বার্ণবা—সেই “প্রবোধের সন্তান”
একজন বন্ধুর কাছ থেকে আপনি কবে শেষবারের মত সান্ত্বনা পেয়েছিলেন? আপনার কি স্মরণে আছে আপনি শেষ কবে কাউকে সান্ত্বনা প্রদান করেছিলেন? সময় সময় আমাদের সকলের উৎসাহের প্রয়োজন হয় আর যারা তা প্রেমের সাথে প্রদান করে থাকেন আমরা তাদের কতই না উপলব্ধি করি! সান্ত্বনা দেওয়া সময় নিয়ে শোনা, বোঝা ও সাহায্য করাকে ইঙ্গিত করে। আপনি কি তা করতে প্রস্তুত?
একজন ব্যক্তি যিনি এক উদাহরণযোগ্য উপায়ে এইধরনের ইচ্ছা প্রদর্শন করেছিলেন তিনি ছিলেন বার্ণবা, যিনি “সৎলোক এবং পবিত্র আত্মায় ও বিশ্বাসে পরিপূর্ণ ছিলেন।” (প্রেরিত ১১:২৪) কেন বার্ণবা সম্বন্ধে তা বলা যেতে পারে? তিনি কী করেছিলেন যাতে করে এইরকম আখ্যার যোগ্য হয়েছিলেন?
একজন উদার সহকারী
তার প্রকৃত নাম ছিল যোষেফ কিন্তু প্রেরিতেরা তাকে একটি বর্ণনামূলক পদবী দিয়েছিলেন যেটি তার চরিত্রের সাথে অত্যন্ত উপযুক্ত ছিল—বার্ণবা, অর্থ “প্রবোধের সন্তান।”a (প্রেরিত ৪:৩৬) মাত্র সম্প্রতি খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী সংগঠিত হয়েছিল। কেউ কেউ মনে করেন যে প্রথম থেকেই বার্ণবা যীশুর একজন শিষ্য ছিলেন। (লূক ১০:১, ২) এটি ঠিক হোক বা না হোক, এই ব্যক্তি নিজের সম্বন্ধে এক উত্তম বিবরণ প্রদান করেছিলেন।
সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর অল্প কিছু সময় পরে, বার্ণবা, যিনি কুপ্রে বসবাসকারী একজন লেবীয় ছিলেন, স্বেচ্ছায় কিছু জমি বিক্রি করে সেই অর্থ প্রেরিতদের দিয়েছিলেন। তিনি তা কেন করেছিলেন? প্রেরিতের বিবরণী আমাদের জানায় যে সেই সময় যিরূশালেমে খ্রীষ্টানদের মধ্যে, “যাহার যেমন প্রয়োজন, তাহাকে তেমনি দেওয়া হইত।” বার্ণবা স্পষ্টতই দেখেছিলেন যে সেখানে প্রয়োজন ছিল আর সেই ব্যাপারে তিনি আন্তরিকভাবে কিছু করেছিলেন। (প্রেরিত ৪:৩৪-৩৭) তিনি হয়ত কিছুটা বিত্তবান লোক ছিলেন কিন্তু তিনি রাজ্যের আগ্রহের উন্নতিবিধানে তার বস্তুগত সম্পত্তি অথবা নিজেকে প্রদান করতে ইতস্তত করেননি।b “বার্ণবা যেখানে লোকেদের পেতেন অথবা কোন পরিস্থিতিতে উৎসাহের প্রয়োজন হলে তিনি তার সামর্থ্যানুযায়ী সমস্ত উৎসাহ প্রদান করেছিলেন,” পণ্ডিত এফ. এফ. ব্রুস মন্তব্য করেন। এটি দ্বিতীয় উপাখ্যান থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যেখানে তিনি আবির্ভূত হন।
প্রায় সা.কা. ৩৬ সালে, তার্ষের শৌল (ভবিষ্যৎ প্রেরিত পৌল), যিনি তখন একজন খ্রীষ্টান, যিরূশালেম মণ্ডলীর সাথে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করছিলেন, “কিন্তু সকলে তাঁহাকে ভয় করিল, তিনি যে শিষ্য, ইহা বিশ্বাস করিল না।” তিনি কিভাবে মণ্ডলীকে নিশ্চয়তা প্রদান করতে পেরেছিলেন যে তার পরিবর্তন অকৃত্রিম ছিল এবং মণ্ডলীকে আবার বিপর্যস্ত করার নিছক কোন কৌশল ছিল না? “বার্ণবা তাঁহার হাত ধরিয়া প্রেরিতদের নিকটে লইয়া গেলেন।”—প্রেরিত ৯:২৬, ২৭; গালাতীয় ১:১৩, ১৮, ১৯.
বার্ণবা কেন শৌলের উপর আস্থা রেখেছিলেন তা উল্লেখ করা হয়নি। যাইহোক, সেই “প্রবোধের সন্তান” শৌলের কথা শোনা ও তাকে আপাতদৃষ্টিতে এক অসহায় দুরাবস্থা থেকে উদ্ধার করার দ্বারা তার পদবী অনুযায়ী যোগ্যরূপে কাজ করেছিলেন। পরে শৌল যদিও তার জন্মভূমি তার্ষে ফিরে গিয়েছিলেন কিন্তু দুই ব্যক্তির মধ্যে এক বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। পরবর্তী বছরগুলিতে তা গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল এনেছিল।—প্রেরিত ৯:৩০.
আন্তিয়খিয়াতে
প্রায় সা.কা. ৪৫ সালে, সিরিয়ার আন্তিয়খিয়ার অসাধারণ বৃদ্ধির সংবাদ যিরূশালেমে পৌঁছেছিল—এই নগরের বহুসংখ্যক গ্রীকভাষী নিবাসীরা বিশ্বাসী হয়েছিলেন। সেখানকার কাজ সযত্নে পরীক্ষা ও সংগঠিত করার জন্য মণ্ডলী বার্ণবাকে দ্রুত পাঠিয়েছিলেন। তাদের জন্য এর থেকে বেশি বিজ্ঞ নির্বাচন আর কিছু হতে পারত না। লূক জানান: “তিনি উপস্থিত হইয়া ঈশ্বরের অনুগ্রহ দেখিয়া আনন্দ করিলেন; এবং সকলকে আশ্বাস দিতে লাগিলেন, যেন তাহারা হৃদয়ের একাগ্রতায় প্রভুতে স্থির থাকে; কারণ তিনি সৎলোক এবং পবিত্র আত্মায় ও বিশ্বাসে পরিপূর্ণ ছিলেন। আর বিস্তর লোক প্রভুতে সংযুক্ত হইল।”—প্রেরিত ১১:২২-২৪.
এটিই সব কিছু ছিল না। পণ্ডিত জুজেপ্পা রিসোটির মতানুসারে, “বার্ণবা একজন বাস্তববাদী লোক ছিলেন এবং তিনি খুব শীঘ্র কাজে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে বুঝতে পেরেছিলেন এটি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যে প্রচুর শস্যছেদনের মাধ্যমে এইধরনের আশাপ্রদ সমৃদ্ধি লাভ করা যেতে পারে। তাই প্রথমত প্রয়োজন ছিল শস্যছেদনকারীদের।” কুপ্র থেকে আসার ফলে বার্ণবা সম্ভবত পরজাতীয়দের সাথে আদানপ্রদানের ব্যাপারে অভ্যস্থ ছিলেন। তিনি হয়ত পৌত্তলিকদের কাছে প্রচার করার জন্য নিজেকে বিশেষভাবে যোগ্য বলে মনে করেছিলেন। তবুও তিনি এই রোমাঞ্চকর ও উৎসাহজনক কাজে অন্যান্যদের অন্তর্ভুক্ত করতে প্রস্তুত ছিলেন।
বার্ণবা, শৌল সম্বন্ধে চিন্তা করেছিলেন। খুব সম্ভবত, শৌলের পরিবর্তনের সময় অননিয়ের কাছে ভাববাণীমূলক তথ্যপ্রকাশের বিষয়ে বার্ণবা অবগত ছিলেন যে সেই প্রাক্তন তাড়নাকারী ‘জাতিগণের . . . নিকটে যীশুর নাম বহনার্থে . . . মনোনীত পাত্র’ ছিলেন। (প্রেরিত ৯:১৫) তাই শৌলের অন্বেষণে—প্রায় ২০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের একবারের পথ অতিক্রম করার জন্য—বার্ণবা তার্ষের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিলেন। পুরো এক বছর সঙ্গী হিসাবে দুইজন একত্রে কাজ করেছিলেন আর “প্রথমে আন্তিয়খিয়াতেই” সেই সময়ে “শিষ্যেরা ‘খ্রীষ্টীয়ান’ নামে আখ্যাত হইল।”—প্রেরিত ১১:২৫, ২৬.
ক্লৌদিয়ের রাজত্বের সময়ে, রোমীয় সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে মহাদুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। যিহূদী ইতিহাসবেত্তা যোষেফাসের মতানুসারে, যিরূশালেমে “খাদ্য সংগ্রহ করার জন্য যা কিছুর প্রয়োজন ছিল সেগুলির অভাবে অনেক লোক মারা গিয়েছিলেন।” এইজন্য, আন্তিয়খিয়ার শিষ্যেরা “প্রতিজন স্ব স্ব সঙ্গতি অনুসারে যিহূদিয়া-নিবাসী ভ্রাতৃগণের পরিচর্য্যার জন্য তাঁহাদের কাছে সাহায্য পাঠাইতে স্থির করিলেন: এবং সেই মত কার্য্যও করিলেন, বার্ণবার ও শৌলের হস্ত দ্বারা প্রাচীনবর্গের নিকটে অর্থ পাঠাইয়া দিলেন।” সেই কার্যভার পূর্ণরূপে সম্পন্ন করার পর ওই দুইজন যোহন মার্ককে সঙ্গে নিয়ে আন্তিয়খিয়ায় ফিরে গিয়েছিলেন, যেখানে তারা সেই মণ্ডলীর ভাববাদী ও শিক্ষকদের মাঝে গণিত হয়েছিলেন।—প্রেরিত ১১:২৯, ৩০; ১২:২৫; ১৩:১.
এক বিশেষ মিশনারি কার্যভার
এরপর এক অসাধারণ ঘটনা ঘটেছিল। “তাঁহারা প্রভুর সেবা ও উপবাস করিতেছিলেন, এমন সময়ে পবিত্র আত্মা কহিলেন, আমি বার্ণবা ও শৌলকে যে কার্য্যে আহ্বান করিয়াছি, সেই কার্য্যের নিমিত্ত আমার জন্য এখন তাহাদিগকে পৃথক্ করিয়া দেও।” একটু চিন্তা করুন! যিহোবার আত্মা আজ্ঞা করেছিল যে দুইজনকে এক বিশেষ কার্যভার দেওয়া হবে। “এইরূপে তাঁহারা পবিত্র আত্মাকর্ত্তৃক প্রেরিত হইয়া সিলূকিয়াতে গেলেন, এবং তথা হইতে জাহাজ খুলিয়া কুপ্রে গমন করিলেন।” তাই বার্ণবাকে যথার্থভাবেই একজন প্রেরিত অথবা অগ্রবর্তী একজন হিসাবে অভিহিত করা যেতে পারে।—প্রেরিত ১৩:২, ৪; ১৪:১৪.
কুপ্রের মধ্যে দিয়ে ভ্রমণ ও দ্বীপের রোমীয় প্রাদেশিক সরকার, সের্গিয় পৌলকে ধর্মান্তরিত করার পর তারা এশিয়া মাইনরের দক্ষিণ উপকূলের পর্গাতে অগ্রসর হয়েছিলেন যেখান থেকে যোহন মার্ক তাদেরকে ছেড়ে যিরূশালেমে ফিরে গিয়েছিলেন। (প্রেরিত ১৩:১৩) এটি প্রতীয়মান হয় যে তখন পর্যন্ত বার্ণবা, সম্ভবত বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সঙ্গী হিসাবে নেতৃত্ব প্রদানের ভূমিকা পালন করেছিলেন। এরপর থেকে শৌল (বর্তমানে পৌল হিসাবে উল্লেখিত) নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। (প্রেরিত ১৩:৭, ১৩, ১৬; ১৫:২ পদগুলির সাথে তুলনা করুন।) বার্ণবা কি এই উন্নতিতে আঘাত পেয়েছিলেন? না, তিনি একজন পরিপক্ব খ্রীষ্টান ছিলেন, যিনি নম্রতার সাথে উপলব্ধি করেছিলেন যে যিহোবা তার সঙ্গীকেও এক ক্ষমতাপূর্ণ উপায়ে ব্যবহার করছিলেন। তাদের মাধ্যমে, যিহোবা তখনও চেয়েছিলেন যে অন্যান্য এলাকাগুলি সুসমাচার শুনুক।
বস্তুত, পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়া থেকে দুই জনকে বের করে দেওয়ার আগে পৌল ও বার্ণবার কাছ থেকে ওই সম্পূর্ণ অঞ্চলটি ঈশ্বরের বাক্য শুনেছিলেন এবং এক বিরাট সংখ্যক লোক সেই বার্তা গ্রহণ করেছিলেন। (প্রেরিত ১৩:৪৩, ৪৮-৫২) ইকনিয়ে “যিহূদী ও গ্রীকদের বিস্তর লোক বিশ্বাস করিল।” এটি পৌল ও বার্ণবাকে সেই স্থানে অনেক দিন অবস্থিতি করতে প্রণোদিত করেছিল, যেখানে তারা ‘প্রভুর উপরে সাহস বাঁধিয়া কথা কহিতেন; আর তিনিও . . . তাঁহাদের হস্ত দ্বারা নানা চিহ্ন-কার্য্য ও অদ্ভুত লক্ষণ সাধিত হইতে দিতেন।’ তাদের পাথর মারার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল তা জানতে পেরে সেই দুইজন বিজ্ঞতার সাথে সেখান থেকে পালিয়ে যান এবং লুকায়নিয়ার লুস্ত্রা ও দর্বীতে তাদের কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন। লুস্ত্রায় জীবন বিপন্নকর অভিজ্ঞতা ভোগ করা সত্ত্বেও, বার্ণবা ও পৌল উভয়েই “শিষ্যদের মনসুস্থির করিলেন, এবং তাহাদিগকে আশ্বাস দিতে লাগিলেন, যেন তাহারা বিশ্বাসে স্থির থাকে, আর কহিলেন, অনেক ক্লেশের মধ্য দিয়া আমাদিগকে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতে হইবে।”—প্রেরিত ১৪:১-৭, ১৯-২২.
এই দুই সক্রিয় প্রচারক নিজেদের ভয়ে শঙ্কিত হতে দেননি। বিপরীতে, তারা ইতিমধ্যে যেখান থেকে প্রচণ্ড বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিলেন সেই স্থানে নতুন খ্রীষ্টানদের গড়ে তোলার এবং সম্ভবত নতুন মণ্ডলীগুলিতে নেতৃত্ব গ্রহণ করার জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের সাহায্য করতে ফিরে গিয়েছিলেন।
ত্বক্চ্ছেদের বিষয়টি
সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর প্রায় ১৬ বছর পরে, বার্ণবা ত্বক্চ্ছেদের বিষয়টি সম্পর্কে একটি ইতিহাস সৃষ্টিকারী ঘটনায় জড়িত হয়েছিলেন। “যিহূদিয়া হইতে কয়েক জন লোক [আন্তিয়খিয়াতে] আসিয়া ভ্রাতৃগণকে শিক্ষা দিতে লাগিল যে, তোমরা যদি মোশির বিধান অনুসারে ছিন্নত্বক্ না হও, তবে পরিত্রাণ পাইতে পারিবে না।” পৌল ও বার্ণবা অভিজ্ঞতা থেকে জানতেন যে এটি ঠিক নয়, তাই তারা সেই বিষয়টির বিরোধিতা করেছিলেন। তাদের ক্ষমতার জোর না খাটিয়ে বরং তারা দূরদর্শিতার সাথে উপলব্ধি করেছিলেন যে সমস্ত ভ্রাতৃবর্গের উপকারের জন্য এই প্রশ্নটি মীমাংসা করার প্রয়োজন ছিল। সুতরাং তারা যিরূশালেমের পরিচালক গোষ্ঠীর কাছে প্রশ্নটি পেশ করেছিলেন, যেখানে তাদের বিবরণগুলি বিষয়টি মীমাংসা করতে সাহায্য করেছিল। এইরূপে যারা আন্তিয়খিয়াতে ভাইদের উদ্দেশে সেই সিদ্ধান্ত প্রকাশ করতে নিযুক্ত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে পৌল ও বার্ণবাকে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছিল, “প্রিয় . . . আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামের নিমিত্ত প্রাণপণ করিয়াছেন।” পরিচালক গোষ্ঠীর কাছ থেকে আসা পত্রটি যখন পড়া ও তথ্যাদি ব্যক্ত করা হয়েছিল তখন মণ্ডলী “আশ্বাসের কথায় আনন্দিত হইল” ও “সুস্থির” হয়েছিল। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—প্রেরিত ১৫:১, ২, ৪, ২৫-৩২.
“এমন বিতণ্ডা হইল”
তার সম্বন্ধে প্রচুর ইতিবাচক বর্ণনার পর, আমরা হয়ত মনে করতে পারি যে আমরা সম্ভবত কখনও বার্ণবার উদাহরণ অনুসারে জীবনযাপন করতে পারব না। কিন্তু, সেই “প্রবোধের সন্তান” ঠিক আমাদের এবং অন্যান্য সকলের মতই অসিদ্ধ ছিলেন। তিনি এবং পৌল যখন একটি মণ্ডলী পরিদর্শন করতে দ্বিতীয় মিশনারি ভ্রমণ করার জন্য পরিকল্পনা করেছিলেন তখন মতভেদ দেখা দিয়েছিল। বার্ণবা তার জ্ঞাতি ভাই যোহন মার্ককে তার সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্প ছিলেন কিন্তু পৌল সেটি সঠিক মনে করেননি, যেহেতু যোহন মার্ক প্রথম মিশনারি ভ্রমণের সময়ে তাদের ছেড়ে গিয়েছিলেন। তাই সেখানে “এমন বিতণ্ডা হইল যে, তাঁহারা পরস্পর পৃথক্ হইলেন; বার্ণবা মার্ককে সঙ্গে করিয়া জাহাজে কুপ্রে গমন করিলেন,” আর “পৌল সীলকে মনোনীত করিয়া . . . প্রস্থান করিলেন।”—প্রেরিত ১৫:৩৬-৪০.
কতই না দুঃখজনক! তৎসত্ত্বেও, ঘটনাটি বার্ণবার ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে আমাদের আরও অন্য কিছু জানায়। “এটি বার্ণবার অশেষ কৃতিত্বকে অক্ষুণ্ণ রাখে কারণ তিনি দ্বিতীয়বার মার্কের উপর আস্থা রাখতে ও আরেকটি ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত হয়েছিলেন,” একজন পণ্ডিত বলেন। এই লেখক যেমন প্রকাশ করেন, এটি হয়ত ভাল হতে পারে যে “তার উপর বার্ণবার আস্থা স্থাপনই তার নিজের উপর দৃঢ় প্রত্যয় পুর্নস্থাপন করতে সাহায্য করেছিল এবং প্রতিশ্রুতি পুনরুজ্জীবিত করতে এক প্রেরণা হিসাবে কাজ করেছিল।” এমন সময় এসেছিল যখন খ্রীষ্টীয় পরিচর্যায় মার্কের কার্যকারিতা সম্বন্ধে পৌল স্বীকার করেছিলেন আর এভাবে বিষয়গুলি দেখায় যে তার প্রতি আস্থা সম্পূর্ণভাবে ন্যায্য প্রতিপন্ন হয়েছিল।—২ তীমথিয় ৪:১১. কলসীয় ৪:১০ পদের সাথে তুলনা করুন।
সময় নিয়ে শুনতে, বুঝতে, বিষণ্ণদের উৎসাহিত করতে ও যখন প্রয়োজন সেই সময়ে ব্যবহারিক সহায়তা প্রদান করতে বার্ণবার উদাহরণ আমাদের উদ্দীপিত করতে পারে। মৃদুতা ও সাহসের সাথে ভাইদের সেবা করতে তার ইচ্ছুক মনোভাবের বিবরণ এবং সেই সাথে অতি উত্তম ফলাফলগুলি যা এটি উৎপন্ন করেছিল, তা স্বয়ং উৎসাহজনক। আজকে আমাদের মণ্ডলীগুলিতে বার্ণবার মত লোকেদের পাওয়া কতই না আশীর্বাদস্বরূপ!
[পাদটীকাগুলো]
a কাউকে কোন নির্দিষ্ট গুণের “সন্তান” বলে অভিহিত করার মাধ্যমে এক উল্লেখযোগ্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে জোর দেওয়া হয়েছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩:১৮ পদের পাদটীকা “NW” দেখুন।) প্রথম শতাব্দীতে, একজন ব্যক্তির গুণাবলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পদবী ব্যবহার করা সাধারণ বিষয় ছিল। (মার্ক ৩:১৭ পদের সাথে তুলনা করুন।) এটি ছিল সাধারণ্যে স্বীকৃতি দেওয়ার এক পদ্ধতি।
b মোশির ব্যবস্থার দ্বারা যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা বিবেচনা করে কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করেছেন, বার্ণবা একজন লেবীয় হয়ে কিভাবে জমির অধিকারী হয়েছিলেন। (গণনাপুস্তক ১৮:২০) কিন্তু, এটি অবশ্যই উল্লেখ করা উচিত যে সেই সম্পত্তি পলেষ্টীয়তে না কুপ্রে ছিল তা অস্পষ্ট। অধিকন্তু, সম্ভবত এটি শুধুমাত্র একটি সমাধি ক্ষেত্র ছিল যা বার্ণবা যিরূশালেম অঞ্চলে নিজের জন্য সংগ্রহ করেছিলেন। ঘটনা যাই হোক না কেন, বার্ণবা তার সম্পত্তি অন্যদের সাহায্যের জন্য দান করেছিলেন।
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
বার্ণবা “সৎলোক এবং পবিত্র আত্মায় ও বিশ্বাসে পরিপূর্ণ ছিলেন”