দূতেদের সম্বন্ধে সত্যটি
সাধারণত একজনের সাথে পরিচিত হওয়ার অন্তর্ভুক্ত হল তার পরিবার সম্বন্ধে কিছু জানা। ঠিক একই জিনিস প্রযোজ্য যিহোবা ঈশ্বরকে জানার ক্ষেত্রে। তাঁর নাম জানা ছাড়াও এর সাথে আরও বেশি কিছু জড়িয়ে আছে। স্বর্গে তাঁর “পরিবার” সম্বন্ধেও আমাদের অবশ্যই কিছু জানা উচিত। (তুলনা করুন ইফিষীয় ৩:১৪, ১৫.) বাইবেল দূতেদের ঈশ্বরের ‘পুত্ত্র’ বলে থাকে। (ইয়োব ১:৬) বাইবেলে উল্লেখিত তাদের তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকার কথা বিবেচনা করে, আমাদের তাদের সম্বন্ধে কিছুটা জানা উচিত যাতে করে আমরা বুঝতে পারি যে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে তাদের কী স্থান রয়েছে।
এক নতুন উপসংস্কৃতি গঠিত হচ্ছে। আরও বেশি সংখ্যার মানুষেরা কেবলমাত্র এটাই বলছে না যে তারা দূতেদের বিশ্বাস করে; কিন্তু ক্রমবর্ধমানহারে তারা এও দাবি করে যে কোন না কোন ভাবে তারা দূতেদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। যখন ৫০০ জন অ্যামিরিকানদের জিজ্ঞাসা করা হয়, “আপনি কি কখনও ব্যক্তিগতভাবে নিজের জীবনে দূতেদের উপস্থিতি উপলব্ধি করেছেন?” প্রায় এক তৃতীয়াংশ উত্তরে হ্যাঁ, বলে। এটাও আশ্চর্যের বিষয় যে যুবকেরা যারা দূতেদের বিশ্বাস করে বলে দাবি জানায় তাদের সংখ্যা—একটি সমীক্ষা অনুসারে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হয়েছিল, তা হল ৭৬ শতাংশ! অতএব এটা প্রতীয়মান যে লোকেরা দূতেদের বিষয় আগ্রহী। কিন্তু বর্তমানে দূতেদের সম্পর্কে যে চিন্তাধারা তা বাইবেলের সত্যের সাথে কতটা সামঞ্জস্য রাখে?
শয়তানের ভূমিকাকে অস্পষ্ট রাখা
দূতেদের বিষয় কথা বলার সময়, মন্দ দূতেদের কথা আমাদের কখনই উপেক্ষা করা উচিত নয় অর্থাৎ সেই স্বর্গীয় প্রাণীরা, যাদের সম্বন্ধে বাইবেল বলে যে তারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহিতা করেছিল। এদের মধ্যে সর্বপ্রধান হল শয়তান। আপনার দূতেদের জিজ্ঞাসা করুন (ইংরাজি) নামক একটি জনপ্রিয় বই প্রস্তাব দেয় যে শয়তান হল কেবলমাত্র “ঈশ্বরের একটি দিক” যে ক্রমাগতভাবে লোভ দেখানোর মাধ্যমে মানুষকে সাহায্য করে তার “আধ্যাত্মিক পেশিকে” দৃঢ় করে তুলতে। শয়তানের এই “উত্তম উদ্দেশ্য” থাকা সত্ত্বেও, এই বইটির লেখকেরা জানান যে, শতাব্দী ধরে তাকে ভুলভাবে দুষ্টতার সাথে শনাক্ত করা হয়েছে। এরা আরও বলেন যে শয়তান এবং যীশু “যদিও একে অপরের পরিপূরক নয়, অন্ততপক্ষে তাদের একই উদ্দেশ্য এবং তারা সম্পূর্ণ এক ব্যক্তিত্বের বিশেষ অংশযুগল।” এগুলি এক আশ্চর্য ধরনের জাহিরপূর্ণ মন্তব্য, কিন্তু বাইবেল এবিষয় কী বলে?
বাইবেল পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয় যে শয়তান “ঈশ্বরের একটি দিক” নয় কিন্তু ঈশ্বরের শত্রু। (লূক ১০:১৮, ১৯; রোমীয় ১৬:২০) সে যিহোবার সার্বভৌমত্বের বিরোধিতা করে এবং মানুষের প্রতি তার উদ্দেশ্য কখনই “প্রেমপূর্ণ” নয়। সে নির্মমভাবে ঈশ্বরের পার্থিব দাসেদের ওপর তার ক্রোধ বর্ষণ করে। সে দিনরাত ঈশ্বরের সামনে তাদের দোষারোপ করে!a (প্রকাশিত বাক্য ১২:১০, ১২, ১৫-১৭) যে কোন মূল্যে তাদের কলুষিত করতে শয়তান বদ্ধপরিকর। ধার্মিক ব্যক্তি ইয়োবের ওপর তার নির্দয় যাতনাই পীড়িত মানুষের প্রতি তার নির্মম মনোভাবকে প্রকাশ করে।—ইয়োব ১:১৩-১৯; ২:৭, ৮.
“একই উদ্দেশ্য” এটা তো দূরের কথা, শয়তান এবং যীশু সম্পূর্ণভাবে একে অপরের শত্রু। এবিষয় কোন সন্দেহ নেই যে শয়তানই হেরোদকে প্ররোচিত করেছিল ব্যাপক শিশু হত্যার নির্দেশ জারি করতে—শুধুমাত্র এই অভিপ্রায়ে, যাতে করে শিশু সন্তান যীশুকে হত্যা করা সম্ভব হতে পারে! (মথি ২:১৬-১৮) আর শয়তানের এই অদম্য কঠোর আক্রমণ যীশুর মৃত্যু পর্যন্ত বলবৎ ছিল। (লূক ৪:১-১৩; যোহন ১৩:২৭) অতএব “সম্পূর্ণ এক ব্যক্তিত্বের বিশেষ অংশযুগল” হওয়ার পরিবর্তে যীশু এবং শয়তান হল সম্পূর্ণ বিপরীত। বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী দেখায় যে তাদের শত্রুতা ছিল এক অবশ্যম্ভাবী বিষয়। (আদিপুস্তক ৩:১৫) এটা যথার্থ যে ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ে, পুনরুত্থিত যীশু শয়তানকে ধ্বংস করবেন।—প্রকাশিত বাক্য ১:১৮; ২০:১, ১০.
কার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা?
দূত আন্দোলনের কিছু প্রচারকেরা এই প্রস্তাব দিয়ে থাকেন যে দূতেদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার জন্য ধ্যান ও অন্যান্য কৌশলতার প্রয়োজন আছে। “স্বর্গীয় পরিবারের যে কোন সদস্যের সাথে যোগাযোগ করার যে আন্তরিক অনুরোধ, তা কখনও উপেক্ষিত হবে না,” একটি বই মন্তব্য করে। “জিজ্ঞাসা করুন এবং আপনি উত্তর পাবেন।” মিখায়েল, গাব্রিয়েল, ইউরিয়াল ও রাফাইয়েল হলেন দূতেদের মধ্যে কয়েকজন যাদের কাছ থেকে উপদেশ নিতে বইটি প্রস্তাব দেয়।b
কিন্তু, যীশু তাঁর অনুগামীদের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন, দূতেদের কাছে নয়। (মথি ৬:৯, ১০) ঠিক একইভাবে পৌল লিখেছিলেন: “সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (ফিলিপীয় ৪:৬) অতএব, খ্রীষ্টানেরা তাদের প্রার্থনা যিহোবা ছাড়া আর কারও উদ্দেশ্যে করে না এবং এটা তারা করে যীশু খ্রীষ্টের নামে।c—যোহন ১৪:৬, ১৩, ১৪.
দূতেরা আখ্যাহীন?
ইলিন ইলায়েস ফ্রিম্যান, যিনি দূত পর্যবেক্ষণ নেটওয়ার্কের সভাপতিত্ব করেন, তার কথা অনুসারে “দূতেরা সমস্ত ধর্ম, সমস্ত দর্শনবাদ, সমস্ত সম্প্রদায় অতিক্রম করেছে। বস্তুতপক্ষে আমরা যে ধর্ম সম্বন্ধে জানি সে রকম কোন কিছুই দূতেদের নেই।”
কিন্তু, বাইবেল পরিষ্কারভাবে জানায় যে বিশ্বস্ত দূতেদের একটি ধর্ম আছে; তারা সত্য ঈশ্বর, যিহোবার উপাসনা করেন, যিনি অন্য কোন দেবতাদের কাছ থেকে আসা প্রতিদ্বন্দ্বিতা সহ্য করেন না। (দ্বিতীয় বিবরণ ৫:৬, ৭; প্রকাশিত বাক্য ৭:১১) অতএব, সেই ধরনের দূত প্রেরিত যোহনের কাছে নিজেকে “সহদাস” হিসাবে বর্ণনা করেন যারা ঈশ্বরের আদেশ পালন করেন। (প্রকাশিত বাক্য ১৯:১০) বাইবেলে আমরা কোথাও পড়ি না যে বিশ্বস্ত দূতেরা অন্য কোন উপাসনাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তারা যিহোবাকে একাগ্র ভক্তি দিয়ে থাকেন।—যাত্রাপুস্তক ২০:৪, ৫.
‘মিথ্যাবাদীর পিতা’
বহুক্ষেত্রে, তথাকথিত দূতেদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের অন্তর্ভুক্ত হল মৃতদের সাথে কথোপকথন। “আমার একটা অনুভূতি এসেছে যে আমার কাকা একটি পথ খুঁজে পেয়েছেন আমার কাছে পৌঁছানোর জন্য আর এটা জানানোর জন্য যে অবশেষে তিনি শান্তি পেয়েছেন,” এক ভৌতিক চিহ্ন পাওয়ার পর এলিস নামে এক স্ত্রীলোক এই কথা জানায়। একইভাবে টেরি তার প্রিয় বন্ধুর কথা মনে করে যে মারা গিয়েছিল। “অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহ পর,” মহিলাটি জানায়, “সে আমার কাছে আসে, যা আমি স্বপ্ন বলে মনে করেছিলাম। সে আমাকে বলে যে আমি যেন তার মৃত্যুর জন্য শোক না করি, কারণ সে আনন্দ ও শান্তিতে আছে।”
কিন্তু বাইবেল বলে যে মৃতেরা “কিছুই জানে না।” (উপদেশক ৯:৫) এটি এও বলে যে যখন একজন ব্যক্তির মৃত্যু হয় “সেই দিনেই তাহার সঙ্কল্প সকল নষ্ট হয়।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (গীতসংহিতা ১৪৬:৪) শয়তান কিন্তু ‘মিথ্যাবাদীর পিতা।’ (যোহন ৮:৪৪) এ হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে প্রথম মিথ্যার সূত্রপাত ঘটায় যে মানুষের প্রাণ মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকে। (তুলনা করুন যিহিষ্কেল ১৮:৪.) আজকে অনেক লোক এটা বিশ্বাস করে, আর তা শয়তানের উদ্দেশ্যকে সাধিত করে, কারণ এটি পুনরুত্থানের প্রতি বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা বাতিল করে—যা হল খ্রীষ্টতত্ত্বের মূল শিক্ষা। (যোহন ৫:২৮, ২৯) অতএব, মৃতদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ অথবা আপাতদৃষ্টিতে তাদের কাছ থকে বার্তা পাওয়ার অনুভূতি হল দূত আন্দোলনের আরেকটি দিক যা ঈশ্বরের দ্বারা অনুমোদিত নয়।
দূতেদের কাছে না কি মন্দ দূতেদের কাছে যাওয়া?
বর্তমানের এই দূত আন্দোলনের অধিকাংশই জাদুবিদ্যার সাথে সংমিশ্রিত। মারসিয়ার অভিজ্ঞতাটির কথা চিন্তা করুন। “সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে ডিসেম্বর ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত,” সে বলে, “আমি ‘অতিপ্রাকৃত’ এক জগৎ থেকে বার্তা পেতাম। আমি অপচ্ছায়া ও ‘বিগত জীবন’ সম্বন্ধে অস্বাভাবিক স্বপ্ন দেখতাম। আমার যে সব বন্ধুরা মারা গিয়েছিল তাদের সাথে আমি যোগাযোগ স্থাপন করি এবং অন্যান্য অনেক ধরনের মানসিক অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল যার সাহায্যে আমি সদ্যপরিচিত লোকেদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারতাম। এছাড়াও আপনি থেকে লেখার ক্ষমতা এবং অদৃশ্যের মাধ্যমে বার্তা সরবরাহ করার ক্ষমতার দ্বারাও আমি আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছিলাম। যাদের সাথে তাদের পার্থিব জীবনে আমার কখনও দেখা হয়নি, তারাও আমার মাধ্যমে সংবাদ পাঠাতো।”
দূতেদের সাথে “যোগাযোগ” স্থাপন করার মাধ্যম হিসাবে মন্ত্রবিদ্যার ব্যবহার কোন অপ্রচলিত ব্যাপার নয়। একটি উৎস সরাসরিভাবে পাঠকদের উৎসাহ দেয় জাদু পাথর, টারট কার্ড, ই জিঙ্গ, পয়সা, হস্তরেখা এবং জ্যোতিষীবিদ্যার ব্যবহার করতে। “আপনার অন্তরের সত্তাকে অনুমতি দিন আপনাকে যেন সঠিক দৈববাণীজ্ঞাপকের কাছে নিয়ে যায়,” লেখকেরা লেখেন, “আর বিশ্বাস করুন যে একজন দূত আপনার সাথে সেখানে দেখা করবেন।”
কিন্তু, বাইবেল পরিষ্কারভাবে ইঙ্গিত দেয়, যে কেউ “আপনার সাথে সেখানে দেখা করুক না কেন,” সে অবশ্যই ঈশ্বরের কোন দূত নয়। কেন? কারণ মন্ত্রবিদ্যা সরাসরি ঈশ্বর ও সত্য উপাসনার বিরোধী—স্বর্গে ও পৃথিবীতে—এর সাথে কোন সম্পর্ক নেই। এমনকি ইস্রায়েলে মন্ত্রবিদ্যা ছিল প্রাণদণ্ডমূলক অপরাধ! “সদাপ্রভু এই সকল কার্য্যকারীকে ঘৃণা করেন,” নিয়ম এই কথা বলে।—দ্বিতীয় বিবরণ ১৩:১-৫; ১৮:১০-১২.
‘দীপ্তিময় দূত’
এবিষয়ে আমাদের আশ্চর্য হওয়া উচিত নয় যে দিয়াবল এই মন্ত্রবিদ্যাকে উপকারী, এমনকি দূতেদের সাথে সম্পর্কযুক্ত করে তুলতে পারে। বাইবেল বলে যে শয়তান “আপনি দীপ্তিময় দূতের বেশ ধারণ করে।” (২ করিন্থীয় ১১:১৪) সে ভবিষ্যতের পূর্বলক্ষণকে এমনভাবে তুলে ধরতে পারে এবং তা সত্য হিসাবে প্রমাণিত করতে পারে যা দেখে লোকেরা ভ্রান্তভাবে এটাই চিন্তা করতে বাধ্য হয় যে পূর্বলক্ষণটি এসেছে ঈশ্বরের কাছ থেকে। (তুলনা করুন মথি ৭:২১-২৩; ২ থিষলনীকীয় ২:৯-১২.) কিন্তু শয়তানের সমস্ত কাজ—তা সে যতই শুভ বা অশুভ বলে মনে হোক না কোন—এটি দুটির মধ্যে একটি উদ্দেশ্যকে সাধন করে: যিহোবার বিরুদ্ধে লোকেদের নিয়ে যাওয়া অথবা তাদের মনকে অন্ধ করে তোলা যাতে করে ‘খ্রীষ্টের গৌরবের সুসমাচার-দীপ্তি তাহাদের প্রতি উদয় না হয়।’ (২ করিন্থীয় ৪:৩, ৪) ভ্রান্ত করার এই দ্বিতীয় পদ্ধতিটি খুবই কার্যকারী।
বাইবেলে বর্ণিত প্রথম শতাব্দীর সেই দাসীটির কথা বিবেচনা করুন। তার ভবিষ্যৎকথন তার প্রভুদের জন্য খুবই লাভজনক ছিল। অনেক দিন ধরে মেয়েটি শিষ্যদের অনুসরণ করে এবং বলে: “এই ব্যক্তিরা পরাৎপর ঈশ্বরের দাস, ইহাঁরা তোমাদিগকে পরিত্রাণের পথ জানাইতেছেন।” তার বাক্যগুলি সত্য ছিল। কিন্তু, বর্ণনাটি আমাদের জানায় যে মেয়েটি ভারগ্রস্ত হয়েছিল দূতের দ্বারা নয়, কিন্তু “ভবিষ্যৎকথনের মন্দ দূত” (NW) এর দ্বারা। অবশেষে, পৌল “মুখ ফিরাইয়া সেই আত্মাকে কহিলেন, আমি যীশু খ্রীষ্টের নামে তোমাকে আজ্ঞা দিতেছি, ইহা হইতে বাহির হইয়া যাও; তাহাতে সেই দণ্ডেই সে বাহির হইয়া গেল।”—প্রেরিত ১৬:১৬-১৮.
পৌল কেন এই আত্মাকে বার করে দিলেন? মোটের উপর, মন্দ দূত দ্বারা ভারগ্রস্ত মেয়েটি তার প্রভুদের জন্য অনেক উপার্জন করছিল। অতিপ্রাকৃত শক্তির দ্বারা এই দাসীটি হয়ত কৃষকদের বলেছিল কখন রোপণ করতে হবে, মেয়েদের বলেছিল কখন বিবাহ করার সময় এবং খননকারীদের বলেছিল কোথায় তারা সোনার জন্য খনন করতে পারে। এমনকি এই আত্মাটি মেয়েটিকে প্ররোচিত করেছিল কিছুটা সত্য বলতে, অর্থাৎ জনসাধারণ্যে শিষ্যদের প্রশংসা করতে!
তবুও এটি ছিল “ভবিষ্যৎকথনের মন্দ দূত।” প্রকৃতপক্ষে এর কোনই অধিকার ছিল না যিহোবা ও পরিত্রাণ সম্বন্ধীয় তাঁর ব্যবস্থা সম্পর্কে ঘোষণা করার। এর প্রশংসাদায়ক কথাগুলি হতে পারে সেই মেয়েটির ভবিষ্যৎকথনকে জোরদার করে তুলেছিল ও খ্রীষ্টের সত্য অনুগামীদের কাছ থেকে দর্শকদের সরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু উত্তম কারণে, পৌল করিন্থীয়দের সতর্ক করে দিয়েছিলেন: “‘যিহোবার মেজ’ ও মন্দ দূতেদের মেজ, তোমরা এই উভয় মেজে পান করতে পার না।” (১ করিন্থীয় ১০:২১, NW) এটা আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, প্রথম-শতাব্দীর খ্রীষ্টানেরা ভবিষ্যৎকথনের সাথে সম্পর্কযুক্ত তাদের সমস্ত বইগুলি নষ্ট করে দিয়েছিল।—প্রেরিত ১৯:১৯.
এক ‘দূত আকাশের মধ্যপথে উড়িতেছেন’
আমরা যেমন ইতিমধ্যেই দেখলাম যে বাইবেল উন্মোচন করে দিয়েছে যে, বর্তমানের এই দূত আন্দোলন ঘনিষ্ঠভাবে ঈশ্বরের শত্রু, শয়তান দিয়াবলের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এর অর্থ কি এই যে পবিত্র দূতেরা মানুষের কাজের সাথে যুক্ত নন? বরঞ্চ এর বিপরীতে, বলা যায় যে এখন তারা পৃথিবীতে সবচাইতে এক শক্তিশালী কাজ করে চলেছে। সেটা কী? এর উত্তর পেতে হলে, আমাদের অবশ্যই বাইবেলের প্রকাশিত বাক্য পুস্তকটি দেখতে হবে। বাইবেলের অন্যান্য যে কোন বইয়ের চাইতে এই বইটিতে দূতেদের কথা বেশি বার উল্লেখ করা আছে।
প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬, ৭ পদে আমরা প্রেরিত যোহনের দ্বারা লিপিবদ্ধ সেই ভবিষ্যদ্বাণীমূলক দর্শনটির কথা পড়ি যা তিনি পেয়েছিলেন: “আমি আর এক দূতকে দেখিলাম, তিনি আকাশের মধ্যপথে উড়িতেছেন, তাঁহার কাছে অনন্তকালীন সুসমাচার আছে, যেন তিনি পৃথিবী-নিবাসীদিগকে, প্রত্যেক জাতি ও বংশ ও ভাষা ও প্রজাবৃন্দকে সুসমাচার জানান; তিনি উচ্চ রবে এই কথা কহিলেন, ঈশ্বরকে ভয় কর, ও তাঁহাকে গৌরব প্রদান কর, কেননা তাঁহার বিচার-সময় উপস্থিত; যিনি স্বর্গ, পৃথিবী, সমুদ্র ও জলের উনুই সকল উৎপন্ন করিয়াছেন, তাঁহার ভজনা কর।”
আজকে দূতেদের প্রধান কাজ সম্পর্কে এই শাস্ত্রটি আলোকপাত করে। তারা এক বিশেষ প্রাধান্য-প্রাপ্ত কাজের সাথে যুক্ত—অর্থাৎ ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণার কাজ। এই কাজ সম্পর্কেই যীশু তাঁর অনুগামীদের প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।” (মথি ২৮:১৮-২০) যীশু কিভাবে তাঁর অনুগামীদের সাথে আছেন? একটি উপায় হল যে তিনি আমাদের দূতেদের সাহায্য দান করেছেন যাতে করে এই বিশাল কাজটি সম্পাদিত হতে পারে।
যিহোবার সাক্ষীরা বছরে ১০০ কোটির বেশি ঘন্টা ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার কাজে ব্যয় করে। এই কাজ করার সময় তারা দূতেদের পরিচালনার প্রমাণ দেখতে পান। ঘরে ঘরে পরিচর্যা করার সময়, প্রায়ই এটা ঘটেছে যে তারা এমন কোন ব্যক্তিবিশেষের সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছে যারা এমন কাউকে তাদের কাছে পাঠানোর জন্য প্রার্থনা করছিল যারা তাদের ঈশ্বরের উদ্দেশ্যগুলিকে বুঝিয়ে দিতে সাহায্য করতে পারবে। দূতেদের সাহায্য ও এর সাথে সাক্ষীদের নিজস্ব প্রচেষ্টার ফলে প্রতি বছরে সহস্র সহস্র লোক যিহোবার জ্ঞান নিতে আসছে!
আকাশের মধ্যপথে যে দূত উড়ে চলেছেন তার কথা কি আপনি শুনছেন? এরপর যিহোবার সাক্ষীরা যখন আপনার বাড়িতে আসবে, তখন তাদের সাথে এই দূতেদের বার্তা সম্বন্ধে আরও ভালভাবে আলোচনা করুন না কেন?
[পাদটীকাগুলো]
a “শয়তান” ও “দিয়াবল” এই দুটি শব্দের অর্থ হল “বিপক্ষ” ও “অপবাদক।”
b যদিও মিখায়েল ও গাব্রিয়েলের কথা বাইবেলে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু রাফাইয়েল ও ইউরিয়ালের নাম, অপ্রামাণিক বইগুলির মধ্যে পাওয়া যায় যা বাইবেল প্রামাণিক গ্রন্থসমূহের অংশ নয়।
c লক্ষ্য করুন যে প্রার্থনা করা হয় যীশুর নামের মাধ্যমে, কিন্তু তার কাছে নয়। প্রার্থনা করা হয় যীশুর নামে কারণ তাঁর পাতিত রক্ত ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগের পথ খুলে দিয়েছে।—ইফিষীয় ২:১৩-১৯; ৩:১২.
[৮ পৃষ্ঠার বাক্স]
দূতেরা কারা?
অধিকাংশ লোকের যে বিশ্বাস, তার বিপরীতে বলা যায় যে দূতেরা কোন মৃত মানুষের গমনার্হ প্রাণ নয়। বাইবেল স্পষ্টভাবে জানায় যে মৃতেরা “কিছুই জানে না।” (উপদেশক ৯:৫) তাহলে, কোথা থেকে দূতেরা আসল? বাইবেল ইঙ্গিত দেয় যে পৃথিবী গোড়াপত্তন হওয়ার আগে তারা ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরের দ্বারা সৃষ্ট হয়েছিল। (ইয়োব ৩৮:৪-৭) ঈশ্বরের স্বর্গীয় পরিবারের সংখ্যা হতে পারে শতাধিক লক্ষ, সম্ভবত কোটি কিংবা তারও বেশি! কিছু দূত শয়তানের সাথে বিদ্রোহে যোগ দিয়েছিল।—দানিয়েল ৭:১০; প্রকাশিত বাক্য ৫:১১; ১২:৭-৯.
যেহেতু যিহোবা হলেন সুসংগঠিত ঈশ্বর, অতএব এটা আশ্চর্যের বিষয় নয় যে তাঁর দূতেদের বিশাল পরিবারও সংগঠিত।—১ করিন্থীয় ১৪:৩৩.
• ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে সবচাইতে প্রধান দূত হলেন যীশু খ্রীষ্ট, তাঁকে মিখায়েলও বলা হয়। (১ থিষলনীকীয় ৪:১৬; যিহূদা ৯) তাঁর কর্তৃত্বের অধীনে আছেন সরাফগণ, করূবগণ এবং দূতেরা।
• সরাফগণ ঈশ্বরের সিংহাসনের সামনে উপস্থিত। স্পষ্টতই, তাদের কাজের অন্তর্ভুক্ত হল ঈশ্বরের পবিত্রতা ঘোষণা করা ও তাঁর লোকেদের পরিচ্ছন্ন রাখা।—যিশাইয় ৬:১-৩, ৬, ৭.
• করূবদের-ও যিহোবার উপস্থিতির সামনে দেখা যায়। ঈশ্বরের সিংহাসনের বাহক অথবা সহচর হিসাবে, তারা যিহোবার মহিমাকে তুলে ধরে।—গীতসংহিতা ৮০:১; ৯৯:১; যিহিষ্কেল ১০:১, ২.
• দূতেরা (অর্থ “সংবাদবাহক”) হলেন যিহোবার প্রতিনিধি। তারা ঐশিক ইচ্ছা পালন করে থাকেন, তার অন্তর্ভুক্ত ঈশ্বরের লোককে উদ্ধার করা অথবা দুষ্টের ধ্বংস আনা, যাই হোক না কেন।—আদিপুস্তক ১৯:১-২৬.
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
আকাশের মধ্যপথে যে দূত উড়ে চলেছেন তার কথা কি আপনি শুনছেন?