প্রেমের পথ কখনও শেষ হয় না
“তোমরা শ্রেষ্ঠ দান সকল প্রাপ্ত হইতে যত্নবান্ হও। পরন্তু আমি তোমাদিগকে আরও উৎকৃষ্ট এক পথ দেখাইতেছি।”—১ করিন্থীয় ১২:৩১.
১-৩. (ক) প্রেম দেখাতে শেখা কী করে অনেকটা এক নতুন ভাষা শেখার মতো? (খ) কোন্ বিষয়গুলো প্রেম দেখাতে শেখাকে কঠিন করে দেয়?
আপনি কি কখনও একটা নতুন ভাষা শেখার চেষ্টা করেছেন? এটা খুবই কঠিন কাজ বললে বাড়িয়ে বলা হবে না! অবশ্য, একটা শিশু তার আশেপাশের লোকেদের কথা শুনে শুনে কোন ভাষা শিখে ফেলতে পারে। বিভিন্ন শব্দের উচ্চারণ ও মানে তার মাথায় ভালভাবে গেঁথে যায়, ফলে সে খুব তাড়াতাড়ি বেশ স্পষ্টভাবে আর হয়ত অনর্গল কথা বলতে পারে। বড়দের বেলায় এমনটা হয় না। কোন বিদেশি ভাষার মৌলিক কয়েকটা শব্দ রপ্ত করার জন্য আমরা বার বার সেই ভাষার শব্দকোষ ঘাটি। কিন্তু এক সময় সেই ভাষা অনেকটা রপ্ত হয়ে গেলে আমরা নতুন ভাষায় চিন্তা করতে শুরু করি ফলে এই ভাষায় কথা বলা আমাদের জন্য সহজ হয়ে ওঠে।
২ প্রেম দেখাতে শেখাও অনেকটা নতুন ভাষা শেখার মতো। এটা সত্যি যে মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের দেওয়া এই গুণের কিছুটা সহজাতভাবেই থাকে। (আদিপুস্তক ১:২৭. ১ যোহন ৪:৮ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) তবুও, কিভাবে প্রেম দেখানো যেতে পারে তা শেখার জন্য চেষ্টার দরকার কারণ বিশেষ করে আজকে মানুষের মধ্যে স্নেহের খুবই অভাব রয়েছে। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) মাঝে মাঝে পরিবারের মধ্যেও এমনটা হয়। অনেকে এমন দয়ামায়াহীন পরিবেশে মানুষ হন যেখানে আদর-ভালবাসা, একটু ভালবেসে কথা হয়তো কখনই বলা হয় না। (ইফিষীয় ৪:২৯-৩১; ৬:৪) যদি আমরা খুব কমই ভালবাসা পেয়ে থাকি তবুও কিভাবে আমরা প্রেম দেখাতে শিখতে পারি?
৩ বাইবেল আমাদের সাহায্য করবে। ১ করিন্থীয় ১৩:৪-৮ পদে পৌল শুধু এটুকুই বলেননি যে প্রেম বলতে কী বোঝায় কিন্তু তিনি আমাদের দেখিয়েছেন যে আসলে প্রেম বলতে কী বোঝায় আর এটা কিভাবে কাজ করে। এই পদগুলোর ওপর আলোচনা আমাদেরকে ঈশ্বরের দেওয়া এই গুণের বৈশিষ্ট্য ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করবে ও তা দেখাতে আমাদের আরও ভালভাবে তৈরি করবে। আসুন আমরা পৌলের কাছ থেকে শিখি যে প্রেম বলতে কী বোঝায়। আমরা এগুলোকে তিনটে শ্রেণীতে ভাগ করব: আমাদের ব্যবহার; তারপর, বিশেষ করে অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক; আর সবশেষে আমাদের ধৈর্য।
প্রেম আমাদের অহংকারকে জয় করতে সাহায্য করে
৪. বাইবেল ঈর্ষা সম্বন্ধে কী বলে?
৪ প্রেম সম্বন্ধে কিছু কথা বলার পর, পৌল করিন্থীয়দেরকে লিখেছিলেন: “প্রেম . . . ঈর্ষা করে না।” (১ করিন্থীয় ১৩:৪) অন্যের উন্নতিতে বা সাফল্যে অসন্তুষ্ট হয়ে আমরা ঈর্ষা দেখাতে পারি। এই জাতীয় ঈর্ষা আমাদের শরীর, মন ও আধ্যাত্মিকতার জন্য ধ্বংসাত্মক।—হিতোপদেশ ১৪:৩০; রোমীয় ১৩:১৩; যাকোব ৩:১৪-১৬.
৫. যখন মণ্ডলীতে আমাদের কিছু সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে মনে হয় তখন প্রেম কিভাবে ঈর্ষাকে জয় করতে সাহায্য করে?
৫ বিষয়টা যদি এইরকমই হয়, তাহলে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন: ‘মণ্ডলীতে যদি কোন ভাই কোন সুযোগ পায় কিন্তু আমি না পাই তখন কি আমার ঈর্ষা হয়?’ যদি আপনার উত্তর হ্যাঁ-ও হয়, ভেঙে পড়বেন না। বাইবেল লেখক যাকোব আমাদের মনে করিয়ে দেন যে সব অসিদ্ধ মানুষের মধ্যে ‘মাৎসর্য্যের আত্মা’ রয়েছে। (যাকোব ৪:৫) আপনার ভায়ের জন্য প্রেমই আপনাকে সঠিক মনোভাব ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। এই প্রেমই আপনাকে অন্যের খুশিতে খুশি হতে সাহায্য করবে আর যখন কেউ আশীর্বাদ পায় কিংবা কাউকে প্রশংসা করা হয় তখন আপনি অপমান বোধ করবেন না।—১ শমূয়েল ১৮:৭-৯ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।
৬. প্রথম শতাব্দীতে করিন্থীয় মণ্ডলীতে কোন্ কঠিন পরিস্থিতি গড়ে উঠেছিল?
৬ পৌল আরও বলেন যে “প্রেম আত্মশ্লাঘা করে না, গর্ব্ব করে না।” (১ করিন্থীয় ১৩:৫) আমাদের যদি কোন বিশেষ প্রতিভা বা দক্ষতা থাকে, তাহলে তা জাহির করার কোন দরকার নেই। স্পষ্টতই, কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষী লোকেদের এই সমস্যা ছিল যারা প্রাচীন করিন্থীয় মণ্ডলীতে গোপনে প্রবেশ করেছিলেন। তারা হয়তো কথা বলায় খুব পটু ছিলেন বা কোন কাজকে আরও দক্ষভাবে করার ক্ষমতা তাদের ছিল। তাদের নিজেদেরকে বড় করে দেখানো, তাদের নিজেদের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করানোই মণ্ডলীতে দলভেদ নিয়ে এসেছিল। (১ করিন্থীয় ৩:৩, ৪; ২ করিন্থীয় ১২:২০) মণ্ডলীর অবস্থা এতই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে ‘নির্ব্বোধ লোকদের রাখার’ জন্য পৌলকে পরে করিন্থীয়দেরকে ভর্ৎসনা করতে হয়েছিল, যাদেরকে কটাক্ষ করে তিনি ‘প্রেরিত-চূড়ামণি’ বলেছিলেন।—২ করিন্থীয় ১১:৫, ১৯, ২০.
৭, ৮. বাইবেল থেকে দেখান যে একতা বাড়ানোর জন্য কিভাবে আমরা আমাদের সহজাত প্রতিভাকে ব্যবহার করতে পারি?
৭ আজকেও একইরকম অবস্থা হতে পারে। যেমন, কারও কারও মধ্যে হয়তো পরিচর্যায় সাফল্য অথবা ঈশ্বরের সংগঠনে তাদের সুযোগগুলোর জন্য গর্ব করার প্রবণতা থাকতে পারে। কিন্তু যদি আমাদের কোন বিশেষ দক্ষতা বা ক্ষমতা থাকেই যা মণ্ডলীর অন্যদের নেই, তাহলে তার মানে কি এই যে আমাদের তারজন্য গর্ব করতে হবে? একেবারেই নয়, আসল কথা হল আমাদের সহজাত প্রতিভাকে আমাদের মধ্যে একতা বাড়ানোর জন্য কাজে লাগানো উচিত, আমাদের নিজেদেরকে বড় করার জন্য নয়।—মথি ২৩:১২; ১ পিতর ৫:৬.
৮ পৌল লিখেছিলেন যে একটা মণ্ডলীতে যদিও অনেক সদস্য থাকে কিন্তু “ঈশ্বর দেহ সংগঠিত করিয়াছেন।” (১ করিন্থীয় ১২:১৯-২৬) যে গ্রিক শব্দ থেকে “সংগঠিত” শব্দকে অনুবাদ করা হয়েছে সেটা কোন মিশ্রণকে বোঝায়, যেমন বিভিন্ন রং মিশিয়ে একটা রং বানানো। তাই মণ্ডলীর কোন সদস্যেরই উচিত নয় যে সে তার দক্ষতার জন্য গর্ব করে কিংবা অন্যদের ওপর কর্তৃত্ব করে। ঈশ্বরের সংগঠনে অহংকার ও নিজেকে বড় করার মনোভাবের কোন জায়গা নেই।—হিতোপদেশ ১৬:১৯; ১ করিন্থীয় ১৪:১২; ১ পিতর ৫:২, ৩.
৯. যে লোকেরা তাদের নিজেদের স্বার্থচেষ্টা করছিলেন তাদের জন্য বাইবেলে কোন্ সতর্কতামূলক উদাহরণগুলো আছে?
৯ প্রেম “স্বার্থ চেষ্টা করে না।” (১ করিন্থীয় ১৩:৫) অন্যের প্রতি প্রেম আছে এমন এক ব্যক্তি কখনও নিজের স্বার্থে অন্যদেরকে কাজে লাগান না, তাদের কাছ থেকে সুযোগ নেন না। এই সম্বন্ধে সতর্ক করার জন্য বাইবেল আমাদের কিছু উদাহরণ দেয় যা থেকে আমরা শিখতে পারি। যেমন: আমরা দলিলা, ঈষেবল এবং অথলিয়া—এই মহিলাদের জানি, যারা নিজেদের স্বার্থের জন্য অন্যদেরকে কাজে লাগিয়েছিলেন। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৬:১৬; ১ রাজাবলি ২১:২৫; ২ বংশাবলি ২২:১০-১২) রাজা দায়ূদের পুত্র অবশালেমও এদের দলেরই একজন ছিলেন। তিনি রাজদ্বারের পথের পাশে দাঁড়াতেন আর যারা বিচারের জন্য যিরূশালেমে আসতেন তাদের কাছে গোপনে যেতেন এবং বলতেন যে রাজদরবারে তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে কেউই সত্যিকারের চিন্তা করেন না। তারপর তিনি সরাসরি বলতেন যে রাজদরবারে তার মতো একজন সমব্যথী মানুষের সত্যিই প্রয়োজন! (২ শমূয়েল ১৫:২-৪) আসলে দুঃখীদের জন্য কোন দয়ামায়া অবশালেমের ছিল না, তিনি তার নিজের বিষয়ে চিন্তিত ছিলেন। নিজেকে রাজার মতো দেখিয়ে তিনি অনেকের হৃদয় জয় করেছিলেন। কিন্তু পরে, অবশালেম চরমভাবে পরাজিত হয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পরে তাকে উপযুক্তভাবে কবর দেওয়ার যোগ্য বলেও মনে করা হয়নি।—২ শমূয়েল ১৮:৬-১৭.
১০. আমরা কিভাবে দেখাতে পারি যে আমরা অন্যের ভালমন্দের প্রতি নজর দিই?
১০ আজকে, এটা খ্রীষ্টানদেরকে সতর্ক করে। আমরা ভাই বা বোন যাই হই না কেন, আমরা হয়ত ছোট থেকে আমার কথা অন্যেরা মেনে নেবে এমন মনোভাব পোষণ করে এসেছি। তাই কোন আলোচনায় আমার কথাই সবকিছু বা যাদের আলাদা মতামত রয়েছে তাদেরকে ছোট করা আমাদের জন্য হয়ত কোন ব্যাপারই না। কিন্তু আমাদের মধ্যে যদি সত্যিই প্রেম থাকে, তাহলে আমরা অন্যদের ভালমন্দের দিকে নজর দেব। (ফিলিপীয় ২:২-৪) আমাদের অভিজ্ঞতা বেশি বলে বা ঈশ্বরের সংগঠনে আমরা কোন দায়িত্বে আছি বলে, অস্পষ্ট বিষয়গুলো আমরা নিজেদের ইচ্ছামত ব্যাখ্যা করে আমাদের মতামত অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে আমরা সুযোগ নেব না কিংবা এমন দেখাব না যে আমাদের মতামতই হল ঠিক। আমরা বরং বাইবেলের এই প্রবাদ বাক্য মনে রাখব: “বিনাশের পূর্ব্বে অহঙ্কার, পতনের পূর্ব্বে মনের গর্ব্ব।”—হিতোপদেশ ১৬:১৮.
প্রেম শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে
১১. (ক) কোন্ কোন্ উপায়ে আমরা দেখাতে পারি যে প্রেম মধুর ও শিষ্ট? (খ) আমরা কিভাবে দেখতে পারি যে আমরা অধার্মিকতায় আনন্দ করি না?
১১ পৌল আরও লিখেছিলেন যে প্রেম “মধুর” এবং “অশিষ্টাচরণ করে না।” (১ করিন্থীয় ১৩:৪, ৫) প্রেম থাকলে আমরা রূঢ়, অমার্জিত এবং অসম্মাজনক আচরণ করব না। পরিবর্তে, আমরা অন্যদের অনুভূতিকে বুঝব। যেমন, একজন ব্যক্তি যার অন্যের প্রতি প্রেম আছে তিনি অন্যের বিবেককে জ্বালাতন করে এমন বিষয়গুলো এড়িয়ে চলবেন। (১ করিন্থীয় ৮:১৩ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) প্রেম “অধার্ম্মিকতায় আনন্দ করে না, কিন্তু সত্যের সহিত আনন্দ করে।” (১ করিন্থীয় ১৩:৬) আমরা যদি যিহোবার ব্যবস্থা ভালবাসি, তাহলে আমরা অনৈতিক কাজ দেখেও না দেখার ভান করব না কিংবা এমন আমোদপ্রমোদে অংশ নেব না যা ঈশ্বর ঘৃণা করেন। (গীতসংহিতা ১১৯:৯৭) প্রেম আমাদেরকে সেই বিষয়গুলোতে আনন্দ খুঁজে পেতে সাহায্য করবে যেগুলো অন্যদের ছোট করে না বরং গেঁথে তোলে।—রোমীয় ১৫:২; ১ করিন্থীয় ১০:২৩, ২৪; ১৪:২৬.
১২, ১৩. (ক) কেউ যখন আমাদের বিরক্ত করেন তখন আমাদের কীরকম প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত? (খ) উপযুক্ত ক্রোধও যে অবিবেচকের মতো কাজ করার কারণ হতে পারে তা দেখানোর জন্য বাইবেলের কিছু উদাহরণ বর্ণনা করুন।
১২ পৌল লেখেন যে প্রেম “রাগিয়া উঠে না” (“একটুতেই রেগে যায় না,” ফিলিপস্)। (১ করিন্থীয় ১৩:৫) এটা মানতেই হবে যে আমাদের অর্থাৎ অসিদ্ধ মানুষদের পক্ষে উত্তেজিত হয়ে ওঠা কিংবা কেউ আমাদের বিরক্ত করলে রেগে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু অনেক দিন ধরে রেগে থাকা বা অনেক দিন পর্যন্ত তা পুষে রাখা ভুল হবে। (গীতসংহিতা ৪:৪; ইফিষীয় ৪:২৬) রাগকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে, এমনকি উপযুক্ত রাগও আমাদেরকে দিয়ে অবিবেচকের মতো কাজ করাতে পারে এবং এর জন্য যিহোবা আমাদেরকে দায়ী করতে পারেন।—আদিপুস্তক ৩৪:১-৩১; ৪৯:৫-৭; গণনাপুস্তক ১২:৩; ২০:১০-১২; গীতসংহিতা ১০৬:৩২, ৩৩.
১৩ আমরা সবাই অসিদ্ধ আর তাই আমাদের দুর্বলতা আছে কিন্তু কেউ কেউ ভাইদের দুর্বলতাকে খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে না আসার ও প্রচারে না যাওয়ার জন্য অজুহাত হিসাবে খাড়া করেন। কিন্তু আগে এই ভাইবোনেরাই হয়তো পারিবারিক বিরোধিতা, সহকর্মীদের উপহাস এবং এইরকম আরও বিরোধিতার মাঝে বিশ্বাসের পক্ষে প্রাণপণ লড়াই করেছিলেন। এই বাধাগুলোকে তারা সহ্য করেছিলেন কারণ তারা এগুলোকে তাদের বিশ্বস্ততা রক্ষার পরীক্ষা হিসাবে দেখেছিলেন আর আসলে সেগুলো তাই-ই। কিন্তু কোন খ্রীষ্টান ভাই বা বোন যদি এমন কিছু বলেন বা করেন যাতে প্রেমের অভাব দেখা যায়, তাহলে কী বলা যায়? সেটাও কি বিশ্বস্ততা রক্ষার পরীক্ষা নয়? প্রকৃতই, সেটাও পরীক্ষা কারণ আমরা যদি রাগ পুষে রাখি তবে আমরা “দিয়াবলকে স্থান” করে দিচ্ছি।—ইফিষীয় ৪:২৭.
১৪, ১৫. (ক) “অপকার গণনা” করার মানে কী? (খ) ক্ষমা করার ক্ষেত্রে আমরা কিভাবে যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারি?
১৪ উপযুক্ত কারণেই পৌল আরও বলেন যে প্রেম “অপকার গণনা করে না।” (১ করিন্থীয় ১৩:৫) এখানে তিনি হিসাবশাস্ত্রের একটা শব্দ ব্যবহার করেছিলেন কারণ ভুল এড়ানোর জন্য জমাখরচের খাতায় হিসাব তুলে রাখা হয়। কিন্তু আমরা যে কথায় বা কাজে কষ্ট পাই তা মনে রাখা কি প্রেমপূর্ণ হবে যাতে ভবিষ্যতে দরকার হলে তা ব্যবহার করা যায়? আমরা কত আনন্দিতই না হতে পারি যে যিহোবা এমন করুণাহীন ব্যক্তির মতো আমাদের প্রত্যেকটা বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার করেন না! (গীতসংহিতা ১৩০:৩) হ্যাঁ, আমরা যখন অনুতপ্ত হই তখন তিনি আমাদের ভুলগুলোকে মুছে ফেলেন।—প্রেরিত ৩:১৯.
১৫ এই ক্ষেত্রে আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারি। কেউ আমাদেরকে উপেক্ষা করছেন বলে মনে হলেও আমাদের খুব বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়া উচিত নয়। আমরা যদি এত তাড়াতাড়ি বিঘ্ন পাই, তবে যিনি আমাদের বিঘ্ন জন্মাচ্ছেন তার চেয়ে বরং আমরাই নিজেদেরকে আরও বেশি কষ্ট দিই। (উপদেশক ৭:৯, ২২) এর বদলে আমাদের মনে রাখা দরকার যে প্রেম “সকলই বিশ্বাস করে।” (১ করিন্থীয় ১৩:৭) অবশ্য, আমরা কেউই ঠকতে চাই না কিন্তু তাই বলে আমাদের কখনই ভাইদের উদ্দেশ্য নিয়ে অকারণে সন্দেহ করা উচিত নয়। যাই হোক, আসুন আমরা অন্যের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ করা এড়িয়ে চলি।—কলসীয় ৩:১৩.
প্রেম আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করে
১৬. কোন্ পরিস্থিতিতে প্রেম আমাদের দীর্ঘসহিষ্ণু হতে সাহায্য করতে পারে?
১৬ পরে পৌল আমাদের বলেন যে “প্রেম চিরসহিষ্ণু।” (১ করিন্থীয় ১৩:৪) এটা আমাদেরকে কঠিন পরিস্থিতি সহ্য করতে সাহায্য করে হয়তো বা অনেক দিন ধরে। যেমন, অনেক খ্রীষ্টান হয়ত ধর্মীয়ভাবে বিভক্ত পরিবারে বহু বছর ধরে আছেন। অন্যেরা অবিবাহিত আছেন, হয়ত ইচ্ছা করে নয় কিন্তু “প্রভুতেই” কোন উপযুক্ত সাথি খুঁজে না পাওয়ায়। (১ করিন্থীয় ৭:৩৯; ২ করিন্থীয় ৬:১৪) এছাড়া অন্যেরা হয়তো ভগ্ন স্বাস্থ্যের সঙ্গে লড়াই করছেন। (গালাতীয় ৪:১৩, ১৪; ফিলিপীয় ২:২৫-৩০) আসলে, এই অসিদ্ধ পরিস্থিতিতে এমন কেউই নেই যাকে কোন না কোন পরীক্ষা সহ্য করতে হচ্ছে না।—মথি ১০:২২; যাকোব ১:১২.
১৭. কী আমাদের সকলই সহ্য করতে সাহায্য করবে?
১৭ পৌল আমাদের আশ্বাস দেন যে প্রেম “সকলই বহন করে, . . . সকলই প্রত্যাশা করে, সকলই ধৈর্য্যপূর্ব্বক সহ্য করে।” (১ করিন্থীয় ১৩:৭) যিহোবার জন্য প্রেম আমাদেরকে ধার্মিকতা বজায় রাখার জন্য যে কোন পরিস্থিতি সহ্য করতে সাহায্য করবে। (মথি ১৬:২৪; ১ করিন্থীয় ১০:১৩) আমরা শহীদ হওয়ার চেষ্টা করি না। ববং, আমাদের লক্ষ্য হল শান্তিপূর্ণ ও নির্ঝঞ্ঝাটভাবে জীবন কাটানো। (রোমীয় ১২:১৮; ১ থিষলনীকীয় ৪:১১, ১২) তাসত্ত্বেও, যখন বিশ্বাসের পরীক্ষাগুলো আসে, তখন আমরা খ্রীষ্টীয় শিষ্যত্বের মূল্য হিসাবে এগুলোকে আনন্দের সঙ্গে মেনে নিই। (লূক ১৪:২৮-৩৩) আমরা যখন ধৈর্য ধরি তখন আমরা এক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে চেষ্টা করি, এই আশা নিয়ে যে এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও সবচেয়ে ভাল ফল আসবে।
১৮. ভাল সময়েও কিভাবে ধৈর্যের প্রয়োজন?
১৮ তাড়নার সময়ই যে আমাদের জন্য ধৈর্য ধরার একমাত্র সময় তা নয়। কখনও কখনও ধৈর্য ধরার মানে হল যে কোন পরিস্থিতিতে, এক সঠিক পথে স্থির থাকা আর সেই পথে চলতে থাকা। ধৈর্য ধরে চলার সঙ্গে এক উত্তম আধ্যাত্মিক তালিকা জুড়ে আছে। উদাহরণস্বরূপ, আপনার পরিস্থিতি যতখানি অনুমতি দেয় আপনি ততখানিই মনপ্রাণ দিয়ে প্রচারে অংশ নেন? আপনি কি বাইবেল পড়েন ও সেই বিষয়ে ধ্যান করেন এবং প্রার্থনায় আপনার স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে কথা বলেন? আপনি কি নিয়মিত খ্রীষ্টীয় সভায় আসেন ও খ্রীষ্টান ভাইবোনদের সঙ্গে মেলামেশা করে তাদের উৎসাহ দেন ও নিজে উৎসাহিত হন? আপনি যদি তা করেন, তাহলে ভাল বা কঠিন, যে কোন পরিস্থিতিতেই আপনি থাকুন না কেন, আপনি ধৈর্য ধরছেন। হাল ছেড়ে দেবেন না “কেননা ক্লান্ত না হইলে যথাসময়ে শস্য পাইব।”—গালাতীয় ৬:৯.
প্রেম—“উৎকৃষ্ট এক পথ”
১৯. কিভাবে প্রেম “উৎকৃষ্ট এক পথ”?
১৯ এই ঐশিক গুণকে “উৎকৃষ্ট এক পথ” বলে পৌল প্রেম দেখানোর গুরুত্বকে বোঝাতে চাইছিলেন। (১ করিন্থীয় ১২:৩১) কোন্ অর্থে “উৎকৃষ্ট?” পৌল সবেমাত্র আত্মার দানগুলোর কথা বলেছেন যা প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের সকলের মধ্যেই ছিল। কেউ কেউ ভবিষ্যদ্বাণী বলতে পারতেন, অন্যেরা অসুস্থদের সুস্থ করতে পারতেন আবার অনেকের বিভিন্ন ভাষায় কথা বলার ক্ষমতা ছিল। নিঃসন্দেহে, চমৎকার দান! তথাপি পৌল করিন্থীয়দের বলেছিলেন: “যদি আমি মনুষ্যদের, এবং দূতগণেরও ভাষা বলি, কিন্তু আমার প্রেম না থাকে, তবে আমি শব্দকারক পিত্তল ও ঝম্ঝম্কারী করতাল হইয়া পড়িয়াছি। আর যদি ভাববাণী প্রাপ্ত হই, ও সমস্ত নিগূঢ়তত্ত্বে ও সমস্ত জ্ঞানে পারদর্শী হই, এবং যদি আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস থাকে যাহাতে আমি পর্ব্বত স্থানান্তর করিতে পারি, কিন্তু আমার প্রেম না থাকে, তবে আমি কিছুই নহি।” (১ করিন্থীয় ১৩:১, ২) হ্যাঁ, আমাদের কোন কাজের পেছনে উদ্দেশ্য যদি ঈশ্বর ও প্রতিবেশীদের প্রতি প্রেম না হয় তবে তা মূল্যবান হলেও “মৃত ক্রিয়া” হয়ে দাঁড়াবে।—ইব্রীয় ৬:১.
২০. প্রেম গড়ে তুলতে চাইলে কেন আমাদের সবসময় চেষ্টা করে যেতে হবে?
২০ কেন আমাদের এই ঐশিক গুণ, প্রেম গড়ে তোলা উচিত তার আরেকটা কারণ যীশু দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৫) “যদি” শব্দটা এই দায়িত্বকে প্রত্যেক খ্রীষ্টানদের ওপর ছেড়ে দেয় যে তিনি প্রেম দেখাতে শিখবেন বা শিখবেন না। মোট কথা, বিদেশে থাকলেই যে আমরা সেই দেশের ভাষায় কথা বলতে পারব তা নয়। একইভাবে কেবল কিংডম হলের সভাগুলোতে এলেই অথবা খ্রীষ্টান ভাইবোনদের সঙ্গে মেলামেশা করলেই আমরা প্রেম দেখাতে শিখে যাব না। এই “ভাষা” শেখার জন্য অনেক চেষ্টার প্রয়োজন।
২১, ২২. (ক) আমরা যদি পৌলের আলোচিত প্রেমের কিছু দিক পালন করতে না পারি, তাহলে আমাদের কেমন মনোভাব রাখা উচিত? (খ) কিভাবে বলা যায় যে “প্রেম কখনও শেষ হয় না”?
২১ প্রেম সম্বন্ধে পৌল যে আলোচনা করেছেন, তার সমস্ত দিক সবসময় আপনি ঠিকভাবে পালন করতে পারবেন না। কিন্তু ভেঙে পড়বেন না। ধৈর্যের সঙ্গে চেষ্টা করে চলুন। বাইবেলে খোঁজ করে চলুন আর অন্যদের সঙ্গে ব্যবহারে এর নীতিগুলোকে কাজে লাগান। যিহোবা নিজে আমাদের জন্য যে উদাহরণ স্থাপন করেছেন তা কখনও ভুলে যাবেন না। ইফিষীয়দের পৌল উপদেশ দিয়েছিলেন: “তোমরা পরস্পর মধুরস্বভাব ও করুণাচিত্ত হও, পরস্পর ক্ষমা কর, যেমন ঈশ্বরও খ্রীষ্টে তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন।”—ইফিষীয় ৪:৩২.
২২ নতুন ভাষায় কথা বলতে শেখা যেমন আপনার কাছে শেষপর্যন্ত সহজ হয়ে যায়, তেমনই একসময় আপনি দেখবেন যে প্রেম দেখানোও আপনার জন্য সহজ হয়ে গেছে। পৌল আমাদের আশ্বাস দেন যে “প্রেম কখনও শেষ হয় না।” (১ করিন্থীয় ১৩:৮) আত্মার অলৌকিক দান শেষ হলেও, প্রেম কখনও শেষ হবে না। তাই, এই ঐশিক গুণ দেখাতে শিখুন। পৌল যেমন বলেছেন এটা ঠিকই “উৎকৃষ্ট এক পথ।”
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
◻ প্রেম কিভাবে অহংকারকে জয় করতে সাহায্য করে?
◻ কোন্ কোন্ উপায়ে প্রেম মণ্ডলীতে শান্তি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে?
◻ কিভাবে প্রেম আমাদের ধৈর্য ধরতে সাহায্য করতে পারে?
◻ কিভাবে প্রেম “উৎকৃষ্ট এক পথ”?
[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রেম আমাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনদের ভুলগুলোকে দেখেও না দেখতে সাহায্য করবে
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
ধৈর্য ধরার অর্থ আধ্যাত্মিক তালিকা অনুযায়ী চলা