অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৫
যিশুর বলা শেষ কথাগুলো থেকে শিখুন
“ইনি আমার প্রিয় পুত্র, তাঁর উপর আমি খুব সন্তুষ্ট। তোমরা তাঁর কথা শোনো।”—মথি ১৭:৫.
গান সংখ্যা ২৫ শিষ্যত্বের প্রমাণ
সারাংশa
১-২. যিশুর জীবনের শেষ মুহূর্তে তাঁর প্রতি কী ঘটেছিল? ব্যাখ্যা করুন।
সময়টা হল ৩৩ খ্রিস্টাব্দের, ১৪ নিশান দিনের বেলা। যিশুর উপর মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে আসা হয় এবং যে-অপরাধ তিনি কখনো করেননি, সেটার জন্য তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা এবং নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়। তাঁর মুখে থুতু দেওয়া এবং ঘুসি মারা হয়। আর এরপর তাঁকে যাতনাদণ্ডে পেরেক দিয়ে বিদ্ধ করা হয়। তিনি এতটাই কষ্টের মধ্যে রয়েছেন যে, তাঁর পক্ষে কথা বলা আর এমনকী নিঃশ্বাস নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। তা সত্ত্বেও, তিনি চুপ করে থাকেননি কারণ তাঁর কাছে বলার মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা রয়েছে।
২ আসুন, আমরা আলোচনা করে দেখি, যিশু তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্তে কী বলেছিলেন আর তাঁর কথাগুলো থেকে আমরা কী শিখতে পারি। অন্যভাবে বললে, আসুন আমরা ‘তাঁর কথা শুনি।’—মথি ১৭:৫.
“পিতা, এদের ক্ষমা করো”
৩. যিশু যখন বলেছিলেন, “পিতা, এদের ক্ষমা করো,” তখন তিনি হয়তো কাদের বিষয়ে বলছিলেন?
৩ যিশু কী বলেছিলেন? যিশু যখন দণ্ডে বিদ্ধ ছিলেন, তখন তিনি প্রার্থনায় বলেছিলেন, “পিতা, এদের ক্ষমা করো।” যিশু কাদের ক্ষমা করার বিষয়ে বলছিলেন? লক্ষ করুন, এর পরই তিনি কী বলেছিলেন: “এরা কী করছে, তা জানে না।” (লূক ২৩:৩৩, ৩৪) যিশু হয়তো রোমীয় সৈন্যদের বিষয়ে বলছিলেন, যারা জানত না যে, যিশু আসলে কে ছিলেন। যিশুর মনে হয়তো সেই জনতাও ছিল, যারা আগে চিৎকার করে বলেছিল, যিশুকে যেন মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু, পরে সেই জনতার মধ্য থেকে কিছু ব্যক্তি তাঁর উপর বিশ্বাস করেছিল। (প্রেরিত ২:৩৬-৩৮) তাদের কাছ থেকে অনেক অবিচার ভোগ করা সত্ত্বেও, তিনি তাদের বিরুদ্ধে তিক্ততার অনুভূতি গড়ে তোলেননি। (১ পিতর ২:২৩) এর পরিবর্তে, তাদের ক্ষমা করে দেওয়ার বিষয়ে তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন।
৪. অন্যদের ক্ষমা করার বিষয়ে যিশুর কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৪ যিশুর কথা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? যিশুর মতো অন্যদের ক্ষমা করার জন্য আমাদের ইচ্ছুক থাকতে হবে। (কল. ৩:১৩) আত্মীয়স্বজন হয়তো আমাদের বিরোধিতা করতে পারে কারণ তারা এটা বুঝতে পারে না যে, আমরা কী বিশ্বাস করি আর কেন আমাদের জীবনধারা অন্যদের চেয়ে আলাদা। এই কারণেই তারা আমাদের সম্বন্ধে মিথ্যা কথা বলতে, অন্যদের সামনে আমাদের অপমান করতে, আমাদের সাহিত্যাদি ছুড়ে ফেলে দিতে আর এমনকী আমাদের মারধরও করতে পারে। তাদের উপর রেগে গিয়ে কিছু বলার পরিবর্তে, আমরা তাদের জন্য প্রার্থনা করতে পারি, যাতে তারাও একদিন সত্য গ্রহণ করে। (মথি ৫:৪৪, ৪৫) কিন্তু, সবসময় এমনটা করা সহজ নয়, বিশেষভাবে তারা যখন আমাদের সঙ্গে খুবই খারাপ আচরণ করে থাকে। তবে, আমরা যদি তাদের বিরুদ্ধে তিক্ততার অনুভূতি গড়ে তুলি কিংবা বিরক্তি পুষে রাখি, তা হলে এটা আমাদেরই ক্ষতি করবে। একজন বোন বলেন: “ক্ষমাশীল হওয়ার অর্থ এই নয়, আমি অন্যায় কাজকে প্রশ্রয় দিই অথবা অন্যদের আমার কাছ থেকে সুবিধা ভোগ করতে দিই। কিন্তু এর অর্থ হচ্ছে, আমি বিরক্তি পুষে রাখি না আর বিষয়টা ভুলে যেতে চাই।” (গীত. ৩৭:৮) আমরা যখন অন্যদের ক্ষমা করি, তখন আমরা মনের মধ্যে তিক্ততার অনুভূতি গড়ে তুলি না।—ইফি. ৪:৩১, ৩২.
“তুমি আমার সঙ্গে পরমদেশে থাকবে”
৫. যিশু একজন অপরাধীর কাছে কী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আর কেন?
৫ যিশু কী বলেছিলেন? যিশুর সঙ্গে দু-জন অপরাধীকে যাতনাদণ্ডে দেওয়া হয়েছিল। প্রথমে দু-জনেই যিশুকে তিরস্কার করেছিল। (মথি ২৭:৪৪) কিন্তু পরে, এক জন বুঝতে পেরেছিলেন, যিশু “কোনো অপরাধ করেননি।” (লূক ২৩:৪০, ৪১) তিনি বিশ্বাস করেছিলেন, যিশুকে মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত করা হবে আর একদিন তিনি রাজা হবেন। তিনি যিশুকে বলেছিলেন: “আপনি যখন রাজা হবেন, তখন আমাকে স্মরণ করবেন।” (লূক ২৩:৪২) সত্যিই, সেই ব্যক্তি কতই-না বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন! লক্ষ করুন, যিশু সেই অপরাধীকে কী বলেছিলেন: “আমি আজ তোমার কাছে প্রতিজ্ঞা করছি, তুমি আমার সঙ্গে পরমদেশে থাকবে।” (লূক ২৩:৪৩)b কেন যিশু এই প্রতিজ্ঞা করতে পেরেছিলেন? কারণ তিনি জানতেন, তাঁর পিতা খুবই করুণাময় আর তিনি সেই অপরাধীর প্রতি নিশ্চয়ই করুণা দেখাবেন।—গীত. ১০৩:৮.
৬. যিশু সেই অপরাধীকে যা বলেছিলেন, সেখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৬ যিশুর কথা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? যিশু হলেন তাঁর পিতার এক নিখুঁত প্রতিফলন। (ইব্রীয় ১:৩) যিশুর কথার দ্বারা বোঝা যায় যে, তাঁর পিতা খুবই করুণাময়। আমরা যদি আমাদের পাপের জন্য প্রকৃত অনুতপ্ত হই এবং যিশুর মুক্তির মূল্যের উপর বিশ্বাস করি, তা হলে যিহোবা আমাদের ক্ষমা করবেন। (১ যোহন ১:৭) কিন্তু, কিছু ভাই-বোন মনে করে, তারা অতীতে যে-পাপ করেছে, সেটার জন্য যিহোবা কখনোই তাদের ক্ষমা করবেন না। এই বিষয়ে একটু চিন্তা করুন: যিশু যদি সেই অপরাধীর প্রতি করুণা দেখাতে পারেন, যিনি সবেমাত্র তাঁর উপর বিশ্বাস করা শুরু করেছিলেন, তা হলে যিহোবা কি তাঁর সেই উপাসকদের প্রতি করুণা দেখাবেন না, যারা বছরের পর বছর ধরে তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত রয়েছে এবং তাঁর প্রতি বাধ্য থাকার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে?—গীত. ৫১:১; ১ যোহন ২:১, ২.
“ওই দেখো! তোমার ছেলে! . . . ওই দেখো! তোমার মা!”
৭. (ক) যোহন ১৯:২৬, ২৭ পদ অনুযায়ী যিশু, মরিয়ম ও যোহনকে কী বলেছিলেন? (খ) আর কেন তিনি এই কথা বলেছিলেন?
৭ যিশু কী বলেছিলেন? (পড়ুন, যোহন ১৯:২৬, ২৭.) যিশু তাঁর মা মরিয়মের জন্য চিন্তিত ছিলেন, যিনি সম্ভবত সেইসময় বিধবা ছিলেন। যিশুর নিজের ভাই-বোনেরা মরিয়মের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর যত্ন নিতে পারত। কিন্তু, তারা মরিয়মকে যিহোবার সেবা করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারত না, কারণ তারা হয়তো তখনও পর্যন্ত যিশুর শিষ্য হয়নি। তাই, যিশু যোহনের কথা চিন্তা করেন, যিনি ছিলেন বিশ্বস্ত প্রেরিত এবং যিশুর সবচেয়ে ভালো বন্ধু। আর যিশু সেই ব্যক্তিদেরই নিজের পরিবারের সদস্য হিসেবে দেখতেন, যারা যিহোবার সেবা করত। (মথি ১২:৪৬-৫০) এই জন্যই, তিনি তাঁর মাকে বলেছিলেন: “ওই দেখো! তোমার ছেলে!” আর যোহনকে বলেছিলেন: “ওই দেখো! তোমার মা!” যিশু যোহনকে তাঁর মায়ের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব দেন কারণ যিশু জানতেন, যোহন মরিয়মকে যিহোবার সেবা করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবেন। সেই দিন থেকে যোহন নিজের মায়ের মতো মরিয়মের যত্ন নিতে শুরু করেন। সত্যিই, যিশু তাঁর মাকে কতই-না ভালোবাসতেন, যিনি তাঁকে জন্ম দিয়েছিলেন আর মৃত্যুর সময়েও তাঁর সঙ্গে ছিলেন!
৮. যিশু, মরিয়ম ও যোহনকে যা বলেছিলেন, সেখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৮ যিশুর কথা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আমাদের পরিবারের সদস্যদের চেয়েও মণ্ডলীর ভাই-বোনদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেক বেশি মজবুত হতে পারে। আমাদের আত্মীয়স্বজন হয়তো আমাদের বিরোধিতা করতে পারে অথবা আমাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না-ও রাখতে পারে। কিন্তু, আমরা যদি যিহোবার নিকটবর্তী থাকি এবং তাঁর সংগঠনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলি, তা হলে যিশু প্রতিজ্ঞা করছেন, আমরা যা হারিয়েছি, সেটার “১০০ গুণ” ফিরে পাব। এর অর্থ হল, মণ্ডলীর অনেকে আমাদের কাছে প্রিয় ছেলে-মেয়ে ও বাবা-মায়ের মতো হয়ে উঠবে। (মার্ক ১০:২৯, ৩০) এটা জেনে আপনার কেমন লাগে যে, আপনি এমন এক পরিবারের অংশ, যেখানে সবাই যিহোবার উপাসনা করে, তাঁকে ভালোবাসে এবং একে অন্যকে ভালোবাসে?—কল. ৩:১৪; ১ পিতর ২:১৭.
“ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমাকে পরিত্যাগ করেছ?”
৯. মথি ২৭:৪৬ পদে পাওয়া যিশুর কথা থেকে আমরা কী বুঝতে পারি?
৯ যিশু কী বলেছিলেন? যিশু মারা যাওয়ার ঠিক আগে বলেছিলেন: “ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমাকে পরিত্যাগ করেছ?” (মথি ২৭:৪৬) বাইবেল স্পষ্টভাবে জানায় না, কেন যিশু এই কথা বলেছিলেন। কিন্তু, তিনি যা বলেছিলেন, সেখান থেকে আমরা কিছু বিষয় বুঝতে পারি। প্রথমত, এই কথা বলে যিশু সেই ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ করেছিলেন, যেটা গীতসংহিতা ২২:১ পদে লেখা আছে।c দ্বিতীয়ত, যিহোবা তাঁর পুত্রের সুরক্ষার জন্য তাঁর “চারিদিকে . . . বেড়া” দেননি। (ইয়োব ১:১০) যিশু বুঝতে পেরেছিলেন, যিহোবা অনুমতি দিয়েছেন, যেন যিশুর শত্রুরা পুরোপুরিভাবে তাঁর বিশ্বাসের পরীক্ষা নেয়। কোনো মানুষকে কখনো যিশুর মতো এইরকম পরীক্ষা সহ্য করতে হয়নি। তৃতীয়ত, যিশুর কথা থেকে এটাও বোঝা যায়, তিনি মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য কোনো অপরাধ করেননি।
১০. যিশু তাঁর পিতাকে যা বলেছিলেন, সেখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১০ যিশুর কথা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? প্রথমত, যিহোবা আমাদের সমস্ত পরীক্ষা থেকে রক্ষা করবেন না। যিশুর বিশ্বাস যেমন পরীক্ষিত হয়েছিল, তেমনই আমাদের বিশ্বাস পরীক্ষিত হবে। শুধু তা-ই নয়, আমরা হয়তো মৃত্যুর মুখোমুখিও হতে পারি। (মথি ১৬:২৪, ২৫) কিন্তু, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা আমাদের উপর সহ্যের অতিরিক্ত পরীক্ষা আসতে দেবেন না। (১ করি. ১০:১৩) দ্বিতীয়ত, যিশুর মতো আমাদেরও হয়তো কষ্ট ভোগ করতে হবে। (১ পিতর ২:১৯, ২০) আমাদের এই কারণে বিরোধিতা করা হয় না যে, আমরা ভুল কিছু করেছি বরং এই কারণে করা হয় যে, আমরা জগতের অংশ নই এবং সবসময় সত্যের পক্ষসমর্থন করি। (যোহন ১৭:১৪; ১ পিতর ৪:১৫, ১৬) যিশু জানতেন, কেন যিহোবা তাঁকে কষ্ট ভোগ করতে দিয়েছিলেন। কিন্তু, কিছু বিশ্বস্ত উপাসক যখন কষ্ট ভোগ করে থাকে, তখন তারা হয়তো বুঝতে পারে না, কেন যিহোবা তা ঘটতে দিয়েছেন। (হবক্. ১:৩) কিন্তু, আমাদের করুণাময় ও ধৈর্যশীল ঈশ্বর জানেন, তাদের মধ্যে বিশ্বাসের কোনো অভাব নেই। তবে, তাদের সেই সান্ত্বনার প্রয়োজন, যেটা কেবলমাত্র তিনিই জোগাতে পারেন।—২ করি. ১:৩, ৪.
“আমার পিপাসা পেয়েছে”
১১. কেন যিশু যোহন ১৯:২৮ পদে পাওয়া কথাগুলো বলেছিলেন?
১১ যিশু কী বলেছিলেন? (পড়ুন, যোহন ১৯:২৮.) কেন যিশু বলেছিলেন: “আমার পিপাসা পেয়েছে”? তিনি এই কথা বলেছিলেন, যাতে “শাস্ত্রের কথা পরিপূর্ণ” হয়, যেটা গীতসংহিতা ২২:১৫ পদে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। সেখানে বলা আছে: “আমার বল খোলার ন্যায় শুষ্ক হইতেছে, আমার জিহ্বা তালুতে লাগিয়া যাইতেছে।” সত্যিই, যিশুর অনেক পিপাসা পেয়েছিল কারণ তিনি যাতনাদণ্ডে কষ্ট পাচ্ছিলেন। আর তাঁর পিপাসা মেটানোর জন্য একটু জলের প্রয়োজন ছিল।
১২. “আমার পিপাসা পেয়েছে,” যিশুর এই কথা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১২ যিশুর কথা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? যিশু যখন অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছিলেন, তখন তিনি এমনটা চিন্তা করেননি, লোকেরা তাঁর সম্বন্ধে কী মনে করবে। আমাদেরও এমনটা চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া কোনো দুর্বলতার চিহ্ন নয়। হতে পারে, অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে আমাদের ভালো লাগে না। কিন্তু, যখন সত্যিই সাহায্যের প্রয়োজন হবে, তখন আমরা যেন কখনোই অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়ার ক্ষেত্রে ইতস্তত বোধ না করি। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা যদি বয়স্ক অথবা অসুস্থ হই, তা হলে আমরা আমাদের কোনো বন্ধুকে জিজ্ঞেস করতে পারি, সে আমাদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে অথবা কেনাকাটা করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারবে কি না। আমরা যদি কোনো কারণে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি, তা হলে আমরা হয়তো কোনো প্রাচীন কিংবা পরিপক্ব ভাই অথবা বোনের সঙ্গে কথা বলতে পারি। আমরা তাকে বলতে পারি, তিনি যেন আমাদের কথা মন দিয়ে শোনেন এবং “উত্তম বাক্য” দ্বারা আমাদের উৎসাহিত করেন। (হিতো. ১২:২৫) মনে রাখবেন, আমাদের ভাই-বোনেরা আমাদের খুব ভালোবাসে আর তারা আমাদের “দুর্দশার” সময়েও সাহায্য করতে চায়। (হিতো. ১৭:১৭) কিন্তু, আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের সমস্যার বিষয় তাদের খুলে বলব, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা আমাদের কোনো সাহায্য করতে পারবে না।
“পূর্ণ হল!”
১৩. মৃত্যু পর্যন্ত যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার মাধ্যমে যিশু কী সম্পন্ন করেছিলেন?
১৩ যিশু কী বলেছিলেন? ১৪ নিশান, বিকেল প্রায় তিনটের সময়ে যিশু উচ্চস্বরে বললেন: “পূর্ণ হল!” (যোহন ১৯:৩০) মৃত্যু পর্যন্ত যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার মাধ্যমে যিশু সেই সমস্ত কিছু সম্পন্ন করেছিলেন, যেগুলো তাঁর পিতা চেয়েছিলেন। প্রথমত, তিনি শয়তানকে একজন মিথ্যাবাদী হিসেবে প্রমাণিত করেছিলেন কারণ তিনি দেখিয়ে দিয়েছিলেন, একজন সিদ্ধ ব্যক্তি কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারেন। দ্বিতীয়ত, যিশু আমাদের জন্য নিজের জীবন মুক্তির মূল্য হিসেবে দান করেছিলেন। ফলে, আমরা যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং অনন্তজীবন লাভ করতে পারি। তৃতীয়ত, যিশু প্রমাণ করেছিলেন, একমাত্র যিহোবারই পুরো পৃথিবীর উপর শাসন করার অধিকার রয়েছে এবং ঈশ্বরের নামের উপর যে-নিন্দা নিয়ে আসা হয়েছিল, সেটাও তিনি দূর করেছিলেন।
১৪. কীভাবে আমাদের প্রত্যেক দিন কাটানো উচিত? ব্যাখ্যা করুন।
১৪ যিশুর কথা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আমাদের অবশ্যই প্রত্যেক দিন যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে হবে। গিলিয়েড স্কুলের একজন শিক্ষক ভাই ম্যাক্সওয়েল ফ্রেণ্ড এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশ্বস্ততার উপর একটা বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তিনি সেইসময় বলেছিলেন: “কোনো কাজ কালকের জন্য ফেলে রাখবেন না, কারণ আপনি জানেন না যে, কাল আপনি বেঁচে থাকবেন কি না। তাই, প্রত্যেক দিন যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকুন এবং এমনভাবে জীবনযাপন করুন, যাতে অনন্তজীবন লাভ করতে পারেন।” ভাইয়ের কথা কতই-না সত্য! আমাদের প্রত্যেক দিন যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে হবে, যেন এটাই আমাদের জীবনের শেষ দিন। আর এমনকী যদি মারাও যাই, আমরা যিহোবাকে বলতে পারব, “আমি তোমার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলাম, আমি শয়তানকে মিথ্যা প্রমাণ করেছিলাম এবং তোমার নাম ও শাসন করার অধিকারের পক্ষসমর্থন করেছিলাম।”
“তোমার হাতে আমি আমার প্রাণ সমর্পণ করি”
১৫. লূক ২৩:৪৬ পদ অনুযায়ী যিশু কোন বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন?
১৫ যিশু কী বলেছিলেন? (পড়ুন, লূক ২৩:৪৬.) যিশু সম্পূর্ণ আস্থার সঙ্গে বলেছিলেন: “পিতা, তোমার হাতে আমি আমার প্রাণ সমর্পণ করি।” যিশু জানতেন, মৃত্যুর পর তিনি জীবন ফিরে পাবেন কি না, সেটা যিহোবার হাতে রয়েছে। আর যিশু নিশ্চিত ছিলেন, তাঁর পিতা তাঁকে অবশ্যই স্মরণে রাখবেন।
১৬. পনেরো বছর বয়সি জশুয়ার উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৬ যিশুর কথা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আমাদের যেকোনো পরিস্থিতিতে যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে হবে, এমনকী যদি আমাদের জীবন ঝুঁকির মুখেও থাকে। আর এমনটা তখনই করতে পারব, যখন আমরা “সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস” করব। (হিতো. ৩:৫) জশুয়া নামে ১৫ বছর বয়সি একজন ভাইয়ের উদাহরণ বিবেচনা করে দেখুন। সে এক গুরুতর রোগে আক্রান্ত হয়। যিহোবার আইন লঙ্ঘন হতে পারে এমন চিকিৎসাপদ্ধতি গ্রহণ করাকে সে প্রত্যাখ্যান করে। মারা যাওয়ার কিছু সময় আগে, জশুয়া তার মাকে বলে: “মা, আমি যিহোবার হাতে রয়েছি . . . তিনি আমাকে স্মরণে রাখবেন। যিহোবা নিশ্চয়ই আমার জীবন ফিরিয়ে দেবেন। তিনি আমার হৃদয় দেখেছেন আর তিনি জানেন, আমি তাঁকে কতটা ভালোবাসি।” তাই, আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘যদি আমার বিশ্বাস পরীক্ষিত হয় এবং জীবন ঝুঁকির মুখে থাকে, তা হলে আমি কি যিহোবার প্রতি আমার বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে পারব? আর আমি কি নিশ্চিত, তিনি আমাকে স্মরণে রাখবেন?’
১৭-১৮. যিশুর কথাগুলো থেকে আমরা কী কী শিখেছি? (এ ছাড়া, “যিশুর বলা শেষ কথাগুলো থেকে আমরা কী শিখতে পারি?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)
১৭ যিশুর বলা শেষ কথাগুলো থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। অন্যদের ক্ষমা করার জন্য আমাদের ইচ্ছুক থাকতে হবে আর নিশ্চিত হতে হবে, যিহোবাও আমাদের ক্ষমা করবেন। মণ্ডলীতে এমন অনেক ভাই ও বোন রয়েছে, যারা আমাদের সাহায্য করতে চায়। কিন্তু, তারা তখনই আমাদের সাহায্য করতে পারবে, যখন আমরা তাদের কাছ থেকে সাহায্য চাইব। আমরা এও শিখেছি, যেকোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে যিহোবা আমাদের সাহায্য করবেন। আমাদের সবসময় তাঁর প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে হবে আর প্রত্যেক দিন এমনভাবে জীবনযাপন করতে হবে, যেন এটাই আমাদের জীবনের শেষ দিন। এ ছাড়া, আমাদের আস্থা রাখতে হবে যে, আমরা যদি মারাও যাই, তা হলে যিহোবা আমাদের জীবন ফিরিয়ে দেবেন।
১৮ সত্যিই, যিশুর কথাগুলো থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। আমরা যদি এই কথাগুলোর উপর মনোযোগ দিই, তা হলে আমরা যিহোবার পুত্রের ‘কথা শুনছি।’—মথি ১৭:৫.
গান সংখ্যা ৪৩ জেগে থাকো, নিশ্চল হও, বলবান হও
a মথি ১৭:৫ পদ জানায়, যিহোবা চান যেন আমরা তাঁর পুত্রের কথা শুনি। যিশু যখন যাতনাদণ্ডে মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করছিলেন, তখন তিনি কিছু কথা বলেছিলেন। এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে, তাঁর সেই কথাগুলো থেকে আমরা কী কী শিখতে পারি।
b যিশু বলেননি যে, সেই অপরাধী স্বর্গে যাবেন। এর পরিবর্তে, তাকে পরমদেশ পৃথিবীতে জীবন ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
c কেন যিশু গীতসংহিতা ২২:১ পদের কথাগুলো উদ্ধৃতি করেছিলেন, তা জানার জন্য এই সংখ্যার “পাঠকদের কাছ থেকে প্রশ্ন” দেখুন।