অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৪
আপনি কি আপনার পরিচর্যা পূর্ণরূপে সম্পন্ন করছেন?
“সুসমাচার-প্রচারকের কার্য্য কর, তোমার পরিচর্য্যা সম্পন্ন [“পূর্ণরূপে সম্পন্ন,” NW] কর।”—২ তীম. ৪:৫.
গান সংখ্যা ১৮ ঈশ্বরের অনুগত প্রেম
সারাংশa
১. ঈশ্বরের সমস্ত দাস কী করতে চায় এবং কেন? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
যিশু খ্রিস্ট তাঁর অনুসারীদের আজ্ঞা দিয়েছিলেন: “তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর।” (মথি ২৮:১৯) ঈশ্বরের সমস্ত বিশ্বস্ত দাস শিখতে চায় যে, কীভাবে তারা তাদের পরিচর্যাকে “পূর্ণরূপে সম্পন্ন” করতে পারে, যা তাদের করতে বলা হয়েছে। (২ তীম. ৪:৫) কারণ আমাদের জীবনের অন্যান্য যেকোনো কাজের চেয়ে এই কাজ আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, আরও বেশি মূল্যবান এবং আরও বেশি জরুরি। কিন্তু, পরিচর্যায় আমরা যতটা চাই, ততটা সময় ব্যয় করা আমাদের জন্য কঠিন হতে পারে।
২. আমাদের পরিচর্যাকে পূর্ণরূপে সম্পন্ন করার সময়ে আমরা কোন কোন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হই?
২ আমাদের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ রয়েছে, যেগুলোর জন্য আমাদের সময় ও শক্তি ব্যয় করতে হয়। আমাদের নিজেদের ও পরিবারের যত্ন নেওয়ার জন্য আমাদের হয়তো প্রতিদিন কাজের পিছনে অনেক ঘণ্টা ব্যয় করতে হয়। আমাদের হয়তো অন্যান্য পারিবারিক দায়িত্ব, অসুস্থতা ও বিষণ্ণতার কারণে লড়াই করতে হয় অথবা বার্ধক্যজনিত সমস্যাগুলোর সঙ্গে লড়াই করতে হয়। কীভাবে আমরা এই ধরনের কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের পরিচর্যাকে পূর্ণরূপে সম্পন্ন করতে পারি?
৩. মথি ১৩:২৩ পদে পাওয়া যিশুর কথাগুলো থেকে আমরা কোন উপসংহারে আসতে পারি?
৩ যিহোবার সেবায় আমরা যতটা সময় ব্যয় করতে চাই, আমাদের পরিস্থিতির কারণে যদি ততটা না করতে পারি, তা হলে আমাদের নিরুৎসাহিত হওয়া উচিত নয়। যিশু জানতেন, আমরা সবাই একই পরিমাণ রাজ্যের ফল উৎপন্ন করতে পারব না অর্থাৎ সুসমাচার প্রচার কাজে একই পরিমাণ সময় ও শক্তি ব্যয় করতে পারব না। (পড়ুন, মথি ১৩:২৩.) আমরা যখন যিহোবার সেবায় আমাদের সর্বোত্তমটা করি, তখন তিনি তাঁর সেবায় করা আমাদের সমস্ত কাজকে উচ্চমূল্য দেন। (ইব্রীয় ৬:১০-১২) অন্যদিকে, আমরা হয়তো মনে করতে পারি, আমাদের পরিস্থিতি আমাদের আরও বেশি কিছু করার সুযোগ দেবে। তাই, আসুন পরীক্ষা করে দেখি, কীভাবে আমরা আমাদের জীবনে পরিচর্যাকে প্রথম স্থানে রাখতে পারি, আমাদের জীবনকে সাদাসিধে রাখতে পারি এবং প্রচার করার ও শিক্ষা দেওয়ার দক্ষতাকে বৃদ্ধি করতে পারি। প্রথমে দেখি, আমাদের পরিচর্যাকে পূর্ণরূপে সম্পন্ন করার অর্থ কী।
৪. আমাদের পরিচর্যাকে পূর্ণরূপে সম্পন্ন করার অর্থ কী?
৪ সহজভাবে বললে, আমাদের পরিচর্যাকে পূর্ণরূপে সম্পন্ন করার জন্য আমাদের অবশ্যই প্রচার করার ও শিক্ষা দেওয়ার কাজে যতটা সম্ভব পূর্ণরূপে অংশ নিতে হবে। কিন্তু, সময় ছাড়াও এর সঙ্গে আরও কিছু জড়িত রয়েছে। আমাদের মনোভাবকে যিহোবা গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন। যেহেতু আমরা যিহোবা ও আমাদের প্রতিবেশিকে ভালোবাসি, তাই আমরা আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করি।b (মার্ক ১২:৩০, ৩১; কল. ৩:২৩) মনপ্রাণ দিয়ে ঈশ্বরের সেবা করার অর্থ হল তাঁর সেবায় আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে নিজেদের বিলিয়ে দেওয়া। আমরা যখন এটা বুঝি যে, প্রচার করা হল এক বিশেষ সুযোগ, তখন আমরা যতবেশি লোকের কাছে সম্ভব সুসমাচার সম্বন্ধে বলার জন্য যথাসাধ্য করি।
৫-৬. উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন, কীভাবে একজন ব্যক্তির সময়ের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও তিনি পরিচর্যাকে প্রথম স্থানে রাখতে পারেন।
৫ একজন অল্পবয়সি ছেলের কথা কল্পনা করুন, যে গিটার বাজাতে ভালোবাসে আর সুযোগ পেলেই সে আনন্দের সঙ্গে গিটার বাজিয়ে থাকে। অবশেষে, সে অর্থ উপার্জন করার জন্য সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে অন্যদের গিটার বাজানো শেখাতে শুরু করে। কিন্তু, সেই আয়ে সে তার সমস্ত খরচ মেটাতে পারে না। তাই, সে সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত একটা দোকানে হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করতে শুরু করে। যদিও সে বেশিরভাগ সময় দোকানেই কাজ করে কিন্তু সে গিটার বাজানোকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। সে মনে-প্রাণে তার গিটার বাজানোর দক্ষতাকে বৃদ্ধি করতে চায় এবং সংগীতের জগতেই পূর্ণসময়ের কাজ করতে চায়। আর সে যখনই সুযোগ পায়, তখনই গিটার বাজায়।
৬ একইভাবে, আপনি হয়তো সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে প্রচার কাজে যতটা চান, ততটা সময় ব্যয় করতে পারেন না। তারপরও, আপনি এই কাজ করতে ভালোবাসেন। আপনি লোকেদের হৃদয়ে সুসমাচার পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশে আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য যথাসাধ্য করেন। যেহেতু আপনাকে বিভিন্ন বিষয়ের যত্ন নিতে হয়, তাই আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, কীভাবে আপনি প্রচার কাজকে প্রথম স্থানে রাখতে পারেন।
কীভাবে আপনি আপনার পরিচর্যাকে প্রথম স্থানে রাখতে পারেন?
৭-৮. কীভাবে আমরা পরিচর্যার প্রতি যিশুর মনোভাবকে অনুকরণ করতে পারি?
৭ যিশু পরিচর্যার প্রতি সঠিক মনোভাব বজায় রাখার ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তিনি ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে কথা বলাকে তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় করে তুলেছিলেন। (যোহন ৪:৩৪, ৩৫) তিনি যতবেশি লোকের কাছে সম্ভব প্রচার করার জন্য শত শত কিলোমিটার পথ হেঁটে ছিলেন। তিনি জনসাধারণ্যে অথবা লোকেদের বাড়িতে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য সবসময় সুযোগ করে নিতেন। যিশু পরিচর্যাকে তাঁর জীবনের প্রথম স্থানে রেখেছিলেন।
৮ আমরা যখনই সম্ভব ও যেখানেই সম্ভব সুসমাচার সম্বন্ধে কথা বলার জন্য সুযোগ করে নেওয়ার মাধ্যমে খ্রিস্টকে অনুকরণ করতে পারি। আমরা প্রচার কাজে রত হওয়ার জন্য ব্যক্তিগত আরামআয়েশ ত্যাগ করতে ইচ্ছুক। (মার্ক ৬:৩১-৩৪; ১ পিতর ২:২১) মণ্ডলীতে কেউ কেউ বিশেষ অগ্রগামী, নিয়মিত অগ্রগামী অথবা সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে সেবা করে। অন্যেরা আবার একটা নতুন ভাষা শিখেছে অথবা এমন কোনো এলাকায় চলে গিয়েছে, যেখানে আরও বেশি প্রচারকের প্রয়োজন রয়েছে। তবে, প্রচার কাজের বেশিরভাগটাই এমন প্রচারকরা করে থাকে, যারা উপরে উল্লেখিত উপায়ে সেবা করতে না পারলেও নিজেদের সর্বোত্তমটা করে থাকে। যাই হোক না কেন, যিহোবা আমাদের কাছ থেকে আমাদের সাধ্যের অতিরিক্ত আশা করেন না। তিনি চান যেন আমরা সবাই “পরম ধন্য” বা সুখী ‘ঈশ্বরের গৌরবের সুসমাচার’ ঘোষণা করার পবিত্র সেবাকে উপভোগ করি।—১ তীম. ১:১১; দ্বিতীয়. ৩০:১১.
৯. (ক) পৌলকে যখন নিজের ভরণ-পোষণ জোগানোর জন্য কাজ করতে হয়েছিল, তখনও কীভাবে তিনি প্রচার কাজকে জীবনের প্রথম স্থানে রেখেছিলেন? (খ) প্রেরিত ২৮:১৬, ২৯, ৩০ পদ পরিচর্যার প্রতি পৌলের মনোভাব সম্বন্ধে কী প্রকাশ করে?
৯ প্রেরিত পৌল পরিচর্যাকে তার জীবনের প্রথম স্থানে রাখার মাধ্যমে এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। তার দ্বিতীয় মিশনারি যাত্রার সময়ে তিনি যখন করিন্থে ছিলেন, তখন তার কাছে খুবই অল্প পরিমাণ অর্থ ছিল আর তাই তাকে কিছু সময়ের জন্য তাঁবু তৈরি করার কাজ করতে হয়েছিল। কিন্তু, পৌল তাঁবু তৈরি করাকে তার প্রাথমিক কাজ হিসেবে দেখেননি। তিনি পরিচর্যায় নিজের ব্যয়ভার বহন করার জন্য এই কাজ করেছিলেন, যাতে তিনি “বিনা বেতনে” করিন্থীয়দের কাছে সুসমাচার ঘোষণা করতে পারেন। (২ করি. ১১:৭) যদিও পৌলকে নিজের ভরণ-পোষণ জোগানোর জন্য কাজ করতে হয়েছিল কিন্তু তিনি পরিচর্যাকে ক্রমাগত তার জীবনের প্রথম স্থানে রেখেছিলেন এবং প্রত্যেক বিশ্রামবারে প্রচার করেছিলেন। তার পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হওয়ার পর তিনি তার প্রচার কাজে আরও বেশি মনোযোগ দিতে পেরেছিলেন। তিনি “বাক্যে নিবিষ্ট” থাকতে শুরু করেছিলেন এবং “যীশুই যে খ্রীষ্ট, ইহার প্রমাণ যিহূদীদিগকে দিতেছিলেন।” (প্রেরিত ১৮:৩-৫; ২ করি. ১১:৯) পরবর্তী সময়ে, তিনি যখন রোমে দুই বছর গৃহবন্দি ছিলেন, তখন যারা তাকে দেখতে আসত, তাদের কাছে তিনি সাক্ষ্য দিয়েছিলেন এবং চিঠি লিখেছিলেন। (পড়ুন, প্রেরিত ২৮:১৬, ২৯, ৩০.) পৌল পরিচর্যার ক্ষেত্রে কোনো কিছুকেই বাধা হতে না দেওয়ার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “আমরা এই পরিচর্য্যা-পদ প্রাপ্ত হওয়ায় . . . নিরুৎসাহ হই না।” (২ করি. ৪:১) আমাদের যদিও ভরণ-পোষণ জোগানোর উদ্দেশে কাজ করার জন্য অনেক সময় ব্যয় করতে হয়, তারপরও আমরা পৌলের মতো রাজ্যের কাজকে জীবনের প্রথম স্থানে রাখতে পারি।
১০-১১. আমাদের যদি শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকে, তা হলে কীভাবে আমরা আমাদের পরিচর্যাকে পূর্ণরূপে সম্পন্ন করতে পারি?
১০ বার্ধক্য অথবা অসুস্থতার কারণে ঘরে ঘরে প্রচার করার ক্ষেত্রে আমাদের যদি সীমাবদ্ধতা থাকে, তারপরও আমরা অন্যান্য উপায়ে পরিচর্যা করা উপভোগ করতে পারি। প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা যেখানেই ছিল, সেখানেই লোকেদের কাছে প্রচার করেছিল। তারা যখনই সম্ভব ও যেখানেই সম্ভব লোকেদের কাছে প্রচার করেছিল, হোক তা ঘরে ঘরে, জনসাধারণ্যে অথবা রীতিবহির্ভূতভাবে। (প্রেরিত ১৭:১৭; ২০:২০) আমরা যদি অনেক বেশি হাঁটতে না পারি, তা হলে আমরা হয়তো এমন কোনো স্থানে বসে প্রচার করতে পারি, যার সামনে দিয়ে লোকেরা হেঁটে যায়। অথবা আমরা হয়তো রীতিবহির্ভূতভাবে সাক্ষ্যদান করতে পারি, চিঠি লিখতে পারি কিংবা টেলিফোনের মাধ্যমে সাক্ষ্য দিতে পারি। অনেক প্রকাশক, যারা শারীরিক অসুস্থতা অথবা অন্যান্য সমস্যার কারণে ঘরে ঘরে বেশি প্রচার করতে পারে না, তারা এই উপায়গুলোতে প্রচার করার মাধ্যমে প্রচুর আনন্দ উপভোগ করে থাকে।
১১ শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আপনি আপনার পরিচর্যা পূর্ণরূপে সম্পন্ন করতে পারেন। প্রেরিত পৌলের উদাহরণ আবারও বিবেচনা করুন। তিনি বলেছিলেন: “যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি।” (ফিলি. ৪:১৩) পৌল যখন মিশনারি যাত্রার সময়ে একবার অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন, তখন তার এই শক্তির প্রয়োজন হয়েছিল। তিনি গালাতীয়দের কাছে ব্যাখ্যা করেছিলেন: “আমি মাংসের কোন দুর্ব্বলতা হেতুই প্রথমবার তোমাদের নিকটে সুসমাচার প্রচার করিয়াছিলাম।” (গালা. ৪:১৩) একইভাবে, আপনার শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারণে আপনি হয়তো ডাক্তার, নার্স অথবা যারা আপনার যত্ন নেয়, তাদের কাছে সুসমাচার প্রচার করার সুযোগ পান। এই লোকেদের মধ্যে অনেকেই হয়তো সেইসময়ে কাজের জায়গায় থাকে, যখন প্রকাশকরা তাদের বাড়িতে প্রচার করতে যায়।
কীভাবে আপনি আপনার জীবনকে সাদাসিধে রাখতে পারেন?
১২. আমাদের চোখকে “সরল” রাখার অর্থ কী?
১২ যিশু বলেছিলেন: “চক্ষুই শরীরের প্রদীপ; অতএব তোমার চক্ষু যদি সরল হয়, তবে তোমার সমস্ত শরীর দীপ্তিময় হইবে।” (মথি ৬:২২) তিনি কী বোঝাতে চেয়েছিলেন? তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, আমাদের জীবনকে সরল বা সাদাসিধে রাখতে হবে অর্থাৎ বিক্ষিপ্ত না হয়ে বরং একটা লক্ষ্য কিংবা উদ্দেশ্যের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে হবে। যিশু নিজে পরিচর্যার উপর তাঁর জীবনকে কেন্দ্রীভূত রাখার মাধ্যমে এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন এবং তিনি তাঁর শিষ্যদের যিহোবার সেবা করার এবং তাঁর রাজ্যের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে শিখিয়েছিলেন। আমরা ‘প্রথমে [ঈশ্বরের] রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করিবার’ মাধ্যমে অর্থাৎ আমাদের জীবনকে খ্রিস্টীয় পরিচর্যার উপর কেন্দ্রীভূত রাখার মাধ্যমে যিশুকে অনুকরণ করি।—মথি ৬:৩৩.
১৩. কী আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচর্যার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখার জন্য সাহায্য করতে পারে?
১৩ আমাদের পরিচর্যার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখার একটা উপায় হল কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর জন্য কম সময় ব্যয় করা, যাতে আমরা অন্যদের যিহোবাকে জানতে ও ভালোবাসতে সাহায্য করার জন্য আরও বেশি সময় ব্যয় করতে পারি।c উদাহরণ স্বরূপ, আমরা কি আমাদের কাজের সময়ে কিছু রদবদল করতে পারি, যাতে আমরা সপ্তাহের মাঝের দিনগুলোতে পরিচর্যায় আরও বেশি সময় ব্যয় করতে পারি? আমরা কি এমন ধরনের বিনোদনের পিছনে কম সময় ব্যয় করতে পারি, যেগুলো অনেক বেশি সময় কেড়ে নেয়?
১৪. পরিচর্যায় আরও বেশি সময় ব্যয় করার এবং পরিচর্যার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার জন্য এক দম্পতি কোন কোন রদবদল করেছিলেন?
১৪ ইলিয়াস নামে একজন প্রাচীন ভাই ও তার স্ত্রী এইরকমই কিছু করেছিলেন। ভাই ব্যাখ্যা করেন: “আমরা সঙ্গেসঙ্গে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করা শুরু করতে পারিনি কিন্তু আমরা আমাদের প্রচার কাজকে বাড়ানোর জন্য কিছু করতে পারতাম। তাই, আমরা ছোটো ছোটো পদক্ষেপ নিই। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা আমাদের খরচ কমাই, বিনোদনের পিছনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা কমাই এবং আমাদের কাজের তালিকায় কিছু রদবদল করার বিষয়ে কর্মস্থলে মালিকের কাছে অনুমতি চাই, যাতে প্রচার করার জন্য আমাদের হাতে বেশি সময় থাকে। এর ফলে আমরা সন্ধ্যা বেলায় প্রচার করতে, আরও বেশি বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করতে আর এমনকী মাসে দুই বার সপ্তাহের মাঝের দিনেও প্রচার কাজে অংশ নিতে পারি। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না!”
কীভাবে আপনি আপনার প্রচার করার ও শিক্ষা দেওয়ার দক্ষতাকে বৃদ্ধি করতে পারেন?
১৫-১৬. প্রথম তীমথিয় ৪:১৩, ১৫ পদ অনুযায়ী সুসমাচার প্রচারক হিসেবে কীভাবে আমরা ক্রমাগত আমাদের দক্ষতাকে বৃদ্ধি করতে পারি? (এ ছাড়া, “যে-লক্ষ্যগুলো আমাকে আমার পরিচর্যা পূর্ণরূপে সম্পন্ন করার জন্য সাহায্য করবে” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)
১৫ আমাদের পরিচর্যাকে পূর্ণরূপে সম্পন্ন করার আরেকটা উপায় হল প্রচার কাজে আমাদের দক্ষতাকে বৃদ্ধি করা। কোনো কোনো পেশায় জ্ঞান ও দক্ষতাকে বৃদ্ধি করার জন্য লোকেদের ক্রমাগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। রাজ্যের প্রচারকদের ক্ষেত্রেও এটা সত্য। আমাদের ক্রমাগত শিখতে হবে যে, কীভাবে আমরা আমাদের পরিচর্যায় আরও বেশি দক্ষ হয়ে উঠতে পারি।—হিতো. ১:৫; পড়ুন, ১ তীমথিয় ৪:১৩, ১৫.
১৬ তা হলে, কীভাবে আমরা পরিচর্যায় ক্রমাগত উন্নতি করতে পারি? আমরা প্রতি সপ্তাহে জীবন ও পরিচর্যা সভা থেকে যে-নির্দেশনাগুলো পাই, সেগুলোর প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে। এই সভা ক্ষেত্রের পরিচর্যায় আমাদের দক্ষতাকে ক্রমাগত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করার জন্য ব্যাবহারিক প্রশিক্ষণ প্রদান করে। উদাহরণ স্বরূপ, ছাত্র-ছাত্রীরা কার্যভার পালন করার পর সভাপতি যখন তাদের পরামর্শ দেন, তখন আমরা সেই বিষয়গুলো শিখতে পারি, যেগুলো আমাদের পরিচর্যায় উন্নতি করার জন্য সাহায্য করতে পারে। এরপর, আমরা যখন কারো কাছে সুসমাচার প্রচার করি, তখন আমরা সেই পরামর্শগুলো কাজে লাগাতে পারি। আমরা আমাদের ক্ষেত্রের পরিচর্যা দলের অধ্যক্ষের কাছে সাহায্য চাইতে পারি অথবা আমরা তার সঙ্গে, অন্য কোনো অভিজ্ঞ প্রকাশকের সঙ্গে, কোনো অগ্রগামীর সঙ্গে কিংবা সীমা অধ্যক্ষের সঙ্গে পরিচর্যায় কাজ করতে পারি। আমরা যখন আমাদের শিক্ষাদানের হাতিয়ার বাক্সের প্রতিটা হাতিয়ার ব্যবহার করায় আরও বেশি দক্ষ হয়ে উঠব, তখন আমরা প্রচার করা ও শিক্ষা দেওয়ার কাজকে আরও বেশি উপভোগ করব।
১৭. আপনি যখন আপনার পরিচর্যা পূর্ণরূপে সম্পন্ন করবেন, তখন আপনি কী লাভ করবেন?
১৭ যিহোবা যে আমাদের তাঁর “সহকার্য্যকারী” হওয়ার অনুমতি দিয়েছেন, এটা কতই-না বিশেষ এক সুযোগ! (১ করি. ৩:৯) আপনি যখন “যাহা যাহা শ্রেয়ঃ” বা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, ‘তাহা পরীক্ষা করিয়া চিনিতে পারিবেন’ এবং খ্রিস্টীয় পরিচর্যার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখবেন, তখন আপনি ‘সানন্দে সদাপ্রভুর সেবা করিবেন।’ (ফিলি. ১:১০, পাদটীকা; গীত. ১০০:২) ঈশ্বরের একজন পরিচারক হিসেবে আপনি এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন, তিনি আপনাকে আপনার পরিচর্যা সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করবেন, তা আপনি যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতা অথবা সীমাবদ্ধতার সঙ্গেই লড়াই করুন না কেন। (২ করি. ৪:১, ৭; ৬:৪) আপনার পরিস্থিতি অনুযায়ী আপনি অল্প হোক বা বেশি, পরিচর্যায় যতটা সময়ই ব্যয় করুন না কেন, আপনি যখন মনে-প্রাণে তা করেন, তখন আপনি “শ্লাঘা করিবার হেতু” বা আনন্দ করার কারণ খুঁজে পাবেন। (গালা. ৬:৪) আপনি যখন আপনার পরিচর্যা পূর্ণরূপে সম্পন্ন করেন, তখন আপনি যিহোবা ও আপনার সহমানবদের প্রতি প্রেম প্রকাশ করেন। “তাহা করিলে তুমি আপনাকে ও যাহারা তোমার কথা শুনে, তাহাদিগকেও পরিত্রাণ করিবে।”—১ তীম. ৪:১৬.
গান সংখ্যা ৪৭ সুসমাচার ঘোষণা করো
a আমাদের ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে সুসমাচার প্রচার করার এবং শিষ্য তৈরি করার আজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই প্রবন্ধে বিবেচনা করা হবে, কীভাবে আমরা আমাদের পরিচর্যাকে পূর্ণরূপে সম্পন্ন করতে পারি আর তা এমনকী আমাদের জীবনে অনেক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও। এ ছাড়া, আমরা এও শিখব, কীভাবে আমরা আরও ভালো প্রচারক হতে পারি এবং প্রচার করার সময়ে আরও বেশি আনন্দ লাভ করতে পারি।
b এর অর্থ কী?: আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচর্যার অন্তর্ভুক্ত হল প্রচার করা ও শিক্ষা দেওয়া, উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন স্থান নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে ত্রাণ কাজে সাহায্য করা।—২ করি. ৫:১৮, ১৯; প্রেরিত ১১:২৯.
c ২০১৬ সালের জুলাই মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১০ পৃষ্ঠায় দেওয়া “যেভাবে আপনার জীবন সাদাসিধে করা যায়” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন, যেখানে সাতটা পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে।
d ছবি সম্বন্ধে: সপ্তাহের মাঝের সভায় একজন বোন একটা পুনর্সাক্ষাতের নমুনা তুলে ধরছেন। তারপর, সভাপতি যখন পরামর্শ দিচ্ছেন, তখন তিনি তার শিক্ষা দেওয়া শিরোনামের ব্রোশারে নোট নিচ্ছেন। পরবর্তী সময়ে, সপ্তাহের ছুটির দিনে তিনি ক্ষেত্রের পরিচর্যায় সেই পরামর্শ কাজে লাগাচ্ছেন।