‘মৃতেরা উত্থাপিত হইবে’
“কেননা তূরী বাজিবে, তাহাতে মৃতেরা অক্ষয় হইয়া উত্থাপিত হইবে, এবং আমরা রূপান্তরীকৃত হইব।”—১ করিন্থীয় ১৫:৫২.
১, ২. (ক) ভাববাদী হোশেয়ের মাধ্যমে কোন্ সান্ত্বনাদায়ক প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল? (খ) কিভাবে আমরা জানি যে ঈশ্বর মৃতদের জীবনে ফিরিয়ে আনতে ইচ্ছুক?
আপনি কি কখনও আপনার কোন ঘনিষ্ঠ জনকে মৃত্যুতে হারিয়েছেন? তাহলে মৃত্যু যে ব্যথা নিয়ে আসে তার সঙ্গে আপনি পরিচিত। তাসত্ত্বেও, খ্রীষ্টানেরা ভাববাদী হোশেয়ের মাধ্যমে ঈশ্বর দত্ত প্রতিজ্ঞাটি থেকে সান্ত্বনা লাভ করেন: “পাতালের হস্ত হইতে আমি তাহাদিগকে উদ্ধার করিব, মৃত্যু হইতে আমি তাহাদিগকে মুক্ত করিব। হে মৃত্যু, তোমার মহামারী সকল কোথায়? হে পাতাল, তোমার সংহার কোথায়?”—হোশেয় ১৩:১৪.
২ মৃতদের জীবনে ফিরে আসাকে সন্দেহবাদীদের কাছে হাস্যকর বলে মনে হয়। কিন্তু সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের এইধরনের একটি অলৌকিক কাজ করার ক্ষমতা অবশ্যই আছে! কিন্তু আসল বিষয়টি হল, যিহোবা মৃতদের জীবনে ফিরিয়ে আনতে ইচ্ছুক কি না। ধার্মিক ব্যক্তি ইয়োব জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “মনুষ্য মরিয়া কি পুনর্জীবিত হইবে?” এরপর, তিনি এই আশ্বাসজনক উত্তরটি দিয়েছিলেন: “তুমি আহ্বান করিবে, ও আমি উত্তর দিব। তুমি আপন হস্তকৃতের প্রতি মমতা করিবে।” (ইয়োব ১৪:১৪, ১৫) এখানে “মমতা” শব্দটি বলতে আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা বা ইচ্ছাকে বোঝায়। (গীতসংহিতা ৮৪:২ পদের সাথে তুলনা করুন।) হ্যাঁ, যিহোবা ঐকান্তিকভাবে পুনরুত্থানের জন্য অপেক্ষা করেন—তিনি মৃত বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের আবারও দেখতে চান যারা তাঁর স্মৃতিতে জীবিত।—মথি ২২:৩১, ৩২.
যীশু পুনরুত্থানের উপর আলোকপাত করেন
৩, ৪. (ক) পুনরুত্থানের আশার উপর যীশু কোন্ আলোকপাত করেছিলেন? (খ) কেন যীশু একজন মানুষ নন কিন্তু স্বর্গীয় ব্যক্তি হিসাবে উত্থিত হয়েছিলেন?
৩ ইয়োবের মত প্রাচীনকালের বিশ্বাসী লোকেদের পুনরুত্থান সম্বন্ধে কেবল আংশিক বোধগম্যতা ছিল। যীশু খ্রীষ্টই এই চমৎকার আশাটির উপর সম্পূর্ণ আলোকপাত করেছিলেন। তিনি স্বয়ং যে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন তা তিনি দেখিয়েছিলেন যখন বলেছিলেন: “যে কেহ পুত্ত্রে বিশ্বাস করে সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে।” (যোহন ৩:৩৬) কোথায় সেই জীবন উপভোগ করা যাবে? যারা বিশ্বাস অনুশীলন করেন তাদের অধিকাংশের জন্যই এটি পৃথিবীতে হবে। (গীতসংহিতা ৩৭:১১) কিন্তু, যীশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “হে ক্ষুদ্র মেষপাল, ভয় করিও না, কেননা তোমাদিগকে সেই রাজ্য দিতে তোমাদের পিতার হিতসঙ্কল্প হইয়াছে।” (লূক ১২:৩২) ঈশ্বরের রাজ্য হল স্বর্গীয়। অতএব, এই প্রতিজ্ঞার অর্থ হল এক “ক্ষুদ্র মেষপাল” প্রতাপান্বিত ব্যক্তি হিসাবে স্বর্গে যীশুর সঙ্গে থাকবেন। (যোহন ১৪:২, ৩; ১ পিতর ১:৩, ৪) কী এক চমৎকার প্রত্যাশা! যীশু প্রেরিত যোহনের কাছে আরও প্রকাশ করেছিলেন যে এই “ক্ষুদ্র মেষপাল” এর সংখ্যা মাত্র ১,৪৪,০০০ জন।—প্রকাশিত বাক্য ১৪:১.
৪ কিন্তু, কিভাবে ১,৪৪,০০০ জন স্বর্গীয় প্রতাপে প্রবেশ করবেন? যীশু “সুসমাচার দ্বারা জীবন ও অক্ষয়তাকে দীপ্তিতে আনিয়াছেন।” তাঁর রক্তের দ্বারা তিনি স্বর্গের জন্য এক ‘নূতন ও জীবন্ত পথ’ উন্মুক্ত করেছিলেন। (২ তীমথিয় ১:১০; ইব্রীয় ১০:১৯, ২০) প্রথমে, বাইবেলের ভাববাণী অনুসারে তিনি মারা গিয়েছিলেন। (যিশাইয় ৫৩:১২) এরপর, প্রেরিত পিতর যেমন পরবর্তী সময়ে ঘোষণা করেছিলেন, “এই যীশুকেই ঈশ্বর উঠাইয়াছেন।” (প্রেরিত ২:৩২) কিন্তু যীশু মানুষ হিসাবে উত্থিত হননি। তিনি বলেছিলেন: “আমি যে খাদ্য দিব, সে আমার মাংস, জগতের জীবনের জন্য।” (যোহন ৬:৫১) তাঁর মাংস পুনরায় গ্রহণ করা হলে সেই বলিদান মূল্যহীন হত। তাই যীশু “মাংসে হত, কিন্তু আত্মায় জীবিত হইলেন।” (১ পিতর ৩:১৮) যীশু এইভাবে “ক্ষুদ্র মেষপাল” এর জন্য “অনন্তকালীয় মুক্তি উপার্জ্জন করিয়াছেন।” (ইব্রীয় ৯:১২) তিনি পাপী মানবজাতি এবং ১,৪৪,০০০ জন যারা এটি থেকে প্রথমে উপকৃত হয়েছিলেন তাদের জন্য মুক্তির মূল্য হিসাবে তাঁর সিদ্ধ মানব জীবনের মূল্য ঈশ্বরের কাছে উপস্থিত করেছিলেন।
৫. যীশুর প্রথম শতাব্দীর অনুগামীদের জন্য কোন্ আশা প্রসারিত করা হয়েছিল?
৫ স্বর্গীয় জীবনে কেবল যীশু একাই পুনরুত্থিত হননি। রোমের সহখ্রীষ্টানদের পৌল বলেছিলেন যে তারা পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছেন ঈশ্বরের পুত্র এবং খ্রীষ্টের সহদায়াদ হওয়ার জন্য আর তারা তা হতে পারেন যদি তারা তাদের অভিষিক্তকরণ শেষ পর্যন্ত স্থির থাকার দ্বারা নিশ্চিত করেন। (রোমীয় ৮:১৬, ১৭) পৌল এও বর্ণনা করেছিলেন: “যখন আমরা তাঁহার মৃত্যুর সাদৃশ্যে তাঁহার সহিত একীভূত হইয়াছি, তখন অবশ্য পুনরুত্থানের সাদৃশ্যেও হইব।”—রোমীয় ৬:৫.
পুনরুত্থান আশার সমর্থনে
৬. করিন্থে পুনরুত্থানের বিশ্বাস কেন বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিল এবং প্রেরিত পৌল কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?
৬ পুনরুত্থান খ্রীষ্টতত্ত্বের “আদিম কথা”-র অংশ। (ইব্রীয় ৬:১, ২) তাসত্ত্বেও, করিন্থে মতবাদটি বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিল। মণ্ডলীতে কিছুজন, স্পষ্টতই গ্রীক দর্শনের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন ও বলেছিলেন: “মৃতগণের পুনরুত্থান নাই।” (১ করিন্থীয় ১৫:১২) প্রেরিত পৌলের কাছে যখন এই বিষয়ে অভিযোগ গিয়েছিল, তখন তিনি পুনরুত্থানের আশা, বিশেষ করে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের আশাকে সমর্থন করেছিলেন। আসুন আমরা ১ করিন্থীয় ১৫ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ পৌলের বাক্যগুলি পরীক্ষা করি। এর সম্পূর্ণ অধ্যায়টি পড়াকে আপনি উপকারী বলে দেখতে পাবেন, যেমন পূর্বের প্রবন্ধটিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
৭. (ক) পৌল কোন্ মুখ্য বিষয়টির উপর জোর দিয়েছিলেন? (খ) কারা পুনরুত্থিত যীশুকে দেখেছিলেন?
৭ প্রথম করিন্থীয় ১৫ অধ্যায়ের প্রথম দুটি পদে, পৌল তার আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন: “হে ভ্রাতৃগণ, তোমাদিগকে সেই সুসমাচার জানাইতেছি, যে সুসমাচার তোমাদের নিকট প্রচার করিয়াছি, যাহা তোমরা গ্রহণও করিয়াছ, যাহাতে তোমরা দাঁড়াইয়া আছ; আর তাহারই দ্বারা, . . . পরিত্রাণ পাইতেছ; নচেৎ তোমরা বৃথা বিশ্বাসী হইয়াছ।” করিন্থীয়রা যদি সুসমাচারে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে ব্যর্থ হন, তাহলে তারা উদ্দেশ্যহীনভাবে সত্য গ্রহণ করেছিলেন। পৌল বলে চলেছিলেন: “প্রথম স্থলে আমি তোমাদের কাছে এই শিক্ষা সমর্পণ করিয়াছি, এবং ইহা আপনিও পাইয়াছি যে, শাস্ত্রানুসারে খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মরিলেন, ও কবর প্রাপ্ত হইলেন, আর শাস্ত্রানুসারে তিনি তৃতীয় দিবসে উত্থাপিত হইয়াছেন; আর তিনি কৈফাকে, পরে সেই বারো জনকে দেখা দিলেন; তাহার পরে একেবারে পাঁচ শতের অধিক ভ্রাতাকে দেখা দিলেন, তাহাদের অধিকাংশ লোক অদ্যাপি বর্ত্তমান রহিয়াছে, কিন্তু কেহ কেহ নিদ্রাগত হইয়াছে। তাহার পরে তিনি যাকোবকে, পরে সকল প্রেরিতকে দেখা দিলেন। সকলের শেষে অকালজাতের ন্যায় যে আমি, আমাকেও দেখা দিলেন।”—১ করিন্থীয় ১৫:৩-৮.
৮, ৯. (ক) পুনরুত্থানে বিশ্বাস কতটা গুরুত্বপূর্ণ? (খ) সম্ভবত কোন্ উপলক্ষে যীশু “পাঁচ শতের অধিক ভ্রাতাকে” দেখা দিয়েছিলেন?
৮ যারা সুসমাচার গ্রহণ করেছিলেন তাদের ক্ষেত্রে, যীশুর পুনরুত্থানে বিশ্বাস স্থাপন করা কোন মনোনয়নের বিষয় ছিল না। সেখানে অনেক প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন এই বিষয় নিশ্চিত করতে যে “খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মরিলেন” ও তিনি উত্থিত হয়েছিলেন। এদের মধ্যে একজন ছিলেন কৈফা বা পিতর, যে নামে তিনি বেশি পরিচিত। যীশুর বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা এবং গ্রেপ্তারের রাতে পিতর যীশুকে অস্বীকার করার পর, তিনি অবশ্যই তাঁর নিকটে যীশুর আবির্ভাবের দ্বারা প্রচুর সান্ত্বনা লাভ করেছিলেন। প্রেরিতদের “বারো জন”-ও দলগতভাবে পুনরুত্থিত যীশুর দেখা পেয়েছিলেন—যে অভিজ্ঞতাটি নিঃসন্দেহে তাদের ভয় কাটিয়ে উঠতে এবং যীশুর পুনরুত্থানের সাহসী সাক্ষী হতে সাহায্য করেছিল।—যোহন ২০:১৯-২৩; প্রেরিত ২:৩২.
৯ খ্রীষ্ট এক বৃহৎ দল, “পাঁচ শতের অধিক ভ্রাতাকে”-ও দেখা দিয়েছিলেন। যেহেতু একমাত্র গালীলে তাঁর এইধরনের বৃহৎ সংখ্যক অনুগামীরা ছিলেন, তাই এটি হয়ত মথি ২৮:১৬-২০ পদে বর্ণিত সেই সময়টি ছিল যখন যীশু শিষ্যকরণের আদেশটি দিয়েছিলেন। এই ব্যক্তিরা কী এক শক্তিশালী প্রামাণিক সাক্ষ্যই না দিতে পেরেছিলেন! কিছুজন সা.কা. ৫৫ সাল পর্যন্ত জীবিত ছিলেন যখন পৌল করিন্থীয়দের প্রতি এই প্রথম পত্রটি লিখেছিলেন। কিন্তু লক্ষ্য করুন, যারা মারা গিয়েছিলেন তাদের বিষয়ে বলা হয়েছিল যে তারা “নিদ্রাগত হইয়াছেন।” তারা তাদের স্বর্গীয় পুরস্কার লাভ করার জন্য তখন পর্যন্ত পুনরুত্থিত হননি।
১০. (ক) শিষ্যদের সঙ্গে যীশুর শেষ সাক্ষাতের ফল কী হয়েছিল? (খ) কিভাবে যীশু, পৌল যিনি “অকালজাতের ন্যায়” তাকে দেখা দিয়েছিলেন?
১০ যীশুর পুনরুত্থানের আরেকজন উল্লেখযোগ্য সাক্ষী ছিলেন যাকোব, যিনি যোষেফ এবং যীশুর মা মরিয়মের পুত্র। পুনরুত্থানের পূর্বে, যাকোব স্পষ্টতই বিশ্বাসী ছিলেন না। (যোহন ৭:৫) কিন্তু যীশু তাকে দেখা দেওয়ার পর, যাকোব বিশ্বাসী হয়েছিলেন এবং সম্ভবত তার অন্য ভাইদের ধর্মান্তরিত করার ক্ষেত্রে এক ভূমিকা পালন করেছিলেন। (প্রেরিত ১:১৩, ১৪) তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে চূড়ান্ত সাক্ষাতে, স্বর্গারোহণের সময় যীশু তাদেরকে “পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত . . . সাক্ষী” হওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। (প্রেরিত ১:৬-১১) পরে, তিনি খ্রীষ্টানদের একজন তাড়নাকারী, তার্ষের শৌলকে দেখা দিয়েছিলেন। (প্রেরিত ২২:৬-৮) যীশু শৌলকে দেখা দিয়েছিলেন যিনি “অকালজাতের ন্যায়।” এটি এমন ছিল যেন শৌল ইতিমধ্যেই স্বর্গীয় জীবনে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন এবং সেই পুনরুত্থান ঘটার শত শত বছর আগে প্রতাপান্বিত প্রভুকে দেখতে সমর্থ হয়েছিলেন। এই অভিজ্ঞতা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর প্রতি শৌলের হত্যাসুলভ বিরোধিতার গতিকে অপ্রত্যাশিতভাবে নিবৃত্ত করেছিল ও এক লক্ষণীয় পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল। (প্রেরিত ৯:৩-৯, ১৭-১৯) শৌল প্রেরিত পৌল, খ্রীষ্টীয় বিশ্বাসের একজন মুখ্য রক্ষকে পরিণত হয়েছিলেন।—১ করিন্থীয় ১৫:৯, ১০.
পুনরুত্থানে বিশ্বাস অত্যাবশ্যক
১১. কিভাবে পৌল “মৃতগণের পুনরুত্থান নাই,” এই উক্তিটির বিভ্রান্তিকর যুক্তিকে প্রকাশ করেছিলেন?
১১ যীশুর পুনরুত্থান ছিল একটি সুপ্রমাণিত ঘটনা। “ভাল, খ্রীষ্ট যখন এই বলিয়া প্রচারিত হইতেছেন যে, তিনি মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত হইয়াছেন,” পৌল যুক্তি দেখান, “তখন তোমাদের কেহ কেহ কেমন করিয়া বলিতেছে যে, মৃতগণের পুনরুত্থান নাই?” (১ করিন্থীয় ১৫:১২) এইধরনের ব্যক্তিদের পুনরুত্থান সম্বন্ধে কেবল ব্যক্তিগত সন্দেহ অথবা প্রশ্নই ছিল না কিন্তু তারা প্রকাশ্যে এই বিষয়ে অবিশ্বাসের কথাও বলছিলেন। তাই পৌল তাদের বিভ্রান্তিকর যুক্তিকে প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যদি খ্রীষ্ট উত্থিত না হয়ে থাকেন, তাহলে খ্রীষ্টীয় বার্তা মিথ্যা এবং যারা খ্রীষ্টের পুনরুত্থানের সাক্ষ্য দিয়েছিলেন তারা “ঈশ্বরের . . . মিথ্যা সাক্ষী” ছিলেন। খ্রীষ্ট যদি উত্থিত না হয়ে থাকেন, তাহলে ঈশ্বরের কাছে কোন মুক্তির মূল্যই প্রদান করা হয়নি; আর খ্রীষ্টানেরা “আপন আপন পাপে” রয়ে গিয়েছিলেন। (১ করিন্থীয় ১৫:১৩-১৯; রোমীয় ৩:২৩, ২৪; ইব্রীয় ৯:১১-১৪) আর যে খ্রীষ্টানেরা “নিদ্রাগত হইয়াছেন,” কেউ কেউ যেমন শহীদ হয়েছিলেন তারা এক প্রকৃত আশা ছাড়াই প্রাণ হারিয়েছিলেন। কী এক করুণ অবস্থার মধ্যেই না খ্রীষ্টানেরা থাকতেন যদি এই জীবনই তাদের প্রত্যাশিত সমস্ত কিছু হত! তাদের সমস্ত কষ্টভোগ অর্থহীন হত।
১২. (ক) খ্রীষ্টকে “নিদ্রাগতদের অগ্রিমাংশ” বলার দ্বারা কী ইঙ্গিত করা হয়েছে? (খ) কিভাবে খ্রীষ্ট পুনরুত্থানকে সম্ভবপর করেছিলেন?
১২ কিন্তু, বিষয়টি তা ছিল না। পৌল বলে চলেন: “খ্রীষ্ট মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত হইয়াছেন।” এছাড়াও, তিনি “নিদ্রাগতদের অগ্রিমাংশ।” (১ করিন্থীয় ১৫:২০) ইস্রায়েলীয়রা যখন বাধ্যতার সঙ্গে তাদের উৎপাদিত দ্রব্যের অগ্রিমাংশ যিহোবাকে দিয়েছিল, তখন যিহোবা প্রচুর শস্য দ্বারা তাদের আশীর্বাদ করেছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ২২:২৯, ৩০; ২৩:১৯; হিতোপদেশ ৩:৯, ১০) খ্রীষ্টকে “অগ্রিমাংশ” বলার দ্বারা, পৌল ইঙ্গিত করেন যে আরও ব্যক্তিরা মৃত অবস্থা থেকে স্বর্গীয় জীবনে উত্থিত হবেন। পৌল বলেন: “মনুষ্য দ্বারা যখন মৃত্যু আসিয়াছে, তখন আবার মনুষ্য দ্বারা মৃতগণের পুনরুত্থান আসিয়াছে। কারণ আদমে যেমন সকলে মরে, তেমনি আবার খ্রীষ্টেই সকলে জীবনপ্রাপ্ত হইবে।” (১ করিন্থীয় ১৫:২১, ২২) যীশু তাঁর সিদ্ধ মানব জীবন মুক্তির মূল্য হিসাবে দেওয়ার দ্বারা পুনরুত্থান সম্ভবপর করেছিলেন এবং মানবজাতির জন্য পাপ ও মৃত্যুর দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার পথ খুলে দিয়েছিলেন।—গালাতীয় ১:৪; ১ পিতর ১:১৮, ১৯.a
১৩. (ক) কখন স্বর্গীয় পুনরুত্থান সংঘটিত হয়? (খ) কিভাবে কিছু অভিষিক্ত ব্যক্তি “নিদ্রাগত” হন না?
১৩ পৌল বলে চলেন: “কিন্তু প্রত্যেক জন আপন আপন শ্রেণীতে; খ্রীষ্ট অগ্রিমাংশ, পরে খ্রীষ্টের লোক সকল তাঁহার আগমনকালে।” (১ করিন্থীয় ১৫:২৩) খ্রীষ্ট সা.কা. ৩৩ সালে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর অভিষিক্ত অনুগামীদের—যারা “খ্রীষ্টের লোক সকল”—যীশুর রাজকীয় উপস্থিতি শুরু হওয়ার অল্প কাল পর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল, যেটি বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী দেখায় যে ১৯১৪ সালে হয়েছিল। (১ থিষলনীকীয় ৪:১৪-১৬; প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮) তাদের সম্বন্ধে কী বলা যায় যারা সেই উপস্থিতিকালে জীবিত থাকবেন? পৌল বলেন: “দেখ, আমি তোমাদিগকে এক নিগূঢ়তত্ত্ব বলি; আমরা সকলে নিদ্রাগত হইব না, কিন্তু সকলে রূপান্তরীকৃত হইব; এক মুহূর্ত্তের মধ্যে, চক্ষুর পলকে, শেষ তূরীধ্বনিতে হইব; কেননা তূরী বাজিবে, তাহাতে মৃতেরা অক্ষয় হইয়া উত্থাপিত হইবে, এবং আমরা রূপান্তরীকৃত হইব।” (১ করিন্থীয় ১৫:৫১, ৫২) স্পষ্টতই, সমস্ত অভিষিক্ত ব্যক্তিরা পুনরুত্থানের অপেক্ষায় কবরে নিদ্রাগত থাকেন না। যারা খ্রীষ্টের উপস্থিতিকালে মারা যাচ্ছেন তারা সঙ্গে সঙ্গে রূপান্তরীকৃত হন।—প্রকাশিত বাক্য ১৪:১৩.
১৪. কিভাবে অভিষিক্ত ব্যক্তিরা ‘মৃতদের নিমিত্ত বাপ্তাইজিত হন’?
১৪ পৌল জিজ্ঞাসা করেন: “নতুবা, মৃতদের নিমিত্ত যাহারা বাপ্তাইজিত হয়, তাহারা কি করিবে? মৃতেরা যদি একেবারেই উত্থাপিত না হয়, তাহা হইলে উহাদের নিমিত্ত তাহারা আবার কেন বাপ্তাইজিত হয়? আর আমরাই বা কেন ঘন্টায় ঘন্টায় বিপদের মধ্যে পড়ি?” (১ করিন্থীয় ১৫:২৯, ৩০) পৌল বোঝাতে চাননি যে জীবিত ব্যক্তিরা মৃতদের জন্য বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন, যেমন কিছু বাইবেল অনুবাদ এটি বলে থাকে। যাইহোক, বাপ্তিস্ম খ্রীষ্টীয় শিষ্যত্বের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আর মৃত লোকেরা শিষ্য হতে পারেন না। (যোহন ৪:১) বরঞ্চ, পৌল জীবিত খ্রীষ্টানদের সম্বন্ধে আলোচনা করছিলেন যাদের অনেকে, পৌলের ন্যায় “ঘন্টায় ঘন্টায় বিপদের মধ্যে” পড়েছিলেন। অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা ‘খ্রীষ্টের মৃত্যুর উদ্দেশে বাপ্তাইজিত’ হয়েছিলেন। (রোমীয় ৬:৩) অতএব তাদের অভিষিক্তকরণ, তাদের “বাপ্তাইজিত” হওয়া যেন এমন এক জীবনধারায় প্রবেশ করা যা তাদের খ্রীষ্টের ন্যায় এক মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করে। (মার্ক ১০:৩৫-৪০) তারা প্রতাপান্বিত স্বর্গীয় পুনরুত্থানের আশা নিয়ে মারা যাবেন।—১ করিন্থীয় ৬:১৪; ফিলিপীয় ৩:১০, ১১.
১৫. পৌল হয়ত কোন্ বিপদগুলি অভিজ্ঞতা করেছেন এবং কিভাবে পুনরুত্থানে বিশ্বাস সেগুলি সহ্য করায় একটি ভূমিকা পালন করেছিল?
১৫ পৌল এখন ব্যাখ্যা করেন যে তিনি এতটাই বিপদের সম্মুখীন হয়েছিলেন যে তিনি বলতে পেরেছিলেন: “আমি প্রতিদিন মরিতেছি।” কিছুজন যাতে তাকে অতিরঞ্জিত করে বলার দায়ে অভিযুক্ত না করেন, তাই পৌল আরও বলেছিলেন: “ভ্রাতৃগণ, আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুতে তোমাদের বিষয়ে আমার যে শ্লাঘা, তাহার দোহাই দিয়া বলিতেছি।” দ্যা যিরূশালেম বাইবেল এই পদটিকে অনুবাদ করে: “ভাইরা, আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুতে তোমাদের বিষয়ে আমার যে অহংকার, তার শপথ করে বলছি, আমি প্রতিদিন মৃত্যুর সম্মুখীন হই।” তিনি যে বিপদগুলির সম্মুখীন হয়েছিলেন তার একটি উদাহরণ হিসাবে ৩২ পদে পৌল ‘ইফিষে পশুদের সহিত যুদ্ধ’ করার কথা বলেন। রোমীয়রা প্রায়ই অপরাধীদের মল্লভূমিতে হিংস্র পশুদের সামনে নিক্ষেপ করার দ্বারা মৃত্যুদণ্ড দিত। পৌল যদি আক্ষরিক হিংস্র পশুদের সঙ্গে লড়াই করে থাকেন, তাহলে তিনি কেবল যিহোবার সাহায্যেই রক্ষা পেয়েছিলেন। পুনরুত্থানের আশা ব্যতিরেকে, এমন এক জীবনধারা যা তাকে এইধরনের বিপদের সম্মুখীন করেছিল তা বেছে নেওয়া বাস্তবিকই হঠকারিতা হত। ভবিষ্যৎ জীবনের আশা ব্যতিরেকে, কষ্ট এবং ত্যাগস্বীকার যা ঈশ্বরকে সেবা করার কারণে আসে সেগুলি খুব কমই অর্থপূর্ণ হত। পৌল বলেন: “মৃতেরা যদি উত্থাপিত না হয়, তবে ‘আইস, আমরা ভোজন পান করি, কেননা কল্য মরিব।’”—১ করিন্থীয় ১৫:৩১, ৩২. ২ করিন্থীয় ১:৮, ৯; ১১:২৩-২৭ পদগুলি দেখুন।
১৬. (ক) “আইস, আমরা ভোজন পান করি, কেননা কল্য মরিব” অভিব্যক্তিটির উৎস সম্ভবত কোথায়? (খ) এই দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করার কোন্ বিপদগুলি ছিল?
১৬ পৌল হয়ত যিশাইয় ২২:১৩ পদকে উদ্ধৃত করেছেন, যেটি যিরূশালেমের অবাধ্য অধিবাসীদের অদৃষ্টবাদী মনোভাবের বর্ণনা করে। অথবা তার মনে হয়ত ইপিকুরীয়দের বিশ্বাসগুলি ছিল যারা মৃত্যুর পরের জীবনসংক্রান্ত যে কোন আশাকে অবজ্ঞা করত এবং বিশ্বাস করত যে মাংসিক আনন্দই জীবনের মুখ্য প্রাপ্তি। বিষয়টি যাই হোক না কেন, “ভোজন পান” সম্বন্ধীয় দর্শন ঈশ্বরীয় নয়। তাই, পৌল সতর্ক করেন: “ভ্রান্ত হইও না, কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে।” (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) যারা পুনরুত্থানকে অস্বীকার করেন তাদের সঙ্গে মেলামেশা করা বিপদজনক হতে পারে। এইধরনের সংসর্গ হয়ত করিন্থীয় মণ্ডলীতে পৌলকে যে সমস্যাগুলি সামলাতে হয়েছিল তাতে এক ভূমিকা পালন করেছিল, যেমন যৌন অনৈতিকতা, দলভেদ, মামলা এবং প্রভুর সান্ধ্যভোজের প্রতি অসম্মান।—১ করিন্থীয় ১:১১; ৫:১; ৬:১; ১১:২০-২২.
১৭. (ক) করিন্থীয়দের পৌল কোন্ পরামর্শ দিয়েছিলেন? (খ) উত্তরের জন্য কোন্ প্রশ্নগুলি থেকে যায়?
১৭ এইকারণে পৌল করিন্থীয়দের এই ইতিবাচক পরামর্শটি দেন: “ধার্ম্মিক হইবার জন্য চেতন হও, পাপ করিও না, কেননা কাহারও কাহারও ঈশ্বর-জ্ঞান নাই; আমি তোমাদের লজ্জার নিমিত্ত এই কথা কহিতেছি।” (১ করিন্থীয় ১৫:৩৪) পুনরুত্থানের প্রতি এক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি কিছুজনকে এক আধ্যাত্মিক অচৈতন্য, যেন মাতাল অবস্থার দিকে পরিচালিত করেছিল। তাদের সচেতন হওয়ার ও সংযত থাকার প্রয়োজন হয়েছিল। একইভাবে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের আজকে জগতের সন্দেহপ্রবণ দৃষ্টিভঙ্গিগুলির দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে, আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সচেতন থাকা প্রয়োজন। তাদের অবশ্যই স্বর্গীয় পুনরুত্থানের আশার সঙ্গে দৃঢ়ভাবে যুক্ত থাকতে হবে। কিন্তু তারপরও প্রশ্নগুলি থেকে যায়—সেই সময়ের করিন্থীয় এবং বর্তমানে আমাদের জন্য। উদাহরণস্বরূপ, ১,৪৪,০০০ জন কোন্ রূপ নিয়ে স্বর্গে উত্থিত হন? আর যে লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিরা এখনও কবরে আছেন ও যাদের স্বর্গীয় আশা নেই তাদের সম্বন্ধেই বা কী বলা যায়? এদের জন্য পুনরুত্থানের অর্থ কী হবে? আমাদের পরবর্তী প্রবন্ধে, আমরা পুনরুত্থান সম্বন্ধে পৌলের বাকি আলোচনা পরীক্ষা করব।
[পাদটীকাগুলো]
a মুক্তির মূল্য সম্বন্ধে আলোচনার জন্য প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি) পত্রিকার ১৯৯১ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি সংখ্যাটি দেখুন।
আপনার কি স্মরণে আছে?
◻ পুনরুত্থানের উপর যীশু কোন্ আলোকপাত করেছিলেন?
◻ খ্রীষ্টের পুনরুত্থানের কিছু সাক্ষী কারা ছিলেন?
◻ কেন পুনরুত্থানের মতবাদটি প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হয়েছিল এবং পৌলের প্রতিক্রিয়া কিরূপ ছিল?
◻ অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের জন্য পুনরুত্থানে বিশ্বাস অত্যাবশ্যক কেন?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
পুনরুত্থান যে সম্ভব ছিল তা যায়ীরের কন্যার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছিল
[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
পুনরুত্থানের আশা ছাড়া, বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানদের শহীদ হওয়া অর্থহীন হত