প্রেরিতদের সময়ে দীপ্তির ঝলকগুলি
“দীপ্তি বপণ করা গিয়াছে ধার্ম্মিকের জন্য, আর সরলচিত্তদের জন্য আনন্দ।”—গীতসংহিতা ৯৭:১১.
১. বর্তমান দিনের যিহোবার সাক্ষীদের সাথে প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের কী মিল দেখা যায়?
সত্য খ্রীষ্টানরূপে গীতসংহিতা ৯৭:১১ পদের কথাগুলি আমরা কতই না উপলবদ্ধি করি! বারংবার আমাদের জন্য ‘দীপ্তি ঝলক দিয়ে উঠেছে’। অবশ্যই, কয়েক দশক যাবৎ আমাদের মধ্যে বেশ কিছু জন যিহোবার দ্বারা প্রজ্জ্বলিত দীপ্তিগুলি দেখেছি। এই সবই আমাদের হিতোপদেশ ৪:১৮ পদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যা বলে: “ধার্ম্মিকদের পথ প্রভাতীয় জ্যোতির ন্যায়, যাহা মধ্যাহ্ন পর্য্যন্ত উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান হয়।” পরম্পরাগত বিধিকে দূরে সরিয়ে রেখে যেহেতু আমরা শাস্ত্রীয় নীতিকে বেশি প্রাধান্য দিই, তাই যিহোবার সাক্ষীরূপে আমরা প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের সমরূপ। খ্রীষ্টীয় গ্রীক শাস্ত্রের ঐতিহাসিক পুস্তকগুলি এবং তার পত্রসকল, যেগুলি ঐশিক অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছে, তা থেকে অতি স্বচ্ছভাবে আমরা তাদের মনোভাব বুঝতে পারি।
২. প্রথম দীপ্তির ঝলকগুলি কী ছিল যা যীশুর অনুগামীরা পেয়েছিল?
২ যীশু খ্রীষ্টের প্রাথমিক অনুগামীরা যে প্রথম দীপ্তির ঝলক দেখেছিলেন, তার সাথে মশীহের সম্পর্ক আছে। আন্দ্রিয় তার ভাই শিমোন পিতরকে বলেছিলেন: “আমরা মশীহের দেখা পাইয়াছি।” (যোহন ১:৪১) কিছু সময় পরে স্বর্গীয় পিতা প্রেরিত পিতরকে বিষয়টি সত্য বলে সাক্ষ্য দিতে সক্ষম করেন, যখন তিনি যীশু খ্রীষ্টকে বলেন: “আপনি সেই খ্রীষ্ট, জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্ত্র।”—মথি ১৬:১৬, ১৭; যোহন ৬:৬৮, ৬৯.
তাদের প্রচার কাজের বিষয়ে দীপ্তি
৩, ৪. তাঁর পুনরুত্থানের পরে, যীশু তাঁর অনুগামীদের তাদের ভবিষ্যৎ কাজের বিষয়ে কী জ্ঞানালোক প্রদান করেন?
৩ যীশু খ্রীষ্ট তাঁর পুনরুত্থানের পর তাঁর সকল অনুগামীদের তাদের দায়িত্বের উপরে দীপ্তির ঝলকগুলি দেন। খুব সম্ভবত এটা ছিল গালীলে একত্রিত সেই ৫০০ জন শিষ্য, যাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি, সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও। আর দেখ, আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।” (মথি ২৮:১৯, ২০; ১ করিন্থীয় ১৫:৬) তারপর থেকে, খ্রীষ্টের সকল অনুগামীদের প্রচারক হতে হয়, আর তাদের প্রচারের দায়িত্ব শুধুমাত্র “ইস্রায়েল-কুলের হারান মেষগণের” মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। (মথি ১০:৬) তাদের যোহনের মত বাপ্তিস্মও দিতে হত না, যা তাদের পাপের ক্ষমার জন্য অনুতপ্তের চিহ্ন ছিল। বরঞ্চ, লোকেদের “পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে” তাদের বাপ্তাইজিত করতে হত।
৪ যীশুর স্বর্গারোহণের ঠিক আগে তাঁর ১১ জন বিশ্বস্ত প্রেরিত জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “প্রভু, আপনি কি এই সময়ে ইস্রায়েলের হাতে রাজ্য ফিরাইয়া আনিবেন?” সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, যীশু তাদের প্রচারের দায়িত্বের বিষয়ে আরও কিছু উপদেশ দেন, এই বলে: “পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে আসিলে তোমরা শক্তি প্রাপ্ত হইবে; আর তোমরা যিরূশালেমে, সমুদয় যিহূদীয়া ও শমরিয়া দেশে, এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত আমার সাক্ষী হইবে।” এতক্ষণ পর্যন্ত তারা শুধুমাত্র যিহোবার সাক্ষী ছিলেন, কিন্তু এখন থেকে তারা যীশুরও সাক্ষী।—প্রেরিত ১:৬-৮.
৫, ৬. পঞ্চাশত্তমীতে যীশুর শিষ্যেরা দীপ্তির কোন্ ঝলকগুলি পায়?
৫ ঠিক দশ দিন বাদে, দীপ্তির কী প্রখর ঝলকগুলিই না যীশুর অনুগামীরা পেয়েছিলেন! সা.শ. ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমীর দিনে তারা প্রথমবার যোয়েল ২:২৮, ২৯ পদের তাৎপর্য উপলব্ধি করেন: “আমি [যিহোবা] মর্ত্ত্যমাত্রের উপরে আমার আত্মা সেচন করিব, তাহাতে তোমাদের পুত্ত্রকন্যাগণ ভাববাণী বলিবে তোমাদের প্রাচীনেরা স্বপ্ন দেখিবে, তোমাদের যুবকেরা দর্শন পাইবে; আর তৎকালে আমি দাসদাসীদিগেরও উপরে আমার আত্মা সেচন করিব।” যীশুর শিষ্যেরা পবিত্র আত্মা অগ্নিবৎ জিহ্বার আকারে সকলের মাথার উপরে পড়তে দেখেছিলেন—প্রায় ১২০ জন পুরুষ এবং নারীর উপর—যারা যিরূশালেমে একত্রিত হয়েছিলেন।—প্রেরিত ১:১২-১৫; ২:১-৪.
৬ এছাড়াও, পঞ্চাশত্তমীর দিনে শিষ্যেরা প্রথমবার উপলব্ধি করেন যে গীতসংহিতা ১৬:১০ পদের কথাগুলি পুনরুত্থিত যীশু খ্রীষ্টের প্রতি প্রযোজ্য। গীতরচক সেখানে বলেছিলেন: “তুমি [যিহোবা ঈশ্বর] আমার প্রাণ পাতালে পরিত্যাগ করিবে না, তুমি নিজ সাধুকে ক্ষয় দেখিতে দিবে না।” শিষ্যেরা বুঝতে পেরেছিলেন যে এই কথাগুলি রাজা দায়ূদের প্রতি প্রযোজ্য হতে পারে না, কারণ তার সমাধি তাদের সঙ্গে সেই দিন পর্যন্ত ছিল। এটা আশ্চর্যের কিছু নয় যে প্রায় ৩,০০০ জন যারা সেই নতুন দীপ্তির ব্যাখ্যা শুনেছিল, এতই নিশ্চিত হয়েছিল যে সেই দিনেই তারা বাপ্তিস্ম নিয়েছিল!—প্রেরিত ২:১৪-৪১.
৭. রোমীয় সেনাপতি কর্ণীলিয়ের সাথে সাক্ষাতের সময়ে প্রেরিত পিতর কী প্রখর দীপ্তি পান?
৭ বহু শতাব্দী ব্যাপী ঈশ্বর তাদের বিষয়ে যা বলেছিলেন, তা ইস্রায়েলীয়রা উপলব্ধি করেছিল: “আমি পৃথিবীস্থ সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্যে তোমাদেরই পরিচয় লইয়াছি।” (আমোষ ৩:২) তাহলে, এটা ছিল অবশ্যই প্রখর এক দীপ্তির ঝলক যা প্রেরিত পিতর এবং তার সঙ্গীরা যারা তার সাথে রোমীয় সেনাপতি কর্ণীলিয়ের ঘরে যাওয়ার সময় পেয়েছিলেন, যখন পবিত্র আত্মা প্রথমবার অছিন্নত্বক পরজাতীয় বিশ্বাসীদের উপরে নেমে আসে। এটা উল্লেখযোগ্য যে শুধুমাত্র এই একবারই পবিত্র আত্মা বাপ্তিস্মের আগেই দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তেমন করার প্রয়োজনও ছিল। তা না হলে, পিতর জানতেই পারতেন না এই অছিন্নত্বক পরজাতীয়েরা বাপ্তিস্মের যোগ্য। সমম্ত বিষয়টির তাৎপর্য সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করার পর পিতর জিজ্ঞাসা করেন: “এই যে লোকেরা আমাদেরই ন্যায় পবিত্র আত্মা প্রাপ্ত হইয়াছেন, কেহ কি জল নিবারণ করিয়া ইহাঁদের [পরজাতীয়দের] বাপ্তাইজিত হইবার বাধা দিতে পারে?” অবশ্যই, সেইখানে এমন কেউই উপস্থিত ছিল না, যে ন্যায়সঙ্গতভাবে বাধা দিতে পারত এবং যার ফলে এই পরজাতীয়দের বাপ্তিস্ম হয়।—প্রেরিত ১০:৪৪-৪৮; তুলনা করুন প্রেরিত ৮:১৪-১৭.
আর ত্বক্চ্ছেদের প্রয়োজন নেই
৮. কিছু প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের পক্ষে কেন ত্বক্চ্ছেদের শিক্ষাকে বর্জন করা কঠিন হয়ে পড়েছিল?
৮ ত্বক্চ্ছেদের প্রশ্নকে কেন্দ্র করে আরও প্রখর এক সত্যের ঝলক দেখা দিয়েছিল। ত্বক্চ্ছেদের প্রচলন শুরু হয় সা.শ.পূ. ১৯১৯ সাল থেকে যখন অব্রাহাম এবং যিহোবার মধ্যে চুক্তি হয়। ঈশ্বর অব্রাহামকে আদেশ দেন যে তাকে এবং তার পরিবারের সকলকে ত্বক্চ্ছেদ করতে হবে। (আদিপুস্তক ১৭:৯-১৪, ২৩-২৭) ফলে অব্রাহামের বংশধরদের সঙ্গে অন্যান্যদের চেনার জন্য ত্বক্চ্ছেদ চিহ্নস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। আর এই প্রথার জন্য তারা কতই না গর্বিত ছিল! এর ফলস্বরূপ, “অছিন্নত্বক” শব্দটি এক অবজ্ঞার পাত্র হয়ে দাঁড়ায়। (যিশাইয় ৫২:১; ১ শমূয়েল ১৭:২৬, ২৭) এটা বোঝা সহজ যে কেন বিশেষ কিছু যিহূদী খ্রীষ্টান এই প্রতীকটিকে ধরে রাখতে চেয়েছিল। তাদের কেউ কেউ পৌল এবং বার্ণবার সঙ্গে এই বিষয়ে বেশ কিছু আলোচনাও করেছিল। এই বিষয়ে নিষ্পত্তি করার জন্য পৌল এবং অন্যান্যেরা যিরূশালেমে খ্রীষ্টীয় পরিচালক গোষ্ঠীর সাথে আলোচনা করতে যায়।—প্রেরিত ১৫:১, ২.
৯. প্রাথমিক পরিচালক গোষ্ঠীর কাছে দীপ্তির কোন্ কোন্ ঝলক দেখান হয়, যেগুলি প্রেরিত ১৫ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ করা আছে?
৯ এমন পরিস্থিতিতে অলৌকিক কিছুই ঘটেনি, যে সেই প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা জানতে পারে যে যিহোবার দাসেদের জন্য আর ত্বক্চ্ছেদের প্রয়োজন নেই। বরং, শাস্ত্র খুঁজে, পবিত্র আত্মার নির্দেশনা নিয়ে এবং পিতর ও পৌলের কাছে অছিন্নত্বক পরজাতীয়েরা কিভাবে ধর্মান্তরিত হয়েছিল, তা শুনে সে বিষয়ে তাদের জ্ঞানরূপ দীপ্তি বৃদ্ধি করে। (প্রেরিত ১৫:৬-২১) সিদ্ধান্তটি লিখিত এক পত্রের দ্বারা প্রকাশ পায়, যার খানিকটা পড়লে দাঁড়ায়: “পবিত্র আত্মার ও আমাদের ইহা বিহিত বোধ হইল, যেন এই কয়েকটী প্রয়োজনীয় বিষয় ছাড়া তোমাদের উপরে আর কোন ভার না দিই, ফলে প্রতিমার প্রসাদ এবং রক্ত ও গলা টিপিয়া মারা প্রাণীর মাংস ও ব্যভিচার, হইতে পৃথক্ থাকা তোমাদের উচিত।” (প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯) এইভাবে প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা ত্বকচ্ছেদের আদেশ এবং মোশির নিয়মের অন্যান্য বাধ্যবাধকতা থেকে রেহাই পায়। তাই, পৌল গালাতীয় খ্রীষ্টানদের বলতে পেরেছিলেন: “স্বাধীনতার নিমিত্তই খ্রীষ্ট আমাদিগকে স্বাধীন করিয়াছেন।”—গালাতীয় ৫:১.
সুসমাচারের পুস্তকগুলির উপর দীপ্তি
১০. মথির সুসমাচারের পুস্তকে কোন্ কোন্ দীপ্তির ঝলক প্রকাশ পায়?
১০ নিঃসন্দেহে, সা.শ. ৪১ সালে লিখিত মথির পুস্তকে পাঠকদের উপকারার্থে অনেক জ্ঞানরূপ দীপ্তি রয়েছে। তুলনামূলকভাবে, প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের অতি অল্পসংখ্যকই ব্যক্তিগতভাবে যীশুকে বিস্তারিতভাবে শিক্ষা দিতে শুনেছিলেন। বিশেষ করে, মথির পুস্তক জোর দিয়ে বলে যে যীশুর প্রচারের বিষয়বস্তুই ছিল রাজ্য। আর কত দৃঢ়ভাবেই না যীশু সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখার প্রতি জোর দেন! তাঁর পর্বতে দত্ত উপদেশে, শিক্ষামূলক দৃষ্টান্তে (যেমন ১৩ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ আছে) এবং ২৪ ও ২৫ অধ্যায়ে তাঁর মহৎ ভাববাণীগুলিতে কী ধরনের দীপ্তির ঝলকই না দেখা যায়! শুধুমাত্র মথি পুস্তক থেকেই এইসকল বিষয়গুলি প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের দৃষ্টিগোচরে আনা হয় সা.শ. ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমীর প্রায় আট বছর বাদে লেখা হয়েছিল।
১১. লূক এবং মার্কের সুসমাচারের পুস্তকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে কী বলা যায়?
১১ এর প্রায় ১৫ বছর বাদে, লূক তার সুসমাচার লেখেন। যদিও তার বিবরণ অনেকাংশেই মথির বিবরণের মত, তথাপি ৫৯ শতাংশ অতিরিক্ত আছে। লূক, যীশুর ছটি অলৌকিক কাজের বিবরণ লিপিবদ্ধ এবং এর দ্বিগুণেরও বেশি সংখ্যায় তাঁর দেওয়া বহু দৃষ্টান্তের উল্লেখ করেন যা অন্যান্য সুসমাচার লেখকেরা করেননি। সম্ভবত, মাত্র কয়েক বছর বাদেই, মার্ক তার সুসমাচার লেখেন, যেখানে তিনি যীশুকে বীরপুরুষ, অলৌকিক কার্যকারী ব্যক্তি হিসাবে জোর দেন। মথি এবং লূক ইতিমধ্যেই যা লিপিবদ্ধ করেছিলেন, যদিও মার্ক তারই পুনরাবৃত্তি করেন, তথাপি তিনি একটি অতিরিক্ত দৃষ্টান্তের উল্লেখ করেন, যেটি তারা করেননি। এই দৃষ্টান্তে যীশু ঈশ্বরের রাজ্যকে বীজের সাথে তুলনা করেন, যা গজিয়ে ওঠে, আকারে লম্বা হয় এবং ধীরে ধীরে ফল দিতে থাকে।a—মার্ক ৪:২৬-২৯.
১২. যোহনের সুসমাচারের পুস্তক আরও কতটা পরিমাণ জ্ঞানালোক প্রদান করে?
১২ এরপর আসে যোহনের সুসমাচার, যা প্রায় মার্কের লেখার ৩০ বছরেরও বেশি পরে লেখা হয়েছিল। যীশুর পরিচর্যার উপরে যোহন কতই না দীপ্তির স্রোত এনেছিলেন, বিশেষ করে তাঁর মানবরূপে পার্থিব জীবনের পূর্বেকার অস্তিত্বের বহু প্রসঙ্গগুলির মাধ্যমে! একমাত্র যোহনই লাসারের পুনরুত্থানের বিবরণ দেন এবং তিনিই বিশ্বস্ত প্রেরিতদের সপক্ষে যীশুর উত্তম মন্তব্যগুলি, আর সেইসঙ্গে ১৩ থেকে ১৭ অধ্যায়ে উল্লেখিত যীশুর বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করার রাত্রে তিনি যে হৃদয়গ্রাহী প্রার্থনাগুলি করেছিলেন, সেই সকলের বিবরণ দেন। বস্তুতপক্ষে বলা হয়, যোহনের সুসমাচারের ৯২ শতাংশ হল অদ্বিতীয়।
পৌলের পত্রগুলি থেকে দীপ্তির ঝলক
১৩. রোমীয়দের প্রতি লিখিত পৌলের পত্রকে কেন কিছু ব্যক্তিরা সুসমাচারের পুস্তক বলে গণ্য করে?
১৩ প্রেরিতদের সময়ে যে সব খ্রীষ্টানেরা জীবিত ছিল, তাদের কাছে সত্যরূপ দীপ্তির ঝলক পৌঁছে দেবার জন্য বিশেষ করে প্রেরিত পৌলকে ব্যবহার করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, রোমীয়দের প্রতি লিখিত পৌলের পত্রটি, যেটি প্রায় লেখা হয়েছিল সা.শ. ৫৬ সালে—মোটামুটি লূক যে সময়ে তার সুসমাচারটি লিখেছিলেন, সেই সময়েই। এই পত্রে পৌল ঈশ্বরের অযাচিত অনুগ্রহ এবং যীশু খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাস করার দ্বারা যে ধার্মিকতা অর্পণ করা হয়, তার উপর আলোকপাত করেছেন। সুসমাচারের এই দিকটির প্রতি পৌল জোর দেওয়াতে কিছুজন ধারণা করতে শুরু করে যে রোমীয়দের প্রতি লিখিত তার এই পত্রটি ছিল পঞ্চম সুসমাচারের পুস্তক।
১৪-১৬. (ক) করিন্থে খ্রীষ্টানদের প্রতি লিখিত পত্রে পৌল একতার প্রয়োজনীয়তার উপরে কিভাবে আলোকপাত করেন? (খ) আচরণের ক্ষেত্রে প্রথম করিন্থীয়ের পুস্তক আরও কিভাবে আলোকপাত করে?
১৪ পৌল কয়েকটি বিশেষ বিষয় লিখেছিলেন যেগুলি করিন্থের খ্রীষ্টানদের কষ্ট দিচ্ছিল। করিন্থীয়দের প্রতি লিখিত তার পত্রে প্রচুর অনুপ্রাণিত উপদেশ আছে, যা আমাদের দিন পর্যন্ত খ্রীষ্টানদের উপকার করে আসছে। কিছু ব্যক্তিবিশেষকে কেন্দ্র করে করিন্থীয়রা উপাসনার পদ্ধতি গড়ে তোলার মধ্যে যে ভুল করছিল, সেই বিষয়ে তিনি শুরুতেই তাদের সচেতন করে দেন। প্রেরিত সাহসের সাথে তাদের মনোভাবকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন এই বলে: “হে ভ্রাতৃগণ, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে আমি তোমাদিগকে বিনয় করিয়া বলি, তোমরা সকলে একই কথা বল, তোমাদের মধ্যে দলাদলি না হউক, কিন্তু এক মনে ও এক বিচারে পরিপক্ব হও।”—১ করিন্থীয় ১:১০-১৫.
১৫ করিন্থীয় মণ্ডলীর ভিতরে গুরুতর অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছিল। সেখানে এক ব্যক্তি তার পিতার স্ত্রীকে গ্রহণ করেছিল, এইভাবে ‘এমন ব্যভিচার, যাহা পরজাতীয়দের মধ্যেও ছিল না’ অভ্যাস করেছিল। পরিষ্কারভাবে পৌল লিখেছিলেন: “তোমরা আপনাদের মধ্য হইতে সেই দুষ্টকে বাহির করিয়া দেও।” (১ করিন্থীয় ৫:১, ১১-১৩) সমাজচ্যুত করা—বিষয়টি খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর কাছে সম্পূর্ণ নতুন ছিল। আর একটি বিষয়ে করিন্থীয় মণ্ডলীকে জাগিয়ে তোলার প্রয়োজন ছিল, সেটি হল সেখানকার সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের আধ্যাত্মিক ভাইদের জাগতিক বিচারালয়ে নিয়ে গিয়ে তাদের ক্ষোভ মেটাচ্ছিল। এই কাজের জন্য পৌল তাদের দৃঢ়তার সাথে তিরষ্কার করেছিলেন।—১ করিন্থীয় ৬:৫-৮.
১৬ আরেকটি বিষয়, যা করিন্থীয় মণ্ডলীকে দূষিত করছিল তা হল যৌন সম্পর্ক। ১ করিন্থীয়ের ৭ অধ্যায়ে পৌল দেখিয়ে দেন যে যৌন অনৈতিকতা থাকার দরুন প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত তার স্ত্রী থাকা, এবং প্রতিটি নারীর উচিত আপন স্বামী থাকা। পৌল এও বলেছিলেন যে অবিবাহিত ব্যক্তিরা যিহোবার সেবায় একনিষ্ঠ হতে পারে, কিন্তু এই অবিবাহিত থাকার সুযোগ সকলের হয় না। আর যদি এক স্ত্রীর স্বামী মারা যায়, তাহলে সে পুনরায় বিবাহ করতে পারে, কিন্তু “কেবল প্রভুতেই।”—১ করিন্থীয় ৭:৩৯.
১৭. পুনরুত্থানের শিক্ষার উপরে পৌল কিভাবে আলোকপাত করেন?
১৭ পুনরুত্থানের বিষয়ে সত্যের কোন্ আলোক প্রকাশ করার জন্য প্রভু পৌলকে ব্যবহার করেন! কিধরনের শরীরে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা উত্থিত হবে? “প্রাণিক দেহ বপন করা যায়, আত্মিক দেহ উত্থাপন করা হয়,” পৌল লিখেছিলেন। কোন মাংসিক শরীরই স্বর্গে যেতে পারে না, কারণ “রক্ত মাংস ঈশ্বরের রাজ্যের অধিকারী হইতে পারে না।” পৌল আরও বলেন যে, সকল অভিষিক্ত জনকেই মৃত্যুতে ঘুমিয়ে পড়তে হবে না, কিন্তু যীশুর উপস্থিতি কালে কিছু জন মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে স্বর্গে অমর জীবনে উত্থিত হবে।—১ করিন্থীয় ১৫:৪৩-৫৩.
১৮. থিষলনীকীয়দের প্রতি লিখিত পৌলের প্রথম পত্র ভবিষ্যতের বিষয়ে কী আশা দেয়?
১৮ থিষলনীকীয়তে খ্রীষ্টানদের প্রতি লিখিত তার পত্রে পৌল ভবিষ্যতের বিষয়ে দীপ্তি প্রদর্শন করতে ব্যবহৃত হয়েছিলেন। যিহোবার দিন রাত্রে চোরের ন্যায় আসবে। পৌল আরও ব্যাখ্যা করে বলেন: “লোকে যখন বলে, শান্তি ও অভয়, তখনই তাহাদের কাছে যেমন গর্ব্ভবতীর প্রসব-বেদনা উপস্থিত হইয়া থাকে, তেমনি আকস্মিক বিনাশ উপস্থিত হয়; আর তাহারা কোন ক্রমে এড়াইতে পারিবে না।”—১ থিষলনীকীয় ৫:২, ৩.
১৯, ২০. ইব্রীয়দের প্রতি লিখিত পৌলের পত্র থেকে যিরূশালেম এবং যিহূদার খ্রীষ্টানেরা কী দীপ্তির ঝলক পায়?
১৯ ইব্রীয়দের প্রতি লিখিত তার পত্রের মাধ্যমে পৌল যিরূশালেম এবং যিহূদার প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের কাছে দীপ্তির ঝলক প্রেরণ করেন। কত প্রখরভাবে তিনি মোশির নিয়মের অধীনে উপাসনার চাইতে, খ্রীষ্টীয় ব্যবস্থার উপাসনার উৎকৃষ্টতা দেখিয়ে দেন! দূতেদের দ্বারা দেওয়া নিয়ম মেনে চলার চাইতে খ্রীষ্টানদের বিশ্বাস রয়েছে ঈশ্বরের পুত্রের দ্বারা প্রথম কথিত পরিত্রাণের উপর, যিনি সংবাদবাহক দূতেদের চেয়ে অনেক বেশি উৎকৃষ্ট। (ইব্রীয় ২:২-৪) ঈশ্বরের গৃহে মোশি কেবলমাত্র একজন পরিচালক ছিলেন। কিন্তু, যীশু খ্রীষ্ট সমস্ত গৃহেরই সভাপতিত্ব করেন। মল্কীষেদকের রীতি অনুসারে যীশু হলেন একজন মহাযাজক, যা হারোণের পৌরহিত্য ব্যবস্থার চেয়ে অনেক বেশি উচ্চতর। পৌল আরও উল্লেখ করেন যে ইস্রায়েলীয়রা অবিশ্বস্ততা এবং অবাধ্যতার কারণে ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করতে পারেনি। কিন্তু খ্রীষ্টানেরা তাদের বাধ্যতা এবং বিশ্বস্ততার জন্য তা করতে পারে।—ইব্রীয় ৩:১-৪:১১.
২০ এছাড়াও, নিয়ম চুক্তির তুলনায় নতুন চুক্তি অনেক উৎকৃষ্ট। ৬০০ বছর আগে যিরমিয় ৩১:৩১-৩৪ পদে যেমন ভাববাণী করা হয়েছিল, যারা নতুন চুক্তির অন্তর্ভুক্ত, ঈশ্বরের নিয়ম তাদের হৃদয়ে লিখিত থাকে এবং পাপ থেকে প্রকৃত ক্ষমা উপভোগ করে। এমন একজন মহাযাজক যাকে প্রতি বছর নিজের ও অপরের জন্য প্রায়শ্চিত্তমূলক বলিদান করতে হয়, তেমন না হয়ে খ্রীষ্টানদের জন্য রয়েছেন মহাযাজক, যীশু খ্রীষ্ট, যিনি নিষ্পাপ এবং একবারই এবং সকলের পাপের নিমিত্ত বলি উৎসর্গ করেছেন। হস্তনির্মিত পবিত্র স্থানে তাঁর নৈবেদ্য উৎসর্গ করার জন্য প্রবেশ করার পরিবর্তে তিনি স্বর্গেই যিহোবার সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্য প্রবেশ করেন। এছাড়াও, মোশির নিয়ম চুক্তির অধীনে পশুবলি সম্পূর্ণরূপে পাপ হরণ করতে পারত না, কেননা তা না হলে প্রতি বছর তা করার প্রয়োজন থাকত না। কিন্তু খ্রীষ্টের বলিদান পাপ সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলতে পারে যা সর্বকালের জন্য একবারই অর্পণ করা হয়েছে। এই সব কিছুই সেই বৃহৎ আত্মিক মন্দিরের প্রতি আলোকপাত করায়, যার প্রাঙ্গণে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা এবং “অপর মেষ” আজ উপাসনা করে।—যোহন ১০:১৬; ইব্রীয় ৯:২৪-২৮, NW.
২১. প্রেরিতদের সময়ে গীতসংহিতা ৯৭:১১ এবং হিতোপদেশ ৪:১৮ পদের পরিপূর্ণতার বিষয়ে এই আলোচনা কী জানায়?
২১ আরও অধিক কিছু দীপ্তির ঝলকের দৃষ্টান্ত দেওয়ার মত জায়গা নেই, যে ধরনের দীপ্তির ঝলকের দৃষ্টান্ত প্রেরিত পিতর, শিষ্য যাকোব ও যিহূদার পত্রগুলিতে দেখা যায়। কিন্তু এতক্ষণ যেগুলি আলোচিত হয়েছে, সেগুলি প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট যে গীতসংহিতা ৯৭:১১ এবং হিতোপদেশ ৪:১৮ পদ প্রেরিতদের সময়ে জোরদারভাবে পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল। সত্য, প্রতীক এবং ছায়া অতিক্রম করে পরিপূর্ণতার এবং বাস্তবতার দিকে এগিয়ে চলে।—গালাতীয় ৩:২৩-২৫; ৪:২১-২৬.
২২. প্রেরিতদের মৃত্যুর পরে কী ঘটে এবং পরবর্তী প্রবন্ধ কী দেখাবে?
২২ যীশুর প্রেরিতদের মৃত্যুর পরে এবং পূর্বকথিত ধর্মভ্রষ্টতা শুরু হওয়ার সাথে সাথেই সত্যের দীপ্তি খুব ক্ষীণ হয়ে আসে। (২ থিষলনীকীয় ২:১-১১) যাইহোক, যীশুর প্রতিজ্ঞার সত্যতা অনুসারে বহু শতাব্দী অতিক্রান্ত হওয়ার পরে প্রভু প্রত্যাবর্তন করেন এবং দেখতে পান যে “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” যথাসময়ে “পরিজনের” খাদ্য পরিবেশনে ব্যস্ত। আর তাই যীশু খ্রীষ্ট সেই দাসকে “আপন সর্ব্বস্বের অধ্যক্ষ” করেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) এর পরে আর কী দীপ্তির ঝলক দৃশ্যপটে ভাসে? তা পরবর্তী প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে।
[পাদটীকাগুলো]
a এখানে জমি, পরিস্থিতিকে চিত্রিত করে, যেখানে খ্রীষ্টানেরা তাদের ব্যক্তিত্বের গুণগুলিকে অনুশীলন করার সুযোগ পায়।—দেখুন প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি), জুন ১৫, ১৯৮০, পৃষ্ঠা ১৮-১৯.
আপনি কি স্মরণ করতে পারেন?
◻ সত্য যে এগিয়ে চলেছে, সেই বিষয়ে বাইবেলের কোন্ শাস্ত্রপদ আলোকপাত করে?
◻ প্রেরিতদের পুস্তকে দীপ্তির কোন্ কোন্ ঝলক লিপিবদ্ধ করা আছে?
◻ সুসমাচারের পুস্তক থেকে কী দীপ্তি পাওয়া যায়?
◻ পৌলের পত্রগুলি কোন্ দীপ্তির ঝলক বহন করে?