অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৭
কীভাবে আমরা একে অন্যের প্রতি প্রেম আরও বাড়াতে পারি?
“এসো আমরা পরস্পরের প্রতি প্রেম দেখিয়ে চলি, কারণ প্রেম ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে।”—১ যোহন ৪:৭.
গান ১০৬ প্রেম দেখাতে শেখা
সারাংশa
১-২. (ক) প্রেরিত পৌল কেন বলেছিলেন যে, “প্রেমই মহৎ” গুণ? (খ) আমরা কোন প্রশ্নগুলোর উপর মনোযোগ দেব?
একবার প্রেরিত পৌল যখন বিশ্বাস, প্রত্যাশা ও প্রেম নিয়ে কথা বলছিলেন, তখন একেবারে শেষে তিনি বলেছিলেন, “এগুলোর মধ্যে প্রেমই মহৎ।” (১ করি. ১৩:১৩) কেন পৌল এমনটা বলেছিলেন? ভবিষ্যতে পরমদেশের বিষয়ে ঈশ্বরের করা প্রতিজ্ঞাগুলোর উপর আমাদের আর বিশ্বাস করার প্রয়োজন পড়বে না। আর এখন সেগুলোর বিষয়ে আমাদের যে-প্রত্যাশা রয়েছে, সেটারও প্রয়োজন পড়বে না। কারণ সেই সময়ে এগুলো পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। কিন্তু, আমাদের সবসময় যিহোবা এবং তাঁর লোকদের প্রতি প্রেম দেখিয়ে চলতে হবে। আসলে, তাদের প্রতি আমাদের প্রেম দিন দিন আরও গভীর হবে।
২ আমাদের একে অন্যের প্রতি প্রেম দেখিয়ে চলতে হবে। তাই আসুন, এই তিনটে প্রশ্নের উপর মনোযোগ দিই: (১) কেন আমাদের একে অন্যের প্রতি প্রেম দেখানো উচিত? (২) কীভাবে আমরা একে অন্যের প্রতি প্রেম দেখাতে পারি? (৩) কীভাবে আমরা ক্রমাগত একে অন্যের প্রতি প্রেম বাড়াতে পারি?
কেন আমাদের একে অন্যের প্রতি প্রেম দেখানো উচিত?
৩. কেন আমাদের একে অন্যের প্রতি প্রেম দেখানো গুরুত্বপূর্ণ?
৩ কেন একে অন্যের প্রতি প্রেম দেখানো গুরুত্বপূর্ণ? এর অনেক কারণ রয়েছে। একটা হল, প্রেমের মাধ্যমেই সত্য খ্রিস্টানদের চেনা যায়। যিশু তাঁর প্রেরিতদের বলেছিলেন, “তোমাদের মধ্যে যদি প্রেম থাকে, তা হলেই সকলে জানবে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৫) এ ছাড়া, আমরা যদি একে অন্যের প্রতি প্রেম দেখাই, তা হলে আমাদের মধ্যে একতাও বজায় থাকবে। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন, “প্রেমই সমস্ত লোককে পুরোপুরিভাবে একতাবদ্ধ করে।” (কল. ৩:১৪) কিন্তু, একে অন্যের প্রতি প্রেম দেখানোর আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। প্রেরিত যোহন খ্রিস্টানদের বলেছিলেন, “যে-কেউ ঈশ্বরকে প্রেম করে, সে যেন নিজের ভাইকেও প্রেম করে।” (১ যোহন ৪:২১) এর মানে হল, আমরা যখন একে অন্যের প্রতি প্রেম দেখাই, তখন এটা বোঝা যায় যে, আমরা ঈশ্বরকে ভালোবাসি।
৪-৫. উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন যে, ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এবং একে অন্যের প্রতি প্রেম দেখানোর মধ্যে কোন সম্পর্ক রয়েছে?
৪ ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেম এবং ভাই-বোনদের প্রতি আমাদের প্রেম, এই দুটোর মধ্যে কোন সম্পর্ক রয়েছে? এটা বোঝার জন্য চিন্তা করুন, আমাদের হার্টের সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের কোন সম্পর্ক রয়েছে। একজন ডাক্তার যখন আমাদের হাতের পাল্স চেক করেন, তখন তিনি কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারেন, আমাদের হার্ট সুস্থসবল আছে কি না। প্রেমের ক্ষেত্রে একই বিষয়টা সত্য।
৫ ডাক্তার যখন আমাদের পাল্স চেক করেন, তখন তিনি বুঝতে পারেন, আমাদের হার্টের অবস্থা কেমন। একইভাবে আমরা যখন দেখি, ভাই-বোনদের প্রতি আমরা কতটা প্রেম দেখাচ্ছি, তখন আমরা বুঝতে পারি, আমরা ঈশ্বরকে কতটা ভালোবাসি। আমাদের যদি মনে হয়, ভাই-বোনদের প্রতি আমাদের প্রেম ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে, এর মানে হল, যিহোবার প্রতিও আমাদের ভালোবাসা হয়তো কমে যাচ্ছে। তবে, আমরা যদি ক্রমাগত ভাই-বোনদের প্রতি প্রেম দেখাই, তা হলে এটা থেকে বোঝা যাবে, আমরা যিহোবাকেও অনেক ভালোবাসি।
৬. ভাই-বোনদের প্রতি আমাদের প্রেম যদি কমে যেতে থাকে, তা হলে কেন এটা বিপদের সংকেত? (১ যোহন ৪:৭-৯, ১১)
৬ আপনি যদি দেখেন, ভাই-বোনদের প্রতি আপনার প্রেম কমে যাচ্ছে, তা হলে আপনাকে বুঝতে হবে, এটা বিপদের সংকেত। এর মানে, যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক দুর্বল হতে শুরু করেছে। প্রেরিত যোহনও এই বিষয়ে বলেছিলেন: “কারণ যাকে দেখেছে, সেই ভাইকে যে প্রেম করে না, সে যাঁকে দেখেনি, সেই ঈশ্বরকে প্রেম করতে পারে না।” (১ যোহন ৪:২০) এখান থেকে আমরা কী শিখি? আমরা যদি “পরস্পরের প্রতি প্রেম দেখিয়ে চলি,” তা হলেই যিহোবা খুশি হবেন।—পড়ুন, ১ যোহন ৪:৭-৯, ১১.
কীভাবে আমরা একে অন্যের প্রতি প্রেম দেখাতে পারি?
৭-৮. কীভাবে আমরা ভাই-বোনদের প্রতি প্রেম দেখাতে পারি?
৭ ঈশ্বরের বাক্যে অনেক বার বলা হয়েছে, আমরা যেন ‘পরস্পর প্রেম করি।’ (যোহন ১৫:১২, ১৭; রোমীয় ১৩:৮; ১ থিষল. ৪:৯; ১ পিতর ১:২২; ১ যোহন ৪:১১) আমাদের হৃদয়ে হয়তো ভাই-বোনদের প্রতি প্রেম রয়েছে। কিন্তু, কেউ আমাদের হৃদয়ের ভিতরে ঢুকে দেখতে পারে না যে, অন্যদের প্রতি আমাদের প্রেম রয়েছে কি না। তাই, আমাদের এই প্রেম দেখাতে হবে। কীভাবে আমরা এই প্রেম দেখাতে পারি? আমাদের কথাবার্তা এবং আচার-আচরণের মাধ্যমে।
৮ আমরা বিভিন্ন উপায়ে দেখাতে পারি, ভাই-বোনদের প্রতি আমাদের প্রেম রয়েছে। যেমন বাইবেল আমাদের বলে, তোমরা “আপন আপন প্রতিবাসীর কাছে সত্য বলিও।” (সখ. ৮:১৬) ‘তোমরা একে অন্যের সঙ্গে শান্তিতে থাকো।’ (মার্ক ৯:৫০) “সমাদর দেখানোর ক্ষেত্রে নিজে থেকে এগিয়ে যাও।” (রোমীয় ১২:১০) “তোমরা একে অন্যকে গ্রহণ করো।” (রোমীয় ১৫:৭) “পরস্পরকে পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করো।” (কল. ৩:১৩) “তোমরা একে অন্যের বোঝা বহন করো।” (গালা. ৬:২) “সবসময় একে অন্যকে সান্ত্বনা দাও।” (১ থিষল. ৪:১৮) “একে অন্যকে উৎসাহিত ও শক্তিশালী করো।” (১ থিষল. ৫:১১) “একে অন্যের জন্য প্রার্থনা করো।”—যাকোব ৫:১৬.
৯. কেন আমরা বলতে পারি, অন্যদের সান্ত্বনা দেওয়া প্রেম দেখানোর এক গুরুত্বপূর্ণ উপায়? (ছবিও দেখুন।)
৯ আগের অনুচ্ছেদে আমরা প্রেম দেখানোর বিষয়ে যে-উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি, আসুন সেগুলোর মধ্যে একটার উপর মনোযোগ দিই। আমরা পৌলের দেওয়া এই পরামর্শের উপর মনোযোগ দেব, “সবসময় একে অন্যকে সান্ত্বনা দাও।” প্রেম দেখানোর একটা গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল, সান্ত্বনা দেওয়া। কেন আমরা তা বলতে পারি? বাইবেলের এই পদ সম্বন্ধে একটা বই এভাবে বলে, যে-শব্দকে “সান্ত্বনা দেওয়া” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটার মানে হল, এমন একজন ব্যক্তির পাশে দাঁড়িয়ে তাকে উৎসাহিত করা, যিনি অনেক কঠিন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তাই, আমরা যখন কোনো ভাই কিংবা বোনকে সান্ত্বনা দিই, যিনি খুবই হতাশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তখন এটা এমন যেন আমরা তার দিকে আমাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি, যাতে তিনি আবার উঠতে পারেন এবং জীবনের পথে চলতে পারেন। প্রতি বার আমরা যখন কোনো ভাই কিংবা বোনকে তার দুঃখের কথা বলার সুযোগ দিই, যিনি একেবারে ভেঙে পড়েছেন, তখন আসলে আমরা তার প্রতি প্রেম দেখাই।—২ করি. ৭:৬, ৭, ১৩.
১০. অন্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য সমবেদনা থাকা কেন গুরুত্বপূর্ণ? বুঝিয়ে বলুন।
১০ কাউকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য সবার আগে আমাদের হৃদয়ে তার প্রতি সমবেদনা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কেন? কারণ যে-ব্যক্তি কাউকে কষ্টে দেখে নিজেও সেই কষ্ট অনুভব করে অথবা তার হৃদয় সমবেদনায় ভরে যায়, সেই ব্যক্তিই তাকে সাহায্য করার জন্য কিংবা সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসে। এর মানে হল, আমাদের ভাই-বোনেরা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময়ে যে-কষ্ট অনুভব করে, আমরাও যদি তা অনুভব করি অর্থাৎ আমাদের মনে যদি তাদের প্রতি সমবেদনা থাকে, তা হলেই আমরা তাদের সান্ত্বনা দিতে পারব। যিহোবা সম্বন্ধে পৌল এইরকমই কিছু বলেছিলেন, যিহোবা হলেন “করুণাময় পিতা এবং সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর।” (২ করি. ১:৩) এখানে “করুণা” শব্দের মানে হল, অন্যদের প্রতি সমবেদনা অনুভব করা। পৌল যিহোবাকে “করুণাময় পিতা” বলেছিলেন কারণ তিনিই হলেন সমবেদনার উৎস। আর এই সমবেদনা থাকার ফলেই ঈশ্বর “আমাদের সমস্ত পরীক্ষার মধ্যে সান্ত্বনা দেন।” (২ করি. ১:৪) পিপাসিত ব্যক্তিরা যেমন ঝরনার জল খেয়ে সতেজতা অনুভব করে, একইভাবে যিহোবা দুঃখী অথবা হতাশ লোকদের যে-সান্ত্বনা দেন, সেটা থেকে তারা সতেজতা লাভ করে। যিহোবার মতো আমাদের হৃদয়েও লোকদের প্রতি সমবেদনা থাকা উচিত এবং তাদের সান্ত্বনা দেওয়া উচিত। কীভাবে আমরা তা করতে পারি? একটা উপায় হল, আমরা নিজেদের মধ্যে এমন গুণ গড়ে তুলতে পারি, যেগুলোর কারণে আমরা অন্যদের সান্ত্বনা দিতে চাইব। আসুন, এই গুণগুলোর মধ্যে কয়েকটা লক্ষ করি।
১১. অন্যদের প্রতি প্রেম দেখিয়ে চলার জন্য এবং ক্রমাগত সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আমাদের আর কোন গুণগুলো গড়ে তুলতে হবে? (কলসীয় ৩:১২; ১ পিতর ৩:৮)
১১ একে অন্যের প্রতি প্রেম দেখানো এবং “সবসময় একে অন্যকে সান্ত্বনা” দেওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে? আমাদের একে অন্যের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে হবে, ভ্রাতৃপ্রেম দেখাতে হবে এবং দয়া দেখাতে হবে। (পড়ুন, কলসীয় ৩:১২; ১ পিতর ৩:৮.) যখন এই সমস্ত কিছু করা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হবে, তখন ভাই-বোনদের কষ্টে দেখে আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারব না, আমরা তাদের সান্ত্বনা দেব। যিশুও বলেছিলেন, “হৃদয় যা দিয়ে পূর্ণ থাকে, মুখ সেটাই বলে। একজন ভালো ব্যক্তি তার ভালো ভাণ্ডার থেকে ভালো জিনিস বের করে।” (মথি ১২:৩৪, ৩৫) যে-ভাই-বোনেরা কষ্টের মধ্যে রয়েছে, তাদের সান্ত্বনা দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে তারা বুঝতে পারবে, আমরা তাদের কত ভালোবাসি।
কীভাবে আমরা ক্রমাগত একে অন্যের প্রতি প্রেম বাড়াতে পারি?
১২. (ক) কেন আমাদের সাবধান থাকা উচিত? (খ) এখন আমরা কোন প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করব?
১২ আমরা সবাই ‘পরস্পরের প্রতি প্রেম দেখিয়ে চলতে’ চাই। (১ যোহন ৪:৭) কিন্তু, আমাদের মনে রাখা উচিত, যিশু বলেছিলেন, এমন এক সময় আসবে যখন “অধিকাংশ লোকের প্রেম কমে যাবে।” (মথি ২৪:১২) যিশু যা বলেছিলেন, সেটার অর্থ এই ছিল না যে, তাঁর বেশিরভাগ শিষ্যদের মধ্যে প্রেম কমে যাবে। কিন্তু, বর্তমানে জগতের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, দিন দিন লোকদের মধ্যে প্রেম কমে যাচ্ছে। তাই আমাদের সাবধান থাকা উচিত, আমরাও যেন তাদের মতো না হয়ে যাই। তাই, আসুন আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করি: কীভাবে আমরা বুঝতে পারব যে, আমরা ভাই-বোনদের কতটা ভালোবাসি?
১৩. কীভাবে আমরা জানতে পারি, আমরা ভাই-বোনদের ভালোবাসি?
১৩ আমরা ভাই-বোনদের কতটা ভালোবাসি, এটা জানার একটা উপায় হল, এই বিষয়টার উপর মনোযোগ দেওয়া যে, কোনো কোনো পরিস্থিতিতে আমরা কেমন আচরণ করি। (২ করি. ৮:৮) এইরকমই একটা পরিস্থিতির বিষয়ে প্রেরিত পিতর বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “বিশেষভাবে, একে অন্যকে গভীরভাবে ভালোবাসো, কারণ ভালোবাসা অসংখ্য পাপ ঢেকে দেয়।” (১ পিতর ৪:৮) এর মানে হল, ভাই-বোনেরা যখন কোনো ভুল করে ফেলে অথবা এমন কিছু করে ফেলে, যেটার কারণে আমরা আঘাত পাই, সেইসময় আমরা যেমন আচরণ করি, সেটা থেকে বোঝা যাবে যে, আমরা তাদের কতটা ভালোবাসি।
১৪. প্রথম পিতর ৪:৮ পদ অনুযায়ী আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি কোন ধরনের প্রেম দেখাতে হবে? বুঝিয়ে বলুন।
১৪ এখন আসুন পিতরের কথাগুলোর উপর আমরা মনোযোগ দিই। ৮ পদের শুরুর দিকে পিতর আমাদের বলেছিলেন, আমরা যেন একে অন্যকে ‘গভীরভাবে ভালোবাসি।’ এখানে পিতর যে-ধরনের ভালোবাসার কথা বলেছেন, সেটার জন্য যে-গ্রিক শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন, সেটার অর্থ হল, “টেনে বড়ো করা।” এই পদের বাকি অংশে বলা হয়েছে, আমরা যদি ভাই-বোনদের প্রতি এইরকম প্রেম দেখাই, তা হলে এর ফলে তাদের পাপ ঢেকে যাবে। এটা এমন যেন আপনি দু-হাতে প্রেমের একটা কাপড় ধরে আছেন, যেটা টেনে বড়ো করা যায়। আপনি এই কাপড়কে এত টানেন যে, এটা অন্যদের একটা দুটো নয় বরং “অসংখ্য পাপ ঢেকে দেয়।” পিতর যখন পাপ ঢাকার বিষয়ে বলছিলেন, তখন তিনি আসলে একে অন্যকে ক্ষমা করার বিষয়ে বলছিলেন। যেমন, একটা কাপড় বিছিয়ে দিলে কোনো দাগ ঢেকে যায়, একইভাবে প্রেম দেখালে অন্যদের দুর্বলতাগুলো আমরা ঢেকে দিতে পারি।
১৫. আমরা যদি ভাই-বোনদের অনেক ভালোবাসি, তা হলে আমরা কী করতে পারব? (কলসীয় ৩:১৩)
১৫ আমাদের ভাই-বোনদের এতটাই ভালোবাসতে হবে যে, আমরা তাদের ভুলগুলো ক্ষমা করব, এমনকী সেইসময়ও, যখন তা করা কঠিন বলে মনে হয়। (পড়ুন, কলসীয় ৩:১৩.) আমরা যখন ভাই-বোনদের ক্ষমা করব, তখন এটা থেকে বোঝা যাবে যে, আমরা তাদের অনেক ভালোবাসি এবং আমরা যিহোবাকেও খুশি করতে চাই। এ ছাড়া, আর কীভাবে আমরা ভাই-বোনদের ক্ষমা করতে পারি এবং তাদের সেই বিষয়গুলো উপেক্ষা করতে পারি, যেগুলোর কারণে আমরা বিরক্ত হই? আসুন তা দেখি।
১৬-১৭. কোন বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দিলে আমরা অন্যদের ছোটোখাটো ভুলগুলো উপেক্ষা করতে পারব? (ছবিও দেখুন।)
১৬ ভাই-বোনদের দুর্বলতাগুলোর উপর নয়, বরং তাদের ভালো বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দিন। ধরুন, আপনি কিছু ভাই-বোনের সঙ্গে একটা জায়গায় রয়েছেন এবং আপনারা অনেক মজা করছেন। সবাই চলে যাওয়ার আগে আপনি সবার সঙ্গে ফোটো তোলেন। আপনি একটা নয় বরং দু-তিনটে ফোটো তোলেন, যাতে একটা খারাপ এলেও বাকিগুলো থাকবে। পরে আপনি যখন ফোটোগুলো দেখেন, তখন আপনি লক্ষ করেন, একটা ফোটোতে একজন ভাইয়ের মুখ কেমন যেন এসেছে, তখন আপনি কী করেন? আপনি সেই ফোটোটা ডিলিট করে দেন। কারণ আপনার কাছে বাকি ফোটোগুলো রয়েছে, যেখানে সেই ভাই এবং অন্যান্য ভাই-বোনদের মুখ ভালোভাবে এসেছে।
১৭ আমরা যে-ছবিগুলো সেভ করে রাখি, সেগুলো এমন স্মৃতির মতো, যেগুলো আমরা দীর্ঘসময় ধরে মনে রাখি। আমরা ভাই-বোনদের সঙ্গে যে-মুহূর্তগুলো কাটাই, সেগুলোর মধুর স্মৃতি আমাদের মনে থেকে যায়। কিন্তু চিন্তা করুন, এইরকম পরিস্থিতিতে কোনো ভাই কিংবা বোন এমন কিছু করে ফেলে, যেটার কারণে আপনার খারাপ লাগে। এইরকম সময়ে আপনি কী করবেন? আপনি যেমন কোনো খারাপ ছবি ডিলিট করে দেন, একইভাবে আপনি এই খারাপ স্মৃতিও ভুলে যেতে পারেন। এটা কতই-না ভালো হবে! (হিতো. ১৯:১১; ইফি. ৪:৩২) আমরা সেই ভাই কিংবা বোনের ছোটোখাটো ভুলগুলো ভুলে যেতে পারি অথবা সেই খারাপ স্মৃতি ডিলিট করে দিতে পারি কারণ তার সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো আমাদের কাছে বেশি মূল্যবান। আর আমরা সবাই এই মধুর স্মৃতিগুলো মনে রাখতে চাই, তাই না?
বর্তমানে একে অন্যের প্রতি প্রেম দেখানো কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
১৮. এই প্রবন্ধে প্রেম দেখানোর বিষয়ে আমরা কোন মূল বিষয়গুলো জানতে পেরেছি?
১৮ কেন আমাদের ক্রমাগত একে অন্যের প্রতি প্রেম দেখাতে হবে? আমরা যেমনটা এই প্রবন্ধে দেখলাম, আমরা যদি ভাই-বোনদের প্রতি প্রেম দেখাই, তা হলে এটা থেকে বোঝা যায়, আমরা যিহোবাকে ভালোবাসি। কীভাবে আমরা ভাই-বোনদের প্রতি প্রেম দেখাতে পারি? একটা উপায় হল, একে অন্যকে সান্ত্বনা দেওয়ার মাধ্যমে। আমরা তখনই “একে অন্যকে সান্ত্বনা” দিতে পারব, যখন তাদের প্রতি আমাদের হৃদয়ে সমবেদনা থাকবে। আর কীভাবে আমরা ক্রমাগত একে অন্যের প্রতি প্রেম বাড়াতে পারি? অন্যদের ক্ষমা করা কঠিন বলে মনে হলেও তাদের ক্ষমা করার মাধ্যমে।
১৯. কেন বর্তমানে ভাই-বোনদের প্রতি প্রেম দেখানো আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
১৯ আগের চেয়ে এখন একে অন্যের প্রতি প্রেম দেখানো আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেন? লক্ষ করুন, পিতর এর একটা কারণ সম্বন্ধে কী বলেছিলেন, তিনি বলেছিলেন, “সমস্ত কিছুর শেষ কাছে এসে গিয়েছে। অতএব . . . একে অন্যকে গভীরভাবে ভালোবাসো।” (১ পিতর ৪:৭, ৮) আর এই দুষ্ট জগতের শেষ যত ঘনিয়ে আসছে, পরিস্থিতি তত খারাপ হচ্ছে আর ভবিষ্যতে আরও খারাপ হবে। যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, “আমার নামের জন্য সমস্ত জাতি তোমাদের ঘৃণা করবে।” (মথি ২৪:৯) এ ছাড়া, শয়তানও আমাদের মধ্যে একতা নষ্ট করার জন্য ক্রমাগত চেষ্টা করবে। তাই, আমাদের মধ্যে একতা থাকলেই আমরা এই সমস্ত কিছুর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারব। আর এই একতা বজায় রাখার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, যেন আমাদের মধ্যে এমন প্রেম থাকে, যে-প্রেম “সমস্ত লোককে পুরোপুরিভাবে একতাবদ্ধ করে।”—কল. ৩:১৪; ফিলি. ২:১, ২.
গান ১৩০ ক্ষমা করে যাও
a ভাই-বোনদের প্রতি প্রেম দেখানো এখন আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেন? আর কীভাবে আমরা একে অন্যের প্রতি আরও বেশি করে প্রেম দেখাতে পারি?