‘তোমরা পবিত্র হইবে কারণ আমি পবিত্র’
“তোমরা পবিত্র হও, কেননা আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর পবিত্র।”—লেবীয় পুস্তক ১৯:২.
১. এমন কিছু ব্যক্তি কারা যারা জগতের দ্বারা পবিত্র বলে বিবেচিত হয়েছেন?
জগতের অধিকাংশ বড় বড় ধর্মগুলিতে পবিত্র বলে বিবেচিত হন এমন ব্যক্তিরা রয়েছেন। ভারতীয় খ্যাতি, মাদার তেরেসাকে দরিদ্রদের প্রতি তার আত্মোৎসর্গমূলক সেবার জন্য প্রায়ই পবিত্র ব্যক্তি হিসাবে দেখা হয়ে থাকে। পোপকে “পুণ্য পিতা” বলে অভিহিত করা হয়। আধুনিক ক্যাথলিক সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ওপাস ডেই, হোসামরিয়া ইসক্রিবাকে “পবিত্রতার আর্দশ” হিসাবে কিছু ক্যাথলিকেরা বিবেচনা করে থাকে। হিন্দু ধর্মের নিজস্ব ধর্মোপদেষ্টা অথবা পবিত্র ব্যক্তিরা রয়েছে। গান্ধীকে পবিত্র পুরুষ হিসাবে শ্রদ্ধা করা হত। বৌদ্ধ ধর্মের রয়েছে নিজস্ব পবিত্র ভিক্ষু এবং ইসলামের পবিত্র নবী। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পবিত্র হওয়ার অর্থ কী?
২, ৩. (ক) “পবিত্র” এবং “পবিত্রতা” শব্দ দুটি কোন্ অর্থ বহন করে? (খ) কিছু প্রশ্ন কী যার উত্তরের প্রয়োজন রয়েছে?
২ “পবিত্র” শব্দটিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এইভাবে “১. . . . ঐশিক ক্ষমতার সাথে সংযুক্ত; শুচি। ২. উপাসনা অথবা গভীর শ্রদ্ধার জন্য বিবেচ্য অথবা যোগ্য . . . ৩. একটি নিয়ন্ত্রিত অথবা উচ্চ নৈতিক ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক পন্থা অনুযায়ী জীবনযাপন করা . . . ৪. ধর্মীয় উদ্দেশ্যের জন্য বিশিষ্ট অথবা পৃথক থাকা।” বাইবেলের বর্ণনায় পবিত্রতার অর্থ “ধর্মীয় পরিচ্ছন্নতা অথবা বিশুদ্ধতা; শুচিতা।” বাইবেল প্রসঙ্গ বই শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরাজি) অনুসারে, “মূল ইব্রীয় [শব্দ] কোধেশ এই ধারণা প্রদান করে যে ঈশ্বরের জন্য পৃথক, একাগ্র অথবা পবিত্র থাকা, . . . ঈশ্বরের পরিচর্যার জন্য পৃথকীকৃত একটি অবস্থা।”a
৩ ইস্রায়েল জাতিকে পবিত্র হওয়ার জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছিল। ঈশ্বরের আইন জানায়: “আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর; অতএব তোমরা আপনাদিগকে পবিত্র কর; পবিত্র হও, কেননা আমি পবিত্র।” পবিত্রতার উৎস কে ছিলেন? কিভাবে অসিদ্ধ ইস্রায়েলীয়রা পবিত্র হতে পারত? আর যিহোবার পবিত্রতায় আহ্বান থেকে বর্তমানে আমাদের জন্য আমরা কোন্ শিক্ষা খুঁজে পেতে পারি?—লেবীয় পুস্তক ১১:৪৪.
পবিত্রতার উৎসের সাথে কিভাবে ইস্রায়েল সম্পর্কযুক্ত ছিল
৪. কিভাবে ইস্রায়েলে যিহোবার পবিত্রতা নমুনাস্বরূপ তুলে ধরা হয়েছিল?
৪ যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি ইস্রায়েলের উপাসনার সাথে সম্পর্কযুক্ত সবকিছু পবিত্র বলে বিবেচনা করা হত এবং সেভাবেই আচরণ করা হত। কেন তা করা হত? কারণ যিহোবা নিজে পবিত্রতার মূল এবং উৎস। পবিত্র সমাগমতাম্বুর প্রস্তুতি এবং আনুষ্ঠানিক পোশাক ও সজ্জা সম্বন্ধীয় মোশির বিবরণটি এই শব্দগুলির দ্বারা উপসংহার করা হয়: “পরে তাঁহারা নির্ম্মল স্বর্ণ দ্বারা পবিত্র মুকুটের পাত প্রস্তুত করিলেন, এবং ক্ষোদিত মুদ্রার ন্যায় তাহার উপরে লিখিলেন, ‘সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে পবিত্র’।” নির্ম্মল স্বর্ণের এই উজ্জ্বল পাতটি মহাযাজকের উষ্ণীষের সাথে জুড়ে দেওয়া হত এবং এটি নির্দেশ করত যে তিনি বিশেষ পবিত্রতার পরিচর্যার জন্য পৃথকীকৃত। যখন তারা সাক্ষ্য করত যে ক্ষোদিত চিহ্নটি সূর্যালোকে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে, তখন তা ইস্রায়েলীয়দের নিয়মিতভাবে যিহোবার পবিত্রতাকে স্মরণ করিয়ে দিত।—যাত্রাপুস্তক ২৮:৩৬; ২৯:৬; ৩৯:৩০.
৫. কিভাবে অসিদ্ধ ইস্রায়েলীয়রা পবিত্র বলে বিবেচিত হতে পারত?
৫ কিন্তু কিভাবে ইস্রায়েলীয়রা পবিত্র হতে পারত? একমাত্র যিহোবার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং তাঁর প্রতি তাদের বিশুদ্ধ উপাসনার মাধ্যমে। তাঁকে পবিত্রতায়, দৈহিক এবং আধ্যাত্মিক বিশুদ্ধতায় উপাসনা করার জন্য তাদের “পবিত্রতম-বিষয়ক” সঠিক জ্ঞানের প্রয়োজন ছিল। (হিতোপদেশ ২:১-৬; ৯:১০) অতএব ইস্রায়েলীয়দের বিশুদ্ধ উদ্দেশ্য এবং হৃদয় নিয়ে ঈশ্বরের উপাসনা করতে হয়েছিল। যে কোন প্রকার কপটতাপূর্ণ উপাসনার প্রতি যিহোবা বিমুখ ছিলেন।—হিতোপদেশ ২১:২৭.
যিহোবা কেন ইস্রায়েলকে প্রকাশ্যে দোষারোপ করেছিলেন
৬. মালাখির দিনের যিহূদীরা যিহোবার মেজের প্রতি কিরূপ আচরণ করেছিল?
৬ এটি স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল যখন ইস্রায়েলীয়রা অর্ধচিত্তে নিকৃষ্ট, ত্রুটিপূর্ণ উৎসর্গ দ্রব্য মন্দিরে এনেছিল। তাঁর ভাববাদী মালাখির মাধ্যমে, যিহোবা তাদের নিকৃষ্ট উৎসর্গকে প্রকাশ্যে দোষারোপ করেছিলেন: “তোমাদিগেতে আমার কিছু প্রীতি নাই, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন; এবং তোমাদের হস্ত হইতে আমি নৈবেদ্য গ্রাহ্য করিব না। . . . কিন্তু তোমরা তাহা অপবিত্র করিতেছ; কেননা তোমরা বলিতেছ, সদাপ্রভুর মেজ অশুচি, সেই মেজের ফল, তাঁহার খাদ্য তুচ্ছ। আরও বলিতেছ, দেখ, কেমন বিড়ম্বনা! আর তোমরা তাহার উপরে ফুঁ দিয়াছ, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। আর তোমরা লুটিত, খঞ্জ ও রুগ্ন পশুকে উপস্থিত করিয়াছ, এই প্রকারে নৈবেদ্য উপস্থিত করিতেছ; আমি কি তোমাদের হস্ত হইতে ইহা গ্রাহ্য করিব? ইহা সদাপ্রভু কহেন।”—মালাখি ১:১০, ১২, ১৩.
৭. সা.শ.পূ. পঞ্চম শতাব্দীতে যিহূদীরা কোন্ অপবিত্র পন্থা গ্রহণ করেছিল?
৭ সম্ভবত সা.শ.পূ. পঞ্চম শতাব্দীতে, ঈশ্বর যিহূদীদের মিথ্যা অভ্যাসগুলিকে প্রকাশ্যে দোষারোপ করতে মালাখিকে ব্যবহার করেছিলেন। যাজকেরা নিম্ন মানের উদাহরণ স্থাপন করেছিল এবং তাদের আচরণ কোনভাবেই পবিত্র ছিল না। লোকেরা যারা সেই নেতৃত্বকে অনুসরণ করত তারা তাদের নীতির দিক দিয়ে শিথিল ছিল, এমনকি তাদের স্ত্রীদের ত্যাগ করার বিষয়টি পর্যন্ত, যাতে করে হয়ত তারা যুবতী পরজাতীয় স্ত্রী গ্রহণ করতে পারত। মালাখি লিখেছিলেন: “সদাপ্রভু তোমার যৌবনকালীন স্ত্রীর ও তোমার মধ্যে সাক্ষী হইয়াছেন; ফলতঃ তুমি তাহার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতাb করিয়াছ; কিন্তু সে তোমার সখী ও তোমার নিয়মের স্ত্রী। . . . অতএব তোমরা আপন আপন আত্মার বিষয়ে সাবধান হও, এবং কেহ আপন যৌবনকালীন স্ত্রীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা না করুক। কেননা আমি স্ত্রীত্যাগ ঘৃণা করি, ইহা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু কহেন।”—মালাখি ২:১৪-১৬.
৮. কিভাবে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর কেউ কেউ বিবাহবিচ্ছেদের আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে?
৮ আধুনিক দিনে অনেক দেশগুলিতে যেখানে সহজেই বিবাহবিচ্ছেদ করা যায়, সেখানে বিবাহবিচ্ছেদের হার ভীষণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীও প্রভাবিত হয়েছে। বাধাগুলি অতিক্রম করতে প্রাচীনদের সাহায্য চাওয়ার এবং তাদের বিবাহকে সফল করার জন্য চেষ্টা করার পরিবর্তে, কেউ কেউ খুব তাড়াতাড়ি তাদের সঙ্গীকে পরিত্যাগ করেছে। যার ফলে প্রায়ই সন্তানদের এক চরম আবেগগত মূল্য প্রদান করতে হয়েছে।—মথি ১৯:৮, ৯.
৯, ১০. যিহোবার প্রতি আমাদের উপাসনাকে আমাদের কিভাবে প্রতিফলিত করা উচিত?
৯ আমরা যেমন পূর্বে দেখেছি, মালাখির দিনের শোচনীয় আধ্যাত্মিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যিহোবা যিহূদার অবিশুদ্ধ উপাসনাকে খোলাখুলিভাবে নিন্দা করেছিলেন এবং দেখিয়েছিলেন যে তিনি শুধুমাত্র বিশুদ্ধ উপাসনা গ্রহণ করবেন। এটি কি বিশ্বের সার্বভৌম কর্তা, প্রকৃত পবিত্রতার উৎস, যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের উপাসনার মান সম্বন্ধে আমাদের গভীরভাবে বিবেচনা করতে পরিচালিত করা উচিত নয়? আমরা কি প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরকে পবিত্র সেবা প্রদান করছি? আমরা কি নিজেদেরকে আত্মিকভাবে শুদ্ধ অবস্থায় রাখছি?
১০ এর অর্থ এই নয় যে আমাদের সিদ্ধ হতে হবে, যা অসম্ভব অথবা অন্যদের সাথে আমাদের নিজেদেরকে তুলনা করা উচিত। কিন্তু এর অর্থ হল প্রত্যেক খ্রীষ্টানের ব্যক্তিগত পরিস্থিতি অনুযায়ী তার সর্বোৎকৃষ্ট অংশটি ঈশ্বরের উপাসনায় নিবেদন করা উচিত। এটি আমাদের উপাসনার মানের প্রতি ইঙ্গিত করে। আমাদের শুচি সেবা আমাদের সর্বোত্তম অংশ—পবিত্র সেবা হওয়া উচিত। কিভাবে তা সম্পন্ন করা যেতে পারে?—লূক ১৬:১০; গালাতীয় ৬:৩, ৪.
বিশুদ্ধ হৃদয় বিশুদ্ধ উপাসনার প্রতি পরিচালিত করে
১১, ১২. কোথা থেকে অপবিত্র আচরণ উদ্ভূত হয়?
১১ যীশু স্পষ্টভাবে শিক্ষা দিয়েছিলেন যে একজন ব্যক্তির কথা এবং কাজ দ্বারা প্রমাণিত হবে তার হৃদয়ে কী রয়েছে। যীশু আত্ম-ধার্মিক, কিন্তু অপবিত্র ফরীশীদের বলেছিলেন: “হে সর্পের বংশেরা, তোমরা মন্দ হইয়া কেমন করিয়া ভাল কথা কহিতে পার? কেননা হৃদয় হইতে যাহা ছাপিয়া উঠে, মুখ তাহাই বলে।” পরবর্তী সময়ে তিনি দেখিয়েছিলেন যে মন্দ কাজ হৃদয়ের মন্দ চিন্তা অথবা অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিত্ব থেকে উদ্ভূত হয়। তিনি বলেছিলেন: “যাহা যাহা মুখ হইতে বাহির হয়, তাহা অন্তঃকরণ হইতে আইসে, আর তাহাই মনুষ্যকে অশুচি করে। কেননা অন্তঃকরণ হইতে কুচিন্তা, নরহত্যা, ব্যভিচার, বেশ্যাগমন, চৌর্য্য, মিথ্যাসাক্ষ্য, নিন্দা আইসে। এই সকলই মনুষ্যকে অশুচি করে।”—মথি ১২:৩৪; ১৫:১৮-২০.
১২ এটি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে অপবিত্র কাজ শুধুমাত্র স্বতঃস্ফূর্ত অথবা পূর্ব ভিত্তি বর্জিত নয়। সেগুলি হচ্ছে অশুচি চিন্তার ফল যা হৃদয়ের মধ্যে প্রতীক্ষায় থাকে—গুপ্ত আকাঙ্ক্ষা এবং হয়ত কল্পনা। যে কারণে যীশু বলতে পেরেছিলেন: “তোমরা শুনিয়াছ, উক্ত হইয়াছিল, ‘তুমি ব্যভিচার করিও না।’ কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে কেহ কোন স্ত্রীলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত করে, সে তখনই মনে মনে তাহার সহিত ব্যভিচার করিল।” অন্য কথায়, কোন কাজ ঘটার পূর্বে ইতিমধ্যেই ব্যভিচার এবং পারিদারিকতা হৃদয়ের মধ্যে শিকড় বিস্তার করে থাকে। পরে, নির্দিষ্ট কোন পরিস্থিতিতে অপবিত্র চিন্তা অপবিত্র আচরণে পরিণত হয়। এর কিছু স্পষ্ট প্রতীয়মান ফল হল ব্যভিচার, পারদারিকতা, সমকামিতা, চুরি, নিন্দা এবং ধর্মভ্রষ্টতা।—মথি ৫:২৭, ২৮; গালাতীয় ৫:১৯-২১.
১৩. অপবিত্র চিন্তাধারা কিভাবে অপবিত্র কাজে পরিচালিত করে তার কিছু উদাহরণ কী?
১৩ এটিকে বিভিন্ন উপায়ে বর্ণনা করা যেতে পারে। কিছু দেশে, সর্বজনীন নৃত্যশালাগুলির আকস্মিক দ্রুত বৃদ্ধি ঘটেছে যা জুয়াখেলার সুযোগকে বৃদ্ধি করছে। একজন হয়ত তার নিজের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের চেষ্টায় এই ছদ্ম-সমাধান অবলম্বন করার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারে। প্রতারণাপূর্ণ যুক্তি হয়ত একজন ভাইকে তার বাইবেলের মানগুলিকে পরিত্যাগ করতে অথবা তা হালকা করে দেখতে প্ররোচিত করতে পারে।c অন্য ক্ষেত্রে, টেলিভিশন, ভিডিও, কম্পিউটার অথবা বই যে কোন মাধ্যমেই হোক না কেন অশ্লীল বিষয়বস্তুর অভিগমন একজন খ্রীষ্টানকে অপবিত্র আচরণের পথে পরিচালিত করতে পারে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র তার আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জাকে অবহেলা করার প্রয়োজন পড়ে এবং তা বোঝার পূর্বেই সে অনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পাপে পতিত হওয়ার সূচনা মনেই শুরু হয়। হ্যাঁ, এরকম পরিস্থিতিতে যাকোবের বাক্য পরিপূর্ণ হয়েছে: “প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কামনা দ্বারা আকর্ষিত ও প্ররোচিত হইয়া পরীক্ষিত হয়। পরে কামনা সগর্ভা হইয়া পাপ প্রসব করে।”—যাকোব ১:১৪, ১৫; ইফিষীয় ৬:১১-১৮.
১৪. কিভাবে অনেকে তাদের অপবিত্র আচরণ থেকে পূর্বাস্থায় ফিরে এসেছে?
১৪ আনন্দের বিষয় যে, অনেক খ্রীষ্টানেরা যারা দুর্বলতাবশত পাপ করে, তারা প্রকৃত অনুতাপ দেখিয়ে থাকে এবং প্রাচীনেরা এই প্রকার ব্যক্তিদের আধ্যাত্মিকভাবে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন। এমনকি অনেকে যারা অনুতপ্ত না হওয়ায় সমাজচ্যুত হয়েছিল, পরিশেষে, তারা সচেতন এবং মণ্ডলীতে পুনর্প্রতিষ্ঠিত হয়। তারা উপলব্ধি করতে পেরেছে যে শয়তান কত সহজে তাদের উপর নিজ অধিকার বিস্তার করেছিল যখন তারা অপবিত্র চিন্তাধারাকে হৃদয়ের মধ্যে শিকড় বিস্তার করতে দিয়েছিল।—গালাতীয় ৬:১; ২ তীমথিয় ২:২৪-২৬; ১ পিতর ৫:৮, ৯.
আমাদের দুর্বলতাগুলির সাথে মোকাবিলা করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা
১৫. (ক) কেন আমাদের অবশ্যই আমাদের দুর্বলতাগুলির সম্মুখীন হতে হবে? (খ) আমাদের দুর্বলতাগুলিকে স্বীকার করতে কী আমাদের সাহায্য করতে পারে?
১৫ আমাদের অবশ্যই নিজেদের হৃদয়কে বস্তুনিষ্ঠভাবে জানার চেষ্টা করতে হবে। আমরা কি আমাদের দুর্বলতাগুলির সম্মুখাসম্মুখী হতে, সেগুলিকে স্বীকার করতে এবং তারপর সেগুলি জয় করার জন্য কাজ করতে ইচ্ছুক? আমরা কি একজন আন্তরিক বন্ধুকে কিভাবে আমরা উন্নতি করতে পারি তা জিজ্ঞাসা করতে এবং পরে সেই উপদেশে মনোযোগ দিতে ইচ্ছুক? পবিত্র থাকতে হলে আমাদের অবশ্যই দোষত্রুটিগুলিকে অতিক্রম করতে হবে। কেন? কারণ শয়তান আমাদের দুর্বলতাগুলি জানে। সে আমাদের পাপ এবং অপবিত্র আচরণের প্রতি প্ররোচিত করতে তার সূক্ষ্ম কৌশলগুলি ব্যবহার করবে। তার চাতুরীপূর্ণ কাজের মাধ্যমে, সে আমাদের ঈশ্বরের প্রেম থেকে পৃথক করার চেষ্টা করে যাতে আমরা আর যিহোবার উপাসনার জন্য পবিত্রকৃত এবং উপযোগী না থাকি।—যিরমিয় ১৭:৯; ইফিষীয় ৬:১১; যাকোব ১:১৯.
১৬. পৌলের কোন্ অন্তর্দ্বন্দ্ব ছিল?
১৬ প্রেরিত পৌল তাড়না এবং পরীক্ষা ভোগ করেছিলেন যেমন তিনি রোমীয়দের প্রতি তার পত্রে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন: “আমি জানি যে আমাতে, অর্থাৎ আমার মাংসে, উত্তম কিছুই বাস করে না; আমার ইচ্ছা উপস্থিত বটে, কিন্তু উত্তম ক্রিয়া সাধন উপস্থিত নয়। কেননা আমি যাহা ইচ্ছা করি, সেই উত্তম ক্রিয়া করি না; কিন্তু মন্দ, যাহা ইচ্ছা করি না, কাজে তাহাই করি। . . . বস্তুতঃ আন্তরিক মানুষের ভাব অনুসারে আমি ঈশ্বরের ব্যবস্থায় আমোদ করি। কিন্তু আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে অন্য প্রকার এক ব্যবস্থা দেখিতে পাইতেছি; তাহা আমার মনের ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, এবং পাপের যে ব্যবস্থা আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আছে, আমাকে তাহার বন্দি দাস করে।”—রোমীয় ৭:১৮-২৩.
১৭. দুর্বলতাগুলির সাথে তার যুদ্ধে পৌল কিভাবে জয়ী হয়েছিলেন?
১৭ এখানে পৌলের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল তিনি তার দুর্বলতাগুলি স্বীকার করেছিলেন। সেগুলি থাকা সত্ত্বেও তিনি বলতে পেরেছিলেন: “বস্তুতঃ আন্তরিক [আধ্যাত্মিক] মানুষের ভাব অনুসারে আমি ঈশ্বরের ব্যবস্থায় আমোদ করি।” পৌল যা উত্তম তা ভালবাসতেন এবং মন্দকে ঘৃণা করতেন। কিন্তু তখনও তার যুদ্ধ করার ছিল আর একই যুদ্ধ আমাদের সকলের জন্য রয়েছে—শয়তান, জগৎ এবং মাংসের বিরুদ্ধে। সুতরাং কিভাবে এই জগৎ এবং এর চিন্তাধারা থেকে পৃথক হয়ে পবিত্র থাকার যুদ্ধে আমরা জয়ী হতে পারি?—২ করিন্থীয় ৪:৪; ইফিষীয় ৬:১২.
কিভাবে আমরা পবিত্র থাকতে পারি?
১৮. কিভাবে আমরা পবিত্র থাকতে পারি?
১৮ স্বল্পতম প্রতিরোধের পন্থা অবলম্বন করে অথবা আত্মপ্রশয়ী হওয়ার দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা যায় না। ঐধরনের ব্যক্তি সবসময় তার আচরণকে সমর্থন করার জন্য ওজর দেখায় এবং দোষকে অন্য কোন স্থানে স্থানান্তরিত করার চেষ্টা করে। আমাদের হয়ত নিজেদের কাজের জন্য দায়িত্বপূর্ণ হতে শেখার প্রয়োজন রয়েছে এবং আমরা সেইরকম হব না যারা অভিযোগ করে যে পারিবারিক পটভূমি অথবা বংশগত কারণে ভাগ্য তাদের বিরুদ্ধে তাসের তাড়া স্তূপীকৃত করেছে। বিষয়টির মূল প্রত্যেক ব্যক্তির হৃদয়ের মধ্যে রয়েছে। সে (পুরুষ অথবা মহিলা) কি ধার্মিকতাকে প্রেম করে? পবিত্রতা জন্য আকূল আকাঙ্ক্ষী? ঈশ্বরের আশীর্বাদ কামনা করে? গীতরচক পবিত্রতার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে স্পষ্ট করেন যখন তিনি বলেছিলেন: “মন্দ হইতে দূরে যাও, যাহা ভাল তাহাই কর; শান্তির অন্বেষণ ও অনুধাবন কর।” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “প্রেম নিষ্কপট হউক। যাহা মন্দ তাহা নিতান্তই ঘৃণা কর; যাহা ভাল তাহাতে আসক্ত হও।”—গীতসংহিতা ৩৪:১৪; ৯৭:১০; রোমীয় ১২:৯.
১৯, ২০. (ক) কিভাবে আমরা আমাদের মনকে গড়ে তুলতে পারি? (খ) কার্যকারী ব্যক্তিগত অধ্যয়ন কী অন্তর্ভুক্ত করে?
১৯ আমরা “যাহা ভাল তাহাতে আসক্ত” হতে পারি যদি আমরা যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়গুলিকে বিবেচনা করি এবং যদি আমাদের খ্রীষ্টের মন থাকে। (১ করিন্থীয় ২:১৬) কিভাবে এটি সম্পন্ন করা যায়? নিয়মিত ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন ও তা ধ্যান করার মাধ্যমে। এই পরামর্শ কতবারই দেওয়া হয়েছে! কিন্তু আমরা কি এটিকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণভাবে গ্রহণ করি? উদাহরণস্বরূপ, আপনি কি সভায় আসার আগে, প্রকৃতপক্ষে এই পত্রিকা অধ্যয়ন ও বাইবেল পদগুলি পরীক্ষা করেন? অধ্যয়ন করার অর্থ কেবলমাত্র প্রত্যেকটি অনুচ্ছেদের কিছু শব্দসমষ্টির নিচে দাগ দেওয়া নয়। একটি অধ্যয়ন প্রবন্ধে প্রায় ১৫ মিনিটে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলি নির্ণয় করা এবং দাগ দেওয়া যেতে পারে। এর অর্থ কি এই যে আমরা প্রবন্ধটি অধ্যয়ন করেছি? আসলে, প্রত্যেকটি প্রবন্ধ যে আধ্যাত্মিক উপকারিতা উপস্থিত করে তা অধ্যয়ন এবং আত্মস্থ করতে এক অথবা দুই ঘন্টা লাগতে পারে।
২০ আমাদের হয়ত প্রত্যেক সপ্তাহে কিছু ঘন্টা টেলিভিশন দেখা বাদ দেওয়া এবং আমাদের ব্যক্তিগত পবিত্রতার উপর প্রকৃতপক্ষে মনোযোগ নিবদ্ধ করতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন হতে পারে। নিয়মিত অধ্যয়ন আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে গড়ে তোলে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে মনকে সক্রিয় করে—সেই সিদ্ধান্ত যা “পবিত্র আচার ব্যবহার” এর পথে পরিচালিত করে।—২ পিতর ৩:১১; ইফিষীয় ৪:২৩; ৫:১৫, ১৬.
২১. কোন্ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বাকি রয়েছে?
২১ এখন প্রশ্ন হল, খ্রীষ্টান হিসাবে কর্মতৎপরতা এবং আচরণের আরও কোন্ ক্ষেত্রে আমরা পবিত্র থাকতে পারি, ঠিক যেমন যিহোবা পবিত্র? পরবর্তী প্রবন্ধটি কিছু উপযুক্ত বিবেচনার বিষয় উপস্থাপন করবে।
[পাদটীকাগুলো]
a এই দুই খণ্ডের প্রসঙ্গ বই ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটির দ্বারা প্রকাশিত।
b “বিশ্বাসঘাতকতা”-র অর্থ কী তা আরও ভালভাবে বিবেচনা করার জন্য সচেতন থাক! (ইংরাজি) ফেব্রুয়ারি ৮, ১৯৯৪, পৃষ্ঠা ২১, “কিধরনের বিবাহবিচ্ছেদ যিহোবা ঘৃণা করেন?” নামক প্রবন্ধটি দেখুন।
c কেন জুয়াখেলা অপবিত্র আচরণ সেই সম্বন্ধে আরও তথ্যের জন্য ওয়াচ টাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটির দ্বারা প্রকাশিত সচেতন থাক! (ইংরাজি), আগস্ট ৮, ১৯৯৪, পৃষ্ঠা ১৪-১৫ দেখুন।
আপনি কি স্মরণ করতে পারেন?
◻ কিভাবে ইস্রায়েলে পবিত্রতার উৎস শনাক্তিকৃত হয়েছিলেন?
◻ মালাখির দিনে কিভাবে ইস্রায়েলীয় উপাসনা অপবিত্র ছিল?
◻ কোথায় অপবিত্র আচরণ শুরু হয়?
◻ পবিত্র হতে হলে আমাদের অবশ্যই কী স্বীকার করতে হবে?
◻ কিভাবে আমরা পবিত্র থাকতে পারি?