। (গীতসংহিতা ২৩:৫) এগুলো থেকে আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি, কেন ঈশ্বর আমাদের বানিয়েছেন এবং জীবনের উদ্দেশ্য কী।
অমূল্য রত্ন
প্রহরীদুর্গ ১১ ২/১৫ ২৪ অনু. ১-৩
সর্বান্তঃকরণে ধার্মিকতাকে ভালোবাসুন
যিহোবা তাঁর বাক্য এবং তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তাঁর লোকেদের “ধর্ম্মপথে” গমন করান। (গীত. ২৩:৩) কিন্তু, যেহেতু আমরা অসিদ্ধ, তাই আমাদের সেই পথ থেকে সরে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। যা সঠিক, তা পুনরায় করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা প্রয়োজন। কী আমাদেরকে সফল হতে সাহায্য করবে? যিশুর মতো, আমাদেরও ধর্মময় বা যা সঠিক, তা করার বিষয়টাকে ভালোবাসতে হবে।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৪৫:৭.
২ ‘ধর্ম্মপথ’ বলতে কী বোঝায়? এই রূপক ‘পথ’ হচ্ছে যিহোবার ধার্মিক মানগুলোর ওপর ভিত্তি করে জীবনযাপন করার এক পথ। ইব্রীয় এবং গ্রিক ভাষায়, ‘ধর্ম্ম’ শব্দটি সেই বিষয়কে নির্দেশ করে, যা “ন্যায়নিষ্ঠ” আর এই শব্দটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নৈতিক নীতিগুলো পালন করাকে নির্দেশ করে। যেহেতু যিহোবা “ধর্ম্মনিবাস,” তাই তাঁর উপাসকরা, নৈতিক দিক দিয়ে ন্যায়নিষ্ঠ এক পথ নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে তাঁর ওপর নির্ভর করে আনন্দিত, যে-পথে তাদের চলা উচিত।—যির. ৫০:৭.
৩ একমাত্র সর্বান্তঃকরণে ঈশ্বরের ধার্মিক মানগুলো মেনে চলার মাধ্যমে আমরা তাঁকে পূর্ণরূপে আনন্দিত করতে পারব। (দ্বিতীয়. ৩২:৪) এর জন্য প্রথমে আমাদের তাঁর বাক্য বাইবেল থেকে যিহোবা ঈশ্বর সম্বন্ধে যা-কিছু শেখা সম্ভব, তা শিখতে হবে। প্রতিদিন তাঁর সম্বন্ধে আমরা যত বেশি শিখব এবং তাঁর আরও নিকটবর্তী হব, তত বেশি আমরা তাঁর ধার্মিকতাকে ভালোবাসব। (যাকোব ৪:৮) এ ছাড়া, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার সময় আমাদের ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্যের নির্দেশনা মেনে নিতে হবে।
এপ্রিল ৮-১৪
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | গীতসংহিতা ২৬-২৮
যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার জন্য দায়ূদ কী করেছিলেন?
প্রহরীদুর্গ ০৪ ১২/১ ১৪ অনু. ৮-৯
নীতিনিষ্ঠার পথে চলুন
৮ দায়ূদ প্রার্থনা করেছিলেন: “সদাপ্রভু, আমার পরীক্ষা করিয়া প্রমাণ লও, আমার মর্ম্ম [“বৃক্কগুলো,” NW] ও চিত্ত নির্ম্মল কর।” (গীতসংহিতা ২৬:২) বৃক্কগুলো (কিডনি) দেহের একেবারে গভীরে অবস্থিত। রূপকভাবে, বৃক্ক একজন ব্যক্তির গভীরতম চিন্তাশক্তি ও আবেগকে প্রতিনিধিত্ব করে। আর রূপক চিত্ত বা হৃদয় হচ্ছে ভিতরের সম্পূর্ণ ব্যক্তি—তার প্রেরণা, অনুভূতি এবং বুদ্ধি। দায়ূদ যখন নিজেকে পরীক্ষা করে দেখার জন্য যিহোবাকে অনুরোধ করেছিলেন, তখন তিনি প্রার্থনা করেছিলেন যাতে তার অন্তরের অন্তঃস্থলের চিন্তাশক্তি ও অনুভূতিগুলোকে অন্বেষণ ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়।
৯ দায়ূদ অনুরোধ জানিয়েছিলেন যাতে তার বৃক্ক ও হৃদয়কে নির্মল বা বিশোধন করা হয়। আমরা ভিতরে কেমন সেই বিষয়কে যিহোবা কীভাবে বিশোধন করেন? দায়ূদ গেয়েছিলেন: “আমি সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করিব, তিনিই আমাকে মন্ত্রণা দিয়াছেন, রাত্রিতেও আমার চিত্ত [“বৃক্কগুলো,” NW] আমাকে প্রবোধ দেয়।” (গীতসংহিতা ১৬:৭) এর অর্থ কী? এর অর্থ হচ্ছে যে, ঐশিক পরামর্শ দায়ূদের সত্তার গভীরতম অংশে পৌঁছেছিল এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে থেকে তার অন্তরের অন্তঃস্থলের চিন্তাশক্তি এবং আবেগকে সংশোধন করেছিল। আমাদের বেলায়ও তা-ই হতে পারে, যদি আমরা ঈশ্বরের বাক্য, তাঁর প্রতিনিধি এবং তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে প্রাপ্ত পরামর্শ উপলব্ধি সহকারে চিন্তা করি এবং এটাকে আমাদের অন্তরের গভীরে স্থায়ীভাবে থাকতে দিই। এভাবে আমাদের বিশোধন করার জন্য যিহোবার কাছে নিয়মিতভাবে প্রার্থনা করা আমাদের নীতিনিষ্ঠার পথে চলতে সাহায্য করবে।
প্রহরীদুর্গ ০৪ ১২/১ ১৫ অনু. ১২-১৩
নীতিনিষ্ঠার পথে চলুন
১২ আরেকটা বিষয় যা দায়ূদের নীতিনিষ্ঠাকে শক্তিশালী করেছিল, সেই বিষয়ে উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন: “আমি অলীক লোকদের সঙ্গে বসি নাই, আমি ছদ্মবেশীদের সঙ্গে চলিব না। আমি দুরাচারদের সমাজ ঘৃণা করি, দুষ্টগণের সঙ্গে বসিব না।” (গীতসংহিতা ২৬:৪, ৫) দায়ূদ স্বাভাবিকভাবেই দুষ্ট লোকদের সঙ্গে বসতেন না। তিনি কুসংসর্গকে ঘৃণা করতেন।
১৩ আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? টেলিভিশনের অনুষ্ঠানসূচি, ভিডিও, চলচ্চিত্র, ইন্টারনেট সাইট বা অন্যান্য উপায়গুলোর মধ্যে দিয়ে আমরা কি অলীক লোকেদের সঙ্গে বসতে প্রত্যাখ্যান করি? আমরা কি ছদ্মবেশীদের কাছ থেকে দূরে থাকি? স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে কেউ কেউ হয়তো প্রতারণাপূর্ণ উদ্দেশ্যগুলোর কারণে আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার ভান করতে পারে। যারা ঈশ্বরের সত্যে চলে না তাদের সঙ্গে কি আমরা সত্যিই ঘনিষ্ঠ বন্ধন গড়ে তুলতে চাই? এ ছাড়া, ধর্মভ্রষ্টরা হয়তো আন্তরিক হওয়ার দাবি করে যিহোবার সেবা থেকে আমাদেরকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের উদ্দেশ্যকে লুকোতে পারে। খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে কেউ কেউ যদি দ্বৈত জীবনযাপন করে, তাদের সম্বন্ধেই বা কী বলা যায়? তারাও প্রকৃতপক্ষে কেমন ব্যক্তি তা লুকিয়ে রাখে। জেসন, যিনি বর্তমানে একজন পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করছেন, কিশোর বয়সে তার এই ধরনের বন্ধুবান্ধব ছিল। তাদের সম্বন্ধে তিনি বলেন: “একদিন আমার এক বন্ধু আমাকে বলেছিল: ‘এখন আমরা যা-ই করি না কেন, তাতে কিছু যায় আসে না কারণ নতুন পরিস্থিতি যখন আসবে, তখন আমরা বেঁচে থাকব না। আমরা জানতে পারব না যে আমরা কোনোকিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছি।’ এই ধরনের কথা আমার জন্য এক সতর্কবাণীমূলক বিষয় ছিল। নতুন পরিস্থিতিতে আমি মৃত থাকতে চাই না।” জেসন বিজ্ঞতাপূর্বক সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। “ভ্রান্ত হইও না,” প্রেরিত পৌল সাবধান করেছিলেন। “কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে।” (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) কুসংসর্গ এড়িয়ে চলা আমাদের জন্য কতই না গুরুত্বপূর্ণ!
প্রহরীদুর্গ ০৪ ১২/১ ১৬ অনু. ১৭-১৮
নীতিনিষ্ঠার পথে চলুন
১৭ ইস্রায়েলে যজ্ঞবেদিসহ আবাস ছিল যিহোবার উপাসনার কেন্দ্রস্থল। সেই জায়গার বিষয়ে তার আনন্দ প্রকাশ করে দায়ূদ প্রার্থনা করেছিলেন: “সদাপ্রভু, আমি ভালবাসি তোমার নিবাসগৃহ, তোমার গৌরবের বাসস্থান।”—গীতসংহিতা ২৬:৮.
১৮ আমরা কি সেই জায়গাগুলোতে সমবেত হতে পছন্দ করি, যেখানে আমরা যিহোবার সম্বন্ধে শিখি? আধ্যাত্মিক নির্দেশনার নিয়মিত কার্যক্রমসহ প্রত্যেকটা কিংডম হল সমাজের মধ্যে সত্য উপাসনার কেন্দ্রস্থল হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া, আমাদের বার্ষিক সম্মেলন, সীমা সম্মেলন ও বিশেষ সম্মেলন দিনগুলো রয়েছে। এই সভাগুলোতে যিহোবার “সাক্ষ্যকলাপ” আলোচনা করা হয়। আমরা যদি ‘সে সকল অতিশয় ভালবাসিতে’ শিখি, তা হলে আমরা সভাগুলোতে যোগ দিতে উৎসুক হব এবং সেখানে থাকার সময় মনোযোগী হব। (গীতসংহিতা ১১৯:১৬৭) সেই সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে থাকা কতই না সতেজতাদায়ক, যারা আমাদের ব্যক্তিগত মঙ্গলের প্রতি আগ্রহী এবং যারা আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার পথে থাকতে সাহায্য করে থাকে!—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.
অমূল্য রত্ন
প্রহরীদুর্গ ০৬ ৭/১৫ ২৮ অনু. ১৫
যিহোবা দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার করেন
১৫ গীতরচক দায়ূদ গেয়েছিলেন: “আমার পিতামাতা আমাকে ত্যাগ করিয়াছেন, কিন্তু সদাপ্রভু আমাকে তুলিয়া লইবেন।” (গীতসংহিতা ২৭:১০) এটা জানা কতই না সান্ত্বনাজনক যে, যিহোবার প্রেম যেকোনো মানব বাবামার প্রেমের চেয়ে ঊর্ধ্বে! বাবা অথবা মা প্রত্যাখ্যান করলে, খারাপ ব্যবহার করলে অথবা পরিত্যাগ করলে যত কষ্টই লাগুক না কেন, তা যিহোবা আপনার জন্য যতটা চিন্তা করেন, সেটার ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না। (রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯) মনে রাখবেন যে, ঈশ্বর তাদেরকে আকর্ষিত করেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসেন। (যোহন ৩:১৬; ৬:৪৪) মানুষরা আপনার সঙ্গে যেরকম আচরণই করুক না কেন, আপনার স্বর্গীয় পিতা আপনাকে ভালবাসেন!
এপ্রিল ১৫-২১
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | গীতসংহিতা ২৯-৩১
ঈশ্বর আমাদের ভালোবাসেন, তাই তিনি আমাদের শাসন করেন
অন্তর্দৃষ্টি-১, ইংরেজি ৮০২ অনু. ৩
মুখ
‘মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া,’ এই শব্দগুলো বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন অর্থ বোঝাতে পারে। যখন বলা হয়, যিহোবা কারো কাছ থেকে নিজের মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন, তখন এর অর্থ হয়, সেই ব্যক্তি তাঁর অনুমোদন হারিয়েছেন অথবা তিনি সেই ব্যক্তিকে আর সাহায্য করবেন না। যিহোবা এমনটা তখন করেন, যখন কোনো ব্যক্তি অথবা কোনো জাতি, যেমন ইজরায়েল জাতি, তাঁর অবাধ্য হয়। (ইয়োব ৩৪:২৯; গীত ৩০:৫-৮; যিশা ৫৪:৮; ৫৯:২) কখনো কখনো যিহোবা নিজের মুখ ঘুরিয়ে নেন কারণ তিনি কিছু করা থেকে অথবা কাউকে উত্তর দেওয়া থেকে নিজেকে আটকে রেখেছেন। তিনি সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করেন। (গীত ১৩:১-৩) দায়ূদ যখন বলেছিলেন, “আমার পাপসমূহের প্রতি মুখ আচ্ছাদন কর,” তখন সেটার মানে ছিল, যিহোবা যেন তাকে ক্ষমা করে দেন।—গীত ৫১:৯; তুলনা করুন, গীত ১০:১১.
যিহোবার জন্য অপেক্ষা করার সময় সুখী
যিহোবার কাছ থেকে আসা শাসন যেভাবে আমাদের উপকৃত করে, সেটাকে অনেকটা ফল যেভাবে পরিপক্ব হতে থাকে, সেটার সঙ্গে তুলনা করা যায়। ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা শাসন সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “যাহাদের অভ্যাস জন্মিয়াছে, তাহা পরে তাহাদিগকে ধার্ম্মিকতার শান্তিযুক্ত ফল প্রদান করে।” (ইব্রীয় ১২:১১) ঠিক যেমন ফল পাকার জন্য সময়ের প্রয়োজন, তেমনই ঈশ্বরের জোগানো প্রশিক্ষণে সাড়া দিয়ে আমাদের মনোভাব পরিবর্তনের জন্যও সময়ের প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের কোনো অশোভন আচরণের জন্য যদি আমরা মণ্ডলীতে কিছু বিশেষ সুযোগ হারাই, তা হলে ঈশ্বরের জন্য অপেক্ষা করার মনোভাব আমাদেরকে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়া ও হাল ছেড়ে দেওয়া থেকে প্রতিরোধ করবে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে দায়ূদের অনুপ্রাণিত কথাগুলো উৎসাহজনক: “[ঈশ্বরের] ক্রোধ নিমেষমাত্র থাকে, তাঁহার অনুগ্রহেতেই জীবন; সন্ধ্যাকালে রোদন অতিথিরূপে আইসে, কিন্তু প্রাতঃকালে আনন্দ উপস্থিত।” (গীতসংহিতা ৩০:৫) আমরা যদি অপেক্ষা করার মনোভাব গড়ে তুলি এবং ঈশ্বরের বাক্য ও সংগঠন থেকে পাওয়া পরামর্শ প্রয়োগ করি, তা হলে আমাদের জন্য “আনন্দ উপস্থিত” হবে।
প্রকৃত অনুতপ্ত হওয়ার অর্থ কী?
১৮ একজন সমাজচ্যুত ব্যক্তি যদি নিজের ভুলের জন্য প্রকৃত অনুতপ্ত হন, তা হলে তিনি প্রতিটা সভায় যোগ দেবেন। তিনি প্রাচীনদের দেওয়া পরামর্শ কাজে লাগিয়ে প্রার্থনা করবেন এবং বাইবেল অধ্যয়ন করবেন। তিনি এমন প্রতিটা বিষয় এড়িয়ে চলবেন, যেগুলোর কারণে তিনি আবারও পাপ করে ফেলতে পারেন। তিনি যদি যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক পুনরায় গড়ে তোলার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করেন, তা হলে যিহোবা তাকে ক্ষমা করবেন এবং প্রাচীনেরা তাকে পুনরায় মণ্ডলীর অংশ হয়ে উঠতে সাহায্য করবেন। এটা ঠিক যে, পাপ করেছে এমন ব্যক্তিদের পরিস্থিতি সবসময় একরকম হয় না। তাই, প্রাচীনেরা প্রতিটা ক্ষেত্র মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা করেন আর এই বিষয়টা লক্ষ রাখেন, তারা যেন কঠোরভাবে বিচার না করেন।
অমূল্য রত্ন
প্রহরীদুর্গ ০৬ ৫/১৫ ১৯ অনু. ১৩
গীতসংহিতা বইয়ের প্রথম বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো
৩১:২৩—কীভাবে একজন গর্বিত ব্যক্তি অনেক প্রতিফল পান? একজন ধার্মিক ব্যক্তি যখন অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল করেন, তখন যিহোবার কাছ থেকে শাসনের আকারে প্রতিফল পান। কিন্তু একজন গর্বিত ব্যক্তি তার মন্দ পথ থেকে ফিরে না আসায়, প্রতিফল হিসেবে তিনি প্রচুর শাস্তি পেয়ে থাকেন।—হিতোপদেশ ১১:৩১; ১ পিতর ৪:১৮.
এপ্রিল ২২-২৮
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | গীতসংহিতা ৩২-৩৩
কেন আমাদের পাপ স্বীকার করা উচিত?
যিহোবার করুণা আমাদের হতাশা থেকে রক্ষা করে
৭ যদি আমরা ঈশ্বরের নিয়মের বিরুদ্ধে গুরুতর পাপ করি তাহলে, এমনকি যিহোবার কাছে পাপস্বীকার করাও কঠিন বলে মনে হতে পারে। এইরকম পরিস্থিতিতে কী হতে পারে? গীতসংহিতা ৩২-এ দায়ূদ স্বীকার করেছিলেন: “আমি যখন [পাপস্বীকার করার বদলে] চুপ করিয়াছিলাম, আমার অস্থি সকল ক্ষয় পাইতেছিল, কারণ আমি সমস্ত দিন আর্ত্তনাদ করিতেছিলাম। কারণ দিবারাত্র আমার উপরে তোমার [যিহোবার] হস্ত ভারী ছিল, আমার সরসতা গ্রীষ্মকালের শুষ্কতায় পরিণত হইয়াছিল।” (৩২:৩, ৪ পদ) তার পাপ ঢাকার এবং অপরাধী বিবেককে শান্ত করার চেষ্টায় পথভ্রষ্ট দায়ূদ শান্ত হয়ে পড়ছিলেন। মনের উদ্বেগের জন্য তার উদ্যম এত কমে গিয়েছিল যে তিনি জীবনদায়ী আর্দ্রতা-বিহীন একটি ক্ষরা-পীড়িত গাছের মত হয়ে পড়েছিলেন। হয়ত তিনি মানসিক এবং শারীরিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। যাইহোক, তিনি আনন্দ হারিয়ে ফেলেছিলেন। যদি আমাদের মধ্যে কেউ নিজেকে একই অবস্থায় পাই, তাহলে আমাদের কী করা উচিৎ?
যিহোবার নিকটবর্তী হোন ২৬২ অনু. ৮
একজন ঈশ্বর যিনি “ক্ষমা করার জন্য তৈরি”
৮ অনুতপ্ত দায়ূদ বলেছিলেন: “আমি তোমার কাছে আমার পাপ স্বীকার করিলাম, অপরাধ আর গোপন করিলাম না, . . . তাহাতে তুমি আমার পাপের অপরাধ মোচন করিলে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (গীতসংহিতা ৩২:৫) “মোচন করিলে” অভিব্যক্তিটি যে-ইব্রীয় শব্দ থেকে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটার মূল অর্থ “উঠিয়ে নেওয়া” বা “বহন করা।” এখানে এটার ব্যবহার “অপরাধবোধ, পাপ, অন্যায়” সরিয়ে ফেলার অর্থকে বোঝায়। অতএব, যিহোবা মূলত দায়ূদের পাপগুলো উঠিয়ে নিয়েছিলেন ও সেগুলো বহন করে দূরে সরিয়ে ফেলেছিলেন। নিঃসন্দেহে এটা দায়ূদ যে-অপরাধবোধ বয়ে বেড়াচ্ছিলেন, সেটাকে হালকা করেছিল। (গীতসংহিতা ৩২:৩) আমাদেরও ঈশ্বরের ওপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে, যিনি সেই সমস্ত ব্যক্তির পাপগুলো বহন করেন, যারা যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ওপর বিশ্বাসের ভিত্তিতে তাঁর ক্ষমা পাওয়ার চেষ্টা করে।—মথি ২০:২৮.
পাপ স্বীকার আরোগ্যের দিকে নিয়ে যায়
অপরাধ স্বীকার করার পর, দায়ূদ নিজেকে আর অযোগ্য মনে করেননি। পাপগুলো স্বীকার করার বিষয়ে তিনি যে গীতগুলো লিখেছিলেন, সেগুলো দেখায় যে তিনি স্বস্তি পেয়েছিলেন এবং ঈশ্বরকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করার জন্য দৃঢ় সংকল্প নিয়েছিলেন। উদাহরণ হিসেবে ৩২ গীতের কথাই ধরুন। ১ পদে আমরা পড়ি: “ধন্য সেই, যাহার অধর্ম্ম ক্ষমা হইয়াছে, যাহার পাপ আচ্ছাদিত হইয়াছে।” পাপ যত গুরুতরই হোক না কেন, একজন ব্যক্তি যদি আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হন, তাহলে ভাল ফল আসতে পারে। এই আন্তরিকতা দেখানোর একটা উপায় হল, দায়ূদের মতো নিজের পাপকে পুরোপুরি স্বীকার করা। (২ শমূয়েল ১২:১৩) তিনি নিজেকে যিহোবার সামনে নির্দোষ বলে দেখাতে চাননি বা অন্যদের ওপর দোষ চাপিয়ে দেননি। ৫ পদ বলে: “আমি তোমার কাছে আমার পাপ স্বীকার করিলাম, আমার অপরাধ আর গোপন করিলাম না, আমি কহিলাম, ‘আমি সদাপ্রভুর কাছে নিজ অধর্ম্ম স্বীকার করিব,’ তাহাতে তুমি আমার পাপের অপরাধ মোচন করিলে।” প্রকৃত অনুতাপ স্বস্তি এনে দেয়, তাই একজন ব্যক্তিকে তার আগের ভুলগুলো নিয়ে তার বিবেককে আর কষ্ট দেওয়ার দরকার নেই।
অমূল্য রত্ন
গীতসংহিতা বইয়ের প্রথম বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো
৩৩:৬—যিহোবার মুখের ‘শ্বাস’ কী? এই শ্বাস হচ্ছে ঈশ্বরের সক্রিয় শক্তি বা পবিত্র আত্মা, যা তিনি আক্ষরিক আকাশমণ্ডল সৃষ্টির ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছিলেন। (আদিপুস্তক ১:১, ২, NW) এটাকে তার মুখের শ্বাস বলা হয়েছে কারণ শক্তিশালী শ্বাসের মতো, এটাকে দূরে থাকা বিষয়গুলো সম্পাদন করার জন্য পাঠানো যেতে পারে।
এপ্রিল ২৯–মে ৫
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | গীতসংহিতা ৩৪-৩৫
‘সর্ব্বসময়ে সদাপ্রভুকে ধন্যবাদ’ দিন
আসুন আমরা একসঙ্গে যিহোবার নামকে উচ্চীকৃত করি
১১ “আমি সর্ব্বসময়ে সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] ধন্যবাদ করিব; তাঁহার প্রশংসা নিরন্তর আমার মুখে থাকিবে।” (গীতসংহিতা ৩৪:১) বহিষ্কৃত ব্যক্তি হিসেবে জীবনযাপন করায় দায়ূদকে নিশ্চয়ই বস্তুগত বিষয় নিয়ে অনেক চিন্তা করতে হয়েছিল কিন্তু এই কথাগুলো যেমন দেখায় যে, তার দৈনন্দিন চিন্তাগুলো যিহোবাকে প্রশংসা করার বিষয়ে তার দৃঢ়সংকল্পকে ম্লান করে দেয়নি। আমরা যখন দুঃখকষ্ট ভোগ করি, তখন এটা আমাদের জন্য কতই না উত্তম এক উদাহরণ! আমরা স্কুলে, কর্মক্ষেত্রে, সহখ্রিস্টানদের সঙ্গে অথবা জনসাধারণের পরিচর্যায়, যেখানেই থাকি না কেন, আমাদের প্রধান আকাঙ্ক্ষা হওয়া উচিত যিহোবার প্রশংসা করা। তা করার যে-অসংখ্য কারণ আমাদের রয়েছে, সেগুলো নিয়ে একটু চিন্তা করুন! উদাহরণস্বরূপ, যিহোবার বিস্ময়কর সৃষ্টি কাজের মধ্যে আমরা যাকিছু আবিষ্কার ও উপভোগ করতে পারি, তার কোনো শেষ নেই। আর যিহোবা তাঁর সংগঠনের পার্থিব অংশের মাধ্যমে যা সম্পাদন করেছেন, তা বিবেচনা করে দেখুন! যদিও তারা অসিদ্ধ কিন্তু আধুনিক সময়ে যিহোবা বিশ্বস্ত মানুষদের প্রবলভাবে ব্যবহার করেছেন। ঈশ্বরের কাজকে কীভাবে এমন ব্যক্তিদের কাজের সঙ্গে তুলনা করা যায়, যারা জগতের দ্বারা অত্যন্ত প্রশংসিত হয়ে থাকে? আপনি কি দায়ূদের সঙ্গে একমত নন, যিনি এও লিখেছিলেন: “হে প্রভু [“যিহোবা,” NW], দেবগণের মধ্যে তোমার তুল্য কেহই নাই, তোমার কর্ম্ম সকলের তুল্য কিছুই নাই।”—গীতসংহিতা ৮৬:৮.
প্রহরীদুর্গ ০৭ ৩/১ ২২-২৩ অনু. ১৩
আসুন আমরা একসঙ্গে যিহোবার নামকে উচ্চীকৃত করি
১৩ “আমার প্রাণ সদাপ্রভুরই [“যিহোবার,” NW] শ্লাঘা করিবে; তাহা শুনিয়া নম্রগণ আনন্দিত হইবে।” (গীতসংহিতা ৩৪:২) দায়ূদ এখানে ব্যক্তিগত কোনো সাফল্যের জন্য শ্লাঘা বা দম্ভ করেননি। উদাহরণস্বরূপ, গাতের রাজাকে তিনি যেভাবে বিভ্রান্ত করেছিলেন, সেটার জন্য তিনি বড়াই করেননি। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি যখন গাতে ছিলেন, তখন যিহোবাই তাকে রক্ষা করেছিলেন আর যিহোবার সাহায্যেই তিনি রেহাই পেয়েছিলেন। (হিতোপদেশ ২১:১) তাই, দায়ূদ নিজেকে নিয়ে নয় বরং যিহোবাতে দম্ভ করেছিলেন। এই কারণে নম্র বা মৃদুশীল ব্যক্তিরা যিহোবার নিকটবর্তী হয়েছিল। একইভাবে যিশুও যিহোবার নামকে মহিমান্বিত করেছিলেন আর এটা নম্র, শিক্ষা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক এমন ব্যক্তিদের তাঁর নিকটবর্তী করেছিল। আজকে, সমস্ত জাতি থেকে আসা মৃদুশীল ব্যক্তিরা অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের আন্তর্জাতিক মণ্ডলীর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে, যে-মণ্ডলীর মস্তক হলেন যিশু। (কলসীয় ১:১৮) এই ধরনের মৃদুশীল ব্যক্তিদের হৃদয় অনুপ্রাণিত হয়, যখন তারা ঈশ্বরের নামকে তাঁর নম্র লোকেদের দ্বারা গৌরবান্বিত হতে শোনে এবং যখন তারা বাইবেলের সেই বার্তা শোনে, যে-বার্তা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা তাদেরকে বুঝতে সাহায্য করে।—যোহন ৬:৪৪; প্রেরিত ১৬:১৪.
প্রহরীদুর্গ ০৭ ৩/১ ২৩-২৪ অনু. ১৫
আসুন আমরা একসঙ্গে যিহোবার নামকে উচ্চীকৃত করি
১৫ “আমি সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] অন্বেষণ করিলাম, তিনি আমাকে উত্তর দিলেন, আমার সকল আশঙ্কা হইতে উদ্ধার করিলেন।” (গীতসংহিতা ৩৪:৪) এই অভিজ্ঞতা দায়ূদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই, তিনি আরও বলেছিলেন: “এই দুঃখী ডাকিল, সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] শ্রবণ করিলেন, ইহাকে সকল সঙ্কট হইতে নিস্তার করিলেন।” (গীতসংহিতা ৩৪:৬) সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে মেলামেশা করার সময়, কীভাবে যিহোবা আমাদের কঠিন পরিস্থিতিগুলো সহ্য করতে সাহায্য করেছেন, সেই সম্বন্ধে গঠনমূলক অভিজ্ঞতাগুলো বলার অনেক সুযোগ আমাদের রয়েছে। এটা আমাদের সহবিশ্বাসীদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে, ঠিক যেমন দায়ূদের অভিব্যক্তিগুলো তার সমর্থনকারীদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিল। দায়ূদের ক্ষেত্রে তার সঙ্গীরা “[যিহোবার] প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া দীপ্যমান হইল; তাহাদের মুখ কখনও বিবর্ণ হইবে না [“তাদের মুখে লজ্জার ভাব দেখা যায় না,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন]।” (গীতসংহিতা ৩৪:৫) যদিও তারা রাজা শৌলের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল, তবুও তারা লজ্জাবোধ করেনি। তাদের এই আস্থা ছিল যে, দায়ূদকে ঈশ্বর সমর্থন করছিলেন এবং এতে তাদের মুখ দীপ্যমান ছিল। একইভাবে, নতুন আগ্রহী ব্যক্তিরা ও সেইসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সত্য খ্রিস্টান হিসেবে রয়েছে এমন ব্যক্তিরা সমর্থনের জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করে। ব্যক্তিগতভাবে তারা তাঁর সাহায্য সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করে বলে তাদের দীপ্যমান মুখ বিশ্বস্ত থাকার বিষয়ে তাদের দৃঢ়সংকল্পকে প্রতিফলিত করে।
অমূল্য রত্ন
গীতসংহিতা বইয়ের প্রথম বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো
৩৫:১৯—দায়ূদকে যারা দ্বেষ করে তাদের “ভ্রূকুটি করিতে [“চোখ টিপতে,” NW]” না দেওয়ার বিষয়ে তার অনুরোধের অর্থ কী? চোখ টেপা ইঙ্গিত করে যে, দায়ূদের শত্রুরা তার বিরুদ্ধে করা তাদের বিদ্বেষপূর্ণ ষড়যন্ত্র সফল হওয়ার ফলে আনন্দ করছিল। দায়ূদ অনুরোধ করেছিলেন যেন এমনটা না ঘটে।