বিশ্বব্যাপী আনন্দিত প্রশংসাকারীগণ হিসাবে পৃথক হওয়া
“তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। হে সদাপ্রভুর দাসগণ, প্রশংসা কর, সদাপ্রভুর নামের প্রশংসা কর।”—গীতসংহিতা ১১৩:১.
১, ২. (ক) গীতসংহিতা ১১৩:১-৩ পদের সাথে মিল রেখে, কে আমাদের অত্যুৎসাহী প্রশংসার যোগ্য? (খ) কোন্ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা উপযুক্ত?
যিহোবা ঈশ্বর স্বর্গ এবং পৃথিবীর মহান স্রষ্টা, অনন্তকালের জন্য আমাদের বিশ্বজনীন সার্বভৌম কর্তা। তিনি আমাদের অত্যুৎসাহী প্রশংসার সম্পূর্ণ যোগ্য। এইজন্য গীতসংহিতা ১১৩:১-৩ পদ আমাদের নির্দেশ দেয়: “তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। হে সদাপ্রভুর দাসগণ, প্রশংসা কর, সদাপ্রভুর নামের প্রশংসা কর। ধন্য সদাপ্রভুর নাম, এখন অবধি অনন্তকাল পর্য্যন্ত। সূর্য্যের উদয়স্থান অবধি তাহার অস্তস্থান পর্য্যন্ত সদাপ্রভুর নাম কীর্ত্তনীয়।”
২ ঈশ্বরের সাক্ষী হিসাবে, আমরা তা করতে আনন্দ বোধ করি। এটি কতই না রোমাঞ্চকর যে যিহোবা ঈশ্বর শীঘ্রই এই আনন্দময় প্রশংসা গান যা আজ আমরা গাইছি, তা দিয়ে সম্পূর্ণ পৃথিবী পরিপূর্ণ করবেন! (গীতসংহিতা ২২:২৭) বিশ্বব্যাপী এই বৃহৎ ঐকতান সংগীতে আপনার স্বর কি শোনা যাচ্ছে? যদি তাই হয়, তাহলে এই বিভক্ত, নিরানন্দ জগৎ থেকে পৃথক থাকা আপনাকে কতই না সুখী করেছে!
৩. (ক) কী যিহোবার লোকেদের স্বতন্ত্র ও অদ্বিতীয় করে? (খ) কোন্ দিকগুলির ক্ষেত্রে আমরা পৃথক রয়েছি?
৩ ঐক্যবদ্ধভাবে যিহোবার প্রশংসা আমাদের অবশ্যই স্বতন্ত্র এবং অদ্বিতীয় করে তোলে। আমরা একই কথা বলি ও একই শিক্ষা দিয়ে থাকি এবং ‘যিহোবার মহৎ মঙ্গলভাব’ ঘোষণা করতে একই পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করি। (গীতসংহিতা ১৪৫:৭) হ্যাঁ, যিহোবার উৎসর্গীকৃত লোক হিসাবে, আমরা আমাদের ঈশ্বর, যিহোবার সেবা করার জন্য পৃথক রয়েছি। ঈশ্বর তাঁর প্রাচীনকালের উৎসর্গীকৃত লোক, ইস্রায়েলকে বলেছিলেন যেন তারা তাদের চতুর্দিকের জাতিগুলি থেকে পৃথক থাকে এবং সেই সমস্ত জাতির অভ্যাসগুলির দ্বারা কলঙ্কিত না হয়। (যাত্রাপুস্তক ৩৪:১২-১৬) এটি করতে তাদের সাহায্য করার জন্য তিনি তাঁর লোকেদের ব্যবস্থাগুলি দিয়েছিলেন। বর্তমানে একইভাবে, যিহোবা আমাদের তাঁর পবিত্র বাক্য বাইবেল দিয়েছেন। এর নির্দেশনা আমাদের দেখায় যে কিভাবে আমরা জগৎ থেকে পৃথক থাকতে পারি। (২ করিন্থীয় ৬:১৭; ২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭) আমরা সন্ন্যাসীদের আবাস এবং আশ্রমগুলিতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার দ্বারা পৃথক নই, যেমন মহতী বাবিলের সন্ন্যাসী এবং সন্ন্যাসিনীরা থাকে। যীশু খ্রীষ্টের উদাহরণ অনুসরণ করে, আমরা যিহোবার প্রকাশ্য প্রশংসাকারী।
যিহোবার প্রধান প্রশংসাকারীকে অনুকরণ করুন
৪. যিহোবাকে প্রশংসার ক্ষেত্রে যীশু কিভাবে উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?
৪ যিহোবাকে প্রশংসা করার উদ্দেশ্য থেকে যীশু কখনও পথভ্রষ্ট হননি। আর এটি তাঁকে জগৎ থেকে পৃথক করেছিল। সমাজগৃহে এবং যিরূশালেমের মন্দিরে, তিনি ঈশ্বরের পবিত্র নামের প্রশংসা করেছিলেন। পর্বতচূড়া অথবা সমুদ্রোপকূল যেখানেই হোক না কেন, জনতা একত্রিত হলেই, যীশু প্রকাশ্যে যিহোবার সত্যগুলি প্রচার করেছিলেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন: “হে পিতঃ, হে স্বর্গ ও পৃথিবীর প্রভু, আমি প্রকাশ্যে তোমার প্রশংসা করছি।” (মথি ১১:২৫, NW) এমনকি পন্তীয় পীলাতের সম্মুখে বিচারের সময়, যীশু সাক্ষ্য দিয়েছিলেন: “আমি এই জন্যই জন্মগ্রহণ করিয়াছি ও এই জন্য জগতে আসিয়াছি, যেন সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিই।” (যোহন ১৮:৩৭) যীশু তাঁর কাজের গুরুত্বকে উপলব্ধি করেছিলেন। যেখানেই তিনি ছিলেন, যীশু যিহোবার বিষয় সাক্ষ্য প্রদান করেছিলেন এবং প্রকাশ্যে তাঁর প্রশংসা করেছিলেন।
৫. কাদের প্রতি গীতসংহিতা ২২:২২ পদ প্রযোজ্য এবং আমাদের মনোভাব কী হওয়া উচিত?
৫ গীতসংহিতা ২২:২২ পদে, যিহোবার প্রধান প্রশংসাকারীর বিষয়ে আমরা এই ভাববাণীমূলক মন্তব্যটি দেখতে পাই: “আমি আমার ভ্রাতৃগণের কাছে তোমার নাম প্রচার করিব; সমাজের মধ্যে তোমার প্রশংসা করিব।” আর ইব্রীয় ২:১১, ১২ পদে, প্রেরিত পৌল প্রভু যীশুর প্রতি এই পদগুলি প্রয়োগ করেছিলেন এবং তার সাথে তাদের প্রতিও যাদের যিহোবা ঈশ্বর স্বর্গীয় মহিমার জন্য পবিত্রীকৃত করেছেন। তাঁর মত, তারাও মণ্ডলীর মধ্যে যিহোবার নামের প্রশংসা করতে লজ্জিত হয় না। মণ্ডলীর সভাগুলিতে যোগদান করার সময়ে আমাদেরও কি একই মনোভাব থাকে? সভাগুলিতে, মানসিক এবং মৌখিক উভয়ভাবে আমাদের উৎসাহমূলক অংশগ্রহণ যিহোবার প্রশংসা করে। কিন্তু আমাদের আনন্দময় প্রশংসা কি সেখানেই শেষ হয়ে যায়?
৬. যীশু তাঁর শিষ্যদের কী দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং কিভাবে দীপ্তির প্রেমিকগণ ঈশ্বরকে মহিমান্বিত করে?
৬ মথি ৫:১৪-১৬ পদ অনুসারে, প্রভু যীশু তাঁর অনুগামীদের এইজন্যও নিযুক্ত করেছিলেন যেন তাদের দীপ্তি উজ্জ্বল হয় ফলে অন্যেরা যিহোবার প্রশংসা করবে। তিনি বলেছিলেন: “তোমরা জগতের দীপ্তি; . . . তোমাদের দীপ্তি মনুষ্যদের সাক্ষাতে উজ্জ্বল হউক, যেন তাহারা তোমাদের সৎক্রিয়া দেখিয়া তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার গৌরব করে।” দীপ্তির প্রেমিকগণ ঈশ্বরের গৌরব বয়ে আনে। তারা কি শুধুমাত্র বলা এবং সঠিক, জনহিতকর কাজগুলি করার দ্বারাই তা করে থাকে? না, বরং তারা ঐক্যবদ্ধভাবে যিহোবাকে গৌরব প্রদান করার মাধ্যমে তা করে। হ্যাঁ, দীপ্তির প্রেমিকগণ ঈশ্বরের কাছে নিজেদের উৎসর্গ করে এবং তাঁর আনন্দময় প্রশংসাকারীগণে পরিণত হয়। আপনি কি এই সুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন?
যিহোবার প্রশংসা করা থেকে আনন্দ
৭. যিহোবার প্রশংসাকারীগণ কেন এত আনন্দিত এবং সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে তাদের কোন্ আনন্দ ছিল?
৭ যিহোবার প্রশংসাকারীগণ কেন এত আনন্দিত? কারণ আনন্দ হল ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার একটি ফল। গালাতীয় ৫:২২ পদে, এটিকে ঠিক প্রেমের পরে তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে। প্রথম শতাব্দীতে যীশুর শিষ্যেরা যিহোবার আত্মার এই ফলটি প্রকাশ করেছিলেন। এমনকি, সা.কা. ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমীর দিনে যখন ঈশ্বর যীশু খ্রীষ্টের শিষ্যদের প্রায় ১২০ জনের উপর তাঁর আত্মা সেচন করেন, তখন তাদের সকলে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় যিহোবার প্রশংসা করতে শুরু করেছিলেন। ভক্ত যিহূদীরা যারা বহু জাতি থেকে যিরূশালেমে এসেছিলেন তারা ‘হতবুদ্ধি এবং আশ্চর্য্যান্বিত হয়েছিলেন।’ তারা চমৎকৃত হয়ে বলেছিলেন: “আমরা, আমাদের নিজ নিজ ভাষায় উহাদিগকে ঈশ্বরের মহৎ মহৎ কর্ম্মের কথা বলিতে শুনিতেছি”! (প্রেরিত ২:১-১১) এই চমৎকার বহু ভাষায় যিহোবার প্রশংসা করার ফল কী হয়েছিল? প্রায় ৩,০০০ যিহূদী এবং যিহূদী ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা মশীহ সম্বন্ধে রাজ্যের সুসমাচার গ্রহণ করেছিল। তারা বাপ্তাইজিত হয়েছিল, পবিত্র আত্মা পেয়েছিল এবং উৎসুকভাবে যিহোবার আনন্দিত প্রশংসাকারী হিসাবে তাদের স্বরকে সংযুক্ত করেছিল। (প্রেরিত ২:৩৭-৪২) কী এক আর্শীবাদই না তা ছিল!
৮. পঞ্চাশত্তমীর পরে, খ্রীষ্টানেরা তাদের আনন্দকে বৃদ্ধি করার জন্য কী করেছিল?
৮ বর্ণনাটি আরও জানায়: “তাহারা প্রতিদিন একচিত্তে ধর্ম্মধামে নিবিষ্ট থাকিয়া এবং বাটীতে রুটী ভাঙ্গিয়া উল্লাসে ও হৃদয়ের সরলতায় খাদ্য গ্রহণ করিত; তাহারা ঈশ্বরের প্রশংসা করিত, এবং সমস্ত লোকের প্রীতির পাত্র হইল। আর যাহারা পরিত্রাণ পাইতেছিল, প্রভু দিন দিন তাহাদিগকে তাহাদের সহিত সংযুক্ত করিতেন।” (প্রেরিত ২:৪৬, ৪৭) তাদের একত্রে মেলামেশা এবং খাদ্যে অংশগ্রহণ করাই কি একমাত্র কারণ ছিল যা তাদের পরম আনন্দ এনেছিল? না, তাদের মূল আনন্দ যিহোবা ঈশ্বরকে দিনের পর দিন প্রশংসা করার মাধ্যমে এসেছিল। আর তাদের আনন্দ বৃদ্ধি পেয়েছিল যখন তারা দেখে যে হাজার হাজার ব্যক্তিরা তাদের পরিত্রাণের বার্তার প্রতি সাড়া দিচ্ছে। বর্তমানে আমাদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য।
সমস্ত জাতির মধ্যে আনন্দিত প্রশংসাকারীগণ
৯. (ক) কখন এবং কিভাবে ঈশ্বর সকল জাতির লোকেদের তাঁর সুসমাচার শোনার সুযোগ প্রদান করেছিলেন? (খ) বাপ্তিস্মের পূর্বে কেন কর্ণীলিয় এবং তার সঙ্গীদের উপর পবিত্র আত্মা সেচন করা হয়েছিল?
৯ যিহোবা চাননি যে তাঁর দাসেদের জ্যোতি-বহনকারী কার্যক্রম এক জাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকুক। অতএব, সা.কা. ৩৬ সালের শুরু থেকে তিনি সমস্ত জাতির লোকেদের তাঁর সুসমাচার শোনার সুযোগ প্রদান করেছিলেন। ঈশ্বরের নির্দেশে, পিতর কৈসরিয়ায় একজন পরজাতীয় শতপতির বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি দেখতে পেয়েছিলেন যে কর্ণীলিয় তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের এবং পরিবারের সাথে একত্রিত হয়েছেন। যখন তারা একাগ্রচিত্তে পিতরের বাক্যগুলি শুনেছিলেন, তারা তাদের হৃদয়ে যীশুতে বিশ্বাস অনুশীলন করেছিলেন। আমরা কিভাবে জানতে পারি? কারণ ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা সেই সমস্ত পরজাতীয় বিশ্বাসীদের উপর এসেছিল। সাধারণত, ঈশ্বরের আত্মার দান শুধুমাত্র বাপ্তিস্মের পরে প্রদান করা হয়, কিন্তু এই ঘটনার মাধ্যমে যিহোবা তাদের অবগাহনের পূর্বে এই সমস্ত ন-যিহূদীদের প্রতি তাঁর অনুমোদন ইঙ্গিত করেছিলেন। যদি যিহোবা তা না করতেন, তাহলে পিতর নিশ্চিত হতে পারতেন না যে ঈশ্বর এখন পরজাতিদের তাঁর দাস হিসাবে গ্রহণ করছিলেন এবং এই কারণে তারা জলে বাপ্তিস্মের জন্য যোগ্য।—প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫, ৪৭, ৪৮.
১০. কিভাবে প্রাচীনকাল থেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল যে সকল জাতির লোকেরা যিহোবার প্রশংসা করবে?
১০ প্রাচীনকাল থেকেই, যিহোবা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে সমস্ত জাতির লোকেরা তাঁর প্রশংসা করবে। সমস্ত দেশে তাঁর আনন্দিত প্রশংসাকারীগণ থাকবে। এটি প্রমাণ করতে, প্রেরিত পৌল ইব্রীয় শাস্ত্রগুলি থেকে ভবিষ্যদ্বাণীগুলিকে উদ্ধৃত করেছিলেন। তিনি রোমে খ্রীষ্টানদের আন্তর্জাতিক মণ্ডলীকে বলেছিলেন: “যেমন খ্রীষ্ট তোমাদিগকে গ্রহণ করিলেন, তেমনি ঈশ্বরের গৌরবের জন্য তোমরা এক জন অন্যকে গ্রহণ কর। কেননা আমি বলি যে, ঈশ্বরের সত্যের জন্যই খ্রীষ্ট ত্বক্ছেদ সম্বন্ধীয় পরিচারক হইয়াছেন, যেন তিনি পিতৃপুরুষদিগকে দত্ত প্রতিজ্ঞা সকল স্থির করেন, এবং পরজাতীয়েরা যেন ঈশ্বরের দয়ার জন্যই তাঁহার গৌরব করে; যেমন [গীতসংহিতা ১৮:৪৯ পদে] লিখিত আছে, ‘এই জন্য আমি জাতিগণের মধ্যে তোমার গৌরব স্বীকার করিব, তোমার নামের উদ্দেশে স্তোত্র গান করিব।’ আবার তিনি [দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪৩ পদে] বলেন, ‘জাতিগণ! তাঁহার প্রজাদের সহিত হর্ষনাদ কর।’ আবার, [গীতসংহিতা ১১৭:১ পদে] জানান ‘সমস্ত জাতি, প্রভুর প্রশংসা কর, সমস্ত লোকবৃন্দ তাঁহার প্রশংসা করুক।’” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—রোমীয় ১৫:৭-১১.
১১. কিভাবে ঈশ্বর সমস্ত জাতির লোকেদের তাঁর সত্যগুলি শিখতে সাহায্য করেছেন এবং কী ফলাফল হয়েছে?
১১ লোকেরা ঐক্যবদ্ধভাবে যিহোবার প্রশংসা করতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা যীশুর উপর তাদের প্রত্যাশা রাখে, যাঁকে ঈশ্বর সমস্ত জাতির লোকেদের উপর শাসন করার জন্য নিযুক্ত করেছেন। তাঁর সত্যগুলি যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে, তা উপলব্ধি করতে তাদের সাহায্য করার জন্য ঈশ্বর আন্তর্জাতিক এক শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর বিশ্বস্ত দাসশ্রেণীর মাধ্যমে তিনি নির্দেশ প্রদান করছেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) এর ফল কী দাঁড়িয়েছে? ২৩০টিরও বেশি দেশে ৫০ লক্ষেরও অধিক আনন্দিত স্বর যিহোবার প্রশংসা গাইছে। আরও লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিরা তা করার জন্য আগ্রহ প্রর্দশন করছে। ১৯৯৬ সালের স্মরণার্থক সভায় কতজন যোগদান করেছিল তা লক্ষ্য করুন: ১,২৯,২১,৯৩৩ জন। বিস্ময়কর!
আনন্দিত প্রশংসাকারীদের বিস্তর লোক সম্বন্ধে ভাববাণী করা হয়েছিল
১২. প্রেরিত যোহন কোন্ চাঞ্চল্যকর দর্শন অভিজ্ঞতা করেছিলেন এবং এর জীবন্ত বাস্তবতা কী?
১২ দর্শনে, প্রেরিত যোহন সমস্ত জাতি থেকে আগত “বিস্তর লোক” দেখেছিলেন। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯) প্রশংসাগুলির বিষয়বস্তু কী যা এই বিস্তর লোক ঈশ্বরের অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশের সাথে গাইছে? যোহন আমাদের বলেন: “পরিত্রাণ আমাদের ঈশ্বরের, যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, এবং মেষশাবকের দান।” (প্রকাশিত বাক্য ৭:১০) এটি জগতের সমস্ত জায়গায় নির্ভীকতার সাথে ঘোষিত হচ্ছে। খেজুর পাতাগুলি দোলানোর দ্বারা, বলতে গেলে, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে ঈশ্বরকে সার্বিক সার্বভৌম কর্তা হিসাবে সম্বোধন করি এবং স্বর্গ ও পৃথিবীর সম্মুখে আনন্দের সাথে স্বীকার করি যে আমাদের পরিত্রাণ তাঁর এবং তাঁর পুত্র, মেষশাবক, যীশু খ্রীষ্টের “দান।” বিস্তর লোকের এই চাঞ্চল্যকর দর্শন দেখার দ্বারা প্রেরিত যোহন কী এক রোমাঞ্চকর বিষয় অভিজ্ঞতা করেছিলেন! এছাড়া যোহন যা দেখেছিলেন আজকে তার জীবন্ত বাস্তবতা দেখা এবং তার অংশ হওয়া আমাদের জন্য কতই না এক রোমাঞ্চকর বিষয়!
১৩. কী যিহোবার লোকেদের জগৎ থেকে পৃথক রেখেছে?
১৩ যিহোবার দাস হিসাবে, আমরা সগর্বে তাঁর নাম বহন করি। (যিশাইয় ৪৩:১০, ১২) যিহোবার সাক্ষী হওয়াই আমাদের জগৎ থেকে পৃথক করেছে। ঈশ্বরের বৈশিষ্ট্যসূচক নাম বহন করা এবং জীবনে আমাদের উদ্দেশ্য হিসাবে তাঁর ঐশিক কাজ করা কতই না এক আনন্দজনক বিষয়! যিহোবার মহান উদ্দেশ্য তাঁর পবিত্র নামকে গৌরবান্বিত করা এবং তাঁর সার্বিক সার্বভৌমত্বকে রাজ্যের মাধ্যমে প্রতিপাদন করা আমাদের জীবনে এক উদ্দেশ্য প্রদান করেছে। আর তাঁর নাম এবং রাজ্যের বিষয়ে তাঁর ঐশিক উদ্দেশ্যে স্থান করে নিতে তিনি আমাদের সাহায্য করেছেন। তিনটি উপায়ে তিনি এটি করেছেন।
সত্যের দায়িত্ব ন্যস্ত করে
১৪, ১৫. (ক) একটি উপায় কী যার মাধ্যমে ঈশ্বর তাঁর নাম এবং রাজ্যের বিষয়ে তাঁর ঐশিক উদ্দেশ্যে স্থান করে নিতে আমাদের সাহায্য করেছেন? (খ) সা.কা. ১৯১৪ সালে যে রাজ্য স্থাপিত হয়েছে তা সা.কা.পূ. ৬০৭ সালের বিনষ্ট হয়ে যাওয়া রাজ্যের থেকে কিভাবে পৃথক?
১৪ প্রথমত, যিহোবা তাঁর লোকেদের উপর সত্যের দায়িত্ব ন্যস্ত করেছেন। সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ প্রকাশ হল যে তাঁর রাজ্য ১৯১৪ সালে শাসন শুরু করেছে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১০) এই স্বর্গীয় সরকার যিরূশালেমের প্রতিনিধিত্বকারী রাজ্য থেকে পৃথক, যেখানে দায়ূদের বংশের রাজাদের সিংহাসনে স্থাপন করা হত। সেই রাজ্যকে বিনষ্ট করা হয়েছিল এবং সা.কা.পূ. ৬০৭ সালের শুরুতে যিরূশালেম সম্পূর্ণভাবে পরজাতীয় বিশ্ব শক্তিগুলির শাসনের অধীনে চলে গিয়েছিল। ১৯১৪ সালে যিহোবা যে নতুন রাজ্য স্থাপন করেছেন তা এক স্বর্গীয় শক্তি যা যিহোবা ছাড়া আর কখনও কারও অধীনে আসবে না অথবা এটিকে বিনষ্ট করা হবে না। (দানিয়েল ২:৪৪) তাছাড়া, এর শাসন ভিন্ন। কিভাবে? প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫ পদ উত্তর দেয়: “স্বর্গে উচ্চ রবে এইরূপ বাণী হইল, ‘জগতের রাজ্য আমাদের প্রভুর ও তাঁহার খ্রীষ্টের হইল, এবং তিনি যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে রাজত্ব করিবেন।’”—বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।
১৫ ‘আমাদের প্রভু ও তাঁহার খ্রীষ্টের রাজ্য’ সমস্ত বিশ্বের মানবজাতির উপর কর্তৃত্ব করে। যিহোবার সার্বভৌমত্বের এই নতুন অভিব্যক্তি যেটি তাঁর মশীহ পুত্র এবং যীশুর ১,৪৪,০০০ জন ভাইদের অন্তর্ভুক্ত করে, তার বেশির ভাগই এখন স্বর্গীয় মহিমায় পুনরুত্থিত হয়েছেন, তা শুধুমাত্র শিক্ষাসংক্রান্ত আগ্রহ নয়—তত্ত্বীয় কিছু বিষয় যা ছাত্রেরা হয়ত আলোচনা করতে পছন্দ করবে। না, এই স্বর্গীয় রাজ্য একটি বাস্তব সরকার। আর এর শাসনের ফলে, সিদ্ধ অবস্থায় চিরকাল বেঁচে থাকার সুখময় সম্ভাবনা আমাদের আনন্দকে বজায় রাখতে প্রচুর কারণ যোগায়। যিহোবার বাক্যের এই সত্যগুলি আমাদের কাছে ন্যস্ত হওয়ায় আমরা সর্বসময় এর সপক্ষে কথা বলতে প্রণোদিত হই। (গীতসংহিতা ৫৬:১০) ঈশ্বরের মশীহ রাজ্য এখন স্বর্গে রাজত্ব করছে এটি প্রত্যেককে বলার দ্বারা আপনি কি নিয়মিতভাবে তা করছেন?
পবিত্র আত্মা এবং বিশ্বব্যাপী ভ্রাতৃসমাজের মাধ্যমে সাহায্যপ্রাপ্ত
১৬, ১৭. দ্বিতীয় এবং তৃতীয় উপায়গুলি কী যার মাধ্যমে যিহোবা আমাদের তাঁর ঐশিক উদ্দেশ্যে স্থান করে নিতে সাহায্য করেছেন?
১৬ দ্বিতীয়ত, ঈশ্বর তাঁর পবিত্র আত্মা আমাদের প্রদান করার মাধ্যমে তাঁর ঐশিক উদ্দেশ্যে স্থান করে নিতে আমাদের সাহায্য করেছেন, যা আমাদের জীবনে এর চমৎকার ফলসমূহ উৎপন্ন করতে এবং তাঁর অনুমোদন লাভ করতে সক্ষম করে। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) এছাড়া, পৌল অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের লিখেছিলেন: “আমরা . . . ঈশ্বর হইতে নির্গত আত্মাকে পাইয়াছি, যেন ঈশ্বর অনুগ্রহপূর্ব্বক আমাদিগকে যাহা যাহা দান করিয়াছেন, তাহা জানিতে পারি।” (১ করিন্থীয় ২:১২) যিহোবার আত্মার প্রতি আমাদের সাড়া প্রদান করার মাধ্যমে, তিনি আমাদের অনুগ্রহ করে বর্তমানে যে উত্তম বিষয়গুলি প্রদান করেছেন আমরা সকলে তা এখনই জানতে এবং বুঝতে পারি—তাঁর প্রতিজ্ঞা, আইন, মানদণ্ডগুলি ইত্যাদি।—মথি ১৩:১১ পদের সাথে তুলনা করুন।
১৭ তৃতীয় যে উপায়ে যিহোবা আমাদের সাহায্য করছেন তা হল বিশ্বব্যাপী আমাদের ভ্রাতৃসমাজ এবং উপাসনার জন্য যিহোবার পরমানন্দদায়ক সাংগঠনিক ব্যবস্থা। এই সম্বন্ধে প্রেরিত পিতর বলেছিলেন যখন তিনি “ভ্রাতৃসমাজকে প্রেম” করতে আমাদের প্রণোদিত করেছিলেন। (১ পিতর ২:১৭) আমাদের প্রেমময় ভাই ও বোনেদের আন্তর্জাতিক পরিবার যিহোবাকে হৃদয়ের পরম আনন্দ সহকারে সেবা করতে আমাদের সাহায্য করে, যেমন গীতসংহিতা ১০০:২ পদ নির্দেশ দেয়: “সানন্দে সদাপ্রভুর সেবা কর; আনন্দগানসহ তাঁহার সম্মুখে আইস।” ৪ পদটি আরও বলে: “তোমরা স্তব সহকারে তাঁহার দ্বারে প্রবেশ কর, প্রশংসা সহকারে তাঁহার প্রাঙ্গণে প্রবেশ কর; তাঁহার স্তব কর, তাঁহার নামের ধন্যবাদ কর।” সুতরাং আমরা প্রকাশ্যে প্রচার অথবা সভাগুলিতে যোগদান যাই করি না কেন, আমরা আনন্দ উপভোগ করতে পারি। যিহোবার আধ্যাত্মিক মন্দিরের চমৎকার প্রাঙ্গণে আমরা কতই না শান্তি এবং নিরাপত্তা লাভ করেছি!
আনন্দের সাথে যিহোবার প্রশংসা করুন!
১৮. তাড়না এবং অন্যান্য সমস্যাগুলি যা আমাদের উদ্বিগ্ন করে, তৎসত্ত্বেও যিহোবার প্রশংসায় কেন আমরা আনন্দ করতে পারি?
১৮ যতই কঠিন অবস্থা, তাড়না অথবা অন্যান্য সমস্যাগুলি আমাদের আক্রমণ করুক না কেন, আসুন আমরা আনন্দ করি যে আমরা যিহোবার উপাসনার গৃহে আছি। (যিশাইয় ২:২, ৩) মনে রাখবেন যে আনন্দ হল হৃদয়ের একটি গুণ। আমাদের প্রাথমিক খ্রীষ্টীয় ভাই ও বোনেরা অনেক কষ্ট এবং ক্ষতি ভোগ করা সত্ত্বেও যিহোবার আনন্দিত প্রশংসাকারী ছিলেন। (ইব্রীয় ১০:৩৪) বর্তমানে আমাদের সহবিশ্বাসীরাও তাদের মত।—মথি ৫:১০-১২.
১৯. (ক) পুনরাবৃত্ত কোন্ আদেশগুলি আমাদের যিহোবাকে প্রশংসা করতে সক্রিয় করে? (খ) আমাদের অনন্ত জীবন কিসের উপর নির্ভর করে এবং আমাদের দৃঢ়সংকল্প কী?
১৯ আমরা সকলে যারা যিহোবার সেবা করি, তাঁকে প্রশংসা করার জন্য বাইবেলের আদেশগুলি পালন করতে পরমানন্দ ভোগ করি। বারংবার প্রকাশিত বাক্য ঈশ্বরের প্রশংসা এই অভিব্যক্তির মাধ্যমে উচ্চারণ করে “হাল্লিলূয়া!” (প্রকাশিত বাক্য ১৯:১-৬) গীতসংহিতা ১৫০ অধ্যায়ের ছয়টি পদে আমাদের ১৩ বার যিহোবার প্রশংসা করতে বলা হয়েছে। এটি যিহোবার প্রশংসার আনন্দময় সংগীতে যোগ দেওয়ার জন্য সকল সৃষ্টির কাছে এক বিশ্বজনীন সনির্বন্ধ আবেদন। আমাদের অনন্ত জীবন এই বৃহৎ হাল্লিলূয়া ঐকতান সংগীতে যোগদান করার উপর নির্ভর করছে! হ্যাঁ, একমাত্র সেই ব্যক্তিরা চিরকাল বেঁচে থাকবে যারা যিহোবাকে অনবরত প্রশংসা করে চলেছে। অতএব, যতই শেষ সন্নিকট হচ্ছে আমরা তাঁর বিশ্বব্যাপী অনুগত মণ্ডলীর প্রতি ঘনিষ্ঠভাবে স্থির থাকতে সংকল্পবদ্ধ রয়েছি। তাহলে, আমরা গীতসংহিতা ১৫০ অধ্যায়ের সমাপ্তিমূলক বাক্যগুলির সম্পূর্ণ পরিপূর্ণতা দেখার আশা করতে পারি: “শ্বাসবিশিষ্ট সকলেই সদাপ্রভুর প্রশংসা করুক। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর।”
আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন?
◻ কী যিহোবার লোকেদের স্বতন্ত্র, অদ্বিতীয় করে?
◻ যিহোবার দাসেরা কেন এত আনন্দিত?
◻ কী আমাদের জগৎ থেকে পৃথক করে?
◻ কোন্ তিনটি উপায়ে যিহোবা আমাদের তাঁর ঐশিক উদ্দেশ্যে স্থান করে নিতে সাহায্য করেছেন?
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
যেখানেই তিনি ছিলেন, যীশু যিহোবার সাক্ষ্য প্রদান করেছিলেন এবং প্রকাশ্যে তাঁর প্রশংসা করেছিলেন