অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৮
নিশ্চিত থাকুন, সমস্যার সময়েও যিহোবা আপনার সঙ্গে থাকবেন!
“তুমি বলবান হও, . . . আমি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন।”—হগয় ২:৪.
গান ১১৮ “আমাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় করো”
সারাংশa
১-২. (ক) যিহুদিদের মতো বর্তমানে আমাদের কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়? (খ) যিহুদিরা যখন জেরুসালেমে ফিরেছিল, তারপর কী কী হয়েছিল? (“হগয়, সখরিয় এবং ইষ্রার দিনে কী ঘটেছিল” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)
আপনি কি প্রায়ই ভবিষ্যতের বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করেন? আপনার হয়তো সম্প্রতি চাকরি চলে গিয়েছে এবং আপনি এই বিষয়টা নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন যে, আপনি আপনার পরিবারের ভরণ-পোষণ কীভাবে জোগাবেন। হতে পারে আপনি যেখানে থাকেন, সেখানে রাজনৈতিক সমস্যা দেখা দিয়েছে অথবা প্রচার করার সময়ে আপনাকে বিরোধিতা করা হচ্ছে কিংবা আপনার উপর তাড়না নিয়ে আসা হচ্ছে। আর এইসমস্ত কারণে আপনি হয়তো আপনার পরিবারের সুরক্ষার বিষয়ে দুশ্চিন্তা করছেন। সত্যিই, এই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হওয়া অনেক কঠিন। অতীতে যিহুদিদেরও এই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। আসুন দেখি, কীভাবে যিহোবা তাদের সেই সময়ে সাহায্য করেছিলেন আর এখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি।
২ কিছু যিহুদি অনেক সময় ধরে ব্যাবিলনে থাকছিল এবং তারা সেখানে ভালোভাবেই জীবন কাটাচ্ছিল। কিন্তু, তাদের ব্যাবিলন ছেড়ে জেরুসালেমে যেতে হত, সেটা এমন এক জায়গা ছিল, যেটা সম্বন্ধে তারা বেশি কিছু জানত না। এটার জন্য তাদের অনেক বিশ্বাসের প্রয়োজন ছিল। এ ছাড়া, জেরুসালেমে পৌঁছানোর কিছুদিন পরই তাদের আর্থিক সমস্যা আর বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল এবং সেখানে রাজনৈতিক সমস্যাও দেখা দিয়েছিল। এই কারণে কিছু লোকের সেখানে মন্দির নির্মাণের কাজে মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু, খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫২০ সালে যিহোবা তাঁর দু-জন ভাববাদী সখরিয় ও হগয়কে জেরুসালেমে পাঠিয়েছিলেন, যাতে তারা তাঁর লোকদের উৎসাহিত করতে পারেন। (হগয় ১:১; সখ. ১:১) পরে আমরা যেমনটা দেখব, সেই ভাববাদীদের কথার দ্বারা সেই লোকেরা অনেক উৎসাহিত হয়েছিল। কিন্তু, প্রায় ৫০ বছর পরে যিহুদিরা আবারও নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে। তখন যিহোবা ইষ্রা নামে একজন দক্ষ প্রতিলিপিকারীকে ব্যাবিলন থেকে জেরুসালেমে পাঠিয়েছিলেন, যেন তিনি তাঁর লোকদের আবারও উৎসাহিত করতে পারেন এবং তারা তাদের জীবনে সত্য উপাসনাকে প্রথম স্থান দিতে পারে।—ইষ্রা ৭:১, ৬.
৩. এই প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে পারব? (হিতোপদেশ ২২:১৯)
৩ প্রাচীনকালে ভাববাদী সখরিয় ও হগয় যা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, সেটা থেকে ঈশ্বরের লোকেরা অনেক উপকার পেয়েছিল। বিরোধিতা আসা সত্ত্বেও তারা যিহোবার উপর নির্ভরতা বজায় রাখতে পেরেছিল। বর্তমানে, আমরাও সেই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো থেকে উপকার পেতে পারি। সমস্যা আসা সত্ত্বেও আমরা যিহোবার উপর নির্ভরতা বজায় রাখতে পারি। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২২:১৯.) আসুন লক্ষ করি, হগয় ও সখরিয় ঈশ্বরের কাছ থেকে কোন বার্তা লোকদের জানিয়েছিলেন এবং ইষ্রা আমাদের জন্য কোন উত্তম উদাহরণ রেখেছিলেন। এমনটা করলে আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে পারব: ব্যাবিলন থেকে আসা যিহুদিরা কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল? আমরা যখন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হই, তখন কেন আমাদের যিহোবার ইচ্ছা পালন করার উপর মনোযোগ দেওয়া উচিত? আর সমস্যা এলেও কীভাবে আমরা যিহোবার উপর নির্ভরতা বাড়াতে পারি?
যিহুদিদের সামনে যখন সমস্যা এসেছিল, তখন তারা কী করেছিল?
৪-৫. কোন কোন কারণে যিহুদিরা হয়তো নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিল?
৪ যে-যিহুদিরা ব্যাবিলন থেকে জেরুসালেমে এসেছিল, তাদের অনেক কাজ করতে হত। সবচেয়ে প্রথমে তারা যিহোবার জন্য বেদি নির্মাণ করেছিল এবং মন্দিরের ভিত স্থাপন করেছিল। (ইষ্রা ৩:১-৩, ১০) কিন্তু, খুব তাড়াতাড়ি তারা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিল। কেন? কারণ মন্দির নির্মাণ করার পাশাপাশি তাদের নিজেদের জন্য ঘর তৈরি করতে হত, জমিতে বীজ বুনতে হত এবং নিজেদের পরিবারের ভরণ-পোষণও জোগাতে হত। (ইষ্রা ২:৬৮, ৭০) এ ছাড়া, তাদের সেই লোকদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল, যারা মন্দির নির্মাণ কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করার জন্য ষড়যন্ত্র করছিল।—ইষ্রা ৪:১-৫.
৫ সেই যিহুদিদের আরও কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। সেই সময়ে রাজনৈতিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল এবং যিহুদিদের নিজেদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। আসলে সেই সময়ে পারস্যের শাসন চলছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৫৩০ সালে পারস্যের রাজা কোরস মারা যান। এরপর, কেমবিসিস পারস্যের রাজা হন এবং তিনি তার সৈন্যদের নিয়ে মিশর দখল করার জন্য বেরিয়ে পড়েন। মিশরে যাওয়ার সময়ে তারা হয়তো ইজরায়েলের এলাকার মধ্য দিয়ে গিয়েছিল আর রাস্তায় সৈনিকেরা হয়তো ইজরায়েলীয়দের বলেছিল, তারা যেন তাদের জন্য খাবারদাবার এবং থাকার ব্যবস্থা করে। এই কারণেও তাদের সমস্যা আরও বেড়ে গিয়েছিল। এরপর, যখন কেমবিসিস মারা যান, তখন দারিয়াবস ১ম পারস্যের রাজা হন। তিনি যখন শাসন করতে শুরু করেন, তখনও বিভিন্ন সমস্যা এসেছিল। লোকেরা তার বিরোধিতা করছিল এবং পুরো পারস্য সাম্রাজ্যের পরিস্থিতি অনেক খারাপ ছিল। এই সমস্ত কারণে কিছু যিহুদি এটা চিন্তা করছিল যে, কীভাবে তারা তাদের পরিবারের যত্ন নেবে। আর তাই কিছু যিহুদি মনে করেছিল, এখন মন্দির বানানোর সঠিক সময় নয়।—হগয় ১:২.
৬. (ক) যিহুদিদের আর কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল? (সখরিয় ৪:৬, ৭) (খ) সখরিয় তাদের কোন আশ্বাস দিয়েছিলেন?
৬ সখরিয় ৪:৬, ৭ পদ পড়ুন। যিহুদিদের আর্থিক এবং রাজনৈতিক সমস্যার পাশাপাশি লোকদের বিরোধিতারও মুখোমুখি হতে হচ্ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৫২২ সালে তাদের বিরোধীরা যে-ষড়যন্ত্র করেছিল, তারা তাতে সফল হয়েছিল এবং মন্দির নির্মাণের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু, সখরিয় যিহুদিদের এই আশ্বাস দিয়েছিলেন, যিহোবা তাঁর পবিত্র শক্তির মাধ্যমে সমস্ত সমস্যা দূর করে দেবেন। আর ঠিক এমনটাই হয়েছিল! মন্দির নির্মাণ কাজের উপর যে-নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা খ্রিস্টপূর্ব ৫২০ সালে রাজা দারিয়াবস তুলে নেন। শুধু -তা-ই নয়, তিনি মন্দির নির্মাণ করার জন্য যিহুদিদের টাকাপয়সা দেন এবং সেখানকার রাজ্যপালদের হুকুম দেন, যেন তারা তাদের সমর্থন করে।—ইষ্রা ৬:১, ৬-১০.
৭. যিহুদিরা যখন যিহোবার ইচ্ছা পালন করার উপর সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছিল, তখন যিহোবা কীভাবে তাদের আশীর্বাদ করেছিলেন?
৭ ভাববাদী হগয় ও সখরিয়ের মাধ্যমে যিহোবা তাঁর লোকদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তারা যদি মন্দির নির্মাণের কাজের উপর সম্পূর্ণ মনোযোগ দেয়, তা হলে তিনি তাদের অবশ্যই সাহায্য করবেন। (হগয় ১:৮, ১৩, ১৪; সখ. ১:৩, ১৬) এই কথা শুনে যিহুদিরা অনেক উৎসাহিত হয়েছিল। তাই, তারা খ্রিস্টপূর্ব ৫২০ সালে আবারও মন্দির নির্মাণ করতে শুরু করে দিয়েছিল এবং ৫ বছরের মধ্যেই তা শেষ করেছিল। যিহুদিরা অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তারপরও, তারা যিহোবার ইচ্ছা পালন করার বিষয়টার উপর সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছিল। তাই, যিহোবা তাদের প্রচুর আশীর্বাদ করেছিলেন। তারা যে-শুধু তাদের পরিবারের ভরণ-পোষণই জুগিয়েছিল, এমন নয়। এর পাশাপাশি, তারা তাদের পরিবারকে যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও সাহায্য করেছিল। এর ফলে কী হয়েছিল? এর ফলে, তারা আনন্দের সঙ্গে যিহোবার সেবা করে গিয়েছিল।—ইষ্রা ৬:১৪-১৬, ২২.
ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার উপর সবসময় মনোযোগ দিন
৮. কীভাবে হগয় ২:৪ পদে লেখা কথাগুলো আমাদের ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার উপর সবসময় মনোযোগ দিতে সাহায্য করতে পারে? (পাদটীকাও দেখুন।)
৮ যেহেতু মহাক্লেশ খুবই কাছে, তাই আমাদের মনে রাখা উচিত, লোকদের সুসমাচার জানানো বর্তমানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। (মার্ক ১৩:১০) কিন্তু, আমাদের হয়তো আর্থিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয় অথবা প্রচার করার সময়ে আমাদের উপর বিরোধিতা আসে। এইরকম ক্ষেত্রে প্রচার কাজের উপর সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া আমাদের জন্য হয়তো কঠিন হতে পারে। তাহলে, কীভাবে আমরা যিহোবার দেওয়া এই কাজকে আমাদের জীবনে প্রথম স্থানে রাখতে পারি? আমরা এই বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত থাকতে পারি যে, “বাহিনীগণের সদাপ্রভু”b আমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছেন। আমরা যদি নিজেদের ইচ্ছা পূরণ করার চেয়ে বরং যিহোবার কাজকে বেশি গুরুত্ব দিই, তা হলে তিনি আমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকবেন। তাই, আমাদের ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই।—পড়ুন, হগয় ২:৪.
৯-১০. এক দম্পতি মথি ৬:৩৩ পদে লেখা যিশুর কথাগুলো কীভাবে নিজেদের জীবনে সত্যি হতে দেখেছিলেন?
৯ এখন ভাই ওলেগ এবং তার স্ত্রী ইরিনারc উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন, যারা অগ্রগামী হিসেবে সেবা করছেন। তারা যখন অন্য জায়গার একটা মণ্ডলীতে সেবা করতে যান, ঠিক সেই সময়ে তাদের দেশের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, তাদের চাকরি চলে যায়। প্রায় এক বছর ধরে তাদের কাছে কোনো ভালো কাজ ছিল না। তাদের কখনো কাজ থাকত, আবার কখনো থাকত না। কিন্তু, তারপরও তারা সবসময় যিহোবার প্রেমময় যত্ন অনুভব করেছিলেন এবং অনেক বার ভাই-বোনেরাও তাদের সাহায্য করেছিল। প্রথম প্রথম ভাই ওলেগ একটু নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু, পরে তিনি এই সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পেরেছিলেন। কীভাবে? ভাই বলেন, “সেই সময় আমরা প্রচার কাজ করার মাধ্যমে অনেক সাহায্য পাই। এর ফলে, আমরা সেই বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দিতে পেরেছিলাম, যেগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।” সেইসময় ভাই ওলেগ এবং তার স্ত্রী কাজ খোঁজার পাশাপাশি প্রচার কাজও করে চলেন।
১০ একদিন তারা যখন প্রচার করে বাড়ি ফিরেছিলেন, তখন তারা জানতে পেরেছিলেন যে, তাদের এক বন্ধু প্রায় ১৬০ কিলোমিটার (১০০ মাইল) পথ যাত্রা করে তাদের জন্য দুটো থলি ভরে খাবারের জিনিসপত্র নিয়ে এসেছেন। ভাই ওলেগ বলেন, “সেইদিন আমি আবারও বুঝতে পারি যে, যিহোবা এবং ভাই-বোনেরা আমাদের জন্য কত চিন্তা করেন। আমরা নিশ্চিত হয়ে যাই, কখনো কখনো আমরা হয়তো আশা হারিয়ে ফেলি, কিন্তু যিহোবা কখনো তাঁর দাসদের ভুলে যান না।”—মথি ৬:৩৩.
১১. বর্তমানে আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি?
১১ যিহোবা চান যেন আমরা শিষ্য তৈরির কাজে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিই, কারণ এর সঙ্গে লোকদের জীবন জড়িত। ঠিক এইরকমই কিছু কথা যিহোবা হগয়ের দিনে তাঁর লোকদের বলেছিলেন, যেমনটা আমরা ৭ অনুচ্ছেদে দেখেছি। তিনি হগয়ের মাধ্যমে যিহুদিদের বলেছিলেন, তারা যেন আবারও মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু করে দেয়, এটা এমন যেন সেই মন্দিরের ভিত আবারও স্থাপন করে। যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তারা যদি সেই কাজ করে, তা হলে তিনি তাদের ‘আশীর্বাদ করবেন।’ (হগয় ২:১৮, ১৯) আজ আমরাও যদি যিহোবার দেওয়া কাজের উপর সম্পূর্ণ মনোযোগ দিই, তা হলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি আমাদেরও আশীর্বাদ করবেন।
কীভাবে যিহোবার উপর নির্ভরতা আরও বাড়াতে পারি?
১২. ইষ্রা এবং তার সঙ্গীদের কেন যিহোবার উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করতে হত?
১২ খ্রিস্টপূর্ব ৪৬৮ সালে ব্যাবিলনে থাকা যিহুদিদের দ্বিতীয় দল ইষ্রার সঙ্গে জেরুসালেমের উদ্দেশে রওনা দেয়। এই যাত্রা করার সময়ে তাদের সম্পূর্ণভাবে যিহোবার উপর নির্ভর করতে হত। কেন? কারণ তাদের এই যাত্রা খুবই বিপদজনক ছিল। তারা নিজেদের সঙ্গে অনেক সোনা ও রুপো নিয়ে যাচ্ছিল, যেগুলো মন্দিরের কাজের জন্য দান হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। আর ডাকাতেরা খুব সহজেই সেগুলো ছিনিয়ে নিতে পারত। (ইষ্রা ৭:১২-১৬; ৮:৩১) এ ছাড়া, যিহুদিরা জানতে পেরেছিল, জেরুসালেমে থাকাও বিপদজনক। কারণ সেখানে বেশি লোক থাকে না আর সেই নগরের প্রাচীর এবং প্রবেশদ্বার এখনও ভাঙা অবস্থাতেই রয়েছে। কীভাবে আমরা ইষ্রার মতো যিহোবার উপর আরও বেশি করে নির্ভর করতে পারি?
১৩. কীভাবে ইষ্রা যিহোবার উপর নির্ভরতা বৃদ্ধি করেছিলেন? (পাদটীকা দেখুন।)
১৩ ইষ্রা দেখেছিলেন, কীভাবে যিহোবা কঠিন সময়ে তাঁর লোকদের যত্ন নিয়েছিলেন। অনেক বছর আগে খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৪ সালে রাজা অহশ্বেরশ একটা আইন জারি করেছিলেন। সেটা ছিল, পারস্য সাম্রাজ্যের সমস্ত যিহুদিকে যেন হত্যা করা হয়। (ইষ্টের ৩:৭, ১৩-১৫) সেইসময় ইষ্রা হয়তো ব্যাবিলনেই ছিলেন। তাই তার এবং তার সঙ্গে যে-লোকেরা ছিল, তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে ছিল। প্রত্যেক “প্রদেশে” যে-যিহুদিরা ছিল, তারা সবাই এই আইন সম্বন্ধে শুনে একেবারে ভেঙে পড়েছিল। তারা কেঁদে কেঁদে শোক পালন করেছিল এবং উপবাস করেছিল। তারা যিহোবার কাছে বিনতি করেছিল, যেন তিনি তাদের সাহায্য করেন। (ইষ্টের ৪:৩) আর কিছুসময় পরই, পরিস্থিতি ঘুরে গিয়েছিল। যে-লোকেরা যিহুদিদের জীবন শেষ করার ষড়যন্ত্র করেছিল, এখন তাদেরই জীবন ঝুঁকির মুখে ছিল। চিন্তা করুন, এটা জেনে ইষ্রা এবং বাকি যিহুদিদের কেমন লেগেছিল। (ইষ্টের ৯:১, ২) সেইসময় যা কিছু ঘটেছিল, সেটা দেখে যিহোবার উপর ইষ্রার নির্ভরতা হয়তো আরও বেড়ে গিয়েছিল। তিনি হয়তো নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, ভবিষ্যতে যেকোনো সমস্যাই আসুক না কেন, যিহোবা নিশ্চয়ই তাঁর লোকদের সুরক্ষা জোগাবেন।d
১৪. কঠিন পরিস্থিতিতে একজন বোন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কী শিখেছিলেন?
১৪ আমরা যখন দেখি, সমস্যার সময়ে যিহোবা কীভাবে আমাদের সাহায্য করছেন, তখন তাঁর উপর আমাদের নির্ভরতা আরও বেড়ে যায়। পূর্ব ইউরোপে থাকা বোন অ্যানাস্থিসিয়ার প্রতি এমনই কিছু ঘটেছিল। বোনের অফিসের লোকেরা তাকে চাপ দিত, যেন তিনি রাজনৈতিক কোনো বিষয়ে তাদের পক্ষ নেন। এর ফলে, বোনকে তার চাকরি ছাড়তে হয়েছিল। বোন বলেন, “জীবনে প্রথম বার আমার হাতে একটাও টাকা ছিল না।” তিনি আরও বলেন, “আমি সমস্ত কিছু যিহোবার হাতে ছেড়ে দিয়েছিলাম আর তিনি খুব ভালোভাবে আমার যত্ন নিয়েছিলেন। ভবিষ্যতে আমার চাকরি যদি আবারও চলে যায়, তা হলে আমি ভয় পাব না। কারণ আমি জানি, আমার পিতা যিহোবা বর্তমানে যেভাবে আমার যত্ন নিয়েছেন, ভবিষ্যতেও তিনি আমার যত্ন নেবেন।”
১৫. ইষ্রা কোন কারণে যিহোবার উপর তার নির্ভরতা বজায় রাখতে পেরেছিলেন? (ইষ্রা ৭:২৭, ২৮)
১৫ ইষ্রা নিজেও দেখেছিলেন যে, যিহোবা তার সঙ্গে আছেন। ইষ্রা যখন এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করেছিলেন যে, যিহোবা কীভাবে অনেকবার তাকে সাহায্য করেছেন, তখন যিহোবার উপর তার নির্ভরতা আরও বেড়ে গিয়েছিল। তাই তিনি বলেছিলেন, “আমার ঈশ্বর যিহোবা আমার সঙ্গে রয়েছেন।” (পড়ুন, ইষ্রা ৭:২৭, ২৮.) আর ইষ্রা তার বইতে ৬ বার এইরকমই কিছু বলেছিলেন।—ইষ্রা ৭:৬, ৯; ৮:১৮, ২২, ৩১.
১৬. কোন পরিস্থিতিতে আমরা দেখতে পাই যে, যিহোবা আমাদের সঙ্গে আছেন? (ছবিও দেখুন।)
১৬ যিহোবা আপনাকে কঠিন পরিস্থিতিতে সাহায্য করতে পারেন। হতে পারে, সম্মেলনে যাওয়ার জন্য আপনার ছুটি চাই অথবা আপনি আপনার কাজের সময়কে রদবদল করতে চান, যাতে আপনি প্রতিটা সভায় যোগ দিতে পারেন। এইরকম পরিস্থিতিতে আপনি যদি সাহস করে আপনার বসের সঙ্গে কথা বলেন, তা হলে আপনি দেখতে পাবেন, যিহোবা কীভাবে আপনাকে সাহায্য করছেন। আপনি হয়তো যা চিন্তা করেছিলেন, যিহোবা সেটার চেয়েও ভালো উপায়ে সমস্যাটা সমাধান করেছেন। এর ফলে, যিহোবার উপর আপনার নির্ভরতা আরও বেড়ে যাবে।
১৭. কঠিন পরিস্থিতিতে ইষ্রা যা করেছিলেন, তা থেকে কীভাবে বোঝা যায়, তিনি নম্র ছিলেন? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবি দেখুন।)
১৭ ইষ্রা নম্র ছিলেন, তাই তিনি যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছিলেন। ইষ্রা যখন এই বিষয়ে চিন্তা করতেন যে, কীভাবে তিনি তার দায়িত্ব পালন করবেন, তখন তিনি যিহোবাকে ডাকতেন। (ইষ্রা ৮:২১-২৩; ৯:৩-৫) যিহুদিরা যখন দেখেছিল, যিহোবার উপর ইষ্রার সম্পূর্ণ নির্ভরতা রয়েছে, তখন তারাও ইষ্রাকে সমর্থন করেছিল এবং তারই মতো যিহোবার উপর নির্ভর করেছিল। (ইষ্রা ১০:১-৪) এখান থেকে আমরা কী শিখি? বর্তমানে আমরাও হয়তো চিন্তা করি, কীভাবে আমাদের পরিবারের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগাব অথবা তাদের সুরক্ষিত রাখব। এইরকম পরিস্থিতিতে আমাদের যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা উচিত এবং তাঁর উপর নির্ভর করা উচিত।
১৮. কীভাবে আমরা যিহোবার উপর আমাদের নির্ভরতা বাড়াতে পারি?
১৮ আমরা যখন নম্র হই, যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি এবং ভাই-বোনদের কাছ থেকে সাহায্য নিই, তখন যিহোবার উপর আমাদের নির্ভরতা বেড়ে যায়। বোন এরিকার কথা চিন্তা করুন, যিনি তিন সন্তানের মা। একবার তার সামনে পাহাড়ের মতো সমস্যা এসেছিল। প্রথমে, তার গর্ভে থাকা সন্তান মারা যায় এবং এর কিছুসময় পরই তার স্বামীও মারা যান। এইরকম পরিস্থিতিতেও তিনি যিহোবার উপর নির্ভর করে চলেন। সেই সময়ের কথা চিন্তা করে বোন বলেন, “আপনি আগে থেকে জানতে পারবেন না, যিহোবা কীভাবে আপনাকে সাহায্য করবেন। কিন্তু, তিনি অবশ্যই সাহায্য করবেন। অনেকসময় তিনি এমনভাবে সাহায্য করেন, যেটা দেখে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। আমি অনেক প্রার্থনার উত্তর ভাই-বোনদের মাধ্যমে পেয়েছিলাম। কখনো কখনো তারা তাদের কথার মাধ্যমে আর কখনো কখনো তাদের কাজের মাধ্যমে আমাকে উৎসাহিত করেছিল। আমি দেখেছি, আমি যদি আমার বন্ধুদের আমার সমস্যার কথা মন খুলে বলি, তা হলে তারা আরও ভালোভাবে আমাকে সাহায্য করতে পারবে।”
শেষ পর্যন্ত যিহোবার উপর নির্ভর করে চলুন
১৯-২০. যে-যিহুদিরা জেরুসালেমে ফিরে আসতে পারেনি, তাদের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৯ যে-যিহুদিরা জেরুসালেমে ফিরে আসতে পারেনি, আমরা তাদের কাছ থেকেও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখতে পারি। তাদের মধ্যে অনেকে বয়স্ক হয়ে গিয়েছিল, অনেকে অসুস্থ ছিল এবং অনেকের উপর পরিবারের দায়িত্ব ছিল। তাই তারা যতটা করতে চেয়েছিল, ততটা করতে পারেনি। তা সত্ত্বেও, যারা জেরুসালেমে এসেছিল, তারা তাদের হাত দিয়ে মন্দিরের জন্য দান পাঠিয়েছিল। (ইষ্রা ১:৫, ৬) আর এমনটা মনে করা হয়, যিহুদিদের প্রথম দল ব্যাবিলন থেকে জেরুসালেমে ফেরার প্রায় ১৯ বছর পরও ব্যাবিলনে থাকা যিহুদিরা যিহোবার মন্দিরের জন্য দান পাঠাচ্ছিল।—সখ. ৬:১০.
২০ আপনি কি আপনার পরিস্থিতির কারণে যিহোবার জন্য যতটা করতে চান, ততটা করতে পারছেন না? এর উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তারপরও আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, আপনি যিহোবার জন্য মনপ্রাণ দিয়ে যতটুকু করছেন, তা যিহোবার কাছে খুবই মূল্যবান। কেন আমরা বলতে পারি? লক্ষ করুন, যিহোবা ভাববাদী সখরিয়কে কী বলেছিলেন। তিনি তাকে বলেছিলেন, ব্যাবিলনে থাকা যিহুদিরা দান হিসেবে যে-সোনা ও রুপো দিয়েছিল, সেগুলো দিয়ে যেন একটা সুন্দর মুকুট বানানো হয়। (সখ. ৬:১১) এই “মুকুট” মনে করিয়ে দিত যে, ব্যাবিলনে থাকা যিহুদিরা কীভাবে হৃদয় থেকে দান দিয়েছিল। (সখ. ৬:১৪) একইভাবে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, কঠিন সময়ে আমরা হৃদয় থেকে যিহোবার জন্য যা-কিছু করি, সেগুলো তিনি ভুলে যাবেন না।—ইব্রীয় ৬:১০.
২১. আমাদের কী করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কঠিন পরিস্থিতির সময়েও আমরা যিহোবার উপর নির্ভর করতে পারি?
২১ এই শেষকালে আমাদের কোনো-না-কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতেই হবে এবং ভবিষ্যতে পরিস্থিতি হয়তো আরও খারাপ হয়ে যাবে। (২ তীম. ৩:১, ১৩) কিন্তু, আমাদের অতিরিক্ত চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। মনে করে দেখুন, হগয়ের দিনে যিহোবা তাঁর লোকদের কী বলেছিলেন: “আমি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি, . . . তোমরা ভয় করিও না।” (হগয় ২:৪, ৫) আমরা যদি যিহোবার ইচ্ছা পালন করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে চলি, তা হলে আমরাও নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি আমাদের সাহায্য করবেন। এ ছাড়া, হগয় ও সখরিয়ের ভবিষ্যদ্বাণী থেকে এবং ইষ্রার উদাহরণ থেকে আমরা যা-কিছু শিখেছি, তা কাজে লাগানোর মাধ্যমে প্রচুর উপকার লাভ করব। তাই, ভবিষ্যতে যতই সমস্যা আসুক না কেন, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা আমাদের যত্ন নেবেন।
গান ৩ দৃঢ় দুর্গ তুমি ও বিশ্বাসভূমি
a আমরা যখন আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হই অথবা আমাদের এলাকায় রাজনৈতিক সমস্যা দেখা দেয় কিংবা প্রচারে আমাদের বিরোধিতা করা হয়, সেই সময়ে যিহোবার উপর নির্ভর করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রবন্ধে আমরা শিখব, কীভাবে আমরা তাঁর উপর আমাদের নির্ভরতা আরও বাড়াতে পারি।
b “বাহিনীগণের সদাপ্রভু,” এই কথাটা হগয় বইতে ১৪ বার এসেছে। যিহুদিরা যখন এটা শুনেছিল, তখন তাদের হয়তো মনে পড়ে গিয়েছিল যে, যিহোবার অসাধারণ শক্তি রয়েছে এবং তাঁর কাছে স্বর্গদূতদের নিয়ে গঠিত এক বিশাল সৈন্যদল রয়েছে। এই কথাটা বর্তমানেও আমাদের সেই বিষয়টা মনে করিয়ে দেয়।—গীত. ১০৩:২০, ২১.
c কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
d ইষ্রা ঈশ্বরের বাক্যের একজন দক্ষ প্রতিলিপিকারী ছিলেন। তাই, জেরুসালেমে যাওয়ার আগেও তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, যিহোবা যে-সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, সেগুলো অবশ্যই পরিপূর্ণ হবে।—২ বংশা. ৩৬:২২, ২৩; ইষ্রা ৭:৬, ৯, ১০; যির. ২৯:১৪.
e ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন ভাই সম্মেলনে যাওয়ার জন্য কাজের যায়গায় তার বসের কাছে ছুটি চান। কিন্তু, তিনি না বলেন। এরপর, ভাই যিহোবার কাছে প্রার্থনা করে সাহায্য চান এবং বসের সঙ্গে কথা বলার জন্য প্রস্তুতি নেন। তিনি বসকে সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্র দেখান এবং তাকে বলেন যে, বাইবেলে লেখা বিষয়গুলো মেনে চললে আমরা ভালো ব্যক্তি হতে পারি। বসের এই কথাটা ভালো লাগে এবং তিনি ভাইকে ছুটির অনুমতি দেন।