অধ্যায় তেইশ
তিনি প্রভুর কাছ থেকে ক্ষমা সম্বন্ধে শিক্ষা লাভ করেছিলেন
১. পিতরের জীবনে হয়তো কোন মুহূর্তটা সবচেয়ে খারাপ ছিল?
পিতর সেই চরম মুহূর্তের কথা কখনো ভুলবেন না, যখন তারা একে অপরের দিকে তাকিয়েছিলেন। তিনি কি যিশুর স্থির দৃষ্টির মধ্যে হতাশা অথবা ভর্ৎসনার কোনো ইঙ্গিত দেখতে পেয়েছিলেন? আমরা নিশ্চিত করে তা বলতে পারি না; অনুপ্রাণিত বিবরণ কেবল বলে যে, “প্রভু মুখ ফিরাইয়া পিতরের দিকে দৃষ্টিপাত করিলেন।” (লূক ২২:৬১) কিন্তু সেই এক ঝলকেই, পিতর বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি কতটা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, তিনি সবেমাত্র ঠিক সেই কাজটাই করেছিলেন, যেটার বিষয়ে যিশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন আর যে-বিষয়ে পিতর দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন যে, তিনি কখনো তা করবেন না—তিনি তার প্রিয় প্রভুকে অস্বীকার করেছিলেন। পিতরের জন্য এটা একটা দুর্বল মুহূর্ত ছিল, সম্ভবত তার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিনের সবচেয়ে খারাপ মুহূর্ত।
২. পিতরের কোন শিক্ষা লাভ করার প্রয়োজন ছিল আর তার ঘটনা থেকে আমরা হয়তো কোন উপকার পেতে পারি?
২ তবে সবকিছুই শেষ হয়ে যায়নি। যেহেতু পিতর প্রচুর বিশ্বাসের অধিকারী একজন ব্যক্তি ছিলেন, তাই তখনও তার ভুলগুলো কাটিয়ে ওঠার ও যিশুর সর্বোত্তম শিক্ষাগুলোর মধ্যে একটা শেখার সুযোগ ছিল। এটা ছিল ক্ষমা সম্বন্ধে শিক্ষা। আমাদের প্রত্যেকেরই যেহেতু একই শিক্ষা লাভ করা উচিত, তাই আসুন আমরা পিতরের জীবনের এই কঠিন যাত্রার সময়ে তাকে অনুসরণ করি।
একজন ব্যক্তি, যাকে অনেক কিছু শিখতে হয়েছিল
৩, ৪. (ক) পিতর যিশুকে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন আর পিতর সম্ভবত কী ভেবেছিলেন? (খ) কীভাবে যিশু দেখিয়েছিলেন যে, পিতর সেই সময় ছেয়ে থাকা মনোভাবের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন?
৩ প্রায় ছয় মাস পূর্বে পিতর তার নিজ শহর কফরনাহূমে, যিশুর কাছে এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “প্রভু, আমার ভ্রাতা আমার নিকটে কত বার অপরাধ করিলে আমি তাহাকে ক্ষমা করিব? কি সাত বার পর্য্যন্ত?” সম্ভবত পিতর ভেবেছিলেন যে, তিনি খুবই উদার। কারণ, সেই সময়ের ধর্মীয় নেতারা শিক্ষা দিতেন যে, একজনকে কেবল তিন বার ক্ষমা করতে হবে! যিশু উত্তর দিয়েছিলেন: “তোমাকে বলিতেছি না, সাত বার পর্য্যন্ত, কিন্তু সত্তর গুণ সাত বার পর্য্যন্ত।”—মথি ১৮:২১, ২২.
৪ যিশু কি এই ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন যে, পিতরের একজন অপরাধীর কাজকর্মের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব রাখা উচিত? না; বরং, পিতরের সাত বারকে সত্তর গুণ সাত বারে পরিণত করার দ্বারা তিনি বলছিলেন যে, প্রেম আমাদেরকে ক্ষমা করার বিষয়ে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো সীমা আরোপ করার অনুমতি দেয় না। (১ করি. ১৩:৪, ৫) যিশু দেখিয়েছিলেন যে, পিতর সেই সময়ে ব্যাপকভাবে ছেয়ে থাকা নিষ্ঠুর ও ক্ষমাহীন এক মনোভাবের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন, যে-মনোভাব খুব অল্প পরিমাণে ক্ষমা করার সীমা নির্ধারণ করত। কিন্তু, ঐশিক ক্ষমা ব্যাপক ও উদার।—পড়ুন, ১ যোহন ১:৭-৯.
৫. কখন হয়তো আমরা ক্ষমা করার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি শিখতে পারি?
৫ পিতর যিশুর সঙ্গে তর্ক করেননি। কিন্তু যিশুর শিক্ষা কি সত্যিই তার হৃদয়ে পৌঁছেছিল? কখনো কখনো ক্ষমা করা সম্বন্ধে আমরা তখনই সবচেয়ে বেশি করে শিখি, যখন আমরা উপলব্ধি করি যে, আমাদের নিজেদের ক্ষমা লাভ করা কতখানি প্রয়োজন। তাই আসুন আমরা যিশুর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটা ঘটনাগুলোতে ফিরে যাই। সেই কঠিন সময়ে পিতর এমন অনেক কিছুই করেছিলেন, যেগুলোর জন্য তার প্রভুর কাছ থেকে তার ক্ষমা লাভ করার প্রয়োজন ছিল।
আরও বেশি ক্ষমা লাভের প্রয়োজন
৬. যিশু তাঁর প্রেরিতদের নম্রতা সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার সময় পিতর কীভাবে সাড়া দিয়েছিলেন, কিন্তু যিশু তার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছিলেন?
৬ এটা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক সন্ধ্যা—যিশুর পার্থিব জীবনের শেষ রাত। তখনও যিশুর কাছে তাঁর প্রেরিতদেরকে শিক্ষা দেওয়ার মতো অনেক বিষয় ছিল—যেমন, নম্রতা সম্বন্ধে। নম্রভাবে তাদের পা ধুইয়ে দেওয়ার মাধ্যমে যিশু এক উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন, যে-কাজ সাধারণত সবচেয়ে নিম্নপদস্থ দাসকে করতে হতো। প্রথমে, পিতর যিশুর সেই কাজের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তারপর তিনি সেই সেবা পাওয়ার বিষয়টা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। পরে তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, যিশু যেন তার শুধু পা নয় কিন্তু হাত ও মাথাও ধুয়ে দেন! যিশু তাঁর ধৈর্য হারাননি বরং তিনি যা করছিলেন শান্তভাবে সেটার গুরুত্ব ও অর্থ ব্যাখ্যা করেছিলেন।—যোহন ১৩:১-১৭.
৭, ৮. (ক) কোন কোন উপায়ে পিতর আবারও যিশুর ধৈর্য পরীক্ষা করেছিলেন? (খ) কীভাবে যিশু বার বার সদয় ও ক্ষমাশীল মনোভাব দেখিয়েছিলেন?
৭ এর অল্প সময় পরেই, পিতর আবারও যিশুর ধৈর্য পরীক্ষা করেছিলেন। প্রেরিতরা তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ, তা নিয়ে তর্কবিতর্ক শুরু করেছিলেন আর এভাবে তারা নির্লজ্জভাবে যে-অহংকার প্রদর্শন করেছিলেন, তাতে পিতরও নিশ্চয়ই অংশ নিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও, যিশু সদয়ভাবে তাদেরকে সংশোধন করেছিলেন আর এমনকী তারা যে ভালো কাজ করেছেন, সেটার জন্য তাদের প্রশংসা করেছিলেন; তাদের প্রভুর প্রতি অনুগত থাকার দ্বারা তারা বিশ্বস্ততা দেখিয়েছিলন। কিন্তু, তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, তারা সকলে তাঁকে পরিত্যাগ করবে। পিতর উত্তর দিয়েছিলেন, তিনি এমনকী মুত্যুর মুখোমুখি হলেও যিশুকে পরিত্যাগ করবেন না। এর বিপরীতে, যিশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, সেই রাতেই কুকুড়া বা মোরগ দু-বার ডাকার আগে পিতর তার প্রভুকে তিন বার অস্বীকার করবেন। তখন পিতর কেবল যিশুর বিরোধিতাই করেননি, কিন্তু সেইসঙ্গে দম্ভ করে বলেছিলেন যে, তিনি অন্য সমস্ত প্রেরিতের চেয়ে আরও বেশি বিশ্বস্ত বলে প্রমাণিত হবেন!—মথি ২৬:৩১-৩৫; মার্ক ১৪:২৭-৩১; লূক ২২:২৪-২৮; যোহন ১৩:৩৬-৩৮.
৮ যিশু কি পিতরের ব্যাপারে ধৈর্য হারাতে বসেছিলেন? বস্তুতপক্ষে, এই কষ্টকর সময়ে, যিশু তাঁর অসিদ্ধ প্রেরিতদের মধ্যে ভালো কিছু দেখার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি জানতেন যে, পিতর তাঁকে হতাশ করবেন, কিন্তু তারপরও তিনি বলেছিলেন: “আমি তোমার নিমিত্ত বিনতি করিয়াছি, যেন তোমার বিশ্বাসের লোপ না হয়; আর তুমিও একবার ফিরিলে পর তোমার ভ্রাতৃগণকে সুস্থির করিও।” (লূক ২২:৩২) এভাবে যিশু এই আস্থা প্রকাশ করেছিলেন যে, পিতর এই ভুলকে কাটিয়ে উঠবেন এবং বিশ্বস্তভাবে আবারও পরিচর্যা করবেন। কতই-না সদয় ও ক্ষমাশীল মনোভাব!
৯, ১০. (ক) গেৎশিমানী বাগানে, পিতরকে কোন বিষয়ে সংশোধন করার প্রয়োজন হয়েছিল? (খ) পিতরের ঘটনা হয়তো আমাদের কোন বিষয়টা মনে করিয়ে দিতে পারে?
৯ পরে গেৎশিমানী বাগানে, পিতরকে একাধিক বার সংশোধন করার প্রয়োজন হয়েছিল। যিশু প্রার্থনা করার সময় তাকে আর সেইসঙ্গে যাকোব ও যোহনকে জেগে থাকতে বলেছিলেন। যিশু নিদারুণ আবেগগত যন্ত্রণা ভোগ করছিলেন ও তাঁর সমর্থনের প্রয়োজন ছিল কিন্তু পিতর এবং অন্যেরা বার বার ঘুমিয়ে পড়েছিল। যিশু এই সহমর্মিতাপূর্ণ ও ক্ষমাশীল মন্তব্য করেছিলেন: “আত্মা ইচ্ছুক বটে, কিন্তু মাংস দুর্ব্বল।”—মার্ক ১৪:৩২-৪১.
১০ শীঘ্র, মশাল হাতে খড়্গ ও লাঠি নিয়ে জনতা হাজির হয়েছিল। তখন ছিল সতর্কতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ করার সময়। কিন্তু, পিতর তাড়াহুড়ো করে এক অবিবেচনাপূর্ণ কাজ করেছিলেন, মহাযাজকের একজন দাস, মল্কের মাথার দিকে খড়্গ চালিয়ে তার একটা কান কেটে ফেলেছিলেন। যিশু শান্তভাবে পিতরকে সংশোধন করেছিলেন, ক্ষত সারিয়ে দিয়েছিলেন এবং অহিংসার এক নীতি সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করেছিলেন, যা আজও তাঁর অনুসারীদেরকে নির্দেশনা দেয়। (মথি ২৬:৪৭-৫৫; লূক ২২:৪৭-৫১; যোহন ১৮:১০, ১১) পিতর এমন অনেক ভুল করেছিলেন, যেগুলোর জন্য তার প্রভুর কাছ থেকে ক্ষমালাভের প্রয়োজন ছিল। তার ঘটনা হয়তো আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা সকলে প্রায়ই পাপ করে ফেলি। (পড়ুন, যাকোব ৩:২.) আমাদের মধ্যে কারই-বা প্রতিদিন ঈশ্বরের কাছ থেকে ক্ষমা লাভের প্রয়োজন হয় না? কিন্তু, সেই রাতে পিতরের প্রতি আরও অনেক কিছু ঘটতে যাচ্ছিল। চরম ব্যর্থতা অপেক্ষা করছিল।
পিতরের চরম ব্যর্থতা
১১, ১২. (ক) যিশুকে গ্রেপ্তার করার পর পিতর কীভাবে যথেষ্ট সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন? (খ) পিতর যা করবেন বলেছিলেন, তা করতে তিনি কীভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন?
১১ যিশু সেই জনতাকে এই যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, তারা যদি তাঁরই অন্বেষণ করে থাকে, তাহলে তারা যেন তাঁর প্রেরিতদের চলে যেতে দেয়। জনতা যখন যিশুকে ঘিরে রেখেছিল, তখন পিতর শুধু অসহায়ভাবে দেখেছিলেন। এরপর পিতরও তার সহপ্রেরিতদের মতো সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
১২ পিতর ও যোহন পালিয়ে যাওয়ার পথে থেমেছিলেন, সম্ভবত প্রাক্তন মহাযাজক হাননের বাড়ির কাছাকাছি, যেখানে যিশুকে জেরা করার জন্য প্রথমে নিয়ে আসা হয়েছিল। এরপর যিশুকে যখন সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তখন পিতর ও যোহন তাঁকে অনুসরণ করেছিলেন, তবে “দূরে থাকিয়া।” (মথি ২৬:৫৮; যোহন ১৮:১২, ১৩) পিতর কাপুরুষ ছিলেন না। নিশ্চিতভাবেই, যিশুকে অনুসরণ করার জন্য যথেষ্ট সাহসের প্রয়োজন হয়েছিল। জনতার কাছে অস্ত্র ছিল আর পিতর ইতিমধ্যেই তাদের মধ্যে একজনকে আঘাত করেছিলেন। কিন্তু এই ঘটনায় আমরা পিতরের উদাহরণে সেই অনুগত প্রেম দেখতে পাই না, যেটার বিষয়ে তিনি নিজেই বলেছিলেন—প্রয়োজনে তিনি তার প্রভুর সঙ্গে মরতেও ইচ্ছুক।—মার্ক ১৪:৩১.
১৩. খ্রিস্টকে যথাযথভাবে অনুসরণ করার একমাত্র উপায় কী?
১৩ পিতরের মতো, আজকেও অনেকে “দূরে থাকিয়া”—কেউই যেন লক্ষ না করে এমনভাবে—খ্রিস্টকে অনুসরণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু পিতর নিজেই যেমন পরে লিখেছিলেন, খ্রিস্টকে যথাযথভাবে অনুসরণ করার একমাত্র উপায় হল যতটা সম্ভব তাঁর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে থাকা আর সমস্ত বিষয়ে তাঁর উদাহরণ অনুকরণ করা, তা সেটার পরিণতি যা-ই হোক না কেন।—পড়ুন, ১ পিতর ২:২১.
১৪. যে-রাতে যিশুর বিচার চলছিল, সেই রাতটা পিতর কীভাবে কাটিয়েছিলেন?
১৪ পিতর সতর্কভাবে যেতে যেতে শেষপর্যন্ত যিরূশালেমের সবচেয়ে সুদৃশ্য এক বাসভবনের দরজার কাছে এসে পৌঁছেছিলেন। এটা ছিল ধনী ও ক্ষমতাশালী মহাযাজক কায়াফার গৃহ। সাধারণত এই ধরনের গৃহের মাঝখানে একটা প্রাঙ্গণ থাকত, যেটার সামনের দিকে একটা সদর দরজা থাকত। পিতর সেই দরজার কাছে পৌঁছেছিলেন কিন্তু তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। যোহন, যিনি মহাযাজককে চিনতেন তিনি ইতিমধ্যেই ভিতরে ছিলেন আর বাইরে এসে দ্বাররক্ষিকার কাছ থেকে পিতরকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়ার অনুমতি নিয়েছিলেন। মনে হয় যে, পিতর যোহনের কাছাকাছি ছিলেন না; কিংবা তিনি তার প্রভুর পক্ষ নেওয়ার জন্য গৃহের ভিতরে যাওয়ারও চেষ্টা করেননি। তিনি প্রাঙ্গণেই ছিলেন, যেখানে কিছু দাস-দাসী কনকনে ঠাণ্ডায় আগুন পোহাচ্ছিল আর সেখান থেকে তিনি ভিতরে যিশুর বিচার চলাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষিদের আসা-যাওয়া লক্ষ করছিলেন।—মার্ক ১৪:৫৪-৫৭; যোহন ১৮:১৫, ১৬, ১৮.
১৫, ১৬. তিন বার তাঁকে অস্বীকার করার বিষয়ে যিশুর ভবিষ্যদ্বাণী কীভাবে পূর্ণ হয়েছিল, তা ব্যাখ্যা করুন।
১৫ যে-দাসী পিতরকে ভিতরে ঢুকতে দিয়েছিল, সে আগুনের আলোয় তাকে আরও ভালোভাবে দেখতে সমর্থ হয়েছিল। সে পিতরকে চিনতে পেরেছিল। সে অভিযোগ করে বলেছিল: “তুমিও সেই গালীলীয় যীশুর সঙ্গে ছিলে।” আচমকা ধরা পড়ে গিয়ে, পিতর বলেছিলেন যে, তিনি যিশুকে চেনেন না আর সেই দাসীর কথা বুঝতে পারছেন না। তিনি দ্বারের কাছে গিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছিলেন কিন্তু আরেকটা দাসী তাকে লক্ষ করে একই বিষয় বলেছিল: “এ ব্যক্তি সেই নাসরতীয় যীশুর সঙ্গে ছিল।” পিতর শপথ করে বলেছিলেন: “আমি সে ব্যক্তিকে চিনি না।” (মথি ২৬:৬৯-৭২; মার্ক ১৪:৬৬-৬৮) সম্ভবত এই দ্বিতীয় বার অস্বীকার করার পরই পিতর মোরগের ডাক শুনেছিলেন, কিন্তু তিনি এতটাই বিক্ষিপ্ত ছিলেন যে, মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে যিশুর করা ভবিষ্যদ্বাণী তার মনে ছিল না।
১৬ কিছুক্ষণ পর, পিতর তখনও নিজেকে আড়াল করার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু, প্রাঙ্গণের চারদিকে দাঁড়িয়ে থাকা লোকেদের একটা দল পিতরের দিকে এগিয়ে এসেছিল। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন সেই দাস মল্কের আত্মীয় যাকে পিতর আঘাত করেছিলেন। তিনি পিতরকে বলেছিলেন: “আমি কি উদ্যানে উহার সঙ্গে তোমাকে দেখি নাই?” পিতর তাদের বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, তারা ভুল বলছে। তাই এই ব্যাপারে তিনি, স্পষ্টভাবে এই কথা বলার দ্বারা শপথ করেছিলেন যে, তিনি যদি মিথ্যা বলে থাকেন, তাহলে তার ওপর যেন অভিশাপ নেমে আসে। পিতর এই নিয়ে তৃতীয় বার যিশুকে অস্বীকার করেছিলেন। তার মুখ থেকে কথাগুলো বের হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে মোরগ ডেকে উঠেছিল—পিতর সেই রাতে দ্বিতীয় বার তা শুনেছিলেন।—যোহন ১৮:২৬, ২৭; মার্ক ১৪:৭১, ৭২.
১৭, ১৮. (ক) তিনি কত চরমভাবে তার প্রভুকে হতাশ করেছেন, তা উপলব্ধি করার পর পিতর কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? (খ) পিতর হয়তো নিজের সম্বন্ধে কী ভেবেছিলেন?
১৭ যিশু সবেমাত্র ওপরের বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছিলেন আর সেখান থেকে প্রাঙ্গণের দিকে তাকিয়েছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তেই তিনি পিতরের দিকে তাকিয়েছিলেন, যেমনটা এই অধ্যায়ের শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে। আর সেই মুহূর্তেই পিতর উপলব্ধি করেছিলেন যে, তিনি কত চরমভাবে তার প্রভুকে হতাশ করেছেন। পিতর প্রাঙ্গণ থেকে চলে গিয়েছিলেন ও অপরাধবোধের কারণে ভারগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এরপর তিনি পূর্ণিমার আলোয় আলোকিত নগরের রাস্তার দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন। তার চোখ জলে ভরে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ পূর্বের দৃশ্যগুলো তার চোখের সামনে ভাসছিল। তিনি হতাশ হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।—মার্ক ১৪:৭২; লূক ২২:৬১, ৬২.
১৮ এইরকম একটা ভুল করার পর, একজন ব্যক্তির পক্ষে এটা ধরে নেওয়া খুবই সহজ, তার পাপ এতই গুরুতর যে, ক্ষমা লাভ করা সম্ভব নয়। পিতর হয়তো নিজের সম্বন্ধে এমনটাই ভেবেছিলেন। কিন্তু আসলে কি তা-ই?
পিতর কি ক্ষমা লাভের অযোগ্য ছিলেন?
১৯. পিতর তার ব্যর্থতা সম্বন্ধে কেমন অনুভব করেছিলেন, তবুও কীভাবে আমরা জানতে পারি যে, তিনি হতাশ হয়ে পড়েননি?
১৯ সূর্য ওঠার ও সেই দিনের ঘটনাগুলো ঘটতে থাকার সঙ্গেসঙ্গে পিতর যে-গভীর যন্ত্রণা বোধ করেছিলেন, সেটা কল্পনা করা কঠিন। সেইসময় তিনি নিজেকে নিশ্চয় কতই-না দোষারোপ করেছিলেন, যখন সেই দিন ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে কষ্টভোগ করার পর যিশু মারা গিয়েছিলেন! মানুষ হিসেবে জীবনের শেষ দিনে তার প্রভু যে-যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন, তা নিয়ে পিতর যখন চিন্তা করেছিলেন তখন তিনি নিশ্চয়ই খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। নিশ্চিতভাবেই, পিতর প্রচণ্ড দুঃখ পেয়েছিলেন কিন্তু তিনি হতাশ হয়ে পড়েননি। আমরা তা জানি কারণ বিবরণ বলে যে, শীঘ্র তিনি তার আধ্যাত্মিক ভাইদের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হয়েছিলেন। (লূক ২৪:৩৩) কোনো সন্দেহ নেই যে, সেই ভয়াবহ রাতে প্রেরিতরা যেভাবে আচরণ করেছিলেন, তার জন্য তারা সকলেই অনুশোচনা করেছিলেন আর তারা একে অপরকে কিছুটা সান্ত্বনা প্রদান করেছিলেন।
২০. পিতরের সবচেয়ে বিজ্ঞতাপূর্ণ সিদ্ধান্ত থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
২০ এক অর্থে, আমরা এখানে দেখতে পাচ্ছি যে, পিতর সবচেয়ে বিজ্ঞতাপূর্ণ এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ঈশ্বরের একজন দাস যখন আধ্যাত্মিক অর্থে পড়ে যান, তখন তিনি কতটা শোচনীয়ভাবে পড়ে গিয়েছেন তা নয়, বরং আবারও উঠে দাঁড়ানোর অর্থাৎ বিষয়গুলোকে সংশোধন করার ব্যাপারে তার দৃঢ়সংকল্প হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২৪:১৬.) পিতর হতাশ হয়ে পড়লেও তার ভাইদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে অকৃত্রিম বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন। একজন যখন দুঃখ অথবা অনুশোচনার দ্বারা ভারগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তখন নিজেকে পৃথক করার প্রবণতা আসতে পারে কিন্তু, তা বিপদজনক। (হিতো. ১৮:১) সহবিশ্বাসীদের সান্নিধ্যে থাকা ও পুনরায় আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করা বিজ্ঞতার কাজ।—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.
২১. যেহেতু তিনি তার আধ্যাত্মিক ভাইদের সঙ্গে ছিলেন, তাই পিতর কোন সংবাদ পেয়েছিলেন?
২১ পিতর তার আধ্যাত্মিক ভাইদের সঙ্গে থাকায় এই দুঃখজনক সংবাদ পেয়েছিলেন যে, যিশুর দেহ কবরে নেই। পিতর ও যোহন দৌড়ে সেই কবরের কাছে গিয়েছিলেন, যেখানে যিশুকে কবর দিয়ে সেটার প্রবেশদ্বার বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। সম্ভবত অপেক্ষাকৃত কমবয়সি শিষ্য যোহন প্রথমে সেখানে পৌঁছেছিলেন। কবরের প্রবেশদ্বার খোলা দেখতে পেয়ে তিনি ইতস্তত করেছিলেন। কিন্তু পিতর করেননি। এমনকী যদিও তিনি দৌড়ানোর ফলে হাঁপিয়ে গিয়েছিলেন, তবুও তিনি সোজা ভিতরে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা খালি ছিল!—যোহন ২০:৩-৯.
২২. কেন পিতরের হৃদয় থেকে দুঃখের সমস্ত চিহ্ন ও সন্দেহ দূর হয়ে গিয়েছিল?
২২ পিতর কি বিশ্বাস করেছিলেন যে, যিশু পুনরুত্থিত হয়েছেন? প্রথমে করেননি, এমনকী যদিও সেই বিশ্বস্ত স্ত্রীলোকেরা সংবাদ দিয়েছিলেন যে, স্বর্গদূতেরা তাদের কাছে দেখা দিয়ে ঘোষণা করেছেন, যিশু মৃতদের মধ্য থেকে উত্থাপিত হয়েছেন। (লূক ২৩:৫৫–২৪:১১) কিন্তু সেই দিনের শেষে, পিতরের হৃদয় থেকে দুঃখের সমস্ত চিহ্ন ও সন্দেহ দূর হয়ে গিয়েছিল। যিশু জীবিত হয়েছেন ও এখন তিনি একজন শক্তিমান আত্মিক ব্যক্তি! তিনি তাঁর সমস্ত প্রেরিতকে দেখা দিয়েছেন। কিন্তু, প্রথমে তিনি আরেকটা কাজ করেছিলেন যদিও তা একান্তে। সেই দিনে প্রেরিতরা বলেছিল: “প্রভু নিশ্চয়ই উঠিয়াছেন, এবং শিমোনকে দেখা দিয়াছেন।” (লূক ২৪:৩৪) একইভাবে, প্রেরিত পৌল পরে সেই উল্লেখযোগ্য দিন সম্বন্ধে লিখেছিলেন, যে-দিন যিশু “কৈফাকে, পরে সেই বারো জনকে দেখা দিলেন।” (১ করি. ১৫:৫) কৈফা ও শিমোন হল পিতরের অন্য নাম। যিশু সেই দিনে তাকে দেখা দিয়েছিলেন—স্পষ্টতই পিতর যখন একা ছিলেন।
পিতর এমন অনেক ভুল করেছিলেন, যেগুলোর জন্য তাঁর প্রভুর কাছ থেকে ক্ষমা লাভের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু আমাদের মধ্যে কারই-বা প্রতিদিন ক্ষমা লাভের প্রয়োজন হয় না?
২৩. আজকে যে-খ্রিস্টানরা পাপে পতিত হয়, তাদের কেন পিতরের ঘটনা মনে রাখা প্রয়োজন?
২৩ সেই বিশেষ পুনর্মিলনের সময়ে কী ঘটেছিল, তা বাইবেলে লিপিবদ্ধ নেই। তা যিশু ও পিতরই জানেন। আমরা কেবল কল্পনা করতে পারি যে, তার প্রিয় প্রভুকে আবারও জীবিত দেখা আর তাঁর কাছে তার দুঃখ ও অনুতাপ প্রকাশ করার সুযোগ পাওয়া পিতরকে কতখানি প্রভাবিত করেছিল। পিতর আর কিছুই নয় বরং ক্ষমা পেতে চেয়েছিলেন। যিশু যে তাকে প্রচুররূপে ক্ষমা করেছিলেন, তা নিয়ে কি কেউ সন্দেহ করতে পারে? আজকে যে-খ্রিস্টানরা পাপে পতিত হয়, তাদের পিতরের ঘটনার কথা মনে রাখা প্রয়োজন। আমাদের কখনো ধরে নেওয়া উচিত নয় যে, আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করার অযোগ্য। যিশু নিখুঁতভাবে তাঁর পিতাকে প্রতিফলিত করেন, যিনি “প্রচুররূপে ক্ষমা করিবেন।”—যিশা. ৫৫:৭.
ক্ষমা করার আরও প্রমাণ
২৪, ২৫. (ক) রাতের বেলা গালীল সমুদ্রে পিতরের মাছ ধরার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করুন। (খ) পরের দিন ভোর বেলায় যিশু যে-অলৌকিক কাজ করেছিলেন, সেটার প্রতি পিতরের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
২৪ যিশু তাঁর প্রেরিতদের গালীলে যেতে বলেছিলেন, যেখানে তারা আবারও তাঁর সঙ্গে মিলিত হবেন। তারা যখন সেখানে পৌঁছেছিলেন, তখন পিতর গালীল সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া স্থির করেছিলেন। অন্য কয়েক জন তার সঙ্গে গিয়েছিলেন। আবারও, পিতর সেই হ্রদে গিয়েছিলেন, যেখানে তিনি আগে অনেক সময় কাটিয়েছিলেন। নৌকার ক্যাঁচ ক্যাঁচ আওয়াজ, ছোটো ছোটো ঢেউ আছড়ে পড়ার মৃদু শব্দ এবং তার হাতে খসখসে জালের স্পর্শ, এই সমস্তকিছু নিশ্চয়ই বেশ পরিচিত বলেই মনে হয়েছিল। সারারাত ধরে তারা কোনো মাছ ধরতে পারেননি।—মথি ২৬:৩২; যোহন ২১:১-৩.
২৫ কিন্তু, যখন প্রায় ভোর হয়ে আসছিল, তখন এক ব্যক্তি তীরের কাছ থেকে জেলেদেরকে ডেকে নৌকার উলটো দিকে তাদের জাল ফেলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তারা তাঁর কথামতো কাজ করেছিল ও জালে ধরা পড়া ১৫৩টা মাছ টেনে তুলেছিল! পিতর জানতেন ব্যক্তিটি কে ছিলেন। তিনি নৌকা থেকে জলে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কেটে তীরে এসেছিলেন। সেই তীরে, যিশু তাঁর বিশ্বস্ত বন্ধুদের কয়লার আগুনে ঝলসানো মাছ খেতে দিয়েছিলেন। তিনি পিতরের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন।—যোহন ২১:৪-১৪.
২৬, ২৭. (ক) যিশু পিতরকে পর পর তিন বার কোন সুযোগ দিয়েছিলেন? (খ) যিশু পিতরকে যে পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করে দিয়েছেন, সেটার কোন প্রমাণ তিনি দিয়েছিলেন?
২৬ যিশু জালে ধরা পড়া প্রচুর মাছের দিকে দেখিয়ে পিতরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তিনি “ইহাদের অপেক্ষা” তাঁকে বেশি ভালোবাসেন কি না। মাছের ব্যাবসার প্রতি ভালোবাসা এবং যিশুর প্রতি ভালোবাসা কি পিতরের হৃদয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছিল? ঠিক যেমন পিতর তার প্রভুকে তিন বার অস্বীকার করেছিলেন, তেমনই যিশু এখন পিতরকে তার সঙ্গীদের সামনে তাঁর প্রতি পিতরের ভালোবাসা প্রমাণ করার জন্য তিন বার সুযোগ দিয়েছিলেন। পিতর যখন তা করেছিলেন, তখন যিশু তাকে সেই ভালোবাসা দেখানোর উপায় সম্বন্ধে বলেছিলেন: আর তা হল তাকে পবিত্র সেবাকে সমস্ত কিছুর আগে রাখার এবং খ্রিস্টের পাল অর্থাৎ তাঁর বিশ্বস্ত অনুসারীদের চরানোর, তাদেরকে শক্তিশালী করার ও পালন করা।—লূক ২২:৩২; যোহন ২১:১৫-১৭.
২৭ এভাবে যিশু নিশ্চিত করেছিলেন যে, পিতর তখনও তাঁর ও তাঁর পিতার কাছে কার্যকারী ছিলেন। খ্রিস্টের নির্দেশনায় পিতর মণ্ডলীতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। যিশু যে পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করে দিয়েছেন, সেটার কী এক জোরালো প্রমাণ! নিশ্চিতভাবেই সেই করুণা পিতরের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল আর তিনি এটার দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন।
২৮. কীভাবে পিতর তার নাম অনুসারে চলেছিলেন?
২৮ পিতর বিশ্বস্তভাবে অনেক বছর ধরে তার কার্যভার সম্পাদন করেছিলেন। তিনি তার ভাইদের শক্তিশালী করেছিলেন, যেমন যিশু তাঁর মৃত্যুর আগে আদেশ দিয়েছিলেন। খ্রিস্টের অনুসারীদের পালন ও চরানোর ব্যাপারে তিনি সদয়ভাবে এবং ধৈর্য সহকারে কাজ করেছিলেন। শিমোন বলে অভিহিত ব্যক্তি মণ্ডলীতে উত্তম প্রভাব ফেলার জন্য এক অবিচল, দৃঢ় ও নির্ভরযোগ্য শক্তি হয়ে ওঠার মাধ্যমে যিশুর দেওয়া নাম—পিতর বা পাথর—নাম অনুসারে চলেছিলেন। সেই প্রভাবের বড়ো প্রমাণ, প্রত্যেক খ্রিস্টানের উপকারের জন্য লেখা পিতরের দুটো আন্তরিকতাপূর্ণ চিঠিতে দেখতে পাওয়া যায়, যেগুলো বাইবেলের মূল্যবান বই হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া, সেই চিঠিগুলো দেখায় যে, ক্ষমা করা সম্বন্ধে পিতর যিশুর কাছ থেকে যে-শিক্ষা লাভ করেছিলেন, তা তিনি কখনো ভুলে যাননি।—পড়ুন, ১ পিতর ৩:৮, ৯; ৪:৮.
২৯. কীভাবে আমরা পিতরের বিশ্বাস ও তার প্রভুর করুণা অনুকরণ করতে পারি?
২৯ আমরাও যেন সেই শিক্ষা লাভ করি। আমরা যে অনেক ভুল করি, তার জন্য কি আমরা রোজ ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি? এরপর আমরা কি সেই ক্ষমার প্রতি উপলব্ধি দেখাই ও বিশ্বাস করি যে, আমাদেরকে শুদ্ধ করার ক্ষমতা এটার রয়েছে? আর আমরা কি আমাদের চারপাশের ব্যক্তিদের ক্ষমা করি? আমরা যদি তা করি, তাহলে আমরা পিতরের বিশ্বাস ও তার প্রভুর করুণাকে অনুকরণ করব।