তারা ‘মেষশাবকের অনুগামী হয়’
“যে কোন স্থানে মেষশাবক গমন করেন, সেই স্থানে ইহারা তাঁহার অনুগামী হয়।”—প্রকা. ১৪:৪.
১. যিশুর প্রকৃত শিষ্যরা তাঁকে অনুসরণ করার বিষয়ে কেমন বোধ করেছিল?
তাঁর পরিচর্যার প্রায় আড়াই বছরের সময়, যিশু ‘কফরনাহূমে সমাজ-গৃহে উপদেশ দিতেছিলেন।’ তাঁর কথাগুলোকে কঠিন মনে করে “তাঁহার অনেক শিষ্য পিছাইয়া পড়িল, তাঁহার সঙ্গে আর যাতায়াত করিল না।” যিশু যখন তাঁর ১২ জন প্রেরিতকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তারাও চলে যেতে চায় কি না, তখন শিমোন পিতর উত্তর দিয়েছিলেন: “প্রভু কাহার কাছে যাইব? আপনার নিকটে অনন্ত জীবনের কথা আছে; আর আমরা বিশ্বাস করিয়াছি এবং জ্ঞাত হইয়াছি যে, আপনিই ঈশ্বরের সেই পবিত্র ব্যক্তি।” (যোহন ৬:৪৮, ৫৯, ৬০, ৬৬-৬৯) যিশুর প্রকৃত শিষ্যরা তাঁকে অনুসরণ করা পরিত্যাগ করতে অস্বীকার করেছিল। পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত হওয়ার পর, তারা যিশুর নির্দেশনার প্রতি ক্রমাগত বশীভূত থেকেছিল।—প্রেরিত ১৬:৭-১০.
২. (ক) “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” অথবা ‘বিশ্বস্ত গৃহাধ্যক্ষ’ কে? (খ) কীভাবে দাস ‘মেষশাবকের অনুগামী হইবার’ এক চমৎকার নথি গড়ে তুলেছে?
২ আধুনিক সময়ের অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের সম্বন্ধে কী বলা যেতে পারে? যিশু “[তাঁহার] আগমনের এবং যুগান্তের চিহ্ন” সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্বাণীতে, পৃথিবীতে তাঁর আত্মায় অভিষিক্ত অনুসারীদের যৌথগোষ্ঠীকে “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” অথবা ‘বিশ্বস্ত গৃহাধ্যক্ষ’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। (মথি ২৪:৩, ৪৫; লূক ১২:৪২) একটা দল হিসেবে, দাস শ্রেণী ‘যে কোন স্থানে মেষশাবক গমন করেন, সেই স্থানে তাঁহার অনুগামী হইবার’ বা তাঁকে অনুসরণ করার এক চমৎকার নথি গড়ে তুলেছে। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১৪:৪, ৫.) মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্য ‘মহতী বাবিলের’ বিশ্বাস ও অভ্যাসগুলোর দ্বারা নিজেদের কলুষিত না করার মাধ্যমে এর সদস্যরা আধ্যাত্মিক অর্থে অমৈথুন থাকে। (প্রকা. ১৭:৫) “তাহাদের মুখে” মতবাদ সংক্রান্ত কোনো মিথ্যা কথা “পাওয়া যায়” না এবং তারা শয়তানের জগৎ থেকে “নির্দ্দোষ” থাকে। (যোহন ১৫:১৯) ভবিষ্যতে, পৃথিবীতে অবশিষ্ট অভিষিক্ত ব্যক্তিরা স্বর্গে মেষশাবকের ‘পশ্চাৎ যাইবে’ বা তাঁকে অনুসরণ করবে।—যোহন ১৩:৩৬.
৩. কেন আমাদের দাস শ্রেণীর ওপর নির্ভর করা গুরুত্বপূর্ণ?
৩ যিশু বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসকে “নিজ পরিজনের উপরে” অর্থাৎ দাস শ্রেণীর আলাদা আলাদা সদস্যের ওপর নিযুক্ত করেছেন “যেন . . . তাহাদিগকে উপযুক্ত সময়ে খাদ্য দেয়।” এ ছাড়া, তিনি দাসকে “আপন সর্ব্বস্বের” ওপরও অধ্যক্ষ বা নিযুক্ত করেছেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) এই “সর্ব্বস্বের” অন্তর্ভুক্ত ‘আরও মেষের’ “বিস্তর লোক।” (প্রকা. ৭:৯; যোহন ১০:১৬) অভিষিক্ত ব্যক্তিদের এবং ‘আরও মেষের’ আলাদা আলাদা সদস্যের কি সেই দাসের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়, যাকে তাদের ওপর নিযুক্ত করা হয়েছে? দাস শ্রেণী যেকারণে আমাদের নির্ভরতা পাওয়ার যোগ্য, তার অনেক কারণ রয়েছে। দুটো উল্লেখযোগ্য কারণ হল: (১) যিহোবা দাস শ্রেণীর ওপর নির্ভর করেন। (২) যিশুও দাসের ওপর নির্ভর করেন। আসুন আমরা সেই প্রমাণ পরীক্ষা করে দেখি যে, যিহোবা ঈশ্বর ও যিশু খ্রিস্ট উভয়েরই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে।
যিহোবা দাসের ওপর নির্ভর করেন
৪. কেন আমরা বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের দ্বারা পরিবেশিত আধ্যাত্মিক খাদ্যের ওপর আস্থা রাখতে পারি?
৪ কী বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের পক্ষে সময়োপযোগী এবং পুষ্টিকর আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগানো সম্ভবপর করেছে, তা বিবেচনা করুন। “আমি তোমাকে বুদ্ধি দিব, ও তোমার গন্তব্য পথ দেখাইব,” যিহোবা বলেন। তিনি আরও বলেন: “তোমার উপরে দৃষ্টি রাখিয়া তোমাকে পরামর্শ দিব।” (গীত. ৩২:৮) হ্যাঁ, দাসকে যিহোবা নির্দেশনা জোগান। তাই, দাসের কাছ থেকে আমরা যে-শাস্ত্রীয় বুদ্ধি বা অন্তর্দৃষ্টি, বোধগম্যতা ও নির্দেশনা পাই, তার প্রতি আমরা পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি।
৫. কী দেখায় যে, ঈশ্বরের আত্মা দাস শ্রেণীকে শক্তিশালী করছে?
৫ এ ছাড়া, যিহোবা দাস শ্রেণীকে পবিত্র আত্মা দিয়েও আশীর্বাদ করেন। যদিও যিহোবার আত্মা অদৃশ্য কিন্তু যাদের ওপর এটি কার্যকারী হয়, তাদের মধ্যে এটি যা উৎপাদন করে, সেগুলো অদৃশ্য নয়। যিহোবা ঈশ্বর, তাঁর পুত্র এবং রাজ্য সম্বন্ধে বিশ্বব্যাপী সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস যা সম্পাদন করতে সমর্থ হয়েছে, তা চিন্তা করুন। যিহোবার উপাসকরা দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩০টারও বেশি জায়গায় রাজ্যের বার্তা সক্রিয়ভাবে ঘোষণা করছে। এটা কি অকাট্য প্রমাণ দেয় না যে, ঈশ্বরের আত্মা দাসকে শক্তি প্রদান করছে? (পড়ুন, প্রেরিত ১:৮.) পৃথিবীব্যাপী যিহোবার লোকেদের জন্য সময়োপযোগী আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগাতে গিয়ে দাস শ্রেণীকে অবশ্যই অতীব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করতে হয়। সেগুলো গ্রহণ ও কার্যকর করতে গিয়ে দাস প্রেম, মৃদুতা এবং আত্মার ফলের অন্যান্য দিক প্রদর্শন করে।—গালা. ৫:২২, ২৩.
৬, ৭. বিশ্বস্ত দাসের ওপর যিহোবা কতখানি নির্ভর করেন?
৬ বিশ্বস্ত দাসের ওপর যিহোবা কতখানি নির্ভর করেন, তা বোঝার জন্য এর সদস্যদের কাছে তিনি কী প্রতিজ্ঞা করেছেন, তা চিন্তা করুন। “তূরী বাজিবে,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “তাহাতে মৃতেরা অক্ষয় হইয়া উত্থাপিত হইবে, এবং আমরা রূপান্তরীকৃত হইব। কারণ এই ক্ষয়ণীয়কে অক্ষয়তা পরিধান করিতে হইবে, এবং এই মর্ত্ত্যকে অমরতা পরিধান করিতে হইবে।” (১ করি. ১৫:৫২, ৫৩) খ্রিস্টের অভিষিক্ত অনুসারীরা, যারা বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের সেবা করে এবং ক্ষয়ণীয় মানবদেহ নিয়ে মারা যায়, তারা অনন্তজীবন রয়েছে এমন আত্মিক প্রাণীদের চেয়ে আরও বেশি কিছু হিসেবে পুনরুত্থিত হয়। অভিষিক্ত ব্যক্তিদেরকে অমরতা—অন্তহীন ও অবিনশ্বর জীবন—প্রদান করা হয়েছে। অধিকন্তু, ক্ষয়ণীয় নয় এবং স্পষ্টতই স্বয়ংসম্পূর্ণ দেহ প্রদান করায় তারা অক্ষয়তা লাভ করে। প্রকাশিত বাক্য ৪:৪ পদ এই পুনরুত্থিত ব্যক্তিদেরকে এমনভাবে বর্ণনা করে যে, তারা মস্তকে সুবর্ণ মুকুট পরিহিত অবস্থায় সিংহাসনে বসে আছে। অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের জন্য রাজকীয় মহিমা অপেক্ষা করছে। কিন্তু, আরও প্রমাণ রয়েছে।
৭ “মেষশাবকের বিবাহ উপস্থিত হইল, এবং তাঁহার ভার্য্যা আপনাকে প্রস্তুত করিল। আর ইহাকে এই বর দত্ত হইল যে, সে উজ্জ্বল ও শুচি মসীনা-বস্ত্রে আপনাকে সজ্জিত করে, কারণ সেই মসীনা-বস্ত্র পবিত্রগণের ধর্ম্মাচরণ,” প্রকাশিত বাক্য ১৯:৭, ৮ পদ বলে। যিহোবা তাঁর পুত্রের ভাবী কনে হওয়ার জন্য অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের বেছে নিয়েছেন। অক্ষয়তা, অমরতা, রাজকীয় মর্যাদা, “মেষশাবকের বিবাহ”—এগুলো কী চমৎকার উপহার! এগুলো হচ্ছে সেই অভিষিক্ত ব্যক্তিদের ওপর ঈশ্বরের আস্থার রোমাঞ্চকর প্রমাণ, যারা ‘যে কোন স্থানে মেষশাবক গমন করেন, সেই স্থানে তাঁহার অনুগামী হয়।’
যিশু দাসের ওপর নির্ভর করেন
৮. কীভাবে যিশু দেখান যে, তাঁর আত্মায় অভিষিক্ত অনুসারীদের প্রতি তাঁর আস্থা রয়েছে?
৮ যিশু যে তাঁর আত্মায় অভিষিক্ত অনুসারীদের ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করেন, তার কোন প্রমাণ রয়েছে? পৃথিবীতে তাঁর জীবনের শেষরাতে যিশু তাঁর ১১ জন বিশ্বস্ত প্রেরিতের কাছে একটা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। “তোমরাই আমার সকল পরীক্ষার মধ্যে আমার সঙ্গে সঙ্গে বরাবর রহিয়াছ,” তিনি তাদেরকে বলেছিলেন, “আর আমার পিতা যেমন আমার জন্য নিরূপণ করিয়াছেন, আমিও তেমনি তোমাদের জন্য এক রাজ্য নিরূপণ করিতেছি [“আমার পিতা যেমন আমার সঙ্গে এক রাজ্যের জন্য চুক্তি করেছেন, তেমনই আমিও তোমাদের সঙ্গে একটা চুক্তি করছি,” NW], যেন তোমরা আমার রাজ্যে আমার মেজে ভোজন পান কর; আর তোমরা সিংহাসনে বসিয়া ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশের বিচার করিবে।” (লূক ২২:২৮-৩০) সেই ১১ জনের সঙ্গে সেই সময়ে যিশু যে-চুক্তি করেছিলেন, তা ১,৪৪,০০০ জন সমস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টানকে অন্তর্ভুক্ত করবে। (লূক ১২:৩২; প্রকা. ৫:৯, ১০; ১৪:১) যিশু যদি তাদের ওপর নির্ভরই না করতেন, তাহলে তিনি কি এমন একটা চুক্তি করতেন, যেটার অর্থ হল তারা তাঁর সঙ্গে শাসন করবে?
৯. “[খ্রিস্টের] সর্ব্বস্বের” অন্তর্ভুক্ত কী?
৯ অধিকন্তু, যিশু খ্রিস্ট বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসকে “আপন সর্ব্বস্বের”—পৃথিবীতে রাজ্যের সমস্ত বিষয়ের—ওপর নিযুক্ত করেছেন। (মথি ২৪:৪৭) এই সর্বস্বের অন্তর্ভুক্ত হল, যিহোবার সাক্ষিদের বিশ্ব প্রধান কার্যালয়ের, বিভিন্ন দেশে শাখা অফিসগুলোর এবং পৃথিবীব্যাপী সম্মেলন হল ও কিংডম হলগুলোর সুযোগ-সুবিধাগুলো। এ ছাড়া, এর অন্তর্ভুক্ত হল রাজ্যের প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজ। কেউ কি এমন কাউকে নিযুক্ত করবেন, যার ওপর তিনি তার মূল্যবান বিষয়গুলো তত্ত্বাবধান করার ও ব্যবহার করার জন্য নির্ভর করতে পারেন না?
১০. কী দেখায় যে, যিশু খ্রিস্ট তাঁর অভিষিক্ত অনুসারীদের সঙ্গে আছেন?
১০ তিনি স্বর্গারোহণের কিছু সময় আগে, পুনরুত্থিত যিশু তাঁর বিশ্বস্ত শিষ্যদের দেখা দিয়েছিলেন এবং এই বলে তাদের কাছে একটা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “দেখ, আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।” (মথি ২৮:২০) এই প্রতিজ্ঞা কি নির্ভরযোগ্য প্রমাণিত হয়েছে? বিগত ১৫ বছরে, পৃথিবীব্যাপী যিহোবার সাক্ষিদের মণ্ডলীগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৭০,০০০ থেকে ১,০০,০০০রও বেশি হয়েছে—৪০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি। আর নতুন শিষ্যদের যুক্ত হওয়া সম্বন্ধে কী বলা যায়? বিগত ১৫ বছরে প্রায় ৪৫ লক্ষ শিষ্য বাপ্তাইজিত হয়েছে—দিনে গড়ে ৮০০ জনেরও বেশি। এই লক্ষণীয় বৃদ্ধি স্পষ্ট প্রমাণ দেয় যে, খ্রিস্ট তাঁর অভিষিক্ত অনুসারীদের তাদের মণ্ডলীর সভাগুলোতে নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং তাদের শিষ্য তৈরির কাজে সমর্থন জোগাচ্ছেন।
দাস বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান
১১, ১২. কীভাবে দাস নিজেকে বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান প্রমাণ করেছে?
১১ যেহেতু যিহোবা ঈশ্বর এবং যিশু খ্রিস্ট বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে, তাই আমাদেরও কি সেটাই করা উচিত নয়? সবচেয়ে বড় কথা হল, দাস তার ওপর নিযুক্ত কাজের প্রতি নিজেকে বিশ্বস্ত প্রমাণিত করেছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রহরীদুর্গ পত্রিকা প্রায় ১৩০ বছর ধরে প্রকাশিত হয়ে আসছে। যিহোবার সাক্ষিদের সভা ও সম্মেলনগুলো ক্রমাগত আমাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে গড়ে তুলছে।
১২ এ ছাড়া, বিশ্বস্ত দাস এই অর্থে বুদ্ধিমান যে, এই দাস, কখনো উদ্ধতভাবে কাজ করেন না, যিহোবার আগে চলে যান না অথবা কোনো একটা বিষয়ে যখন ঈশ্বরের নির্দেশনা স্পষ্ট হয়, তখন সেটার বাধ্য হতে ব্যর্থ হন না। উদাহরণস্বরূপ, যদিও মিথ্যা ধর্মীয় নেতারা জগতের লোকেদের স্বার্থপর ও ভক্তিহীন আচরণকে স্বাভাবিক বিষয় বলে মৌনভাবে অনুমোদন করে অথবা খোলাখুলিভাবে প্রশ্রয় দেয়, কিন্তু দাস শয়তানের দুষ্ট বিধিব্যবস্থার ফাঁদগুলোর বিরুদ্ধে সতর্কবাণী জুগিয়ে থাকে। দাস বিজ্ঞ ও সময়োপযোগী সতর্কবাণী জোগাতে সমর্থ হয় কারণ যিহোবা ঈশ্বর এবং যিশু খ্রিস্ট দাসকে আশীর্বাদ করে। তাই, দাস আমাদের সম্পূর্ণ নির্ভরতা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু, কীভাবে আমরা প্রদর্শন করতে পারি যে, আমরা বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের ওপর নির্ভর করি?
অভিষিক্ত ব্যক্তিরা যখন মেষশাবককে অনুসরণ করে, তখন তাদের ‘সহিত যান’
১৩. সখরিয়ের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, কীভাবে বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের ওপর নির্ভরতা প্রদর্শন করা সম্ভব?
১৩ বাইবেলের সখরিয় বই “দশ দশ পুরুষ” সম্বন্ধে বলে, যারা “এক এক যিহূদী পুরুষের” কাছে যায় এবং বলে: “আমরা তোমাদের সহিত যাইব।” (পড়ুন, সখরিয় ৮:২৩.) যেহেতু ‘এক এক যিহূদী পুরুষকে’ “তোমাদের” বলা হয়েছে, তাই তিনি হলেন এক যৌথ ব্যক্তি। আমাদের সময়ে তিনি আত্মায় অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের অবশিষ্টাংশকে—‘ঈশ্বরের ইস্রায়েলের’ অংশকে—চিত্রিত করেন। (গালা. ৬:১৬) “জাতিগণের সর্ব্ব ভাষাবাদী দশ দশ পুরুষ” আরও মেষের বিস্তর লোককে চিত্রিত করে। ঠিক যেমন অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা, খ্রিস্ট যেকোনো স্থানে গমন করেন, সেই স্থানে তাঁকে অনুসরণ করে, তেমনই বিস্তর লোক বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের ‘সহিত যায়।’ বিস্তর লোকের সদস্যদের ‘স্বর্গীয় আহ্বানের অংশিগণের’ সহযোগী হিসেবে নিজেদের শনাক্তিকৃত করতে কখনো লজ্জিত হওয়া উচিত নয়। (ইব্রীয় ৩:১) যিশু অভিষিক্ত ব্যক্তিদেরকে “ভ্রাতা” বলতে লজ্জিত নন।—ইব্রীয় ২:১১.
১৪. কীভাবে খ্রিস্টের ভাইদের অনুগত সমর্থন দেওয়া যেতে পারে?
১৪ যিশু খ্রিস্ট তাঁর ভাইদেরকে দেওয়া অনুগত সমর্থনকে তাঁর প্রতিই করা হচ্ছে বলে মনে করেন। (পড়ুন, মথি ২৫:৪০.) তাহলে, যাদের পার্থিব আশা রয়েছে, তারা কীভাবে খ্রিস্টের আত্মায় অভিষিক্ত ভাইদের সমর্থন করতে পারে? মূলত, তাদেরকে রাজ্যের প্রচার কাজে সাহায্য করার মাধ্যমে। (মথি ২৪:১৪; যোহন ১৪:১২) যদিও দশকের পর দশক ধরে পৃথিবীতে অভিষিক্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে কিন্তু আরও মেষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যাদের পার্থিব আশা রয়েছে, তারা যখন সাক্ষ্য দেওয়ার কাজে অংশ নেয়, সম্ভব হলে পূর্ণসময়ের সুসমাচার প্রচারক হিসেবে সেবা করে, তখন তারা আত্মায় অভিষিক্ত ব্যক্তিদের শিষ্য তৈরির কার্যভার পরিপূর্ণ করতে সমর্থন করে। (মথি ২৮:১৯, ২০) বিভিন্ন উপায়ে আর্থিক দান দেওয়ার দ্বারা এই কাজকে সমর্থন করার সুযোগগুলোকেও উপেক্ষা করা যায় না।
১৫. দাসের কাছ থেকে সময়োপযোগী আধ্যাত্মিক খাদ্যের এবং তার দ্বারা গৃহীত সাংগঠনিক সিদ্ধান্তগুলোর প্রতি আলাদা আলাদা খ্রিস্টানদের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত?
১৫ আলাদা আলাদা খ্রিস্টান হিসেবে, আমরা সেই সময়োপযোগী আধ্যাত্মিক খাদ্যকে কীভাবে দেখি, যা বিশ্বস্ত দাস বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাদি ও খ্রিস্টীয় সমাবেশগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করছে? আমরা কি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তা গ্রহণ করি এবং যা শিখি তা সানন্দে কাজে লাগাই? দাসের দ্বারা গৃহীত সাংগঠনিক সিদ্ধান্তগুলোর প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়া কেমন? জোগানো নির্দেশনার প্রতি স্বেচ্ছায় দেখানো আমাদের বাধ্যতা, যিহোবার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের বিশ্বাসের প্রমাণ দেয়।—যাকোব ৩:১৭.
১৬. কেন সমস্ত খ্রিস্টানের খ্রিস্টের ভাইদের কথা শোনা উচিত?
১৬ “আমার মেষেরা আমার রব শুনে,” যিশু বলেছিলেন, “আর আমি তাহাদিগকে জানি, এবং তাহারা আমার পশ্চাদ্গমন করে।” (যোহন ১০:২৭) অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের বেলায় তা সত্য। সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে কী বলা যায়, যারা তাদের ‘সহিত যায়’? এই ব্যক্তিদের অবশ্যই যিশুর কথা শুনতে হবে। এ ছাড়া, তাদেরকে তাঁর ভাইদের কথাও শুনতে হবে। কারণ, ঈশ্বরের লোকেদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের যত্ন নেওয়ার প্রধান দায়িত্ব আস্থা সহকারে তাদের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। খ্রিস্টের ভাইদের রব শোনার সঙ্গে কী জড়িত?
১৭. দাস শ্রেণীর কথা শোনার সঙ্গে কী জড়িত?
১৭ বর্তমানে, পরিচালকগোষ্ঠী বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসকে প্রতিনিধিত্ব করে, যারা পৃথিবীব্যাপী রাজ্যের প্রচার কাজে নেতৃত্ব দেয় এবং সেই কাজকে সমন্বয় করে। পরিচালকগোষ্ঠীর সদস্যরা হল অভিজ্ঞ, আত্মায় অভিষিক্ত প্রাচীন। বিশেষভাবে তাদেরকে আমাদের ‘নেতা’ বলে বর্ণনা করা যেতে পারে। (ইব্রীয় ১৩:৭) পৃথিবীব্যাপী ১,০০,০০০-রও বেশি মণ্ডলীর প্রায় ৭০,০০,০০০ রাজ্য ঘোষণাকারীদের যত্ন নিতে গিয়ে এই অভিষিক্ত অধ্যক্ষদের ‘প্রভুর কার্য্যে উপচিয়া পড়িতে’ হয়। (১ করি. ১৫:৫৮) দাস শ্রেণীর কথা শোনার অর্থ হল এর পরিচালকগোষ্ঠীকে আমাদের পূর্ণসহযোগিতা প্রদান করা।
যারা দাসের কথা শোনে, তারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত
১৮, ১৯. (ক) যারা বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের কথা শোনে, তারা কীভাবে আশীর্বাদপ্রাপ্ত? (খ) আমাদের দৃঢ়সংকল্প কী হওয়া উচিত?
১৮ দাসের নিযুক্ত হওয়ার সময় থেকে, বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস ‘অনেককে ধার্ম্মিকতার প্রতি ফিরাইয়াছে।’ (দানি. ১২:৩) এদের মধ্যে রয়েছে সেই ব্যক্তিরা, যাদের বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থার ধ্বংস থেকে রক্ষা পাওয়ার আশা রয়েছে। ঈশ্বরের সামনে এই ধার্মিক অবস্থান কী এক আশীর্বাদ!
১৯ নিকট ভবিষ্যতে, যখন ‘[১,৪৪,০০০ জনকে নিয়ে গঠিত] পবিত্র নগরী, নূতন যিরূশালেম, স্বর্গ হইতে ঈশ্বরের নিকট হইতে, নামিয়া আইসে; সে আপন বরের নিমিত্ত বিভূষিতা কন্যার ন্যায় প্রস্তুত হয়,’ তখন যারা দাসের রব শুনেছে, তারা কোন অভিজ্ঞতা লাভ করবে? “ঈশ্বর আপনি তাহাদের সঙ্গে থাকিবেন,” বাইবেল বলে। “আর তিনি তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।” (প্রকা. ২১:২-৪) তাই যেকোনোভাবেই হোক, আসুন আমরা খ্রিস্ট ও তাঁর নির্ভরযোগ্য আত্মায় অভিষিক্ত ভাইদের কথা শুনি।
আপনি কী শিখেছেন?
• কোন প্রমাণ রয়েছে যে, যিহোবা বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের ওপর নির্ভর করেন?
• কী দেখায় যে, যিশু খ্রিস্ট সম্পূর্ণরূপে দাস শ্রেণীর ওপর নির্ভর করেন?
• কেন বিশ্বস্ত গৃহাধ্যক্ষ আমাদের নির্ভরতা পাওয়ার যোগ্য?
• কীভাবে আমরা প্রদর্শন করি যে, আমরা দাসের ওপর নির্ভর করি?
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি কি জানেন, তাঁর পুত্রের ভাবী কনে হওয়ার জন্য যিহোবা কাকে বেছে নিয়েছেন?
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
যিশু খ্রিস্ট বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের ওপর আস্থা সহকারে তাঁর “সর্ব্বস্বের” ভার দিয়েছেন
[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমরা যখন সাক্ষ্য দেওয়ার কাজে অংশ নিই, তখন আত্মায় অভিষিক্ত ব্যক্তিদের সমর্থন করি